বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরিতে দি ফেডারেশন অফ সৌদি চেম্বার্স অফ কমার্সের (এফএসসিসি) সঙ্গে যৌথ সমোঝোতা চুক্তিতে সই করেছে দেশে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
সোমবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের একটি হোটেলে এ চুক্তি সই হয়।
বাংলাদেশের পক্ষে এফবিসিসিআইয়ের সহ সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন এবং সৌদি আরবের পক্ষে এফএসসিসির সহ সভাপতি প্রকৌশলী তারিক আল হায়দারী এতে সই করেন।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সফর করছে। সমঝোতা চুক্তি সইয়ের সময় দুই দেশের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গাজার নিয়ন্ত্রক দল হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রথম দিনে কারাবন্দি ৯০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল।
আল জাজিরা জানায়, স্থানীয় সময় রোববার রাত একটার দিকে কারামুক্ত হন এসব ফিলিস্তিনি। ওই সময় অশ্রুসিক্ত নয়নে, আলিঙ্গনে তাদের বরণ করেন অপেক্ষারত ফিলিস্তিনিরা।
সংবাদমাধ্যমটির খবরে জানানো হয়, ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরের এসব কারামুক্ত মানুষকে বরণ করতে আসেন তাদের স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সমর্থকরা।
মুক্ত ফিলিস্তিনিদের বহনকারী রেড ক্রসের বাস পশ্চিম তীরের রামাল্লায় পৌঁছালে তাদের স্বাগত জানান হাজারো জনতা। যদিও উদযাপনের অনুমতি ছিল না ইসরায়েলের তরফ থেকে।
ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৬৯ নারী এবং ২১ কিশোর রয়েছে, যাদের কারও কারও বয়স ১২ বছর। তাদের সবাই পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের বাসিন্দা।
ইসরায়েলের পাল্টা হামলা শুরুর ১৫ মাস পর রোববার যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়।
আল জাজিরা জানায়, যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় মুক্তি প্রতীক্ষিত তিন জিম্মির তালিকা ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করে গাজার নিয়ন্ত্রক দল হামাস। এর পরই যুদ্ধবিরতি শুরু হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, ইসরায়েল ও হামাস সম্মত যুদ্ধবিরতি স্থানীয় সময় রোববার বেলা সোয়া ১১টা থেকে কার্যকর হয়।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের পাল্টা হামলা শুরুর ১৫ মাস পর রোববার যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়।
আল জাজিরা জানায়, যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় মুক্তি প্রতীক্ষিত তিন জিম্মির তালিকা ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করে গাজার নিয়ন্ত্রক দল হামাস। এর পরই যুদ্ধবিরতি শুরু হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, ইসরায়েল ও হামাস সম্মত যুদ্ধবিরতি স্থানীয় সময় রোববার বেলা সোয়া ১১টা থেকে কার্যকর হবে।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় আরও জানায়, রোববার বেলা দুইটার পর তিন জিম্মি মুক্ত হবেন। জীবিত আরও চার নারী জিম্মিকে সাত দিনের মধ্যে মুক্তি দেওয়া হবে।
আল জাজিরার খবরে উল্লেখ করা হয়, মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্র কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মাজেদ আল-আনসারি বলেন, ‘গাজায় যুদ্ধবিরতি কখন শুরু হবে, সে সংক্রান্ত খবরের বিষয়ে আমরা নিশ্চিত করছি যে, আজ মুক্ত হতে যাওয়া তিন জিম্মির নাম ইসরায়েলি পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
চুক্তি অনুযায়ী, গ্রিনিচ মান সময় সাড়ে ছয়টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তার আগে নেতানিয়াহু বলেন, হামাস রোববার মুক্ত হতে চলা জিম্মিদের তালিকা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে না।
দুই পক্ষের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম দিনে যুদ্ধ বন্ধের পাশাপাশি তিন ইসরায়েলি জিম্মি এবং ৯৫ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খৌদারি জানান, হাজারো ফিলিস্তিন এখন উত্তর গাজার জাবালিয়া এবং দক্ষিণ গাজার রাফাহর মতো এলাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যেগুলোতে এতদিন তাদের যেতে দেওয়া হয়নি।
যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে রোববার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১৯ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৩৬ জন আহত হয় বলে জানায় উপত্যকার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ।
হামাসের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে চালানো হামলায় কমপক্ষে ১ হাজার ১৩৯ ইসরায়েলি নিহত হন। ওই দিন জিম্মি করা হয় দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে।
ওই হামলার জবাবে একই দিন গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গত ১৫ মাস ধরে দেশটির হামলায় কমপক্ষে ৪৬ হাজার ৮৯৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও এক লাখ ১০ হাজার ৭২৫ জন আহত হয়।
আরও পড়ুন:ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের গাজার নিয়ন্ত্রক দল হামাসের মধ্যে রোববার গ্রিনিচ মান সময় সাড়ে ৬টা থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় সময় শনিবার ভোরে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা একটি চুক্তি অনুমোদন করায় গাজায় যুদ্ধবিরতির পথ প্রশস্ত হয়।
এ পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি সহজতর করা। একই সঙ্গে দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে দুই পক্ষের মধ্যে চলা মারাত্মক ও সবচেয়ে বিধ্বংসী যুদ্ধ বন্ধ করা।
সীমিত আকারের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর পূর্ণ মন্ত্রিসভার বৈঠক করে সরকার যুদ্ধবিরতির সময় নিশ্চিত করে।
সাধারণত জরুরি অবস্থা দেখা না দিলে সীমিত নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় ইসরায়েলি সরকারের কার্যক্রম স্থগিত রাখ হয়।
মধ্যস্থতাকারী কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এ যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয় এবং গত বুধবার প্রাথমিকভাবে তা ঘোষণা করা হয়।
তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শেষ মুহূর্তের চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে হামাসের জটিলতাকে দায়ী করে এটি চূড়ান্ত করতে আরও দেরি হরেন।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা শুক্রবার চুক্তিটি অনুমোদনের সুপারিশ করে এটি এগিয়ে নেয়।
চুক্তির প্রথম ধাপের অংশ হিসেবে গাজায় আটক তিন ইসরায়েলি নারী ও ৯৫ ফিলিস্তিনি বন্দিকে রোববার মুক্তি দেওয়া হবে।
চ্যানেল১২-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৈঠকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে জানিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর ইসরায়েলে বন্ধ থাকা অস্ত্র সরবরাহ শুরু হবে।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা যদি চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ে পৌঁছাতে না পারি, তবে যুদ্ধের জন্য আমাদের কাছে অতিরিক্ত সরঞ্জাম থাকবে না।’
এদিকে চুক্তি লঙ্ঘন না করতে ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছেন ট্রাম্প।
দুই কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোট্রিচ এ চুক্তির বিরোধিতা করেছেন এবং চুক্তির প্রথম ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পর গাজায় পুনরায় যুদ্ধ শুরু করার জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি দাবি করেন।
চুক্তি অনুযায়ী এ সময়ে হামাস প্রথম ধাপে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে।
চুক্তির পূর্ণ শর্তাবলীর প্রতি তাদের অঙ্গীকার নিশ্চিত করার এক দিন পর শুক্রবার হামাস এ কথা জানায়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আইডিএফ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর একটি অভূতপূর্ব আন্তসীমান্ত হামলার প্রতিক্রিয়ায় হামাসকে ধ্বংস করতে অভিযান শুরু করে। ইসরায়েলে হামাসের ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। আর ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নেওয়া হয়েছিল।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৬ হাজার ৮৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে ২৩ লাখ জনসংখ্যার বেশির ভাগই বাস্তুচ্যুত হন।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, মানুষ বিভিন্ন চাহিদার সহায়তা পেতে সংগ্রাম করছে। বিশেষ করে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও নিরাপদ আশ্রয়ের তীব্র ঘাটতি রয়েছে।
ইসরায়েল বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর জিম্মি হওয়াদের মধ্যে ৯৪ জন এখনও হামাসের হাতে বন্দি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৪ জন বেঁচে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া যুদ্ধের আগে অপহৃত চার ইসরায়েলি রয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
তার ভাষ্য, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের একটি ‘সামগ্রিক সমাধান’ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে হওয়া চুক্তি সম্পর্কে পুতিন বলেন, ‘আমরা আশা করি এটি মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি এবং (মধ্যপ্রাচ্য) অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতায় অবদান রাখবে।’
তিনি ক্রেমলিনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে আলোচনার সময় উল্লেখ করেন, ‘একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের একটি সামগ্রিক সমাধানের প্রচেষ্টা দুর্বল না করা গুরুত্বপূর্ণ।’
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এবং তার আসন্ন প্রশাসন চাপ সৃষ্টি না করলে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তি কখনোই হতো না।
ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি রোববার থেকে কার্যকর হবে। এতে ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময়ের সঙ্গে ইসরায়েলি জিম্মি বিনিময় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পরে যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তির শর্তাবলী চূড়ান্ত করা হবে।
দ্বিতীয় মেয়াদে অভিষেকের চার দিন আগে ট্রাম্প ড্যান বোঙ্গিনো শোতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফসহ তার দলের চাপ ছাড়া আলোচনা কখনোই চূড়ান্ত হতো না।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা যদি এই চুক্তির সঙ্গে জড়িত না থাকতাম, তাহলে চুক্তি কখনোই হতো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চুক্তির গতিপথ পরিবর্তন করেছি এবং তা দ্রুতই করেছি। সত্যি বলতে আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে এটা একটা ভালো কাজ।’
চুক্তির শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা শুক্রবার বৈঠকে বসবে। সোমবার ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেকের আগে রোববার থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হবে।
ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি চুক্তির কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিন্দা করেছেন এবং তাকে ‘অকৃতজ্ঞ’ বলেছেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি কিছুই করেননি। আমি যদি এটা না করতাম বা আমরা যদি না জড়াতাম, তাহলে জিম্মিরা কখনোই বেরিয়ে আসতে পারত না।’
বাইডেন গত বছরের মে মাসে শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রস্তাব করেছিলেন, যা চলতি সপ্তাহে আলোর মুখ দেখবে।
আরও পড়ুন:বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরে গাজার বিধ্বস্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠনে কমপক্ষে ১০ বিলিয়ন (এক হাজার কোটি) ডলার বা আরও বেশি অর্থের প্রয়োজন হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাথমিক এ হিসাব বৃহস্পতিবার তুলে ধরা হয় বলে জানায় বার্তা সংস্থা এএফপি।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন সাংবাদিকদের বলেন, ‘গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে অনেক বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাজার শুধু স্বাস্থ্য খাত পুনর্গঠনের জন্য আমার দলের প্রাথমিক অনুমান হলো প্রথম দেড় বছরের জন্য তিন বিলিয়ন ডলারেরও বেশি এবং তারপর পাঁচ থেকে সাত বছরের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।’
পিপারকর্ন বলেন, ‘আমরা সবাই ভালো করে জানি যে, গাজার ধ্বংসযজ্ঞ অকল্পনীয়। আমি আমার জীবনে বিশ্বের অন্য কোথাও এমন পরিস্থিতি দেখিনি।’
এদিকে ডব্লিওএইচওর প্রধান টেডরোস আধানম গেব্রিয়েসুস এরই মধ্যে বলেন, ‘গাজার ৯০ শতাংশ হাসপাতাল ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে।’
মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে বুধবার ঘোষণা করা হয় যে, ইসরাইল এবং হামাস অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে। একে ‘সেরা খবর’ বলে উল্লেখ করেছেন ডব্লিউএইচওর প্রধান।
গেব্রিয়েসুস আশা প্রকাশ করেছেন, এ চুক্তি ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সম্পর্কের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটাবে।
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই এ খবরকে অত্যন্ত স্বস্তির সাথে স্বাগত জানাই। কিন্তু দুঃখও আছে যে, চুক্তিটি এত দেরিতে হতে যাচ্ছে যখন সংঘর্ষে হাজার হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছেন।'
মধ্যস্থতাকারীরা যদিও বলেছেন, চুক্তিটি ১৯ জানুয়ারি রোববার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলার পর গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। টানা ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলে ইসরায়েলের হামলা। এরই মধ্যে হামলায় গাজায় ৪৬ হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী গাজায় নিহত শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার।
আরও পড়ুন:প্রায় ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা গাজা যুদ্ধে ইসরায়েল সামরিক লক্ষ্য অর্জনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা খলিল আল-হাইয়া।
স্থানীয় সময় বুধবার ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পর্কে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন হামাস প্রতিনিধি দলে নেতৃত্বদানকারী খলিল।
খলিল আল-হাইয়া বলেন, যুদ্ধের সময় গাজায় দুর্ভোগের জন্য ইসরায়েলকে কখনও ‘ক্ষমা করবে না’ হামাস।
গাজা থেকে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়াফা এ খবর জানায়।
তিনি বলেন, ‘গাজার সব ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে প্রতিটি রক্তের ফোঁটা এবং প্রতিটি অশ্রু, বেদনা ও নিপীড়নের জন্য বলছি, আমরা ভুলব না এবং ক্ষমা করব না।’
ইসরায়েলি বাহিনী গাজা ভূখণ্ডে তাদের সামরিক লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে বলেও মনে করেন হামাসের জ্যেষ্ঠ এ নেতা।
যুদ্ধবিরতিতে হামাসের সব শর্ত পূরণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইজ্জত আল-রিশেক।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের শুরুতে হামাস যে সমস্ত শর্ত দিয়েছিল, তা পূরণ করেই চুক্তি হয়েছে। শর্তগুলো ছিল ইসরায়েলি বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, বাস্তুচ্যুতদের বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া এবং গাজায় যুদ্ধের স্থায়ী অবসান।’
যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তের ব্যাপারটিকে ফিলিস্তিনি জনগণের ধৈর্যের ফল হিসেবে উল্লেখ করেছে হামাস।
সংগঠনটির ভাষ্য, ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি আমাদের মহান ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচল ধৈর্য এবং গাজা উপত্যকায় ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে আমাদের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের ফল। এটা আমাদের জনগণের মুক্তির আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নের পথকে প্রশস্ত করেছে।’
যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে মধ্যস্থতা করছে তিনটি দেশ কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় বুধবার রাতে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল-থানি দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেন।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির যে চুক্তি হয়েছে, তা ১৯ জানুয়ারি, রোববার থেকে কার্যকর হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস, যাদের মধ্যে সব নারী, শিশু ও ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষরা রয়েছেন।
গাজার জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েল-গাজা সীমান্তের ৭০০ মিটারের বেশি দূরের এলাকায় ইসরায়েল তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করবে।
ইসরায়েল বেসামরিক নাগরিকদের গাজার উত্তরে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে দেবে এবং প্রতিদিন ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেবে।
শর্ত পূরণ হলে চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিনিময়ে অবশিষ্ট সব জীবিত জিম্মিদের মুক্তি ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের বিষয় রয়েছে।
তৃতীয় ধাপে অবশিষ্ট মৃতদেহগুলোর ফেরত দেওয়া এবং গাজা পুনর্গঠনের কাজ শুরুর কথা রয়েছে। এ কাজ মিসর, কাতার ও জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য