বাজারের অস্থিরতা কমাতে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এখন জ্বালানি তেল, সারসহ সরকারের অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকেই কেবল ডলার দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার পাচ্ছে না।
রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিতে নতুন ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই (জুলাই-অক্টোবর) ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। এর ফলে রিজার্ভ আরও কমেছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগের চেয়ে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার কম। গত বছরের ২ নভেম্বর রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। তার আগে ১২ আগস্ট অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় কমায় ব্যাংকগুলোর ডলার সংকট আরও বেড়েছে। ব্যবসায়ী-শিল্পদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না। শুধু যাদের রপ্তানি আয় আছে ও যারা বড় ব্যবসায়ী, ব্যাংক শুধু তাদের ঋণপত্রই খুলছে। অস্বাভাবিক আমদানি ব্যয়ের লাগাম টানতে গত জুলাইয়ে কয়েকটি পণ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিন আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া বিলাসপণ্য আমদানি কমাতে শতাধিক পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরপরও ব্যাংক ঋণপত্র খুলছিল। তবে অক্টোবরে এসে ঋণপত্র খোলা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে।
আমদানি দায় কমাতে নানা উদ্যোগের পরও কাটছে না ডলার সংকট। এর মধ্যে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমছে। সেপ্টেম্বরের পর অক্টোবরেও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই দুই সূচকে নেতিবাচক (নেগেটিভ) প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এই সেপ্টেম্বরে গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে রেমিট্যান্স কমেছিল প্রায় ১১ শতাংশ। আর অক্টোবরে কমেছে ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
অন্যদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বরে গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছিল ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর অক্টোবরে কমেছে আরও বেশি ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
এদিকে এই সংকটের সময়েও সরকারি ঋণপত্রের দেনা মেটাতে কোনো ব্যাংক যেন ব্যর্থ না হয়, সে জন্য নিয়মিতভাবে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবারও কয়েকটি ব্যাংকের কাছে বিক্রি করা হয়েছে ২ কোটি ডলারের মতো। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরে বিক্রি ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে, স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এই টাকা বাজার থেকে তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে চলতি ২০২২ পঞ্জিকা বছরের এ পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানি আয় ও রেমট্যান্স হ্রাস এবং ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রির ফলে দেশে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমেই চলেছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। আগামী সপ্তাহেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ আরও কমে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে।
মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি (৭.৬২ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো তুলে নেয়া হয়। অথচ তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় দর ধরে রাখতে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ৯৭ টাকা দরে ডলার বিক্রি করছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রতি ডলার বিক্রি হয় ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায়। শুধু সরকারি এলসির দায় মেটাতে এখন ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ করে সার, জ্বালানি এবং জরুরি খাদ্যপণ্য আমদানির বিপরীতে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোকে এ ডলার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সে সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা এবং রপ্তানি বিল নগদায়নে ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা দর দিচ্ছে। ডলার কেনার গড় দরের ভিত্তিতে আমদানি দায় নিষ্পত্তি করছে। মঙ্গলবার আন্তব্যাংকে প্রতি ডলার সর্বনিম্ন ১০১ টাকা ৩৮ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১০৩ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি হয়।
গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকের এমডিদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন এবিবি এবং বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদা বৈঠক করে। তারা বর্তমান সংকট মোকাবিলায় বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোকেও ডলার সরবরাহের অনুরোধ জানায়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে সায় দেয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব উৎস থেকেই ডলার সংগ্রহ করে এলসি খুলতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারি জরুরি আমদানি ছাড়া ডলার সহায়তার সুযোগ নেই। ডলারের সরবরাহ বাড়াতে রেমিট্যান্স আয় বাড়াতে দেশের বাইরে নিজস্ব এক্সচেঞ্জ হাউস খোলা, রেমিট্যান্স পাঠাতে সার্ভিস চার্জ না নেয়াসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় এলসির দেনা পরিশোধ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। দেশে রিজার্ভ এখন যে পর্যায়ে নেমেছে, তাতে ঢালাওভাবে ডলার বিক্রি করলে ঝুঁকিতে পড়তে হবে। যে কারণে এখন আমদানি দায় কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমদানিতে তদারকি জোরদার, শতভাগ পর্যন্ত এলসি মার্জিন নির্ধারণসহ বিভিন্ন উপায়ে এলসি কমানো হয়েছে।
এর পরও চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।
সব মিলিয়ে বড় ধরনের চাপের মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। গত অর্থবছরের মতো এবারও বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) বড় ঘাটতির মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।
আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১৮ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২১-২২ অর্থবছর। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কোনো অর্থবছরে ব্যালান্স অফ পেমেন্টে এত ঘাটতি দেখা যায়নি।
তার আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে এই সূচকে ৪ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি ছিল।
এদিকে নানা পদক্ষেপের পরও আমদানির চেয়ে রপ্তানি অনেক কম হওয়ায় এই তিন মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার।
অর্থাৎ এই তিন মাসে বাংলাদেশ রপ্তানির চেয়ে ৭ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি করেছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। আর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল অর্থবছর।
‘গত অর্থবছরে লেনদেন ভারসাম্যে পাহাড়সম ঘাটতি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল’ মন্তব্য করে অর্থনীতির বিশ্লেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমদানিতে এখনও যে গতি রয়েছে, সেটা যদি অব্যাহত থাকে। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স যেভাবে কমছে, সেভাবে কমলে রিজার্ভ আরও নিচে নেমে আসবে। এবারও ব্যালান্স অফ পেমেন্ট এবং পণ্য বাণিজ্যে বড় ঘাটতি নিয়ে অর্থবছর শেষ হবে। তাতে অর্থনীতিতে চাপ আরও বাড়বে।’
বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি ও পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রাখতে যা যা করার প্রয়োজন তাই করতে হবে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে আমদানি ব্যয় কমছে। এটা ভালো। তবে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কমাটা কিন্তু উদ্বেগজনক। এখন আমাদের একটাই কাজ করতে হবে, যে করেই হোক রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়টা বাড়াতেই হবে। সে দিকেই সরকারের সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে বলে আমি মনে করি।’
আরও পড়ুন:
সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি গভীর শোকের সঙ্গে জানাচ্ছে যে, ব্যাংকের সম্মানিত স্পনসর পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান জনাব আজিম উদ্দিন আহমেদ ০১ আগস্ট ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর মৃত্যুতে সাউথইস্ট ব্যাংক পরিবার গভীরভাবে শোকাহত।
জনাব আজিম উদ্দিন আহমেদ ১৯৪০ সালের ৩০ জুন এক সম্মানিত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একজন সম্মানিত সদস্য এবং পর্ষদের রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান।
তিনি বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য জগতে একজন খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি মিউচুয়াল গ্রুপ এবং এডি হোল্ডিংস লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও, তিনি আর্লা ফুডস বাংলাদেশ লিমিটেড-এর পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।
শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ-এর একজন প্রতিষ্ঠাতা আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি এই বোর্ডের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ফাউন্ডেশনেরও একজন প্রতিষ্ঠাতা আজীবন সদস্য ছিলেন।
শিক্ষা ও সমাজসেবায়ও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি নিজ জিলা ফেনীতে প্রতিষ্ঠা করেছেন মসজিদ,মাদ্রাসা | এছাড়াও বিভিন্ন সমাজ হিতৈষী কাজে জড়িত ছিলেন তার উদার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে |
সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি. পরিবার জনাব আজিম উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে অর্থবছরের শেষ দিন আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের সব ব্যাংকের শাখাগুলোতে ব্যাংকিং লেনদেন চলবে।
সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৩০ জুন সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরের চেয়ে এবার বেশি রাজস্ব আদায় হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।
সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে নারী কেলেং্কারীসহ দুর্নীতি, অর্থপাচার, শেয়ার কারসাজি ও যৌন হয়রানিসহ একাধিক অভিযোগ এনেছেন ব্যাংকের এক গ্রাহক
গতকাল বুধবার (২৫ জুন) দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এসব অভিযোগ তুলে লিখিত আবেদন জমা দেন শিমুল সর্দার নামে এক গ্রাহক। একই অভিযোগে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং আর্থিক খাত বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার কাছেও চিঠি পাঠিয়েছেন।
দুদকে দেওয়া ১০ পাতার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আলমগীর কবির দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ— তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নামে-বেনামে ঋণ দিয়েছেন, চলতি ঋণের সুদ মওকুফ করেছেন এবং অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে একক সিদ্ধান্তে ঋণ অনুমোদন করেছেন। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে বর্তমানে সাউথইস্ট ব্যাংকের হাজার কোটি টাকার আমানত ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবির ব্যাংকটির অর্থ সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনায় একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেছিলেন। ব্যাংকের প্রতিটি বড় সিদ্ধান্ত—যেমন নতুন শাখা খোলা, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, বুথ বসানো, সফটওয়্যার কেনা ইত্যাদিতে তার একক নিয়ন্ত্রণ ছিল। এসব কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই ছিল তার আত্মীয়স্বজন বা ঘনিষ্ঠজনদের মালিকানাধীন।
সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির গুরুতর অভিযোগও তুলেছেন অভিযোগকারী। অভিযোগে বলা হয়, আলমগীর কবির একাধিক নারী কর্মকর্তাকে নিজের অফিসে ডেকে নিয়ে তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে হয়রানি করেছেন। এসব ঘটনার কিছু প্রমাণ ইতোমধ্যে ভুক্তভোগীদের কাছে রয়েছে এবং তারা আইনগত পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন। এছাড়া তিনি নিজের পছন্দের কিছু নারীকে ব্যাংকের অধীনস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘গ্রিন স্কুল’ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড’-এ চাকরি দিয়েছেন বলেও অভিযোগে জানান।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, শেয়ার কারসাজির অভিযোগে আলমগীর কবিরকে ইতোমধ্যে ১২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তার নেতৃত্বে সাউথইস্ট ব্যাংকের ২৩২ কোটি টাকা বে লিজিংয়ে বিনিয়োগ করা হয়, যা বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৪-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড বর্তমানে আর্থিকভাবে এতটাই দুর্বল যে, প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকের পাওনা ফেরত দিতে পারছে না।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বে লিজিংয়ের পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়ায় ১৭২ কোটি টাকায়। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান সুরাইয়া বেগম—যিনি আলমগীর কবিরের স্ত্রী—তাঁর মাধ্যমে ব্যাংকটির সঙ্গে বে লিজিংয়ের লেনদেন ‘ব্যাংকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে লেনদেন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। এতে করে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ২৭ (১-খ) ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, আলমগীর কবির ব্যাংকের ফাউন্ডেশন ও শিক্ষা বিভাগের তহবিল থেকেও অর্থ তুলে এনে বে লিজিংয়ে সরবরাহ করেছেন। ব্যাংকের মেয়াদি আমানত ও কলমানির অর্থ আটকে আছে ওই প্রতিষ্ঠানটিতে। বারবার চিঠি পাঠিয়েও কোনো অর্থ ফেরত পায়নি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। শুধু মূলধন নয়, প্রতিষ্ঠানটি সুদও পরিশোধ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর ২৯ তম বার্ষিক সাধারন সভা ২৪ জুন ২০২৫ইং তারিখে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ২০২৪ইং সালের নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন এবং ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন করা হয়। পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জনাব মোস্তফা কামাল সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন কোম্পানীর পরিচালক মিসেস বিউটি আক্তার, ব্যারিষ্টার হাসান রাজিব প্রধান, জনাব মনজুর মো: সাইফুল আজম এফসিএমএ, মিসেস তাহমিনা বিনতে মোস্তফা, জনাব তায়েফ বিন ইউসুফ, মিসেস তানজিমা বিনতে মোস্তফা, জনাব ওয়াশিকুর রহমান, জনাব তানভীর আহমেদ মোস্তফা , মিসেস সামিরা রহমান, মিসেস তাসনিম বিনতে মোস্তফা, জনাব মোঃ বেলায়েত হোসেন ভূইয়া, জনাব মোহাম্মদ সাইদ আহমেদ রাজা এবং মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সানা উল্লাহ, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা শেখ বিল্লাল হোসেন এফসিএ, কোম্পানীর অডিটর এ.কে.এম. আমিনুল হক এফসিএ, সিনিয়র পার্টনার মেসার্স এ.হক এন্ড কোং চাটার্ড একাউন্টেন্টস এবং আবদুর রহিম মিয়া, এফসিএ, পার্টনার মেসার্স ইসলাম জাহিদ এন্ড কোং, চাটার্ড একাউন্টেন্টস, মোঃ ফিরোজুল ইসলাম সিনিয়র এক্সিঃ ভাইস প্রেসিডেন্ট (অর্থ ও হিসাব) ও কোম্পানী সচিব মো: মাসুদ রানা এবং কোম্পানীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ারহোল্ডার সভায় সংযুক্ত ছিলেন।
মেঘনা ব্যাংক পিএলসি’র ১২তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ২৩ জুন ২০২৫, সোমবার রাজধানীর মহাথালীতে অবস্থিত ম্যাডোনা টাওয়ারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের সম্মানিত চেয়ারপার্সন মিসেস উজমা চৌধুরী।
বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান জনাব তানভীর আহমেদ, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান জনাব মো. আলী আক্তার রেজভী, এফসিএ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান জনাব মোহাম্মদ মামুনুল হক। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক জনাব রজব আলী, জনাব এম. নজরুল ইসলাম এবং জনাব হাবিবুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব কাজী আহ্সান খলিল এবং ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি সচিব জনাব সজিব কুমার সাহা, এফসিএ এবং ব্যাংকের সম্মানিত শেয়ারহোল্ডারবৃন্দ।
সভায় ব্যাংক নিজেদের পরিষেবা বৃদ্ধি, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি প্রচারণা, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখা এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
সম্প্রতি সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি. বরিশাল জেলায় অবস্থিত বিভিন্ন স্কুল থেকে আগত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকদের নিয়ে লিড ব্যাংক হিসেবে ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা এর নির্দেশনায় “স্কুল ব্যাংকিং কনফারেন্স-২০২৫” আয়োজন করেছে।
উক্ত কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব ইমতিয়াজ আহমেদ মাসুম, নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব), বাংলাদেশ ব্যাংক, বরিশাল এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব আবিদুর রহমান চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব), সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি., জনাব মোঃ আলী হোসেন, অতিরিক্ত পরিচালক, ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা, জনাব মোঃ হারুনুর রশিদ, জেলা শিক্ষা অফিসার, বরিশাল এবং সম্মানিত অতিথি জনাব মোঃ মাহাবুব-উল আলম, উপপরিচালক, ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা।
উক্ত কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন সাউথইস্ট ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মোহাম্মদ রাশেদুল আমিন। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মধ্য হতে উক্ত কনফারেন্সে জাহানারা ইসরাইল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বরিশাল থেকে রাবিয়া কামাল (দশম শ্রেণী) এবং বরিশাল জেলা স্কুল, বরিশাল থেকে মোঃ হাসনাইন বিন কবির (দশম শ্রেণী) বক্তব্য রাখেন।
উক্ত কনফারেন্সে বরিশাল জেলার ৪৫ টি তফসিলী ব্যাংকের ৪৫ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্কুল থেকে ১৮০ জন শিক্ষার্থী ও ৪৫ জন শিক্ষক এবং অতিথি সহ সর্বমোট ৩৫০ জন অংশগ্রহণ করেন। কনফারেন্সে বক্তারা শৈশব থেকেই সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও দায়িত্বশীল অর্থ ব্যবস্থাপনার অভ্যাস গড়ে তোলা ও আধুনিক ব্যাংকিং প্রযুক্তির সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের পরিচিত করানোর লক্ষ্যে স্কুল ব্যাংকিং এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন।
এছাড়াও স্কুল ব্যাংকিং এর উপর নির্মিত ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী, র্যালী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিক্ষার্থীদের জন্য কুইজ প্রতিযোগিতা আয়োজনের মধ্য দিয়ে কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
১৬ জুন, ২০২৫ তারিখে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি. এর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের ৪০তম সভা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়, গুলশান-১, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব মুঃ ফরীদ উদ্দীন আহমদ। সভায় পর্ষদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান জনাব মোঃ হুমায়ুন কবীর, স্বতন্ত্র পরিচালক ড. শহিদুল ইসলাম জাহীদ, জনাব মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জনাব মোঃ হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সর্বজনাব শফিউদ্দিন আহমেদ এবং মোহাম্মদ ইকবাল কার্যপোলক্ষ্যে সভায় যোগদান করেন। সভায় ব্যাংকের ব্যবসা বাণিজ্য, আমানত ও রেমিট্যান্স সংগ্রহ বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ আদায়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।
মন্তব্য