× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

অর্থ-বাণিজ্য
2023 begins with the crisis of the war
google_news print-icon

সংকট সঙ্গে নিয়ে শুরু ২০২৩

সংকট-সঙ্গে-নিয়ে-শুরু-২০২৩
একটি ঝামেলাপূর্ণ বছরের শেষে বাংলাদেশকে ২০২৩ সালের নতুন সূর্যকে স্বাগত জানাতে হচ্ছে নানা চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়ে। এই চ্যালেঞ্জকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন বলে অভিহিত করছেন দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ যদি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তাহলে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। ২০৪১ সালের স্বপ্ন, উন্নত সমৃদ্ধিশালী দেশের পথে অগ্রসর হবে বাংলাদেশ।’

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে আরও একটি বছর শেষ হয়ে গেল। দুই বছরের করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২২ সাল। কিন্তু বছরের এক মাস যেতে না যেতেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর পাল্টে যায় বিশ্ব পেক্ষাপট। বিশ্ব অর্থনীতিতে নেমে আসে কালোমেঘ। ওলটপালট করে দেয় সব হিসাব-নিকাশ। তছনছ হয়ে যায় সব কিছু।

জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় দেশে দেশে চড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশ আমেরিকান মুদ্রা ডলারের দর। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের তথ্যে ২০২২ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাত্র ২ শতাংশে নেমে আসবে।

এই অস্থিরতার ছোবল বাংলাদেশেও লেগেছিল; বেশ ভালোভাবেই লেগেছিল। এখনও প্রতি মুহূর্তে তার মাশুল গুনতে হচ্ছে। মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে নতুন উদ্যমে যে বছর শুরু করেছিল সরকার, সেটা তো সম্ভব হয়নি; উল্টো সেই জঞ্জাল আর সংকট সঙ্গে নিয়েই শুরু করতে হলো নতুন বছর ২০২৩ সাল।

বিদায়ী বছরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বড় ধাক্কা লেগেছে দেশের অর্থনীতিতে। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেখা দেয় ডলারের চরম সংকট। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে দেশের বাজারেও। সরকারের নীতিনির্ধারকদের মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে ওঠে মূল্যস্ফীতি। আগামী বছরেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এ বছরের নানা সংকটের মধ্যেও উচ্ছ্বাস ছড়ায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল। বছরটিতে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে সুসংবাদ যেমন ছিল, তেমনি ছিল নেতিবাচক খবরও। বছরের শেষ দিকে এসে কয়েকটি ইসলামী ব্যাংকে আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ব্যাংকিং খাতে চরম দুরবস্থার চিত্র ফুটে ওঠে, যা সরকারকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দেয়।

একটি ঝামেলাপূর্ণ বছরের শেষে বাংলাদেশকে ২০২৩ সালের নতুন সূর্যকে স্বাগত জানাতে হচ্ছে নানা চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়ে। এই চ্যালেঞ্জকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন বলে অভিহিত করছেন দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ যদি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তাহলে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। ২০৪১ সালের স্বপ্ন, উন্নত সমৃদ্ধিশালী দেশের পথে অগ্রসর হবে বাংলাদেশ।’

আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার মতো ভাগ্য বরণ করতে হয়নি। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটি গভীর সংকটে পড়ে। পাকিস্তানের প্রায় একই অবস্থা এখন। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সবচেয়ে আলোচনা হচ্ছে অর্থনীতির যে সূচক নিয়ে, সেই বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ এখন ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করছে। পাকিস্তানের রিজার্ভ এখন ৫ বিলিয়ন ডলার; শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ এখন কত কেউ হিসাবে রাখে না।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের একজন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বীকার করছি যে, আমাদের অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে। তবে এটা জোর দিয়ে বলছি যে, অনেক দেশের চেয়ে ভালো আছি আমরা। নাই নাই করেও আমাদের রিজার্ভ এখনও ৩৪ বিলিয়ন ডলার। এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আমাদের রপ্তানি আয় বাড়ছে; রেমিট্যান্স বাড়ছে; আমদানি কমেছে। রিজার্ভ আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে বলে আমি আশা করছি। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করেছে। আমনের ভালো ফলন হয়েছে। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ২০২৩ সালে আমরা ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়াব।’

মূল্যস্ফীতি

অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতিই বিদায়ী বছরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে সামনে এসেছে। গত আগস্টে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠে গিয়েছিল। ওই মাসে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল দেশে; খাদ্য মূল্যস্ফীতি গিয়ে ঠেকেছিল প্রায় ১০ শতাংশে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ২০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। সেপ্টেম্বরে অবশ্য এই সূচক ৯ দশমিক ১০ শতাংশে নেমে আসে। অক্টোবর ও নভেম্বরে ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৯১ এবং ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

সম্ভাবনার নতুন নাম পদ্মা সেতু

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয় গত ২৫ জুন। এরই মধ্যে এ সেতু দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদ্মা সেতু ভবিষ্যতে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ থেকে দেড় শতাংশ বাড়াবে। যার প্রতিফলন ইতোমধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে। পদ্মার এপার-ওপারে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার হতে শুরু করেছে।

মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু

ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় নতুন একটি যুগ শুরু হয়েছে গত ২৮ ডিসেম্বর। বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয়েছে মেট্রোরেলের একাংশের। এর মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক রেলের যুগে প্রবেশ করল দেশ। মেট্রোরেল ঢাকায় তীব্র যানজট সমস্যার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বাড়বে। অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে।

জ্বালানি তেলের রেকর্ড দাম বৃদ্ধি

বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে সরকার গত ৫ আগস্ট সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে। দাম ৪২ থেকে ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির এ হার দেশে রেকর্ড সৃষ্টি করে। মূল্যস্ফীতি যে এক লাফে সাড়ে ৯ শতাংশে উঠে গিয়েছিল, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি তাতে প্রভাব ফেলেছিল।

দ্রব্যমূল্যে ভোক্তার নাভিশ্বাস

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বব্যাপী ঊর্ধ্বমুখী চাহিদায় দেশেও পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে বিদায়ী বছরে। গড়ে পণ্যের আমদানি মূল্য বেড়েছে ৫০ শতাংশ। কোনোটির দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। অন্য সব ধরনের জিনিসের দামও ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তাতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে যায়।

ডলার-সংকট ও রেকর্ড দাম

চলতি বছরে ব্যাংক খাতে আলোচিত ঘটনা ছিল ডলার-সংকট। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় এই সংকট আরও তীব্র হয়। তাতে খোলাবাজারে সেঞ্চুরি হাঁকায় ডলার; ছাড়িয়ে যায় ১২০ টাকা। এরপর ব্যাংকেও ডলারের দর সেঞ্চুরি করে। ব্যাংক খাতে কয়েক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে এখন ১০৫, ১০৬ বা ১০৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রিজার্ভে চাপ

ডলার-সংকট সামাল দিতে প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। তারপরও ডলারের বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না। এর ফলে কমে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখন সেই রিজার্ভ কমে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এক বছর আগে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে রিজার্ভ ছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলার।

ইসলামি ধারার ব্যাংকে ঋণ অনিয়ম

ইসলামি ধারার তিনটি ব্যাংক থেকে রাজশাহীভিত্তিক নাবিল গ্রুপকে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানকে যে ঋণ দেয়া হয় তা যাচাই-বাছাই না করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সন্দেহ করা হচ্ছে নাবিল গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে এই ঋণ নেয়া হয়েছে অন্য কোনো পক্ষকে সুবিধা দেয়ার জন্য।

খেলাপি ঋণ বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ

খেলাপি ঋণ রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ যাবতকালে এটিই সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের অঙ্ক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। করোনা মহামারিকালে ব্যাংকঋণ আদায়ে দেয়া বিশেষ ছাড় বছরের শুরুতে তুলে নেয়ার পর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ।

গভীর ঘুমে পুঁজিবাজার

গত জুলাইয়ে পুঁজিবাজারে ক্রমাগত দরপতনের মধ্যে ডিএসইর সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যায়। বাজারে লেনদেন খরা নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ২৬ ডিসেম্বর ডিএসইতে হাতবদল হয়েছে ১৯৯ কোটি টাকা, যা গত ২ বছর ৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর চেয়ে কম লেনদেন হয়েছিল ২০২০ সালের ৭ জুলাই।

রপ্তানি আয়ে নতুন মাইলফলক

চলতি বছর দেশের পণ্য রপ্তানি অবশেষে ৫ হাজার কোটি ডলারের মাইলফলকে পৌঁছাল। সব মিলিয়ে গত জুনে সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকার সমান। এই আয় ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। একক মাসের হিসাবেও গত নভেম্বর মাসে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ; এই মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। এর আগে কখনই এক মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে এত বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসেনি।

প্রবাসী আয়ে নিম্নগতি

অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেল চাঙা হওয়ায় চলতি বছর দেশে প্রবাসী আয় ১০০ কোটি ডলার কমবে বলে বিশ্বব্যাংকের সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসেই প্রবাসী আয় ১৬০ কোটি ডলারের নিচে ছিল। চলতি মাসের প্রথম ২৩ দিনে (১-২৩ ডিসেম্বর) দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১২৮ কোটি ৪২ লাখ ডলার। অর্থবছরের পাঁচ মাসের (জুলাই-নভেম্বর) রেমিট্যান্স প্রবাহে ২ দশমিক ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও, অর্থবছর শেষে এই প্রবৃদ্ধি থাকবে কী না-তা নিয়ে যথেষ্ট সংশ্রয় দেখা দিয়েছে।

মাথাপিছু আয় এখন ২,৮২৪ ডলার

দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। এক বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ২৩৩ ডলার। গত পাঁচ বছরে এ দেশের মাথাপিছু আয় ৩৮ শতাংশের বেশি বেড়েছে। দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে থেকে একটি দেশে যত আয় হয়, সেটিকে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে মাথাপিছু আয়ের হিসাব করা হয়।

বিদেশ সফর ও আমদানিতে কড়াকড়ি

ডলার-সংকটের কারণে সরকারি কর্মচারী, ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় গত মে মাসে। এ ছাড়া চলতি বছর কম গুরুত্বপূর্ণ আমদানিনির্ভর প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পাশাপাশি নানা রকমের ফলমূল, প্রসাধনী আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বাড়তি শুল্কারোপ করা হয়।

অর্ধেকে নেমেছে এলসি খোলার পরিমাণ

দেশের রিজার্ভকে সংরক্ষণে পণ্য আমদানিতে নানা শর্তারোপের কারণে এপ্রিল থেকে টানা কমতে কমতে ছয় মাসে অর্ধেকে নেমে এসেছে এলসি খোলার পরিমাণ। চলতি বছরের মার্চে এলসি খোলা হয়েছে ৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারের। সেপ্টেম্বরে এলসি খোলা হয়েছে ৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারের। অক্টোবরে এসে বড় ধরনের পতন হয়েছে। এ মাসে এলসি খোলা হয়েছে ৪ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলারের।

রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত রোম্যাপ অনুযায়ী ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনকে ঘিরে ২০২৩ সালে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা করছেন অনেকে। দীর্ঘদিন ধরে দেশে একটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছিল। যার সুফল পেয়েছে অর্থনীতি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) বাড়তে বাড়তে করোনার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। করোনার মধ্যেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে দেশে। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। সবশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে দেশে।

ধারাবাহিক এই প্রবৃদ্ধি দেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের কারণেই সম্ভব হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে যদি আবার হরতাল-অবরোধ-জ্বালাও-পোড়াও শুরু হয়, তাহলে সেটা আর ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

কেমন গেলো ২০২২ সাল-এ প্রশ্নের উত্তরে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০২২ সাল অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীর কোন দেশের জন্যই ভাল ছিল না। পৃথিবীর পরিস্থিতি ছিল টালমাটাল। বাংলাদেশ এটা থেকে দূরে থাকতে পারেনি। বিশ্বায়নের যুগে এককভাবে থাকা সম্ভব না। আমরাও থাকতে পারি না। আমাদের দেশের সঙ্গে বিশ্বের মিল আছে। সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, এখনও বেশি আছে। ব্যালেন্স অফ পেমেন্টে একটি ঘাটতি আছে। এটাও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আছে। বিশ্বের সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়াতে আমরা একটি বড় ধাক্কা খেয়েছি। তেল, চাল, ডালসহ যে কোন পণ্যের দাম বেড়েছে। নির্মাণ সামগ্রির দাম বেড়েছে। জাহাজের ভাড়া বেড়ে গেছে।’

‘তবে ভালো খবর হচ্ছে, এখন জ্বালানি তেলসহ বিশ্ববাজারে সব পণ্যের দামই কমেছে; বলা যায় বেশ কমেছে। সে দিক দিয়ে নতুন বছরে হয়তো কিছুটা স্বস্তি পেতে পারি আমরা। দেখা যাক কি হয়।’

তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালে কিছু ভাল দিক আছে। আবার কিছু খারাপ দিক আছে। নতুন বছরেও আমাদের ডলার সংকট মোকাবিলা করতে হবে; এই সংকট তাড়াতাড়ি যাবে না। তবে আমি আশাবাদী বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য আরও কমে আসবে। তেলের দাম কমে আসবে। বাজারে চালের দাম কেজিতে ৪/৫ টাকা কমেছে। আমনের ফলন ভালো হয়েছে; আরও কিছুটা কমতে পারে। আর আগামী মৌসুমে বোরো ধানটা যদি ভালো হয়, তাহলে অনেকটা চিন্তামুক্ত থাকা যাবে। মূল্যস্ফীতিকে আমরা বাগে রাখতে পারব।’

আরও পড়ুন:
বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা অনেক, চীনা ব্যবসায়ীদের বেপজা
৫ মাসেই ভারতে রপ্তানি বিলিয়ন ডলার
রেমিট্যান্সে ভর করে ফের বাড়ছে রিজার্ভ
‘সুদহার কমায় টাকা পাচার বেড়েছে’
আইএমএফ প্রাণ খুলে অগ্রগতির প্রশংসা করেছে: অর্থমন্ত্রী

মন্তব্য

আরও পড়ুন

অর্থ-বাণিজ্য
The 5th Intex Bangladesh Exhibition starts in Dhaka

ঢাকায় শুরু ১৬তম ইনটেক্স বাংলাদেশ এক্সিবিশন

ঢাকায় শুরু ১৬তম ইনটেক্স বাংলাদেশ এক্সিবিশন

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সফল গার্মেন্টস ক্রেতা, বিপনন ও সরবরাহকারী এবং সোর্সিং এক্সিবিশন খ্যাত ইনটেক্স বাংলাদেশের ১৬তম আসর আজ রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)-তে শুরু হয়েছে। এই তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল সোর্সিং শোতে ১০টিরও বেশি দেশের ১২৫টির অধিক কোম্পানি অংশ নিচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী ক্রেতা, সরবরাহকারী এবং উৎপাদনকারীদের জন্য একটি গতিশীল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।

পোশাক খাতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ-এর নিত্য উদ্ভাবনী কৌশল ও উন্নতমানের দ্রুত উৎপাদন ক্ষমতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাহিদায় প্রাধান্য পাচ্ছে।

২০২৬ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্প রপ্তানি ৫৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ইনটেক্স-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা, সাপ্লাই চেইনে বৈচিত্র্য আনা এবং টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পে উদ্ভাবন প্রদর্শনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, গেস্ট অব অনার হিসেবে ছিলেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন।

এছাড়াও বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং এলএবিসিসিআই, কেবিসিসিআই ও বিজিসিসিআই-এর মতো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সংস্থার নেতৃবৃন্দও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

মাহবুবুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ এখন পোশাক খাতে বিশ্ব বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দ্রুত টেকসই ও মূল্য-সংযোজিত পোশাক উৎপাদনের একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। উদ্ভাবন, কমপ্লায়েন্স এবং দক্ষ কর্মী নিয়োগে কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশটি দায়িত্বশীল ফ্যাশন ও টেক্সটাইল সোর্সিংয়ের পরবর্তী অধ্যায় নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। আমরা বিশ্বাস করি, ইনটেক্স বাংলাদেশের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে মানসম্পন্ন পণ্য নিশ্চিত করবে”

এই বছরের এক্সপোতে বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য প্যাভিলিয়নের মধ্যে ভারতের (টেক্সপ্রোসিল ও পেডেক্সিলের মাধ্যমে) তুলা, মিশ্র সুতা ও টেকসই টেক্সটাইল প্রদর্শন করছে। চীন নিয়ে এসেছে টেকনিক্যাল ফ্যাব্রিক ও গার্মেন্টস ট্রিম। দক্ষিণ কোরিয়া পরিবেশবান্ধব পারফরম্যান্স উপকরণ প্রদর্শন করছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড ও জাপান নিয়ে এসেছে প্রিমিয়াম শার্টিং ও বোনা পণ্য। বাংলাদেশি প্রদর্শনকারীরা নিটওয়্যার, ডেনিম এবং ভার্টিক্যালি ইন্টিগ্রেটেড উৎপাদন সমাধানের অগ্রগতি তুলে ধরছে।

এক্সপোর মূল্যবোধ আরও বাড়াতে ইন্টারেক্টিভ বিজনেস ফোরাম (আইবিএফ) দুটি সেশনের আয়োজন করেছে। প্রথম সেশনে টেক্সটাইল উৎপাদন ও ফ্যাশনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সংযুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হবে, অন্যদিকে দ্বিতীয় সেশনে বৈশ্বিক শুল্ক ও বাণিজ্য পরিবর্তনের বাংলাদেশি রপ্তানির প্রভাব নিয়ে আলোচনা হবে। এই সেশনগুলোতে এ শিল্পের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা অংশ নিচ্ছেন, যা ব্যবসায়িক স্থিতিস্থাপকতা ও বৃদ্ধির কৌশল প্রদান করবে।

প্রদর্শনীর পাশাপাশি, ইনটেক্স বাংলাদেশ ২০২৫-এ ব্যবসায়িক সভা (বি২বি), ভিআইপি নেটওয়ার্কিং এবং ক্রেতা-সরবরাহকারীদের মধ্যে ম্যাচমেকিং সুবিধা রয়েছে— যা সোর্সিং ও ব্যবসায়িক সম্প্রসারণের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞতা প্রদান করছে।

ওয়ার্ল্ডেক্স ইন্ডিয়ার আয়োজিত এই ইভেন্টটি বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিজিবিএ, ইপিবি এবং আইবিসিসিআই, এলেবিসিসিআই, কেবিসিসিআই ও বিজিসিসিআইয়ের মতো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার সমর্থন পেয়েছে।

বাংলাদেশ যখন আরও উদ্ভাবনী ও টেকসই টেক্সটাইল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে, ইনটেক্স বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারের সাপ্লাই চেইনের সাথে দেশটিকে সংযুক্ত করার একটি প্রধান সমর্থক হিসেবে কাজ করছে।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Foreign investment in the country has decreased by 5 percent

দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৩ শতাংশ

দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৩ শতাংশ

দেশে ২০২৪ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ—এফডিআই আগের বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ কমেছে। গত বছর প্রকৃত এফডিআই এসেছে ১২৭ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। ২০২৩ সালে নিট এফডিআই ছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্টে বিদেশি বিনিয়োগ আসার ওই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ২০২৪ সাল শেষে বিদেশি বিনিয়োগের স্থিতি ১ হাজার ৮২৯ কোটি ডলার, যা দেশের জিডিপির মাত্র ৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় এ ক্ষেত্রে গড় হার ১৩ শতাংশ।

ভারতের হার ১৪ শতাংশ। ভুটানের মতো দেশে এ হার ১৭ শতাংশ। বাংলাদেশে ২০২৪ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগে অর্থের ঘোষণার পরিমাণও কমেছে।

ঘোষিত অর্থের পরিমাণ ১৭৫ কোটি ডলার। গত বছরের তুলনায় যা ৩৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে মাত্র ৭০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।

গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২১ সালে দেশের বাইরে সর্বাধিক ৮ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব যখন আরো গভীর সহযোগিতা ও বিস্তৃত সুযোগ সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা, তখন ঘটছে তার বিপরীত। ২০২৪ সালে বৈশ্বিকভাবে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ১১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় ধাক্কা। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে মন্দা, শিল্প খাতে চাপ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি কম মনোযোগ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বাণিজ্য উত্তেজনা, নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং ভূরাজনৈতিক বিভাজন বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশকে আরো জটিল করে তুলছে।

তবে অন্ধকারে কিছুটা আশার আলোও রয়েছে। ডিজিটাল অর্থনীতিকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এর প্রবৃদ্ধি এখনো অসম। ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে ডিজিটাল পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। কারণ, ডিজিটাল সংযুক্তি হতে পারে অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতির একটি শক্তিশালী চালিকাশক্তি, যদি তা সবার কাছে পৌঁছানো যায়। প্রতিবেদনটি সরকারগুলোকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিএস) অর্জনে সহায়তা করার বিষয়ে ব্যবহারিক নির্দেশনা দিয়েছে। এ সময়টাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একসঙ্গে কাজ করার, যাতে আরো সহনশীল ও টেকসই বিশ্ব গড়ে তোলা যায়। সে লক্ষ্যে প্রতিবেদনটি বিভিন্ন নীতিগত ধারণা ও পরামর্শ তুলে ধরেছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং এর আগ থেকে জ্বালানি সংকটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। যার প্রভাব কিছুটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হলেও সেটি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সন্তোষজনক নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০২৪ এ প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে এফডিআই প্রবাহ বেড়েছিল ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২০২২ সালে প্রবাহ ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়ে ছিল ৩৪৮ কোটি ডলার। ২০২৩ সালে ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমে প্রবাহ হয়েছে ৩০০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ভিয়েতনামে বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। কম্বোডিয়ায় এফডিআই প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালে হয়েছে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ। পাকিস্তানে এফডিআই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

২০২৩ সালে ৪৫টি স্বল্পোন্নত দেশে (এলডিসি) এফডিআই ১৭ শতাংশ বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলারে দাড়িয়েছে। এর প্রায় ৫০ শতাংশ প্রবাহ কেন্দ্রীভূত ছিল কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, বাংলাদেশ, উগান্ডা এবং সেনেগাল—এ পাঁচ দেশে। গত এক দশকে স্বল্পোন্নত দেশের বহিঃখাতগুলোয় অর্থায়নের অন্যান্য উৎসের তুলনায় এফডিআই প্রবৃদ্ধিই পিছিয়ে আছে। সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন সহায়তা এবং রেমিট্যান্স হার স্বল্পোন্নত দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় বেশি। ওই বছর বৈশ্বিকভাবে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ ১০ শতাংশের বেশি কমে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে স্থবির ছিল।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Bri has invented three new varieties of rice

নতুন আরো তিন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে ব্রি

নতুন আরো তিন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে ব্রি

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ধানের আরও তিনটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে একটি লবণাক্ততা সহনশীল, একটি উচ্চফলনশীল বোরো এবং অন্যটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী। এ নিয়ে ব্রি আটটি উচ্চফলনশীল বা হাইব্রিড জাতসহ মোট ১২১টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে।

নতুন উদ্ভাবিত তিনটি জাত হলো; লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি-১১২, উচ্চফলনশীল বোরো ব্রি-১১৩ ও ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ব্রি-১১৪। গত বুধবার জাতীয় বীজ বোর্ডের (এনএসবি) ১১৪তম সভায় নতুন এ তিনটি জাত অনুমোদন করা হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সভাপতিত্বে বোর্ড সভায় ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলোর মধ্যে ব্রি ধান-১১২ লবণাক্ততা সহনশীল ও মাঝারি জীবনকালীন রোপা আমনের জাত। এ জাতের ডিগপাতা প্রচলিত ব্রি ধান-৭৩-এর চেয়ে খাড়া। ব্রি ধান-১১২ লবণাক্ততার মাত্রাভেদে হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ১৪ থেকে ৬ দশমিক ১২ টন ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের জীবনকাল ১২০ থেকে ১২৫ দিন এবং গাছের উচ্চতা ১০৩ থেকে ১০৫ সেন্টিমিটার। গাছের কাণ্ড মজবুত। এ কারণে ঢলে পড়ে না। এ জাতের ধানের চাল মাঝারি চিকন ও সাদা। ভাত ঝরঝরে। এটি লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। দানা মাঝারি চিকন ও শিষ থেকে ধান সহজে ঝরে পড়ে না। জীবনকাল তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে ফসল কর্তনের পর মধ্যম উঁচু থেকে উঁচু জমিতে সূর্যমুখী ও লবণ সহনশীল সরিষা আবাদের সুযোগ তৈরি হবে।

ব্রি ধান-১১৩ জাতটি বোরো মৌসুমের জনপ্রিয় জাত ব্রি-২৯-এর বিকল্প হিসেবে ছাড়করণ করা হয়েছে। এটি মাঝারি চিকন দানার উচ্চফলনশীল জাত। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা এবং ধান পাকলেও সবুজ থাকে। গাছ শক্ত ও মজবুত বিধায় সহজে হেলে পড়ে না। জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৩ দিন। চালের আকার-আকৃতি মাঝারি চিকন ও রং সাদা। দেখতে অনেকটা নাজিরশাইলের মতো। এ ধানের চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ এবং ভাত ঝরঝরে। এ ছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় দেখা গেছে, জাতটি ব্রি ধান-৮৮-এর চেয়ে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি ফলন দিয়েছে। এ জাতের গড় ফলন হেক্টরে ৮ দশমিক ১৫ টন। উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে জাতটি হেক্টরে ১০ দশমিক ১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।

কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, নতুন ব্রি ধান-১১৪ বোরো মৌসুমের দীর্ঘ জীবনকালীন ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা। গাছ মজবুত এবং হেলে পড়ে না। পাতার রং গাঢ় সবুজ। এর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৭ দশমিক ৭৬ টন। দানা মাঝারি মোটা এবং সোনালি বর্ণের। ভাত ঝরঝরে হয়। জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাসম্পন্ন। ফলে এ জাতের ধান চাষে কৃষককে ব্লাস্ট রোগ নিয়ে বাড়তি চিন্তা করতে হবে না, উৎপাদন খরচ সাশ্রয় হবে।

ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, জাতগুলো অনুমোদন লাভ করায় এখন আমরা এসব ধানের বীজ বাজারজাত করতে পারব। কৃষকেরা এ জাতের ধান চাষ করে লাভবান হবেন। তাদের উৎপাদনও বাড়বে। উপকূলীয় অঞ্চলে পানিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকায় অনেক সময় ধান চাষ করা যেত না। এখন আমাদের ব্রি ধান-১১২ সেসব এলাকায় সহজে চাষ করা যাবে। এ ছাড়া অন্য জাতগুলো আমাদের ধান উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।

সূত্র: বাসস

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Customs VAT and Tax Office will be open on June 23 and 26

২১ ও ২৮ জুন কাস্টমস, ভ্যাট ও কর কার্যালয় খোলা থাকবে

২১ ও ২৮ জুন কাস্টমস, ভ্যাট ও কর কার্যালয় খোলা থাকবে

আগামী ২১ ও ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং এর অধীনে সব কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর কার্যালয় খোলা থাকবে। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও ওই দুই দিনও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মূলত রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে এনবিআর। গত ২ জুন আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২২ জুন বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) মোট ৩ লাখ সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা আদায় করেছে। এটি সাময়িক হিসাব। ভ্যাটের রিটার্ন দাখিলের হিসাবের এই সংখ্যা আরও বাড়বে। লক্ষ্য অর্জনে শুধু জুন মাসেই সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে।

এনবিআরকে চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। মূল লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
From now on the dollar will be market based Governor

এখন থেকে ডলারের দাম হবে বাজারভিত্তিক: গভর্নর

জুনের মধ্যে আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়
এখন থেকে ডলারের দাম হবে বাজারভিত্তিক: গভর্নর

বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে ডলার-টাকার বিনিময় হার এখন থেকে বাজারনির্ভরভাবে নির্ধারণের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।

এ সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ আগামী জুন মাসের মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের ঋণ কিস্তি পাবে বলেও জানান তিনি।

ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের দর-কষাকষি চলছিল। মূলত সে কারণে আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় করছিল না। এর মধ্যে গতকাল জানা যায়, বাংলাদেশ ডলারের বিনিময় আরও নমনীয় করতে রাজি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারে ঋণের দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করতে রাজি হয়েছে আইএমএফ।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত ৯ মাসে রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করা হয়নি, তবুও বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে এবং তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। এ অবস্থায় বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে ব্যাংকারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, বাজারভিত্তিক করায় হঠাৎ করে ডলারের রেট অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘদিন ধরে ডলারের রেট ১২২ টাকার আশপাশে রয়েছে এবং তা সেখানেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ডলারের রেট দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা-সরবরাহ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, বাইরের দেশের নির্দেশে নয়। বর্তমানে বাজারে ডলারের সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে।

তবে, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দুবাইভিত্তিক কিছু সিন্ডিকেট বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক থাকবে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ড. মো. হাবিবুর রহমান, কবির আহমেদ, উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ এবং নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।

এদিকে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের জুনের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির জন্য নির্ধারিত ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার একত্রে ছাড় করবে।

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে সকল বিষয় সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে উভয়পক্ষ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা বিনিময় হারসহ অন্যান্য সংস্কার কাঠামো বিষয়ে সম্মত হয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং বিনিময় হার ব্যবস্থায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে অধিকতর পর্যালোচনার লক্ষ্যে চতুর্থ রিভিউ সম্পন্ন হওয়ার পর উভয় রিভিউয়ের জন্য নির্ধারিত কিস্তির অর্থ একত্রে ছাড় করা হবে বলে বিগত তৃতীয় রিভিউয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ রিভিউয়ের সময় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ব্যাংক-ফান্ড সভায় এবিষয়ে আলোচনা চলমান ছিল।

এ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, জাপান এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরও প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা জুন মাসের মধ্যে পাবে বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এ অর্থ পাওয়া গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে। ফলে মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয় যে, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে যেসকল সংস্কার কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব বিবেচনায় পরিকল্পিত এবং জাতীয় স্বার্থে গৃহীত। এ সকল সংস্কার কর্মসূচির ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যক্রম শুধুমাত্র কারিগরি সহায়তা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
The United States and China agree to reduce tariffs

শুল্ক কমাতে একমত যুক্তরাষ্ট্র ও চীন

শুল্ক কমাতে একমত যুক্তরাষ্ট্র ও চীন

বাণিজ্যযুদ্ধের তীব্রতা কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। পরস্পরের ওপর আরোপ করা পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য শুল্ক ৯০ দিনের জন্য ব্যাপক পরিসরে কমাতে একমত হয়েছে দুই দেশ। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা কমাতেই এই চুক্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর বিবিসির।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের আগে চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। পরে নতুন শুল্ক যখন ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন তখন তিনি বলেছিলেন তিন মাস সবার জন্য বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক হার প্রযোজ্য হবে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দুপক্ষের মধ্যে আলোচনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, গঠনমূলক ও দৃঢ় আলোচনার পর উভয় দেশ ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করতে রাজি হয়েছে। এর আওতায় দেশ দুটি পারস্পরিক শুল্ক ১১৫ শতাংশ কমাবে।

চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত বর্তমান ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। অন্যদিকে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপ করা ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। উভয় দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আগামী ১৪ মে থেকে শুল্কের এই কাঁটছাট কার্যকর হবে।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে স্কট বেসেন্ট বলেন, আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি যে, আমাদের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। দুই পক্ষের প্রতিনিধিদলই একমত হয়েছে যে তারা বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না। মার্কিন অর্থমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশই নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পেরেছে। আমাদের লক্ষ্য ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যের পথে অগ্রসর হওয়া এবং এটি তারই সূচনা।

প্রথম দফায় শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল এবং বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কাও জোরালো হয়েছিল। তবে এবার এই চুক্তির ঘোষণায় বিশ্ব শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

শুল্ক কমানোর চুক্তির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববাজারে চাঙাভাব দেখা দেখা গেছে। হংকংয়ের প্রধান সূচক ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ স্টক ফিউচারের উত্থান হয়েছে। এছাড়া বাড়তি শুল্ক স্থগিতের খবরে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দর বেড়ে ছয় মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউরোপীয় শেয়ারবাজারগুলোও উচ্চমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু করে এবং মার্কিন বাজারগুলোও ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, এই সময়সীমার মধ্যে চীনের উচিত হবে ফেন্টানিল নামক ভয়াবহ মাদকের অবৈধ রপ্তানি বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া। এ বিষয়ে চীনের সদিচ্ছা দেখে ওয়াশিংটন আশাবাদ প্রকাশ করেছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের প্রবেশ ঠেকাতে চীন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না এমন অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
NBR will form special units to prevent money smuggling

টাকা পাচার ঠেকাতে বিশেষ ইউনিট গঠন করবে এনবিআর

টাকা পাচার ঠেকাতে বিশেষ ইউনিট গঠন করবে এনবিআর
টাকার পাচার রোধে এনবিআর তিনটি উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে। প্রথমত, আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা ও ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার ঠেকাতে দক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে বিশেষায়িত একটি ইউনিট গঠন করা যেতে পারে। এই ইউনিটের সদস্যরা প্রতারণা হয় বা হতে পারে- এমন বিল অব এন্ট্রিগুলো তদারকি ও তদন্ত করবেন। এই ইউনিট গঠন হলে একদিকে টাকা পাচার বন্ধের পাশাপাশি এনবিআরের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির সক্ষমতা বাড়বে।

টাকা পাচার ঠেকাতে বিশেষ ইউনিট গঠন করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মূলত বাণিজ্যের আড়ালে যে বিদেশে টাকা পাচার হয়, তা প্রতিরোধ করতেই এমন উদ্যোগ। দুই প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার হয় বলে মনে করে এনবিআর। এগুলো হলো-আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং। এসব কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব লোকসান হয় বলে মনে করে এনবিআর।

সম্প্রতি এনবিআর মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল নামে ১০ বছরের একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। সেখানে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।

গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) উদ্ধৃতি দিয়ে এনবিআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে (মিথ্যা ঘোষণা) ৭০ শতাংশ অর্থ পাচার হয়ে থাকে।

টাকার পাচার রোধে এনবিআর তিনটি উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে। প্রথমত, আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা ও ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার ঠেকাতে দক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে বিশেষায়িত একটি ইউনিট গঠন করা যেতে পারে। এই ইউনিটের সদস্যরা প্রতারণা হয় বা হতে পারে- এমন বিল অব এন্ট্রিগুলো তদারকি ও তদন্ত করবেন। এই ইউনিট গঠন হলে একদিকে টাকা পাচার বন্ধের পাশাপাশি এনবিআরের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির সক্ষমতা বাড়বে।

সাধারণত আমদানিকালে তুলনামূলক বেশি দাম দেখিয়ে অর্থ দেশের বাইরে পাচার করা হয়। মূলত মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এভাবে টাকা পাচার করা হয়। দুই বছর আগে এনবিআর পাচার টাকা ফেরত আনার সুযোগ দিলেও কেউ তা নেননি।

এনবিআরের দ্বিতীয় সুপারিশ হলো, বিদেশি কূটনীতিক মিশনে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের জন্য এটাশে পদ সৃষ্টি করা। এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং ইস্যুটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। যেসব দেশ থেকে পণ্য আসে, সেখানে পণ্যের মূল্য কত, তা জানা সম্ভব হয় না। আবার নানাভাবে বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার হয়। এনবিআর বলছে, বিভিন্ন দূতাবাসে, বিশেষ করে বাংলাদেশে বড় বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোতে রাজস্ব খাতে কর্মকর্তাদের জন্য এটাশে পদ সৃষ্টির সুপারিশ করেছে এনবিআর। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, ভারতের মতো দেশ এমন পদ সৃষ্টি করেছে বলে এনবিআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এনবিআরের তৃতীয় সুপারিশ হলো, পাচার টাকা ফেরত আনতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া; যেসব দেশে পাচার হয়, সেখানে তদারকি ও পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধি; আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করা। এসব করা হলে পাচার টাকা চিহ্নিত করে ফেরত আনা সহজ হবে। এ ছাড়া টাকা পাচারে সহায়তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনার কথাও বলেছে এনবিআর।

এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, টাকা পাচারের কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায় সরকার। টাকা পাচার বন্ধ করতে পারলে অর্থনীতি আরও চাঙা হবে। এ ছাড়া সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের রাঘববোয়াল (ক্রীড়নক), আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এই পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি রিপোর্টস (জিএফআইআরএস) এবং কিছু নির্দিষ্ট পূর্বানুমানের ভিত্তিতে টাকা পাচারের হিসাব করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।

দেশ থেকে কারা, কীভাবে, কোথায় টাকা পাচার হয়েছে- সেই চিত্র তুলে ধরে শ্বেতপত্রে বলা হয়, টাকা পাচারের জন্য দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের ক্রীড়নক, আমলাদের মধ্যে এক ধরনের অনৈতিক চক্র গড়ে ওঠে। ঘুষ-দুর্নীতি, আর্থিক অপরাধ, মিথ্যা ঘোষণার আড়ালে বাণিজ্য, ব্যাংক থেকে চুরি করা টাকা, খেলাপি ঋণের অর্থ, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে দেখানো, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, কর ফাঁকি- এসব কর্মকাণ্ডের অর্থ পাচার করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ করের অভয়ারণ্য নামে পরিচিত ছোট ছোট দেশে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয়েছে। মূলত বাড়ি কিনে এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ করে টাকা পাচার করা হয়।

মন্তব্য

p
উপরে