চেক নগদায়নের আগে শেয়ার কেনা যাবে না বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্দেশনা পাল্টানোর সিদ্ধান্ত হলেও দরপতন থামেনি পুঁজিবাজারে।
নতুন ইস্যু হিসেবে সামনে এসেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার আশায় সংস্থাটির সঙ্গে সরকারের বৈঠক ইস্যু।
আন্তর্জাতিক এই দাতা সংস্থাটি পুঁজিবাজারে কোনো ধরনের বাইরের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে। বর্তমানে দরপতন ঠেকাতে ‘ফ্লোর প্রাইস’ নামে সব শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দিয়ে যে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, সেটি নিয়ে আইএমএফ কথা তুলতে পারে- এ নিয়ে শঙ্কার কথা বলাবলি হচ্ছে।
গত ১১ অক্টোবর চেক নিয়ে নির্দেশনা জারির পর থেকে পুঁজিবাজারে নতুন করে যে সংকট দেখা দিয়েছিল, সেটি আমলে নিয়ে ৩০ অক্টোবর এক বৈঠকে নির্দেশনা পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।
নিউজবাংলায় সেদিনই এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম জানান, চেক ব্যাংকে জমা না দিয়ে জালিয়াতির যে ৩৭টি প্রমাণ তারা পেয়েছেন, সেসব অভিযোগে শাস্তির বিধান রেখে এই নির্দেশনা সংশোধন করে দু-এক দিনের মধ্যে নতুন আদেশ জারি হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্তটি বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বস্তিকর হলেও তার আভাস সেই সোমবারের লেনদেনে। প্রায় পৌনে তিন শ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইসে হাতবদল হতে থাকার মধ্যে বাকি যেসব কোম্পানি আছে তার মধ্যে দর হারিয়েছে ৮৬টি কোম্পানি। বেড়েছে ২৯টির দর। ২৩২টি কোম্পানি আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে। আরও ৩৭টি কোম্পানি বা মিউচুয়াল ফান্ডের একটি শেয়ার বা ইউনিটও হাতবদল হয়নি।
লেনদেন নেমে এসেছে আট শ কোটি টাকার নিচে। হাতবদল হয়েছে ৭৬৯ কোটি ২৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
সকালে এদিন লেনদেন শুরু হয় সূচক বাড়ার মধ্য দিয়েই। প্রথমেই ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৬ পয়েন্ট বেড়ে গেলেও পরে তা ক্রমাগত কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ২৬ পয়েন্ট কমে সূচক নেমে যায় ৬ হাজার ৩০৭.৬৮ পয়েন্টে, যা গত ২৪ অক্টোবরের প্রায় সমান।
এর চেয়ে কম সূচক ছিল গত ২৪ অক্টোবর। সেদিন সূচকের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ২৮০ পয়েন্ট। তবে সে সময় পুঁজিবাজার তলানি থেকে উঠে এসে বিনিয়োগকারীদের আশা দেখাচ্ছিল।
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আইএমএফ কী নিয়ে আলোচনা
বিনিয়োগকারী ফিদুল বিশ্বাস বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আইএমএফ নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, আইএমএফ খেলাপি ঋণ পরিশোধে কঠোর নীতি অনুসরণের ওপর জোর দিচ্ছে। এতে করে অনেক কোম্পানির ওপর চাপ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা বিচলিত। তারা এই বিষয়টা ভাবছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইএমএফের হিসাব পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভও কমে আসবে। যেটা একটা শঙ্কার কারণ। শোনা যাচ্ছে, বিদেশিরা ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে চলে যাচ্ছে।
তবে আইএমএফের সফরে আশাবাদী আরেকটি পক্ষ। বিনিয়োগকারী একরামুল হক ফাহাদ বলেন, ‘আইএমএফের বাংলাদেশ সফর নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক-ইতিবাচক, দুই ধরনের আলোচনাই হচ্ছে। আইএমএফের সঙ্গে বিএসইসির বৈঠক হবে সম্ভবত ৭ তারিখে। পুঁজিবাজারের জন্য ভালো কিছু হবে। শোনা যাচ্ছে, আইএমএফের মাধ্যমে ভালো বিনিয়োগ আসতে পারে। বিষয়টা আশা জাগাচ্ছে।’
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইএমএফের সফর নিয়ে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে তো একটা আলোচনা আছেই। আগেরবার যখন এসেছিল তখন তারা মার্কেট ম্যানুপুলেশন নিয়ে আলোচনা করেছিল। কিন্তু এবার কী নিয়ে আলোচনা করবে তা আমরা জানি না।
‘তবে ধারণা করা হচ্ছে যে, ফ্লোর প্রাইস নিয়ে বা তুলে দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে। শোনা যাচ্ছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন মাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্স করেছে, যাতে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হয় এবং তারা শেয়ার বিক্রি করতে পারে। শেয়ার মার্কেটকে বলা হয়, লিক্যুইড অ্যাসেট। মার্কেটের সেন্সই হলো প্রয়োজনমতো টাকায় রূপান্তর করা। কিন্তু ফ্লোর প্রাইসের কারণে শেয়ার বিক্রি করতে পারা যাচ্ছে না। এতে মার্কেটের সেন্স নষ্ট হয়।
‘আবার অনেকেই চায় না ফ্লোর প্রাইস উঠুক। এতে তাদের লোকসানের আশঙ্কা থাকে। আমি ফ্লোর প্রাইস আরোপের বিপক্ষে ছিলাম। এখন আমিই বলব যে, এটা এখন তুলে দেয়া ঠিক হবে না।’
বেক্সিমকো-ওরিয়ন ও স্বল্প মূলধনিতে সর্বনাশ
গত ২৮ জুলাই সূচক ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যাওয়ার পর বিএসইসি করোনাকালের মতোই পতন ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইসে বেঁধে দেয়। পর দিন থেকে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়ে উত্থানে ফেরার ইঙ্গিত দেয়।
তবে করোনাকালের মতো এবারের উত্থান ভারসাম্য মূল্য ছিল না। বড়জোর ৩০টি কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে সূচক তরতর করে বাড়তে থাকলেও বেশির ভাগ কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসেই গড়াগড়ি খেতে থাকে।
এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা যত বাড়ে, ফ্লোরের কোম্পানির সংখ্যা তত বেশি বাড়তে থাকে।
সূচক বেড়েছে মূলত বেক্সিমকো ও ওরিয়ন গ্রুপের কোম্পানিগুলোর কারণে। এর সঙ্গে স্বল্প মূলধনি বেশ কিছু কোম্পানির দর অল্প সময়ে দেড় বা দ্বিগুণ হয়েছে। বড় মূলধনি বসুন্ধরা পেপার দরও তাই। নতুন তালিকাভুক্ত জেএমআই সিরিঞ্জ, সি পার্ল হোটেল, ইস্টার্ন হাউজিংয়ের শেয়ারদরে লাফ দেয়ারও কোনো ব্যাখ্যা ছিল না।
এরই মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের সবচেয়ে বড় দুই কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেড উত্থানের পর ফের ফ্লোরে ফিরেছে, শেয়ারপ্রতি বিনিয়োগকারীর লোকসান ২০ থেকে ৩০ টাকা, বেক্সিমকো ফার্মাও ফ্লোরের কাছাকাছি।
ওরিয়ন গ্রুপের ওরিয়ন ফার্মা, বিকন ফার্মা ও কোহিনূর কেমিক্যালসের শেয়ারদরে অস্বাভাবিক উত্থানের শেষে পতনের যে গতি, তাতে ব্যাপকভাবে আর্থিক লোকসানের পাশাপাশি টাকা আটকে যাওয়াও লেনদেনের গতি কমার কারণ।
এই কোম্পানিগুলো এখন সূচকের পতন ঘটাচ্ছে না কেবল, লেনদেনের গতি কমার কারণ হয়েও দাঁড়িয়েছে।
ওরিয়ন ফার্মার দর যখন ১৪০ থেকে ১৫৬ টাকার মধ্যে ছিল, তখন এক দিনে আড়াই শ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়েছে। সেই লেনদেন এখন নেমেছে ৪০ কোটির নিচে। যে বেক্সিমকো লিমিটেডে দিনে দুই শ কোটি টাকার বা তার চেয়ে বেশি লেনদেন স্বাভাবিক প্রবণতায় পরিণত হয়েছিল, সেই কোম্পানির লেনদেন নেমেছে ৮ কোটি ১৪ লাখ টাকায়।
অর্থাৎ কয়েক হাজার কোটি টাকা কেবল বেক্সিমকো লিমিটেড ও ওরিয়ন ফার্মাতেই আটকে গেছে। কোহিনূর কেমিক্যালসের সর্বোচ্চ দর থেকে বর্তমান দর কম ২২০ টাকা, ওরিয়ন ফার্মা সর্বোচ্চ দর থেকে কমেছে ৪৫ টাকা, বিকন ফার্মা কমেছে ৮০ টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশন কমেছে ৩১ টাকা।
গত দুই মাসের সর্বোচ্চ দর থেকে বেক্সিমকো লিমিটেড কমেছে ৩২ টাকা, বেক্সিমকো ফার্মা কমেছে ৫৫ টাকার বেশি।
এই দুটি গ্রুপের মধ্যে বিকন ফার্মার শেয়ার দিনের দরপতনের শীর্ষ তালিকায় ছিল। এই তালিকায় বাকি কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ ছিল অস্বাভাবিক উত্থান হওয়া স্বল্প মূলধনি ও নতুন কিছু কোম্পানি।
নতুন তালিকাভুক্ত নাভানা ফার্মা শেয়ার প্রতি ১ টাকা ১০ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণার জেরে আগের দিন পুঁজিবাজারে শেয়ারদর বেড়েছিল ৭৮ শতাংশ। সেটির দর এদিন কমেছে সবচেয়ে বেশি ৯.৩৪ শতাংশ।
এ ছাড়া মনোস্পুল পেপারের দর ৮.৭৪ শতাংশ, সেনা কল্যাণ ইনস্যুরেন্সের দর ৮.৬০ শতাংশ, পেপার প্রসেসিংয়ের দর ৭.৩৪ শতাংশ, বিএনআইসিএলের দর ৬.৬৭ শতাংশ, জেমিনি সি ফুডের দর ৬.৬৫ শতাংশ, বিকন ফার্মার দর ৬.১৭ শতাংশ, মেট্রো স্পিনিংয়ের দর ৫.৬৯ শতাংশ এবং আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের দর কমেছে ৫.৩৫ শতাংশ।
শীর্ষ দশের বাইরে আরও চারটি কোম্পানির দর ৫ শতাংশের বেশি, ৫টি কোম্পানির দর ৪ শতাংশের বেশি, ১২টি কোম্পানির দর ৩ শতাংশের বেশি, ১২টির দর ২ শতাংশের বেশি, ১৭টির দর ১ শতাংশের বেশি কমেছে।
সূচক ফেলেছে মূলত ওরিয়ন গ্রুপ
সবচেয়ে বেশি ১১ দশমিক ৯০ পয়েন্ট সূচক কমেছে বিকন ফার্মার দরপতনে। কোম্পানিটির দর কমেছে ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট কমেছে বেক্সিমকো ফার্মার কারণে। শেয়ার প্রতি দাম কমেছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ।
ওরিয়ন ফার্মার শেয়ারদর ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে ২ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট।
এ ছাড়াও সোনালী পেপার, নাভানা ফার্মা, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, কোহিনূর কেমিক্যাল, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, মনোস্পুল ও ইস্টার্ন ক্যাবলসের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ৩০ দশমিক ২৮ পয়েন্ট।
এর মধ্যে ওরিয়নের তিন কোম্পানির কারণেই কমেছে ১৫.৯৭ পয়েন্ট।
বিপরীতে ৪ দশমিক ৩২ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে সি-পার্ল। এদিন শেয়ারটির দর বেড়েছে ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ।
বসুন্ধরা পেপারের দর ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৫২ পয়েন্ট।
ইউনিক হোটেল সূচকে যোগ করেছে ২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এর বাইরে সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে জেনেক্স ইনফোসিস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, এডিএন টেলিকম, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, জেএমআই হসপিটাল, আমরা টেকনোলজিস ও প্রাইম ব্যাংক।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট।
দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০
আগের দিনের মতোই ১০ শতাংশ দরবৃদ্ধি হয়েছে তালিকার শীর্ষে থাকা চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে ১২ টাকা ১০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ১১ টাকা।
সি-পার্লের দর বেড়েছে ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। শেয়ারটি ১৭৩ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে ১৮৮ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে।
৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ দর বেড়ে বসুন্ধরা পেপারের শেয়ার ৯১ টাকা ৮০ পয়সা লেনদেন হয়েছে। আগের দর ছিল ৮৬ টাকা।
এ ছাড়া তালিকায় থাকা ৬টি কোম্পানি যথাক্রমে জেনেক্স ইনফোসিস, এডিএন টেলিকম, আমরা টেকনোলজিস, ইনফরমেশন সার্ভিসেস, ইউনিক হোটেল ও রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি।
আর দশম স্থানে থাকা শমরিতা হসপিটালসহ ৭টি কোম্পানির দর বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি। চারটি কোম্পানির দর বেড়েছে ১ শতাংশের বেশি। আর এর চেয়ে কম অর্থাৎ ১ শতাংশের নিচে দর বেড়েছে ৯টি কোম্পানির।
শীর্ষ ৫ খাত যেমন
শীর্ষে অবস্থান করছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। আগের দিনের মতোই এক মাত্র এই খাতটিতেই শতকোটির ওপরে লেনদেন হয়েছে। হাতবদল হয়েছে ১০৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ১৬৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ১৮টির লেনদেন হয়েছে আগের দরে। আর দরপতন হয়েছে ১২টির।
দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে কাগজ ও মুদ্রণ খাত। লেনদেন হয়েছে ৯৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ৪টি কোম্পানির দরপতনের বিপরীতে ১টি করে কোম্পানির লেনদেন হয়েছে দরবৃদ্ধি ও আগের দরে।
৯৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা লেনদেন করে তৃতীয় অবস্থানে চলে এসেছে প্রযুক্তি খাত। ৫টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২টির দরপতন ও ৪টির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে।
চতুর্থ স্থানে থাকা প্রকৌশল খাতে লেনদেন হয়েছে ৮৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। খাতটিতে ৩টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২৪টির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে ও ১৩টির দরপতনে।
৮০ কোটি ৭০ লাখ টাকা লেনদেন করে তালিকার পঞ্চম অবস্থানে ছিল বিবিধ খাত। আগের দিনে এ খাতে ৯৭ কোটি ২১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।
৪টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৭টির লেনদেন হয়েছে আগের দরে। দরপতন হয়েছে ১টির।
বাকি খাতে লেনদেন হয়েছে ৫০ কোটির নিচে। জ্বালানি ১৬টি, সাধারণ বিমা ১৮টি, ব্যাংক ২৯টি, বস্ত্র ৪৫টি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ১৮টি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ২০টির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে, যার দুই একটি বাদে সবই ফ্লোর প্রাইসে রয়েছে।
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের (বেক্সিমকো) শেয়ার কারসাজির দায়ে নয় বিনিয়োগকারীকে ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
মঙ্গলবার বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এই জরিমানা আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে কোনো কোম্পানির শেয়ার কারসাজির দায়ে এতো বড় অঙ্কের অর্থ জরিমানা এর আগে আর করা হয়নি।
উল্লিখিত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মারজানা রহমানকে ৩০ কোটি, ট্রেড নেক্সট ইন্টারন্যাশনালকে চার কোটি এক লাখ, মুশফিকুর রহমানকে ১২৫ কোটি, মমতাজুর রহমানকে ৫৮ কোটি, জুপিটার ব্যবসাকে ২২ কোটি ৫০ লাখ, অ্যাপোলো ট্রেডিংকে ১৫ কোটি ১০ লাখ, এআরটি ইন্টারন্যাশনালকে ৭০ কোটি, আবদুর রউফকে ৩১ কোটি এবং ক্রিসেন্ট লিমিটেডকে ৭৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়াও কমিশন সভায় নয়টি কোম্পানির আইপিও/আরপিওর তহবিলের ব্যবহার পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত হয়।
কোম্পানিগুলো হলো- বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বেস্ট হোল্ডিং, ইনডেক্স এগ্রো, জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, রিং শাইন টেক্সটাইল, সিকদার ইন্স্যুরেন্স ও সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস।
আরও পড়ুন:ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিএলসি) শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বুধবার বিএসইসির এক আদেশে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম ও পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে উঠা-নামা করেছে, যা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে মনে হচ্ছে।
বিএসইসির আদেশে বলা হয়, উল্লিখিত স্ক্রিপের ইউনিটের এমন অস্বাভাবিক উঠা-নামার পেছনে বাজার কারসাজি, অভ্যন্তরীণ লেনদেন, অন্যান্য বাজারের অপব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণ উদঘাটনে ৬ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কেনাবেচা তদন্ত করবে ডিএসই।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার চেষ্টা করছে। তাই তারা বড় অঙ্কের শেয়ার কিনছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে এই ব্যাংকের শেয়ারের দাম হু হু করে বেড়েছে।
জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে পুঁজিবাজারে কারসাজির অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকায় দেশসেরা এই ক্রিকেটারকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে এই কারসাজি করেন সাকিব আল হাসান।
সাকিব আল হাসানের পাশাপাশি শেয়ারবাজারের আলোচিত চরিত্র আবুল খায়ের ওরফে হিরু, তারা বাবা আবুল কালাম মাতবর, মো. জাহিদ কামাল, হিরুর প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্ট, ইসহাল কমিউনিকেশন ও লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে কারসাজিতে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এ কারণে এসব ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকেও জরিমানা করা হয়েছে।
এর আগে একাধিক শেয়ার কারসাজির তদন্ত প্রতিবেদনে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নাম উঠে আসে। তবে কারসাজির প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তাকে জরিমানা করেনি বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, ফরচুন সুজ, বিডিকম অনলাইন, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার কারসাজির বিষয়ে করা তদন্ত প্রতিবেদনে সাকিব আল হাসানের নাম জড়ায়। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কারসাজির জন্য তাকে জরিমানা করা হয়নি। এবারই প্রথম সাকিবের বিরুদ্ধে শেয়ার কারসাজির প্রমাণ মিললো।
এর আগে শেয়ারবাজারে কারসাজির অভিযোগ তদন্তে সাকিবের নাম যতবার উঠে আসে সবগুলোতেই আলোচিত শেয়ার কারসাজিকারী আবুল খায়ের হিরুর নাম ছিল। সাকিবের বিরুদ্ধে কারসাজির প্রমাণ না মিললেও হিরুর বিরুদ্ধে কারসাজির প্রমাণ মেলে এবং তাকে জরিমানা করা হয়।
এবারও সাকিবের সঙ্গে শেয়ার কারসাজিতে হিরুর নামে উঠে এলো। প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকায় হিরুকে ২৫ লাখ এবং সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জারিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবরকে ১০ লাখ, মো. জাহিদ কামালকে এক লাখ, হিরুর প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্টকে এক লাখ, ইসহাল কমিউনিকেশনকে ৭৫ লাখ ও লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বিএসইসির এর আগে ‘দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম’-এর শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নিয়োগ বাতিল করে। গত ২৮ আগস্ট জরুরি সভা করে এই সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
আরও পড়ুন:ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ২০ জনের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব জব্দ করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশে বৃহস্পতিবার তাদের বিও হিসাব স্থগিত করেছে বিএসইসি।
নির্দেশনায় বিএসইসি যাদের বিও হিসাব জব্দ করেছে তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তার স্ত্রী লুতফুল তাহমিনা খান, ছেলে সফি মুদাসসের খান ও মেয়ে শাফিয়া তাসনিম খান; সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তার স্ত্রী নুরুন ফাতেমা হাসান ও মেয়ে নাফিসা জুমাইনা মাহমুদ; সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কনিকা; সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও তার স্ত্রী শারমিন মুস্তারি; সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার স্ত্রী রুখমিলা জামান চৌধুরী, তার আত্মীয় জারা জামান, বোন রোকসানা জামান চৌধুরী, ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও মেয়ে জেবা জামান চৌধুরী।
এছাড়া পিরোজপুর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ, তার স্ত্রী উম্মে কুলসুম, ছেলে সাম্মাম জুনাইদ ইফতির বিও হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন থেকে টানা চার দিন পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে দেখা যায় দেশের পুঁজিবাজারকে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও নতুন উদ্যমে শুরু করার প্রত্যয় চোখে পড়ে। অনেকে নতুন করে কিছু পুঁজি বিনিয়োগে এনেছেন। অনেকে আবার শেয়ার কিনে রাখতে অন্যদের পরামর্শ দিয়েছেন।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধারণা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে পুঁজিবাজারে সুদিন ফিরবে। তবে সেই সুদিনের দেখা মিলছে না। ওই চার কর্মদিবসের পর থেকে পরের পাঁচ কর্মদিবসের গল্পটা পুরনো হতাশার।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইতে চার কর্মদিবসে ৭৮৬ পয়েন্ট সূচক বাড়ার পর বিনিয়োগকারীরা উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল। এরপর ৮ কর্মদিবসে সূচক পড়ল ৪০৮ পয়েন্ট। এর মধ্যে পাঁচদিনেই পড়ল ৩৪৫ পয়েন্ট।
সবশেষ বুধবারের পতন ছিলো অনেকটাই অনাকাঙ্ক্ষিত। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক হারিয়েছে ১০৮ পয়েন্ট।
বর্তমান ডিএসইর প্রধান সূচকটি নেমে এসেছে পাঁচ হাজার ৬০৬ পয়েন্টে। তবে সবচেয়ে বেশি হতাশা ছড়াচ্ছে মোট লেনদেনের পরিমাণ। সরকার পতনের পর একদিনে লেনদেন উঠে এসেছিলো দুহাজার কোটি টাকা, যা বর্তমানে নেমে এসেছে চার ভাগের এক ভাগে। সবশেষ কর্মদিবসে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫৩৬ কোটি টাকার।
হঠাৎ এমন দরপতনে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। প্রতিদিনই তাদের বিনিয়োগের অর্থ কমে আসছে।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী জসিম উদ্দিনের ব্যাখা ছিলো এমন- ‘আমরা তো ভাবছিলাম আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন হবে না। গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সেটা করেও দেখাতে পারেনি। একের পর এক দুর্নীতি আর লুটপাটে বাজার থেকে নিঃস্ব হতে হয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।
‘সবার মধ্যে আশা ছিলো ওদের পতনের পর পুঁজিবাজার অনেক উপরে উঠবে। প্রথম কয়েকদিন হলোও তাই। তবে এখন কী যে হচ্ছে বুঝতে পারছি না। সকাল শুরু হলেই দেখি পতন আর পতন। এগুলো আর কত দেখতে হবে। নতুন সরকারের উচিত আগে পুঁজিবাজার ঠিক করা।’
বুধবার দেখা যায়, লেনদেনে অংশ নেয়া প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের দর কমেছে। অংশ নেয়া কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১১টির, কমেছে ৩৭১টির। আর অপরিবর্তিত ছিলো ১২টি কোম্পানির শেয়ার দর।
হতাশ আরেক বিনিয়োগকারী আনিস বলেন, ‘আমাদের কী করা উচিত তা জানি না ভাই। হতাশ হয়ে সবাই মার্কেট ছাড়তেছে। ভাবলাম সরকার পরিবর্তন হইছে, তাই অনেক দিন পর কিছু শেয়ার কিনলাম। তবে যা হচ্ছে তাতে আবার হতাশ হলাম।’
অন্তর্বর্তী সরকারের বেছে নেয়া মাশরুর রিয়াজ বিএসইসির চেয়ারম্যান হওয়া নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর গত সোমবার নেতৃত্বে আসেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তিনি নেতৃত্বে আসার পর টানা তিন কর্মদিবসেই দরপতন হল পুঁজিবাজারে।
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন ড. এম মাশরুর রিয়াজ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ড. এম মাশরুর রিয়াজকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। তবে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট দু-একটি গোষ্ঠী তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকার তথা সালমান এফ রহমানের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে মর্মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার শুরু করে।
গত ১৩ আগস্ট তার নিয়োগের প্রজ্ঞাপন হলেও মাশরুর রিয়াজকে বিএসইসিতে যোগ দিতে দেখা যায়নি। পরে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, তার বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখছেন। তবে সরকারের খতিয়ে দেখার আগেই মাশরুর রিয়াজ নিজে থেকেই বিএসইসি চেয়ারম্যান পদে যোগ না দেয়ার কথা জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়কে।
ড. এম মাশরুর রিয়াজ বাংলাদেশের একজন অর্থনীতিবিদ। তিনি পলিসি এক্সচেঞ্জ নামক একটি গবেষণা সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি বিশ্বব্যাংকেও চাকরি করেছেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান পদে যোগ না দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সামনে বহু গবেষণার কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমি এই সময়টাকে কাজে লাগাতে চাই। দেশের অর্থনীতি নিয়ে একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে ভূমিকা রাখতে চাই।
‘বিশেষ করে সামষ্ট্রিক অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও আর্থিক খাত নিয়ে নীতি প্রণয়ন ও সংস্কার বাস্তবায়নে ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে। এসব বিবেচনায় আমি বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এর আগে একটি ছবিকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাশরুর রিয়াজকে আগের সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে তুলে ধরেন অনেকে। এরপর বিএসইসির কিছু কর্মকর্তাও তাকে নিয়ে আপত্তি তোলে। তবে এরপর আবার তারা তাদের আপত্তি তুলে নেয়। এসব কারণে যোগদানে অনিচ্ছুক কিনা- এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান মাশরুর রিয়াজ।
এদিকে মাশরুর রিয়াজ যোগ দেবেন না জানতে পেরে নতুন করে বিএসইসির চেয়ারম্যান খুঁজতে শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে অনেকের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে বলেও জানা গেছে।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরদিন থেকে টানা তিনদিন ব্যাপক উত্থান হয় দেশের দুই পুঁজিবাজারে। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইতে গত সপ্তাহের শেষ তিনদিনে সাধারণ সূচক বেড়েছে প্রায় ৭ শ’ পয়েন্ট। পাশাপাশি লেনদেনেও বেশ গতি দেখা গিয়েছিলো সেই কয়েক দিনে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতেও বাজারে ছিলো তেজিভাব। রোববার প্রথম কর্মদিবসে লেনদেন ছাড়িয়ে যায় দুই হাজার কোটি টাকার ঘর। এদিনও ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে প্রায় ৯০ পয়েন্ট। টানা চারদিন উড়তে থাকা পুঁজিবাজার ধাক্কা খায় সোমবার এসে। সেদিন সকালে সূচকের উত্থান হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিক্রির চাপে কমতে থাকে মূল্যসূচক। সোমবারের ধারা অব্যাহত ছিলো মঙ্গলবারেও।
এদিন সকাল থেকেই কমতে থাকে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স। দুপুরে কিছুটা উত্থান হলেও দিনশেষে সূচকটি ৬৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান নিয়েছে ৫ হাজার ৮ শ ৬৭ পয়েন্টে। এ নিয়ে টানা দুই দিনে সূচকটি কমেছে ১৪৭ পয়েন্ট।
ডিএসইতে এদিন মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৫ কোটি টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট, যা তার আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১ শ ২৮ কোটি টাকা কম। প্রধান সূচকের পাশাপাশি এদিন কমেছে অপর দুই সূচক ডিএস-৩০ ও ডিএসইএস।
লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির দরপতন হয়েছে এদিন। ১০৬ টি প্রতিষ্ঠানের দর বাড়ার বিপরীতে কমেছে ২৬৯ টির আর অপরিবর্তিত দেখা গেছে ২৪ টি কে।
পুঁজিবাজারের মঙ্গলবারের আচরণকে স্বাভাবিক দর সংশোধন বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারিরা। অনেকেই গত কয়েকদিনে দর বাড়তে দেখে মুনাফার জন্য হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করেছেন বলেও জানিয়েছেন।
জাহিদ হোসেন নামে পুঁজিবাজারের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘স্বাভাবিক নিয়মেই বাজার সংশোধন হয়েছে। এখানে ভয় পাওয়ার কারণ নাই। ৮০০ সূচক বাড়ার পর দুইশ কমবে এটাই স্বাভাবিক, বরং না কমলেই বুঝতাম ব্যাপারটা অস্বাভাবিক।’
আরেক বিনিয়োগকারী ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘অনেকদিন ধরে কোন শেয়ার বিক্রি করি না লোকসান ছিলো বলে। এখন দেখলাম কিছুটা হলেও লোকসান কমে এসেছে। আবার টাকারও দরকার ছিলো। তাই কিছু শেয়ার আজকে বিক্রি করলাম।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য