রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা মোকাবিলা করতে পারলে সামনে সুন্দর সময় আসবে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ শাকিল রিজভী। তিনি মনে করছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বহুল প্রতীক্ষিত ঋণ পাওয়ার খবরে পুঁজিবাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা বাজারকে চাঙা করবে।
নিউজবাংলাকে বৃহস্পতিবার দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী এ আশার কথা শুনিয়েছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিউজবাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি।
আড়াই বছরের করোনাভাইরাস মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তছনছ হয়ে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি, যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে কেমন চলছে দেশের পুঁজিবাজার?
প্রথম বিশ্বের অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে করোনাভাইরাসের কারণে। তার পরপরই শুরু হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এর একটি বিরাট প্রভাব সারা পৃথিবীতে এসেছে, যার প্রভাব আমাদের দেশেও এসেছে; বেশ ভালোভাবেই এসেছে। কোনো কোনো দেশে পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। কোথাও তিন গুণ হয়েছে। বিশ্বের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আবার নতুন করে সবকিছু গঠন হবে। করোনাভাইরাস তো শেষ। এখন যুদ্ধ যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে সারা পৃথিবী ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে। সবকিছুই নির্ভর করছে আসলে যুদ্ধের ওপর।
মন্দার ভেতরেও কিছু বিষয় কিন্তু মানুষের লাগে। যত মন্দাই হোক, কাপড়, খাদ্য লাগে। বাংলাদেশ কাপড় রপ্তানি করে। যদি আমরা গার্মেন্টস, ডাইং কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ দিয়ে রাখতে পারি, তাহলে কিন্তু এই খাতে খুব একটা সমস্যা হবে না। রপ্তানিটাকে আমাদের শক্তিশালী করতে হবে। অপচয় বন্ধ করতে হবে। বেদরকারি বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। তাহলে মনে হয় বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জ পার হয়ে যাবে। বাংলাদেশের শক্তি বেসিক গার্মেন্টস এবং রেমিট্যান্স।
অপ্রয়োজনীয় আমদানি যদি আমরা বন্ধ রাখতে পারি, তাহলে কিন্তু আমাদের ডলারের ঘাটতিটা থাকবে না। যদি বেসিক ডিমান্ড বাংলাদেশ মেটাতে পারে আর বাংলাদেশের কর্মীরা তো বেসিক কাজটাই করে। আমরা যে রপ্তানি করি তার ৯০ শতাংশ কিন্তু বেসিক গার্মেন্টস। ১০ শতাংশ আছে যেটা হাইএন্ডের গার্মেন্টস। সুতরাং চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই আছে, কিন্তু আমি মনে করি আমরা সবাই মিলে যদি সতর্কতার সঙ্গে এই চ্যালেঞ্জটা পার হতে পারি, তাহলে সামনে একটি সুন্দর সময় আছে।
আমরা যদি অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখি, পৃথিবীতে ১৯২০ সালে অনেক রকম সমস্যা গিয়েছে। তারপর প্রতিটি দেশে বিরাট আকারে উত্থান হয়েছে। জাপানে, কোরিয়ায়, ভিয়েতনামে, আমরিকায় দেখা গেছে ১৯২৯ সালে যখন ব্ল্যাক মানডে হয়েছিল, তার পরে অনেক রকম চ্যালেঞ্জ পার করে তারা কিন্তু একটি বিশাল অর্থনীতিতে চলে গেছে। সুতরাং বাংলাদেশের পটেনশিয়াল আছে, আমি আশা করি এই চ্যালেঞ্জটা আমরা মোকাবিলা করতে পারব।
আমরা সবাই মিলে যদি সতর্কতার সঙ্গে এই চ্যালেঞ্জটা পার হতে পারি, তাহলে সামনে একটি সুন্দর সময় আছে। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে অন্তর্নিহিত শক্তি আছে, সেই শক্তি দিয়ে আমরা যেভাবে মহামারি করোনা মোকাবিলা করেছি, ঠিক একইভাবে যুদ্ধের ধাক্কাও মোকাবিলা করে সুদিন ছিনিয়ে আনব।
প্রায় এক বছর ধরে ডলারের বাজার অস্থির। নানা পদক্ষেপ নিয়েও বাগে আসছে না। গত মাসের বেশি সময় ধরে বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও ডলারের দাম কমছে না। সমস্যা আসলে কোথায়? কীভাবে সমাধান হবে? ডলারের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় দেশের পুঁজিবাজারে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে?
ডলারের বিপরীতে টাকার মানের বেশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। হিসাব করলে দেখা যাবে, এক বছরে প্রায় ৩০ শতাংশের মতো টাকার মান কমেছে। এর ফলে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে ফেলেছে। তারা আগে বিক্রি করে ফেলেছে, যাতে তারা বেশি ডলার পায়। সেই কারণে যদি মুদ্রার মান স্ট্যাবল বা স্থিতিশীল না হয়, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ আসে না। কারণ আজকে যে এক লাখ ডলার আনবে, সেটাতে যদি এক কোটি টাকা পাওয়া যায় আর টাকার মান কমে গেলে ১ কোটি ১০ লাখ পাবে, মানে বেশি পাবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষা করে যে, কখন বিনিময় হারটা স্থিতিশীল হয়। সে কারণেই বেশ কিছুদিন ধরে কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজারে নতুন কোনো বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। আগে যারা বিনিয়োগ করেছিলেন, সেটাও বিক্রি করে দিচ্ছেন, তবে আমি আশা করি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বহুল প্রতীক্ষিত ঋণটা গোটা দেশের মতো পুঁজিবাজারেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে; বাজারকে চাঙ্গা করবে।
কিছুদিন ধরে আইএমএফের এই ঋণটা পাওয়া যাবে, যাবে না, এ নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছিল বাজারে। এই ঋণে সরকার স্বস্তি পেয়েছে। এখন বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ অন্য দাতা সংস্থাগুলোও ঋণ নিয়ে এগিয়ে আসবে। সাহসের সঙ্গে সরকার এখন সংকট মোকাবিলা করতে পারবে। আর তার প্রভাব পুঁজিবাজারেও অবশ্যই পড়বে। আইএমএফের ঋণটা আমাদের জন্য একটা ভালো বার্তা দিয়েছে। এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও দেশের অন্যান্য খাতের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে বাংলাদেশে আসবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সবসময় কোনো দেশ সম্পর্কে আইএমএফের মূল্যায়নকে খুব গুরুত্ব দেয়। আইএমএফ বাংলাদেশের প্রতি আস্থা রেখে বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে, সেই পথ অনুসরণ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে আসবে। সে কারণেই আমি বলছি, সামনে আমাদের জন্য সুদিন অপেক্ষা করছে।
তাহলে আপনি কি বলতে চাইছেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, সেই চাপ সামাল দেয়ার পথ সহজ করে দিল আইএমএফর এই ঋণ?
অবশ্যই। সব দিক দিয়েই বাংলাদেশের জন্য ভালো হয়েছে। একটি বিষয় সবাইকে মনে রাখতে হবে, এ চাপ বা সংকটটা এসেছে, সেটা কিন্তু শুধু বাংলাদেশে নয়; বিশ্বের ছোট-বড় সব দেশেই এসেছে। সামনে আরও বড় বিপদের খবর দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা। সেই বিপদ আঁচ করতে পেরে বাংলাদেশ সরকার অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যেমন ব্যয় সংকোচনসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, একই সঙ্গে আইএমএফের ঋণের জন্যও জোর তৎপরতা চালিয়েছে। তার ফলস্বরূপ অল্প সময়ের মধ্যেই কিন্তু ঋণটা পাওয়া যাচ্ছে।
এখানে আরেকটি বিষয় সবাইকে বিবেচনায় রাখতে হবে। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান কিন্তু বিপদে পড়ার পর, অর্থাৎ গর্তে পড়ার পর আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল। আর বাংলাদেশ বিপদের আশঙ্কা করে আগেই ঋণটা নিশ্চিত করে ফেলেছে। তাই এ ক্ষেত্রে সরকার বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে বলে আমি মনে করি। আইএমএফের এই ঋণটাকে উপলক্ষ করে আরও বিনিয়োগ আসবে। বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার পাচ্ছে। একে উপলক্ষ করে আরও ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আসবে—এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি।
কেউ যদি একটি ধাক্কা দেয়, পরে অনেকেই আসে। আমাদের জন্য আইএমএফের ঋণটা দরকার ছিল। এখন দেখবেন সবাই আসবে। এটার সঙ্গে পুঁজিবাজারের প্রভাব অবশ্যই আছে।
যদিও আমরা বলি আইএমএফ শর্ত দিয়ে ঋণ দেয়। কিছু শর্ত কিন্তু গঠনমূলক; আমাদের জন্য ভালো, দেশের জন্য মঙ্গল। আমরা তো চাই দেশের ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ কমুক। আইএমএফও সেটা কমাতে বলেছে। খেলাপি ঋণ যাতে আর না হয়, সে জায়গাগুলোকে শক্তিশালী করতে বলেছে তারা। এটা তো আমাদের দরকার। যেমন: ডিপোজিটরের (আমানতকারী) টাকাগুলো যারা নিয়ে যাচ্ছে। সেগুলো তো দেখা উচিত। এই জায়গায় যদি একটি কঠিন সুশাসন আনা হয়, তাহলে তো ভালো হয়। আমাদের ব্যাংকের প্রায় ৯০ শতাংশ তালিকাভুক্ত কোম্পানি। ব্যাংকের শেয়ারগুলো তখন কিন্তু ভালো করবে। ব্যাংক হচ্ছে সবচেয়ে প্রফিটেবল ব্যবসা। তারা নিজেরা কোনো কিছু তৈরি করে না। তারা একজনের কাছ থেকে টাকা এনে আরেকজনকে দেয়। খেলাপি ঋণটা যদি সহনীয় পর্যায়ে চলে অসে, তাহলে কিন্তু ব্যাংকের জন্য ভালো। যারা শেয়ারহোল্ডার, যারা বিনিয়োগকারী, তাদের জন্য ভালো; দেশের জন্য ভালো।
অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কমার তথ্য দিয়েছে পরিসংখান ব্যুরো। সঞ্চয়পত্র বিক্রি নেই, আমানতের সুদের হারও কম। এর কোনো প্রভাব কী পুঁজিবাজারে পড়বে?
সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমলে পুঁজিবাজারের দিকে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এখন পুঁজিবাজারের অবস্থা হয়েছে এ রকম যে, সার্বিক অবস্থা যদি পরিবর্তন হয়, তাহলে দেশের পুঁজিবাজার তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়াবে। এর কারণ হচ্ছে, কারখানাগুলোর যে মেশিন আনা আছে, সেগুলো কিন্তু অনেক কমে ৭০ টাকা ডলার বা ৮০ টাকা ডলারে কেনা মেশিন। আরও আগের কেনা। সেই সেটআপ যদি এখন করতে যান তাহলে ডাবল খরচ হয়ে যাবে। সচল কারখানা যেগুলো ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে, তাদের দাম কিন্তু কমে নাই। শেয়ারের দাম কমতে পারে, কিন্তু ইন রিয়াল সেন্স যদি আপনি কোম্পানিটা কিনতে যান আগের টাকায় কিন্তু আপনি কিনতে পারবেন না। প্রত্যেকটি জিনিস আগে যেই দামে কেনা হয়েছে, এখন কিন্তু তিন গুণ, চার গুণ দাম লাগবে। শেয়ারের দামে সেটা নাই। কেন হয় নাই, সেটার কারণ আছে। টাকার দরকার হলে শেয়ার সবার আগে বিক্রি করা যায়। জমি-ফ্ল্যাট এত তাড়াতাড়ি বিক্রি করা যায় না।
শেয়ারটা এ রকম একটি জিনিস, মনিটরের সামনে বসলে যা শেয়ার আছে পুরোটা বিক্রি করা যাবে। আবার যতটুকু টাকা দরকার, সেটা বিক্রি করতে পারেন। এভাবে কিন্তু কোনো সম্পদ বিক্রি করা যায় না। আপনার যদি ১০ বিঘা জায়গা থাকে, ১০ কাঠা জায়গা কাউকে বিক্রি করতে গেলে খুব কঠিন। একটা অ্যাপার্টমেন্ট আপনি ভেঙে বিক্রি করতে পারবেন না, পুরোটা বিক্রি করতে হবে। এখানে যদি ১ কোটি টাকার শেয়ার থাকে, ১০ লাখ টাকার দরকার হলে ১০ লাখ টাকা বিক্রি করা যাবে।
এসব কারণে শেয়ার মার্কেটের ওপরে বিক্রির চাপ আসে বিশেষ বিশেষ সময়ে। আবার সেই সময়গুলো পার হয়ে গেলেই কিন্তু মানুষের বিক্রির চাপ আর থাকে না। সবই যখন কিনতে আসে এই দামে পাওয়া যায় না। যাদের টাকা আছে তারা এই সুযোগে কিনে রাখেন। এটা বাইরের দেশগুলোতে দেখা গেছে। ক্রাইসিস মোমেন্টে যারা কিনে রাখছেন শেয়ার, তারা ভালো সময় অনেক দামে শেয়ার বিক্রি করতে পেরেছেন। এভাবেই কিন্তু পুঁজিকরণ হয়। কোনো জায়গায় পুঁজি খোয়া যায়, কোনো জায়গায় পুঁজি হয়।
এখান থেকে বড় বড় শিল্পপতি তৈরি হয়। আবার অনেকের টাকা হারিয়ে যায়। এটা তো পুঁজিবাদী ব্যবস্থা। এখানে সবার কাছে পুঁজি রাখার দরকার নাই। কারও কারও কাছে বড় পুঁজি থাকবে। সেখানে ১০ হাজার লোক চাকরি করবেন। এই চ্যালেঞ্জের ভেতরে হাতবদল কিন্তু হয়ে যাবে। এখানে অনেক বড় লোক অনেক বিপদে পড়ে নিচে চলে যেতে পারেন। আবার অনেক কষ্ট করে আছে, তারাও ওপরে চলে যেতে পারেন।
অর্থনীতির পরিবর্তনের সময় এগুলো বিশেষ করে দেখা যায়। ১৯২৯ সালে ১৯৪৯ সালের পর ১৯৬১ সালে এসব দেখা গেছে। আশা করা যায়, এটা এখন সময়ের ব্যাপার। আমি আশা করি বাংলাদেশের যে সার্বিক অবস্থা, তাতে আমরা অবশ্যই আশাবাদী। বিশ্বের বাইরে তো আর বাংলাদেশ না। যদি গ্লোবাল আনরেস্ট থাকে যত চেষ্টাই করি না কেন, কিছু কিন্তু হাওয়া আমাদের গায়ে লাগবেই।
এমনিতেই পুঁজিবাজারে বেশ কিছুদিন ধরে মন্দা চলছে। এর মধ্যে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদত্যাগ, কারিগরি সমস্যার কারণে লেনদেন বন্ধসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। আপনি ডিএসইর একজন পরিচালক। এতে কী বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে আপনি মনে করেন?
সত্যি কথা বলতে কী, স্টক এক্সচেঞ্জ চালানোর মতো ভালো লোক পাওয়া খুবই কঠিন। সবকিছু মিলে একজন দক্ষ এমডি যে ডিএসইর ৪০০ কর্মকর্তাকে সামলাবেন, আবার তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে সামলাবেন, এ রকম লোক পাওয়া খুব কঠিন। যেসব এমডি আমাদের এসেছেন, তারা কেউ কেউ ব্যাংকে কাজ করে এসেছেন। আমাদের ডিএসইর পরিবেশ অনেক অন্যরকম। আমাদের আগের এমডি উনি ভালো ছিলেন। আইটি বিষয়ে তার ভালো জ্ঞান ছিল মনে হয়। আইটিতে বাংলাদেশের ১০/১২ জনের মধ্যে একজন, কিন্তু ডিএসইর সঙ্গে কনফ্লিক্ট হয়ে গেল। ব্যাংকের এমডিরা তো আইটি সে রকম বুঝতে পারতেন না। সিটিও যেভাবে বোঝাতেন সেভাবেই বুঝতে হতো।
আমরা পরিচালকরা তো সে রকম বুঝতাম না। কনফ্লিক্ট হয়ে যাওয়ার কারণে কিন্তু তিনি রিজাইন করেছেন। আবার আমাদের একটি মাসের মধ্যে দুবার লেনদেন বন্ধ ছিল। এটার জন্য আমাদের অনেক গুডউইল সমস্যা হয়। কারিগরি কারণে বন্ধ হতে পারে, কিন্তু মানুষের দক্ষতাগত কারণে যদি বন্ধ থাকে, তাহলে বিষয়টি দুঃখজনক। চেষ্টা করা হচ্ছে, বিষয়গুলো যাতে ঠিক হয়ে যায়।
পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকারের কী কিছু করার আছে বলে আপনি মনে করেন?
অনেক কাজ কিন্তু ইতোমধ্যে হয়ে গেছে; বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) করে ফেলেছে। বড় দাগে একটি করণীয় আছে ঋণের ব্যাপারে। ধাপে ধাপে বড় ঋণগুলো পুঁজিবাজারমুখী করতে হবে। তাতে ব্যাংক বাঁচবে, পুঁজিবাজারও বাঁচবে। প্রধানমন্ত্রী কিন্তু বারবার বড় বড় প্রকল্পের অর্থ পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহের কথা বলছেন, কিন্তু সে ক্ষেত্রে আমরা ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের মধ্যে খুব বেশি মনোযোগ লক্ষ্য করছি না। এ বিষয়ে সরকারের, বাংলাদেশ ব্যাংকের, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আরও বেশি কাজ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।
একটা বিষয় কিন্তু আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, একটি ভালো দেশের জন্য, ভালো অর্থনীতির জন্য একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার অবশ্যই প্রয়োজন। আমরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি। আরও এগিয়ে যেতে চাইলে কিন্তু পুঁজিবাজারকে সঙ্গে নিয়েই এগোতে হবে। আমার মনে হয়, সরকারের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন।
আপনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কথা বলছিলেন। স্পর্শকাতর এই সূচকটির লাগাম টেনে ধরতে ব্যাংকঋণ ও আমানতের সুদের হার যেটা বর্তমানে নয়-ছয় শতাংশ আছে, সেটা বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। সুদের হার বাড়ানোর বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
আমাদের মূল সমস্যাটা হচ্ছে ডলার। টাকার মান আমরা যেভাবে ধরে রাখছি সেটাকে আরেকটু ছাড়তে হবে। বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়াতে হলে টাকার মান ঠিক করতে হবে। এখন হঠাৎ করে ডিভ্যালুয়েট (অবমূল্যায়ন) হওয়াতে সমস্যা হচ্ছে। ডলারের দাম বাড়তে দিলে রেমিট্যান্সে টাকা বাড়বে; রপ্তানি বাড়বে। ডলারের দাম বাড়াতে হবে। আমাদের আমদানি সস্তা করে দিতে হবে। তা না হলে ডলার আমাদের থেকে দূরে চলে যাবে।
অন্যান্য দেশও কিন্তু তাদের মুদ্রা অনেক ডিভ্যালুয়েট করেছে। আমাদের এক্সপোর্ট বাড়াতে হলে টাকার মানের সঙ্গে ডলারের মানটাকে স্থিতিশীল করতে হবে। ডলার যদি আসে, তখন সব জায়গায় সেটার প্রভাব পড়বে।
বর্তমানে আমাদের ৩৪ বিলিয়ন না ৩৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ—এটা নিয়ে ভেবে ভেবে বসে থাকলে চলবে না। যে রিজার্ভ আছে, সেটাকে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি সন্তোষজনক বলে মনে করি, কিন্তু আমি মনে করি, বাংলাদেশের রিজার্ভ ১০০ বিলিয়ন, দেড় শ বিলিয়ন ডলার কোনো ব্যাপার নয়। আমাদের রেমিটারদের কাছে ১০০ বিলিয়ন ডলার আছে। রপ্তানিকারকদের হাতে ২০০ বিলিয়ন ডলার আছে। এগুলো আমাদের সম্ভাবনা। এগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের গার্মেন্টসের আরও বেশি সম্ভাবনা আছে; সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। সরকার-গার্মেন্টস মালিক-রপ্তানিকারক সবাই মিলে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। নতুন নতুন পণ্য রপ্তানি তালিকায় নিয়ে আসতে হবে শুধু তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভর করে বসে থাকলে হবে না।
ঋণ নিয়ে আলোচনার জন্য আইএমএফ প্রতিনিধিদলের যে সদস্যরা ঢাকায় এসেছিলেন, তারাও কিন্তু বিভিন্ন বৈঠকে এ বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। কেননা যেকোনো কারণে যদি আমাদের তৈরি পোশাক হোঁচট খায়, তখন কিন্তু আমাদের রপ্তানি খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে। অন্যদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে অবৈধ হুন্ডি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গত দুই মাস ধরে কিন্তু রেমিট্যান্স কমে গেছে। হুন্ডি বেড়ে যাওয়ার কারণে এটা হচ্ছে বলে মনে করছেন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা। তাই আমি মনে করি, হুন্ডি বন্ধে আর দেরি না করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সরকারের যদি প্রণোদনার পরিমাণ আরও বাড়ানোর প্রয়োজন হয়, সেটাও করতে পারে সরকার। মোটকথা, রেমিট্যান্স প্রবাহ যাতে না কমে, সে জন্য সব ব্যবস্থা নিতে হবে।
আর আপনি সুদের হারের বিষয়ে যে প্রশ্ন করেছেন, সে বিষয়ে আমি বলব, নতুন গভর্নর সাহেব বিচক্ষণতার সঙ্গে সবকিছু সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন। একটার পর একটা পদক্ষেপের কারণে কিন্তু আমদানি ব্যয় অনেক কমে এসেছে। আর আমদানি ব্যয় কমে এলে ডলারের চাহিদা কমবে; বাজারও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে, তবে আবারও বলছি, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের ইতিবাচক ধারা কিন্তু ধরে রাখতেই হবে। আমার মনে হয় সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই সুদের হারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। নতুন গভর্নর বা সরকার অবশ্যই সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
একজন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ হিসেবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে কিছু বলুন?
বিনিয়োগকারীদের আমি একটা কথা বলব, সত্যিকার অর্থে যদি কেউ বিনিয়োগকারী হন তাহলে যেসব কোম্পানি ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে সেগুলোর ওপরে নজর রাখুন, সেই সব শেয়ার কিনুন। গুজবে কান দিয়ে, হুট করে, লোকসান দিয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেবেন না। ধৈর্য ধরুন, সময় দিন, অপেক্ষা করুন। মুনাফা পাবেনই। আর যদি স্পেকুলাটিভ বা গুজবে খেলা খেলেন, তাহলে আপনাদের লাভ হতে পারে, আবার লোকসানও হতে পারে। যারা আসল বিনিয়োগকারী তারা দীর্ঘদিনের জন্য শেয়ার কেনেন। পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন থাকবে। এটাই বাজারের স্বাভাবিক গতি। আজকে খারাপ গেলেও আগামীতে ভালো হবে। আপনি যদি গুজবে লোকসান দিয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেন, তাহলে যখন বাজার ভালো হবে, শেয়ারের দাম বাড়বে, তখন কিন্তু আপনাকে আফসোস করতে হবে।
আরও পড়ুন:তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম নভেম্বর মাসেও প্রায় একই রয়েছে। কেজিতে কমেছে ৭ পয়সা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে এই নতুন দাম কার্যকর হয়েছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) হিসাবে, নভেম্বর মাসে প্রতি কেজি এলপিজির দাম ১২১ টাকা ৩২ পয়সা থেকে কমে ১২১ টাকা ২৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিইআরসি নতুন দাম ঘোষণা করে বলেছে, ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমানো হয়েছে এক টাকা।
একজন খুচরা গ্রাহক এখন ১২ কেজির সিলিন্ডার এক হাজার ৪৫৫ টাকায় (ভ্যাটসহ) কিনতে পারবেন, যা আগে ছিল এক হাজার ৪৫৬ টাকা।
মঙ্গলবার ঢাকায় নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসি জানায়, অন্যান্য আকারের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম সাড়ে পাঁচ কেজি থেকে কমিয়ে ৪৫ কেজি পর্যন্ত একই হারে কমবে।
বিইআরসির কর্মকর্তারা জানান, দেশের এলপিজি অপারেটররা সাধারণত সৌদি সিপির ভিত্তিতে মধ্যপ্রাচ্যের বাজার থেকে তাদের পণ্য আমদানি করে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম উঠা-নামা না করায় স্থানীয় বাজারে এলপিজির দাম অপরিবর্তিতই থাকছে।
বিইআরসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অটো গ্যাসের (মোটরযানে ব্যবহৃত এলপিজি) দাম আগের ৬৬ টাকা ৮৪ পয়সা থেকে কমে ৬৬ টাকা ৮১ পয়সা (ভ্যাটসহ) হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এলপি গ্যাস কোম্পানির বাজারজাত করা স্থানীয় এলপিজির দাম একই থাকবে। এর মার্কেট শেয়ার ৫ শতাংশের কম।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় বাজারে এলপিজি ১২ কেজি সিলিন্ডারের সর্বোচ্চ দাম ছিল এক হাজার ৪৯৮ টাকা।
আরও পড়ুন:মালয়েশিয়ায় প্ল্যান্টেশন সেক্টরে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেশটির সরকার প্ল্যান্টেশন সেক্টরের জন্য নির্বাচিত বাংলাদেশি কর্মীদের সে দেশে প্রবেশের সবশেষ সময়সীমা আগামী ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব গাজী মো. শাহেদ আনোয়ারের সই করা এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় প্ল্যান্টেশন সেক্টরে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সভায় নিম্নরূপ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সিদ্ধান্তে জানানো হয়, কর্মী পাঠানোর জন্য মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে চাহিদাপত্র সত্যায়নের শেষ তারিখ ৩১ ডিসেম্বর। আর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র নেয়ার শেষ তারিখ ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫।
নির্দেশনা তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়েছে, রিক্রুটিং এজেন্টরা কর্মীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার অতিরিক্ত অর্থ নেবেন না। সব লেনদেন উপযুক্ত লিখিত দলিল, রসিদ বা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সম্পন্ন করবেন এবং অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্ট ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্মীদের লেনদেন না করার বিষয় নিশ্চিত করবেন।
এছাড়াও সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্ট নির্ধারিত তারিখের আগে কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ভিসা, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) বহির্গমন ছাড়পত্র এবং বিমান টিকিট, প্রাক-বহির্গমন ওরিয়েন্টেশনসহ সব প্রস্তুতি নিশ্চিত করবেন।
রিক্রুটিং এজেন্টরা যথাসময়ে চাকরির শর্ত, বেতন-ভাতা, অন্যান্য সুবিধা, চাকরির পরিবেশসহ সব বিষয়ে কর্মীকে সুস্পষ্টভাবে অবহিত করবেন।
আরও পড়ুন:রেমিট্যান্স প্রবাহে সুবাতাস বইছে। গত অক্টোবর মাসে দেশে ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে ৩১ অক্টোবর একদিনেই রেমিট্যান্স এসেছে ৯৮ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
এই সময়ে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৮ হাজার ৯৩৮ মিলিয়ন ডলার; ২০২৩ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ছিল ৬ হাজার ৮৭৮ মিলিয়ন ডলার।
শুধু ২০২৪ সালের অক্টোবরেই রেমিট্যান্স প্রবাহ ২ হাজার ৩৯৫ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালের অক্টোবরে ছিল এক হাজার ৯৭১ মিলিয়ন ডলার।
বিদেশে বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি, উন্নত রেমিট্যান্স চ্যানেল এবং মৌসুমি প্রবাহ রেমিট্যান্স বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
অর্থনীতিবিদরা এসব পরিসংখ্যানের ইতিবাচক প্রভাব তুলে ধরে বলছেন, মজবুত রেমিট্যান্স প্রবাহ অভ্যন্তরীণ খরচ বাড়াতে পারে এবং দেশের জন্য বহিরাগত অর্থনৈতিক চাপের প্রভাব কমাতে তা সহায়ক হতে পারে।
স্থায়ী রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করার চলমান প্রচেষ্টায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:বকেয়া ৮৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ না করা হলে ৭ নভেম্বরের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হবে বলে বাংলাদেশকে জানিয়েছে আদানি পাওয়ার। বকেয়া না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৩১ অক্টোবর বকেয়া পরিশোধের নির্ধারিত সময়সীমা পার হওয়ার পর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭০ মিলিয়ন ডলারের ঋণপত্র খোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে উল্লিখিত শর্ত পূরণ করেনি বিপিডিবি।
বকেয়া পরিশোধে বিলম্বের কারণে আদানি পাওয়ার ৩১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী- ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় অবস্থিত এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কিন্তু গত শুক্রবার দিনের বেলা আদানি গ্রুপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে মাত্র ৭২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে।
এদিকে পায়রা, রামপাল ও এসএস পাওয়ার ওয়ানসহ অন্যান্য বড় কারখানাতেও জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন কমে গেছে।
সূত্রের বরাত দিয়ে টাইমস অফ ইন্ডিয়া বলছে, ডলার সংকটের কারণে সময়মতো অর্থ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহকারীদের মধ্যে আদানি গ্রুপই সবচেয়ে বড়। এরপর যথাক্রমে রয়েছে পায়রা (এক হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট), রামপাল (এক হাজার ২৩৪ মেগাওয়াট) এবং এসএস পাওয়ার (এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট)।
পিজিসিবির তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাটের বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং এসএস পাওয়ারের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কয়লা সংকটের কারণে ইতোমধ্যে অর্ধেক ক্যাপাসিটি নিয়ে চলছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অক্টোবরে চুক্তি অনুযায়ী আদানিকে ৯০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু আগের মাস গুলোতে ২০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার করে দিয়েছে। যেখানে প্রতিমাসে বিল বাবদ ৯০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার করে দেওয়ার চুক্তি রয়েছে। আদানির কাছ থেকে বাংলাদেশ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনে ১০ থেকে ১২ টাকায়। এরসঙ্গে ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা কেনার বিষয়টি জড়িত।
এদিকে আদানি গ্রুপ এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে কোম্পানিটির এক নির্বাহী কর্মকর্তা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে আগে বলেছিলেন, তারা আশা করেছিলেন একটি সমাধান হবে। কিন্তু সময়মতো বিল না দেয়া এবং বিষয়টি পরিষ্কার না করায়, ভারতের সবচেয়ে বড় বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে কঠোর অবস্থান নিতে হয়। কারণ তাদের যেসব বিনিয়োগকারী আছে তাদেরও অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) প্রদত্ত প্লাটিনাম লিড সনদ পেয়েছে বাংলাদেশের আরও একটি কারখানা।
ভবন নকশা, নির্মাণ ও পরিচালনায় টেকসই উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনাকারী সদস্যপদভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইউএসজিবিসির তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত পোশাক কারখানা কটন ফিল্ড বিডি লিমিটেড কারখানাটি ১১০ এর মধ্যে ৮৬ স্কোর করেছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর তথ্য অনুসারে, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এখন ২৩০টি লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (লিড) প্রত্যায়িত কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে ৯২টি প্লাটিনাম স্ট্যাটাস এবং ১২৪টি গোল্ড স্ট্যাটাস অর্জন করেছে।
শুধু তাই নয়, বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি সর্বোচ্চ রেটপ্রাপ্ত লিড সার্টিফায়েড কারখানার মধ্যে এখন বাংলাদেশেরই ৬২টি।
দেশ থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচারের তথ্য জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে ধারণা করা যায় যে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে।
রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে শনিবার ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে মোট কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব নয়। তবে ব্যাংকের মতো আনুষ্ঠানিক মাধ্যম ব্যবহার করে ১৭ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচারের কথা জানা যায়।’
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বলয় প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলের মাধ্যমে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও ব্যবসা- এই ত্রিমুখী আঁতাত মূল ভূমিকা পালন করেছে।
‘সব প্রতিষ্ঠানেই দীর্ঘ সময় ধরে দলীয়করণের চর্চা হয়েছে। গত ১৫-১৬ বছরে আমরা এর চূড়ান্ত রূপ দেখেছি। এতে আমলাতন্ত্রকে কর্তৃত্ব দিয়েছে রাজনৈতিক শক্তি আর তা বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন এজেন্সিকে। ফলে এসব জায়গায় কতটুকু পরিবর্তন আনা যাবে, তা গুরুত্বপূর্ণ।’
‘যে পরিবর্তন আসবে বলে আমরা আশা করছি তা যেন টেকসই হয়’, যোগ করেন তিনি।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত একটি দৃষ্টান্ত আছে। সেটি হলো, সিঙ্গাপুর থেকে। দেশটি থেকে ২০০৭ সালে পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের উদ্যোগ নেয়া হয় এবং পারস্পরিক আইনি সহায়তার মাধ্যমে ২০১৩ সালে ৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৯৩০ কোটি ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়েছিল।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। তবে তা অনেক কঠিন ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যেসব দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে, ওইসব দেশের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেশগুলোর এ বিষয়ে সহযোগিতার মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘অর্থ পাচার বন্ধে সাপ্লাই (যে দেশ থেকে পাচার হয়) ও ডিমান্ড (যে দেশে পাচার হয়) উভয়ের মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ থাকতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে সহযোগিতা করতে বিভিন্ন দেশে বিশেষজ্ঞদের সিন্ডিকেট আছে। সে কারণে আমরা একজন সাবেক মন্ত্রীর কয়েকটি দেশে কয়েক শ’ অ্যাপার্টমেন্টের বিষয়ে জানতে পারছি। কিন্তু এই ঘটনা বরফখণ্ডের চূড়ামাত্র, এমন পাচারকারী আরও অনেকে আছেন।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি, এনবিআর, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, বিএফআইইউ- অর্থ পাচার বিষয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের পরিষ্কার পথনকশা আছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে, শুধু মুখের কথায় কাজ হবে না। অর্থ পাচার রোধে বেশ কিছু আইনেরও প্রয়োজন আছে।’
আরও পড়ুন:সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার রাজস্ব কর্তৃপক্ষ একটি সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রণ আদেশ (এসআরও) জারি করেছে।
এর আগে খাদ্য অধিদপ্তর দেশের সামগ্রিক চালের মজুদ নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। বাংলাদেশ বাণিজ্য ও ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) চালের দাম পরিস্থিতি নিয়ে খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং এনবিআরকে আরেকটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।
দু’টি প্রতিবেদনেই চালের ওপর সব ধরনের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে।
স্থানীয় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সহায়তার জন্য গত ২০ অক্টোবর এনবিআর আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে।
মন্তব্য