পতনের উপক্রম হয়েও শেষ পর্যন্ত সূচকে ১৪ পয়েন্ট যোগ হলেও খাদের কিনারে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। তিন সপ্তাহ ধরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইতে লেনদেন কমে দেড় বছরের সর্বনিম্ন অবস্থানে চলে এসেছে।
গত আট কর্মদিবসের মধ্যে চার দিনই লেনদেন হলো ৩০০ কোটি টাকার ঘরে। বাকি চার দিনের মধ্যে তিন দিন ৪০০ কোটি ও এক দিন ৫০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।
পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে লক্ষ্যে আগের দিন সোমবার ডিএসই ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে বৈঠক হয়। সেখান সিদ্ধান্ত হয়, বাজারের উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
ওইদিন ডিএসই থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ খবর জানানোর পরেও তা বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করতে পারেনি।
মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ৩৩৪ কোটি ৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। এর চেয়ে কম লেনদেন হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। সেদিন হাতবদল হয়েছিল ৩২৩ কোটি ৮০ লাখ ২৮ হাজার টাকা, যা গত দেড় বছরে সর্বনিম্ন।
এর চেয়ে কম লেনদেন হয় ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল। এর পরদিন থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে চলাচলে বিধিনিষেধ বা লকডাউনের ঘোষণা ছিল।
ওইদিন হাতবদল হয়েছিল ২৩৬ কোটি ৬০ লাখ ৭৪ হাজার টাকার শেয়ার। তবে লকডাউনেও লেনদেন চলবে, এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পরদিন থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় বাজার।
এরপর ৩০০ কোটি টাকার ঘরে লেনদেন হয়েছে হাতে গোনা কয়েকদিন। কিন্তু বৃহস্পতিবার ও মঙ্গলবারের চেয়ে কম লেনদেন সেবারও হয়নি।
এমনকি গত ২৪ অক্টোবর কারিগরি ত্রুটিতে কয়েক ঘণ্টা লেনদেন বন্ধ থাকার দিনও মঙ্গলবারের চেয়ে বেশি ছিল লেনদেন। সেদিন হাতবদল হয় ৩৩৪ কোটি ৭৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।
পুঁজিবাজারে উত্থানের এক পর্যায়ে লেনদেন ছাড়িয়ে যায় ৩ হাজার কোটি টাকার ঘর। তবে গত বছরের সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে যে দর সংশোধন শুরু হয়, তা আর শেষ হওয়ার নাম নেই।
পুঁজিবাজারে এখনকার আতঙ্কের কারণ বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কার মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক চাপ। এখন সব শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দেয়া আছে, এ কারণে প্রায় আড়াইশর মতো কোম্পানির শেয়ারের দর কমছে না। কিন্তু এই সর্বনিম্ন দরে ক্রেতাও নেই।
দরপতনের তুলনায় দরবৃদ্ধি চার গুণের বেশি হলেও ফ্লোর প্রাইসে পড়ে রয়েছে দুই শতাধিক কোম্পানি।
যে ৩৭০টি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে, তার মধ্যে দরপতন হয়েছে ১৪টির, বিপরীতে দরবৃদ্ধি হয়েছে ৬৩টির। আর আগের দরে লেনদেন হয়েছে ২৪০টি কোম্পানির, যার দুই-একটি বাদে প্রায় সবই ফ্লোর প্রাইসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
দরবৃদ্ধির সংখ্যা বেশি হওয়ায় ডিএসইর সূচক বেড়েছে, যদিও দিনের শুরুর দিকে পতনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটেও আগের দিনের চেয়ে ২০ পয়েন্ট কমে গিয়েছিল সূচক। সেখান থেকে ধারাবাহিকভাবে দর বেড়ে দিন শেষে ১৪ পয়েন্ট যোগ হয়ে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স অবস্থান ৬ হাজার ২১২ পয়েন্টে।
সূচক বাড়লেও মঙ্গলবার ৭৩টি কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি। বিপুল সংখ্যক বিক্রয়াদেশের বিপরীতে নগণ্য ক্রেতা ছিল দেড় শতাধিক কোম্পানির। এমন ১৫০টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে এক হাজারের নিচে।
১ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে মাত্র ৪৯টি শেয়ারের। এই লেনদেনের পরিমাণ ২৩৮ কোটি ১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। বাকি ২৬৮টি কোম্পানিতেও ১০০ কোটি টাকা লেনদেন করতে পারেনি। হাতবদল হয়েছে মাত্র ৯৬ কোটি ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
লেনদেনর বিষয়ে ট্রেজার সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফান্ড ইউজ করছেন না বিনিয়োগকারীরা। যারা শেয়ার বিক্রি করে ক্যাশ করতে পেরেছিলেন, তারা সবাই সাইডলাইনে রয়েছেন, বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। আর যারা ক্যাশ করতে পারেননি, ফ্লোর প্রাইসে বা লোকসানের কারণে আটকে আছেন।
‘বিনিয়োগে না যাওয়ার পেছনে একটি আশঙ্কা কাজ করছে, তা হলো- বর্তমান অবস্থা থেকে বাজার যদি ঊর্ধ্বমুখী না হয়, আর নীতিনির্ধারকরা যদি ফ্লোর প্রাইস তুলে দেন, তাহলে পতনের আশঙ্কা করছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে তারা নিষ্ক্রিয় থাকছেন।’
সূচকে প্রভাব যাদের
সবচেয়ে বেশি ৮ দশমিক ২৩ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে বিকন ফার্মা। এদিন শেয়ারটির দর বেড়েছে ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ।
বেক্সিমকো ফার্মার দর ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট।
সি-পার্ল সূচকে যোগ করেছে ২ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
এর বাইরে সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ, ওরিয়ন ফার্মা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, ইস্টার্ন হাউজিং, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ২০ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট।
বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ৬ দশমিক ১০ পয়েন্ট সূচক কমিয়েছে স্কয়ার ফার্মা। কোম্পানির দর কমেছে ১ দশমিক ৩২ শতাংশ।
ওরিয়ন ইনফিউশনের ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ দরপতনে সূচক কমেছে ২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট।
সোনালী পেপারের কারণে সূচক হারিয়েছে ১ দশমিক ৬১ পয়েন্ট। এদিন কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে ২ দশমিক ৯০ শতাংশ।
এ ছাড়াও নাভানা ফার্মা, ইসলামী ব্যাংক, বসুন্ধরা পেপার, কোহিনূর কেমিক্যাল, যমুনা অয়েল, সিনোবাংলা ও প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ১৪ দশমিক ২৬ পয়েন্ট।
দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০
সবচেয়ে বেশি ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ দর বেড়ে অ্যাডভেন্ট ফার্মার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৬ টাকা ১০ পয়সায়, যা আগের দিন ছিল ২৩ টাকা ৮০ পয়সায়।
এরপরেই ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেড়ে জুট স্পিনার্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩১ টাকা ২০ পয়সায়, যা আগের দিন ছিল ২১২ টাকা ৬০ পয়সা।
তালিকার তৃতীয় স্থানে ছিল মেট্রো স্পিনিং। ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে ৪৫ টাকা ৬০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ৪৩ টাকা ১০ পয়সা।
এ ছাড়া রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বিকন ফার্মা ও সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৫ শতাংশের ওপরে। আর ইস্টার্ন হাউজিং, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বিডি ওয়েল্ডিং ও সি-পার্লের দর বেড়েছে ৪ শতাংশের বেশি।
দরপতনের শীর্ষ ১০
সবচেয়ে বেশি ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ দর কমেছে ওরিয়ন ইনফিউশনের। প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫২৪ টাকা ৪০ পয়সায়, যা আগের দিন ছিল ৫৬৬ টাকা ৯০ পয়সা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ দর কমে সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬২ টাকা ২০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ৬৭ টাকা ১০ পয়সা।
এরপরই দর কমেছে নাভানা ফার্মার। ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ কমে শেয়ারটি লেনদেন হয়েছে ৯০ টাকা ৬০ পয়সায়। যা আগের দিন ছিল ৯৬ টাকা ২০ পয়সা।
এ ছাড়া তালিকায় পরের স্থানে ছিল সোনালী পেপার, বসুন্ধরা পেপার, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, কোহিনূর কেমিক্যাল, স্কয়ার ফার্মা, ইসলামী ব্যাংক ও যমুনা অয়েল।
আরও পড়ুন:মঙ্গলবার পতনের মধ্য দিয়ে টানা তিন দিন মূল্যসূচকের পতনে লেনদেন হলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। দরপতন হলেও বেশিরভাগ কোম্পানির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। কমেছে টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণ। আরেক বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে।
ডিএসইতে এদিন ৫৭৩ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ৬৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা বেশি। আগের দিন ডিএসইতে ৫০৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৬৭ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২১৯ পয়েন্টে।
ডিএসইতে ৩২৭টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩১টির, কমেছে ১৩৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬১টির। আরেক বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিচ সূচক সিএএসপিআই ১৯ পয়েন্ট কমেছে। লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সোমবার মূল্য সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। আরেক বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্রে লেনদেন শেষ হয়েছে।
ডিএসইতে ৫০৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা বেশি। রোববার ডিএসইতে ৪৮৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৭৮ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৭০ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২৫ পয়েন্টে।
৩৩৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩২টির, কমেছে ১৩৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭০টির।
আরেক বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৭ পয়েন্ট কমেছে। ১২ কোটি ৮৮ লাখ ৩২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচকের পতনে শেষ হয়েছে লেনদেন। কমেছে টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণও। তবে এদিন দেশের অপর বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বেড়ে লেনদেন হয়েছে।
ডিএসইতে রোববার ৪৮৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ১৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা কম। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৫০৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৮৮ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৭১ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক শূন্য দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৩১ পয়েন্ট।
ডিএসইতে বেশিরভাগ কোম্পানির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। ৩৪৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৬টির, কমেছে ১৪২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭৫টির।
লেনদেনের বিষয়ে ট্রেজার সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নতুন ফান্ডের ইনজেকশন নেই। সেক্টরাল মুভমেন্টও হচ্ছে না। ফলে মার্কেট একই জায়গায় আবর্তিত হচ্ছে।’
অপর বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ৫ পয়েন্ট বেড়ে প্রধান সূচক সিএএসপিআই অবস্থান করছে ১৮ হাজার ৫৭০ পয়েন্টে। হাতবদল হয়েছে ৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার। হাতবদল হওয়া সিকিউরিটিজের মধ্যে দর বেড়েছে ২৫টির, কমেছে ৫৯টির ও অপরিবর্তিত দরে লেনদেন হয়েছে ৬২টির।
দেশের পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের পছন্দের শীর্ষে ছিল ঢাকা ইন্স্যুরেন্স। সাধারণ বিমার এ কোম্পানিটির শেয়ার দরে সপ্তাহজুড়েই ছিল উল্লম্ফন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনার তথ্য বলছে, ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীর কাছে গত সপ্তাহজুড়েই পছন্দের তালিকায় ছিল। আর এতে সপ্তাহ শেষে এ কোম্পানিটির শেয়ার সবার শীর্ষে উঠে আসে। এতে সপ্তাহজুড়েই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে।
জানা গেছে, দুই সপ্তাহ ধরে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম টানা বাড়ছে। এতে ১৫ দিনের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে।
কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে সতর্ক বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে সেই সতর্ক বার্তা কোম্পনিটির শেয়ারের দাম বাড়ার প্রবণতা থামাতে পারেনি। বরং ডিএসইর বার্তা প্রকাশের পর দাম আরও বেড়েছে।
তথ্যে জানা যায়, ১২ জানুয়ারি ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম ছিল ৪৩ টাকা ৯০ পয়সা। এরপর দাম বাড়তে বাড়তে ২২ জানুয়ারি ৫৭ টাকা ২০ পয়সা ওঠে। এ পরিস্থিতিতে ২৩ জানুয়ারি ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে সতর্ক বার্তা প্রকাশ করা হয়।
ডিএসইর ওই সতর্ক বার্তায় বলা হয়, ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের উত্তরে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্প্রতি শেয়ারের যে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে তার পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদশীল তথ্য নেই।
এরপরও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে। ইতোমধ্যে প্রতিটি শেয়ারের দাম ৬৫ টাকায় উঠেছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহেই দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ। টাকার অঙ্কে বেড়েছে ১৩ টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৬৫ টাকা। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে যা ছিল ৫২ টাকা।
কোম্পানিটি ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তার আগে ২০২০ সালে কোম্পানিটি ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। এছাড়া ২০১৯ সালে ১৫ শতাংশ নগদ এবং ২০১৮ সালে ১৫ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি।
৪০ কোটি ১২ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ১ লাখ ২৫ হাজার। এর মধ্যে ৬১ দশমিক ৩৫ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৩৩ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে আছে দশমিক ১০ শতাংশ।
শেয়ারের দাম বাড়ার পাশাপাশি কোম্পানিটির শেয়ার বড় অঙ্কে লেনদেন হয়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ৯৪ লাখ ৪২ হাজার টাকার। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
গত সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ারের দাম বেড়েছে ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ। ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচকের সামান্য উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ৫১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে।
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৫০৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ২২৯ কোটি ৬ লাখ টাকা কম। বুধবার ৭৩৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৯৬ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৭৪ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৩০ পয়েন্টে।
ডিএসইতে এদিন ৩৪৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৩টির, কমেছে ১৩৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭৮টির।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। সিএসই সার্বিক সূচক সিএসপিআই ১০ পয়েন্ট কমেছে। এদিন সিএসইতে ২১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়।
সপ্তাহের চতুর্থ দিন বাংলাদেশের দুই পুঁজিবাজারে সূচক সামান্য বেড়েছে। তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন বাড়লেও কমে গেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)।
বুধবার ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২ পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ২৯৩ দশমিক ৪০ পয়েন্ট। এদিন সহ মোট তিনদিন সূচক বেড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। তিন দিনে ডিএসই সূচক বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট।
আর এই বাজারে লেনদেন হয়েছে ৭৩৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এই লেনদেন আগের দিনের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। ডিএসইতে সূচক আর লেনদেন বাড়লেও বেশির ভাগ শেয়ারের দাম কমে গেছে।
বুধবার ডিএসইতে মোট ৩৪৬টি শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ৩৮টির বা ১১ শতাংশের। দাম কমেছে ১২৯টির বা ৩৭ শতাংশের। দাম অপরিবর্তিত ছিল ১৭৯টির বা ৫২ শতাংশের।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই এদিন ১৮ পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ১৮ হাজার ৫৭৬ দশমিক ১৯ পয়েন্ট। আর এই বাজারে লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এই লেনদেন আগের দিনের তুলনায় ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। সিএসইতে সূচক বাড়লেও বেশির ভাগ শেয়ারের দাম কমে গেছে।
বুধবার সিএসইতে মোট ১৭৪টি শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ৩৬টির বা ২১ শতাংশের।আর দাম কমেছে ৬৮টির বা ৩৯ শতাংশের। আর দাম অপরিবর্তিত ছিল ৭০টির বা ৪০ শতাংশের।
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে আসছে জীবন বিমা খাতের কোম্পানি ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।
বুধবার কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ার ছেড়ে জনসাধারণের কাছ থেকে ১৬ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহের অনুমোদন পেয়েছে। এজন্য ১০ টাকা অবিহিত মূল্যের এক কোটি ৬০ লাখ শেয়ার ছাড়তে হবে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিএসইসি জানায়, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স আইপিওর মাধ্যমে সংগ্রহ করা টাকার একটা অংশ সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করবে। বাকি অংশ বিনিয়োগ করবে পুঁজিবাজার ও এফডিআরে। আর কিছু টাকা শেয়ার ছাড়ার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ বা ইস্যু ব্যবস্থাপনার ব্যয় মেটাবে।
ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। বিমা কোম্পানির অনুমোদনের শর্ত অনুযায়ী বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর তিন বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হয়। কিন্তু সেই শর্ত পূরণে এই কোম্পানিটির লেগে গেল প্রায় ৯ বছর। যৌক্তিক কারণ ছাড়া ঘোষিত সময়ে পুঁজিবাজারে আসতে না পারলে নির্দিষ্ট হারে জরিমানা দেয়ারও বিধান রয়েছে।
ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স মূলত জীবন বিমা করে থাকে। এছাড়া তারা গ্রুপ বিমা ও ক্ষুদ্র বিমাও রয়েছে তাদের সেবার তালিকায়। কোম্পানিটির ইস্যুব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে মোট ৮১টি বিমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে জীবন বিমা ৩৫টি আর সাধারণ বিমা ৪৬টি। উভয় ধরনের বিমা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এখন পর্যন্ত পঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ৫৬টি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য