চেক নগদায়নের আগে শেয়ার কেনা যাবে না বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্দেশনা পাল্টানোর সিদ্ধান্ত হলেও দরপতন থামেনি পুঁজিবাজারে।
নতুন ইস্যু হিসেবে সামনে এসেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার আশায় সংস্থাটির সঙ্গে সরকারের বৈঠক ইস্যু।
আন্তর্জাতিক এই দাতা সংস্থাটি পুঁজিবাজারে কোনো ধরনের বাইরের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে। বর্তমানে দরপতন ঠেকাতে ‘ফ্লোর প্রাইস’ নামে সব শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দিয়ে যে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, সেটি নিয়ে আইএমএফ কথা তুলতে পারে- এ নিয়ে শঙ্কার কথা বলাবলি হচ্ছে।
গত ১১ অক্টোবর চেক নিয়ে নির্দেশনা জারির পর থেকে পুঁজিবাজারে নতুন করে যে সংকট দেখা দিয়েছিল, সেটি আমলে নিয়ে ৩০ অক্টোবর এক বৈঠকে নির্দেশনা পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।
নিউজবাংলায় সেদিনই এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম জানান, চেক ব্যাংকে জমা না দিয়ে জালিয়াতির যে ৩৭টি প্রমাণ তারা পেয়েছেন, সেসব অভিযোগে শাস্তির বিধান রেখে এই নির্দেশনা সংশোধন করে দু-এক দিনের মধ্যে নতুন আদেশ জারি হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্তটি বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বস্তিকর হলেও তার আভাস সেই সোমবারের লেনদেনে। প্রায় পৌনে তিন শ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইসে হাতবদল হতে থাকার মধ্যে বাকি যেসব কোম্পানি আছে তার মধ্যে দর হারিয়েছে ৮৬টি কোম্পানি। বেড়েছে ২৯টির দর। ২৩২টি কোম্পানি আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে। আরও ৩৭টি কোম্পানি বা মিউচুয়াল ফান্ডের একটি শেয়ার বা ইউনিটও হাতবদল হয়নি।
লেনদেন নেমে এসেছে আট শ কোটি টাকার নিচে। হাতবদল হয়েছে ৭৬৯ কোটি ২৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
সকালে এদিন লেনদেন শুরু হয় সূচক বাড়ার মধ্য দিয়েই। প্রথমেই ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৬ পয়েন্ট বেড়ে গেলেও পরে তা ক্রমাগত কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ২৬ পয়েন্ট কমে সূচক নেমে যায় ৬ হাজার ৩০৭.৬৮ পয়েন্টে, যা গত ২৪ অক্টোবরের প্রায় সমান।
এর চেয়ে কম সূচক ছিল গত ২৪ অক্টোবর। সেদিন সূচকের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ২৮০ পয়েন্ট। তবে সে সময় পুঁজিবাজার তলানি থেকে উঠে এসে বিনিয়োগকারীদের আশা দেখাচ্ছিল।
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আইএমএফ কী নিয়ে আলোচনা
বিনিয়োগকারী ফিদুল বিশ্বাস বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আইএমএফ নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, আইএমএফ খেলাপি ঋণ পরিশোধে কঠোর নীতি অনুসরণের ওপর জোর দিচ্ছে। এতে করে অনেক কোম্পানির ওপর চাপ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা বিচলিত। তারা এই বিষয়টা ভাবছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইএমএফের হিসাব পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভও কমে আসবে। যেটা একটা শঙ্কার কারণ। শোনা যাচ্ছে, বিদেশিরা ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে চলে যাচ্ছে।
তবে আইএমএফের সফরে আশাবাদী আরেকটি পক্ষ। বিনিয়োগকারী একরামুল হক ফাহাদ বলেন, ‘আইএমএফের বাংলাদেশ সফর নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক-ইতিবাচক, দুই ধরনের আলোচনাই হচ্ছে। আইএমএফের সঙ্গে বিএসইসির বৈঠক হবে সম্ভবত ৭ তারিখে। পুঁজিবাজারের জন্য ভালো কিছু হবে। শোনা যাচ্ছে, আইএমএফের মাধ্যমে ভালো বিনিয়োগ আসতে পারে। বিষয়টা আশা জাগাচ্ছে।’
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইএমএফের সফর নিয়ে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে তো একটা আলোচনা আছেই। আগেরবার যখন এসেছিল তখন তারা মার্কেট ম্যানুপুলেশন নিয়ে আলোচনা করেছিল। কিন্তু এবার কী নিয়ে আলোচনা করবে তা আমরা জানি না।
‘তবে ধারণা করা হচ্ছে যে, ফ্লোর প্রাইস নিয়ে বা তুলে দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে। শোনা যাচ্ছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন মাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্স করেছে, যাতে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হয় এবং তারা শেয়ার বিক্রি করতে পারে। শেয়ার মার্কেটকে বলা হয়, লিক্যুইড অ্যাসেট। মার্কেটের সেন্সই হলো প্রয়োজনমতো টাকায় রূপান্তর করা। কিন্তু ফ্লোর প্রাইসের কারণে শেয়ার বিক্রি করতে পারা যাচ্ছে না। এতে মার্কেটের সেন্স নষ্ট হয়।
‘আবার অনেকেই চায় না ফ্লোর প্রাইস উঠুক। এতে তাদের লোকসানের আশঙ্কা থাকে। আমি ফ্লোর প্রাইস আরোপের বিপক্ষে ছিলাম। এখন আমিই বলব যে, এটা এখন তুলে দেয়া ঠিক হবে না।’
বেক্সিমকো-ওরিয়ন ও স্বল্প মূলধনিতে সর্বনাশ
গত ২৮ জুলাই সূচক ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যাওয়ার পর বিএসইসি করোনাকালের মতোই পতন ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইসে বেঁধে দেয়। পর দিন থেকে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়ে উত্থানে ফেরার ইঙ্গিত দেয়।
তবে করোনাকালের মতো এবারের উত্থান ভারসাম্য মূল্য ছিল না। বড়জোর ৩০টি কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে সূচক তরতর করে বাড়তে থাকলেও বেশির ভাগ কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসেই গড়াগড়ি খেতে থাকে।
এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা যত বাড়ে, ফ্লোরের কোম্পানির সংখ্যা তত বেশি বাড়তে থাকে।
সূচক বেড়েছে মূলত বেক্সিমকো ও ওরিয়ন গ্রুপের কোম্পানিগুলোর কারণে। এর সঙ্গে স্বল্প মূলধনি বেশ কিছু কোম্পানির দর অল্প সময়ে দেড় বা দ্বিগুণ হয়েছে। বড় মূলধনি বসুন্ধরা পেপার দরও তাই। নতুন তালিকাভুক্ত জেএমআই সিরিঞ্জ, সি পার্ল হোটেল, ইস্টার্ন হাউজিংয়ের শেয়ারদরে লাফ দেয়ারও কোনো ব্যাখ্যা ছিল না।
এরই মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের সবচেয়ে বড় দুই কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেড উত্থানের পর ফের ফ্লোরে ফিরেছে, শেয়ারপ্রতি বিনিয়োগকারীর লোকসান ২০ থেকে ৩০ টাকা, বেক্সিমকো ফার্মাও ফ্লোরের কাছাকাছি।
ওরিয়ন গ্রুপের ওরিয়ন ফার্মা, বিকন ফার্মা ও কোহিনূর কেমিক্যালসের শেয়ারদরে অস্বাভাবিক উত্থানের শেষে পতনের যে গতি, তাতে ব্যাপকভাবে আর্থিক লোকসানের পাশাপাশি টাকা আটকে যাওয়াও লেনদেনের গতি কমার কারণ।
এই কোম্পানিগুলো এখন সূচকের পতন ঘটাচ্ছে না কেবল, লেনদেনের গতি কমার কারণ হয়েও দাঁড়িয়েছে।
ওরিয়ন ফার্মার দর যখন ১৪০ থেকে ১৫৬ টাকার মধ্যে ছিল, তখন এক দিনে আড়াই শ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়েছে। সেই লেনদেন এখন নেমেছে ৪০ কোটির নিচে। যে বেক্সিমকো লিমিটেডে দিনে দুই শ কোটি টাকার বা তার চেয়ে বেশি লেনদেন স্বাভাবিক প্রবণতায় পরিণত হয়েছিল, সেই কোম্পানির লেনদেন নেমেছে ৮ কোটি ১৪ লাখ টাকায়।
অর্থাৎ কয়েক হাজার কোটি টাকা কেবল বেক্সিমকো লিমিটেড ও ওরিয়ন ফার্মাতেই আটকে গেছে। কোহিনূর কেমিক্যালসের সর্বোচ্চ দর থেকে বর্তমান দর কম ২২০ টাকা, ওরিয়ন ফার্মা সর্বোচ্চ দর থেকে কমেছে ৪৫ টাকা, বিকন ফার্মা কমেছে ৮০ টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশন কমেছে ৩১ টাকা।
গত দুই মাসের সর্বোচ্চ দর থেকে বেক্সিমকো লিমিটেড কমেছে ৩২ টাকা, বেক্সিমকো ফার্মা কমেছে ৫৫ টাকার বেশি।
এই দুটি গ্রুপের মধ্যে বিকন ফার্মার শেয়ার দিনের দরপতনের শীর্ষ তালিকায় ছিল। এই তালিকায় বাকি কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ ছিল অস্বাভাবিক উত্থান হওয়া স্বল্প মূলধনি ও নতুন কিছু কোম্পানি।
নতুন তালিকাভুক্ত নাভানা ফার্মা শেয়ার প্রতি ১ টাকা ১০ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণার জেরে আগের দিন পুঁজিবাজারে শেয়ারদর বেড়েছিল ৭৮ শতাংশ। সেটির দর এদিন কমেছে সবচেয়ে বেশি ৯.৩৪ শতাংশ।
এ ছাড়া মনোস্পুল পেপারের দর ৮.৭৪ শতাংশ, সেনা কল্যাণ ইনস্যুরেন্সের দর ৮.৬০ শতাংশ, পেপার প্রসেসিংয়ের দর ৭.৩৪ শতাংশ, বিএনআইসিএলের দর ৬.৬৭ শতাংশ, জেমিনি সি ফুডের দর ৬.৬৫ শতাংশ, বিকন ফার্মার দর ৬.১৭ শতাংশ, মেট্রো স্পিনিংয়ের দর ৫.৬৯ শতাংশ এবং আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের দর কমেছে ৫.৩৫ শতাংশ।
শীর্ষ দশের বাইরে আরও চারটি কোম্পানির দর ৫ শতাংশের বেশি, ৫টি কোম্পানির দর ৪ শতাংশের বেশি, ১২টি কোম্পানির দর ৩ শতাংশের বেশি, ১২টির দর ২ শতাংশের বেশি, ১৭টির দর ১ শতাংশের বেশি কমেছে।
সূচক ফেলেছে মূলত ওরিয়ন গ্রুপ
সবচেয়ে বেশি ১১ দশমিক ৯০ পয়েন্ট সূচক কমেছে বিকন ফার্মার দরপতনে। কোম্পানিটির দর কমেছে ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট কমেছে বেক্সিমকো ফার্মার কারণে। শেয়ার প্রতি দাম কমেছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ।
ওরিয়ন ফার্মার শেয়ারদর ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে ২ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট।
এ ছাড়াও সোনালী পেপার, নাভানা ফার্মা, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, কোহিনূর কেমিক্যাল, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, মনোস্পুল ও ইস্টার্ন ক্যাবলসের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ৩০ দশমিক ২৮ পয়েন্ট।
এর মধ্যে ওরিয়নের তিন কোম্পানির কারণেই কমেছে ১৫.৯৭ পয়েন্ট।
বিপরীতে ৪ দশমিক ৩২ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে সি-পার্ল। এদিন শেয়ারটির দর বেড়েছে ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ।
বসুন্ধরা পেপারের দর ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৫২ পয়েন্ট।
ইউনিক হোটেল সূচকে যোগ করেছে ২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এর বাইরে সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে জেনেক্স ইনফোসিস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, এডিএন টেলিকম, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, জেএমআই হসপিটাল, আমরা টেকনোলজিস ও প্রাইম ব্যাংক।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট।
দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০
আগের দিনের মতোই ১০ শতাংশ দরবৃদ্ধি হয়েছে তালিকার শীর্ষে থাকা চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে ১২ টাকা ১০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ১১ টাকা।
সি-পার্লের দর বেড়েছে ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। শেয়ারটি ১৭৩ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে ১৮৮ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে।
৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ দর বেড়ে বসুন্ধরা পেপারের শেয়ার ৯১ টাকা ৮০ পয়সা লেনদেন হয়েছে। আগের দর ছিল ৮৬ টাকা।
এ ছাড়া তালিকায় থাকা ৬টি কোম্পানি যথাক্রমে জেনেক্স ইনফোসিস, এডিএন টেলিকম, আমরা টেকনোলজিস, ইনফরমেশন সার্ভিসেস, ইউনিক হোটেল ও রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি।
আর দশম স্থানে থাকা শমরিতা হসপিটালসহ ৭টি কোম্পানির দর বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি। চারটি কোম্পানির দর বেড়েছে ১ শতাংশের বেশি। আর এর চেয়ে কম অর্থাৎ ১ শতাংশের নিচে দর বেড়েছে ৯টি কোম্পানির।
শীর্ষ ৫ খাত যেমন
শীর্ষে অবস্থান করছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। আগের দিনের মতোই এক মাত্র এই খাতটিতেই শতকোটির ওপরে লেনদেন হয়েছে। হাতবদল হয়েছে ১০৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ১৬৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ১৮টির লেনদেন হয়েছে আগের দরে। আর দরপতন হয়েছে ১২টির।
দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে কাগজ ও মুদ্রণ খাত। লেনদেন হয়েছে ৯৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ৪টি কোম্পানির দরপতনের বিপরীতে ১টি করে কোম্পানির লেনদেন হয়েছে দরবৃদ্ধি ও আগের দরে।
৯৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা লেনদেন করে তৃতীয় অবস্থানে চলে এসেছে প্রযুক্তি খাত। ৫টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২টির দরপতন ও ৪টির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে।
চতুর্থ স্থানে থাকা প্রকৌশল খাতে লেনদেন হয়েছে ৮৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। খাতটিতে ৩টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২৪টির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে ও ১৩টির দরপতনে।
৮০ কোটি ৭০ লাখ টাকা লেনদেন করে তালিকার পঞ্চম অবস্থানে ছিল বিবিধ খাত। আগের দিনে এ খাতে ৯৭ কোটি ২১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।
৪টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৭টির লেনদেন হয়েছে আগের দরে। দরপতন হয়েছে ১টির।
বাকি খাতে লেনদেন হয়েছে ৫০ কোটির নিচে। জ্বালানি ১৬টি, সাধারণ বিমা ১৮টি, ব্যাংক ২৯টি, বস্ত্র ৪৫টি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ১৮টি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ২০টির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে, যার দুই একটি বাদে সবই ফ্লোর প্রাইসে রয়েছে।
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে কারসাজি রোধে সঠিক তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা জরুরি। বিনিয়োগকারীদের একটি সুন্দর ও স্বচ্ছ পুঁজিবাজার উপহার দিতে কাজ করছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
ডিএসইর নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান শনিবার দু’দিনব্যাপী আবাসিক প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) যৌথ উদ্যোগে কুয়াকাটার হোটেল গ্রেভার ইন ইন্টারন্যাশনালে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমান এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
কর্মশালায় রিসোর্স পারসন ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম ও ডিএসই’র সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক আসাদুর রহমান।
সমাপনী অনুষ্ঠানে হোটেল গ্রেভার ইন ইন্টারন্যাশলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস কে ডা. মোগল জান রহমান মিঠু, ডিএসইর সিনিয়র জিএম সামিউল ইসলাম, বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, সিএমজেএফ-এর প্রাক্তন সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন, ডিএসইর ডিজিএম শফিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ড. তারিকুজ্জামান বলেন, ‘পুঁজিবাজারের বিভিন্ন আইনকানুন ও বিধিবিধান সম্পর্কে পারস্পরিক আলোচনা বৃদ্ধি করা জরুরি। পুঁজিবাজার একটি মূলধনী বাজার। এখানে অনেক স্টেকহোল্ডার কাজ করছে। আমি মনে করি সব স্টেকহোল্ডারের মধ্যে সিএমজেএফ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’
পরবর্তীতে কর্মশালায় সিএমজেএফ সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদানের সময় ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘একটি সুন্দর ও স্বচ্ছ পুঁজিবাজার তৈরির জন্য কাজ করছে ডিএসই।’
স্বাগত বক্তব্যে সিএমজেএফ সভাপতি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে খারাপ কোম্পানির শেয়ার যখন কারসাজিকারীদের দখলে চলে যায় তখন বাজার স্বাভাবিক অবস্থা হারিয়ে ফেলে। নষ্ট হয় বিনিয়োগকারীদের আস্থা। তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ফ্লোর প্রাইসের মতো নানা ব্যবস্থার সহায়তায় বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হয়। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে ফ্লোর প্রাইস দিতে হয়নি। এমনকি শ্রীলঙ্কায় যেখানে অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ ছিল তাদেরও তা দিতে হয়নি।’
অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে কোম্পানির বড় অংশের শেয়ার বিক্রি হওয়ার প্রেক্ষাপটে জাপানের শেয়ার বাজার থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে দেশটির প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তোশিবা।
এর মাধ্যমে তোশিবার ৭৪ বছরের শেয়ার বাজারের ইতিহাস শেষ হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
কোম্পানিটি বলছে, প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম জাপান ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্টনারস (জেআইপি)-এর নেতৃত্বে একটি গ্রুপ তোশিবার ৭৮.৬৫ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছে। অর্থাৎ গ্রুপটি দুই-তৃতীয়াংশের বেশি অংশীদারিত্বের মালিকানা পেয়েছে।
ঘড়ি এবং যান্ত্রিক পুতুলের নির্মাতা হিসেবে ১৮৭৫ সালের দিকে বাজারে আসে তোশিবা। এর পর নানা পণ্য উৎপাদন শুরু করে এই কোম্পানি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তোশিবার সঙ্গে হওয়া নতুন চুক্তির অধীনে এ বছরের শেষের দিকে কোম্পানিটির বকি শেয়ার বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হতে পারে।
বেশ কয়েক বছর ধরেই বাজার থেকে সরার পথে তোশিবা। এর অংশ হিসেবে ২০২০ সালে ল্যাপটপ ব্যবসা থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, তারা ৩৫ বছরের পুরোনো ল্যাপটপ ব্যবসা থেকে সরে যাবে। এ ব্যবসার শেয়ার বিক্রি করার কথা বলা হয় জাপানি প্রতিষ্ঠান শার্পের কাছে।
বিবিসি বলছে, জাপান যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেরিয়ে আসছে এবং টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ পুনরায় চালু হলো তখন ১৯৪৯ সালের মে মাসে তোশিবার শেয়ারের ব্যবসা শুরু হয়।
বাসা-বাড়ির ইলেকট্রনিক্স পণ্য থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও ছিল এই তোশিবার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কয়েক দশক ধরে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং এর উচ্চ প্রযুক্তি শিল্পের প্রতীক ছিল।
তবে গত কয়েক বছর ধরে বেশ বিপাকে পড়েছে তোশিবার ব্যবসা। ২০১৭ সালে যুক্তরষ্ট্রে পারমাণবিক শক্তি ব্যবসায় বড় ক্ষতির কথা জানায় প্রতিষ্ঠানটি। দেউলিয়া হওয়া এড়াতে তোশিবা ২০১৮ সালে এর মেমরি চিপ ব্যবসা বিক্রি বন্ধ করে দেয়।
তোশিবা ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যের প্রাইভেট ইক্যুইটি গ্রুপ সিভিসি ক্যাপিটাল পার্টনারদের কাছ থেকে পাওয়া বিনিয়োগের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। তবে শেষ পর্যন্ত অস্তিত্বের প্রশ্নে অনেকটাই আপস করতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে।
দেশের পুঁজিবাজার আজ অনেক কারণে পিছিয়ে আছে। অথচ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে পুঁজিবাজারের উন্নতির ওপর। পিছিয়ে থাকা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আমাদের কাজ করতে হবে। আর এতে নেতৃত্ব দিতে পুঁজিবাজারের মূল কর্ণধার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই)।
ডিএসই চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু সোমবার এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছাসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসইর নিজস্ব ভবনে এই আয়োজনে সভাপতির বক্তব্যে হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন যেভাবে এগিয়েছে, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন সেভাবে হয়নি। আমরা সততা নিয়ে কাজ করলে পুঁজিবাজার দাঁড়িয়ে যাবে।
‘সিকিউরিটিজ হাউজগুলো তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে না। হাউজগুলোর কাছে আমাদের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। তবে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ডিএসই নিরলস কাজ করছে। আমরা এই উন্নয়নে হাউজগুলোকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবো।’
বঙ্গবন্ধুর প্রতি স্মৃতিচারণ করে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একজন সরল প্রকৃতির নির্ভীক মানুষ ছিলেন। তার কথাবার্তায় কোনো জটিলতা ছিল না। তিনি কখনোই এদেশে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন না। একেবারে সাধারণের মতো জীবনযাপন করতেন। সবার সঙ্গে তিনি অতি সাধারণভাবে মিশতে পারতেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে হবে।’
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘আমরা অনেক ভাগ্যবান। কারণ বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন। আমরা আগামী ১০০ বছরের ডেল্টা প্ল্যান করার চিন্তা করছি। এটা তখনই সম্ভব, যখন স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক শক্তি দেশ শাসন করে। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকে তখনই সম্মান দেখাতে পারব, যখন আমরা দুর্নীতিকে পরাস্ত করে স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।’
ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড-এর চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়েই বঙ্গবন্ধুর জন্য একটি স্থান রয়েছে। বিদেশে আমি যখনই গিয়েছি, বাংলাদেশের নাম শুনলেই সবাই বলত শেখ মুজিবুর রহমানের কথা। বাংলাদেশ মানেই যেন শেখ মুজিবুর রহমান।’
আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. সাইফুর রহমান মজুমদার।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় সংগ্রামী জীবনের ওপর আলোকপাত করে আরও বক্তব্য দেন ডিএসই’র সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান, ডিবিএ-র প্রেসিডেন্ট রিজার্ড ডি রোজারিও, ডিএসই’র সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমদ রশিদ লালী, বুলবুল সিকিউরিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস শাহুদুল হক বুলবুল, জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-এর প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।
আরও পড়ুন:দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন এটিএম তারিকুজ্জামান। এর আগে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি মঙ্গলবার তার এই নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে।
এর আগে পদটিতে নিয়োগের জন্য তিন প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করেছিল ডিএসই। সোমবার ডিএসইর পর্ষদ সভায় ওই তিনজনের নাম প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং মঙ্গলবার বিএসইসির অনুমোদনের জন্য তালিকাটি পাঠানো হয়।
যে তিনজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল তারা হলেন- বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (ইডি) এটিএম তারিকুজ্জামান, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মশিউর রহমান এবং ন্যাশনাল ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুদ্দিন এম নাসের।
বিএসইসি আগামী তিন বছরের জন্য ডিএসইর এমডি পদে এটিএম তারিকুজ্জামানকে নিয়োগে অনুমোদন দেয়।
ডিএসই বোর্ড অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রেগুলেশন-২০১৩ অনুসারে, ডিএসইর মনোনয়ন ও পারিশ্রমিক কমিটি (এনআরসি) দ্বারা ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্বাচিত হবেb। বোর্ড এ ক্ষেত্রে তাদের সুপারিশ জানাবে। বোর্ডের সুপারিশের পর বিএসইসি তিন বছর মেয়াদে একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেবে।
এনআরসি ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদের জন্য ছয় প্রার্থীকে শর্টলিস্ট করে এবং ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত একটি সাক্ষাৎকারের জন্য তাদের একটি চিঠি দেয়। পরে ডিএসইর পর্ষদ সভায় এনআরসি কমিটির সুপারিশ করা ছয় প্রার্থীর মধ্য থেকে তিনজনকে বাছাই করা হয়।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক আমিন ভূঁইয়া পদত্যাগের পর ডিএসইতে শীর্ষ নির্বাহীর পদটি শূন্য হয়। এর আগে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন:দেশের দুই পুঁজিবাজারের গতি ধীরে ধীরে আরও মন্থর হচ্ছে। গত কয়েকদিনে আলোচনায় থাকা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন আরও কমেছে মঙ্গলবার। ডিএসইতে এদিন মোট লেনদেন হয়েছে ৩ শ’ ৮৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা যা গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষ দিকে টানা কয়েকদিন চার শ’ কোটির নিচে হয়েছিল ডিএসইর লেনদেন।
ঢাকার বাজারে ক’দিন ধরেই কমছে মোট লেনদেনের পরিমাণ। দু’সপ্তাহ আগেও দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৯ শ’ কোটির উপর। এমনকি জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে বাজার ইতিবাচক হওয়ার ইঙ্গিত দেখা দিয়েছিল। সেই মাসের ১৮ তারিখ ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র বিশ দিনের ব্যবধানে লেনদেন কমে এসেছে এক তৃতীয়াংশে।
মঙ্গলবার দিনশেষে অবশ্য ইতিবাচক দেখা গেছে ডিএসইর সবক’টি সূচক। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন প্রায় ১৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৬ হাজার ৩ শ’ ১৫ পয়েন্টে। পাশাপাশি বেড়েছে ডিএস-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচকটিও। তবে সূচক বাড়ার দিনেও লেনদেনে হতাশাজনক চিত্র দেখতে হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
এই বাজারে লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে এদিন দর বেড়েছে ১১০টির, কমেছে ৫২টির আর অপরিবর্তিত দেখা গেছে ১৭৫ টি কোম্পানির শেয়ার দর।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এদিন লেনদেনে শীর্ষ অবস্থানে দেখা যায় সি পার্ল বিচ রিসোর্টকে। কোম্পানিটির ২৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে এদিন। এ ছাড়া লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল খান ব্রাদার্স, তৃতীয় অবস্থানে সোনালী পেপার, চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে ছিল যথাক্রমে ফুওয়াং ফুড ও আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
এদিকে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ-সিএসইতে মঙ্গলবার মোট লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সিএসইতেও এদিন বেড়েছে সবগুলো সূচক।
আরও পড়ুন:মাসের শুরুর দিকে সাধারণত ইতিবাচক দেখা যায় পুঁজিবাজারের লেনদেন পরিস্থিতি। তবে বর্তমান নেতিবাচক বাজারের মাসে সপ্তাহের প্রথম দিনেও গতি ফিরে পাচ্ছে না পুঁজিবাজার। রোববার একদিকে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস, অন্যদিকে মাসের ৬ তারিখ হওয়ার পরও দেশের দুই পুঁজিবাজারের সবগুলো সূচকের পতন হয়েছে।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ (রোববার) প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) প্রায় ১৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান নিয়েছে ৬ হাজার ৩ শ ১৫ পয়েন্টে। প্রধান সূচকের পাশাপাশি ডিএসইর অন্য দুটি সূচকেও ছিল নেতিবাচক ধারা।
নির্বাচিত ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচকেও এদিন পতন হয়েছে প্রায় নয় পয়েন্ট। ডিএসই শরিয়াহ সূচক কমেছে প্রায় ৫ পয়েন্ট।
রোববার লেনদেনর খরাও প্রকট হয়েছে ঢাকার বাজারে। এদিন মোট লেনদেন হয়েছে ৪ শ’ ১৭ কোটি টাকা, যা এর আগের কর্মদিবস থেকে প্রায় ৬৮ কোটি টাকা কম। লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৯টির, কমেছে ১৩৪টির আর অপরিবর্তিত দেখা গেছে ১৬০টি কোম্পানির দর।
লেনদেন কমে যাওয়ার দিনে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত ফুওয়াং ফুডসের। এদিন কোম্পানিটির মোট লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ২৭ লাখ টাকার শেয়ার। এ ছাড়া লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে জেএমআই হসপিটাল। তৃতীয় অবস্থানেও ছিল ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত আরেক কোম্পানি লিগাসি ফুটওয়ার। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে এদিন যথাক্রমে দেখা গেছে খান ব্রাদার্স ও আলিফ ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিডেটকে।
এদিকে নেতিবাচক লেনদেনের দিনে দাম বাড়ায় শীর্ষ অবস্থানে ছিল ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত মেঘটা পেট্রোলিয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এ ছাড়া আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, লিবরা ইনফিউশন, পিপলস ইন্সুরেন্স ও ড্যাফোডিল কম্পিউটারস ছিল লেনদেনে যথাক্রমে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম অবস্থানে।
এদিন দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) কমেছে সবগুলো সূচক। এ বাজারের প্রধান সূচক (সিএএসপিআই) প্রায় ২৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান নিয়েছে ১৮ হাজার ৬ শ’ ৬৫ পয়েন্টে।
লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে এদিন সিএসইতে দর বেড়েছে ৩১টির, কমেছে ৭৫টির আর অপরিবর্তিত দেখা গেছে ৫০টি কোম্পানিকে।
চট্টগ্রামের বাজারে এদিন মোট লেনদেন কমে হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে দেশের দুই পুঁজিবাজার। জুলাই মাসের শেষার্ধের নেতিবাচক প্রবণতা কাটিয়ে আগস্টের প্রথম দিনের চিত্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছে। তাদের প্রত্যাশা, এই ধারাটা মাস জুড়ে অব্যাহত থাকবে।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মঙ্গলবার প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে প্রায় ১৪ পয়েন্ট। সূচকটি এখন অবস্থান করছে ৬ হাজার ৩৩৮ পয়েন্টে।
পাশাপাশি ইতিবাচক ছিলো ডিএসইর অন্য দুটি সূচক ডিএস-৩০ ও ডিএসইএস বা শরিয়াহ্ সূচকও। অবশ্য এ দুটি সূচকে বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।
তবে সূচক ইতিবাচক থাকার পরও লেনদেনে আগ্রহ কম ছিলো বিনিয়োগকারীদের। দিন শেষে ঢাকার পুঁজিবাজারে মোট লেনদেন হয়েছে ৫৪৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় একশ ১৯ কোটি টাকা কম।
লেনদেন কিছুটা কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী শরিফ জানান, গত মাসে তার হাতে থাকা শেয়ারের দাম বেশ খানিকটা কমেছে। মঙ্গলবার সেগুলো কিছুটা বাড়লেও এখনও তাকেনা দামে পৌঁছেনি। পুঁজিবাজার ভালো হবে আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব দিকের হিসাব মিলিয়ে দেখলে মনে হয় বাজারটা এখানেই থেমে থাকবে না। তাই কিছুদিন দেখে তারপর বিক্রি করবো।’
আরেক বিনিয়োগকারী রুবেল মিয়া জানালেন, তার যেসব শেয়ার কেনা রয়েছে তার মধ্যে কয়েকটা এখনও ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে। লেনদেন বাড়লেই ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হবে- এমন প্রত্যাশা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরাও চাই না এখনই ফ্লোর প্রাইস উঠুক। অনেক দিন ধৈর্য ধরেছি, আরও কিছুদিন ধৈয্য ধরতে চাই।’
সপ্তাহের তৃতীয় কার্য দিবসে মঙ্গলবার দেখা যায়, লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১১০টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের; যার বিপরীতে কমেছে ৬০টির। আর অপরিবর্তিত ছিলো ১৭০টি কোম্পানির শেয়ারদর। এর মধ্যে বড় একটি অংশের লেনদেন আটকে আছে ফ্লোর প্রাইসের কারণে।
এদিকে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ-সিএসইতেও এদিন বেড়েছে সব সূচক। এই বাজারে দেখা যায় প্রধান সূচক সিএএসপিআই প্রায় ২৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৮ হাজার ৭১০ পয়েন্টে। সিএসইতে এদিন মোট লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকার কিছুটা বেশি। আর লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৬৯টির ও কমেছে ৩৪টির। অপরিবর্তিত দেখা গেছে ৬৭টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য