× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

অর্থ-বাণিজ্য
Taxes will not increase if the economy is not good
google_news print-icon

অর্থনীতি ভালো না থাকলে কর বাড়বে না

অর্থনীতি-ভালো-না-থাকলে-কর-বাড়বে-না
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। ছবি: নিউজবাংলা
দিন দিন কর দেয়া সহজ করা হচ্ছে। নিয়ম পরিবর্তন হচ্ছে। সারা বিশ্বে যেটা হয়ে থাকে। সারা বছর সবাই কর দেয়। আমাদের দেশেও কিন্তু তা-ই হয়। যে যখন বেতন পাচ্ছে তখন কর কেটে নেয়া হচ্ছে। ব্যাংক থেকে বেতন কেটে নেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশে এখন এ রকম হচ্ছে। বছর শেষে সেগুলো সব একত্র করা হয়। আমি কত দিয়েছি সেটার প্রমাণ দিতে হবে। কতটা দিতে হবে সেটার কাগজ দিব। এসব কারণে একটি রিটার্ন দেয়ার প্রভিশনটা আছে।

প্রত্যাশা অনুযায়ী রিটার্ন জমা না পড়ায় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমার সময় এক মাস বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। এখন ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করদাতারা তাদের রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। যৌক্তিক কারণ ছাড়া এই সময় বাড়ানো যুক্তিযুক্ত হয়নি বলে মনে করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অর্থনীতি ভালো থাকলে কর বাড়ে। আর অর্থনীতি ভালো না থাকলে কর আহরণ বাড়বে না।’

গত বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন সাবেক সচিব মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিউজবাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি

এবারও আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার সময় এক মাস বাড়ানো হয়েছে। প্রায় প্রতিবারই এই সময় বাড়ানো হয়। এই সময় বাড়ানোকে আপনি কতটা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন।

দিন দিন কর দেয়া সহজ করা হচ্ছে। নিয়ম পরিবর্তন হচ্ছে। সারা বিশ্বে যেটা হয়ে থাকে। সারা বছর সবাই কর দেয়। আমাদের দেশেও কিন্তু তা-ই হয়। যে যখন বেতন পাচ্ছে তখন কর কেটে নেয়া হচ্ছে। ব্যাংক থেকে বেতন কেটে নেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশে এখন এ রকম হচ্ছে। বছর শেষে সেগুলো সব একত্র করা হয়। আমি কত দিয়েছি সেটার প্রমাণ দিতে হবে। কতটা দিতে হবে সেটার কাগজ দিব। এসব কারণে একটি রিটার্ন দেয়ার প্রভিশনটা আছে।

অতীতে নিয়ম ছিল হিসাব বছর শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে এই রিটার্ন দিতে হবে। কাগজপত্র জোগাড় করতে যতটা সময় লাগে। এখন যে করটা দেয়া হচ্ছে সেটা গত বছর জুন মাস পর্যন্ত। সময় যতই বাড়ুক এটা কিন্তু জুন মাস পর্যন্তই থাকবে। এই বাড়তি সময়টা সবসময় তিন মাস ছিল। ব্রিটিশ আমল থেকেই তাই। সরকার ২০১০ বা ২০১১ সালের দিকে এটাকে পরিবর্তন করে এটাকে নভেম্বরে নিয়ে গেলেন। অর্থাৎ পাঁচ মাস। কেউ কেউ পারে না এই জন্য। আমি না পারার বিষয়টিকে এভাবে দেখি। এখন যেখানে অনলাইন করা হচ্ছে, ফরম যেখানে সহজ করা হচ্ছে। আমার হিসাব যেহেতু গত জুন মাসের হিসাব। আমি যখন এত সহজ করছি, সেখানে কেন আমাকে পাঁচ মাস সময় দিতে হবে। এর থেকে আসলে বের হয়ে আসা উচিত।

একটি কারণ থাকতে পারে। একটি পরিপত্র জারি করে এনবিআর সেটার জন্য মনে হয় দেরি করতে হয়। সেখানে লেখা থাকে ব্যাখ্যাটা কীভাবে দিচ্ছেন। সেটা আর কিছু না। ব্যাখ্যাটা জারি করতে যদি বিলম্ব হয়। সম্ভবত এটার বিলম্ব হয় বলে তারা পিছিয়ে। তাদের কাজের একটি গতির জন্য পিছিয়ে নভেম্বরে নিয়ে গেছে। কিন্তু এখানে একটি সমন্বয়ের দরকার ছিল। এই ব্যাখ্যাগুলো জুলাই বা আগস্ট মাসের মধ্যে দিতে হবে। তাহলে অর্থবিলে কী লিখেছি। সেটা না করে আমরা মুসাবেদি করতে থাকব। এখন থেকে সবাই আবার বাস্তবায়ন করবে। ব্যাখ্যা কিন্তু বারবার পরিবর্তন করা উচিত না। আর যেহেতু ব্যবসা বারবার পরিবর্তন করা হচ্ছে।

গত বছর করোনা মহামারির কারণে সময় বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এবার তেমনটি নেই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলেছে, ব্যবসায়ীদের দাবির কারণে সময় বাড়ানো হয়েছে। আপনি বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?

এ বছর এমন কিছু ঘটে নাই যে, আরও এক মাস বাড়িয়ে দিতে হবে। বারবার সময় বাড়ানোয় কিন্তু এটা দেখা যাচ্ছে যে, সরকারের ম্যাক্রো ইকোনমিক ম্যানেজমেন্টে একটি জটিলতা তৈরি হচ্ছে। যে টাকা আমি যত তাড়াতাড়ি পেতাম প্রত্যক্ষ করে। প্রত্যক্ষ কর হচ্ছে সরকারের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস। এটা সরাসরি পায় সরকার। এই আয়টা দিতে যদি বিলম্ব হয়, আমি যেই টাকা সেপ্টেম্বরে পেতাম, সেই টাকা নভেম্বরে আসে বা ডিসেম্বর মাসে আসে। তাতে কী হলো অর্থবছরের ছয় মাস আমি পিছিয়ে গেলাম। তাহলে এই ছয় মাস আমার চলবে কী করে।

কথা ছিল সেপ্টেম্বরে আমি যেই টাকা পাব সেই টাকা দিয়ে আমি ব্যয় করব। কিন্তু আমার টাকা পেতে যদি বিলম্ব হয় তাহলে ব্যাংকে আমার ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। জিনিসটা ওই ভাবে দেখতে হবে। আমি তো এখন সমস্যা খুব বেশি দেখি না। কারণ আমরা তো সব বিষয় সহজ করছি। সারা বছর আপনি কর দিচ্ছেন। সামনে এমন হবে যদি সব অনলাইন হয়ে যায়। এরপর আমাদের রিটার্ন দিতে সময় লাগার কথা না। ব্যাংক থেকে যেটা কেটে নিচ্ছে সেটা নিয়ে যাব। আমার সিস্টেম বলে দেবে ৫৪৫ টাকা ওনার জমা হয়েছে। এখন যে কাগজ টাকা জমা দিতে হয় তখন সেটা থাকবে না। যেখানে আমরা সহজীকরণের দিকে যাচ্ছি। সময় বাড়ানোটা যুক্তিযুক্ত না বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। অর্থনীতির আকার বাড়ছে। কিন্তু ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত সবচেয়ে কম; ৯ শতাংশ। এই অনুপাত নেপালের চেয়েও কম। সরকারও ট্যাক্স-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর কথা বলছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু বাড়ছে না কেনো?

ট্যাক্স (কর)-জিডিপি রেশিও বা অনুপাত দেশের অর্থনীতি বোঝার একটি বড় মাধ্যম। কর-জিডিপি রেশিও দেখে বোঝা যায়, একটি দেশের জিডিপি গ্রোথ (প্রবৃদ্ধি) ভালো হয়েছে কি না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই রেশিও বিভিন্ন রকম। এই রেশিও সাধারণত ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ হতে পারে। অর্থাৎ ১০০ টাকা আয় হলে ১৫ থেকে ১৬ টাকা কর হবে। ১৬-১৭ টাকা হলে বলা যায় অর্থনীতিতে সব লোক কর দিচ্ছে। এডিপি (সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) বাস্তবায়নের সঙ্গে করের একটি বাস্তবতা বোঝা যায়।

কিন্তু আমাদের দেশে সেটা ব্যতিক্রম, এটা ৯ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে পাক খাচ্ছে। আমাদের জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ কর সরকার পাচ্ছে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই ঘাটতি? এই ঘাটতি দূর করার উপায়টা কী? আমার বিবেচনায় তিনটি কারণে এই ঘাটতি হচ্ছে। একটি হচ্ছে, সব লোক কর দেয় না। সবই করছে, কিন্তু কর দিচ্ছে না। গাড়ি ২৫ টার যায়গায় ৫০টা কিনছে, কর দিচ্ছে না। তার চালচলন দেখলে মনে হয় না তিনি গরিব। কিন্তু কর দেয়ার বেলায় তিনি গরিব। তার কাছে যাওয়া যাচ্ছে না। অথচ অর্থনীতি বাড়ছে; ৩ হাজার ডলার হয়েছে আমাদের পার ক্যাপিটা ইনকাম (মাথাপিছু আয়)। ৩ হাজার ডলার যদি পার ক্যাপিটা ইনকাম হয়, তাহলে আপনি কর দেন না কেন? কিন্তু আসলে তা না; বাস্তব সত্যটা হচ্ছে, সব লোকের মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলার বাড়েনি।

আসলে কিছু লোকের এত বেশি বেড়েছে যে, এভারেজ করতে গিয়ে ৩ হাজার হয়েছে। যার বেশি বেড়েছে তার বেশি কর দেয়ার কথা। যেহেতু আমার করের বেজ বাড়ে নাই লোকেরা কর দেয় না। আমাদের সমাজকে সেইভাবে তৈরি করতে হবে মানুষ যেন কর না দিয়ে থাকতে না পারে। আর করদাতার প্রত্যাশা থাকবে, যে কর আমি দিচ্ছি সেটা স্বচ্ছতার সঙ্গে যাচ্ছে, দেশের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। তাহলে না দেশের মানুষ কর দিতে উদ্বুদ্ধ হবে। কর না দিতে পারার মধ্যে এখানে অনেকগুলো লুপহোলস (ফাঁক) রয়ে গেছে। এখানে একটি সাইকোলজিক্যাল ডিফারেন্স রয়ে গেছে।

ট্যাক্স-জিপিডি অনুপাত না বাড়ার দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, জিডিপি বাড়ছে; জিডিপির সেই বড় খরচের ওপরে আপনি কর অব্যাহতি দিয়ে দিচ্ছেন, রেয়াত দিয়ে দিচ্ছেন। বড় আমদানি করছেন, আপনি কর মুক্তি দিয়ে দিচ্ছেন। কর মুক্তির ক্ষেত্রে আপনার একটি হিসাব থাকবে। যে মাল আনবে তাকে তো একটি হিসাব দেখাতে হবে। কর নেয়া হয় সবকিছু হিসাব-নিকাশের মধ্যে রাখার জন্য।

যদি আমি বলি যে, কর দিতে হবে না। তাহলে তো হিসাব থাকবে না। ৫টি জিনিস আনার কথা ছিল ৩টি জিনিস আনবে আর দুটো বিদেশে বিক্রি করে দেবে। যদি নিয়ম থাকত আপনি পাঁচটি জিনিস আনবেন একটি হিসাব হবে। টাকাটা তো সরকারকেই দিতে হবে। সরকারের এই পকেটের টাকা এই পকেটে যাবে। এখানে কর থাকা দরকার স্বচ্ছতার কারণে, প্রতিযোগিতার কারণে। আমি বলতি পারি যে, তুমি এই জিনিসটা আনো তোমার কর বেশি হবে না জাতীয় স্বার্থে। আরেকজন লোক ঠিকই কর দিয়ে সেই জিনিসটা আনছে। যে কর দিচ্ছে তার উৎপাদন ব্যায় কত হচ্ছে। আর যে কর দিচ্ছে না তার উৎপাদন ব্যয় কত হচ্ছে।

তখন কী হয়। তখন অর্থনীতিতে একটি বৈষম্য তৈরি হয়। আমরা এখন দেখছি সরকার বিশেষভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল বানাচ্ছে। বানিয়ে সেখানে জমির মূল্যসহ অন্য সবকিছুর দাম এক রকম রাখছে। আর অন্যদিকে প্রাইভেট সেক্টর ইউটিলিটি বিলটিল সব কিছু দিয়ে একটি জিনিস বানাচ্ছে। এখানকার খরচ বেশি হবে। বিদেশিরা কার কাছে আসবে। আপনি প্রতিযোগী তৈরি করছেন। একদিকে আপনি কর না দিতে বলছেন। অন্যদিকে কর দিতে বলছেন। এসব কারণে রেয়াত দেয়ার বিষয়টি অবশ্যই পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। কারণ, এতে হিসাবটা মিলছে না। বিনিয়োগ হচ্ছে, জিডিপি বাড়ছে। কিন্তু কর আসছে না। স্বচ্ছতার জন্য করের হিসাব রাখা উচিত। আপনি যখন একটি সেতু করমুক্তভাবে বানাবেন। তখন আপনি যে টোল আদায় করবেন, সেখানে যদি করটা না ধরেন তাহলে তো সামঞ্জস্যপূর্ণ হলো না। আপনি যদি মনে করেন, এখানে করের টাকা রাখব না। সেটা তো হলো না। আপনি মূল্যকে ছাপিয়ে রাখলেন। অথচ টাকা আপনার খরচ হয়েছে।

আরকর কম হওয়ার তৃতীয় কারণ হচ্ছে, যে কর আহরণ করে আর যে কর দেয় এদের মধ্যে সম্পর্ক। এই সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ, সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক নয়। আইনগুলোকে আরও জনবান্ধব করা দরকার। যারা কর আহরণ করে তাদের দক্ষতা ও স্বক্ষমতা বাড়াতে হবে। কর কর্মকর্তারা সব জায়গায় যেতে পারছে না। সব জায়গায় যাওয়া দরকার। উপজেলা অফিস থাকা দরকার। তার দক্ষ জনবল থাকা দরকার।

করদাতা যদি লোক রাখে এফসিএ পাস। তার সঙ্গে বোঝাপড়ার জন্য সেই রকম দক্ষ জনবল লাগবে। কর আহরণকারীকে দক্ষতা-স্বক্ষমতা অর্জন করতে হবে। একই সঙ্গে করদাতাকেও কর দিতে আন্তরিক হতে হবে। মনে রাখতে হবে, তার দেয়া করেই দেশ চলবে; রাস্তাঘাট হবে, সেতু হবে, হাসপাতাল হবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে সরকার। যে সবের সুবিধা দেশের সকল মানুষ পাবে; দেশ আরও এগিয়ে যাবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সবশেষ হিসাবে দেশে টিআইএনধারী (কর শণাক্তকরণ নম্বর) করদাতার সংখ্যা ৮২ লাখের বেশি। কিন্তু কর দেন ২৫ লাখের মতো। টিআইএনধারী সবাই যাতে কর দিতে বাধ্য হয়, সেজন্য কী ব্যবস্থা নেয়া উচিত?

এখানেই আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। সব করদাতা কর দিতে আসছেন না বা কর দিচ্ছেন না। ৮২ লাখ করদাতার মধ্যে একটি বড় অংশ হচ্ছে সরকারি আর বেসরকারি কর্মজীবী। এই করদাতারা তো নামেই শুধু করদাতা। এদের বেতন থেকে খুব বেশি টাকা আসে না। যারা ভালো কর দেয়ার কথা, গাড়ি দিয়ে ঘুরে বেড়ান। তিনি কিন্তু আসছেন না; কর দিচ্ছেন না। যারা দিচ্ছেন, যে পরিমাণ কর দেয়ার কথা তা দিচ্ছেন না। অর্থাৎ কর ফাঁকি দিচ্ছেন। সুতরাং এখানে দুপক্ষেরই দায়িত্ব পালন করতে হবে। যিনি টিআইএন খুলেছেন, তাকে অবশ্যই রিটার্ন সাবমিট (জমা) করতে হবে। অন্যদিকে এনবিআর যার টিআইএন খুলে দিয়েছে, তিনি কেন রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না সেটাও ভালোভাবে খোঁজখবর রাখতে হবে। সব টিআইএনধারী যাতে রিটার্ন সাবমিট করে সেটা বাধ্য করতে হবে।

এখন টিআইএন খুলেছেন কিন্তু রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না। এখন রিটার্ন জমা না দিলে উনি প্রমাণ করবেন কী করে যে, ওনার কর হয় কি হয় না। আমি রিটার্ন দিলাম না। আমি বুঝতে পারব না আমার সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয় না কি। আমার কত শতাংশ কর হবে, এখন না দিলে কী হবে- এ বিষয়গুলো দুই পক্ষকেই অনুধাবন করতে হবে। একজন টিআইএন খুলেছেন, রিটার্ন দিচ্ছেন না, অথচ তিনি করের আওতায় পড়েন। তার বিরুদ্ধে সরকার কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারেন- এ বিষয়গুলো মানুষকে পরিষ্কার করে বোঝাতে হবে।

আমি আবার বলছি, করদাতা আর কর আরোহণকারীর (কর কর্মকর্তা) সংস্কৃতি যদি উন্নতি না হয়, তাহলে কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব না। করদাতা তিনি নিজের দায়িত্বে টিআইএন খুলবেন, রিটার্ন সাবমিট করবেন; তার দায়িত্ব তিনি পালন করবেন। আর কর আহরণকারীর কাজ হচ্ছে দেখা যে, করদাতা সঠিকভাবে এটা দিচ্ছেন কি না। তার বুঝতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না। সেটা ফেসিলিটেট করা। প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেকে ডেকে এনে করদাতা বানানো এটা সমীচীন নয়। কাউকে তার দায়িত্ব পালনের জন্য বাধ্য করা, এই এনফোর্সমেন্টের দায়িত্ব এনবিআরের একার না। এটা হচ্ছে সমাজের, এনফোর্সমেন্ট।

করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য গতবার ৩৮ থেকে ৩৯টা খাতে বলা হয়েছিল যে, আপকি কর দিচ্ছেন কি না? এটার প্রমাণ দিতে হবে। আমার মনে হয়, এটার একটি ফল আসবে। সেদিন দেখলাম, এক জায়গায় একজন পরিচালক হতে গিয়েছেন। সেখান থেকে তাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে তার টিআইএন আছে কি না। এ রকম ভাবে সব জায়গা থেকে যদি চাওয়া হয় তাহলে এটার পরিবর্তন হবে। একটি চাপ সৃষ্টি হবে। যেমন- ব্যাংকে যত লোকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে তাদের উচিত রিটর্ন সাবমিট করা।

ব্যাংক জানে গ্রাহকের রিটার্ন নাই কিন্তু তারা ব্যাংক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এখন ব্যাংককে বাধ্য করা হচ্ছে। এর আগে ব্যাংকের মাধ্যমে একটি চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এখন বলা হচ্ছে, শুধু টিআইএন থাকলে হবে না। রিটার্ন দিয়েছে কি না সেটা দেখাতে হবে। এর একটি ফল পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি।

তাহলে কি আমরা আশা করতে পারি আগামীতে দেশে করদাতার সংখ্যা বাড়বে, ট্যাক্স-জিডিপির অনুপাত বাড়বে?

করের অঙ্ক কিন্তু প্রতিবছরই কমবেশি বাড়ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, একটি সভ্য নাগরিক সমাজকে এ রকমভাবে কর দেয়াতে হচ্ছে। এ রকম হওয়ার কথা ছিল না। আমরা একটি ট্রানজিশনে আছি। এটা বুঝতে হবে। সবকিছু এক দিনে হয়ে যাবে এটা ঠিক না। সবগুলো পদ্ধতিকে বাড়িয়ে বাড়িয়ে করদাতা বাড়াতে হবে। এসব প্রচেষ্টা কন্টিনিউয়াসলি করে যেতে হবে। এ বছর করলাম, দ্বিতীয় বছর আর খেয়াল করলাম না- এটা হবে না। আমাদের মজ্জাগত সংস্কৃতির মধ্যে এটা আনতে হবে।

এটা ঠিক যে, সব লোক টিআইএন খোলে না, এটাও ঠিক যারা টিন খুলেছেন তারা রিটার্ন দিচ্ছেন না। যারা দিচ্ছেন তা সঠিক পরিমাণে দিচ্ছেন না। আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ তিনটা- সবাই যাতে টিআইএন খুলে সেটা একটি চ্যালেঞ্জ। যারা টিন খুলেছেন তারা যাতে রিটার্ন দেন সেটা একটা চ্যালেঞ্জ। আর যারা রিটার্ন দেন, তারা সঠিক দেন কি না সেটা আরেকটা চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে এনবিআরের দায়িত্ব তো আছে। তবে বেশি দায়িত্ব এই পক্ষের, মানে করদাতার। যিনি টিআইএন খুলেছেন তিনি যাতে রিটার্ন দেন।

সামাজিকভাবে আসতে হবে। জনগণকে বুঝতে হবে আমি যদি রাষ্ট্রকে কর না দিই তাহলে সরকার কোথা থেকে টাকাটা পাবে। না হলে তো সরকারকে ধারকর্জ (ঋণ) করতে হবে। ধারকর্জ করলে আমার সন্তানকে এটা শোধ করতে হবে। এই বোধ সবার মধ্যে এলে এই সমস্যা আর থাকবে না। সংস্কৃতিকে উন্নত করতে হবে। সব পক্ষকে সহমত পোষণ করে, সহযোগিতার দৃষ্টিতে সবাইকে জাতীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে সহযোগিতা করতে হবে।

এই যে নিজস্ব অর্থে আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু তৈরি হয়েছে, আপনি গর্ব করে বলতে পারছেন যে, আমার টাকা সেখানে আছে। যদি কেউ এমন মনে করে যে, আমার টাকা না আমি সেই সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করছি; করছি তো করছি। কিন্তু এটা তো ঠিক হলো না।

করোনা মহামারির মধ্যেও গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে ১৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) হিসাবে সেই ইতিবাচক ধারা অব্যহত আছে। কিন্তু চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব রাজস্ব আদায়ে পড়বে কী?

অবশ্যই পড়বে। কারণ আমদানি-রপ্তানি রাজস্বের একটি বড় খাত। গত বছর কিন্তু আমদানি-রপ্তানি ভলিউম বাড়েনি। দাম বেড়ে গিয়েছিল, সেই কারণে আমদানি বেড়েছিল। রপ্তানিও কিন্তু পরিমাণের দিক দিয়ে বাড়েনি। বেড়েছিল দামের জন্য। যেহেতু আমদানিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ খরচ হয়েছিল, তার থেকে আমদানি শুল্কসহ অন্যান্য কর মিলিয়ে সরকারও বেশি ট্যাক্স পেয়েছিল।

একইভাবে রপ্তানি আয়েও টাকার অঙ্কে বড় উল্লম্ফন হয়েছিল, সে কারণে এ খাত থেকেও বেশি কর পেয়েছিল সরকার। কিন্তু যুদ্ধের কারণে এবার সরকার ব্যয় সংকোচনের পথ বেছে নিয়েছে। যার ফলে আমদানি অনেক কমে গেছে। অন্যদিকে যুদ্ধের কারণে দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে রপ্তানিতেও মন্থর গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এবার এই দুই খাত থেকে কর আদায় খুব একটা বাড়বে বলে মনে হয় না।

এগুলোর চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমাদের অর্থনীতিতে একটি বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। আমরা যে রেভিনিউ আয় করি এর একটি বড় উদ্দেশ্য আয়বৈষম্য কমানো। যার বেশি আয় হচ্ছে, সেখান থেকে নিয়ে যার আয় কম তাকে দেয়া। এটা হচ্ছে রেভিনিউ বাড়ানোর একটি বড় উদ্দেশ্য। আমরা আয়বৈষম্য কমাতে পারছি না। এখানে গলদ দেখা যাচ্ছে। ব্যাংক থেকে টাকা চলে যাচ্ছে। সেই টাকার ওপরে আমি কোন কর নিতে পারছি না। ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে; সবশেষ হিসাবে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তার মানে এই বিশাল অঙ্কের টাকা থেকে আমি কোনো কর পাচ্ছি না।

এই টাকা বিনিয়োগ হলে, ব্যবহার হলে আমি ভ্যাট পেতাম, আমি সেটা পাচ্ছি না। এই টাকা যিনি নিচ্ছেন তিনি কর দিচ্ছেন না। সুতরাং অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা-অস্পষ্টতা এই একটা পরিস্থিতি। এটা কর আহরণের ওপরে বড় প্রভাব ফেলছে। আমরা বলি অর্থনীতি ভালো থাকলে কর বাড়বে। অর্থনীতি ভারো না থাকলে কর আহরণ বাড়বে না। যে টাকাগুলো পাচার হয়ে যাচ্ছে, সে টাকাগুলো বিনিয়োগ হলে আমরা অনেক কর পেতাম, ভ্যাট পেতাম। কেনাকাটা হতো আমি ভ্যাট পেতাম। এই টাকা দিয়ে কারখানা হতো। ব্যবসা বাণিজ্য হতো। দেশে কর্মসংস্থান হতো। অর্থনীতিতে আরও গতিসঞ্চার হতো।

সাম্প্রতিক সময়ে একটি বিষয় বেশ আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও বলছে, আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অনেক টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।

এই যে আমি এতক্ষণ বললাম, যাদের অনেক কর দেয়ার কথা তারা কর দিচ্ছেন না। অর্থাৎ ফাঁকি দিচ্ছেন। আবার অনেকে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ দিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন না। ইচ্ছে করে খেলাপি হচ্ছেন। এই টাকাগুলোই বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আর অর্থনীতির বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। এই টাকা দুর্নীতি করে নেয়া, সেখানেই একটি বৈষম্য সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। বৈষম্য কমাতে এনবিআরের যে লক্ষ্য সেটা তো কাজ করছে না। সেই ফিলোসফি যখন কাজ করবে তখন এটা ঠিক হয়ে যাবে। এটা একটি চ্যালেঞ্জ।

তবে এটাও ঠিক যে, সব সময় এনবিআরকে দোষারোপ করলে হবে না। দেখতে হবে অর্থনীতি সুস্থ আছে কি না? মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। কমে গেছে বলেই সে আগের মতো পণ্য কিনছে না। চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে উৎপাদনও কম করছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। একটার সঙ্গে একটি সম্পর্কিত কিন্তু। প্রান্তিক মানুষের কাছে টাকা নেই। আপেলের দাম অনেক বেড়ে গেছে, ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। যাদের কাছে টাকা আছে তারা কিনছেন। এর কারণে চাহিদা কমে যাচ্ছে।

তবে আমি মনে করি, শুধু করোনাভাইরাস বা বৈদেশিক বিনিয়োগ এসব কথা বললে হবে না। আমাদের যা সক্ষমতা আছে, সেটার যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। মানুষ যে ব্যাংকে টাকা জমা দেয় নিজের টাকা বাঁচানোর জন্য। এমনভাবে জমা দেয় যাতে টাকা মূল্যস্ফীতি থেকে বেঁচে যায়। এখন দেখা যাচ্ছে, বাইরে ইনফ্লেশন ৯ শতাংশ, ব্যাংক আমাকে দেয় ৬ শতাংশ। আমার টাকা কমে যাচ্ছে। আমি যখন দেখি যে টাকার নিরাপত্তা নাই। এই টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। তখন আমার অবস্থাটা কী হয়। এই বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধাকদের অনুধাবন করতে হবে।

আরও পড়ুন:
সব ট্রেনের যাত্রাবিরতি চেয়ে জয়দেবপুর স্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে ৫৮ চাকরি
রংপুরে জাপায় একক প্রার্থী, সিদ্ধান্তহীন আ. লীগ
সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতির বিধান বাতিলের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি
ভবন নির্মাণে লাগবে সিটি করপোরেশনের অনুমতিও

মন্তব্য

আরও পড়ুন

অর্থ-বাণিজ্য
Gold prices fell for the third consecutive day

টানা তৃতীয় দিনের মতো কমেছে স্বর্ণের দাম

টানা তৃতীয় দিনের মতো কমেছে স্বর্ণের দাম
বৃহস্পতিবার ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ভরিতে কমেছে ৬৩০ টাকা। সে হিসাবে ভালো মানের স্বর্ণের ভরি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৬১ টাকা। আগের দিন বুধবার তা ছিল এক লাখ ১৪ হাজার ১৯১ টাকা।

দেশের বাজারে টানা তৃতীয় দিনের মতো কমেছে স্বর্ণের দাম। ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ভরিতে কমেছে ৬৩০ টাকা। সে হিসাবে স্বর্ণের ভরি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৬১ টাকা। আগের দিন বুধবার তা ছিল এক লাখ ১৪ হাজার ১৯১ টাকা।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়।

স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের দাম কমেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ৫০ মি‌নিট থেকে স্বর্ণের নতুন নির্ধারিত দাম কার্যকর হবে।

বাজুস এর আগে চলতি এপ্রিল মাসের ৬, ৮ ও ১৮ তারিখ তিন দফা স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এর ম‌ধ্যে ভালো মানের স্বর্ণের ভরিতে ৬ এপ্রিল ১ হাজার ৭৫০ টাকা, ৮ এপ্রিল ১ হাজার ৭৫০ টাকা ও ১৮ এপ্রিল দুই হাজার ৬৫ টাকা বাড়ানো হয়। মাঝে ২০ এপ্রিল ভরিতে ৮৪০ টাকা দাম কমানোর পরদিন ২১ এপ্রিল আবার ৬৩০ টাকা বাড়ায় বাজুস।

এবার শুরু হয় দাম কমানোর পালা। সবশেষ দাম বাড়ানোর দু’দিন পর ২৩ এপ্রিল ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে তিন হাজার ১৩৮ টাকা ও ২৪ এপ্রিল দু’হাজার ৯৯ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। আর বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ভরিতে ৬৩০ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ টানা তিন দিনে স্বর্ণের দাম ভ‌রি‌তে ক‌মেছে পাঁচ হাজার ৮৬৮ টাকা।

সোনার দামে এমন উত্থান-পতনের কারণ জানতে চাইলে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন নতুন পদ্ধতি বা পলিসি অনুসরণ করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করি। সেটি হচ্ছে বিশ্ব স্বীকৃত ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল পলিসি।

‘এতদিন আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করতাম। সেক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে যখন স্বর্ণের দাম কমত তখন আমরা কমাতাম। আর যখন বাড়ত তখন বাড়াতাম।’

তিরি আরও বলেন, ‘এখন আমরা আমাদের স্বর্ণের সবচেয়ে বড় বাজার তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট ফলো করে দর নির্ধারণ করি। এই বাজারে স্বর্ণের দাম ঘণ্টায় ঘণ্টায় উঠা-নামা করে। সেটা অনুসরণ করে আমরা নতুন দর নির্ধারণ করে থাকি। সেক্ষেত্রে দিনে দু’বারও গোল্ডের দাম বাড়ানো-কমানো হতে পারে।’

আরও পড়ুন:
দেশে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড, ভরি ১১৯৬৩৮ টাকা
মহেশপুর সীমান্ত থেকে ৪০টি স্বর্ণের বারসহ আটক ২
স্বর্ণের দাম দু’দিনের ব্যবধানে ভরিতে বেড়েছে ৩,৪৯৯ টাকা
বাড়া-কমার খেলায় স্বর্ণের ভরি রেকর্ড ১,১৪,০৭৪ টাকা
কমলো স্বর্ণের দাম

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
The manipulation of a few traders behind the instability in the capital market

পুঁজিবাজারে অস্থিরতার নেপথ্যে গুটিকয়েক ট্রেডারের কারসাজি

পুঁজিবাজারে অস্থিরতার নেপথ্যে গুটিকয়েক ট্রেডারের কারসাজি ফাইল ছবি
শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক সময়ের টানা পতন ঠেকাতে আবারও শেয়ারের মূল্যসীমায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বিএসইর আদেশে জানানো হয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাতে সমগ্র বিশ্ব যখন টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হয়, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে টেনে তুলতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বের দরবারে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়।

যদিও একটি শ্রেণি বাজারে নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে বরাবরই সক্রিয় ছিল। তবে দূরদর্শী নেতৃত্বগুণে বিনিয়োগকারীদের অর্থের সুরক্ষা দিতে বারবার বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হতে দেননি অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

সম্প্রতি বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্বাভাবিক আচরণ করছে পুঁজিবাজার। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এ পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে বাজারকে স্থিতিশীল করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এমনকি পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে গতকাল ফ্লোর প্রাইসমুক্ত সব শেয়ারে একদিনের দর কমার নিম্নসীমা (সার্কিট ব্রেকার) ৩ শতাংশে বেঁধে দিয়েছে সংস্থাটি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএসইসির সময়োপযোগী এমন পদক্ষেপ বাজারকে আবারও টেনে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সন্দেহভাজন বেশকিছু লেনদেন পরিলক্ষিত হয়েছে বাজারে। এতে বিশেষ একটি শ্রেণি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বাজারকে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করছে। কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও এতে জড়িত রয়েছে। বাজারে অবাঞ্ছিত বিক্রির আদেশ দিয়ে তারা অস্থিরতা তৈরি করছে। তাছাড়া বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে বাজারে একটা শ্রেণি স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে বাজার কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করছে।

এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশ কিছু ট্রেডার নিজেদের মধ্যে যোগশাজসের মাধ্যমে প্রথমে কম দরে শেয়ার বিক্রি করত। পরে তাদের দেখাদেখি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যখন প্যানিক হয়ে শেয়ার বিক্রি করত তখন তারা আবার কম দরে শেয়ারগুলো কিনে নিত। এভাবে তারা নিজেদের মধ্যে শেয়ার লেনদেন করে প্যানিক সৃষ্টির মাধ্যমে ভালো শেয়ারগুলোর দাম কমাত। এই কাজে তাদের বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও সহযোগিতা করত।’

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে শেয়ারের দর কমার কথা নয়। গুটি কয়েক অসাধু ট্রেডারের কারসাজিতে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে বড় বড় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল-আমিন বলেন, ‘এক শ্রেণির অসাধু বিনিয়োগকারী চাচ্ছেন বর্তমান কমিশন বিদায় হয়ে নতুন কেউ দায়িত্বে আসুক, যাতে তারা নতুন করে আরও সুযোগ নিতে পারেন। তারাই বিভিন্ন দুর্বল শেয়ারে কারসাজি করে সুবিধা নিচ্ছেন।

‘ফোর্সড সেলের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার তারা কম দরে কিনে নিচ্ছেন। কমিশনের উচিত হবে কারসাজিকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা, যাতে তারা বারবার বাজারকে ম্যানিপুলেট করার সাহস না পায়।’

এদিকে শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক সময়ের টানা পতন ঠেকাতে আবারও শেয়ারের মূল্যসীমায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বিএসইসি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে।

ওই আদেশে বলা হয়, এখন থেকে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। বর্তমানে দরভেদে কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হতে পারে।

দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে আদেশে জানানো হয়েছে। সার্কিট ব্রেকারের এ সিদ্ধান্ত বুধবার থেকে কার্যকর করতে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আজকের এই সার্কিট ব্রেকার আরোপ বাজারে কারসাজি রোধ করবে। এটি সন্দেহভাজন লেনদেন বন্ধ করবে। আর এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ সম্পদশালী একক বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি সক্রিয় হবে বলে আশা করছি।’

তিনি বলেন, ‘অনেক ভালো শেয়ার বর্তমানে আন্ডারভ্যালুতে আছে। এখানে তারা বিনিয়োগ করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’

সার্কিট ব্রেকার বাজারের দরপতন ফেরাতে ব্যর্থ হলে আবারও ফ্লোর প্রাইস দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আশা করছি, আমাদের বাজারে আর কখনও ফ্লোর প্রাইস দিতে হবে না। শিগগিরই বাজার একটা স্থিতিশীল অবস্থানে ফিরবে।’

আরও পড়ুন:
শেয়ারের দাম দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমবে না
ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে পুঁজিবাজার

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
The price of gold in the country has dropped another round to 114151 rupees

দেশে স্বর্ণের দাম আরেক দফা কমে ভরি ১১৪১৫১ টাকা

দেশে স্বর্ণের দাম আরেক দফা কমে ভরি ১১৪১৫১ টাকা
বাজুস মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়ে ওই দিন থেকে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকা নির্ধারণ করে। সে হিসাবে দু’দিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে কমলো ৫ হাজার ২৭৭ টাকা।

দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম একদিনের ব্যবধানে আরেক দফা কমেছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ভরিতে দু’হাজার ১৩৯ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। বলা হয়েছে,

স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নতুন নির্ধারিত দাম বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট থেকে কার্যকর হবে।

বাজুস এর আগের দিন মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়ে ওই দিন থেকে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকা নির্ধারণ করে। সে হিসাবে দুদিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে কমলো ৫ হাজার ২৭৭ টাকা।

নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ১৩৯ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৯৯৫ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া ১৮ ক্যারেটের ভরি ১ হাজার ৭১৪ টাকা কমিয়ে ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৩৭৭ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ হাজার ২০৯ টাকা।

অবশ্য স্বর্ণালঙ্কার কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের এর চেয়ে বেশি অর্থ গুনতে হবে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে স্বর্ণের গহনা বিক্রি করা হয়। সে সঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় নূন্যতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হবে ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৫৮ টাকা।

স্বর্ণের দাম কমানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রূপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেট ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রূপার ভরি ১ হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা আছে।

আরও পড়ুন:
কমানোর পর দিনই বাড়ল স্বর্ণের দাম
স্বর্ণের দাম এবার কমেছে, তবে নামমাত্র
দেশে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড, ভরি ১১৯৬৩৮ টাকা
স্বর্ণের দাম দু’দিনের ব্যবধানে ভরিতে বেড়েছে ৩,৪৯৯ টাকা
বাড়া-কমার খেলায় স্বর্ণের ভরি রেকর্ড ১,১৪,০৭৪ টাকা

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Infinix Inbook Y2 Plus An affordable powerhouse for everyday use

ইনফিনিক্স ইনবুক ওয়াইটু প্লাস: নিত্যদিনের ব্যবহারের জন্য সাশ্রয়ী পাওয়ারহাউজ

ইনফিনিক্স ইনবুক ওয়াইটু প্লাস: নিত্যদিনের ব্যবহারের জন্য সাশ্রয়ী পাওয়ারহাউজ ইনবুক ওয়াইটু প্লাস নামের ল্যাপটপটি দিচ্ছে চমৎকার ডিজাইন, শক্তিশালী পারফরম্যান্স ও সাশ্রয়ী দামের প্রতিশ্রুতি। কোলাজ: নিউজবাংলা
ল্যাপটপটির বর্তমান বাজারমূল্য ৫৮ হাজার ৯৯০ টাকা। অনুমোদিত ইনফিনিক্স রিটেইলার থেকে ল্যাপটপটি কেনা যাচ্ছে।

বাংলাদেশের বাজারে গত বছর প্রথমবারের মতো ল্যাপটপ নিয়ে আসে ট্রেন্ডি প্রযুক্তি ব্র্যান্ড ইনফিনিক্স। ইনবুক ওয়াইটু প্লাস নামের ল্যাপটপটি দিচ্ছে চমৎকার ডিজাইন, শক্তিশালী পারফরম্যান্স ও সাশ্রয়ী দামের প্রতিশ্রুতি। অল্প সময়ের মধ্যেই প্রযুক্তিপ্রেমী শিক্ষার্থী ও এক্সিকিউটিভদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে এ ল্যাপটপ।

দেখে নেওয়া যাক কী আছে ইনফিনিক্স ইনবুক ওয়াইটু প্লাস ল্যাপটপটিতে। এর ফিচার, পারফরম্যান্স ও ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতাই বা কেমন।

ডিজাইন ও গঠন

স্লিক ও হালকা ডিজাইনের ইনফিনিক্স ইনবুক ওয়াইটু প্লাস সহজেই সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। শিক্ষার্থী ও ব্যস্ত এক্সিকিউটিভদের জন্য এ ল্যাপটপ যথার্থ। এর পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক মেটালিক ডিজাইন স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে। একই সঙ্গে দেয় প্রিমিয়াম অনুভূতি। স্লিক প্রোফাইল ও প্রাণবন্ত ডিসপ্লের সঙ্গে যুক্ত সরু বেজেল ল্যাপটপটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। ফলে বাজারের একই ধরনের দামি ল্যাপটপের সমকক্ষ হয়ে ওঠে ওয়াইটু প্লাস।

তা ছাড়া এর মসৃণ এজি গ্লাস টাচ প্যানেলের কারণে সিল্কি-স্মুথ ও স্থায়ী টাচের অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। ১.৫ মিলিমিটার কি ট্র্যাভেল এবং ব্যাকলাইটিংযুক্ত রেসপনসিভ কি-বোর্ড টাইপিংকে করে তোলে সহজ ও আরামদায়ক। তাই কম আলোতেও টাইপ করতে কোনো সমস্যা হয় না।

পারফরম্যান্স ও প্রোডাক্টিভিটি

১১তম প্রজন্মের কোর আই৫ প্রসেসর ও ৮ জিবি র‍্যাম রয়েছে ইনফিনিক্স ওয়াইটু প্লাসে। স্টোরেজের প্রয়োজন মেটাতে এতে আছে ৫১২ জিবি এনভিএমই পিসিআইই এসএসডি। প্রোডাক্টিভিটি সফটওয়্যার, ওয়েব ব্রাউজ করা কিংবা কনটেন্ট স্ট্রিম করাসহ সব ধরনের উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন অ্যাপ্লিকেশন চালানো যায় খুব সহজেই। এর ইন্টিগ্রেটেড ইন্টেল ইউএইচডি গ্রাফিকস সাধারণ গেমিং ও মাল্টিমিডিয়া এডিটিংয়ের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় গ্রাফিকস পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে। উইন্ডোজ ১১ পরিচালিত ইনফিনিক্স ইনবুক ওয়াইটু প্লাসের অপারেটিং সিস্টেম সবার পরিচিত ও ব্যবহার করা সহজ।

ডিসপ্লে ও মাল্টিমিডিয়া অভিজ্ঞতা

উজ্জ্বল রং ও ওয়াইড অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে স্পষ্ট ও পরিষ্কার ভিজ্যুয়াল দেয় ১৫.৬ ইঞ্চি ফুল এইচডি আইপিএস ডিসপ্লেযুক্ত ইনবুক ওয়াইটু প্লাস। ৮৫ শতাংশ স্ক্রিন-টু-বডি রেশিওর সঙ্গে চমৎকার মাল্টিমিডিয়া অভিজ্ঞতার জন্য ডিসপ্লেটি দারুণ। কাজেই আপনার প্রিয় নেটফ্লিক্স সিরিজ দেখা কিংবা ফটো এডিট করা— সবই হবে স্বাচ্ছন্দ্যে।

ল্যাপটপটিতে আছে ডুয়েল এলইডি ফ্ল্যাশ ও এআই নয়েজ ক্যান্সেলেশন প্রযুক্তিযুক্ত ১ হাজার ৮০ পিক্সেলের ফুল এইচডি+ ক্যামেরা। এর ফলে ভিডিও কলের অভিজ্ঞতা হবে আরও উন্নত।

ব্যাটারি লাইফ ও চার্জিং

ইনবুক ওয়াইটু প্লাসের ৫০ ওয়াট-আওয়ার ব্যাটারি ক্যাপাসিটি কোনো চার্জ ছাড়াই প্রতিদিনের কাজে আট ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাকআপ দিতে সক্ষম। পাশাপাশি এর ৪৫ ওয়াট টাইপ-সি পোর্টযুক্ত চার্জারে ডিভাইসটি দ্রুত ও সহজেই চার্জ করা যায়। ফলে ভারী চার্জার বহনের প্রয়োজন হয় না।

দাম

ল্যাপটপটির বর্তমান বাজারমূল্য ৫৮ হাজার ৯৯০ টাকা। অনুমোদিত ইনফিনিক্স রিটেইলার থেকে ল্যাপটপটি কেনা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন:
২ বছরের সফটওয়্যার আপডেটসহ দেশজুড়ে মিলছে ইনফিনিক্স নোট ৪০ সিরিজ
ম্যাগচার্জ প্রযুক্তি নিয়ে দেশের বাজারে ইনফিনিক্সের নোট ৪০ সিরিজ
অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে ম্যাগনেটিক চার্জিং প্রযুক্তি আনল ইনফিনিক্স
যে তিন কারণে আলাদা ইনফিনিক্স ল্যাপটপ
বাজারে এলো ইনফিনিক্সের গেমিং স্মার্টফোন হট ৪০ প্রো

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Organized Workshop on Smart Transformation of PFM Services of Local Government Institute

স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের পিএফএম সেবার স্মার্ট রূপান্তরকরণ নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের পিএফএম সেবার স্মার্ট রূপান্তরকরণ নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত
রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হয় স্মার্ট সার্ভিস ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড প্রসেস ডিজাইন ও অবহিতকরণবিষয়ক কর্মশালা। ছবি: সংগৃহীত
উদ্যোগের পাইলটিং কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্মার্ট সার্ভিস ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড প্রসেস ডিজাইন ও অবহিতকরণ কর্মশালায় প্রায় ৬০ জনের অংশগ্রহণে তিন দিনব্যাপী কর্মশালার প্রথম দিন মঙ্গলবার রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হয়।

‘ডিজিটাল আর্কিটেকচার ট্রান্সফরমেশন ইন লোকাল গভর্মেন্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক উদ্যোগের পাইলটিং কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্মার্ট সার্ভিস ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড প্রসেস ডিজাইন ও অবহিতকরণ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় রাজশাহীতে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নির্দেশিত স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র জনাব এএইচএম খায়রুজ্জামা (লিটনের) পরামর্শক্রমে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের (বিএমজিএফ) অর্থায়ন এবং এটুআই, আইসিটি ডিভিশনের বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের ৫টি পাবলিক ফাইন্যানশিয়াল ম্যানেজমেন্ট (হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স, বিভিন্ন ধরনের সনদ যেমন জাতীয়তা সনদ, রিকশা/ভ্যান লাইসেন্স, বিদ্যুৎ/গ্যাসসহ বিভিন্ন ধরনের বিল) সংক্রান্ত সেবার স্মার্ট রূপান্তরের লক্ষ্যে ‘ডিজিটাল আর্কিটেকচার ট্রান্সফরমেশন ইন লোকাল গভর্মেন্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক উদ্যোগ রাজশাহীতে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

উদ্যোগের পাইলটিং কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্মার্ট সার্ভিস ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড প্রসেস ডিজাইন ও অবহিতকরণ কর্মশালায় প্রায় ৬০ জনের অংশগ্রহণে ৩ দিনব্যাপী কর্মশালার প্রথম দিন মঙ্গলবার রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হয়। এ উদ্যোগটি রাজশাহী সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদে পাইলটিং কার্যক্রম বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়।

উক্ত উদ্যোগের প্রধান সমন্বায়ক এটুআই, আইসিটি ডিভিশন চিফ ই-গর্ভনেন্স ড. ফরহাদ জাহিদ শেখ বর্ণিত কর্মশালায় স্মার্ট সার্ভিস ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড প্রসেস ডিজাইন এবং পাইলটিং কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশন, রাজশাহী জেলা পরিষদ, পবা উপজেলা পরিষদ, চারঘাট পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ, কাটাখালী পৌরসভা ও পারিলা, হরিপুর, হরিয়ান, হুজরীপাড়া ও ইউনিয়নের সম্মানিত মেয়র, চেয়ারম্যান, মেম্বার, কাউন্সিলর, প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব, সিস্টেম অ্যানালিস্ট এবং এটুআই আইসিটি ডিভিশনের কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন:
শিক্ষার সঙ্গে কিশোরীদের মাসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে রাজধানীতে কর্মশালা
চরমপন্থা রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকায় গুরুত্বারোপ
সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদ বন্ড মার্কেট উন্নতিতে বাধা
তরুণদের অনলাইনে নিরাপদ রাখতে টিকটকের ক্যাম্পেইন ‘সাবধানে অনলাইনে’
উন্নয়নের জন্য সুশাসন অপরিহার্য: মন্ত্রিপরিষদ সচিব

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Biggest post election challenge in India Unemployment Survey

ভারতে নির্বাচন পরবর্তী বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ বেকারত্ব: জরিপ

ভারতে নির্বাচন পরবর্তী বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ বেকারত্ব: জরিপ ভারতের দিল্লিতে পণ্যবাহী গাড়ি টেনে নিচ্ছেন এক শ্রমিক। ছবি: রয়টার্স
গত ১৬ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ২৬ জন অর্থনীতিবিদের ওপর জরিপ চালায় রয়টার্স, যাদের মধ্যে ১৫ জনই বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের পর সরকারের জন্য বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ হবে বেকারত্ব।

ভারতে চলমান লোকসভা নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসা সরকারের জন্য বেকারত্ব সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

বার্তা সংস্থাটি অর্থনীতিবিদদের ওপর চালানো জরিপের ফল বুধবার এক প্রতিবেদনে তুলে ধরে।

জরিপে অংশ নেয়া অর্থনীতিবিদদের আশা, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, বড় অর্থনীতিগুলোর ‍তুলনায় দ্রুততম গতিতে ভারতের প্রবৃদ্ধি হলেও বিপুল ও ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটি।

গত ১৬ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ২৬ জন অর্থনীতিবিদের ওপর জরিপ চালায় রয়টার্স, যাদের মধ্যে ১৫ জনই বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের পর সরকারের জন্য বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ হবে বেকারত্ব।

অন্যদিকে আট অর্থনীতিবিদ দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশটির গ্রামাঞ্চলে ভোগকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন। অন্যদিকে দুজন অর্থনীতিবদ মূল্যস্ফীতি এবং একজন দারিদ্র্যকে বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন দল বিজেপি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে কর্মসংস্থান বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিল। চলতি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে পারে দলটি।

বিজেপির প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেকারত্বের হার পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টির ইঙ্গিত দিচ্ছে না।

আরও পড়ুন:
ভারতীয় পণ্য বর্জন বাস্তবসম্মত কি না, প্রশ্ন কাদেরের
নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের সময় পাশে ছিল ভারত: কাদের
বিহারে নির্মাণাধীন সেতু ধসে একজন নিহত
দুর্নীতি মামলায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার
গুজরাটে ‘তারাবির নামাজ পড়ায়’ হামলা, আহত ৫ বিদেশি ছাত্র

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Hotel resorts in Ruma and Thanchi are empty due to lack of tourists

পর্যটক-শূন্যতায় রুমা ও থানচির হোটেল রিসোর্ট ফাঁকা

পর্যটক-শূন্যতায় রুমা ও থানচির হোটেল রিসোর্ট ফাঁকা বান্দরবানের থানচি উপজেলার অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট তমা তুঙ্গী। ফাইল ছবি
বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ব্যাংকে হামলা ও অস্ত্র লুটের ঘটনার পর পার্বত্য জেলা বান্দরবানে পর্যটন খাতে কালো ছায়া পড়েছে। ভয়ে-আতঙ্কে পর্যটকরা বুকিং বাতিল করছেন। ফলে ভরা মৌসুমেও লোকসানের মুখে পড়েছেন পর্যটন ব্যবসা-সংশ্লিষ্টরা।

পার্বত্য জেলা বান্দরবানে প্রতি বছর ঈদ, পহেলা বৈশাখ ও সাংগ্রাই উৎসব ঘিরে ব্যাপক পর্যটকের সমাগম হয়। বছর ঘুরে এসব উৎসব এলেও এবারের পরিস্থিতি পুরোপুরি ভিন্ন। বিশেষত জেলার রুমা ও থানচিতে পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে। হোটেল-রিসোট পড়ে থাকছে ফাঁকা। দেখা মিলছে না দেশি-বিদেশি পর্যটকের।

সম্প্রতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ব্যাংকে হামলা ও অস্ত্র লুটের ঘটনার পর পর্যটন খাতে কালো ছায়া পড়েছে। ভয়ে ও আতঙ্কে পর্যটকরা আগে থেকে করে রাখা বুকিং বাতিল করছেন। ফলে ভরা মৌসুমেও লোকসানের মুখে পড়েছেন পর্যটন ব্যবসা-সংশ্লিষ্টরা।

পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে অবস্থানকারী জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম বান্দরবান। জেলার রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচির অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণ। ইতোমধ্যে এসব স্পটের খ্যাতি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।

বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে থানচির অবস্থান। আর রোয়াংছড়ি ২০ কিলোমিটার ও রুমার দূরত্ব ৬৯ কিলোমিটার।

বান্দরবান-থানচি সড়কের মাঝামাঝি জীবননগর নামক স্থানে রয়েছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট নীলগিরি। নীল দিগন্ত বিস্তৃত এলাকাটি ম্রো অধ্যুষিত।

থানচি-আলিকদম সংযোগ সড়কে থানচি সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে ক্রাউডং (মারমা) ডিম পাহাড় (বাংলা)। নৌপথে সাংগু নদী বেয়ে তিন্দু ইউনিয়নে রয়েছে রাজা পাথর (বাংলা)।

এরপর রয়েছে রেমাক্রী খাল। জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের রোয়াংছড়ি উপজেলার শীলবাঁধা পাড়ায় দেবতাখুমের অবস্থান। এছাড়াও রয়েছে অনেক পর্যটন স্পট।

বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত প্রাকৃতিক হ্রদ হলো বগা লেক। রুমা উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে তিন হাজার সাতশ’ ফুট উচুঁতে এর অবস্থান। লেকটি পাহাড় চূড়ায় ১৫ হাজার একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত।

বগা লেক নিয়ে নানা কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হল বিজয় (তাজিং ডং)। সমতল থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৪ হাজার ৫শ’ ফুট। রুমা উপজেলার রেমাক্রী পাংশা ইউনিয়নে এর অবস্থান।

রুমা উপজেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। শীত মৌসুমে এই পর্বত দেখতে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে।

এছাড়াও রয়েছে কেওকারাডং, জলপ্রপাতের পানি ঝিরসহ অনেক পর্যটন স্পট। আবার জেলার থানচিতে পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে থাকা তালিকায় স্থান করে নিয়েছে নাফাখুম ঝরনা, আমিয়াখুং ঝরনা, ভেলাখুং ঝরনা, সাত ভাই খুং ঝরনা, লাংলুক ঝরনা, লৈক্ষ্যং ঝরনা, চিংড়িৎ ঝরনা।

প্রকৃতি এতোসব সম্ভার সাজিয়ে বসে আছে। কিন্তু তা দেখার জন্য পর্যটকের আগমন ঘটছে না। সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ভয় আর আতঙ্কে তারা পার্বত্য এসব পর্যটন স্পট এড়িয়ে চলছেন।

পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা জানান, বান্দরবান জেলায় পর্যটকদের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলায়। বিরাজমান পরিস্থিতিতে এই তিন উপজেলায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী। ফলে এসব দর্শনীয় স্থানে যাতায়াত করাটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন পর্যটকরা। অধিকাংশ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ। যানবাহন চলাচলও সীমিত। সন্ধ্যার আগেই লোকজন ঘরবন্দি হয়ে পড়ছে।

রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচির হোটেল-রিসোর্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ ও পহেলা বৈশাখ চলে গেল। এসব উৎসবের ছুটিতে এখানে হোটেল-মোটেলের শতভাগ রুম বুকিং হওয়ার কথা। কিন্তু এবার সেসবের কিছুই হয়নি।

হঠাৎ করে ২ এপ্রিল রাতে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্র লুট, ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ করে। পরদিন দুপুরে থানচি সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে অস্থির হয়ে পড়েছে বান্দরবান।

কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শুরু হয় যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান। আর এই খবর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে ভয়-আতঙ্কে মুখ ফিরিয়ে নেয় পর্যটকরা। অথচ এই সময়টাতে থানচি রেমাক্রীতে হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম হওয়ার কথা ছিল।

পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যটক না আসার কারণে এই ঈদ মৌসুমে তাদেরকে লাখ লাখ টাকার লোকসান গুনতে হবে।

নৌকার এক মাঝি জানান, থানচিতে পর্যটকের ছুটে চলার একমাত্র মাধ্যম হলো নৌকা। এখানে নৌকার সংখ্যা রয়েছে পাঁচ শতাধিক। আর এসব নৌকা চালানোর জন্য সমসংখ্যক মাঝি রয়েছেন। তাদের প্রধান আয়ের উৎস পর্যটক। নৌকা চালাতে পারলে সংসারের চাকা ঘুরবে, অন্যথায় উপোস থাকতে হবে। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তারা দিনশেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন।

থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুন বলেন, ‘সরকারিভাবে পর্যটকদের এই এলাকা ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়নি। তবে এমন পরিস্থিতি শোনার পর আর কেউ এখানে ঘুরতে আসবে বলে মনেও হয় না। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিটরা অনেক কষ্ট ও লোকসানে পড়বে বোঝা যাচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কেএনএফ-এর শতাধিক অস্ত্রধারী ২ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে রুমা উপজেলার ইউএনও অফিস সংলগ্ন মসজিদ ও ব্যাংক ঘেরাও করে। তারা সোনালী ব্যাংকের টাকাসহ ডিউটিরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তারা যাওয়ার সময় রুমা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকেও অপহরণ করে। পরদিন থানচি উপজেলা শহরের সোনালী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় ডাকাতি হয়।

যৌথ অভিযান চালিয়ে সোনালী ব্যাংকের অপহৃত ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে র‌্যাব ও সেনাবাহিনী। এরপর কেএনএফের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের ঘোষণা দেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

এসব ঘটনায় আটটি মামলা করে পুলিশ। ঘটনার পরপরই জড়িতদের ধরতে এবং সন্ত্রাসীদের নির্মূলে ৬ এপ্রিল যৌথ বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। দুদিনের অভিযানে ১৮ নারীসহ ৫৬ জনকে আটক করে যৌথ বাহিনী। বাকি সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন:
পাহাড়ের পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত কম্বিং অপারেশন চলবে: সেনাপ্রধান
বান্দরবানের ঘটনার প্রভাব পড়বে না পর্যটনে: টুরিস্ট পুলিশ
ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় বিদেশি মদদ নেই: কাদের
বান্দরবানে কঠোর অবস্থানে যাবে সরকার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
‘কেএনএফের হুমকি’: বান্দরবানের দুই উপজেলায় বন্ধ গণপরিবহন

মন্তব্য

p
উপরে