দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন স্কিমে অংশগ্রহণকারী ৫০টি তফসিলি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এই চুক্তি সই হয়।
চুক্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে কৃষি ঋণ বিভাগের পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ এবং নিজ নিজ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা সই করেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত পুনঃ অর্থায়ন স্কিমগুলো বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুনভাবে গঠিত পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন স্কিমটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এই স্কিমে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদের হার হবে ৪ শতাংশ।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে কৃষি উৎপাদনকে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এ কারণে কৃষি খাতে ঋণ সরবরাহ বাড়াতে ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনে স্কিমের তহবিলের পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে।
‘চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কৃষি খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্কিমের পাশাপাশি চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার আওতায় ৩০ হাজার ৯১১ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।’
গভর্নর আরও বলেন, ‘কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিনির্ভরতা অনেকাংশে কমে যাবে, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ভিতকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার এবং অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন তাদের বক্তব্যে স্কিমটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে গত বছরের ১৭ নভেম্বর পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃ অর্থায়ন তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই স্কিমের আওতায় ধান চাষ, মৎস্য চাষ, কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা এবং কর্মসূচিতে উল্লিখিত শাক-সবজি, ফল ও ফুল চাষ, প্রাণিসম্পদ খাতের আওতায় পোল্ট্রি ও দুগ্ধ উৎপাদন খাতে কৃষক পর্যায়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নীতিমালা জারি করেছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়েছে। এতে বিশ্বে খাদ্যসংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন। কৃষি খাতে স্বল্প সুদে ঋণপ্রবাহ বজায় রাখার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে গঠিত এই তহবিলের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রয়োজনে তহবিলের অর্থের পরিমাণ ও মেয়াদ বাড়ানো হবে।
আরও পড়ুন:ব্যাংকিং খাতকে লক্ষ্যবস্তু করে সাইবার হামলা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ায় সব তফসিলি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পেমেন্ট সেবাদানকারীদের সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ সাইবার সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্সের (বিসিএসআই) নিয়মিত তথ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের পর শুক্রবার এই সতর্কতামূলক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কিছু ব্যাংক ডুয়াল-কারেন্সি কার্ডে ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কিত অবৈধ লেনদেনের শিকার হয়েছে, যা দেশব্যাপী সাধারণ গ্রাহকদের প্রভাবিত করছে।
নির্দেশনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় সাইবার অপরাধীদের ক্রমবর্ধমান কার্যকলাপকে তুলে ধরেছে, যারা অনবরত জনসাধারণ এবং ব্যাংক গ্রাহকদের একইভাবে হয়রানি করছে।
সাইবার হামলার এই ঊর্ধ্বগতি শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী সাইবার হুমকি বৃদ্ধির প্রবণতাকে চিহ্নিত করে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে, যেখানে ম্যালওয়্যার আক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বার বার ঘটে থাকে।
এসব সাইবার হুমকি প্রতিরোধে তথ্য আদান-প্রদান, যাচাইকরণ বৃদ্ধি, ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) ব্যবহার, টু-ফ্যাক্টর/মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, লগইন প্রচেষ্টার সংখ্যা সীমিত রাখাসহ বেশ কিছু জরুরি পদক্ষেপ বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকটি বর্ণিত ঝুঁকির বিষয়ে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পরিচালক (আইসিটি) তদারকি করবেন বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা চাহিদামতো তুলতে না পারায় ন্যাশনাল ব্যাংকের সিলেট নগরের শিবগঞ্জ শাখায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন গ্রাহকরা। এতে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে শাহপরাণ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের শিবগঞ্জ শাখায় তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেন ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। এর আগে সোমবার গ্রাহকরা টাকা না পেয়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জে ন্যাশনাল ব্যাংকের আরেকটি শাখায় তালা লাগিয়ে দেন। এ সময় তারা সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
বিক্ষোভকারী গ্রাহকরা জানান, ন্যাশনাল ব্যাংকের শিবগঞ্জ ব্রাঞ্চে বেশ কয়েকদিন থেকে নিজেদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে এসে তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গ্রাহকরা বিভিন্ন অংকের চেক নিয়ে নগদ উত্তোলনের জন্য গেলে তাদের দেয়া হচ্ছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। কারণ জানতে চাইলে বলা হচ্ছে, ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট রয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার ব্যাংকের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন অর্ধশতাধিক গ্রাহক।
ন্যাশনাল ব্যাংকের শিবগঞ্জ ব্রাঞ্চের সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজার সাব্বির হানান বলেন, ‘গ্রাহকদের চাহিদামতো টাকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ নানা গুজবে গ্রাহকরা এখন শুধু টাকা তুলতে আসছেন। কেউ জমা দিচ্ছেন না।
‘গ্রাহকরা একসঙ্গে টাকা উত্তোলনের জন্য ভিড় করায় ব্যাংকের শাখাগুলোতে পর্যাপ্ত নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। এজন্য গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। আশা করি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন জানান, বিক্ষোভের খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গ্রাহকদের বুঝিয়ে গেটের তালা খোলা হয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডির সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি টাকা পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:শেখ হাসিনার শাসনামলে সরকার প্রধানের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় ব্যাংক খাত থেকে এক হাজার সাতশ’ কোটি ডলার পাচার করেছে। এর মধ্যে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম একাই এক হাজার কোটি ডলার দেশের বাইরে পাচার করে নিয়ে গেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়ে বলেছেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যাংক ডাকাতির এটাই সবচেয়ে বড় ঘটনা।
গভর্নর বলেন, ‘দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) সদস্যরা বড় ব্যাংকগুলো দখলে সহায়তা করেছেন। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে নিয়মিতভাবে অর্থ পাচার হয়েছে।
‘গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ব্যাংকের সিইওদের বাধ্য করার জন্য চাপ না দিলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই জালিয়াতি সম্ভব ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘নতুন শেয়ারহোল্ডারদের ঋণ ও আমদানি চালান বাড়ানোর মতো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা বা এক হাজার ৬৭০ কোটি ডলার উত্তোলন করা হয়েছে।’
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এস আলম গ্রুপ ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে অন্তত এক হাজার কোটি ডলার পাচার করেছে।
‘প্রতিদিন তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ঋণ দিচ্ছিলেন।’
আহসান এইচ মনসুর জানান, শেখ হাসিনার সহযোগীদের বৈদেশিক সম্পদ তদন্তে তিনি যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বন্দুকের মুখে সাইফুল আলমের কাছে শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য করেছিলেন। তারা বোর্ড সদস্যদের বাড়ি থেকে অপহরণ করেছেন। একের পর এক ব্যাংক একই জবরদস্তিমূলক পন্থায় অধিগ্রহণ করা হয়েছে।’
তবে আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল উরকুহার্ট অ্যান্ড সুলিভানের মাধ্যমে এস আলম গ্রুপ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে একে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছে।
গ্রুপটির বিবৃতিতে বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় ব্যবসাী গ্রুপের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অভিযানকে যথাযথ প্রক্রিয়ার লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এটা বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলাকে ক্ষুণ্ণ করেছে।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান। তার শাসনামল ভোট কারচুপি, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার তার প্রশাসনের অধীনে আত্মসাতের অভিযোগ আনা তহবিল পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আরও পড়ুন:দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বলতে গেলে রেমিট্যান্স প্রবাহে সুবাতাস বইছে। এরই ধারাবাহিকতায় অক্টোবরে বিদেশে কর্মরত নাগরিকরা প্রতিদিন গড়ে ৭৫ মিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম দিন থেকে ২৬ অক্টোবর শনিবার পর্যন্ত দেশে এক দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৪৭ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৯ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন ডলার। বেসরকারি খাতের ৪২টি ব্যাংকে মোট ১ দশমিক ২৯৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আর ছয়টি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে ১ থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত এসেছে ৫ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার।
তবে রেমিট্যান্স প্রবাহের উল্লম্ফনের এই সময়েও মুখে পড়েছে নয়টি ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) ও বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (আরকেইউবি), বেসরকারি কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক।
হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অফ পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়াসহ বিদেশি ব্যাংকগুলোতেও রেমিট্যান্স লেনদেন হয়নি।
পরস্পর যোগসাজশে আট কোটি ৮৬ লাখ টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরসহ সাতজনের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার দুদক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মামলার বাকি আসামিরা হলেন- দ্য ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক পরিচালক রাশেদুল হক চিশতি, সাবেক সহকারী অফিসার মো. ফখরুজ্জামান, ঋণগ্রহীতা মোহাম্মদ ফারুক, মো. হিরন রহমান ও মো. ইব্রাহিম খান।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বুধবার বিকেলে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে জানান, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধ লব্ধ আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করে সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। ফলে তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের ৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন এবং আত্মসাতের মাধ্যমে গোপন, স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণী অনুযায়ী, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে আট কোটি ৮৬ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেন। তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় আবারও নীতি সুদ হার (পলিসি রেট) বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার তা বাড়িয়ে দশ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার নীতি সুদ হার বিদ্যমান ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী সপ্তাহের শুরু থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
গত বছরের মার্চ থেকে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শের সঙ্গে মিল রেখে নীতি সুদ হার বাড়ানো হয়।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর নীতি সুদ হার ৯ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সাড়ে ৯ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্বে আসার পর এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বাড়ানো হলো নীতি সুদ হার। এর আগে প্রথমে সাড়ে ৮ থেকে বাড়িয়ে ৯ শতাংশ করা হয়েছিল।
নতুন নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুসৃত সংকোচনমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ওভারনাইট রেপো নীতি সুদ হার বিদ্যমান ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হলো।
এছাড়া ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনা অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার লক্ষ্যে নীতি সুদ হার করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির (এসএলএফ) ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুদ হার ১১ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।
আর নীতি সুদ হার করিডোরের নিম্ন সীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৮ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃ্দ্ধি করে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ২৭ অক্টোবর থেকে।
বিবিএসের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে দাঁড়ানোর পর চলতি বছরের জুলাইয়ে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়। এটি ২০১০-১১ অর্থবছরের পর সর্বোচ্চ। বিগত সরকার গত অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। যদিও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যস্ফীতি ছিল দেশে।
অন্যদিকে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২ সালের মে থেকে বেশ কয়েকবার সংকোচনমূলক নীতি অনুসরণ করছে। বাড়ানো হচ্ছে পলিসি রেট। নীতি সুদ হার বাড়ানোর ফলে ব্যাংক ঋণের সুদ বেড়েছে। এতে ঋণ নেয়া আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে।
নীতি সুদ হার বাড়ানোর মূল উদ্দেশ্য হলো বাজারে অর্থের সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি মনে করে বাজারে অর্থের সরবরাহ বেশি এবং সে কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, তাহলে অর্থপ্রবাহ কমাতে নীতি সুদ হার বৃদ্ধি করা হয়। নীতি সুদ হার বৃদ্ধির অর্থ হলো, ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত সুদ দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে ঋণ দেয়, তার সুদ হারও বাড়ে। নীতি সুদ হার বেশি হলে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে নিরুৎসাহিত হয়।
আরও পড়ুন:চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অক্টোবরের প্রথম ১৯ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রায় এক হাজার ৫৩২.৬৬ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪৭৮.৯৮ মিলিয়ন ডলার, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১০৪৯.৬৬ মিলিয়ন ডলার এবং বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪.০১ ডলার।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ১৯ দিনে ছয়টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক- অগ্রণী, জনতা, রূপালী, সোনালী, বেসিক এবং বিডিবিএল-এর মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৪০০.৮২ মিলিয়ন ডলার এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭৮.১৬ মিলিয়ন ডলার।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক ৯৫.১৭ মিলিয়ন ডলার, জনতা ব্যাংক ১০৫.৫০ মিলিয়ন ডলার, রূপালী ব্যাংক ৯৬.০৬ মিলিয়ন ডলার, সোনালী ব্যাংক ১০৪.০৫ মিলিয়ন ডলার এবং বেসিক ব্যাংক ০.০৪ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে।
আর সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে, ৩০৮.১৫ মিলিয়ন ডলার।
মন্তব্য