দ্বিতীয় দফা ফ্লোর প্রাইস আরোপের প্রায় পাঁচ মাস পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যেসব কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন দর উঠিয়ে দিয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিমা খাতের কোম্পানি।
দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর পরের অবস্থানে বস্ত্র, তার পরে খাদ্য এবং আর্থিক খাতের অবস্থান।
পুঁজিবাজারের লেনদেন তলানিতে নামার পর বুধবার এই ১৬৯ কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করে বিএসইসি জানায়, এগুলোর শেয়ারদর দিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়তে পারলেও এক দিনে কমতে পারবে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ। এর ফলে যেগুলোর শেয়ারদর ১০ টাকার নিচে, সেগুলোর দাম আসলে কমতে পারবে না।
বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন সবচেয়ে কম, এমন কোম্পানি তারা বেছে নিয়েছেন। তাদের সম্মিলিত বাজার মূলধন পুঁজিবাজারের বাজার মূলধনের ৫ শতাংশের মতো।
অব্যাহত দরপতনের মুখে গত ৩১ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো সব শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেয়া হয়। করোনার প্রাদুর্ভাবে ২০২০ সালের মার্চেও দরপতন ঠেকাতে একই পদক্ষেপ নেয়া হয়।
সে সময় ফ্লোর প্রাইস পুঁজিবাজারে প্রাণ ফেরাতে পারলেও এবারের চিত্রটি ভিন্ন। অল্প কিছু কোম্পানির শেয়ারদরে লাফ দিলেও তিন শরও বেশি কোম্পানির শেয়ারদর ফ্লোরে পড়ে ছিল। এক পর্যায়ে লেনদেন নেমে আসে করোনাকালের সমান।
এই অবস্থায় প্রথম ধাপে অর্ধেকের বেশি কোম্পানির ফ্লোর তোলা হলো। ২০২১ সালেও এভাবে ধাপে ধাপে ফ্লোর প্রাইস তোলা হয়েছিল।
বিমা খাত
ফ্লোর প্রাইস উঠে গেছে এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিমা খাতে আছে সবচেয়ে বেশি ৩৭টি।
এর মধ্যে সাধারণ বিমা খাতের কোম্পানির সংখ্যা ৩১টি। এগুলো হলো: ইসলামি কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, জনতা ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, নিটোল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, রূপালী ইন্স্যুরেন্স, ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স, সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স ও ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।
জীবন বিমা খাতের কোম্পানি আছে আরও ছয়টি। এগুলো হলো: প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স ও নতুন তালিকাভুক্ত চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
মিউচ্যুয়াল ফান্ড
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড। মোট ৩৭টি ফান্ডের মধ্যে ৩৬টিরই ফ্লোর প্রাইস উঠে গেছে।
এর মধ্যে আবার বেশি আইসিবি পরিচালিত ফান্ড আছে ১৩টি। এগুলো হলো: প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইসিবি এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড স্কিম ওয়ান, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইএফআইএল ইসলামিক মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান, আইসিবি এএমসিএল থার্ড এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এমবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামি মিউচ্যুয়াল ফান্ড, প্রাইম ব্যাংক ফার্স্ট আইসিবি এএমসিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রণী ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেজ জুবিলি মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড।
রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত ফান্ড আছে নয়টি। এগুলো হলো: এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ইবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ইবিএল এনআরবি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, পিএইচপি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড।
এলআর গ্লোবাল পরিচালিত ফান্ড আছে চারটি। এগুলো হলো: ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, গ্রিনডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এনসিসিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচ্যুয়াল ফান্ড- ওয়ান।
অন্যান্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির ফান্ড আছে ১০টি। এগুলো হলো: এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড, এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ড, এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়া ফান্ড; সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামী মিউচ্যুয়াল ফান্ড; ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফাইন্যান্স মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান, ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালেন্ডস ফান্ড; এশিয়ান টাইগার সন্ধ্যানী লাইফ গ্রোথ ফান্ড; রিলায়েন্স ওয়ান মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং এনএলআই ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড।
বস্ত্র খাত
এই খাতে তালিকাভুক্ত ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে ফ্লোর প্রাইস উঠে গেছে ২৬টির।
কোম্পানিগুলো হলো: দুলামিয়া কটন, মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, তুংহাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, আনলিমা ইয়ার্ন, জাহিন টেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, সাফকো স্পিনিং মিলস, নুরানী ডায়িং, তাল্লু স্পিনিং, এপেক্স স্পিনিং অ্যান্ড নিটিং, দেশ গার্মেন্টস, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ডেল্টা স্পিনার্স, জাহিন স্পিনিং, স্টাইলক্রাফট, ঢাকা ডায়িং, প্রাইম টেক্সটাইল, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, ইভিন্স টেক্সটাইল, ফ্যামিলি টেক্স, হামিদ ফেব্রিক্স, রহিম টেক্সটাইল, প্যাসিফিক ডেনিমস ও সায়হাম টেক্সটাইল।
প্রকৌশল খাত
এই খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে ফ্লোর প্রাইস উঠে গেছে ১৬টির।
এগুলো হলো: আজিজ পাইপস, বিডি অটোকারস, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, দেশবন্ধু পলিমার, বিডি ওয়েল্ডিং, ওয়াইমেক্স ইলেকট্রোড, ইয়াকিন পলিমার, কেঅ্যান্ড কিউ, আরএফএল, আরএসআরএম, নাভানা সিএনজি, অলিম্পিক অ্যাকসেসোরিজ, রেনউইক যগেশ্বর, বিডিথাই অ্যালুমিনিয়ম, ডোমিনেজ স্টিল ও মুন্নু অ্যাগ্রো।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত
এই খাতের ২১ কোম্পানির মধ্যে ফ্লোর প্রাইস উঠে গেছে ১০টির।
কোম্পানিগুলো হলো: খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে আছে মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, শ্যামপুর সুগার মিলস, জিলবাংলা সুগার মিলস, ফাইন ফুডস, বঙ্গজ, বিচ হ্যাচারি, এপেক্স ফুডস, এমারেল্ড অয়েল ও প্রাণ।
আর্থিক খাত
এই খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা মোট ২৩টি। এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইস উঠে গেছে ১০টির।
কোম্পানিগুলো হলো: ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ফাস ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, বিআইএফসি, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ও মাইডাস ফাইন্যান্সিং।
বিবিধ খাত
এই খাতে ১৪টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইস উঠেছে ৯টির।
কোম্পানিগুলো হলো: সাভার রিফ্রাকটরিজ, জিকিউ বলপেন, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ, ওসমানিয়া গ্লাস, খান ব্রাদার্স পিপিওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ, ন্যাশনাল ফিড মিলস, অ্যারামিট লিমিটেড ও এস কে ট্রিমস।
ওষুধ ও রসায়ন খাত
এই খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩৪টি। এর মধ্যে ফ্লোর উঠে গেল পাঁচটি কোম্পানির। এগুলো হলো: ইমাম বাটন, লিব্রা ইনফিউশনস, এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইন্দোবাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস।
তথ্য প্রযুক্তি
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ১১টি। এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইস থাকছে না চারটির। কোম্পানিগুলো হলো: ইনফরমেশন সার্ভিসেস, ইনটেক, অগ্নি সিস্টেমস ও বিডিকম অনলাইন।
পাট খাত
এই খাতে তালিকাভু্ক্ত কোম্পানি তিনটি। এর কোনোটিরই ফ্লোর প্রাইস থাকছে না। কোম্পানিগুলো হলো জুট স্পিনার্স, নার্দান জুট ও সোনালী আঁশ।
চামড়া খাত
এই খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ছয়টি। ফ্লোর প্রাইস উঠে গেছে তিনটির। কোম্পানিগুলো হলো সমতা লেদার, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ও এপেক্স ট্যানারি।
কাগজ ও প্রকাশনা
এই খাতের কোম্পানির সংখ্যা মোট ছয়টি। এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইস উঠে গেল তিনটির। কোম্পানিগুলো হলো: খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, হাক্কানি পাল্প ও পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং।
সিমেন্ট খাত
এই খাতে তালিকাভুক্ত মোট সাতটি কোম্পানি। এর মধ্যে ফ্লোর থাকছে না দুটির। এগুলো হলো: অ্যারামিট সিমেন্ট ও মেঘনা সিমেন্ট মিলস।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত
এই খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ২৩টি। এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইস থাকছে না দুটির। কোম্পানিগুলো হলো: ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ও জিবিবি পাওয়ার।
আরও তিন খাতের একটি করে
এছাড়া সেবা ও আবাসন খাতের বাংলাদেশ সার্ভিসেস, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের সমরিতা হসপিটাল এবং সিরামিক খাতের স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকসের ফ্লোর প্রাইস উঠে গেছে।
আরও পড়ুন:হরতাল আর অবরোধের মধ্যে আরও একটি সপ্তাহ পার করলো দেশের দুই পুঁজিবাজার। এ নিয়ে চার সপ্তাহ ধরে প্রায় একই বৃত্তে ঘুরছে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই। বিনিয়োগকারীরা অবশ্য ধরেই নিয়েছেন এমন অবরোধ আর হরতালের মধ্যে পুঁজিবাজার থেকে খুব বেশি কিছু পাওয়ার নেই তাদের। একইসঙ্গে তারা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এ বাজার সম্ভাবনাময়।
সবশেষ সপ্তাহে ডিএসইর হিসাব বলছে, আরেক ধাপ কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। তবে সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসের লেনদেন ও সূচক বৃদ্ধিতে কিছুটা আশাবাদী অনেক বিনিয়োগকারী। বিশেষ করে শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবারের লেনদেন দেখে তারা বলছেন, এটা পরের সপ্তাহটি ভালো থাকার ইঙ্গিত। অবশ্য এই সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকারও কম।
পাঁচ কর্মদিবসে গেল সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৩৮১ কোটি টাকা। সপ্তাহ কিংবা দিন উভয় ক্ষেত্রেই লেনদেন কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ।
এর আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন ছিলো ২ হাজার ২ কোটি টাকা। আর দৈনিক হিসাবে গড় লেনদেন ছিলো চারশ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। সপ্তাহ শুরুর তিন দিনে অবশ্য আরও হতাশাজনক চিত্র ছিলো।
মঙ্গলবার লেনদেন নেমে আসে তিনশ কোটির নিচে। পাশাপাশি কমতে দেখা যায় সব সূচক। তবে তার পরদিনই সূচকের উত্থান দেখা যায় ডিএসইতে। তার পরদিন সূচকের পাশাপাশি লেনদেনেও গতি দেখা গেছে। বৃহস্পতিবারের লেনদেন ছিলো তার আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৮৬ কোটি টাকা বেশি।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী রোকন উদ্দিন বলেন, ‘সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে লেনদেন ভালো হওয়া মানে পরের সপ্তাহে আরও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা। যদিও ডিসেম্বর মাস ঘিরে খুব বেশি আশা করার কিছু নেই।’
ডিসেম্বর মাসে কেন আশা করছেন না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা তা-ই বলছে। একদিকে বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর, অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর ক্লোজিং থাকে এ মাসে। সব মিলে এ মাসে পুঁজিবাজারের উত্থান হতে পারে তবে সেটি বড় আকারে হবে না বলেই মনে হয়।’
আরেক বিনিয়োগকারী শরিফ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেজে লিখেছেন, ‘শেয়ার বাজার কি শুধু কমবেই, নাকি থামবে এবার?
‘সব কিছুরই তো একটা শেষ আছে। দর পতনের শেষ দেখার অপেক্ষায় রয়েছি। আশা করি নতুন বছরে অনেক হতাশার সাথে শেয়ার বাজারের হতাশাও দূর হবে।’
লেনদেনের পাশাপাশি গেলে সপ্তাহে কমেছে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স। অবশ্য পরিমাণে তা খুব বেশি নয়। ডিএসইএক্স গেল সপ্তাহে কমেছে দশ পয়েন্টের কিছুটা বেশি। সপ্তাহের শুরুতে প্রধান এই সূচকটির অবস্থান ছিলো ৬ হাজার ২৩৩ পয়েন্ট, যা সপ্তাহ শেষে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২২৩ পয়েন্ট। তবে ডিএস-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচক সামান্য পরিমাণে বেড়েছে এ সপ্তাহে। সবমিলে পুরো নভেম্বর মাসে ডিএসইর প্রধান সূচকটি কমেছে প্রায় ৫০ পয়েন্ট।
হতাশা রয়েছে বাজার মূলধন ঘিরেও। গেল সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় সাতশ কোটি টাকা। তবে পুরো নভেম্বর মাসের হিসাবে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৩ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। নভেম্বরের শুরুর দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর বাজার মূলধন ছিলো ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, যা মাসের শেষ কার্যদিবসে নেমেছে ৭ লাখ ৭১ হাজার ৮১৬ কোটিতে।
বাজার মূলধন কমে আসাকে অবশ্য নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকে বিনিয়োগকারী। তানভীর নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘যেভাবে বাাজার মূলধন কমেছে তা দেখলে ভয় হয়। ফ্লোর প্রাইসের কারণে এখন চাইলেও শেয়ার বিক্রি করা সম্ভব নয়। এজন্য আমরা অনেকে বাধ্য হয়ে পুঁজিবাজারের সাথে ইনভলভ রয়েছি। একটাই প্রত্যাশা- শেয়ারের দাম কমবে না। তবে যখন দেখি বাজার মূলধন কমে যাচ্ছে তখন কিছুটা ভয় পাই।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা বলে পুঁজিবাজার এখান থেকে আবারও উপরের দিকে যাবে। যদি প্রশ্ন করেন- কেন? তাহলে বলবো অনেক কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হলো রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এটা ঠিক হয়ে গেলে বড় বড় বিনিয়োগকারীরা আবারও বাজারে সক্রিয় হয়ে উঠবে।’
নেতিবাচক বাজারেও ডিএসইতে গত সপ্তাহে বেড়েছে বেশ কিছু শেয়ারের দর। অনেকে এটাকে বলছেন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি।
সপ্তাহের বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে জিকিউ বলপেনের। ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত শেয়ারটির পুরো সপ্তাহে দর বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ। মূল্যবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলো আফতাব অটোমোবাইলস।
এছাড়া তৃতীয় থেকে পঞ্চম অবস্থানে ছিলো যথাক্রমে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস, লিবরা ইনফিউশন ও সমতা লেদার। তিনটি কোম্পানিই ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত। অর্থাৎ মূল্যবৃদ্ধিতে এক থেকে পাঁচের মধ্যে থাকা চারটি কোম্পানিই ‘বি’ ক্যাটাগরির।
এছাড়া লেনদেনেও আধিপত্য বিস্তার করছে ‘বি’ ক্যাটাগরির শেয়ার। গেল সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষস্থানে দেখা গেছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছিলো সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ইয়াকিন পলিমার লিমিটেড, ফুওয়াং ফুড এবং সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড। এ সপ্তাহে লেনদেনে শীর্ষ অবস্থানে থাকা পাঁচটি কোম্পানির মধ্যেও চারটি ছিলো ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত।
আরও পড়ুন:বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে পাঁচ তারকা হোটেল লে মেরিডিয়ানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। কোম্পানিটিকে পুঁজিবাজার থেকে ৩৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা শুক্রবার কোম্পানির নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলো পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনকালে কোম্পানির চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ তাদের প্রকল্পগুলো নিয়ে বিস্তারিত জানান। এ সময় তিনি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়ার সক্ষমতা তুলে ধরেন।
এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ বলেন, ‘বেস্ট হোল্ডিংসের প্রকল্পগুলো ব্যবসা সফল হওয়ার বিষয়ে আমরা শতভাগ আশাবাদী। সম্প্রতিক বছরগুলোতে ভালো মুনাফা অর্জনের চিত্রই তার প্রমাণ বহন করে। এর বাইরে কোম্পানির রিটেইন্ড আর্নিংস বা অর্জিত মুনাফা রয়েছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি, যা বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দাবিদার।’
তিনি বলেন, ‘বেস্ট হোল্ডিংস এমন একটি কোম্পানি যারা বিশ্বের স্বনামধন্য চারটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ম্যারিয়ট, লে মেরিডিয়ান, হেইলিবেরি ও লাক্সারিয়াস।
‘ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে লজিস্টিক সাপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যবসা পরিচালনা করে বেস্ট হোল্ডিংস। বাংলাদেশের ইতিহাসে একক মালিকানার কোম্পানি হিসেবে এটি এক্ষেত্রে অনন্য উচ্চতায় রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে থাকা প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে মধ্যে আগামী বছরেই শেষ করতে পারলে এর কার্যক্রম থেকে ভালো মুনাফা অর্জন সম্ভব হবে, যা বিনিয়োগকারী ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে অবাদন রাখবে বলে বিশ্বাস করি।’
‘মানসম্পন্ন সম্পদ গঠনে বিনিয়োগ করুন, যা আপনাকে কয়েক দশক ধরে ক্রমবর্ধমান রাজস্ব তৈরি করতে সহায়তা করবে’ এমন দর্শনকে বুকে লালন করে গড়ে ওঠে বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। কোম্পানির চেয়ারম্যান আমিন আহমেদের তিন দশকের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে দেশের একজন খ্যাতিমান সেতু নির্মাণকারী হিসেবে। তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় সফল ব্যবসায়ী জীবনের পেছনে যেসব প্রতিবদ্ধকতাকে অতিক্রম করতে হয়েছে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন আমিন আহমেদ। এতে তিনি কীভাবে তার কোম্পানি অবকাঠামো তৈরি করছে, ব্যবসায় কোন ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন এবং কীভাবে একটি বিলাসবহুল হোটেল-রিসোর্ট সাম্রাজ্যের জন্য তার স্বপ্নকে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল সেসব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
আমিন আহমেদ বলেন, ‘চাহিদা মূল্যায়ন এবং স্থান নির্বাচনে বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পাঁচ তারকা হোটেল লে মেরিডিয়ান প্রতিষ্ঠা একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। কেননা, ঢাকায় আসা বিদেশি অতিথিরা এখানে বিশ্বের বড় বড় হোটেলগুলোর চেয়ে বেশি মূল্যায়ন দিতেও আপত্তি করেন না।’
নির্মাণকাজ স্থগিত রাখা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে দেরি হওয়ার কারণে ‘লে মেরিডিয়ান ঢাকা’র উদ্বোধন সাত বছর পিছিয়ে দিতে হয়েছিল। হোটেল প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০০৫-০৬ সালে শুরু করা হলেও এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয় ২০১৫ সালে।
৯০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প সময়সমতো শেষ করা সম্ভব না হওয়ায় এর ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। ফলে কোম্পানিকে ব্যাংক ঋণের সহায়তা নিতে হয়েছে। লে মেরিডিয়ান হোটেল এবং ভালুকা ও নোয়াখালীতে কোম্পানির কৃষি খামারের জন্য ব্যাংক ঋণ ও কনভার্টিবল বন্ড ইস্যুর পথ সহজ হয়েছিল।
২০১৯ সালে বেস্ট হোল্ডিংস তার ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বন্ডের মাধ্যমে ১২০০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছিল। ইতোমধ্যে এর বড় একটা অংশ নগদ এবং ইক্যুইটিতে রূপান্তরের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে।
আমিন আহমেদ বলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে আমরা যখন লে মেরিডিয়ানের যাত্রা শুরু করলাম তার কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বজুড়ে মহামারি কোভিড-১৯ আঘাত হানে। ফলে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ হিসাব বছরে আমাদের ব্যবসা অনেক কমে যায়। এর মধ্যে ২০২০-২১ হিসাব বছরে আমাদের রাজস্ব আয় নেমে আসে ১১৩ কোটি টাকায়, যা দুই বছর আগের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ।
অবশ্য ২০২২-২৩ হিসাব বছরে আমরা মহামারির আগের বছরের থেকেও ভালো অবস্থানে ফিরতে পেরেছি। আশা করছি, আগামী বছরে আমাদের ব্যবসা আরও বাড়বে। কেননা, লে মেরিডিয়ান ঢাকায় এখন রুম ভাড়া আগের থেকে ৭০-৮০ শতাংশ বেশি।’
প্রসপেক্টাস অনুসারে, বেস্ট হোল্ডিংসের আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ ভবন ও অন্যান্য পূর্তকাজ, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয়, ঋণ পরিশোধ ও আইপিও প্রক্রিয়ার খরচ খাতে ব্যয় করা হবে। কোম্পানিটির নির্মাণাধীন প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হলো- আন্তর্জাতিক মানের একটি ম্যারিয়ট হোটেল, বিলাসবহুল রিসোর্ট, ব্যক্তিগত ভিলা, স্কুল প্রকল্প এবং ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল।
আইপিওর মাধ্যমে তোলা ৩৫০ কোটি টাকার মধ্যে ১৭৬ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যবহার করা হবে ভালুকায় ৪৩ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা রিসোর্টটির ভবন তৈরিতে। ৪৫ কোটি টাকা দিয়ে এই রিসোর্টের জন্য যন্ত্রপাতি কেনা হবে। আর ১১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হবে। এছাড়া আইপিও প্রক্রিয়ার ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
প্রসঙ্গত, কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে শান্তা ইকুইটি লিমিটেড ও আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। তালিকাভুক্তির আগে কোম্পানিটি কোনো ধরনের লভ্যাংশ ঘোষণা, অনুমোদন বা বিতরণ করতে পারবে না বলে শর্ত দিয়েছে বিএসইসি।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ে আশার কথা শোনালেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দৃঢ় ও সম্ভাবনাময়। বাজারকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস হিসেবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে কাজ করছে বিএসইসি।
ফ্রান্সের তুলুসে বুধবার ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: বাংলাদেশ-ফ্রান্স ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট- ২০২৩’ শীর্ষক একটি সামিটে প্রবন্ধ উপস্থাপন করে তিনি এসব কথা বলেন। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের বিশ্বস্ত জায়গা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বিএসইসির নানা পদক্ষেপ উল্লেখ করে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ও এ দেশে বিনিয়োগের সুযোগ তুলে ধরার লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধারাবাহিকভাবে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট’-এর আয়োজন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ফ্রান্সের তুলুসে বুধবার সামিটটির আয়োজন করা হয়। যার প্রধান আলোচ্য সূচি ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে একটি আকর্ষণীয়, সহজতর এবং লাভজনক দেশ হিসেবে ফ্রান্সের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের নিকট তুলে ধরা।
বিএসইসি ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সামিটটি ফ্রান্সের বাংলাদেশ দূতাবাস ও ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাসের সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউনেসকোর বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা। স্বাগত বক্তব্যের পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর অডিও-ভিজুয়াল প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন টুলুস মেট্রোপোলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জিন-ক্লদ ডারডেলেট। অন্যদের মধ্যে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়াসহ ফ্রান্সের ব্যবসায়ী কমিউনিটির অনেকেই এ সময় বক্তব্য রাখেন।
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত এ সময় বর্তমান সরকারের নেয়া পুঁজিবাজারবান্ধব নীতির কথা তুলে ধরেন। বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে স্বাধীনতা লাভ করেছে বাংলাদেশ। বর্তমানে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের দীর্ঘদিনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রান্সের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দিনে দিনে আরও জোরদার হচ্ছে। ভূরাজনৈতিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ ও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। তারুণ্যে উজ্জীবিত মানবসম্পদের সুযোগ-সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেন তিনি। এ ছাড়া জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার, দারিদ্র্য হ্রাস, শিশুমৃত্যু হ্রাস, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড, দক্ষ জনবল এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা তুলে ধরেন অধ্যাপক রুবাইয়াত।
ফ্রান্সের তুলুসে অনুষ্ঠিত সামিটের ফলে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন বক্তারা। এর ফলে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক বিনিয়োগ আসবে বলেও আশাবাদ জানান পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৩৫ দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ৩২ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় ৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক রপ্তানি গন্তব্য হওয়ায় এই সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) গত নয় মাসের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ের মধ্যে ইউরোপে বাংলাদেশের রফতানি ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়ে ১৭ দশমিক ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৬ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তথ্য বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান বাজার জার্মানিতে গত কয়েক মাস ধরে ক্রমাগত কমেছে। ২০২৩ সালের প্রথম নয় মাসে জার্মানিতে আমাদের রপ্তানি ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ কমেছে। অর্থাৎ ৫ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৪ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে।
পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ইইউ অঞ্চলের অন্যান্য যেসব বাজারগুলোতে রপ্তানি কমেছে তা হচ্ছে- লিথুয়ানিয়া, মাল্টা, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া এবং স্লোভেনিয়া। তবে ফ্রান্স, স্পেন এবং ইতালিতে রফতানি যথাক্রমে ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ, ২০ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং ২৭ দশমিক ০২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা যথাক্রমে ২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২ দশমিক ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ১ দশমিক ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। অন্যদিকে ডেনমার্কে রফতানি ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। একই সময়ের মধ্যে, লাটভিয়া, রোমানিয়া, ফিনল্যান্ড এবং ক্রোয়েশিয়ার মতো দেশগুলো শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
বাংলাদেশের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং ২০২২ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরে ৬ দশমিক৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২৩ সালের একই সময়ে ৬ দশমিক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে, গত নয় মাসে যুক্তরাজ্যে ১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ ও কানাডায় ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই সময়ে যুক্তরাজ্য ও কানাডায় পোশাক রফতানি যথাক্রমে ৪ দশমিক ০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
গতানুগতিক বাজারের পাশাপাশি অপ্রচলিত বাজারেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরে ৫ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
প্রধান অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে জাপানে তৈরি পোশাক রপ্তানি ১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা বছরে ৪৫ দশমিক ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ায় ৫৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ, ভারতে ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০ দশমিক ৯৩ শতাংশ, চীন এবং তুরস্কের মতো অন্যান্য অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি যথাক্রমে, ৪৬ দশমিক ৩২ শতাংশ ,৩৫ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ২৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়েছে।
একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার, যা মোট রফতানির ১৭ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং ইইউ তৈরি পোশাক রফতানির প্রায় ৪৯ দশমিক ২২ শতাংশ ধরে রেখেছে। যুক্তরাজ্য এবং কানাডার ক্ষেত্রে মোট পোশাক রফতানির ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ১৬ শতাংশে এ পৌঁছেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২৩ সালের প্রথম নয় মাসে অ-প্রচলিত বাজারের অংশ মোট রফতানির ১৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছিল। অপ্রচলিত বাজারের অংশ বৃদ্ধি অবশ্যই পোশাক শিল্পের জন্য একটি ইতিবাচক লক্ষণ। ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রফতানির স্বপ্ন দেখে আগামী দিনগুলোতেও বাজারের বৈচিত্র্য অব্যাহত রাখতে হবে।
পুঁজিবাজারে সোমবার দাপট দেখিয়েছে বিমা খাতের কোম্পানিগুলো। আর সে সুবাদে সূচকেরও উত্থাপন ঘটেছে।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এদিন ক্রেতার চাপ বেশি হওয়ায় লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর পতনের চেয়ে উত্থানই বেশি হয়েছে।
বিমা খাতের ৫৭টি কোম্পানির মধ্যে ৪৭টি বা ৮২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। যেখানে সব খাত মিলিয়ে ৮৭টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।
ডিএসইতে সোমবার ৪৬৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়। আগের কার্যদিবস রোববার লেনদেন হয়েছিল ৫৩১ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৭২ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে।
ডিএসইএস সূচক দশমিক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৫৭ দশমিক ৬০ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএস-৩০ সূচক ১ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৩৪ দশমিক ৬২ পয়েন্টে।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৮২টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৮৭টি এবং কমেছে ৫৮টির। শেয়ার দর পরিবর্তন হয়নি ১৩৭টির।
এদিন লেনদেনে শীর্ষে উঠে এসেছে রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর। কোম্পানিটির ২১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। এরপর ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার লেনদেন বেশি ছিল। এতে শীর্ষের দ্বিতীয়তে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। কোম্পানিটির ১৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের ১৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা, সোনালী পেপারের ১৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা, সি পার্ল বিচের ১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, খান ব্রাদার্সের ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা, জেমিনি সি ফুডের ১১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের ১১ কোটি ১৫ লাখ টাকা, লার্ফাজহোলসিমের ১১ কোটি ২ লাখ টাকা এবং ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের ৮ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফু-ওয়াং ফুডের ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ, লিবরা ইনফিউশনের ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ, ন্যাশনাল ফিডের ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং এমবি ফার্মার ৬ দশমিক ১০ শতাংশের শেয়ার দর বেড়েছে।
শেয়ারের দর কমার দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে জুট স্পিনার্স। কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে ৮ দশমিক ১১ শতাংশ।
দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সোমবার ১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। আগের কার্যদিবস রোববার যেখানে লেনদেন হয়েছিল ১২ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার। প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৫ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৫৬৬ দশমিক ২৮ পয়েন্টে।
সিএসসিএক্স সূচক ৩ দশমিক ১৯ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক দশমিক ৫২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯৯ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৬৬ দশমিক ৮২ পয়েন্টে। এ ছাড়া সিএসই৫০ সূচক দশমিক ৪৮ পয়েন্ট এবং সিএসই ৩০ সূচক দশমিক ৫০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩০৫ দশমিক ৫২ শতাংশ পয়েন্টে এবং ১৩ হাজার ৩৫৫ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্টে।
সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৪৫টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৫২টি এবং কমেছে ৩৪টির। শেয়ারদর পরিবর্তন হয়নি ৫৯টির। এদিন লেনদেনে শীর্ষে উঠে আসা ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ারদর। কোম্পানিটির ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। এরপর ড্যাফোডিল কম্পিউটাসের শেয়ার লেনদেন বেশি ছিল। এতে শীর্ষের দ্বিতীয়তে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। কোম্পানিটির ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
লেনদেনে শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, ফু-ওয়াং ফুডের ৫৯ লাখ টাকা, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের ৩৫ লাখ টাকা, ইবনে সিনার ৩৫ লাখ টাকা, এইচআর টেক্সের ২৩ লাখ টাকা, স্কয়ার ফার্মার ২১ লাখ টাকা, আরডি ফুডের ১৫ লাখ টাকা এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো ১০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে কারসাজি রোধে সঠিক তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা জরুরি। বিনিয়োগকারীদের একটি সুন্দর ও স্বচ্ছ পুঁজিবাজার উপহার দিতে কাজ করছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
ডিএসইর নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান শনিবার দু’দিনব্যাপী আবাসিক প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) যৌথ উদ্যোগে কুয়াকাটার হোটেল গ্রেভার ইন ইন্টারন্যাশনালে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমান এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
কর্মশালায় রিসোর্স পারসন ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম ও ডিএসই’র সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক আসাদুর রহমান।
সমাপনী অনুষ্ঠানে হোটেল গ্রেভার ইন ইন্টারন্যাশলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস কে ডা. মোগল জান রহমান মিঠু, ডিএসইর সিনিয়র জিএম সামিউল ইসলাম, বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, সিএমজেএফ-এর প্রাক্তন সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন, ডিএসইর ডিজিএম শফিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ড. তারিকুজ্জামান বলেন, ‘পুঁজিবাজারের বিভিন্ন আইনকানুন ও বিধিবিধান সম্পর্কে পারস্পরিক আলোচনা বৃদ্ধি করা জরুরি। পুঁজিবাজার একটি মূলধনী বাজার। এখানে অনেক স্টেকহোল্ডার কাজ করছে। আমি মনে করি সব স্টেকহোল্ডারের মধ্যে সিএমজেএফ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’
পরবর্তীতে কর্মশালায় সিএমজেএফ সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদানের সময় ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘একটি সুন্দর ও স্বচ্ছ পুঁজিবাজার তৈরির জন্য কাজ করছে ডিএসই।’
স্বাগত বক্তব্যে সিএমজেএফ সভাপতি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে খারাপ কোম্পানির শেয়ার যখন কারসাজিকারীদের দখলে চলে যায় তখন বাজার স্বাভাবিক অবস্থা হারিয়ে ফেলে। নষ্ট হয় বিনিয়োগকারীদের আস্থা। তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ফ্লোর প্রাইসের মতো নানা ব্যবস্থার সহায়তায় বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হয়। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে ফ্লোর প্রাইস দিতে হয়নি। এমনকি শ্রীলঙ্কায় যেখানে অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ ছিল তাদেরও তা দিতে হয়নি।’
অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে কোম্পানির বড় অংশের শেয়ার বিক্রি হওয়ার প্রেক্ষাপটে জাপানের শেয়ার বাজার থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে দেশটির প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তোশিবা।
এর মাধ্যমে তোশিবার ৭৪ বছরের শেয়ার বাজারের ইতিহাস শেষ হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
কোম্পানিটি বলছে, প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম জাপান ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্টনারস (জেআইপি)-এর নেতৃত্বে একটি গ্রুপ তোশিবার ৭৮.৬৫ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছে। অর্থাৎ গ্রুপটি দুই-তৃতীয়াংশের বেশি অংশীদারিত্বের মালিকানা পেয়েছে।
ঘড়ি এবং যান্ত্রিক পুতুলের নির্মাতা হিসেবে ১৮৭৫ সালের দিকে বাজারে আসে তোশিবা। এর পর নানা পণ্য উৎপাদন শুরু করে এই কোম্পানি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তোশিবার সঙ্গে হওয়া নতুন চুক্তির অধীনে এ বছরের শেষের দিকে কোম্পানিটির বকি শেয়ার বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হতে পারে।
বেশ কয়েক বছর ধরেই বাজার থেকে সরার পথে তোশিবা। এর অংশ হিসেবে ২০২০ সালে ল্যাপটপ ব্যবসা থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, তারা ৩৫ বছরের পুরোনো ল্যাপটপ ব্যবসা থেকে সরে যাবে। এ ব্যবসার শেয়ার বিক্রি করার কথা বলা হয় জাপানি প্রতিষ্ঠান শার্পের কাছে।
বিবিসি বলছে, জাপান যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেরিয়ে আসছে এবং টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ পুনরায় চালু হলো তখন ১৯৪৯ সালের মে মাসে তোশিবার শেয়ারের ব্যবসা শুরু হয়।
বাসা-বাড়ির ইলেকট্রনিক্স পণ্য থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও ছিল এই তোশিবার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কয়েক দশক ধরে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং এর উচ্চ প্রযুক্তি শিল্পের প্রতীক ছিল।
তবে গত কয়েক বছর ধরে বেশ বিপাকে পড়েছে তোশিবার ব্যবসা। ২০১৭ সালে যুক্তরষ্ট্রে পারমাণবিক শক্তি ব্যবসায় বড় ক্ষতির কথা জানায় প্রতিষ্ঠানটি। দেউলিয়া হওয়া এড়াতে তোশিবা ২০১৮ সালে এর মেমরি চিপ ব্যবসা বিক্রি বন্ধ করে দেয়।
তোশিবা ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যের প্রাইভেট ইক্যুইটি গ্রুপ সিভিসি ক্যাপিটাল পার্টনারদের কাছ থেকে পাওয়া বিনিয়োগের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। তবে শেষ পর্যন্ত অস্তিত্বের প্রশ্নে অনেকটাই আপস করতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে।
মন্তব্য