রাজধানীর বড় বাজারগুলোতে শীতের সবজির প্রাচুর্যের প্রভাবে দাম কমা শুরু হয়েছে ছোট ছোট বাজারে।
সপ্তাহ দুয়েক আগেও এসব বাজারে সবজি বিক্রি হতো কারওয়ান বাজারের চেয়ে অনেক বেশি দামে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার দামের সেই বিস্তর ফারাক দেখা যায়নি, যাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতাদের অনেকে।
রাজধানীর মতিঝিল, কমলাপুরসহ আশেপাশের বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
কমলাপুর বাজারের ক্রেতা কলেজপড়ুয়া তারিক বলেন, ‘সপ্তাহ দুয়েক আগে কমলাপুরে সবজির দাম কারওয়ান বাজারের চেয়ে কেজিতে ২০, ৩০ বা ৪০ টাকা পর্যন্ত বেশি ছিল। এখন সেটা নেই। কিছু সবজিতে হয়তো ৫, ১০ টাকার পার্থক্য আছে। সেটা তেমন বেশি কিছু না।’
আরেক ক্রেতা শিশির বলেন, ‘আগে এই বাজারে সবজির দাম অনেক বেশি নিত, যে কারণে বেশি বাজার করার প্রয়োজন হলে কারওয়ান বাজার থেকেই করতাম।
‘এখন দাম মোটামুটি একই। তাই এখান থেকেই নিয়মিত বাজার করছি। শীতের সময়টাতে যেকোনো বাজারেই সবজি কিনতে ভয় লাগে না।’
শীতের শুরুতে চড়া দামে বিক্রি হয় ফুলকপি ও বাঁধাকপি, তবে এসবের দাম প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমেছে।
বিক্রেতারা জানান, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে। কিছুদিন আগেও সবজি দুটির দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, তবে এখনও বেশ চড়া টমেটোর দর। পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
শিমের দাম তিন থেকে চার ভাগ কমেছে। প্রতি কেজি শিম বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। মৌসুমের শুরুতে এর কেজি ছিল ১২০ টাকা। গত সপ্তাহেও মতিঝিল এলাকায় কেজিপ্রতি ৫০ টাকার বেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া পেঁপে ২০ টাকা, বেগুন রকমভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, করলা মানভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে।
আমদানি করা লম্বা গাজরের দাম একই থাকলেও কমেছে দেশি গাজরের দাম। বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, যা কিছুদিন আগেও ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেচাকেনা হয়।
এ ছাড়া চিচিঙ্গা ও ধুন্দল বিক্রি হয় ৬০ টাকা কেজিতে। রকমভেদে প্রতিটি লাউ বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৫০ টাকায়।
পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। নতুন পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৩৫ টাকা। রকমভেদে কাঁচামরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। এ ছাড়া ভালো মানের আদা ও রসুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
জানতে চাইলে কমলাপুরের বিক্রেতা রিফাত বলেন, ‘এখন প্রচুর মালের (সবজি) আমদানি। আমরা কম দামে কিনতে পারছি। তাই সেই এ রকম দামে বিক্রি করছি।’
আরেক বিক্রেতা জহির বলেন, ‘এখন সবজির আমদানি বেশি। এ জন্য দাম কম। সবজির দাম বেশি থাকলে আমাদের খরচও বেড়ে যায়। ধরেন ১০০ টাকা কেজিতে ১ মণ মাল কেনার পরে সেখান থেকে যদি ৫ কেজি নষ্ট বের হয়, তাহলে কত টাকা লস হয়? আর যদি সেই মাল ৫০ টাকা কেজিতে কেনা পড়ে তাহলে কয় টাকা লোকসান হবে? অবশ্যই কম।
‘এ কারণে দাম চড়া থাকলে আমাদের খরচও বেশি পড়ে। বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে, যার কারণে কাস্টমারও খুশি থাকে না। আমরাও বেচে আরাম পাই না।’
তিনি বলেন, ‘শীতকালে এই সমস্যাটা খুব বেশি থাকে না। মালও তেমন পচে না; নষ্ট কম হয়। আমদানি বেশি থাকার কারণে কম দামেও পাওয়া যায়, যার কারণে কাস্টমাররাও সন্তুষ্ট থাকেন।’
বাজারে সবজির দামে অসন্তোষ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে কাউকে কাউকে। এমনই একজন বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুর রহমান ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, ‘শীতকালে কেন সবজির এমন দাম হবে, সেটা যেই বাজারেই হোক। বেগুন ২০ টাকার বেশি হওয়া উচিতই না। ছোট ছোট ফুলকপি ৩০ টাকা পিস, তাহলে দাম কোথায় কম হলো? তবে অন্য সময়ের চেয়ে এখন এসব ছোট বাজারে কিছুটা কম দামে সবজি কেনা যাচ্ছে।
‘অন্য সময় তো আগুন; ছোঁয়াই যায় না। হাজার টাকার বাজার করলেও মনে হয় কিছুই কিনিনি।’
কেমন ছিল মাছের দাম
চাষ করা কই, তেলাপিয়া, পাঙাশ বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে। রকমভেদে রুই, কাতলা কার্পজাতীয় মাছ ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া প্রায় অপরিবর্তিত ছিল অন্যান্য মাছের দামও।
বিক্রেতা রশিদ বলেন, ‘এখন তো সব ধরনের মাছের চাষ হয়, যার কারণে দাম একটু কম থাকে।’
দাম অপরিবর্তিত থেকে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ১৫৫ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া লেয়ার ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতা ইয়াসিন।
দাম অপরিবর্তিত থাকা পাইজাম চাল প্রতি কেজি ৫৮ টাকা, আটাশ ৬০ থেকে ৬২ টাকা, নাজিরশাইল ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়।
আরও পড়ুন:জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তররের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, দেশব্যাপী অভিযান এবং তৎপরতার কারণে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০০ টাকা কমেছে। অন্যান্য বছর রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা গেলেও এবার বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান মঙ্গলবার বলেন, ‘মুরগির দাম অযৌক্তিভাবে বেড়ে যাওয়ায় ২৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছিল। আমরা এর প্রেক্ষিতে দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদেরকে সঙ্গে নিয়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করি। এর ফলস্বরুপ পোল্ট্রি মুরগি এখন ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ১০০ টাকা কমেছে।’
তিনি বলেন, ‘রমজানে ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করছে। বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে পুরো রমজান মাসজুড়ে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। ’
ক্রেতাদের একবারে বেশি পণ্য ক্রয় ‘প্যানিক বায়িং’ না করার পরামর্শ দিয়ে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘ভোক্তাদের বলবো আপনারা প্যানিক বায়িং করবেন না। বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য আপনাদেরকেও দায়িত্বশীল হতে হবে।’
ভোক্তারা কোথাও প্রতারিত হলে ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ দাখিলের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি অভিযোগের শুনানি করা হবে।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় পোশাকের স্টিকার পরিবর্তন করে বেশি দামে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু এবারের ঈদে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে-এজন্য আমরা আগামী বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করব। কোনো বিক্রেতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের সত্যতা মিললে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ব্রয়লার মুরগির দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সম্প্রতি জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর চারটি বড় পোল্ট্রি কোম্পানি কাজী ফার্মস লিমিটেড, সিপি বাংলাদেশ, আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেড এবং প্যারাগন পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেডের সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানে এই চার কোম্পানি মুরগির দাম কমানোর ঘোষণা দেয়। এরপর খুচরা পর্যায়ে পোল্ট্রি মুরগি দাম কমতে শুরু করে।
আরও পড়ুন:বাজার ব্যবস্থাপনার মান বাড়িয়ে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে মানুষকে স্বস্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি। তারা বলেছে, বিশ্ববাজারের দোহাই দেয়া হলেও অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে অনেক পণ্যের দাম বেশি। বাজারে পণ্য নিয়ে যারা কারসাজি করে তাদের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।
নতুন ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে সোমবার এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ পরামর্শ দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েই যাচ্ছে। পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমছে, কিন্তু সেগুলোর সুফল আমরা পাচ্ছি না। শুধু বিদেশি পণ্য নয়, দেশি পণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে। দাম বাড়ার অনেক কারণ দেখানো হয়, এর কোনোটা যৌক্তিক কোনোটা যৌক্তিক নয়।
‘আমাদের যে বাজার ব্যবস্থাপনা, যে করের ব্যবস্থাপনা, সেখানে কমিয়ে এনে কিছুটা স্বস্তি দেয়া যেতে পারে। এছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনা বলতে যেটা থাকার কথা, সেটা আমরা দেখছি না। যার ফলে যেকোনো সংকট হলে, সেটার সুযোগ নেয়া হচ্ছে।’
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি বাড়ানো দরকার। আর এই পণ্য যাদের দরকার তারা যেন পায়। আরও বেশি পণ্য বিক্রি করা দরকার। প্রতিযোগিতা কমিশনের কাজ বাড়াতে হবে। বাজারে পণ্য নিয়ে যারা কারসাজি করে তাদের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।
‘প্রতিযোগিতা আইনকে শক্তিশালী করে একচেটিয়া ব্যবসাকে ঠেকাতে হবে। প্রত্যক্ষ অর্থ সহায়তা দেয়া দরকার, যেন সেটা গরিব মানুষের হাতে যায়।’
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা ২৮টি পণ্য পেয়েছি, যেগুলোর ওপর কর কমাতে হবে। যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলবে কর আহরণ কমে যাবে। তবু আমরা মনে করি, কর কমিয়ে জনগণকে স্বস্তি দিলে সেটা সামগ্রিক কর আহরণে তেমন একটা প্রভাব ফেলবে না।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশে চালের দাম থাইল্যান্ড অথবা ভিয়েতনামের চেয়ে বেশি। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে নিচের দিকে। কিন্তু বাংলাদেশে বেশি আছে। বাংলাদেশে চিনির দাম বিশ্ব বাজারের তুলনায় বেশি। আমরা গুরুর মাংস আমদানি করি না। তারপরও বাংলাদেশে গুরুর মাংসের দাম বিশ্ব বাজারের তুলনায় বেশি। আমরা যে সবসময় বিশ্ববাজারকে দোষ দেব সেটা নয়।’
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা হিসাব করে দেখেছি, ঢাকা শহরে চার সদস্যের একটি পরিবার যদি পুরো মাস ভালো খায়, তাহলে তাদের খরচ হবে ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। কিন্তু বেশির ভাগ খাতেই যারা কাজ করছেন তাদের আয় এই খরচের তুলনায় কম। যদিও মূল্যস্ফীতির হার কম, কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বাজারের পণ্যের দামের মিল নেই। আমরা দেখেছি বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম গড়ে ২৪ শতাংশ বেড়েছে।’
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহ শহরের মেছুয়া বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রোজা শুরুর আগের দিন বৃহস্পতিবারও একই দামে বিক্রি হয়েছে মুরগি। বেশি দামে কিছুদিন আগে মুরগি কেনার কারণেই দাম কমাতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
এদিকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীরা উচ্চ দরে মুরগি বিক্রি করে পকেট ভারি করছেন বলে মনে করছেন ক্রেতারা।
আনোয়ার হোসেন নামের এক মুরগি বিক্রেতা নিউজবাংলাকে জানান, গত এক মাস আগে মুরগি ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পেরেছেন। এরপর থেকেই মাসজুড়ে হু হু করে বেড়েছে দাম। পাইকারি পর্যায়ে দাম বেড়ে যাওয়ায় তারাও বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে পাইকারিভাবে মুরগির দাম কিছুটা কমলেও তারা বাজারে আগের দামেই বিক্রি করছেন। কারণ মুরগিগুলো বেশিরভাগ ব্যবসায়ীদের কিছুদিন আগের কেনা ছিল। তবে কিছুদিনের মধ্যে দাম কমে আসবে বলে জানান তিনি।
আমিরুল ইসলাম নামের আরেকজন বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা সিন্ডিকেট করে মুরগি বিক্রি করি না। কোনো বিক্রেতা কিছুদিন আগে মুরগি কিনেছেন আবার কেউ পরে। এজন্য একজনের সঙ্গে আরেকজনের দামটাও কিছুটা পার্থক্য হচ্ছে। যে যার মতো কিছুটা লাভ করে বিক্রি করছেন।‘
তবে ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা মুরগি ব্যবসায়ীদের খোঁড়া যুক্তি মানতে নারাজ।
মুরগি কেনা শেষে মইনুল হোসেন নামের এক ক্রেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গোপনে বাজার মনিটরিং করতে একজন কর্মকর্তা এসেছিল। কিছুক্ষণ পর বাজারদর জানতে আরেকজন সাংবাদিক আসে। দুইজনকেই দাম কত জিজ্ঞেস করলে বিক্রেতা বলেছে ২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ আমার কাছ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে। যদি বাজারে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা না করে তাহলে ইচ্ছেমতো দামেই বিক্রি চলবে।’
নগরীর ঐতিহ্যবাহী শম্ভুগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে মুরগি। মুরগির দাম হাতের নাগালের বাইরে থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিম্ন-মধ্যবিত্তরা। অনেকে মুরগি থেকে মুখ ফিরিয়ে মাছ কিংবা শুঁটকির বাজারে ছুটছেন।
মুরগির দাম এতো বেড়ে যাওয়ার কারণ খুঁজতে যাওয়া হয় জেলার গৌরীপুর উপজেলার ঢৌহাখলা ইউনিয়নের নন্দীগ্রামে। সেখানে কথা হয় খামারি শামসুল হকের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আমার খামারে ৫০০ মুরগির বাচ্চা ৬০ টাকা দরে কেনা ছিল। মুরগির বয়স এখন ২৬ দিন। ৩২ দিন হলে বাচ্চা বিক্রি করব। ৩২ দিনে প্রতি মুরগি গড়ে ১ হাজার ৭০০ গ্রাম ওজন হবে। তাহলে প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় ১৬০ টাকা। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত দামে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খামারি বলেন, ‘মূলত মুরগির বাচ্চার সংকটের কারণেই ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। কোম্পানির মালিকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাচ্চার কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে আমাদের মতো খামারিদের কাছ থেকে ভালো ব্যবসা করতে চাইছে। এগুলোও সংশ্লিষ্টদের তদারকি করা প্রয়োজন।’
রফিক মিয়া নামের আরেকজন খামারি বলেন, ‘খুচরা বাজারে মুরগির দাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়লেও আমরা (খামারিরা) বেশি লাভবান হইনি। সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে এক শ্রেণির অসাধু খুচরা বিক্রেতারাও। তারা সিন্ডিকেট করে কিছুদিনের জন্য হলেও নিজেদের পকেট ভারি করেছে।’
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের বলেন, ‘নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। মনমতো দামে মুরগিসহ কোনো পণ্য বিক্রি করার প্রমাণ মিললে জরিমানার আওতায় আনা হবে।’
আরও পড়ুন:রোজার প্রথম দিন শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়েছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এরই ধারাবাহিকতায় রমজানের দ্বিতীয় দিন শনিবার ঢাকা নিউ মার্কেটের কাঁচাবাজারে অভিযান শুরু করে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি।
অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মন্ডল নিউজবাংলাকে জানান, অভিযানে রমজানে বেশি বিক্রি হয় এমন পণ্যগুলোর দাম ঠিক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি পণ্যগুলোর সরবরাহ ঠিক আছে কি না, তাও দেখা হবে।
তিনি জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হওয়া এ অভিযানে নেতৃত্বে আছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।
এর আগে প্রথম রোজায় কারওয়ান বাজারে অভিযানেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
গতকাল কারওয়ান বাজারে অভিযান নিয়ে মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বেসরকারি চ্যানেল আরটিভিকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুসারে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিএসটিআই, সিটি করপোরেশন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ—আমরা সমন্বিতভাবে এবারে বাজার তদারকিতে নেমেছি। দেখার বিষয় হলো বাজারে মানুষ সেবা পাচ্ছে কি না, মূল্য কতটুকু বেড়েছে। আল্লাহর রহমতে মুদির দোকানদাররা বলেছে, পণ্যের মূল্য কিন্তু আগের চেয়ে কমতির দিকে।
‘মুরগি নিয়ে সবার একটা ক্ষোভ ছিল, আক্ষেপ ছিল। গতকাল (বৃহস্পতিবার) তারা যে দাম কমিয়েছে, সেটা বাজারে খুচরা পর্যায়ে আসতে তিন দিন লাগবে, তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যেই বেগুন আমরা পাইকারি বাজারে পেয়েছি ৪০ টাকা, কারওয়ান বাজারে খুচরা দেখেছি আমরা সেটা ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তখন আমরা মার্কেট সমিতির সেক্রেটারি মহোদয়কে বলেছি, এটা আজকের মধ্যেই ঠিক করতে হবে। কারণ আমরা এবার যদি বাংলাদেশের সব ব্যবসায়ী সমিতি, তারা যদি দায়িত্ব না নেয়, তাহলে কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আমরা তাদের বিরুদ্ধে লিখব।’
ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভাউচার রাখা ও রসিদ দেয়ার কথা বলা হয়েছে জানিয়ে ভোক্তা অধিকারের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘পাশাপাশি আমরা আরেকটা যে বিষয় বলেছি সবাইকে, ক্রয় ভাউচার রাখতে হবে; বিক্রয় রশিদ দিতে হবে। আর মূল্যতালিকা টানাতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের যে ঢাকা মহানগরীতে সাতটি টিম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চারটি, দেশব্যাপী ভোক্তা অধিকারের ৫৬টি টিম কাজ করবে এবং আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পাইকারি বাজারগুলোতে অবস্থান করছি।
‘আমাদের টিম রয়েছে কাপ্তানবাজারে, আমাদের টিম রয়েছে মিরপুর শাহ আলী মার্কেটে, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে। সব বাজারগুলোতে যাচ্ছি আমরা। বনানী থেকে উত্তরা, সব বাজার। আমরা চাইব ব্যবসায়ী সমিতি, যারা বাজারে থাকবেন। তারা থেকে এটা নিশ্চিত করবেন।’
রমজান উপলক্ষে শত শত পণ্যে ছাড় দিচ্ছে সুপারমার্কেট রিটেইল ব্র্যান্ড চেইনশপ ‘স্বপ্ন’।
প্রতি সপ্তাহের শুক্র এবং শনিবার ক্রেতারা ‘স্বপ্ন’ থেকে সবসময় বিভিন্ন পণ্যে ছাড় পেয়ে থাকেন। আর এবার মাহে রমজান উপলক্ষে সবচেয়ে বেশি পণ্যের ওপর ছাড় ঘোষণা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
স্বপ্নর হেড অফ মার্কেটিং মাহাদী ফয়সাল বলেন, ‘রমজানের শুরুতে টানা অফার থাকছে আমাদের। বিশেষ করে রমজানের শুরুতেই প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোতে বিশাল ছাড় থাকছে। এছাড়া পুরো রমজানজুড়ে শত শত পণ্যে ছাড় দিচ্ছে স্বপ্ন।’
বিশেষ করে রমজানের শুরুতেই, পুষ্টি সয়াবিন তেল ৫ লিটার ৮৭০ টাকা, ছোলা প্রতি কেজি ৮৫ টাকা, এসিআই লবণ ১ কেজিতে ৮ টাকা ছাড়, খোলা চিনি প্রতি কেজি ১১২ টাকা, মসুর ডাল প্রতি কেজি ৯৯ টাকা, ট্যাং ২ কেজিতে ১৫০ টাকা ছাড়, ম্যাগি নুডলস ৭৪৪ গ্রামে ৩০ টাকা ছাড়, ডানো মিল্ক পাউডার ১ কেজিতে ৫১ টাকা ছাড়, হেড অ্যান্ড শোল্ডারস শ্যাম্পু ৬৫০ মিলিতে ৩০০ টাকা ছাড়, ইস্পাহানি চা পাতা ৪০০ গ্রামে ৩০ টাকা ছাড় থাকছে।
এছাড়াও সুলতান ও স্বপ্ন ব্ল্যাকটিতে ৬০ টাকা পর্যন্ত ছাড়, আড়ং ও প্রাণ ঘি ৪০০ গ্রামে ৬০ টাকা পর্যন্ত ছাড়, ডাবর মধু ৫০০ গ্রামে ৭০ টাকা ছাড়সহ নানা পণ্যে চলতি সপ্তাহের ২৪ থেকে ২৬ মার্চ অবধি থাকছে বিশাল ছাড়।
রোজায় ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম দেশীয় কাপড়ের পাইকারি বাজার নরসিংদীর ঐতিহ্যবাহী শেখেরচর বাবুরহাট। এখান থেকে কাপড় কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন দেশের নানা প্রান্তের খুচরা বিক্রেতারা।
কাপড়ের চাহিদা মিটানো এই হাটে প্রতি বছরের মতো নিত্য নতুন কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। এ বছর প্রস্তুতকৃত কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি হওয়া কাপড়ের মূল্য হ্রাস পেয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানান ব্যবসায়ীরা।
রোজার প্রথমদিন শুক্রবার বিকেলে সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনয়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে বৃহত্তর এই হাট ঘুরে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে রয়েছে প্রায় ৫ হাজার ব্যবসায়ীর দোকান। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিন জমে ওঠে দেশের অন্যতম পাইকারি কাপড়ের হাট বাবুরহাট।
এখানে শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, থ্রিপিস, শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, পাঞ্জাবির কাপড়, থান কাপড়, বিছানার চাদরসহ প্রায় সব ধরনের কাপড় বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের বাজারে খুচরা কাপড় বিক্রির জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি কাপড় কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন এই হাটে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুতার দামে অস্থিরতার কারণে এবার দেশের সব বাজারেই কাপড়ের দাম বেশি। তবে বাবুরহাটে সর্বনিম্ন পাইকারি মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে সব ধরনের কাপড়। তাই এই হাটে রোজার শুরুতে থাকে কাপড় বিক্রির ধুম। এই হাট তিনদিন ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম থাকে। এ ছাড়া এ হাটের কাপড় রপ্তানি হচ্ছে দেশের বাহিরেও। সকল সংকট কাটিয়ে এবার ঈদে কাঙ্খিত বেচাকেনা হবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।’
কুষ্টিয়া থেকে কাপড় কিনতে এই হাটে প্রথম আসেন, আবুল হোসেন নামে খুচরা বিক্রেতা। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানুষের মুখে শুনেছি বাবুরহাটের কথা। আজ রোজার প্রথম দিন আসলাম। তবে অন্যান্য শহরের বাজারগুলো থেকে এই হাট থেকে পাইকারি কাপড় ক্রয়ে সুলভ মূল্য পেয়েছি।’
ঢাকা বকশি বাজারের এক নারী উদ্যোক্তা তাবাসসুম আক্তার মিম নিউজবাংলাকে জানান, করোনাকালীন সময় এই হাট থেকে দেশীয় থ্রী, বুটিকস, ওড়না নিয়ে অনলাইনে বিক্রি শুরু করেন তিনি। এরপর থেকে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাবুরহাট থেকে কাপড় কিনে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পবিত্র ঈদুল ফিতরে অনেক অর্ডার পরেছে, তাই আগে থেকেই কাপড় কিনে মজুত করছেন। এসব কাপড় অনলাইনে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করছেন তিনি। আজ দুই লাখ টাকার পরিমাণ বিভিন্ন প্রকারের কাপড় কিনে ট্রান্সপোর্টে যশোর পাঠিয়েছেন তিনি।
এই বাবুরহাট বাজারের পাশে রয়েছে বিভিন্ন ট্রাসপোর্ট এসেন্সী। এসব এসেন্সীর মাধ্যমে নিরাপদে কাপড় পৌঁছে যায় বিভিন্ন জেলা শহরসহ বিদেশেও।
নিউ খাজা ট্রাসপোর্টের পরিচালক আল-আমিন ভূইয়া প্রধান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সব কিছুর মূল্যবৃদ্ধি পেলেও মালামাল ট্রাসপোর্টের জন্য পরিবহন ভাড়া তেমন বাড়েনি। কারণ আমরা ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে সুলভ সাশ্রয়ে ট্রাসপোর্ট সেবা দিয়ে থাকি।’
শেখেরচর-বাবুরহাট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি প্রতি বছরের মতো এবারও দোকানে দোকানে নিত্যনতুন কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। প্রতি বছর রমজানে ২০০ কোটি টাকার উপরে কাপড় বিক্রি হয় এ হাটে। এবার তুলনামূলক ক্রেতা কম হলেও বিক্রির পরিমাণ ঠিক আছে।’
তবে সুতার বাজার অস্থিতিশীল ও কাপড় তৈরির কাচাঁমালের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ার কারণে কাপড়ের মূল্য বেড়ে গেছে। এতে বাবুরহাটে পাইকারি ক্রেতার কম সমাগম হলেও সব সংকট কাটিয়ে এবার ঈদে কাঙ্খিত বেচাকেনা হবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ী এই নেতা।
আরও পড়ুন:মেহেরপুরে রমজান মাস উপলক্ষে সবজির বাজারে যেন আগুন লেগেছে। একদিনের ব্যবধানে বেগুনের দাম হয়েছে দুই গুণ। বৃহস্পতিবার বেগুনের কেজি ছিল ৫০ টাকা, শুক্রবার তা বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়।
মাত্র একদিনে ব্যবসায়ীরা অন্য সবজির দামও ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা বাড়িয়েছেন। তারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল তাই দাম বেড়েছে।
ক্রেতারা মনে করছেন,বাজারে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ঠেকাতে প্রশাসন কর্তৃক বাজার মনিটরিংয়ের দরকার। আর প্রশাসনের সেই পুরোনো সুর, বেশি দামে কেউ পণ্য বিক্রি করলে নেয়া হবে আইনি ব্যবস্থা।
বৃহষ্পতিবার জেলার গাংনী উপজেলার হেমায়েতপুর, জোড়পুকুর ও মড়কা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বেগুন ৪৫ টাকা কেজি, গাজর ৭০ টাকা, শসা ৫৫ টাকা, লেবু ২৫ টাকা হালি, কলার হালি ২০ টাকা, পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা আর ঢেড়স ছিল প্রতিকেজি ৬৫ টাকা। অথচ একদিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে অনেক। এতে বাজারের আগুনে পুড়ছে ক্রেতাদের পকেট।
জেলার গাংনী তহবাজার ও ঐতিহ্যবাহী ব্যবসাকেন্দ্র বামন্দী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইফতারি পণ্যের দাম কোনটা দ্বিগুণ হয়েছে। আবার কোনোটা বেড়েছে অর্ধেক। তবে বেগন ও শসার দামে ক্রেতারা দিশেহারা।
বেগুন ১০০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, শসা ৭৫ টাকা কেজি দরে, লেবু এক হালি ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, পাকা কলা এক হালি ৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৬০ টাকা, রসুন ১০০ টাকা, ঢেড়স ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের বাজারের চিত্রও পাল্টেছে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে। বৃহষ্পতিবার জেলার তিনটি উপজেলার কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে, খাসির মাংস ৯০০ টাকা কেজি, গরু ৭০০ টাকা, ব্রয়লার ২৪০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৪০ টাকা, দেশি মুরগি ৬০০ টাকা।
শুক্রবার সকালে দেখা গেছে, খাসি ৯৫০ টাকা, গরু ৮০০ টাকা, ব্রয়লার ২৮০ টাকা, সোনালি মুরগি ৪০০ টাকা আর দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা কেজি।
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যেরমূল্যও বেড়েছে। ছোলার দাম ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা, চিনি ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাঠ পর্যায়ের কৃষক ও বাজারে ক্রেতা সাধারণের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, প্রতি রমজানে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বৃদ্ধি করেন। এবার নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা স্থীতিশীল হলেও সবজি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছেন।
তারা বলেন, ব্যবসায়ীরা এক সপ্তাহ আগে থেকেই কৃষকদের কাছ থেকে অগ্রিম বেগুন-শসাসহ অন্যান্য সবজি কিনে রেখেছে। এখন সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত দাম হাঁকছেন। এ সময় বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
মেহেরপুরের ব্যবসায়ী মকলেচুর রহমান জানান, রমজান মাসে অন্যান্যবার দাম বাড়লেও এবার নিত্যপণ্যের বাজার স্থীতিশীল। ছোলার দামটা ১০/১৫ টাকা বাড়তি। তবে সবজির দামটা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে যা ক্রেতা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
জেলার ঐতিহ্যবাহী বাজার বামন্দী বাজারের সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবারই রমজান মাস আসলে ইফতারি পণ্যের সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে বেগুন-শসা-খিরা এগুলো যেন সোনার হরিণ। চাষিরা ক্ষেত থেকে তুলে এনে আড়ৎ কিংবা ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করলে খুচরা বাজারে দাম কম থাকে। কিন্তু এ সময়টাতে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে চড়া দামে এসব সবজি কিনে নেয়ায় স্থানীয়ভাবেও দাম বেড়ে গেছে।
তারা বলছেন, এক সপ্তাহ আগেও খুচরা বাজারে বেগুন বিক্রি হতো মাত্র ২০/২৫ টাকা কেজি। কিন্ত্র এখন আর আগের মতো বেগুন পাওয়া যাচ্ছে না তাই দামও আগুনের মতো।
গাংনী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজিয়া সিদ্দীকা সেতু জানান, রমজান শুরুর আগে বাজার মনিটরিং শুরু করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। বেশি দামে পণ্য বিক্রি করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে মর্মে সতর্ক করা হয়েছে।
নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হবে এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য