ভোক্তাদের অধিকার ও স্বার্থ নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেছেন, নয়-ছয় সুদহারের কারণে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে। শুধু তাই নয়, এর ফলে বিদেশে টাকা পাচার বেড়ে গেছে। ব্যাংকের টাকা নিয়ে মানুষ জমি কিনছে। আমাদের নীতিনির্ধারকরা একটি গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ে গেছে। এখান থেকে তাদের বের হয়ে আসতে হবে।
বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্ব পালন করা দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিউজবাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি।
বাজারে সব জিনিসের দামই চড়া। শীতের সবজি বাজারে এলেও দাম কমছে না। চাল-আটার দাম বেড়েই চলেছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (এফএও) বলছে, জ্বালানি ও খাদ্য এক বছর আগের দামে ফিরেছে। জ্বালানি তেলের দাম ৮০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। বাংলাদেশে কমছে না কেন?
আসলে বাজারে সব খাদ্যসহ সব পণ্যের দাম খুবই বেশি। নিত্যপণ্যের বাড়তি দামে মানুষের খুবই কষ্ট হচ্ছে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় কম দামে পণ্য পেয়ে অসহায় গরিব মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। আড়াই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তাদের আয়-উপার্জন বাড়েনি; বাড়েনি ক্রয়ক্ষমতা। অথচ খরচ বেড়েই চলেছে। তাদের সংসার চালানো সত্যিই কঠিন হয়েছে পড়েছে।
এই যে শীতের সবজিতে বাজার ভরে গেছে। কিন্তু দাম কমছে না। চাল-আটার দাম বেড়েই চলেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেই এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মাঝারি মানের চালের দাম এক মাসে বেড়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ; এক বছরে বেড়েছে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। এক মাসে সরু (নাজিরশাইল ও মিনিকেট) চালের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ২৪ শতাংশ; এক বছরে বেড়েছে ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আটা-ময়দার দাম বেড়েছে আরও বেশি, এক বছরে খোলা আটার দাম বেড়েছে ৭৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে ৭০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্ববাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিশ্ববাজারে যা ঘটে তার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পড়ে। এটা হচ্ছে বিশ্বায়নের কুফল বা সুফল, যাই বলেন না কেন। আমাদের দেশে নানা রকম সংকট আছে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম যে বেশি, সেই সংকট তো আছেই। পাশাপাশি বাংলাদেশে আমদানি ব্যয় আমাদের রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে বেশি। ফলে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স ঋণাত্বক হচ্ছে। যার কারণে দিন দিন টাকা তার মূল্য হারাচ্ছে। ডলারের দাম বাড়ছে। ৯ মাস, এক বছর আগে এক ডলার কিনতে ৮৫ টাকা লাগত। এখন এক ডলার কিনতে ১১০ টাকা লাগে। আগে একটি ১০ ডলারের পণ্য যদি ৮৫০ টাকায় যাওয়া যেত সেটার এখন দাম ১ হাজার ১০০ টাকা। পাশাপাশি কর বাড়ছে। এটা দাম বাড়ার একটি কারণ।
এটা তো গেল বিশ্ব পেক্ষাপট। পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কথা দীর্ঘদিন ধরে শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই?
আমাদের এখানে পণ্যের দাম বাড়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে এক্সপেকটেশন, ব্যবসার ক্ষেত্রে যেটাকে বলা হয়ে থাকে অতি মুনাফা বা আশা। আমাদের এখানে প্রফিট এক্সপেকটেশন মনে হয় বেড়ে গেছে। আমাদের অনেক পণ্যের আমদানিকারকের সংখ্যা অনেক সীমিত। মাত্র ৫ থেকে ৭ জন। এরাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের লাভ করার মানসিকতা বেড়েছে। এরাই সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।
এ ছাড়া যারা পাইকার বা খুচরা বিক্রেতা তাদের লাভ করার ইচ্ছাও বেড়ে গেছে। আগে তারা ১০০ টাকায় ২ টাকা লাভ করে সন্তুষ্ট থাকতেন। এখন তারা ১০০ টাকায় ৫ টাকা লাভ করার চেষ্টা করছেন। ভোক্তারা সেটা মেনে নিচ্ছেন বলে আমার ধারণা। এর ফলে পণ্যমূল্য যে পরিমাণ বাড়ার কথা তার চেয়ে বেশি বাড়ছে। আমাদের দেশে আরেকটা জিনিস হয়, হঠাৎ করে একটি ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। কখনো চিনি বা তেল বা পেঁয়াজ-রসুন। এখানে সরবরাহ বিঘ্নিত করে দাম বাড়ানো হয়। আমাদের ভোক্তা অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা কখনো বড় ব্যবসায়ীরা করেন। কখনো মজুতদাররা করেন। আবার পাইকাররা বা খুচরা ব্যবসায়ীরা করেন। এটাও পণ্যমূল্য মূল্যস্ফীতি বাড়ার একটি অন্যতম কারণ। আমাদের দেশে মানুষের মুনাফা করার মানসিকতায় একটি স্ফীতি ঘটছে।
সরকার কী সঠিকভাবে বাজার মনিটর বা তদারক করছে?
কিছুদিন আগে আমাদের দেশের প্রতিযোগিতা কমিশন একটি কাজ করেছে। আমাদের একটি প্রতিযোগিতা কমিশন ছিল; তাদের কোনো কাজ আমরা এতদিন দেখতে পাইনি। কিন্তু কিছুদিন আগে তারা একটি কাজ করেছে। বেশি দামে পণ্য বিক্রির অভিযোগে দেশের কয়েকটি বড় বড় প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কমিশন মামলা করেছিল; তারা ভয়ও পেয়ে গিয়েছিল। দেশের মানুষ কমিশনকে বাহাবা দিয়েছিল। আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম, ভেবেছিলাম এবার বোধহয় কিছু একটা হবে। কিন্তু সেটা কেন জানি আবার ঝিমিয়ে পড়েছে। এ কাজগুলো হয়েছিল কমিশনের আগের চেয়ারম্যানের সময়ে। তিনি সম্প্রতি অবসরে গেছেন। এখন নতুন চেয়ারম্যান এসেছেন, তার কাছ থেকে আমরা আগের মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি চাই। তাহলেই একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ব্যবসায়ীদের দেশের মানুষকে জিম্মি করে অতিমুনাফা করার মানসিকতা কমবে।
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরে যাওয়ার আগে বেশ কিছু মামলা করেছেন। মামলার নেচার কনক্লুশন হয়নি। মামলা করা তো যথেষ্ট নয়। শুধু মামলা হলে হবে না। দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, তাহলে প্রভাব পড়বে। ব্যবস্থার কথা আমরা জানতে পারিনি। এ ব্যাপারে কমিশন আরও তৎপর হবে- এটা প্রত্যাশা করি।
বাজারে পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই কী সঠিক দায়িত্ব পালন করছে?
এফবিসিসিআইর তো কোনো আইনগত ক্ষমতা নেই। ব্যক্তি যখন মুনাফা করার জন্য নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে ফেলে, তখন এফবিসিসিআই বা অন্য কোনো সংস্থা যাদের কোনো আইনগত ক্ষমতা নেই, তারা যে খুব একটা কাজ করতে পারে তা আমার মনে হয় না। এ ক্ষেত্রে দেশের আইন আর যেসব সংস্থা দেশের এই আইন প্রয়োগ করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের আরও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।
এখানে আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ধরপাকড় করে, ভয় দেখিয়ে, আতঙ্ক সৃষ্টি করে কিন্তু অনেক সময় পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। অনেক সময় দেখা যায়, ধরপাকড় করলে পণ্য বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়, তখন ভোক্তা-ক্রেতারা আরও বেশি সংকটে পড়েন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার তাদের কাজ করছে। তবে আমি মনে করি পণ্যমূল্য কমাতে হলে মানিটারি পলিসি (মুদ্রানীতি) ও ফিসক্যাল পলিসিতে (রাজস্ব নীতি) পরিবর্তন আনতে হবে। যাতে অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়ে।
পৃথিবীর অনেক দেশ মূল্যস্ফীতির পারদ নিচের দিকে নামাতে রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতিতে নানা ধরনের পরিবর্তন আনছে। আমাদেরও সেই পথে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হচ্ছে। আজ এই সমস্যা তো কাল ওই সমস্যা। এর সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে তো নানা ঝামেলা আছে। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে, বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজন হলে বিদ্যমান নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।
এই সংকটকালে মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখতে অর্থনীতিবিদরা ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়ানোর কথা বলছেন। সরকারের দু-একজন মন্ত্রীও একই কথা বলছেন। কিন্তু ব্যবসায়ী নেতারা বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, সুদের হার বাড়লে বিনিয়োগ কমে যাবে। অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আপনি কী মনে করেন?
সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ানো হচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ানো হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, চীনসহ প্রায় সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকই একই কাজ করছে। কিন্তু আমাদের দেশে আমরা ৬ শতাংশ আর ৯ শতাংশের মধ্যে আটকে গেছি। আমরা ডিপজিটরকে ৬ শতাংশ দিই। আর ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের ৯ শতাংশ হারে ঋণ দিই। এর ফলে বড় ব্যবসায়ীরা সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ যারা টাকা জমা রেখেছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমার মনে হয় বিষয়টি আবার ভেবে দেখা উচিত।
এখানে বলা হচ্ছে, সুদের হার বাড়লে উৎপাদন খরচ বাড়বে। সেখানে একটি ফারাক আছে। কারণ যদি উৎপাদন খরচ বাড়ে সেটা বেড়ে আবার কমতে পারে। তখন মূল্যস্ফীতিও কমবে। তাই আমি মনে করি, নয়-ছয় সুদের হার থেকে আমাদের দ্রুত বেড়িয়ে আসা উচিত। ছয় মাস-এক বছরের জন্য হলেও এটা করা উচিত। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা বলছে, ২০২৩ সাল খুবই কঠিন সময় যাবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কাও করছে তারা। দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাসও দেয়া হচ্ছে। এই তো আর ১০-১২ দিন পরই ২০২৩ সাল শুরু হবে। তাই এই কয়টা দিন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নানান কিছু চিন্তা করে, বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে। মনে রাখতে হবে, ২০২৩ সালকে যদি আমরা করোনা মহামারির মতো মোটামুটি ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশকে আর পেছনে তাকাতে হবে না।
ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের দীর্ঘদিনের দাবির পর ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাংকঋণের সুদহার কমিয়ে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে শিল্প খাতে ঋণের সুদের হার ১৫, ১৬, এমনকি ২০ শতাংশ পর্যন্তও ছিল। সুদের হার কমলেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে কেন?
এখানেই তো বড় প্রশ্ন। ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা বলেছিলেন, সুদের হার কমলে, দেশে বিনিয়োগ বাড়বে, খেলাপি ঋণ কমবে। কিন্তু হচ্ছে তার উল্টোটা, দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে না। এখানে তারা করোনা মহামারি ও যুদ্ধের অজুহাত দেখাচ্ছেন। কিন্তু খেলাপি ঋণ বাড়ছে কেন? ছয় মাস আগে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এটাকে কিন্তু কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
দেশে সুদের হার কমলেও খেলাপি ঋণ কমছে না; আড়াই বছরের বেশি সময় এরপর মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে মেয়াদি আমানতের সুদহার বেঁধে দেয়া হয়। তবে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশ হলেও ব্যাংকের মেয়াদি আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ রয়ে গেছে। আমি মনে করি, নয়-ছয় সুদহারের কারণে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। শুধু তাই নয়, এর ফলে বিদেশে টাকা পাচার বেড়ে গেছে। ব্যাংকের টাকা নিয়ে মানুষ জমি কিনছে। আমাদের নীতিনির্ধারকরা একটি গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ে গেছে। এখান থেকে তাদের বের হয়ে আসতে হবে। আমাদের অনেকের মধ্যে এ রকম একটি প্রবণতা আছে, ‘আমার এই চিন্তাধারা বিশ্বকে দিবে নাড়া’। বিশ্ব যেভাবে উপকার পেয়েছে সেটা না করে আমরা নিজেরা আমাদের মতো কাজ করতে চাই। আমাদের এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এই প্রবণতা সংকটকে ঘনীভূত করে। সারা বিশ্ব যা করছে আমাদের উচিত সেটা অনুসরণ করা।
এমনিতেই বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। সবাই আতঙ্কে আছেন, রমজান মাসকে সামনে রেখে আরও বাড়বে। আপনি কি মনে করেন?
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখানে বলির পাঁঠা। কোনো পণ্যের দাম বাড়লেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করা হয়। কিন্তু এখানে মূল্যস্ফীতি কমাতে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয় আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। আর উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে যেসব মন্ত্রণালয় জড়িত তাদের যেমন-কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়।
আমরা কিছু ভালো নীতি দেখতে পাচ্ছি। ব্যালেন্স অব পেমেন্টের সমস্যা সমাধানের জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলা কঠিন করা হয়েছিল। রমজানকে সামনে রেখে পণ্য আমদানির এলসি সহজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। খেজুরসহ অতিপ্রয়োজনীয় ৮ পণ্য বাকিতে আমদানির সুযোগ দেয়া হয়েছে। পণ্যগুলো হলো খেজুর, ছোলা, ভোজ্যতেল, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা ও চিনি। রোজার সময় যাতে কোনো ঘাটতি না পড়ে, দাম সহনীয় থাকে- সে জন্য এই ৮ পণ্য বাকিতে আমদানির সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকে সাপ্লায়ার্স ও বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় ৯০ দিনের মধ্যে অর্থ পরিশোধের চুক্তিতে এসব পণ্য আনা যাবে।
এটাকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি। সরবরাহ পরিস্থিতির যদি উন্নতি হয় তাহলে কিন্তু মূল্য কমবে না। সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে কোনো একটি বিশেষ পণ্যের ক্ষেত্রে সরবরাহে সমস্যা তৈরি করে কেউ অতি মুনাফা করার চেষ্টা করছে কি না। সে ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং প্রশাসনকে দৃষ্টি রাখতে হবে। কিন্তু সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতির ব্যবহার আরও নিবিড় করতে হবে। আরও যুক্তিসংগত এবং সময় উপযোগী করতে হবে।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বলছে, ২০২৩ সালে অনেক দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশের অবস্থা কেমন?
খাদ্যের দিক দিয়ে আমি বলব, বাংলাদেশ এক ধরনের স্বস্তির মধ্যেই আছে। সরকারি গুদামগুলোতে ১৭ লাখ টনের মতো খাদ্য মজুত আছে। বেসরকারি পর্যায়েও প্রচুর খাদ মজুত আছে। সরকার ও বেসরকারিভাবে প্রচুর চাল ও গম আমদানি হচ্ছে। আমনের ফলন ভালো হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সার্বিক বিবেচনায় আগামী দুই-এক বছর খাদ্য নিয়ে খুব একটা চিন্তার কারণ আমি দেখছি না।
আমি মনে করি, বাংলাদেশে খাদ্যের সরবরাহে সমস্যা হবে না। কোনো দেশে দুর্ভিক্ষ কিন্তু সরবরাহ পরিস্থিতি নাজুক হলেই হয় না। মানুষের যদি ক্রয়ক্ষমতা না থাকে তখন দুর্ভিক্ষ হয়। তাই সরবরাহ পরিস্থিতি ঠিক রাখতে হবে, পাশাপাশি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ঠিক রাখতে হবে। এর মধ্যে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সাশ্রয়ী মূল্যে সরকার এক কোটি পরিবারকে খাদ্য দিচ্ছে। এগুলো আরও বাড়াতে হবে। আমি আশা করি, বিশ্বাস করি, প্রার্থনা করি, বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবে না।
আপনি বলছিলেন, মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্তরা কষ্টে আছেন। তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় সরকারের কিছু করা উচিত কি না?
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) স্থানীয় বাজার থেকে পণ্য কিনে গরিব মানুষের কাছে কম দামে বিক্রি করছে স্থানীয় বাজারে। এর অর্থ সার্বিক সরবরাহ পরিস্থিতি কিন্তু পরিবর্তন হচ্ছে না। টিসিবি যদি দেশ থেকে পণ্য সংগ্রহ না করে দেশের বাইরে থেকে পণ্য সংগ্রহ করত তাহলে ভালো হতো। মূল্যস্ফীতিতে সেটার একটি ভালো প্রভাব পড়ত।
সার্বিকভাবে নিম্ন মধ্যবিত্তরা যাতে ভালো থাকেন, সেটা নিয়ে সরকারকে এখন নতুন করে ভাবতে হবে। তাদের আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সংকট তৈরি করেছে নয়ছয় সুদের হারের বাঁধন। এর ফলে যারা ফিক্সড ইনকাম গ্রুপের লোক, যারা পেনশনভোগী, যাদের সঞ্চয় থেকে আয় দিয়ে সংসার চালান আমানতের সুদের হার কমায় তারা কিন্তু আরও সংকটাপন্ন হচ্ছেন। তাদের জন্য সরকারের অবশ্যই কিছু ভাবতে হবে, করতে হবে।
পণ্য মূল্য সহনীয় রাখতে সরকারের তৎপরতাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
সরকার সচেতন। বিশেষ করে আমাদের প্রধানমন্ত্রী খুব সচেতন। তিনি সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন বলে আমাদের ধারণা। সরকারকে অনেক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। যাদের লবিং ক্ষমতা যত বেশি তাদের পক্ষে সিদ্ধান্তগুলো যায়। এখন বিত্তবানদের লবিং ক্ষমতা বেশি। সাধারণ মানুষের খুব কম। তবুও আশা করব রমজান মাস আসছে, দ্রব্যমূল্য যাতে সহনীয় থাকে, সন্তোষজনক থাকে, সাধারণ মানুষ যাতে কষ্ট না পান, এর জন্য সরবরাহ পরিস্থিতি যাতে ঠিক থাকে, মানুষের আয় যাতে ঠিক থাকে, বাড়ে। আর কেউ যাতে সিন্ডিকেট করে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়িয়ে না দেন, সেদিকে সরকারকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
আরও পড়ুন:ভারতে লোকসভা নির্বাচনের কারণে ১৭, ১৮ ও ১৯ এপ্রিল পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পাথরসহ সকল প্রকার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারত। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপারও বন্ধ থাকবে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামা পারভীন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয় ।
এদিকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বুধবার দুপুরে ৩ দিন বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ভারতের লোকসভা নির্বাচন কারনে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে আজ (বুধবার) থেকে শুক্রবার বন্দর দিয়ে দুই দেশের মাঝে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এ সময় অফিস যথারীতি খোলা থাকবে।’
শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে স্থলবন্দর দিয়ে পুনরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কর্মকর্তা অমৃত অধিকারী জানান, দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধের সঙ্গে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাওয়া-আসাও বন্ধ থাকবে।
হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই বন্দর দিয়ে পার হতে আসা যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে, জরুরি চিকিৎসার জন্য যাতায়াতকারী মানুষের দূর্ভোগ বেড়েছে।
আরও পড়ুন:বিষয়বস্তু অবহিত না করে ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থিভাবে ‘রূপান্তর’ শিরোনামের একটি নাটক প্রচার করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’কে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে ওয়ালটন।
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সব ধরনের বিজ্ঞাপনী চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিষয়টির জন্য ওয়ালটন গ্রুপ ক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
ওয়ালটনের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’ এর স্বত্বাধিকারী মোহন আহমেদকে মঙ্গলবার ওই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।
ওয়ালটনের পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট রাইসুল ইসলাম রিয়াদ স্বাক্ষরিত আইনি নোটিশে উল্লেখ করে যা বলা হয়, ‘আপনি লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান এর স্বত্বাধিকারী। আপনার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার নির্মিত ছয়টি নাটকে ওয়ালটন ফ্রিজ ব্র্যান্ডিং করতে সম্মত হয়। শর্ত থাকে যে, উক্ত নাটকসমূহে দেশের আইন, নীতি, নৈতিকতা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হয় এরকম কোনো বিষয় অর্ন্তভুক্ত হবে না। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, উক্ত নাটকসমূহের মধ্যে ‘রূপান্তর’ নাটকটিতে এমন কিছু বিষয় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে, যাতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ও মানুষের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে।’
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘ওয়ালটন কর্তৃপক্ষকে নাটকটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে পূর্বে অবহিত না করে রূপান্তর নাটক প্রচার করায় আপনার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হলো এবং সেই সঙ্গে কেন আপনার বিরুদ্ধে ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থিভাবে নাটক প্রচারের জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে জানানোর জন্য বলা হলো।’
এর আগে ফেসবুক-ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকে ‘রূপান্তর’ নাটকটি প্রত্যাহারের জন্য বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে নির্দেশ দেয় ওয়ালটন। তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুক-ইউটিউবসহ সব মাধ্যম থেকে নাটকটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
এরপর বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ওয়ালটন গ্রুপের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থি নাটকে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’কে লিগাল নোটিশ দেয় ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।
আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ওয়ালটনের ভাষ্য, দেশের মানুষের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনো কর্মকাণ্ড কখনও তারা সমর্থন করে না এবং এসব কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকে না। অনাকাঙ্ক্ষিত এই বিষয়টির জন্য ওয়ালটন গ্রুপ মর্মাহত এবং সম্মানিত ক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন রূপালী ব্যাংক পিএলসির মহাব্যবস্থাপক মো. ফয়েজ আলম। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে তিনিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকের আট জন মহাব্যবস্থাপককে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।
ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি হওয়ার আগে তিনি রূপালী ব্যাংক পিএলসিতে মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মো. ফয়েজ আলম ১৯৯৮ সালে বিআরসির মাধ্যমে সিনিয়র অফিসার পদে রূপালী ব্যাংকে যোগদান করেন। কর্মজীবনে ব্যাংকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখার শাখা ব্যবস্থাপক, জোনাল অফিস এবং প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। পেশাগত প্রয়োজনে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও আরব অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণসহ দেশ-বিদেশে ব্যাংকিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন।
ফয়েজ আলমের জন্ম ১৯৬৮ সালে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার যোগীরনগুয়া গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ অনার্সসহ এমএ পাশ করার পর এমফিল ডিগ্রিও অর্জন করেন খ্যাতিমান এই ব্যাংকার।
পেশাগত জীবনের বাইরে ফয়েজ আলম একজন সফল লেখকও। বাংলাদেশে তিনি অগ্রণী উত্তর উপনিবেশী তাত্ত্বিক, প্রাবন্ধিক ও কবি হিসেবে বিশেষ খ্যাতিমান। এডওয়ার্ড সাঈদের বিখ্যাত গ্রন্থ অরিয়েন্টালিজম-এর অনুবাদক হিসেবেও তার আলাদা খ্যাতি আছে। তার পনেরটির বেশি গ্রন্থ এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে।
হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার ক্রমিক নম্বর নিয়ে বুথ-৪ এ প্রবেশ করে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যালট সংগ্রহ করলেন ভোটার। গোপন কক্ষে গিয়ে নিজের ভোট প্রদানও করলেন। ভোট দেয়া শেষে কক্ষের বাইরে গণমাধ্যমকর্মীরা ওই ভোটারের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি জানালেন, ‘ভোটার কীভাবে হলাম নিজেও বলতে পারি না।’
মঙ্গলবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির নির্বাচনে ভোট দিয়ে এক তরুণ ভোটার নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির ভোটার কীভাবে হওয়া যায়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও জানি না কীভাবে ভোটার হলাম। আমাকে ফোনে নিশ্চিত করা হয়েছে যে আমি চেম্বারের একজন ভোটার, তাই ভোট দিতে এসেছি।’
তার কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়, তার নিজস্ব কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে কি না? জবাবে তিনি জানান, তিনি একজন বাইক (মোটরসাইকেল) মেকানিক। তার নিজস্ব একটি প্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের এখনও নামকরণও করা হয়নি।
প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা না হলে ট্রেড লাইসেন্স কীভাবে হলো বা আদৌ ট্রেড লাইসেন্স হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি আর কোনো জবাব না দিয়ে সরে পড়েন।
ভোট দিয়ে বের হচ্ছিলেন লিমন নামের আরেক ভোটার। তিনি জানান, সদর উপজেলার নারগুণ থেকে তিনি এসেছেন ভোট দিতে। তার ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ট্রেড লাইসেন্স আছে কি না এবং কী প্রক্রিয়ায় ভোটার হলেন- জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি৷ এ সময় তাকে ক্যামরার সামনে কথা বলতে না করেন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্যানেলের এক প্রার্থী।
ভোট দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন দুলালি ইসলাম। তিনি জানান, তার মামা একটি হিমাগারের ম্যানেজার। তিনিই তাকে ভোটার হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ‘দুলালি ফার্মেসী’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে তার।
চেম্বারের ভোটার হতে প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র জমা দিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন মনে নেই।’
এদিকে ভোটের একদিন আগে সোমবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে ৭ কারণ উল্লেখ করে ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দুটি প্যানেলের মধ্যে আলমগীর-মুরাদ ও সুদাম প্যানেল ভোট বর্জন করে। এ সময় প্রার্থীরা নির্বাচনের অনিয়ম, ভোটার তালিকা নিয়ে অসঙ্গতিসহ নানা কারণ উল্লেখ করেন।
এর আগে, গত ১৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে ভোটার তালিকা সংশোধন ও নির্বাচনের তারিখ পেছানোর জন্য নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন জানিয়েছিল প্যানেলটি। সে সময় ভোটের মাঠে থাকার কথা জানালেও অবশেষে ভোটের আগের রাতে তারা ভোট বর্জন করেন। ফলে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াই অংশ নিয়েছে দুলাল-বাবলু ও আরমান প্যানেল।
চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির নির্বাচন নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সচেতন মহলে মিশ্র প্রতিত্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
জাতীয় তেল গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ঠাকুরগাঁও সদস্য সচিব মো. মাহবুব আলম রুবেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ ঠাকুরগাঁও চেম্বারের ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, আমরা দেখছি এখানে সাধারণ শ্রমিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ভোটার হয়েছেন। অনেকেই আছেন যারা কোনো ব্যবসার সঙ্গেই জড়িত না।
‘তাহলে অন্য যে প্যানেলটি অভিযোগ করেছে- নিরপেক্ষ ভোটার তালিকা হয়নি। সেটার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি। এই নির্বাচনে ব্যবসায়ীরা তাদের সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচনে ব্যর্থ হয়েছেন।’
ভোটারদের প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি নির্বাচনি বোর্ডের আহ্বায়ক ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘ভোটার তালিকা নিয়ে বেশ কিছু প্রার্থী অভিযোগ করছেন। খসড়া তালিকা প্রকাশের পর অভিযোগ আপিল কর্তৃপক্ষের নিকট জানানোর সুযোগ ছিল। নির্ধারিত সময়র মধ্যে করা আপিলগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আপিল নিষ্পত্তির পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পর অভিযোগ করায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু দীর্ঘ বছর যাবৎ ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির কমিটি ছিল না, তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে চেম্বারের প্রশাসনের দায়িত্ব দিয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আছে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।’
আরও পড়ুন:ভোজ্যতেলের ওপর শুল্ক অব্যাহতির সময়সীমা শেষ হয়েছে সোমবার (১৫ এপ্রিল)। এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিভিওআরভিএমএফএ) সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।
বিভিওআরভিএমএফএ’র নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম মোল্লার পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কাঁচামাল আমদানি ও ভোজ্যপণ্য উৎপাদনে কর অব্যাহতির মেয়াদ ১৫ এপ্রিল শেষ হচ্ছে বিধায় পরদিন ১৬ এপ্রিল থেকে ভ্যাট অব্যাহতির আগের নির্ধারিত মূল্যে পণ্য সরবরাহ করা হবে।
নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ১৭৩ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতল ৮৪৫ টাকা ও এক লিটার পাম তেল ১৩২ টাকায় বিক্রি করা হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত ফেব্রুয়ারিতে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত (অপরিশোধিত) সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে।
এদিকে মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করা যেতে পারে, তবে সময় লাগবে।
‘ভোজ্যতেলের নতুন চালান আমদানির ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
আরও পড়ুন:প্রবাসীদের আয়ের একটি বড় অংশই আসে ঢাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখাগুলোতে। অর্থাৎ প্রবাসীদের পরিবারের বেশিরভাগই ঢাকায় থাকেন বা তাদের অধিকাংশ অ্যাকাউন্ট ঢাকার ব্যাংক শাখায়।
ইউএনবি জানায়, রেমিট্যান্সের জেলাভিত্তিক চিত্র নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। সিলেট তৃতীয় এবং কুমিল্লা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
এরপরে রয়েছে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর ও নরসিংদীর অবস্থান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয় প্রতিবেদনে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে প্রবাসীরা ১ হাজার ৫০৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২১৬ কোটি ডলার। তার আগের মাস জানুয়ারিতে দেশে প্রবাসী আয় ছিল ২১০ কোটি ডলার।
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়কালে ঢাকা জেলায় এসেছে ৫২৩ কোটি ডলার এবং চট্টগ্রাম জেলায় এসেছে ১৪২ কোটি ডলার।
এই সময়ে সিলেট জেলা ৮৭০ মিলিয়ন ডলার, কুমিল্লা ৮১০ মিলিয়ন ডলার এবং নোয়াখালী ৪৬০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ কোটি, ফেনীতে ৩৭ কোটি, মৌলভীবাজারে ৩৬ কোটি, চাঁদপুরে ৩৫ কোটি ডলার এবং নরসিংদীতে ২৫০ মিলিয়ন ডলার এসেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলো থেকে বেশি প্রবাসী আয় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এমনটা হচ্ছে না। কারণ অনেক প্রবাসী বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। বরং তারা (প্রবাসীরা) দেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে অর্থ পাচার বাড়ছে।
আরও পড়ুন:আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে কৃষি খাতে গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে তিন বছরে কৃষি উন্নয়নে ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে বাংলাদেশ সরকার।
‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬)’ অনুসারে, এই বিনিয়োগ খাদ্য নিরাপত্তা ও ন্যায়সঙ্গত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেয়। সূত্র: ইউএনবি
জিডিপিতে হ্রাস প্রবণতা সত্ত্বেও এটি বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলে কৃষিনির্ভর সংখ্যাগরিষ্ঠদের জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য উৎপাদন ও প্রতিকূলতা মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের গৃহীত কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে- উচ্চফলনশীল ও প্রতিকূলতাসহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন, যান্ত্রিকীকরণ-সেচ সম্প্রসারণ এবং বীজ ও সারের মতো সাশ্রয়ী মূল্যের উপকরণের প্রাপ্যতা বাড়ানো।
নীতি নথিতে প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সেচের জন্য ভূপৃষ্ঠের পানির ব্যবহার বাড়ানো, নবায়ণযোগ্য জ্বালানি সমাধানগুলো অন্তর্ভুক্ত করা এবং ফসল পরিচর্যার জন্য রিমোট সেন্সিং নিয়োগ করা।
সরকার একটি টেকসই ও স্বনির্ভর কৃষি কাঠামো গড়ে তুলতে ভর্তুকি, আর্থিক প্রণোদনা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই খাতকে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উপখাত থেকেও উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। এটি কেবল জিডিপি যথাক্রমে ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ১ দশমিক ৯১ শতাংশই বৃদ্ধি করে না, বরং জনসংখ্যার ১২ শতাংশেরও বেশি মানুষের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের উৎস হিসেবে কাজ করে এবং জীবিকার সংস্থান করে। এই ক্ষেত্রগুলোর অর্জনের মধ্যে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের জন্য এসব খাত অত্যাবশ্যক।
ভবিষ্যতে এসব খাতের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, উন্নত ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি গ্রহণ এবং সংরক্ষণ প্রক্রিয়া উন্নত করার জন্য বিশেষ করে ছোট ইলিশের (জাটকা) জন্য উন্নয়ন প্রকল্প চালু করতে প্রস্তুত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
টেকসই কৃষির গুরুত্ব বিবেচনায় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা আরেকটি মৌলিক ক্ষেত্র। আন্তঃসীমান্ত নদী থেকে ন্যায়সঙ্গত পানির হিস্যা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জলাশয় খনন ও উপকূলীয় বনায়ন বৃদ্ধির মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা উন্নয়নের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতির হুমকির মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপিতে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাসের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সরকার এই প্রভাবগুলো হ্রাস করার বিস্তৃত কৌশলগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনাটি জলবায়ু সম্পর্কিত বাধাগুলোর বিরুদ্ধে সহনশীলতা এবং স্থিতিশীলতা বাড়ানোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাত ও সম্প্রদায়গুলোকে সরঞ্জাম দিয়ে প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এই বহুমুখী প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের কৃষি ঐতিহ্যকে কেবল সুরক্ষাই নয়, বরং এগিয়ে নিতেও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে।
মন্তব্য