অর্থনৈতিক সংকটের নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়েছে বলে মনে করেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। তিনি এ-ও মনে করেন যে, বিনিয়োগকারীরা সতর্ক হয়ে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে লেনদেন কমে গেছে।
শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস দেয়ার কারণে লেনদেন কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে যে আলোচনা, সে বিষয়ে তিনি বলেছেন, বাধ্য হয়েই এটি দিতে হয়েছে। এটি তুলে নিলে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি বাড়বে।
সোমবার রাজধানীতে অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারের বিষয় ছিল ‘প্রসপেক্টাস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অফ বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট।’
২০২০ সালের মে মাসে শিবলী রুবাইয়াতের নেতৃত্বে বিএসইস পুনর্গঠিত হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর পুঁজিবাজার ছিল চাঙা। তবে গত বছরের শেষ দিকে সংশোধন শুরু হওয়ার পর দেশীয় ও বৈশ্বিক নানা সংকটের প্রভাবে টানা দরপতন হতে থাকে।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে যেসব শঙ্কার কথা বলাবলি হচ্ছে, তার প্রভাবও পুঁজিবাজারে স্পষ্ট। টানা দরপতনের মধ্যে গত ৩১ জুলাই থেকে দ্বিতীয় দফা ফ্লোর প্রাইস দিয়ে শেয়ারের দাম কমা ঠেকিয়েছে বিএসইসি, তবে ৩৯০টি কোম্পানির মধ্যে তিন শতাধিক কোম্পানি এখন ফ্লোরে পড়ে আছে। লাখ লাখ শেয়ারের কোনো ক্রেতা নেই। এই অবস্থায় লেনদেন নেমেছে তলানিতে। চাঙা বাজারে আধা ঘণ্টায় যত টাকা লেনদেন হতো, এখন সাড়ে চার ঘণ্টাতেও হয় না ততটা। শেয়ার বিক্রি করতে না পেরে হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী।
অর্থনীতি নিয় যে উদ্বেগের কথা বলাবলি হচ্ছে তা নিয়ে কথা বলেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘নেগেটিভ ইম্প্যাক্টের কারণে মানুষ সেফটি মেজারস নেয়, যার কারণে বিনিয়োগ কমে গেছে।’
তবে সূচকের দিক দিয়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ভালো রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন চাপের কারণে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ভলাটিলিটির মধ্যে দিয়ে গেছে ঠিক, কিন্তু ভলাটিলিটি ইনডেক্স দেখলে বুঝতে পারবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় আমরা অনেক ভালো ছিলাম।’
ফ্লোর প্রাইস ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরে স্বার্থ রক্ষায়
শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেয়ার বিষয়ে শিবলী রুবাইয়াত বলেন, পুঁজিবাজারের ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর স্টক এক্সচেঞ্জে ৯০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বাকি ১০ শতাংশ রিটেইল। কিন্তু আমাদের দেশে ঠিক তার উল্টো। আমাদের বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক ইনভেস্টর থাকলে ফ্লোর প্রাইজ নিয়ে আমরা চিন্তাও করব না।
‘আমি আইওএসকোর (বিশ্বের বিভিন্ন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মোর্চা) একজন কর্মকর্তা, বিপাকে পড়ে আমাকে ফ্লোর প্রাইজের কথা ভাবতে হয়েছে। শুধুমাত্র রিটেইল ইনভেস্টরদের কথা ভেবে কমিশনকে ফ্লোর প্রাইজের কথা চিন্তা করতে হয়েছে। অনেক মানুষের মার্জিন থাকে। ফোর্স সেল হয়ে মানুষের সর্বনাশ হয়ে যেত।’
দায়িত্ব নেয়ার পর পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বর্তমান কমিশন কী কী করেছে, তারও বর্ণনা দেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। ইটিএফ, বন্ড, কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মতো প্রোডাক্ট পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হয়তো এখন আমরা সমালোচিত হচ্ছি, কিন্তু আমরা যে কাজ করেছি তার সুফল ভবিষ্যতে পাবেন।’
বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্বও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘বিনিয়োগারী এবং বাজার উভয়ের জন্য এটা জরুরি। সেজন্য স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে বিনিয়োগ শিক্ষা কীভাবে যুক্ত করা যায় সে ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’
পুঁজিবাজারের ধীরগতি নিয়ে অন্যদের হতাশা
সেমিনারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ- ডিএসই চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকার প্রধান ৬টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পৃথিবীর আর কোনো দেশের সরকার প্রধান পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এত বেশি গুরুত্ব দেন কিনা আমার জানা নেই। বিএসইসিও ভালো কাজ করছে। শুধুমাত্র ইক্যুইটি মার্কেটে আটকে নেই। আমাদের বাজারে বন্ড, ডেট ইত্যাদি আসছে। তবে পলিসি সাপোর্ট এখনও অপর্যাপ্ত রয়েছে। এ বিষয়ে আরও মনোযোগী হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভালো কোম্পানিগুলো ৯ শতাংশ বা এর কমে লোন পেয়ে যায় ব্যাংক থেকে। পুঁজিবাজারে আসলে তাকে বিভিন্ন ধরনের কমপ্লায়েন্স মানার পাশাপাশি ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ও অন্যান্য খরচ মিলে ১২ শতাংশ হয়ে যায়, তাহলে ৮ শতাংশ সুদে ঋণ না নিয়ে ১২ শতাংশ নিয়ে পুঁজিবাজারে আসবেন?’
তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করহারের পার্থক্যকে সামান্য উল্লেখ করে এটি বাড়ানোরও তাগিদ দেন তিনি। বলেন, ‘এটা বাড়ালে আরও অনেকেই বাজারে আসতে চাইবে।’
চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ বা সিএসই চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘ভবিষ্যতে যে বিনিয়োগের প্রয়োজন, তার সিংহভাগই আসতে হবে পুঁজিবাজার থেকে। স্বাধীনতার পরে প্রাইভেট সেক্টরে যে বিনিয়োগ হয়েছে, তার সবই ব্যাংক থেকে হয়েছে। অথচ এটা হওয়া উচিত ছিল পুঁজিবাজার থেকে।’
তিনি বলেন, ‘কোম্পানিগুলোকে ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ হারে সুদে ঋণ নিয়েও পরিশোধ করতে হয়েছে। অনেকেই হয়তো পারেনি। যার কারণে এনপিএলের (খেলাপি ঋণ) পরিমাণ বেড়েছে এত হারে।
‘লং টার্মে আগে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশে ঋণ পাওয়া যেত, এখন সেটা দশের নিচে চলে এসেছে। অন্যান্য ফ্যাসিলিটিজের ওপর প্রেসার আছে। আমাদের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পুঁজিবাজারের মাধ্যমেই করতে হবে।’
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিগুলোর মোর্চা বিএপিএলসির সাবেক সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, ‘পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ করবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা, ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো। তারা বিনিয়োগ করবে কীভাবে? তাদের কাছে তো টাকা নাই। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ব্যাংক সময় বেঁধে দেয়। যে মুনাফা হয় তা প্রফিশন বিল্ড আপ করতেই চলে যায়। তাহলে পুঁজিবাজারে ইনভেস্ট করবে কীভবে?’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় সব মার্কেটই তিন বছর ধরে ওঠানামা করছে, আমাদের মার্কেটেও তাই হচ্ছে। ধারাবাহিক উত্থান বা পতন প্রত্যাশা করা যায় না।’
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন- বিএমবিএর সহসভাপতি মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিভিন্ন ক্রাইসিস মুহূর্তে দেখি, বা মিডিয়াতে আসে, বিভিন্ন ধরনের স্কিম তৈরি করা হয় যে, কারা কত শেয়ার কিনবে বা বিনিয়োগ করবে। এই ডিমান্ড ড্রিভেন পলিসি খুবই শর্ট লিড। এটা অন্যান্য জায়গায় কাজ করে না।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে মেরিট বেসড বা ভ্যালু বেসড ইনভেস্টমেন্ট হয় না। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের মানসিকতা থাকে না। স্পেকিউলেটিভ ইনভেস্টমেন্ট হয়। কারণ যখন কেউ দেখে রাতারাতি কোনো শেয়ারের ভ্যালু বেড়ে যাচ্ছে। তখন এই স্পেকিউলেশন প্রবৃদ্ধি জেগে ওঠে। সবাই প্রাইস গেই করতে চায়, লং টার্মে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয় না।’
ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সাংবাদিক মোফাজ্জল হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।
আরও পড়ুন:শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি-এর রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির ৭২তম সভা ১৫ অক্টোবর ২০২৫ইং তারিখে ব্যাংকের কর্পোরেট প্রধান কার্যালয়ের পর্ষদ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের পরিচালক ও রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো: তৌহীদুর রহমান। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে ব্যাংকের পরিচালক ও কমিটির সদস্য জনাব মহিউদ্দিন আহমেদ, জনাব খন্দকার শাকিব আহমেদ এবং জনাব মোহাম্মদ ইউনুছ উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিশেষ আমন্ত্রণে ব্যাংকের পরিচালক জনাব মো: সানাউল্লাহ সাহিদ উপস্থিত ছিলেন। তাছাড়া সভায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ এবং কোম্পানি সচিব জনাব মো: আবুল বাশার উপস্থিত ছিলেন।
শরীয়াহ্ ভিত্তিক ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি. আমদানি, রপ্তানী ও রেমিটেন্স বৃদ্ধিকল্পে গ্রাহকদেরকে সকল প্রকার সহযোগিতা করছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ব্যাংকের ১৭৪ টি শাখা ও উপ-শাখায় এ সেবা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছে।
দৈনন্দিন কেনাকাটায় ডিজিটাল পেমেন্ট বাড়াতে গ্রাহক সচেতনতা ও অভ্যস্ততা তৈরিতে প্রয়োজন ডিজিটাল লেনদেনের ইকোসিস্টেম শক্তিশালী করা, ব্যবসায়িক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়ানো, ডিজিটাল লেনদেনে বৈচিত্র্য আনা। পাশাপাশি, ডিজিটাল লিটারেসি ও ইন্টারনেট অবকাঠামো উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি- এই সুপারিশ ও পরামর্শগুলো উঠে এসেছে সম্প্রতি মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ আয়োজিত “বন্দরনগরীতে ডিজিটাল পেমেন্ট” শীর্ষক এক আলোচনা সভায়।
দ্য পেনিনসুলা চিটাগং-এ অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময়ে অংশ নেন বারকোড ক্যাফে, চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল, র্যাডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ, এপিক হেলথকেয়ার, উৎসব সুপারমার্কেট, চিটাগং ক্লাব লিমিটেড, সাজিনাজ হসপিটাল লিমিটেড, অনলাইন ট্র্যাভেল এজেন্সি এমি, চট্টগ্রাম আই ইনফার্মারি অ্যান্ড ট্রেইনিং কমপ্লেক্স, শৈল্পিক, দ্য পেনিনসুলা চিটাগং, শপিং ব্যাগসহ আরও বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা ও প্রতিনিধিরা। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিকাশ-এর চিফ কমার্শিয়াল অফিসার আলী আহম্মেদ।
আলোচনায় অংশ নেয়া চট্টগ্রামভিত্তিক এই উদ্যোক্তারা বলেন বিশ্বের অনেক দেশেই সারাদিন ক্যাশ টাকা ছাড়া চলাফেরা-কেনাকাটা করা যায়। দেশেও মানুষ দিন দিন ডিজিটাল পেমেন্টে আগ্রহী হয়ে উঠছে, তবে গ্রাহকদের আরও বেশি করে ডিজিটাল পেমেন্টে উৎসাহিত করতে প্রয়োজন সচেতনতা বাড়ানো।
প্রয়োজনে অঞ্চলভিত্তিক স্থানীয় ভাষায় ক্যাম্পেইন চালিয়ে গ্রাহকদের ডিজিটাল পেমেন্টে আগ্রহী করে তোলা সম্ভব বলে তারা মনে করেন। আবার, বয়স্ক এবং প্রযুক্তি ভীতি আছে এমন গ্রাহকদের ক্ষেত্রে হাতে-কলমে ডিজিটাল লেনদেনের প্রক্রিয়া শেখানো যেতে পারে বলেও তারা মতামত দেন।
অনুষ্ঠানে কয়েকটি সুপারস্টোরের উদ্যোক্তারা বলেন তাদের আউটলেটে যে গ্রাহকরা কেনাকাটা করেন তাদের অন্তত ৭০ শতাংশই মূল্য পরিশোধ করেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে, ব্যাংক কার্ড বা বিকাশ-এর মতো এমএফএস প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে এই হার ৯০ শতাংশের উপর উঠানো সম্ভব বলে মনে করে তারা। ডিজিটাল পেমেন্টে গ্রাহকদের উদ্বুদ্ধ করতে গ্রাহকদের বিশেষ ছাড় বা প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তারা।
পাশাপাশি, বক্তারা বলেন অনেক গ্রাহক বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত যারা স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট না থাকায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমে ঢুকতে পারছেন না। তাই যেসকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল পেমেন্টে গ্রহণ করছেন তারা যদি কাউন্টারে ওয়াই-ফাই ইন্টারনেটের ব্যবস্থা রাখেন এবং ইউএসএসডি কোড ব্যবহার করে পেমেন্ট করার প্রক্রিয়া দেখিয়ে দেন, তাহলে ডিজিটাল পেমেন্ট আরও বাড়ানো সম্ভব।
সভায় উঠে আসা সুপারিশ ও পরামর্শকে স্বাগত জানিয়ে, বিকাশ-এর চিফ কমার্শিয়াল অফিসার আলী আহম্মেদ বলেন, “ডিজিটাল লেনদেনে গ্রাহকদের একটি বড় অংশ টাকা পাঠানো ও উঠানোর মতো সেবায় অভ্যস্ত হলেও দেশে প্রতিদিন অন্তত এক কোটি মানুষ নানা ধরনের ডিজিটাল পেমেন্ট করেন। এই পেমেন্টকে কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব, তবে তার জন্য দরকার নীতি সহায়তা এবং বিভিন্ন প্রযুক্তি, ব্যবসায়িক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে সমন্বয় ও পার্টনারশিপ।”
ডিজিটাল লেনদেনের পরিসর যতো বাড়বে, গ্রাহক পর্যায়ে খরচও ততো কমে আসবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি যাদের প্রযুক্তি ব্যবহারে ভীতি আছে তাদের কিভাবে ডিজিটাল লেনদেনে উদ্বুদ্ধ করা যায় তা নিয়েও আমাদের কাজ করতে হবে।”
উল্লেখ্য, বিকাশ-এর বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ৮ কোটি ২০ লাখ এবং মার্চেন্ট সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ, যা দেশের অর্থনীতির ডিজিটাল রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্যাশলেস অর্থনীতির প্রসারে জোর দিয়ে আসছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। তবে দেশে এখনো মোট লেনদেনের প্রায় ৭২ শতাংশ ক্যাশভিত্তিক, আর ব্যাংক নোট ছাপানো ও ক্যাশ ব্যবস্থাপনায় বছরে সরকারের খরচ হয় ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারকরা মনে করেন এই খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব সমাজের সর্বস্তরে ডিজিটাল লেনদেন ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে।
সেই লক্ষ্যে সরকারও ডিজিটাল ব্যাংক, প্রাইভেট ক্রেডিট ব্যুরো, ব্যাংক ও এফএমএস প্রতিষ্ঠানের মাঝে আন্তঃলেনদেন সেবা, কম দামে স্মার্টফোন উৎপাদনে সহায়তা দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় নীতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এদিকে, লেনদেনের খরচ কমাতে এবং লেনদেন আধুনিক করতে ইতোমধ্যে ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে বাংলা কিউআর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।
প্রাইম ব্যাংক পিএলসি.-এর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিভিশনের (এফএডি) প্রধান হিসেবে মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন-কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন ২০০৫ সাল থেকে প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত আছেন। দীর্ঘ এই সময়ে তিনি ব্যাংকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে আইসিসিডি বিভাগের প্রধান, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান এবং ফ্যাসিলিটি ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি প্রাইম ব্যাংকের সাবসিডি প্রতিষ্ঠান প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ-এর ভারপ্রাপ্ত সিইও সিহেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ট্রাস্ট ব্যাংক, পিকেএসএফ ও প্রাইম ব্যাংকসহ প্রায় ২৫ বছরের বহুমাত্রিক পেশাগত অভিজ্ঞতা রয়েছে মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের।
তিনি একজন ফেলো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (এফসিএ)। প্রাইম ব্যাংক তার নতুন দায়িত্ব গ্রহণে আন্তরিক অভিনন্দন জানায় এবং ব্যাংকের আর্থিক উৎকর্ষতা ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা এগিয়ে নিতে তার সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করছে।
বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সেপা) হলে দুদেশের বিদ্যমান ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ বাড়বে বলে মনে করছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির পার্ক ইয়ং সিক।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেল এক সেমিনারে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন রাষ্ট্রদূত।
‘কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের সিএসআর কার্যক্রম এবং একসঙ্গে ভবিষ্যৎ’- শীর্ষক এ সেমিনারে আয়োজন করে ঢাকার কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের দূতাবাস।
কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত বলেন, একটি দ্বি-পাক্ষিক সেপা কোরিয়ার বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করতে প্রেরণা জোগাতে পারে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক পণ্যের ক্ষেত্রে। সেপা চুক্তি হলে দুই দেশের বিদ্যমান ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ বাড়বে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, উভয় দেশ কীভাবে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে আরও এগিয়ে নিতে পারে, সে বিষয়ে আমি বলতে চাই দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি, কৌশলগত অবস্থান এবং প্রচুর শ্রমশক্তির কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আশাব্যঞ্জক গন্তব্যস্থল হিসেবে অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য সময়মত ভিসা প্রদান এবং নবায়ন, নিরবচ্ছিন্ন শুল্ক ছাড়, কাঁচামাল এবং মধ্যবর্তী পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক হ্রাস, প্রকল্প সমাপ্তির পরে ডলারে অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের সমস্যা সমাধান এবং নিজ দেশে মুনাফা পাঠানোর সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করতে হবে।
কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতি বছর ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সীমিত পরিসরে রপ্তানির কারণে এর পরিমাণ সন্তোষজনক নয়। পাদুকা, আইসিটি পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, হালকা শিল্প পণ্য এবং ওষুধের মতো পণ্য কোরিয়ায় আরও রপ্তানি করা যেতে পারে।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক কল্যাণ এবং দায়িত্বশীল বিনিয়োগের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে সিএসআরের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে অবদান রাখার জন্য সহযোগিতামূলক সিএসআর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার জন্য কোরিয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
সেমিনারে বাংলাদেশে কর্মরত শীর্ষস্থানীয় কোরিয়ান কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা সিএসআর কার্যক্রম উপস্থাপনা করেন। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে এলজি ইলেকট্রনিক্স, স্যামসাং আরএন্ডডি ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ, উরি ব্যাংক, দোহওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইয়ংওয়ান। তারা শিক্ষা, কমিউনিটি স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং দক্ষতা উন্নয়নে তাদের বিভিন্ন সিএসআর উদ্যোগ তুলে ধরেন।
সেমিনারে প্রধান কোরিয়ান এনজিও সেভ দ্য চিলড্রেন কোরিয়া, অক্সফাম কোরিয়া, হ্যাবিট্যাট কোরিয়া, গুড নেইবারস, এডিআরএ কোরিয়া এবং গ্লোবাল কেয়ারের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। প্রতিনিধিরা বাংলাদেশজুড়ে স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবিকা উন্নত করতে এবং সামাজিক কল্যাণ বৃদ্ধির জন্য তাদের চলমান প্রকল্পগুলো তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে সিএসআর সেন্টারের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবহান ‘গঠনমূলক ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরিতে সিএসআরের গুরুত্ব’ বিষয়ে বক্তৃতা দেন, যেখানে তিনি দুই দেশের মধ্যে দায়িত্বশীল করপোরেট সম্পৃক্ততা কীভাবে আস্থা, সহযোগিতা এবং দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করে তা তুলে ধরেন।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন কোরিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (কেবিসিসিআই) সভাপতি শাহাব উদ্দিন খান ও কোইকার কান্ট্রি ডিরেক্টর জিহুন কিম।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিবিএ) কার্যনির্বাহী কমিটির দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এটি আগামী বছরের ১০ অথবা ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে পারে।
গত শনিবার উত্তরার বিজিবিএ কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনের এক মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় উপস্থিত সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে কমিশন জানায়, ভোটগ্রহণ ঢাকা বোট ক্লাব বা উত্তরা ক্লাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
সভায় নির্বাচনি তথ্য, আচরণবিধি ও ভোট আয়োজনের প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। নির্বাচনের তফশিল দু-একদিনের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্বাচনি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের সদস্য আনিসুর রহমান ও সদরুজ্জামান রাসেল, আপিল বোর্ডের সদস্য আনোয়ারুল বশির খান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বিজিবিএ’র বর্তমান কমিটির প্রেসিডেন্ট মোফাজ্জল হোসেন পাভেল, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ পিন্টুসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, আগামী ২০২৬-২৮ মেয়াদের বিজিবিএ কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচনের জন্য গত ১২ অক্টোবর মো. নজরুল ইসলাম, মো. সদরুজ্জামান রাসেল ও মো. আনিসুর রহমানের সমন্বয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচনী বোর্ড এবং তিন সদস্যবিশিষ্ট আপিল বোর্ড গঠন করা হয়।
বাংলাদেশের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ খাতে গবেষণা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে সহযোগিতার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট (বিপিআই) পাঁচটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে।
গত শনিবার বিপিআই সদর দপ্তরে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। খাতটির উন্নয়নে এ চুক্তি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বহুমাত্রিক সহযোগিতার ভিত্তিতে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান। বিপিআইর মহাপরিচালক খেনচান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান, বুয়েটের পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং (পিএমআরই) বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এবং পেট্রোবাংলার সচিব ও সিনিয়র জি এম মো. আমজাদ হোসেন তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্বাক্ষর করেন।
স্বাক্ষরকারীরা আশা প্রকাশ করেন, এই যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ খাতে গবেষণা ও প্রশিক্ষণের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবেষণা সংস্থা ও শিল্প সংস্থার এই মেলবন্ধন দেশের হাই-ড্রোকার্বন ও খনিজসম্পদের আবিষ্কার, উত্তোলন এবং দক্ষ জনবল তৈরিতে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
উল্লেখ্য, বিপিআই জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের অধীন একটি জাতীয় প্রশিক্ষণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
মন্তব্য