বাংলাদেশে পরিবহন খাতে ব্যয় অত্যন্ত বেশি। এই ব্যয় কমাতে পারলে দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ বাড়বে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশ্বব্যাংকের রিজিওনাল কানেক্টিভিটি অ্যান্ড লজিস্টিকস নলেজ গ্রুপের প্রধান লিড মার্থা বি লরেন্স।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে দুদিনব্যাপী কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
পরিবহন খাতে উন্নয়ন নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিশ্বব্যাংক গ্রুপ ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভলপমেন্ট বা বিল্ড যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
সমাপনী দিনে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে একটি উপস্থাপন করেন লিড মার্থা বি লরেন্স। অপর প্রবন্ধটি তুলে ধরেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।
বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, পরিবহন খাতে ব্যয় পারফরম্যান্স ইনডেক্সে ১৬০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০তম। এই সূচকে উন্নতি করতে হলে যানজট কমিয়ে আনা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করতে হবে। এর জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। পাশাপাশি রেল ও নৌপথ ব্যবস্থার উন্নয়নে এখনই সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘আধুনিক রেল ব্যবস্থা ব্যতীত পরিবহন ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের চলমান প্রকল্পগুলো বাংলাদেশকে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হতে সহায়তা করবে, যা নতুন রপ্তানি বাজার সৃষ্টিতে সহায়তা করবে।’
বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি মাল্টিমোডাল লজিস্টিকস হাবে পরিণত করতে রেলপথ মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে সব ধরনের সহায়তা দেবে বলে জানান মন্ত্রী।
সড়ক সচিব এ বি এম আমান উল্লা নুরী বলেন, বাংলাদেশে বিশ্বমানের মাল্টিমোডাল যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তবে জাতীয় সমন্বিত মাল্টিমোডাল যোগাযোগ ব্যবস্থা নীতি ২০১৩ অনুসরণ করে এটি তৈরি করা যেতে পারে।
বিদ্যমান নীতিমালায় সড়ক, রেল, আকাশ, সমুদ্র ও অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহনের মধ্যে সমন্বয় সাধনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল বলেন, পরিবহন খাতকে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে সরকার ইতোমধ্যে বেশকিছু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তবে কাস্টমস ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রমগুলোর সম্পূর্ণ অটোমেশন ছাড়া এসব উদ্যোগ কোনো কাজে আসবে না। মাল্টিমোডাল যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি খাত এবং উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন জরুরি।
লজিস্টিকস ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কিং কমিটির কো-চেয়ার ও বিল্ডের সাবেক চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান বলেন, সামুদ্রিক অঞ্চলকে বিবেচনায় নিয়ে বন্দরভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ভারত সরকার ‘সাগরমালা পিপিডি মডেল’ তৈরি করেছে এবং প্রায় এক লাখ কোটি রুপি বিনিয়োগও করেছে।
সড়কপথের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সমুদ্র ও অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহনের জন্য একটি জাতীয় কৌশলপত্র তৈরির প্রস্তাব করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় লজিস্টিকস নীতিমালা গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকার ভারত, চীন, সিঙ্গাপুর ও হংকংসহ অন্যান্য দেশের উত্তম চর্চাগুলো বিবেচনায় নিতে পারে।
পরিবহন খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার বাজার, ট্রান্সপোর্ট বিষয়ক কর্মকর্তা শমিক রাজ বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের রেল, সড়কপথ, জলপথ, বে-টার্মিনাল ও স্থল বন্দর আধুনিকায়নে সহায়তা দিয়ে আসছে। আগামীতেও এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশে একটি টেকসই পরিবহন খাত নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থারগুলোর বাধাগুলো দূর করতে হবে।
সমাপনী অধিবেশনে বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম জানান, আলোচনায় যেসব পরামর্শ উঠে এসেছে তার ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
আরও পড়ুন:সরকার বৈশ্বিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিবেশগতভাবে টেকসই অনুশীলনের উন্নয়নে শিপ-রিসাইক্লিং ইয়ার্ডের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম করসহ ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব (মূসক নীতি) মশিউর রহমানের সই করা এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং ২০২৫ সালের ২৬ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
আদেশে বলা হয়, ‘সরকার ২০২৫ সালের ২৬ জুনের মধ্যে সব শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ডকে গ্রিন শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ডে রূপান্তর করতে বদ্ধপরিকর। এই রূপান্তর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্জনে ব্যর্থ হলে নির্ধারিত সময়ের পরে বাংলাদেশে রিসাইক্লিং করার জন্য জাহাজ আমদানি নিষিদ্ধ হবে।
‘ফলে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ (২০১২ সনের ৪৭ নম্বর আইন) এর ১২৬ ধারার উপধারা (৩) অনুযায়ী মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হলো।’
অব্যাহতির শর্তগুলো
আমদানি করা মূলধনী যন্ত্রপাতি কেবল জাহাজ ভাঙা ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য ইয়ার্ডগুলোর বিকাশের জন্য ব্যবহার করতে হবে।
কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের সময় আমদানিকারকদের শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদমর্যাদার নিচে নয় এমন কর্মকর্তার কাছে প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে। এটি নিশ্চিত করবে যে, যন্ত্রপাতিটি কেবল এই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে।
এনবিআর সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে, রেয়াতি মূল্যে আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি আমদানির পাঁচ বছরের মধ্যে বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না। এ সময়ের আগে কোনো যন্ত্রপাতি বিক্রি বা স্থানান্তর করা হলে ভ্যাট ছাড় প্রত্যাহার করা হবে এবং অগ্রিম করসহ প্রযোজ্য সব কর পরিশোধ করতে হবে।
এ ছাড়া ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তা উভয়ই জাহাজ ভাঙা ও রিসাইক্লিং ইয়ার্ডে এককভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং নির্ধারিত পাঁচ বছরের মধ্যে বিক্রি বা হস্তান্তর করা হয়নি- তা নিশ্চিত করতে কমপ্লায়েন্স তদারকি করবেন।
এ ছাড়া আমদানিকারকদের ৩০০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যন্ত্রপাতি বিক্রি বা হস্তান্তর না করার অঙ্গীকারনামা দাখিল করতে হবে। ছাড়পত্রের সময় এ অঙ্গীকারনামা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের অবকাঠামোগত সংস্কারের জন্য ৬০ কোটি ডলারের নীতি-ভিত্তিক ঋণ (পিবিএল) অনুমোদন করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এই অর্থ দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ, সরকারি বিনিয়োগ প্রকল্পের দক্ষতা, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও রাষ্ট্র-সংস্কারের জন্য কাঠামোগত সংস্কারের মতো কার্যক্রম জোরদার করা হবে।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এডিবি এ তথ্য জানিয়েছে।
এডিবির আঞ্চলিক প্রধান অর্থনীতিবিদ আমিনুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন-পরবর্তী উন্নয়ন তহবিলের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে এডিবি এই ঋণের আবেদনে দ্রুত সাড়া দিয়েছে। এই সংস্কারগুলো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও সুশাসনের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য ও প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেয়।’
এডিবির এই কর্মসূচি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। দেশের কর ও মোট দেশজ উৎপাদনের অনুপাত মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা বিশ্বে সর্বনিম্ন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই ঋণ বাংলাদেশকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়ানোর পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা কার্যকর করতে সাহায্য করবে। এই কর্মসূচিতে ডিজিটালাইজেশন ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ, কর প্রণোদনা ও অব্যাহতির যুক্তিসংগতকরণ এবং করদাতাদের কর প্রদানে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই ঋণ বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রক পরিবেশ সহজ করা এবং সমতাভিত্তিক প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করছে।
এদিকে বাংলাদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা সহজ করতে একটি অনলাইন একীভূত প্ল্যাটফর্মে ১৩০টিরও বেশি সেবা চালু করা হয়েছে। এর সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সুশাসন ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণের উন্নয়ন এবং প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজতর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এর আগে ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তার জন্য অতিরিক্ত একশ’ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এডিবি একটি সমৃদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিস্থাপক এবং টেকসই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে।
আরও পড়ুন:ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানার ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বিএফআইইউর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মঙ্গলবার ইউএনবিকে বলেন, সোমবার বিএফআইইউ দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়ে নির্দেশনা পাঠিয়েছে।
বিএফআইইউর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, লেনদেন তলব করার জন্য মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালার সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
চিঠিতে তলব করা ব্যক্তিদের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেয়া হয়েছে।
বিএফআইইউর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অ্যাকাউন্টে ওই টাকা কোথায় ও কীভাবে এসেছে, পরে ওই টাকা কোথায় খরচ হয়েছে এবং নগদে উত্তোলন করা হয়েছে কি না, তা জানাতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে এই ট্রাস্টের ঠিকানা হিসেবে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু ভবন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
শেখ হাসিনা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এবং তার বোন শেখ রেহানা একজন ট্রাস্টি।
এ ছাড়া এই ট্রাস্টের সঙ্গে জড়িত অন্যদের বা ট্রাস্টের হিসাব থেকে যেসব অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর বা জমা হয়েছে, তাদের বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ সচল করার লক্ষ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসার পর থেকে যেসব প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, সেগুলোর ওপর গুরুত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সরকার নীতিগতভাবে এ সিদ্ধান্ত নেয়।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল মাত্র ৮ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, এখন থেকে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একনেক সভা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাস্তবায়নের হার ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকারের অনুমোদিত এডিপি প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘এভাবে আমরা চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ বাস্তবায়নের হার বাড়াতে পারব বলে আশা করছি।’
সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে দুর্নীতিমুক্ত ও উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। আর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী যেকোনো দিক থেকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মনে করে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঠিকাদার নিয়োগসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে নানা অনিয়ম হয়। এর ফলে বেশ কিছু প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গিয়েছিল।
উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই সরকারি অর্থের অপচয় ও দুর্নীতি বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি প্রকল্পের সংখ্যা কমিয়েছে। এতে বাস্তবায়নের হার অনেকাংশে কমে যায় এবং অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা অবশ্যই প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করব। নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেসব ভালো প্রকল্পের কথা ভাবছি এবং যেগুলো নতুন প্রকল্প পরিচালক পেয়েছে, সেগুলো দ্রুত এগিয়ে নেয়া হবে।’
গণঅভ্যুত্থানের পর গত ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেক উন্নয়ন প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের চার মাসে উন্নয়ন বাজেটের মাত্র আট শতাংশ বাস্তবায়ন করে সর্বনিম্ন বাস্তবায়নের রেকর্ড গড়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এটি বাস্তবায়নের হার ছিল ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তাদের ক্ষেত্রে এ হার ১২ থেকে ১৩ শতাংশ।
বিশেষ করে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে সরকার।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম একনেক সভায় উন্নয়ন বাজেট কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দেয়।
এডিপিতে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (বাজেট বরাদ্দের ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ) বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত।
স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার এডিপিসহ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এডিপির মোট আকার দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকায়।
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৬৭ টাকা থেকে ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা করা হয়েছে। খোলা সয়াবিন তেলের দামও একই হারে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫৭ টাকা লিটার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সোমবার ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড ভেজিটেবল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার তেলের নতুন দাম ঘোষণা করেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রেমিট্যান্স প্রবাহে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অক্টোবর-নভেম্বরে তুলনামূলক কম রেমিট্যান্স এলেও ডিসেম্বরের শুরুতেই বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম এই খাতে সুবাতাস বইছে।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেশে ৬১ কোটি ৬৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৮ কোটি ৮১ লাখ ডলার প্রবাসী আয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম সাতদিনে দেশে এসেছে ৬১ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স। আর গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রেমিট্যান্স এসেছিল ৫০ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ১১ কোটি ডলার।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮ কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার ডলার। এছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে চার কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩৮ কোটি ৩৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২০ লাখ ৩০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে উঠা-নামার প্রবণতা দেখা গেছে। গত জুনে ২৫৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসার পর জুলাইয়ে তা কমে দাঁড়ায় ১৯১ কোটি ডলারে, যা গত দশ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ ও দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেমিট্যান্সের পালে ফের হাওয়া লাগতে শুরু করে।
আগস্টে দেশে রেমিট্যান্স আসে ২২২ কোটি ডলার এবং সেপ্টেম্বরে আসে ২৪০ কোটি ডলার, যা চলতি অর্থবছরে এক মাসে সর্বোচ্চ।
এরপর অক্টোবরে (২৩৯ কোটি ডলার) ফের রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা পড়ে, যা নভেম্বরেও (২১৯ কোটি ডলার) অব্যাহত থাকে। তবে ডিসেম্বরে ফের ঊর্ধ্বমুখি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:বিশ্বের বৃহত্তম পিৎজা ব্র্যান্ড ডোমিনো’জ পিৎজার ব্যবসায়িক যাত্রার ৬৪ বছর উদযাপন করা হবে সোমবার।
প্রতিষ্ঠানটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আগামী ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে ডোমিনো’জ পিৎজা তাদের ব্যবসার ৬৪ বছরের অসাধারণ যাত্রা উদযাপন করতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশের সকল পিৎজাপ্রেমীদের জন্য ডোমিনো’জ পিৎজার ৩৬টি রেস্টুরেন্টে ৩৬টির বেশি পিৎজার ওপর ৩৬% আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট ঘোষণা করা হয়েছে।
‘ক্রেতাগণ এই অফার উপভোগ করতে পারবেন ডোমিনো’জ পিৎজার অ্যাপ (অ্যাপ স্টোর ও প্লে স্টোরে উপলব্ধ) অথবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অর্ডার করে। অফারটি ডাইন-ইন, টেকঅ্যাওয়ে এবং ডেলিভারির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, এ উদযাপন শুধু একটি অফারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি এক অসাধারণ যাত্রার ৬৪ বছরে পদার্পণ উদযাপন, যা শুরু হয়েছিল একজন ব্যক্তির স্বপ্ন দিয়ে।
শুরুর গল্প
এই গল্প শুরু হয় ১৯৬০ সালে, যখন টম মোনাহ্যান ও তার ভাই জেমস ৯০০ ডলারে মিশিগানের সিল্যান্টিতে একটি ছোট পিৎজা রেস্টুরেন্ট ডোমিনিক’স পিৎজা কিনে নেন। খাবারের ব্যবসায় কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই এবং সামান্য কিছু মূলধন নিয়ে টম শুরুতে অসংখ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। কিছুদিন পর তার ভাই ব্যবসা ছেড়ে চলে যান এবং টম একাই রেস্টুরেন্ট চালাতে থাকেন।
টম প্রায়শই দীর্ঘ সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম করতেন এবং নিজে ডেলিভারিও দিতেন।
এক বছরের মধ্যে টম ব্যবহৃত একটি ভক্সওয়াগন বিটল গাড়ির বিনিময়ে তার ভাইয়ের শেয়ার কিনে কোম্পানির সম্পূর্ণ মালিকানা লাভ করেন। এ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই ডোমিনো’জ পিৎজার সাধারণ স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্ট থেকে বৈশ্বিক পিৎজা সাম্রাজ্যে পরিণত হওয়ার ভিত্তি তৈরি করে।
টমের লক্ষ্য ছিল একটি পিৎজা ব্রান্ড তৈরি করা, যা শুধুমাত্র স্বাদের জন্য নয়, বরং সেবার জন্যও পরিচিত হবে। তিনি গরম ও ফ্রেশ পিৎজা ডেলিভারি নিশ্চিত করার দিকে জোর দেন, যা সেই সময়ে এক বিপ্লবী ধারণা ছিল।
১৯৬৫ সালে তিনি ব্যবসার নাম বদলে ‘ডোমিনো’জ পিৎজা’ রাখেন। ডোমিনো'জ-এর লোগোর তিনটি ডট তখনকার তিনটি রেস্টুরেন্টকে নির্দেশ করত এবং তার পরিকল্পনা ছিল ভবিষ্যতে নতুন রেস্টুরেন্ট যোগ হলে লোগোতে একটি ডট বাড়ানো হবে। তবে দ্রুত ব্যবসা সম্প্রসারণের ফলে এটি আর সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে ডোমিনো’জ পিৎজা বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশে প্রায় ২১ হাজারের বেশি রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করে এবং প্রতিদিন গ্রাহকদের নিকট লক্ষাধিক পিৎজা পরিবেশন করে।
বাংলাদেশে ডোমিনো’জ পিৎজা
ডোমিনো’জ পিৎজা ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে।
সম্প্রতি মিরপুরের সনি স্কয়ারে নিজেদের ৩৬তম রেস্টুরেন্ট খুলে শাখার সংখ্যার দিক দিয়ে রাজধানীর সর্ববৃহৎ রেস্টুরেন্ট চেইনে পরিণত হয়েছে ডোমিনো’জ পিৎজা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য