কৃষি খাতের ওপর ভর করে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘আগামী দুটি মাস যদি আমরা সাবধানে পা ফেলি, তাহলে এরই মধ্যে আমাদের আইএমএফের টাকা আসতে শুরু করবে। বিশ্বব্যাংক, এডিবির টাকা আসতে শুরু করবে। তখন আমরা একটি স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতির দিকে যেতে শুরু করব। আমার বিশ্বাস, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা এলে, বিভিন্ন দেশে সংকট দেখা দিলেও বাংলাদেশের খুব একটি সমস্যা হবে না।’
গত বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সরকারকে এই আশার কথা শুনিয়েছেন গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি আতিউর রহমান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিউজবাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি।
আড়াই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় কেমন চলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, বাংলাদেশে অর্থনীতি এখনো মজবুত ভিত্তির ওপর আছে; খাদ্যসংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। আপনার কাছে সার্বিক পরিস্থিতি কেমন মনে হচ্ছে?
আমাদের সার্বিক খাদ্য উৎপাদন, আমাদের যে খাদ্য পরিস্থিতি, আমাদের যে নীতি সমর্থন, আমাদের কৃষিতে যে বিনিয়োগ করা হয়েছে ও আগামী দিনে যে আরও বিনিয়োগ হবে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের খাদ্যসংকট নিয়ে দুর্ভাবনা করার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। এ কথা ঠিক, সবাই ২০২৩ সালকে মন্দার বছর বলছেন। আর সেই সময় খাদ্য পরিস্থিতি খারাপ হবে বলছেন। সেই তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। এর বড় কারণ বাংলাদেশের কৃষির জন্য আমরা অনেক দিন ধরে কাজ করছি। শুধু সরকার নয়, আমাদের ব্যক্তি খাত, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবাই কাজ করছে। সবাই এক দশকের বেশি সময় ধরে আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির ওপর জোর দিচ্ছে।
যদিও আমরা এক্সপোর্ট নিয়ে অনেক কথা বলি। রেমিট্যান্স নিয়ে অনেক কথা বলি। কিন্তু আমাদের দেশীয় অর্থনীতি সেটি কিন্তু ভোগনির্ভর। সেটি আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদানির্ভর। সেখানেই আমরা অনেক বেশি জোর দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু কৃষিতে গুরুত্ব দিতেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি আমাদের সাবধান করে দিয়েছেন। মন্দা যদি চলে আসে। তখন হয়তো আমদানি করা খাদ্য আমাদের জন্য আনতে হবে। সেগুলোর তো দাম অনেক বেশি হবে। সেটি আনতে গিয়ে হয়তো চাপ পড়বে। নিজেরা যদি আমরা আমাদের নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করতে পারি। আমাদের ভোগটা যদি আমরা সামলাতে পারি। তাহলে আমাদের বেশি ডলার খরচ করতে হবে না। সেই অর্থে কৃষি একটি ফুড সাবস্টিটিউট ইন্ডাস্ট্রি। যদি আমাদের অনেক আমদানি করতে হতো। সেই আমদানির যে মূল্য সেটি কিন্তু বর্তমান রিজার্ভের ওপর আরও চাপ তৈরি করত।
বাংলাদেশ কৃষির উন্নয়নের জন্য যে নীতিমালা গ্রহণ করেছে সেটি যথার্থ। এ জন্যই বলছি, আমি দুই-তিন দিন আগেই উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ করে এলাম। তেঁতুলিয়ায় গিয়েছিলাম, ঠাকুরগাঁও গিয়েছিলাম। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখলাম যে এবার আমন উৎপাদন বাম্পার হয়েছে। কৃষকের মুখে হাসি। কারণ তারা অনেক বেশি উৎপাদন করতে পেরেছে। এখন আমাদের জন্য যেটি চ্যালেঞ্জ, সেটি হচ্ছে বোরো। আমাদের বোরো উৎপাদন ঠিকমতো করতে হবে। সে জন্য সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা আশা করছি, বিদ্যুৎ সব সময় থাকবে। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভালো হয়েছে। ডিসেম্বরে আরও ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে। সব মিলিয়ে মনে হয় কৃষকরা সেচের বিদ্যুৎ পাবেন। আমাদের জন্য আরও একটি চ্যালেঞ্জ সেটি হচ্ছে ফার্টিলাইজার। আমরা যেন কৃষককে সময়মতো সার দিতে পারি। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমাদের যে সার বিতরণব্যবস্থা তার ওপর নজর রাখতে হবে। যাতে আমাদের ডিলাররা কৃষকদের সার সময়মতো দিতে পারে। এটি নিয়ে যেন কোনো রকমের সমস্যা না তৈরি হয়; সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আরেকটি জিনিস করতে হবে আমন উৎপাদনের পর। আমাদের প্রকিউরমেন্ট শুরু হবে। আমরা যেন কৃষকদের যথার্থ মূল্য দিই।
আমি যদি ৫৫ টাকা করে চাল আমদানি করি। আমার কৃষককে যদি আমি ৫০ টাকাও না দিতে পারি, তাহলে কিন্তু কৃষকের প্রতি সুবিচার হচ্ছে না। এই জায়গাটিতে আমাদের খেয়াল করতে হবে। আমাদের যে মজুত সেটি বাড়িয়ে যেতে হবে। মজুত যদি আমাদের বেশি থাকে, তাহলে আমাদের বিশ্ব সংকট হলেও আমরা সামাল দিতে পারব। গ্রাম নিয়ে আমি চিন্তিত না। খাদ্য নিয়ে যদি কিছু টানাপড়েন থেকে থাকে সেটি শহরে। শহরের যারা অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন, তাদের আয়-রোজগার কিছুটা কমেছে। খাদ্য কিনতে তাদের অসুবিধা হচ্ছে। গ্রামে যে রকম সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি আছে, শহরে কিন্তু ততটা নেই। সুতরাং আমাদের শহরের খাদ্য নিয়ে আরও ভাবতে হবে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিরও উদ্বেগজনক সূচক এখন মূল্যস্ফীতি। সরকারি হিসাবেই অক্টোবরে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। আগস্টে এই সূচক ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠেছিল। মধ্যবিত্তের দুর্ভোগ বাড়ছে। মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখতে সরকারের কী করা উচিত?
সরকারের জন্য খুব অসুবিধা এই কারণে যে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো নেই। আমাদের আছে টিসিবি। টিসিবির গলিতে গলিতে দোকানপাট নেই। সুতরাং মধ্যবিত্ত চাইলেও কিনতে পারে না। এখন ডিজিটাল যুগ। এই ডিজিটাল যুগে ডিজিটালভাবে সব রকম ব্যবস্থা করা যেত। মধ্যবিত্ত যদি একটি জায়গায় অনলাইনে ঢুকতে পারে। আমার পাঁচ কেজি চাল লাগবে, সেটি সরকার সহনীয় মূল্যে সরবরাহ করবে। এটি কিন্তু করা যায়। মধ্যবিত্ত সহজেই এনআইডি ব্যবহার করবে। একজন একবারের বেশি ব্যবহার করবে না। মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে টাকাটি দিয়ে দেবে। যাদের দরকার তাদের এভাবে দেয়া যেতে পারে। এ রকম কিছু ইনোভেটিভ মেজার নেয়া যেতে পারে।
সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় গরিব মানুষ নানাভাবে সহায়তা পাচ্ছে। ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে কম দামে খাদ্য দেয়া হচ্ছে। এগুলো খুবই ভালো উদ্যোগ বলে আমি মনে করি। অসহায় গরিব মানুষের খুব উপকার হচ্ছে। কিন্তু এখন আমাদের মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্তদের নিয়ে ভাবতে হবে। আড়াই বছরের করোনা মহামারি এবং যুদ্ধের কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া কারও বেতনই কিন্তু বাড়েনি। বরং অনেকে চাকরি হারিয়েছেন; কম বেতন পাচ্ছেন। এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে চলা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই আমি মনে করি, সরকারকে এখন মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্তদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। এতে যদি সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যায়, সেটি মেনে নিয়েই এই কাজটি করতে হবে।
সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে আমদানি ব্যয় অনেক কমেছে। গত মার্চে পণ্য আমদানির জন্য যেখানে সাড়ে ৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণপত্র বা এলসি খোলা হয়েছিল, সেটি এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে শিল্প উৎপাদন বা সামগ্রিক অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে?
এখনই এতটা অস্বস্তির কথাটা না ভাবাই ভালো। আমরা কৃষিতে যেহেতু ভালো করছি। আমাদের দেখতে হবে আমাদের আমদানি যেন বন্ধ না হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমদানিতে আছে খাদ্য, কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতি- এগুলোই মোট আমদানির ৮৫ শতাংশ। আমাদের রপ্তানি বাড়বে না যদি আমদানি না বাড়ে। সুতরাং আমদানিটা কিন্তু অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বাঁচানোর জন্য আমদানি বন্ধ করেছে। সেটির একটি সুফল আমরা পাচ্ছি। যাতে করে ছোট ছোট আমদানি যেমন গরুর জন্য ওষুধ, মুরগির জন্য খাদ্য- এগুলো যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ব্যাংকগুলো যেন এসব ছোটখাটো আমদানিতে ডলার জোগান দিতে পারে; এলসি খুলতে পারে- সেদিকে বাংলাদেশ ব্যাংককে সহায়তা করতে হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের জন্য এখন খুবই ক্রিটিক্যাল সময়। এই সময় যাতে আমাদের জরুরি আমদানি বন্ধ না হয়, আমাদের যাতে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আমাদের এক্সপোর্ট ও রেমিট্যান্স কিন্তু আবার বাড়ছে। আরও বাড়বে আমরা আশা করি। একটি সমস্যা দেখা দিয়েছিল এক্সচেঞ্জ রেট। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা চেষ্টা করছে। এক্সচেঞ্জ রেট একাধিক হওয়ার কারণে কিছু সংকট দেখা দিয়েছিল, ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছিল। এর কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যেমন ওয়ার ট্রান্সফার এবং রেমিট্যান্সে জন্য একটি ডলার রেট হয়েছে।
কিন্তু এক্সপোর্ট এবং রেমিট্যান্সের মধ্যে পার্থক্য এখনো রয়ে গেছে। আমাদের ইন্টার ব্যাংক ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট এখন খুবই স্যালো। এটির একটি রেটেই থাকা উচিত। সেই রেট দেখে দেশের মানুষ এবং বিদেশি যারা আমাদের এখানে বিনিয়োগ করছেন তারা বুঝতে পারবেন যে টাকা এবং ডলারের রেশিওটি কত। এটি অনেক সময় বোঝা যায় না। একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম থাকায় আমাদের সমস্যা হচ্ছে।
প্রাইভেট (বেসরকারি খাত) অনেক ফরেন ঋণ যারা নিয়েছেন, তারা একটু চাপের মধ্যে পড়ছেন। সেটির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং যারা এই ঋণগুলো নিয়েছে তাদের মধ্যে একটি বোঝাপড়া হওয়া উচিত। এগুলোর জন্য সময় বাড়িয়ে নেয়া যায় কি না বা এগুলোর জন্য বিদেশি অন্যান্য ব্যাংক থেকে রিফাইন্যান্স করা যায় কি না- এসব নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাবা উচিত বলে আমি মনে করি।
ছোট ব্যাংকগুলো যারা এক্সপোর্ট বেশি করে না, রেমিট্যান্স বেশি আনে না, তারা যাতে এসেনসিয়াল পণ্য আমদানি করতে ইন্টার ব্যাংক থেকে তাদের যেটি প্রাপ্য এক টাকা বেশি দিয়ে ডলার পায়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আর তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি মাসে ৫০ কোটি ডলার বরাদ্দ রাখতে পারে। এটি কিন্তু ছোট ইম্পোর্টের জন্য একটি ভালো পরিবেশ তৈরি করতে পারে। তাতে কী হবে? হয়তো দেড় বিলিয়ন ডলার বাড়তি ড্র-ডাউন হবে। তাতে কিচ্ছু আসে যায় না, মার্কেট যদি আমাদের সুস্থির থাকে, এর চার গুণ আমাদের ফিরে আসবে। ইম্পোর্ট যদি চালু থাকে আমাদের যেই পরিমাণ কর্মসংস্থান হবে। বাংলাদেশ এখন অত্যন্ত একটি শক্তিশালী অবস্থানের ওপর আছে। আমার সবার কাছে অনুরোধ থাকবে অযথা গুজব ছড়াবেন না। বরং আমরা সবাই মিলে কিছু শক্তিশালী নীতিমালা গ্রহণ করে এই যে টানাপোড়েন ফরেন এক্সচেঞ্জের, সেটি হয়তো পূরণ করতে পারব। আর আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি যে সেটি তো অনেক শক্তিশালী। গ্রাম ভালো আছে। শহরে কিছু সামাজিক নিরাপত্তা দরকার। সরকার এরই মধ্যে এক কোটি কার্ড করেছে। তারা নানাভাবে চেষ্টা করছে। মধ্যবিত্তের জন্য যতটুকু পারা যায় চেষ্টা করতে হবে।
এখানে আরেকটি বিষয় আমি বলতে চাই, আমাদের কথাবার্তায় আমরা যাতে খুব সাবধানে কথা বলি। যাতে কোনো রকম গুজব না তৈরি হয়। এ বিষয়গুলোর ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আগামী দুটি মাস যদি আমরা সাবধানে পা ফেলি, তাহলে আমাদের আইএমএফের টাকা যখন আসতে শুরু করবে। বিশ্বব্যাংক, এডিবির টাকা আসতে শুরু করবে। আমাদের রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করেছে। কৃষিতে ভর করে একটি স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতির দিকে কিন্তু আমরা যাচ্ছি। সামনের দিনগুলো আরও ভালো হবে। আমার বিশ্বাস, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা এলে, বিভিন্ন দেশে সংকট দেখা দিলেও বাংলাদেশের খুব একটি সমস্যা হবে না। কেননা আমাদের সরকারি গুদামগুলোতে ২০ লাখ টনের মতো খাদ্য মজুত আছে। বেসরকারি পর্যায়েও প্রচুর খাদ্য আছে। আমনটা ভালো হয়েছে। বেরোটা যদি আমরা ভালোভাবে ঘরে তুলতে পারি, তাহলে খাদ্য নিয়ে আর আমাদের কোনো চিন্তা থাকবে না। আর পেটে ভাত থাকলে অন্য সব বাধাবিপত্তি মোবাবিলা করা খুব একটা কঠিন হবে না বলে আমি মনে করি।
আপনি বলছিলেন যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিদেশি কোনো ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছে যারা বিপদে পড়েছে। এদের কীভাবে সহায়তা করা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি যে বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছি, সেটি হলো জরুরি আমদানি বন্ধ করা যাবে না। নতুন পদ্ধতি আমাদের তৈরি করতে হবে। বাইরে থেকে বেশি ডলার আনার উদ্যোগ আমাদের নিতে হবে। যারা বাইরে থেকে ডলারে ঋণ নিয়েছে। আর এখন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সংকটে পড়েছে। তাদের কিন্তু সাহায্য করার কথা সরকারকে চিন্তা করতে হবে। যারা সঠিক উদ্যোক্তা। তাদের উতরে নেয়ার জন্য একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা এরা যদি বিপদে পড়ে, উৎপাদন কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু অর্থনীতিতে আরেক ধরনের চাপ সৃষ্টি হবে; যারা এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন বা কাজ করছেন, তারা বেকার হয়ে যাবেন। তাই এ বিষয়টি এখন সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে হুন্ডি বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
হুন্ডি তখনই বাড়ে, যখনই কার্ব মার্কেটে ডলার রেটের সঙ্গে অফিশিয়াল রেটের পার্থক্য অনেক বেশি হয়। মার্কেট রেটে আমাদের এক্সচেঞ্জ রেটটি হওয়া উচিত। এক্সচেঞ্জ রেট আমরা এত দিন ফ্লোটিং ম্যানেজেমেন্ট করতাম। অর্থাৎ মার্কেট রেটের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি, এখনো করছি। কিন্তু রেটের অ্যাভারেজ (গড়) করতে গিয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এটিকে ছেড়ে দেয়া উচিত। কার্ব মার্কেট ও অফিশিয়াল রেটের পার্থক্য যদি ১ বা ২ টাকার হয়, তাহলে কিন্তু মানুষ অফিশিয়াল চ্যানেলেই টাকা পাঠাবে।
যারা অফিশিয়ালি টাকা পাঠাবে তাদের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আসা যায় কি না তা ভাবা দরকার। যেমন- এনআইডি ফিক্স করে তাদের ইনভার্সাল পেনশন স্কিমে যুক্ত করা, তাদের সন্তানদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা। এ রকম লং টার্ম ইনসেনটিভ প্যাকেজের সঙ্গে রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের যুক্ত করে দিলে দেশের স্বার্থে, পরিবারের স্বার্থে তারা অফিশিয়াল চ্যানেলে টাকা পাঠাবেন।
আরেকটি কাজ করতে হবে, আর সেটি হলো ক্যাম্পেইন করতে হবে। প্রবাসী ভাইবোনদের বলতে হবে, আপনারা যে আন-অফিশিয়াল চ্যানেলে (হুন্ডি) টাকা পাঠাচ্ছেন, এটি দিয়ে কী হয়? এই টাকা দিয়ে কেউ জঙ্গিপনা করে, অস্ত্র কেনে, সন্ত্রাস করে। তার চেয়ে টাকা অফিশিয়াল চ্যানেলে পাঠান, যেটি দিয়ে আমরা মেশিন কিনতে পারব রপ্তানির জন্য, শিশুখাদ্য কিনতে পারব। তখন তারা বুঝবেন, দেশের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে বৈধ পথে টাকা পাঠাবেন।
আমরা এই পারে (দেশে) যেমন ওয়ার্ল্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, এজেন্ট ব্যাংকিং ও ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স যেমন আমরা বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছি, ওই পারেও অর্থাৎ উৎসেও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, এক্সচেঞ্জ বা ব্যাংকগুলোকে অ্যাপস খুলতে বলতে পারি। ধরুন, ওইখানে একটি ফেইক মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস আছে, যেটি তারা বলে, সেটি কিন্তু সত্যি না, ফেইক।
কিন্তু একটি রিয়েল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস যদি করতে পারে এবং তারা যদি একটি অ্যাপস তৈরি করে, যেমন অগ্রণী ব্যাংক করেছে মালয়েশিয়ায়। তাহলে মরুভূমিতে বসেই আমাদের ভাইগুলো টাকা পাঠাবেন, যেটি আমাদের ব্যাংক হয়ে আবার তার বাড়িতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই চলে যাবে। এই রকম একটি ব্যবস্থা আমরা করতেই পারি। আমাদের রেগুলেটর ও তাদের রেগুলেটররা আলাপ করতে পারেন।
আমি যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ছিলাম, তখন আমরা এই ধরনের একটি এক্সপেরিমেন্ট করেছিলাম মালয়েশিয়ায়, একটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও বিকাশের সঙ্গে এক্সপেরিমেন্ট করেছিলাম। এই ধরনের এক্সপেরিমেন্ট আরও বেশি করা উচিত। তাতে মানুষ কনফিডেন্স পাবে। আনুষ্ঠানিকভাবেই আমরা টাকাগুলো আনতে সক্রিয় আছি।
মূল্যস্ফীতি কমাতে ব্যাংকঋণ ও আমানতের সুদের হার বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
রেট অব ইন্টারেস্ট (সুদের হার) নিয়ে উভয় দিকের কনসার্নেই সত্য। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুদের হার বাড়ালে দেশের জন্য ভালোই হয়, তাতে অনুৎপাদনশীল খাতে খরচটা কম হয়। আবার কোনো ক্ষেত্রে, যেমন উৎপাদনশীল খাতে রেট অব ইন্টারেস্ট কম থাকলে উৎপাদন বাড়ে, বিনিয়োগ বাড়ে। সুতরাং এটি একটি ব্যালান্সিং অ্যাক্ট, এই কাজটি করতে হবে। তবে মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হারে যদি ডিপোজিট রেট দিই, তাহলে তো একজন মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে, সে তো টাকা দিন দিন হারিয়ে ফেলবে।
ব্যাংক যদি সেই হারের বেশি হারে ডিপোজিট দেয়, কম হারে যদি লোন দেয়, তার ওপরে ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয়। তাহলে তো ব্যাংকের ব্যবসা হবে না। এই রকম জিনিসগুলোতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইন্টারেস্ট রেট কম দেব, সে ক্ষেত্রে তাকে ফিসক্যাল সাপোর্টে দেয়া যেতে পারে। যেমন আমি গভর্নর থাকার সময় কৃষিতে ইন্টারেস্ট রেট কম রেখেছি, খুবই কম হারে পিঁয়াজের জন্য লোন দিয়েছিলাম, সেটি কেমন করে, কারণ আমরা ৬ শতাংশ ভর্তুকি ফিসক্যাল পলিসিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পেয়েছিলাম।
সুতরাং কোনো কোনো জায়গায় এ রকম ইনোভেটিভ আইডিয়া করাই যেতে পারে। তবে বাকিটা বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত, ট্রাস্ট করা উচিত। বাজার যেভাবে আমাদের গাইড করবে, কিছুটা সামাজিক দায়বোধ থাকতে হবে, কিন্তু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিলেও সার্বিক ক্ষেত্রে বাজারের ধর্মমতে চলতে হবে। অনুৎপাদনশীল খাত যদি খানিকটা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাতে ক্ষতি নেই।
কোরিয়ায় একসময় ২০ শতাংশ হারেও লোন দেয়া হতো। সেখানে প্রবৃদ্ধি কিন্তু কমেনি। সুতরাং আমি মনে করি, টাকাটা ঠিক জায়গামতো যাচ্ছে কি না, আমার রিয়েল ইকোনমি উপকৃত হচ্ছে কি না, এটি যদি হয় এবং সময়মতো মানুষ যাতে টাকা পায় সেটির ব্যবস্থা করতে হবে। ধরা যাক, কম রেটে কৃষিঋণ দেয়া হলো। কৃষক গেলেন ব্যাংকে, টাকা নেয়ার সময় তার কাছ থেকে কিছু টাকা ব্যাংকাররা রেখে দিলেন। কৃষক কিন্তু হিসাব করবেন তার রেট অব ইন্টারেস্ট বা খরচ বেশি হিসাব করবেন। সুতরাং স্বচ্ছতার খাতিরে রেট অব ইন্টারেস্ট নিয়ে বাস্তববাদী ভাবনার সুযোগ রয়েছে।
ব্যাংকে টাকা নেই বলে গুজব ছড়াচ্ছে একটি মহল। আসলে বাস্তব অবস্থা কী। সাবেক গভর্নর হিসেবে এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এখনো পুরোপুরি নিরাপদ। কয়েক দিন আগে যে গুজব উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু মানুষ ছড়িয়েছিল, তা কিন্তু নেই। তাহলে তো এখনো থাকত তাই না? এটি যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল সেটি বোঝা যায়। আমাদের ব্যাংকিং সিস্টেমে টাকা রাখা, বালিশের নিচে টাকা রাখার চেয়েও বেশি নিরাপদ। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে অনেক ইনস্ট্রুমেন্ট আছে। কোনো ব্যাংকের সত্যিই যদি লিকুইডিটি ক্রাইসিস থাকে, তাহলে সে তার রেপো ব্যবহার করতে পারে, সরকারের কোনো ইনস্ট্রুমেন্ট বা সিকিউরিটি থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে পারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ওই ব্যাংকটিকে লং টার্ম লিকুইডিটি সাপোর্ট দিতে পারে। এখন ফরেন এক্সচেঞ্জেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সময় এসেছে সাপোর্ট দেয়ার। দরকার হলে ওডি দেবে, সোয়াপ করবে। নানা রকম ইনস্ট্রুমেন্ট আছে, যাতে মার্কেটটিকে লিকুইড এবং স্বস্তিকর করে দেয়া যায়। এটি ফরেন এক্সচেঞ্জের জন্য ও লোকাল মার্কেটের জন্যও দরকার। আমাদের কাছে সেই ইনস্ট্রুমেন্ট আছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি কথা বলেছেন, ‘টাকার অভাবটা আসল অভাব না, আসল অভাব ভরসা।’ সুতরাং আমরা ভরসার পরিবেশ করি।
অর্থনীতিতে চাপ সামাল দিতে সরকার ব্যয় সংকোচনসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। আর কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?
সরকার এখন পর্যন্ত যথার্থ পথেই এগোচ্ছে। বিশেষ করে কৃষিতে তারা যে গুরুত্বটা দিয়েছে, সেটা অত্যন্ত স্ট্র্যাটেজিক হয়েছে। এখন যেটি করতে হবে। আমাদের দরকার হলে আগামী দুই মাসের ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ থেকে ছেড়ে দেব, ছেড়ে দিয়ে হলেও এই জায়গাটায় স্টেবলাইজড করব। বিশেষ করে এসেনসিয়াল ইমপোর্টে যেন কোনো ব্যাংকই কোনো সমস্যা তৈরি না করে। সে জন্য দরকার হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে হটলাইন খুলতে হবে, কোন ব্যাংক কী সমস্যা করছে, তা জানবে এবং সঙ্গে সঙ্গে সমর্থন দিতে হবে।
পাইপলাইনে যেসব ফরেন এক্সচেঞ্জ আসার কথা সেটি ত্বরান্বিত করতে হবে। আইএমএফ, এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যে নেগোসিয়েশন করেছি, সেগুলোর প্রথম কিস্তি তাড়াতাড়ি চলে আসবে সেই কাজটি করতে হবে। আরেকটি কথা হলো, ফরেন এক্সচেঞ্জ বা রিজার্ভের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সবাই কথা বললে হবে না। কথা বলবেন সেন্ট্রাল ব্যাংক, গভর্নর বা মুখপাত্র এবং তথ্য দিয়ে ক্রেডিবল মেসেজ দেবেন, এটি সম্ভব, তাহলে সবকিছু ঠান্ডা হয়ে যাবে বলে আমার মনে হয়।
আরও পড়ুন:বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে ডলার-টাকার বিনিময় হার এখন থেকে বাজারনির্ভরভাবে নির্ধারণের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এ সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ আগামী জুন মাসের মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের ঋণ কিস্তি পাবে বলেও জানান তিনি।
ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের দর-কষাকষি চলছিল। মূলত সে কারণে আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় করছিল না। এর মধ্যে গতকাল জানা যায়, বাংলাদেশ ডলারের বিনিময় আরও নমনীয় করতে রাজি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারে ঋণের দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করতে রাজি হয়েছে আইএমএফ।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত ৯ মাসে রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করা হয়নি, তবুও বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে এবং তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। এ অবস্থায় বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে ব্যাংকারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, বাজারভিত্তিক করায় হঠাৎ করে ডলারের রেট অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘদিন ধরে ডলারের রেট ১২২ টাকার আশপাশে রয়েছে এবং তা সেখানেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ডলারের রেট দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা-সরবরাহ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, বাইরের দেশের নির্দেশে নয়। বর্তমানে বাজারে ডলারের সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে।
তবে, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দুবাইভিত্তিক কিছু সিন্ডিকেট বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক থাকবে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ড. মো. হাবিবুর রহমান, কবির আহমেদ, উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ এবং নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
এদিকে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের জুনের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির জন্য নির্ধারিত ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার একত্রে ছাড় করবে।
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে সকল বিষয় সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে উভয়পক্ষ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা বিনিময় হারসহ অন্যান্য সংস্কার কাঠামো বিষয়ে সম্মত হয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং বিনিময় হার ব্যবস্থায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে অধিকতর পর্যালোচনার লক্ষ্যে চতুর্থ রিভিউ সম্পন্ন হওয়ার পর উভয় রিভিউয়ের জন্য নির্ধারিত কিস্তির অর্থ একত্রে ছাড় করা হবে বলে বিগত তৃতীয় রিভিউয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ রিভিউয়ের সময় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ব্যাংক-ফান্ড সভায় এবিষয়ে আলোচনা চলমান ছিল।
এ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, জাপান এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরও প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা জুন মাসের মধ্যে পাবে বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এ অর্থ পাওয়া গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে। ফলে মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয় যে, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে যেসকল সংস্কার কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব বিবেচনায় পরিকল্পিত এবং জাতীয় স্বার্থে গৃহীত। এ সকল সংস্কার কর্মসূচির ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যক্রম শুধুমাত্র কারিগরি সহায়তা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
বাণিজ্যযুদ্ধের তীব্রতা কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। পরস্পরের ওপর আরোপ করা পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য শুল্ক ৯০ দিনের জন্য ব্যাপক পরিসরে কমাতে একমত হয়েছে দুই দেশ। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা কমাতেই এই চুক্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর বিবিসির।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের আগে চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। পরে নতুন শুল্ক যখন ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন তখন তিনি বলেছিলেন তিন মাস সবার জন্য বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক হার প্রযোজ্য হবে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দুপক্ষের মধ্যে আলোচনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, গঠনমূলক ও দৃঢ় আলোচনার পর উভয় দেশ ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করতে রাজি হয়েছে। এর আওতায় দেশ দুটি পারস্পরিক শুল্ক ১১৫ শতাংশ কমাবে।
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত বর্তমান ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। অন্যদিকে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপ করা ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। উভয় দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আগামী ১৪ মে থেকে শুল্কের এই কাঁটছাট কার্যকর হবে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে স্কট বেসেন্ট বলেন, আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি যে, আমাদের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। দুই পক্ষের প্রতিনিধিদলই একমত হয়েছে যে তারা বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না। মার্কিন অর্থমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশই নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পেরেছে। আমাদের লক্ষ্য ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যের পথে অগ্রসর হওয়া এবং এটি তারই সূচনা।
প্রথম দফায় শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল এবং বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কাও জোরালো হয়েছিল। তবে এবার এই চুক্তির ঘোষণায় বিশ্ব শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
শুল্ক কমানোর চুক্তির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববাজারে চাঙাভাব দেখা দেখা গেছে। হংকংয়ের প্রধান সূচক ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ স্টক ফিউচারের উত্থান হয়েছে। এছাড়া বাড়তি শুল্ক স্থগিতের খবরে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দর বেড়ে ছয় মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউরোপীয় শেয়ারবাজারগুলোও উচ্চমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু করে এবং মার্কিন বাজারগুলোও ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, এই সময়সীমার মধ্যে চীনের উচিত হবে ফেন্টানিল নামক ভয়াবহ মাদকের অবৈধ রপ্তানি বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া। এ বিষয়ে চীনের সদিচ্ছা দেখে ওয়াশিংটন আশাবাদ প্রকাশ করেছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের প্রবেশ ঠেকাতে চীন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না এমন অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।
টাকা পাচার ঠেকাতে বিশেষ ইউনিট গঠন করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মূলত বাণিজ্যের আড়ালে যে বিদেশে টাকা পাচার হয়, তা প্রতিরোধ করতেই এমন উদ্যোগ। দুই প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার হয় বলে মনে করে এনবিআর। এগুলো হলো-আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং। এসব কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব লোকসান হয় বলে মনে করে এনবিআর।
সম্প্রতি এনবিআর মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল নামে ১০ বছরের একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। সেখানে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।
গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) উদ্ধৃতি দিয়ে এনবিআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে (মিথ্যা ঘোষণা) ৭০ শতাংশ অর্থ পাচার হয়ে থাকে।
টাকার পাচার রোধে এনবিআর তিনটি উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে। প্রথমত, আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা ও ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার ঠেকাতে দক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে বিশেষায়িত একটি ইউনিট গঠন করা যেতে পারে। এই ইউনিটের সদস্যরা প্রতারণা হয় বা হতে পারে- এমন বিল অব এন্ট্রিগুলো তদারকি ও তদন্ত করবেন। এই ইউনিট গঠন হলে একদিকে টাকা পাচার বন্ধের পাশাপাশি এনবিআরের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির সক্ষমতা বাড়বে।
সাধারণত আমদানিকালে তুলনামূলক বেশি দাম দেখিয়ে অর্থ দেশের বাইরে পাচার করা হয়। মূলত মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এভাবে টাকা পাচার করা হয়। দুই বছর আগে এনবিআর পাচার টাকা ফেরত আনার সুযোগ দিলেও কেউ তা নেননি।
এনবিআরের দ্বিতীয় সুপারিশ হলো, বিদেশি কূটনীতিক মিশনে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের জন্য এটাশে পদ সৃষ্টি করা। এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং ইস্যুটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। যেসব দেশ থেকে পণ্য আসে, সেখানে পণ্যের মূল্য কত, তা জানা সম্ভব হয় না। আবার নানাভাবে বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার হয়। এনবিআর বলছে, বিভিন্ন দূতাবাসে, বিশেষ করে বাংলাদেশে বড় বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোতে রাজস্ব খাতে কর্মকর্তাদের জন্য এটাশে পদ সৃষ্টির সুপারিশ করেছে এনবিআর। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, ভারতের মতো দেশ এমন পদ সৃষ্টি করেছে বলে এনবিআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এনবিআরের তৃতীয় সুপারিশ হলো, পাচার টাকা ফেরত আনতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া; যেসব দেশে পাচার হয়, সেখানে তদারকি ও পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধি; আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করা। এসব করা হলে পাচার টাকা চিহ্নিত করে ফেরত আনা সহজ হবে। এ ছাড়া টাকা পাচারে সহায়তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনার কথাও বলেছে এনবিআর।
এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, টাকা পাচারের কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায় সরকার। টাকা পাচার বন্ধ করতে পারলে অর্থনীতি আরও চাঙা হবে। এ ছাড়া সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের রাঘববোয়াল (ক্রীড়নক), আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এই পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি রিপোর্টস (জিএফআইআরএস) এবং কিছু নির্দিষ্ট পূর্বানুমানের ভিত্তিতে টাকা পাচারের হিসাব করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।
দেশ থেকে কারা, কীভাবে, কোথায় টাকা পাচার হয়েছে- সেই চিত্র তুলে ধরে শ্বেতপত্রে বলা হয়, টাকা পাচারের জন্য দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের ক্রীড়নক, আমলাদের মধ্যে এক ধরনের অনৈতিক চক্র গড়ে ওঠে। ঘুষ-দুর্নীতি, আর্থিক অপরাধ, মিথ্যা ঘোষণার আড়ালে বাণিজ্য, ব্যাংক থেকে চুরি করা টাকা, খেলাপি ঋণের অর্থ, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে দেখানো, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, কর ফাঁকি- এসব কর্মকাণ্ডের অর্থ পাচার করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ করের অভয়ারণ্য নামে পরিচিত ছোট ছোট দেশে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয়েছে। মূলত বাড়ি কিনে এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ করে টাকা পাচার করা হয়।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি এবং আটটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার চার দিনের চীন সফরের তৃতীয় দিন শুক্রবার দুই দেশের মধ্যে এ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও স্মারকগুলো স্বাক্ষর হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়, সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে রয়েছে দুই দেশের কালজয়ী সাহিত্য ও শিল্পকর্মের অনুবাদ ও সৃজন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও খবর আদান-প্রদান, গণমাধ্যম, ক্রীড়া এবং স্বাস্থ্য খাতে বিনিময় সহযোগিতা। এর পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় চীন সফরে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ বিষয়ে সহযোগিতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়েছে।
এগুলো হলো বিনিয়োগ আলোচনা শুরু করা, চীনের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু, মোংলা বন্দরের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ, একটি রোবট ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ এবং একটি কার্ডিয়াক সার্জারি গাড়ি অনুদান।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের উত্থাপিত বিষয়গুলো চীন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং।
স্থানীয় সময় শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট এ কথা জানান।
ড. ইউনূসের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্টের বৈঠককে অত্যন্ত সফল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ইউএনবিকে বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশকে দেওয়া চীনা ঋণের সুদের হার কমানো ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় দেশটির সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়টি ছিল।’
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আলোচনা অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ, গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ হয়েছে।’
প্রেস সচিব বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার এটি ছিল প্রথম দ্বিপক্ষীয় বিদেশ সফর। এখন পর্যন্ত এটি একটি বড় সফলতা।’
প্রেসিডেন্ট শির বক্তব্যের বরাতে শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও কারখানা স্থাপনে চীন তার দেশের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করবে।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট শি ফুজিয়ান প্রদেশের গভর্নর থাকাকালীন দুইবার বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন। সে কথাও উল্লেখ করেছেন চীনের রাষ্ট্রপ্রধান।
প্রেসিডেন্ট শির উদ্বৃতি দিয়ে শফিকুল আলম বলেন, তিনি বাংলাদেশি আম ও কাঁঠাল খেয়েছেন। এগুলো সুস্বাদু। আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশ আগামী মৌসুমে এ দুটি ফল চীনে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করবে।
চীনা প্রেসিডেন্ট ও প্রধান উপদেষ্টা চীনের পিপলস গ্রেট হলে করা বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
তারা দুই দেশের সম্পর্ককে জোরদার করা ও ঢাকা-বেইজিংয়ের পারস্পরিক ও কৌশলগত স্বার্থকে এক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার উপায় নিয়েও আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের বাজারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সি৩২ ইলেকট্রিক বাইক এনেছে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড রিভো। অত্যাধুনিক ৭২ ভোল্ট ২৬ অ্যাম্পিয়ার সম্পূর্ণ গ্রাফিন ব্যাটারি পরিচালিত এই ইলেকট্রিক বাইকের উদ্বোধন ঘোষণা করেন রিভো বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ভেন নি।
ফিচার
সি৩২-এর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য শক্তিশালী ১৮০০ ওয়াট মোটর, যা ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে। বাইকটির ইকো মোডে গতি ৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং একবার চার্জে এটি ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে।
অন্যদিকে স্পোর্ট মোডে সর্বোচ্চ গতি ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং এক চার্জে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।
সি৩২ ইলেকট্রিক বাইকে উন্নত ৭২ ভোল্ট ২৬ অ্যাম্পিয়ার গ্রাফিন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে, যা পাঁচ শতাধিক চার্জিং সাইকেল সাপোর্ট করে এবং প্রতিটি পূর্ণ চার্জে মাত্র ২.০৮ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে।
ব্যাটারিটি সম্পূর্ণ চার্জ হতে ১০.৬ ঘণ্টা সময় নেয়, যা রাতে চার্জ দিয়ে দিনব্যাপী ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
নিরাপত্তা এবং আরামকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে রিভো সি৩২। এতে রয়েছে সামনে ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনে ড্রাম ব্রেক সিস্টেম, যা সর্বোচ্চ স্টপিং পাওয়ার নিশ্চিত করে।
ফ্রন্ট ও রিয়ার হাইড্রোলিক সাসপেনশন থাকার ফলে রাইডাররা মসৃণ ও আরামদায়ক রাইড উপভোগ করতে পারেন। এমনকি অপ্রশস্ত বা অসমান রাস্তাতেও।
রাতে নিরাপদ যাত্রার জন্য সি৩২-এ রয়েছে পূর্ণ এলইডি লাইটিং সিস্টেম, যার মধ্যে এলইডি হেডলাইট, টেইললাইট এবং টার্ন সিগন্যাল অন্তর্ভুক্ত।
রিভো সি৩২ শুধু শক্তিশালী পারফরম্যান্সই দেয় না, এটি ডিজাইনেও বেশ কার্যকর। ১৪০ কেজি ওজনের মজবুত অথচ হালকা ফ্রেম এবং সামনে ও পিছনে ৯০/৮০-১২'' ভ্যাকুয়াম টায়ার যুক্ত বাইকটি দুর্দান্ত গ্রিপ এবং স্থিতিশীলতা প্রদান করে।
২০৫ এমএম পর্যন্ত গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স থাকায় এটি যেকোনো ধরনের রাস্তার জন্য উপযোগী। সিট বাকেটে ২৪ লিটার স্টোরেজ স্পেস রয়েছে, যা ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বহনের জন্য আদর্শ।
ব্যবহারকারীবান্ধব ডিজাইন এবং আরামের সমন্বয়ে এটি শহরের যাতায়াতকারী এবং দূরপাল্লার রাইডারদের জন্য একটি পারফেক্ট পছন্দ।
এখন থেকে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯০০ টাকা মূল্যে বাংলাদেশের সব শোরুমে পাওয়া যাচ্ছে।
সি৩২ যাতায়াতকে সহজ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব করতে উন্নত প্রযুক্তি, শক্তিশালী পারফরম্যান্স নিশ্চিত করছে, যা প্রতিদিনের যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবেশ সচেতন রাইডারদের জন্য আদর্শ হতে পারে।
আরও পড়ুন:আলু রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এ স্থলবন্দর দিয়ে নতুন করে আরও ১০৫ টন আলু গিয়েছে নেপালে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৫৫৪ টন আলু নেপালে রপ্তানি করা হলো।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কোয়ারিনটিন ইন্সপেক্টর উজ্জল হোসেন জানান, বুধবার বিকেলে স্থলবন্দর দিয়ে পাঁচটি ট্রাকে ১০৫ টন আলু নেপালে গেছে।
তিনি জানান, আলুগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এগুলো রপ্তানি করছে থিংকস টু সাপ্লাই ও ফাস্ট ডেলিভারি নামে দুটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে থিংকস টু সাপ্লাই ৪২ ও ফাস্ট ডেলিভারি ৬৩ টন রপ্তানি করে। এ ছাড়াও বন্দরটি দিয়ে হুসেন এন্টারপ্রাইজ, ক্রসেস এগ্রো, সুফলা মাল্টি প্রোডাক্টস লিমিটেড এবং লোয়েড বন্ড লজিস্টিক নামের কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানও নেপালে আলু রপ্তানি করছে।
উজ্জ্বল হোসেন বলেন, রপ্তানিকারকরা প্রয়োজনীয় নথিসহ অনলাইনে আবেদন করলে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের ল্যাবে পরীক্ষা করার পর ফাইটোসেনেটারি সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। রপ্তানিকৃত আলুগুলো স্টারিজ এবং লেডিও রোজেটা জাতের।
মন্তব্য