ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ দিতে ৮ ডিসেম্বর থেকে আরও ৪৫ দিন বাড়তি সময় চাওয়া হয়েছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ডিএসই থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) চিঠি দিয়ে এই সময় চাওয়া হয়েছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিটি পাঠিয়েছেন ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার।
চলতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ডিএসইর এমডি তারেক আমিন ভূঁইয়া পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদটি খালি রয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী এই পদ খালি হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বিএসইসি এই পদে নিয়োগ দেবে। কিন্তু ডিএসই এ-সংক্রান্ত সব কাজ শেষ করে উঠতে পারেনি। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি সময় চেয়েছে।
সাইফুর রহমান মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সময় চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু মনে হয় এখনও উত্তর আসেনি।’
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের লক্ষ্যে গত অক্টোবর মাসে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। ৬ নভেম্বর ছিল আবেদনপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। ১৯ ডিসেম্বর প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। এরপর নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে।’
নিয়ম অনুযায়ী আবেদনকারীদের মধ্য থেকে ডিএসই কমিটি কমপক্ষে তিনজন সদস্যকে খুঁজে বের করবে। দ্বিতীয়ত, ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ ডিএসই কমিটির বের করা প্রার্থীদের মধ্য থেকে কমপক্ষে তিনজনকে নির্ধারণ করবে। এরপর বিএসইসি এই তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে এমডি পদের জন্য নির্বাচন করবে।
তিন ব্রোকারেজ হাউজকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ফিক্স সার্টিফিকেশন প্রদান করা হয়েছে। এগুলো হলো- সিটি ব্রোকারেজ, ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ এবং শান্তা সিকিউরিটিজ।
রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসইর ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে সোমবার সার্টিফিকেশন প্রদান করেন ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রোডাক্ট অ্যান্ড মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের উপ-মহাব্যবস্থাপক সাইয়িদ মাহমুদ জুবায়ের।
ডিএসইর জন্য দিনটি স্মরণীয় উল্লেখ করে এম সাইফুর রহমান বলেন, ‘প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে পুঁজিবাজারেরও উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। আট-দশ বছর আগে ডিএসই শুধুমাত্র একটি সেন্ট্রাল অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সংবলিত ম্যাচিং ইঞ্জিন কিনেছিল। কার্যত তখন অনেক ওএমএস একই সঙ্গে সংযোগ দেয়া যেতে পারে, তা বিবেচনা বা চিন্তা করা হয়নি। এখন ডিএসইর ট্রেকহোল্ডারদের ভিন্ন ভিন্ন ওএমএস সিস্টেম ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
ওএমএসের অন্তর্ভুক্তির নতুন প্রক্রিয়া পরিচালনার ক্ষেত্রে সকলকে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডিএসই এরইমধ্যে ফিক্স সার্টিফিকেশন দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে। এখন ডিএসই, প্রযুক্তি প্রদানকারী ও ব্রোকারেজ হাউজগুলো একসঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। ডিএসই প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। ডিএসই অচিরেই আধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত আন্তর্জাতিক মানের এক্সচেঞ্জে পরিণত হবে।’
সিটি ব্রোকারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিসবাহ উদ্দিন আফফান ইউসুফ বলেন, ‘ফিক্সড সার্টিফিকেট গ্রহণ আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আমরা ২০২১ সালে সার্টিফিকেট গ্রহণ করি। আমরা সে সময় সার্টিফিকেটটি ফিক্সনক্স-এর কাছ থেকে নিয়েছিলাম। এর কিছুদিনের মধ্যে ডিএসই এই সার্টিফিকেট প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করে। যা ডিএসইর জন্য একটি বড় অর্জন। এর মাধ্যমে আমরা বিনিয়োগকারীদের আরও উন্নত সেবা প্রদান করতে পারব।’
ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের সিইও কাওসার আল মামুন বলেন, ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য যে প্রক্রিয়া, সেটি আজকে আমরা সম্পন্ন করতে পেরেছি। সারা বিশ্বে আজ আধুনিক পদ্ধতিতে লেনদেন করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে আমাদের লেনদেন প্রক্রিয়াকে আর্ন্তজাতিকমানে উন্নীত করতে পেরেছি। এখন শুধু বাকি রয়েছে রোবটিক ট্রেডিং। আশা করি, এটি আমরা অল্প সময়ে মধ্যে করতে পারব। আর পুঁজিবাজারে বিভিন্ন সেবা চালুর মাধ্যমে বিশ্বমানের পুঁজিবাজারে পরিণত হবে।’
শান্তা সিকিউরিটিজের সিইও কাজী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শান্তা সিকিউরিটিজ শুরু থেকেই বিনিয়োগকারীদের উন্নত সেবা প্রদানের জন্য সচেষ্ট। ডিএসই যখন নিজস্ব অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে লেনদেন সুবিধা চালু করে, শান্তা সিকিউরিটিজ দ্রুত এ সুবিধা গ্রহণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দেয়ার জন্য উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণে প্রস্তুত রয়েছি। এ ক্ষেত্রে ডিএসইর সহযোগিতা চাই।’
ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ও মহাব্যবস্থাপক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘এপিআই ইউএটির অনেক সুবিধা রয়েছে। এখানে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ফিক্স করে দেয়া হয়েছে। নিজস্ব ওএমএস চালু করার জন্য একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া পাড়ি দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে ডিএসই সীমিত লোকবল নিয়ে আপনাদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করেছে। ট্রেকহোল্ডারদের নিজস্ব ওএমএস চালু ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডিএসইর আইটি বিভাগ সব সময় আপনাদের সমর্থন করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্বের অন্যান্য স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ডিএসই এপিআই (অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ইন্টারফেস) ভিত্তিক বিএইচওএমএস চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরই প্রেক্ষিতে ৪৬টি ব্রোকারেজ হাউজ নাসডাক ম্যাচিং ইঞ্জিনে এপিআই সংযোগ নিয়ে নিজস্ব অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে লেনদেন করার জন্য ডিএসইতে আবেদন করে। এর ভিত্তিতে সিটি ব্রোকারেজ, ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ এবং শান্তা সিকিউরিটিজকে ডিএসইর ফিক্স সার্টিফিকেশন প্রদান করে।
এই প্রক্রিয়ায় সিটি ব্রোকারেজ এবং শান্তা সিকিউরিটিজের ওএমএস ভেন্ডর ছিল ডিরেক্টএফএন এবং ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের ছিল ইকোসফট বিডি। ভেন্ডর প্রতিনিধি ডিরেক্টএফএন এশিয়া জোনের হেড অব বিজনেস অ্যান্ড স্ট্রাটেজি আমির শামস, ইকোসফটবিডি আইটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সোহেল রানা এবং সিটি ব্রোকারেজ এবং শান্তা সিকিউরিটিজের পরামর্শক হাইমদলার অ্যান্ড কোং-এর কনসালটেন্ট নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
নিজস্ব অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম গ্রহণের ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তিনটি প্রতিষ্ঠান ইউজার এক্সিসটেন্স টেস্টিং কার্যক্রম সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করে। প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) চালুর পূর্ববর্তী ধাপ হলো- ফিক্স সার্টিফিকেশন। ওএমএস গো লাইভে যাওয়ার জন্য ডিএসইর ম্যাচিং ইঞ্জিন ও ব্রোকার হোস্টেড অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (ওএমএস) সামঞ্জস্য যাচাইয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ফিক্স সার্টিফিকেশন। সিটি ব্রোকারেজ, ফাস্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ এবং শান্তা সিকিউরিটিজ ফিক্স সার্টিফিকেশনের জন্য টেস্ট কেসের কার্যক্রম ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করে।
আরও পড়ুন:আগের টানা ৫ কর্মদিবস লেনদেন বৃদ্ধির বিষয়টি স্বস্তি এনে দিলেও চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে বড় পতন হয়েছে পুঁজিবাজার। সোমবার দরবৃদ্ধির তুলনায় দরপতন হয়েছে ৭ গুণের বেশি। ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হয়েছে তারও বেশি, তবে সংখ্যাটি আগের দিনের চেয়ে কমে এসেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ৬ কর্মদিবস পর রোববার লেনদেন ৭০০ কোটির ঘর অতিক্রম করলেও এক দিন পরই নেমে এসেছে ৫০০ কোটির ঘরে।
সোমবার দিনভর হাতবদল হয়েছে ৫৮০ কোটি ৮১ লাখ ৯১ হাজার টাকার শেয়ার, বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট, যা আগের দিনের চেয়ে ১৭১ কোটি ৯২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা কম।
ডিসেম্বরে ৩০০ কোটি থেকে ২০০ কোটির ঘরে নেমে যাওয়া লেনদেন ৪ জানুয়ারি বাড়তে থাকে বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বৈঠকের পর। ১৮ জানুয়ারি হাজার কোটি টাকা ছুঁইছুঁই হওয়ার পর বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির খবরে উল্টো পথে চলে লেনদেনের চাকা। গত সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার লেনদেন নেমে আসে ৪০০ কোটির ঘরে।
সপ্তাহটিতে প্রথম তিন কর্মদিবস সূচক পতন ও শেষের দুই কর্মদিবস সূচক বাড়লেও চার দিনই লেনদেন বেড়েছে। এর মধ্যে শুধু বৃহস্পতিবারই ১০৬ কোটি ৪৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা বেড়ে হাতবদল হয় ৬৮৭ কোটি ১২ লাখ ২২ হাজার টাকার শেয়ার, বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট।
সেখান থেকে ৬৫ কোটি ৬২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা বেড়ে রোববার লেনদেন হয় ৭৫২ কোটি ৭৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, যা ১২ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। এর চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল ১৮ জানুয়ারি। সেদিন ৯৩৪ কোটি ২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা লেনদেন হয়।
আজ লেনদেন না হওয়া কোম্পানির সংখ্যা আগের দিনের ৩ গুণের বেশি বেড়েছে। রোববার একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি এমন কোম্পানির সংখ্যা ছিল ১৫টি। অথচ সোমবার সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪টিতে। অবশ্য বৃহস্পতিবার এটি ছিল ৫৬।
দরবৃদ্ধির তুলনায় সোমবার দরপতন হয়েছে ৭ গুণের বেশি। আগের দিন এটি ছিল ৩ গুণ।
আজ ২১টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১৫২টির। আগের দিন ৪৩টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দরপতন হয়েছিল ১৩৩টির।
অপরিবর্তিত দরে লেনদেনের সংখ্যা আগের মতোই বেশি রয়েছে। লেনদেন খরার মধ্যে আড়াই শতাধিক কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে পড়ে ছিল। ধীরে ধীরে শতাধিক কোম্পানি ফ্লোর প্রাইস থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে।
গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ১৬৫টি কোম্পানির লেনদেন হয় অপরিবর্তিত দরে বা ফ্লোর প্রাইসে। রোববার ফ্লোরে ঢোকে আরও ৫টি কোম্পানি। ১৭১টি কোম্পানির লেনদেন হয় অপরিবর্তিত দরে। সোমবার ফের ৫টি কোম্পানি বেরিয়ে এসেছে ফ্লোর থেকে। ফলে অপরিবর্তিত দরে লেনদেন হয়েছে ১৬৫টির।
আগের সপ্তাহের রবি, সোম ও মঙ্গলবার মিলিয়ে ২৯ পয়েন্ট সূচক পতনের পর বুধ ও বৃহস্পতিবার সূচক বেড়েছিল ২৭ পয়েন্ট।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন ৮ পয়েন্টের পর সোমবার কমল আরও ৫ পয়েন্ট। ডিএসইর সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৮০ পয়েন্টে।
লেনদেনের বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘টানা কয়েক দিন লেনদেন বাড়ার পর একটু কমেছে। কিছুটা প্রফিট টেকিং বা মার্কেট কারেকশন হয়ে থাকতে পারে।’
আরও পড়ুন:সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে সূচক পড়লেও পুঁজিবাজারে গত পাঁচ কর্মদিবস লেনদেন বৃদ্ধির বিষয়টি আশা জাগাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মনে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ছয় কর্মদিবস পর লেনদেন ফের সাত শ কোটির ঘর অতিক্রম করল, যা ১২ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ। কমেছে এসেছে লেনদেন না হওয়া কোম্পানির সংখ্যাও।
ডিসেম্বরে তিন শ কোটি থেকে দুই শর ঘরে নেমে যাওয়া লেনদেন ৪ জানুয়ারি বাজার সংশ্লিষ্টদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বৈঠকের পর বাড়তে থাকে। ১৮ জানুয়ারি হাজার কোটি টাকা ছুঁইছুঁই হওয়ার পর বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির খবরে উল্টো পথে ছোটে লেনদেনের চাকা। গত সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার লেনদেন নেমে আসে চার শ কোটির ঘরে।
সপ্তাহটিতে প্রথম তিন কর্মদিবস সূচক পতন ও শেষের দুই কর্মদিবস সূচক বাড়লেও চার দিনই লেনদেন বেড়েছে। এর মধ্যে শুধু বৃহস্পতিবার ১০৬ কোটি ৪৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা বেড়ে হাতবদল হয় ৬৮৭ কোটি ১২ লাখ ২২ হাজার টাকার শেয়ার, বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট।
সেখান থেকে ৬৫ কোটি ৬২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা বেড়ে রোববার লেনদেন হয়েছে ৭৫২ কোটি ৭৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, যা ১২ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল ১৮ জানুয়ারি ৯৩৪ কোটি ২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
কমেছে এসেছে লেনদেন না হওয়া কোম্পানির সংখ্যা। রোববার একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি এমন কোম্পানির সংখ্যা ছিল ১৫টি। অথচ আগের কর্মদিবসে কোনো শেয়ার লেনদেন হয়নি ৫৬টি কোম্পানির।
দরবৃদ্ধির তুলনায় দরপতন হয়েছে তিন গুণের বেশি। তবে অপরিবর্তিত দরে লেনদেনের সংখ্যা তারও বেশি। ৪৩টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দরপতন হয়েছে ১৩৩টির।
লেনদেন খরার মধ্যে আড়াই শর বেশি কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে পড়ে ছিল। ধীরে ধীরে শতাধিক কোম্পানি ফ্লোর প্রাইস থেকে বেরিয়ে আসলেও রোববার ফের আরও পাঁচটি ঢুকেছে সেই তালিকায়। এ ছাড়া ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হয়েছে আরও ১৭১টির। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল ১৬৫।
আগের সপ্তাহের রবি, সোম ও মঙ্গলবার মিলিয়ে ২৯ পয়েন্ট সূচক পতনের পর বুধ ও বৃহস্পতিবার সূচক বেড়েছিল ২৭ পয়েন্ট। সেখান থেকে ৮ পয়েন্ট কমে রোববার সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৮৬ পয়েন্টে।
লেনদেনের বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক সময় শতাধিক কোম্পানির কোনো শেয়ার লেনদেন হতো না। ফ্লোর প্রাইসে আটকে ছিল আড়াই শর বেশি কোম্পানি। সেখান থেকে বাজারে গতি ফিরছে বাজারে। ভলিউম বাড়ছে। বাজারের সব ইনডিকেটরই ভালো। বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।’
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির আয় বা উৎপাদন বাড়ার বিষয়ে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। দরবৃদ্ধি পাওয়ার মতো কোনো খবরও সামনে আসেনি। তবে ৬ মাসে ৫ গুণের বেশি দরবৃদ্ধির পর জানা গেল মুনাফা বৃদ্ধি এবং আরেকটি কোম্পানির অংশীদারত্ব কিনছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
কোম্পানিটির নাম সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা। মালিকানায় রয়েছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটুর পরিবার। গত ৬ মাসে সি পার্লের শেয়ারদর বেড়েছে ৫১৮ শতাংশের বেশি। আর চলতি অর্থবছরের দুই প্রান্তিকে কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে ৩৮৬ শতাংশের বেশি।
অনেকেই মনে করেন, দরবৃদ্ধির পালে হাওয়া দিয়েছে মুনাফা বৃদ্ধি ও আরেকটি কোম্পানির অংশীদারত্ব কেনার বিষয়টি। তবে এ খবর সামনে আসার কয়েক মাস আগে থেকেই হু হু করে দর বাড়ছে সি পার্লের।
বিনিয়োগকারীদের অনেকে বলছেন, কোম্পানির এসব ইতিবাচক খবর আগেই ফাঁস করে শেয়ারদর বাড়িয়ে নেয়ার কৌশল নতুন নয়। এভাবে দর বাড়িয়ে পরবর্তী সময় শেয়ার বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নেন তারা।
সম্প্রতি সি পার্লকে বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডসের (বিডি ওয়েল্ডিং) ৩০ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণের অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। উৎপাদন বন্ধ ও বিগত ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করা বিডি ওয়েল্ডিংয়ের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে বর্তমানে ৩১ দশমিক ০১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ২৫ দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার আইসিবির কাছে আছে। সি পার্লের ৩০ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণের জন্য আইসিবির কাছে থাকা সব শেয়ার সি পার্লের কাছে বিক্রি করে দেয়া হবে। বাকি ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ শেয়ার এমডি ও পরিচালকদের কাছ থেকে বিক্রি করা হবে।
যদিও ওই কোম্পানিটি সরাসরি সি পার্ল অধিগ্রহণ করছে না। এর অংশীদারত্ব কিনবেন সি পার্লের পরিচালক মেয়র ইকরামুল হক টিটু, তার ভাই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমিনুল হক শামীম ও ভাতিজা সামিউল হক সাফা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সি পার্লের কোম্পানি সচিব আজাহারুল মামুন বলেন, ‘কোম্পানির মালিকানা আমরা অর্থাৎ সি পার্ল কিনছে এমন নয়, আমাদের মালিকপক্ষ ব্যক্তিগতভাবে কিনছেন।’
গত মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে কোম্পানি জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) নিট মুনাফা হয়েছে ৪২ কোটি ২৭ লাখ টাকা, অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৫০ পয়সা। আগের অর্থবছরে একই সময়ে নিট মুনাফার পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, অর্থাৎ ইপিএস ছিল ৭২ পয়সা। সেই হিসাবে ৬ মাসে ইপিএস বেড়েছে ২ টাকা ৭৮ পয়সা বা ৩৮৬ দশমিক ১১ শতাংশ।
আর চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) নিট মুনাফা হয়েছিল ২৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা, অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ২৩ পয়সা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে নিট মুনাফা হয়েছিল ৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বা ইপিএস ছিল ৮১ পয়সা। এ হিসাবে ইপিএস বেড়েছে ১ টাকা ৪২ পয়সা বা বা ১৭৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ১৭ পয়সা।
অন্যদিকে ২০২২ সালের ৩১ জুলাইয়ে কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ৪৫ টাকা ৯০ পয়সা। সেখান থেকে ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারিতে দর দাঁড়ায় ২৮৩ টাকা ৮০ পয়সায়। অর্থাৎ এই সময়ে বেড়েছে ২৩৭ টাকা ৯০ পয়সা বা ৫১৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এরপর কয়েক দিন দরপতন হলেও বুধবার ৫ টাকা ৭০ পয়সা ও বৃহস্পতিবার ১ টাকা ৮০ পয়সা বেড়ে শেয়ারদর অবস্থান করছে ২৭১ টাকায়।
কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিষয়ে মাসুম জামান নামের বিনিয়োগকারী বলেন, ‘এ রকম ক্ষেত্রে যেমনটা দেখেছি যে, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আগেই পজেটিভ নিউজগুলো লিক করে শেয়ারদর বাড়িয়ে নেয়। তার পর শেয়ার বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নেয়। অতীতে এ রকম অনেক হয়েছে।’
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী বলেন, ‘এক দিনে দর বাড়েনি। অনেক দিন থেকেই দর বাড়ছে সি পার্লের। নতুন কোম্পানি অধিগ্রহণের খবরে বেড়ে থাকতে পারে।’
শেয়ারদর বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে সি পার্লের কোম্পানি সচিব আজাহারুল মামুন বলেন, ‘মার্কেটে কেন শেয়ারদর বাড়ছে, সেটার পেছনে অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আমাদের কাছে নেই।’
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে দরপতনের হিড়িকের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি বাড়তি নজরদারি ব্যবস্থায় (এএসএম) রাখা হয়েছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধনকুবের গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে।
ভারতের মুম্বাইভিত্তিক বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (বিএসই) ও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই) থেকে বৃহস্পতিবার পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার এ খবর জানায় এনডিটিভি।
নজরদারিতে থাকা প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো- আদানি এন্টারপ্রাইজ, আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকনোমিক জোন এবং আম্বুজা সিমেন্টস।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ গ্রুপের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে পুঁজিবাজারে লেনদেনে প্রতারণা ও শেয়ার দরে কারসাজির অভিযোগ করা হয়। এর পর থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দরে ধস নামে।
ওই প্রতিবেদনকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে আদানি গ্রুপ বলেছে, তাদের কোম্পানিগুলো সব আইন মেনে চলছে।
বেশ কয়েকটি বিষয়ের ভিত্তিতে কোনো কোম্পানিকে এএসএমের আওতায় রাখা হয়। এর মধ্যে রয়েছে কোম্পানির আয়ের ওপর গ্রাহকদের অংশীদারত্ব, প্রাইস-আর্নিং রেশিও ইত্যাদি।
এনএসই ও বিএসই জানিয়েছে, আদানি গ্রুপের তিনটি কোম্পানি নির্ধারিত মানদণ্ডে পড়ায় এগুলোকে এএসএমের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে অন্যান্য দিনের মতো বৃহস্পতিবারও আদানি গ্রুপের হোল্ডিং কোম্পানি আদানি এন্টারপ্রাইজেসের শেয়ার ২৬ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে। গ্রুপের অন্য কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দরপতনও অব্যাহত রয়েছে।
সব মিলিয়ে ছয় দিনে পুঁজিবাজার থেকে কোম্পানিগুলোর ৮ লাখ ৭৬ হাজার কোটি রুপি উধাও হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:চারটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফেরার হওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে আসার পর আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয়েছে ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (আইসিবি)। তবে এবার জানা গেল লোপাট করা অর্থের পরিমাণ আরও বেশি।
২০৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (ইউএফএস) লিমিটেডসহ ১১ জনের নাম উল্লেখসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে আইসিবি। ১১ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন থানায় করা মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) খতিয়ে দেখছে।
আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ইউনিভার্সেল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে আইসিবির পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে।’
মামলার নথিতে বলা হয়েছে, অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতারণামূলকভাবে টাকা আত্মসাৎ করার অপরাধ চিহ্নিত হয়েছে। আত্মসাৎকৃত ২০৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা উদ্ধার করতে এ মামলা করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ইউএফএস, ইউএফএসের চেয়ারম্যান সৈয়দ আলমগীর ফারুখ চৌধুরী, কোম্পানির এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীর, পরিচালক ইসরাত আলমগীর, আলিয়া হক আলমগীর, মাহিদ হক, মোহাম্মদ জাকির হোসেন, মোহাম্মদ মাসুম চৌধুরী, মোসাম্মত উম্মে ইসলাম সোহানা, সৈয়দা শেহরীন হোসেন, তারিক মাসুদ খান, সৈয়দা মেহরীন হুসেইনসহ অজ্ঞাতনামাসহ অনেকে।
এর আগে চারটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা নিয়ে ১৩ অক্টোবর দুবাই পাড়ি জমান প্রতিষ্ঠানটির এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীর। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। ২০১৮ সাল থেকে তহবিল সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির তদন্তে উঠে আসে।
এই জালিয়াতির ক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রতিবেদন জালিয়াতি এবং ভুয়া এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিড রেট) দেখিয়ে বিএসইসিকে অন্ধকারে রাখা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ৪ বছর নিষ্ক্রিয় ছিল ফান্ডের ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান (গ্যারান্টি দেয়া প্রতিষ্ঠান) আইসিবি।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি এ খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ২ জানুয়ারি এমডির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চায় হাইকোর্ট। পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীরের দুবাই পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানাতে নির্দেশ দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও আইসিবিকে ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়।
৩ জানুয়ারি ইউএফএস ও এর এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীরসহ ১৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত বা জব্দ করা হয়। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন বন্ধে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এ কথা জানিয়ে চিঠি পাঠায়।
এ তালিকায় নাম আছে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনস লিমিটেড, ইউএফএসের এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীর, আলিয়া হক আলমগীর, মাহিদ হক, তারেক মাসুদ খান, মোহাম্মাদ জাকির হোসেন, মোসা. উম্মে ইসলাম সোহানা, ইশরাত আলমগীর, সৈয়দা মেহরীন রহমান, সৈয়দ আলমগীর ফারুক চৌধুরী ও সৈয়দা শেহরীন হুসাইনের।
অ্যাকাউন্ট স্থগিত রাখার তালিকায় আরও আছে- ইউএফএস-আইবিবিএল শরিয়া ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড ৩৮, ইউএফএস-ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ড এবং ইউএফএস-পদ্মা লাইফ ইসলামিক ফান্ড।
এদিকে বিনিয়োগকারী এবং পুঁজিবাজারের স্বার্থে ইউএফএস ও তাদের সব ফান্ডের নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে শেয়ারবাজারে নিষিদ্ধ করা হয়। বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়, ইউএফএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় চারটি ফান্ড ইউএফএস-আইবিবিএল শরিয়া ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পদ্মা লাইফ ইসলামিক ইউনিট ফান্ড ও ইউএফএস-ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ডের নিরীক্ষা করে আসছে আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস। নিরীক্ষক মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর অনুসন্ধানের জন্য তদন্তের শুনানিতে উপস্থিত হয়নি। এ থেকে স্পষ্ট যে, তদন্ত কমিটির সঙ্গে নিরীক্ষক অপেশাদার আচরণ করেছে। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর ধারা ২০-এ দ্বারা প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ম্যানেজার, ট্রাস্টি, কাস্টোডিয়ান, ইস্যুকারী এবং সম্পদ ব্যবস্থাপককে নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে যে, নিরীক্ষক আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে ইউএফএসের অধীনে থাকা কোনো মিউচ্যুয়াল ফান্ডের নিরীক্ষার অনুমতি দেয়া হবে না। কমিশন আরও নির্দেশ দিয়েছে, নিরীক্ষককে কোনো মিউচুয়াল ফান্ড এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির নিরীক্ষক হতে অনুমতি দেবে না কমিশন। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত জারি থাকবে।
এ ছাড়া কোম্পানিটির ফান্ড সংশ্লিষ্টদের কাছে ২৩টি তথ্য চায় কমিশন, যা ৮ জানুয়ারির মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছিল। বিএসইসির চিঠিতে যেসব তথ্য চাওয়া হয়ে, সেগুলো হলো-ইউএফএসের ব্যবস্থাপনার ইউএফএসইপিএল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং ইউএফএসইপিএল প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ডের আগের ও বর্তমানের সব আর্থিক প্রতিবেদন, ফান্ড দুটির সব ব্যাংক স্টেটমেন্টের তথ্য, ফান্ড দুটিতে উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ ও তাদের ব্যাংক হিসাবের স্টেটমেন্ট, ফান্ডগুলোর গ্রাহক ও তাদের টাকার পরিমাণের তথ্য, ফান্ড দুটিতে বিনিয়োগ কমিটির সদস্যদের তালিকা।
সে সঙ্গে ফান্ড দুটির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যেসব ব্যবসায় বিনিয়োগ আছে সেগুলো ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ জমা দিতে বলা হয়। ফান্ডগুলোর পোর্টফোলিওতে থাকা কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থার বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়।
ফান্ড দুটির বিনিয়োগের অবস্থা এবং নির্দিষ্ট সীমার বিষয়ে প্রকাশ করা তথ্য, অতালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ফান্ড দুটির বিনিয়োগের বিষয়ে ট্রাস্টি থেকে প্রাপ্ত কনসেন্ট লেটার, ফান্ডগুলোর সম্পদ মূল্য ও শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা ফি এবং সংশ্লিষ্ট সব তথ্য কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছিল।
ব্যাংকগুলো দেশের ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারদের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে যে ঋণ দিয়ে থাকে তার ওপর প্রভিশন ১ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দেশের পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতের বিনিয়োগ টানতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে এর কতটা ইতিবাচক প্রভাব প্রভাব তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি) থেকে সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়।
তাতে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক বা স্টক ডিলারদের ঋণ দিয়ে থাকে। সেখানে আগে অশ্রেণিবদ্ধ ঋণে ২ শতাংশ প্রভিশন রাখার নিয়ম ছিল। এখন থেকে ১ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হবে।
বিআরপিডি’র পরিচালক মাকসুদা বেগম বলেন, ‘দেশের আর্থিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগে থেকেও এমনটা দাবি ছিল। দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকে আমরা একটু আকর্ষণীয় করতে চেয়েছি। আমরা দেখলাম যে বিবেচনা করার মতো সুযোগ আছে। এর ফলে ব্যাংকের যে খুব একটা লোকসান হবে তা কিন্তু না। বরং এর ফলে দেশের পুঁজিবাজার যদি চাঙ্গা হয় তাহলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।’
এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর জন্য দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আর একটু আকর্ষণীয় করে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এর ফলে যে খুব বেশি ইমপ্যাক্ট হবে তা আমি মনে করি না।’
দ্য এসোসিয়েশন অফ ব্যাংকারস, বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, ‘ব্যাংক কোথায় কত বিনিয়োগ করবে তা নির্ভর করছে তাদের পরিকল্পনার ওপর। এই পদক্ষেপে যে বড় কোনো পরিবর্তন হবে সেটা আমি বিশ্বাস করি না।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘এখন আগের তুলনায় প্রভিশন কম করতে হবে। আগে ব্যাংকগুলো ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক বা স্টক ডিলারদের ঋণ দিলে এর ওপর ২ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হতো। অর্থাৎ কোনো ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা ঋণ দিলে তাকে ২ কোটি টাকা প্রভিশন রাখতে হতো। এখন ১০০ কোটি টাকা ঋণ দিলে ১ কোটি টাকা প্রভিশন রাখতে হবে। ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে ঋণ ১০০ কোটি টাকাই দিচ্ছে। শুধু ব্যাংক প্রভিশন কম রাখবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য