ভোক্তাদের অধিকার ও স্বার্থ নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেছেন, নয়-ছয় সুদহারের কারণে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে। শুধু তাই নয়, এর ফলে বিদেশে টাকা পাচার বেড়ে গেছে। ব্যাংকের টাকা নিয়ে মানুষ জমি কিনছে। আমাদের নীতিনির্ধারকরা একটি গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ে গেছে। এখান থেকে তাদের বের হয়ে আসতে হবে।
বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্ব পালন করা দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিউজবাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি।
বাজারে সব জিনিসের দামই চড়া। শীতের সবজি বাজারে এলেও দাম কমছে না। চাল-আটার দাম বেড়েই চলেছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (এফএও) বলছে, জ্বালানি ও খাদ্য এক বছর আগের দামে ফিরেছে। জ্বালানি তেলের দাম ৮০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। বাংলাদেশে কমছে না কেন?
আসলে বাজারে সব খাদ্যসহ সব পণ্যের দাম খুবই বেশি। নিত্যপণ্যের বাড়তি দামে মানুষের খুবই কষ্ট হচ্ছে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় কম দামে পণ্য পেয়ে অসহায় গরিব মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। আড়াই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তাদের আয়-উপার্জন বাড়েনি; বাড়েনি ক্রয়ক্ষমতা। অথচ খরচ বেড়েই চলেছে। তাদের সংসার চালানো সত্যিই কঠিন হয়েছে পড়েছে।
এই যে শীতের সবজিতে বাজার ভরে গেছে। কিন্তু দাম কমছে না। চাল-আটার দাম বেড়েই চলেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেই এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মাঝারি মানের চালের দাম এক মাসে বেড়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ; এক বছরে বেড়েছে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। এক মাসে সরু (নাজিরশাইল ও মিনিকেট) চালের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ২৪ শতাংশ; এক বছরে বেড়েছে ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আটা-ময়দার দাম বেড়েছে আরও বেশি, এক বছরে খোলা আটার দাম বেড়েছে ৭৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে ৭০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্ববাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিশ্ববাজারে যা ঘটে তার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পড়ে। এটা হচ্ছে বিশ্বায়নের কুফল বা সুফল, যাই বলেন না কেন। আমাদের দেশে নানা রকম সংকট আছে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম যে বেশি, সেই সংকট তো আছেই। পাশাপাশি বাংলাদেশে আমদানি ব্যয় আমাদের রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে বেশি। ফলে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স ঋণাত্বক হচ্ছে। যার কারণে দিন দিন টাকা তার মূল্য হারাচ্ছে। ডলারের দাম বাড়ছে। ৯ মাস, এক বছর আগে এক ডলার কিনতে ৮৫ টাকা লাগত। এখন এক ডলার কিনতে ১১০ টাকা লাগে। আগে একটি ১০ ডলারের পণ্য যদি ৮৫০ টাকায় যাওয়া যেত সেটার এখন দাম ১ হাজার ১০০ টাকা। পাশাপাশি কর বাড়ছে। এটা দাম বাড়ার একটি কারণ।
এটা তো গেল বিশ্ব পেক্ষাপট। পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কথা দীর্ঘদিন ধরে শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই?
আমাদের এখানে পণ্যের দাম বাড়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে এক্সপেকটেশন, ব্যবসার ক্ষেত্রে যেটাকে বলা হয়ে থাকে অতি মুনাফা বা আশা। আমাদের এখানে প্রফিট এক্সপেকটেশন মনে হয় বেড়ে গেছে। আমাদের অনেক পণ্যের আমদানিকারকের সংখ্যা অনেক সীমিত। মাত্র ৫ থেকে ৭ জন। এরাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের লাভ করার মানসিকতা বেড়েছে। এরাই সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।
এ ছাড়া যারা পাইকার বা খুচরা বিক্রেতা তাদের লাভ করার ইচ্ছাও বেড়ে গেছে। আগে তারা ১০০ টাকায় ২ টাকা লাভ করে সন্তুষ্ট থাকতেন। এখন তারা ১০০ টাকায় ৫ টাকা লাভ করার চেষ্টা করছেন। ভোক্তারা সেটা মেনে নিচ্ছেন বলে আমার ধারণা। এর ফলে পণ্যমূল্য যে পরিমাণ বাড়ার কথা তার চেয়ে বেশি বাড়ছে। আমাদের দেশে আরেকটা জিনিস হয়, হঠাৎ করে একটি ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। কখনো চিনি বা তেল বা পেঁয়াজ-রসুন। এখানে সরবরাহ বিঘ্নিত করে দাম বাড়ানো হয়। আমাদের ভোক্তা অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা কখনো বড় ব্যবসায়ীরা করেন। কখনো মজুতদাররা করেন। আবার পাইকাররা বা খুচরা ব্যবসায়ীরা করেন। এটাও পণ্যমূল্য মূল্যস্ফীতি বাড়ার একটি অন্যতম কারণ। আমাদের দেশে মানুষের মুনাফা করার মানসিকতায় একটি স্ফীতি ঘটছে।
সরকার কী সঠিকভাবে বাজার মনিটর বা তদারক করছে?
কিছুদিন আগে আমাদের দেশের প্রতিযোগিতা কমিশন একটি কাজ করেছে। আমাদের একটি প্রতিযোগিতা কমিশন ছিল; তাদের কোনো কাজ আমরা এতদিন দেখতে পাইনি। কিন্তু কিছুদিন আগে তারা একটি কাজ করেছে। বেশি দামে পণ্য বিক্রির অভিযোগে দেশের কয়েকটি বড় বড় প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কমিশন মামলা করেছিল; তারা ভয়ও পেয়ে গিয়েছিল। দেশের মানুষ কমিশনকে বাহাবা দিয়েছিল। আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম, ভেবেছিলাম এবার বোধহয় কিছু একটা হবে। কিন্তু সেটা কেন জানি আবার ঝিমিয়ে পড়েছে। এ কাজগুলো হয়েছিল কমিশনের আগের চেয়ারম্যানের সময়ে। তিনি সম্প্রতি অবসরে গেছেন। এখন নতুন চেয়ারম্যান এসেছেন, তার কাছ থেকে আমরা আগের মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি চাই। তাহলেই একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ব্যবসায়ীদের দেশের মানুষকে জিম্মি করে অতিমুনাফা করার মানসিকতা কমবে।
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরে যাওয়ার আগে বেশ কিছু মামলা করেছেন। মামলার নেচার কনক্লুশন হয়নি। মামলা করা তো যথেষ্ট নয়। শুধু মামলা হলে হবে না। দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, তাহলে প্রভাব পড়বে। ব্যবস্থার কথা আমরা জানতে পারিনি। এ ব্যাপারে কমিশন আরও তৎপর হবে- এটা প্রত্যাশা করি।
বাজারে পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই কী সঠিক দায়িত্ব পালন করছে?
এফবিসিসিআইর তো কোনো আইনগত ক্ষমতা নেই। ব্যক্তি যখন মুনাফা করার জন্য নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে ফেলে, তখন এফবিসিসিআই বা অন্য কোনো সংস্থা যাদের কোনো আইনগত ক্ষমতা নেই, তারা যে খুব একটা কাজ করতে পারে তা আমার মনে হয় না। এ ক্ষেত্রে দেশের আইন আর যেসব সংস্থা দেশের এই আইন প্রয়োগ করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের আরও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।
এখানে আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ধরপাকড় করে, ভয় দেখিয়ে, আতঙ্ক সৃষ্টি করে কিন্তু অনেক সময় পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। অনেক সময় দেখা যায়, ধরপাকড় করলে পণ্য বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়, তখন ভোক্তা-ক্রেতারা আরও বেশি সংকটে পড়েন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার তাদের কাজ করছে। তবে আমি মনে করি পণ্যমূল্য কমাতে হলে মানিটারি পলিসি (মুদ্রানীতি) ও ফিসক্যাল পলিসিতে (রাজস্ব নীতি) পরিবর্তন আনতে হবে। যাতে অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়ে।
পৃথিবীর অনেক দেশ মূল্যস্ফীতির পারদ নিচের দিকে নামাতে রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতিতে নানা ধরনের পরিবর্তন আনছে। আমাদেরও সেই পথে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হচ্ছে। আজ এই সমস্যা তো কাল ওই সমস্যা। এর সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে তো নানা ঝামেলা আছে। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে, বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজন হলে বিদ্যমান নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।
এই সংকটকালে মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখতে অর্থনীতিবিদরা ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়ানোর কথা বলছেন। সরকারের দু-একজন মন্ত্রীও একই কথা বলছেন। কিন্তু ব্যবসায়ী নেতারা বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, সুদের হার বাড়লে বিনিয়োগ কমে যাবে। অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আপনি কী মনে করেন?
সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ানো হচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ানো হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, চীনসহ প্রায় সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকই একই কাজ করছে। কিন্তু আমাদের দেশে আমরা ৬ শতাংশ আর ৯ শতাংশের মধ্যে আটকে গেছি। আমরা ডিপজিটরকে ৬ শতাংশ দিই। আর ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের ৯ শতাংশ হারে ঋণ দিই। এর ফলে বড় ব্যবসায়ীরা সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ যারা টাকা জমা রেখেছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমার মনে হয় বিষয়টি আবার ভেবে দেখা উচিত।
এখানে বলা হচ্ছে, সুদের হার বাড়লে উৎপাদন খরচ বাড়বে। সেখানে একটি ফারাক আছে। কারণ যদি উৎপাদন খরচ বাড়ে সেটা বেড়ে আবার কমতে পারে। তখন মূল্যস্ফীতিও কমবে। তাই আমি মনে করি, নয়-ছয় সুদের হার থেকে আমাদের দ্রুত বেড়িয়ে আসা উচিত। ছয় মাস-এক বছরের জন্য হলেও এটা করা উচিত। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা বলছে, ২০২৩ সাল খুবই কঠিন সময় যাবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কাও করছে তারা। দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাসও দেয়া হচ্ছে। এই তো আর ১০-১২ দিন পরই ২০২৩ সাল শুরু হবে। তাই এই কয়টা দিন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নানান কিছু চিন্তা করে, বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে। মনে রাখতে হবে, ২০২৩ সালকে যদি আমরা করোনা মহামারির মতো মোটামুটি ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশকে আর পেছনে তাকাতে হবে না।
ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের দীর্ঘদিনের দাবির পর ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাংকঋণের সুদহার কমিয়ে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে শিল্প খাতে ঋণের সুদের হার ১৫, ১৬, এমনকি ২০ শতাংশ পর্যন্তও ছিল। সুদের হার কমলেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে কেন?
এখানেই তো বড় প্রশ্ন। ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা বলেছিলেন, সুদের হার কমলে, দেশে বিনিয়োগ বাড়বে, খেলাপি ঋণ কমবে। কিন্তু হচ্ছে তার উল্টোটা, দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে না। এখানে তারা করোনা মহামারি ও যুদ্ধের অজুহাত দেখাচ্ছেন। কিন্তু খেলাপি ঋণ বাড়ছে কেন? ছয় মাস আগে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এটাকে কিন্তু কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
দেশে সুদের হার কমলেও খেলাপি ঋণ কমছে না; আড়াই বছরের বেশি সময় এরপর মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে মেয়াদি আমানতের সুদহার বেঁধে দেয়া হয়। তবে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশ হলেও ব্যাংকের মেয়াদি আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ রয়ে গেছে। আমি মনে করি, নয়-ছয় সুদহারের কারণে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। শুধু তাই নয়, এর ফলে বিদেশে টাকা পাচার বেড়ে গেছে। ব্যাংকের টাকা নিয়ে মানুষ জমি কিনছে। আমাদের নীতিনির্ধারকরা একটি গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ে গেছে। এখান থেকে তাদের বের হয়ে আসতে হবে। আমাদের অনেকের মধ্যে এ রকম একটি প্রবণতা আছে, ‘আমার এই চিন্তাধারা বিশ্বকে দিবে নাড়া’। বিশ্ব যেভাবে উপকার পেয়েছে সেটা না করে আমরা নিজেরা আমাদের মতো কাজ করতে চাই। আমাদের এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এই প্রবণতা সংকটকে ঘনীভূত করে। সারা বিশ্ব যা করছে আমাদের উচিত সেটা অনুসরণ করা।
এমনিতেই বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। সবাই আতঙ্কে আছেন, রমজান মাসকে সামনে রেখে আরও বাড়বে। আপনি কি মনে করেন?
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখানে বলির পাঁঠা। কোনো পণ্যের দাম বাড়লেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করা হয়। কিন্তু এখানে মূল্যস্ফীতি কমাতে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয় আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। আর উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে যেসব মন্ত্রণালয় জড়িত তাদের যেমন-কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়।
আমরা কিছু ভালো নীতি দেখতে পাচ্ছি। ব্যালেন্স অব পেমেন্টের সমস্যা সমাধানের জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলা কঠিন করা হয়েছিল। রমজানকে সামনে রেখে পণ্য আমদানির এলসি সহজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। খেজুরসহ অতিপ্রয়োজনীয় ৮ পণ্য বাকিতে আমদানির সুযোগ দেয়া হয়েছে। পণ্যগুলো হলো খেজুর, ছোলা, ভোজ্যতেল, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা ও চিনি। রোজার সময় যাতে কোনো ঘাটতি না পড়ে, দাম সহনীয় থাকে- সে জন্য এই ৮ পণ্য বাকিতে আমদানির সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকে সাপ্লায়ার্স ও বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় ৯০ দিনের মধ্যে অর্থ পরিশোধের চুক্তিতে এসব পণ্য আনা যাবে।
এটাকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি। সরবরাহ পরিস্থিতির যদি উন্নতি হয় তাহলে কিন্তু মূল্য কমবে না। সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে কোনো একটি বিশেষ পণ্যের ক্ষেত্রে সরবরাহে সমস্যা তৈরি করে কেউ অতি মুনাফা করার চেষ্টা করছে কি না। সে ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং প্রশাসনকে দৃষ্টি রাখতে হবে। কিন্তু সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতির ব্যবহার আরও নিবিড় করতে হবে। আরও যুক্তিসংগত এবং সময় উপযোগী করতে হবে।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বলছে, ২০২৩ সালে অনেক দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশের অবস্থা কেমন?
খাদ্যের দিক দিয়ে আমি বলব, বাংলাদেশ এক ধরনের স্বস্তির মধ্যেই আছে। সরকারি গুদামগুলোতে ১৭ লাখ টনের মতো খাদ্য মজুত আছে। বেসরকারি পর্যায়েও প্রচুর খাদ মজুত আছে। সরকার ও বেসরকারিভাবে প্রচুর চাল ও গম আমদানি হচ্ছে। আমনের ফলন ভালো হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সার্বিক বিবেচনায় আগামী দুই-এক বছর খাদ্য নিয়ে খুব একটা চিন্তার কারণ আমি দেখছি না।
আমি মনে করি, বাংলাদেশে খাদ্যের সরবরাহে সমস্যা হবে না। কোনো দেশে দুর্ভিক্ষ কিন্তু সরবরাহ পরিস্থিতি নাজুক হলেই হয় না। মানুষের যদি ক্রয়ক্ষমতা না থাকে তখন দুর্ভিক্ষ হয়। তাই সরবরাহ পরিস্থিতি ঠিক রাখতে হবে, পাশাপাশি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ঠিক রাখতে হবে। এর মধ্যে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সাশ্রয়ী মূল্যে সরকার এক কোটি পরিবারকে খাদ্য দিচ্ছে। এগুলো আরও বাড়াতে হবে। আমি আশা করি, বিশ্বাস করি, প্রার্থনা করি, বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবে না।
আপনি বলছিলেন, মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্তরা কষ্টে আছেন। তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় সরকারের কিছু করা উচিত কি না?
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) স্থানীয় বাজার থেকে পণ্য কিনে গরিব মানুষের কাছে কম দামে বিক্রি করছে স্থানীয় বাজারে। এর অর্থ সার্বিক সরবরাহ পরিস্থিতি কিন্তু পরিবর্তন হচ্ছে না। টিসিবি যদি দেশ থেকে পণ্য সংগ্রহ না করে দেশের বাইরে থেকে পণ্য সংগ্রহ করত তাহলে ভালো হতো। মূল্যস্ফীতিতে সেটার একটি ভালো প্রভাব পড়ত।
সার্বিকভাবে নিম্ন মধ্যবিত্তরা যাতে ভালো থাকেন, সেটা নিয়ে সরকারকে এখন নতুন করে ভাবতে হবে। তাদের আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সংকট তৈরি করেছে নয়ছয় সুদের হারের বাঁধন। এর ফলে যারা ফিক্সড ইনকাম গ্রুপের লোক, যারা পেনশনভোগী, যাদের সঞ্চয় থেকে আয় দিয়ে সংসার চালান আমানতের সুদের হার কমায় তারা কিন্তু আরও সংকটাপন্ন হচ্ছেন। তাদের জন্য সরকারের অবশ্যই কিছু ভাবতে হবে, করতে হবে।
পণ্য মূল্য সহনীয় রাখতে সরকারের তৎপরতাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
সরকার সচেতন। বিশেষ করে আমাদের প্রধানমন্ত্রী খুব সচেতন। তিনি সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন বলে আমাদের ধারণা। সরকারকে অনেক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। যাদের লবিং ক্ষমতা যত বেশি তাদের পক্ষে সিদ্ধান্তগুলো যায়। এখন বিত্তবানদের লবিং ক্ষমতা বেশি। সাধারণ মানুষের খুব কম। তবুও আশা করব রমজান মাস আসছে, দ্রব্যমূল্য যাতে সহনীয় থাকে, সন্তোষজনক থাকে, সাধারণ মানুষ যাতে কষ্ট না পান, এর জন্য সরবরাহ পরিস্থিতি যাতে ঠিক থাকে, মানুষের আয় যাতে ঠিক থাকে, বাড়ে। আর কেউ যাতে সিন্ডিকেট করে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়িয়ে না দেন, সেদিকে সরকারকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
আরও পড়ুন:বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে ডলার-টাকার বিনিময় হার এখন থেকে বাজারনির্ভরভাবে নির্ধারণের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এ সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ আগামী জুন মাসের মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের ঋণ কিস্তি পাবে বলেও জানান তিনি।
ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের দর-কষাকষি চলছিল। মূলত সে কারণে আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় করছিল না। এর মধ্যে গতকাল জানা যায়, বাংলাদেশ ডলারের বিনিময় আরও নমনীয় করতে রাজি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারে ঋণের দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করতে রাজি হয়েছে আইএমএফ।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত ৯ মাসে রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করা হয়নি, তবুও বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে এবং তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। এ অবস্থায় বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে ব্যাংকারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, বাজারভিত্তিক করায় হঠাৎ করে ডলারের রেট অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘদিন ধরে ডলারের রেট ১২২ টাকার আশপাশে রয়েছে এবং তা সেখানেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ডলারের রেট দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা-সরবরাহ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, বাইরের দেশের নির্দেশে নয়। বর্তমানে বাজারে ডলারের সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে।
তবে, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দুবাইভিত্তিক কিছু সিন্ডিকেট বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক থাকবে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ড. মো. হাবিবুর রহমান, কবির আহমেদ, উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ এবং নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
এদিকে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের জুনের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির জন্য নির্ধারিত ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার একত্রে ছাড় করবে।
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে সকল বিষয় সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে উভয়পক্ষ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা বিনিময় হারসহ অন্যান্য সংস্কার কাঠামো বিষয়ে সম্মত হয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং বিনিময় হার ব্যবস্থায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে অধিকতর পর্যালোচনার লক্ষ্যে চতুর্থ রিভিউ সম্পন্ন হওয়ার পর উভয় রিভিউয়ের জন্য নির্ধারিত কিস্তির অর্থ একত্রে ছাড় করা হবে বলে বিগত তৃতীয় রিভিউয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ রিভিউয়ের সময় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ব্যাংক-ফান্ড সভায় এবিষয়ে আলোচনা চলমান ছিল।
এ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, জাপান এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরও প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা জুন মাসের মধ্যে পাবে বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এ অর্থ পাওয়া গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে। ফলে মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয় যে, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে যেসকল সংস্কার কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব বিবেচনায় পরিকল্পিত এবং জাতীয় স্বার্থে গৃহীত। এ সকল সংস্কার কর্মসূচির ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যক্রম শুধুমাত্র কারিগরি সহায়তা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
বাণিজ্যযুদ্ধের তীব্রতা কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। পরস্পরের ওপর আরোপ করা পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য শুল্ক ৯০ দিনের জন্য ব্যাপক পরিসরে কমাতে একমত হয়েছে দুই দেশ। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা কমাতেই এই চুক্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর বিবিসির।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের আগে চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। পরে নতুন শুল্ক যখন ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন তখন তিনি বলেছিলেন তিন মাস সবার জন্য বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক হার প্রযোজ্য হবে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দুপক্ষের মধ্যে আলোচনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, গঠনমূলক ও দৃঢ় আলোচনার পর উভয় দেশ ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করতে রাজি হয়েছে। এর আওতায় দেশ দুটি পারস্পরিক শুল্ক ১১৫ শতাংশ কমাবে।
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত বর্তমান ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। অন্যদিকে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপ করা ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। উভয় দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আগামী ১৪ মে থেকে শুল্কের এই কাঁটছাট কার্যকর হবে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে স্কট বেসেন্ট বলেন, আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি যে, আমাদের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। দুই পক্ষের প্রতিনিধিদলই একমত হয়েছে যে তারা বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না। মার্কিন অর্থমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশই নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পেরেছে। আমাদের লক্ষ্য ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যের পথে অগ্রসর হওয়া এবং এটি তারই সূচনা।
প্রথম দফায় শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল এবং বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কাও জোরালো হয়েছিল। তবে এবার এই চুক্তির ঘোষণায় বিশ্ব শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
শুল্ক কমানোর চুক্তির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববাজারে চাঙাভাব দেখা দেখা গেছে। হংকংয়ের প্রধান সূচক ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ স্টক ফিউচারের উত্থান হয়েছে। এছাড়া বাড়তি শুল্ক স্থগিতের খবরে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দর বেড়ে ছয় মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউরোপীয় শেয়ারবাজারগুলোও উচ্চমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু করে এবং মার্কিন বাজারগুলোও ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, এই সময়সীমার মধ্যে চীনের উচিত হবে ফেন্টানিল নামক ভয়াবহ মাদকের অবৈধ রপ্তানি বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া। এ বিষয়ে চীনের সদিচ্ছা দেখে ওয়াশিংটন আশাবাদ প্রকাশ করেছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের প্রবেশ ঠেকাতে চীন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না এমন অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।
টাকা পাচার ঠেকাতে বিশেষ ইউনিট গঠন করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মূলত বাণিজ্যের আড়ালে যে বিদেশে টাকা পাচার হয়, তা প্রতিরোধ করতেই এমন উদ্যোগ। দুই প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার হয় বলে মনে করে এনবিআর। এগুলো হলো-আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং। এসব কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব লোকসান হয় বলে মনে করে এনবিআর।
সম্প্রতি এনবিআর মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল নামে ১০ বছরের একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। সেখানে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।
গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) উদ্ধৃতি দিয়ে এনবিআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে (মিথ্যা ঘোষণা) ৭০ শতাংশ অর্থ পাচার হয়ে থাকে।
টাকার পাচার রোধে এনবিআর তিনটি উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে। প্রথমত, আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা ও ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার ঠেকাতে দক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে বিশেষায়িত একটি ইউনিট গঠন করা যেতে পারে। এই ইউনিটের সদস্যরা প্রতারণা হয় বা হতে পারে- এমন বিল অব এন্ট্রিগুলো তদারকি ও তদন্ত করবেন। এই ইউনিট গঠন হলে একদিকে টাকা পাচার বন্ধের পাশাপাশি এনবিআরের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির সক্ষমতা বাড়বে।
সাধারণত আমদানিকালে তুলনামূলক বেশি দাম দেখিয়ে অর্থ দেশের বাইরে পাচার করা হয়। মূলত মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এভাবে টাকা পাচার করা হয়। দুই বছর আগে এনবিআর পাচার টাকা ফেরত আনার সুযোগ দিলেও কেউ তা নেননি।
এনবিআরের দ্বিতীয় সুপারিশ হলো, বিদেশি কূটনীতিক মিশনে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের জন্য এটাশে পদ সৃষ্টি করা। এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং ইস্যুটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। যেসব দেশ থেকে পণ্য আসে, সেখানে পণ্যের মূল্য কত, তা জানা সম্ভব হয় না। আবার নানাভাবে বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার হয়। এনবিআর বলছে, বিভিন্ন দূতাবাসে, বিশেষ করে বাংলাদেশে বড় বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোতে রাজস্ব খাতে কর্মকর্তাদের জন্য এটাশে পদ সৃষ্টির সুপারিশ করেছে এনবিআর। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, ভারতের মতো দেশ এমন পদ সৃষ্টি করেছে বলে এনবিআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এনবিআরের তৃতীয় সুপারিশ হলো, পাচার টাকা ফেরত আনতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া; যেসব দেশে পাচার হয়, সেখানে তদারকি ও পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধি; আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করা। এসব করা হলে পাচার টাকা চিহ্নিত করে ফেরত আনা সহজ হবে। এ ছাড়া টাকা পাচারে সহায়তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনার কথাও বলেছে এনবিআর।
এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, টাকা পাচারের কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায় সরকার। টাকা পাচার বন্ধ করতে পারলে অর্থনীতি আরও চাঙা হবে। এ ছাড়া সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের রাঘববোয়াল (ক্রীড়নক), আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এই পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি রিপোর্টস (জিএফআইআরএস) এবং কিছু নির্দিষ্ট পূর্বানুমানের ভিত্তিতে টাকা পাচারের হিসাব করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।
দেশ থেকে কারা, কীভাবে, কোথায় টাকা পাচার হয়েছে- সেই চিত্র তুলে ধরে শ্বেতপত্রে বলা হয়, টাকা পাচারের জন্য দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের ক্রীড়নক, আমলাদের মধ্যে এক ধরনের অনৈতিক চক্র গড়ে ওঠে। ঘুষ-দুর্নীতি, আর্থিক অপরাধ, মিথ্যা ঘোষণার আড়ালে বাণিজ্য, ব্যাংক থেকে চুরি করা টাকা, খেলাপি ঋণের অর্থ, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে দেখানো, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, কর ফাঁকি- এসব কর্মকাণ্ডের অর্থ পাচার করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ করের অভয়ারণ্য নামে পরিচিত ছোট ছোট দেশে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয়েছে। মূলত বাড়ি কিনে এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ করে টাকা পাচার করা হয়।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি এবং আটটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার চার দিনের চীন সফরের তৃতীয় দিন শুক্রবার দুই দেশের মধ্যে এ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও স্মারকগুলো স্বাক্ষর হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়, সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে রয়েছে দুই দেশের কালজয়ী সাহিত্য ও শিল্পকর্মের অনুবাদ ও সৃজন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও খবর আদান-প্রদান, গণমাধ্যম, ক্রীড়া এবং স্বাস্থ্য খাতে বিনিময় সহযোগিতা। এর পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় চীন সফরে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ বিষয়ে সহযোগিতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়েছে।
এগুলো হলো বিনিয়োগ আলোচনা শুরু করা, চীনের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু, মোংলা বন্দরের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ, একটি রোবট ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ এবং একটি কার্ডিয়াক সার্জারি গাড়ি অনুদান।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের উত্থাপিত বিষয়গুলো চীন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং।
স্থানীয় সময় শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট এ কথা জানান।
ড. ইউনূসের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্টের বৈঠককে অত্যন্ত সফল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ইউএনবিকে বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশকে দেওয়া চীনা ঋণের সুদের হার কমানো ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় দেশটির সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়টি ছিল।’
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আলোচনা অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ, গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ হয়েছে।’
প্রেস সচিব বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার এটি ছিল প্রথম দ্বিপক্ষীয় বিদেশ সফর। এখন পর্যন্ত এটি একটি বড় সফলতা।’
প্রেসিডেন্ট শির বক্তব্যের বরাতে শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও কারখানা স্থাপনে চীন তার দেশের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করবে।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট শি ফুজিয়ান প্রদেশের গভর্নর থাকাকালীন দুইবার বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন। সে কথাও উল্লেখ করেছেন চীনের রাষ্ট্রপ্রধান।
প্রেসিডেন্ট শির উদ্বৃতি দিয়ে শফিকুল আলম বলেন, তিনি বাংলাদেশি আম ও কাঁঠাল খেয়েছেন। এগুলো সুস্বাদু। আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশ আগামী মৌসুমে এ দুটি ফল চীনে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করবে।
চীনা প্রেসিডেন্ট ও প্রধান উপদেষ্টা চীনের পিপলস গ্রেট হলে করা বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
তারা দুই দেশের সম্পর্ককে জোরদার করা ও ঢাকা-বেইজিংয়ের পারস্পরিক ও কৌশলগত স্বার্থকে এক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার উপায় নিয়েও আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের বাজারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সি৩২ ইলেকট্রিক বাইক এনেছে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড রিভো। অত্যাধুনিক ৭২ ভোল্ট ২৬ অ্যাম্পিয়ার সম্পূর্ণ গ্রাফিন ব্যাটারি পরিচালিত এই ইলেকট্রিক বাইকের উদ্বোধন ঘোষণা করেন রিভো বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ভেন নি।
ফিচার
সি৩২-এর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য শক্তিশালী ১৮০০ ওয়াট মোটর, যা ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে। বাইকটির ইকো মোডে গতি ৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং একবার চার্জে এটি ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে।
অন্যদিকে স্পোর্ট মোডে সর্বোচ্চ গতি ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং এক চার্জে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।
সি৩২ ইলেকট্রিক বাইকে উন্নত ৭২ ভোল্ট ২৬ অ্যাম্পিয়ার গ্রাফিন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে, যা পাঁচ শতাধিক চার্জিং সাইকেল সাপোর্ট করে এবং প্রতিটি পূর্ণ চার্জে মাত্র ২.০৮ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে।
ব্যাটারিটি সম্পূর্ণ চার্জ হতে ১০.৬ ঘণ্টা সময় নেয়, যা রাতে চার্জ দিয়ে দিনব্যাপী ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
নিরাপত্তা এবং আরামকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে রিভো সি৩২। এতে রয়েছে সামনে ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনে ড্রাম ব্রেক সিস্টেম, যা সর্বোচ্চ স্টপিং পাওয়ার নিশ্চিত করে।
ফ্রন্ট ও রিয়ার হাইড্রোলিক সাসপেনশন থাকার ফলে রাইডাররা মসৃণ ও আরামদায়ক রাইড উপভোগ করতে পারেন। এমনকি অপ্রশস্ত বা অসমান রাস্তাতেও।
রাতে নিরাপদ যাত্রার জন্য সি৩২-এ রয়েছে পূর্ণ এলইডি লাইটিং সিস্টেম, যার মধ্যে এলইডি হেডলাইট, টেইললাইট এবং টার্ন সিগন্যাল অন্তর্ভুক্ত।
রিভো সি৩২ শুধু শক্তিশালী পারফরম্যান্সই দেয় না, এটি ডিজাইনেও বেশ কার্যকর। ১৪০ কেজি ওজনের মজবুত অথচ হালকা ফ্রেম এবং সামনে ও পিছনে ৯০/৮০-১২'' ভ্যাকুয়াম টায়ার যুক্ত বাইকটি দুর্দান্ত গ্রিপ এবং স্থিতিশীলতা প্রদান করে।
২০৫ এমএম পর্যন্ত গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স থাকায় এটি যেকোনো ধরনের রাস্তার জন্য উপযোগী। সিট বাকেটে ২৪ লিটার স্টোরেজ স্পেস রয়েছে, যা ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বহনের জন্য আদর্শ।
ব্যবহারকারীবান্ধব ডিজাইন এবং আরামের সমন্বয়ে এটি শহরের যাতায়াতকারী এবং দূরপাল্লার রাইডারদের জন্য একটি পারফেক্ট পছন্দ।
এখন থেকে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯০০ টাকা মূল্যে বাংলাদেশের সব শোরুমে পাওয়া যাচ্ছে।
সি৩২ যাতায়াতকে সহজ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব করতে উন্নত প্রযুক্তি, শক্তিশালী পারফরম্যান্স নিশ্চিত করছে, যা প্রতিদিনের যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবেশ সচেতন রাইডারদের জন্য আদর্শ হতে পারে।
আরও পড়ুন:আলু রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এ স্থলবন্দর দিয়ে নতুন করে আরও ১০৫ টন আলু গিয়েছে নেপালে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৫৫৪ টন আলু নেপালে রপ্তানি করা হলো।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কোয়ারিনটিন ইন্সপেক্টর উজ্জল হোসেন জানান, বুধবার বিকেলে স্থলবন্দর দিয়ে পাঁচটি ট্রাকে ১০৫ টন আলু নেপালে গেছে।
তিনি জানান, আলুগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এগুলো রপ্তানি করছে থিংকস টু সাপ্লাই ও ফাস্ট ডেলিভারি নামে দুটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে থিংকস টু সাপ্লাই ৪২ ও ফাস্ট ডেলিভারি ৬৩ টন রপ্তানি করে। এ ছাড়াও বন্দরটি দিয়ে হুসেন এন্টারপ্রাইজ, ক্রসেস এগ্রো, সুফলা মাল্টি প্রোডাক্টস লিমিটেড এবং লোয়েড বন্ড লজিস্টিক নামের কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানও নেপালে আলু রপ্তানি করছে।
উজ্জ্বল হোসেন বলেন, রপ্তানিকারকরা প্রয়োজনীয় নথিসহ অনলাইনে আবেদন করলে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের ল্যাবে পরীক্ষা করার পর ফাইটোসেনেটারি সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। রপ্তানিকৃত আলুগুলো স্টারিজ এবং লেডিও রোজেটা জাতের।
মন্তব্য