সেপ্টেম্বরের মতো চলতি অক্টোবর মাসেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার চলতি মাসের ২৭ দিনের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, অক্টোবর মাসের প্রথম ২৭ দিনে ১৩৬ কোটি ৪৯ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৫ কোটি ৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।
অথচ চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে প্রতি দিন গড়ে ৭ কোটি ডলার করে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
চলতি মাসের বাকি চার দিনে এই হারে রেমিট্যান্স এলে সেপ্টেম্বরের মতো অক্টোবর মাসেও দেড় বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি রেমিট্যান্স আসবে। গত বছরের অক্টোবরে ১৬৬ কোটি ৬৮ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। জুলাইয়ে এসেছিল ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার; যা ছিল আগের ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে বেশি ছিল ১২ শতাংশ।
আগস্টে আসে ২ দশমিক শূন্য চার বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। ওই দুই মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ছিল ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার এসেছিল।
তবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) হিসাবে রেমিট্যান্স প্রবাহে এখনো প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এই তিন মাসে ৫৬৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেও (জুলাই-আগস্ট) রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। তবে সেপ্টেম্বরে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সবশেষ যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে চলতি অক্টোবর মাসে রেমিট্যান্সের মতো রপ্তানি আয়ও বেশ কম আসবে। আর এই দুই সূচকে নেতিবাচক ধারার কারণে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নেমেছে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে।
রোববার দিন শেষে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এই সূচকের পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের ৩০ জুনের পর যা সর্বনিম্ন। গত আগস্ট মাসে আমদানি খাতে ব্যয় হয়েছে ৬ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে।
প্রকৃত রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি
তবে রিজার্ভের এই হিসাব নিয়েও প্রশ্ন আছে। বেশ কিছুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের যে তথ্য প্রকাশ করছে, তা থেকে প্রকৃত রিজার্ভ ৮ বিলিয়ন ডলার কম। সংকট মোকবিলায় সরকার আইএমএফের কাছে সাড়ে ৪ বিলিয় ডলারের যে ঋণ চেয়েছিল, তা নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনার জন্য আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল এখন ঢাকায় অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে গভর্নরসহ বাংলাদেশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করছেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। বৈঠকে রিজার্ভের হিসাবায়নে মোট রিজার্ভ ও প্রকৃত রিজার্ভকে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করার কথা বলা হয়। রিজার্ভ থেকে কোন কোন বিনিয়োগকে বাদ দিয়ে প্রকৃত রিজার্ভ হিসাব করতে হবে, তা–ও আবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এতে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ফলে এখন থেকে আইএমএফের কাছে তথ্য পাঠানোর সময় প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য পাঠানো হবে। এক বছর আগেও দেশে রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার (৪৮ বিলিয়ন)। আমদানি খরচ বাড়ায় যা এখন কমে হয়েছে ৩৫ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। এ রিজার্ভ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার দিয়ে গঠন করা হয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ)। আবার রিজার্ভের অর্থ দিয়ে গঠন করা হয়েছে লং টার্ম ফান্ড (এলটিএফ), গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ)। বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতেও সোনালী ব্যাংককে অর্থ দেওয়া হয়েছে। আবার পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতেও রিজার্ভ থেকে অর্থ দেওয়া হয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দেয়া হয়েছে। এসব খাতে সব মিলিয়ে ব্যবহৃত হয়েছে ৮ বিলিয়ন ডলার।
আকুর দেনা শোধের পর ২৫.৫ বিলিয়নে নামবে
আইএমএফ বলছে, এসব বিনিয়োগকে বাদ দিয়ে রিজার্ভের প্রকৃত হিসাব করতে হবে। কারণ, রিজার্ভের এসব অর্থ চাইলেই ফেরত পাওয়া যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে না। আইএমএফের শর্ত মানলে বর্তমানে রিজার্ভ কমে হয় ২৭ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। আর আকুর ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর তা নেমে আসবে ২৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে।
সে হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একটি দেশের কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ রিজার্ভ থাকতে হয়। সে বিবেচনায় বেশ অস্বস্তিতে আছে বাংলাদেশ।
তবে আশার কথা হচ্ছে, ডিসেম্বরের মধ্যে আইএমএফের ঋণের সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তির দেড় বিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ঋণটা পাওয়া গেলে সংকট কিছুটা হলেও কেটে যাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা আহসান এইচস মনসুর।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইএমএফের মূল কাজ হচ্ছে ক্রাইসিস ঠেকানো। সংস্থাটির এই ঋণ একটি আস্থার সৃষ্টি করবে। বিশ্বব্যাংক তখন পাশে থাকবে। তারা ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার কম সুদের যে ঋণ দিতে চাচ্ছে, সেটা দ্রুত দিয়ে দেবে। এডিবি এগিয়ে আসবে। জাইকা আসবে। সবাই এগিয়ে আসবে। তখন তারা সবাই তাদের সাপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসবে। রিজার্ভ বাড়বে; সরকার সাহস পাবে। আর সেই সাহসের উপর ভর করে করোনা মহমারির মতো এই সংকটও মোকাবিলা করতে পারবে।’
আরও পড়ুন:
ঈদের আগে মার্চ মাসে রেকর্ড রেমিট্যান্সের পর এবার রিজার্ভ নিয়ে সুখবর দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মাস শেষ হওয়ার আগেই দেশের রিজার্ভ ছাড়িয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দেশের রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ২৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুযায়ী, বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ২০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার।
নিট রিজার্ভ গণনা করা হয় আইএমএফের বিপিএম-৬ পরিমাপ অনুসারে। গ্রস রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বাদ দিলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ পাওয়া যায়।
মার্চের ৯ তারিখ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল বাবদ ১৭৫ কোটি ডলার পরিশোধ করায় গ্রস রিজার্ভ নেমে আসে ২৫ বিলিয়নের নিচে এবং বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২০ বিলিয়নের থেকেও কমে যায়।
আকুর বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬-এর মান অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ হয়েছিল ১৯ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার, যা এ কয়েক দিনে আবার ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠে এসেছে।
এর আগে মার্চের প্রথম ২৬ দিনে আসে ২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স, যা দেশের ইতিহাসে যেকোনো মাসের তুলনায় সর্বোচ্চ।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার জন্য আগামী ১৭ এপ্রিল দিন ঠিক করেছেন ঢাকার একটি আদালত।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ঠিক ছিল মঙ্গলবার। তবে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান নতুন এ দিন ঠিক করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জালিয়াতি করে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করা হয়। পরে ওই টাকা ফিলিপাইনে পাঠানো হয়।
দেশের অভ্যন্তরের কোনো একটি চক্রের সহায়তায় হ্যাকার গ্রুপ রিজার্ভের অর্থ পাচার করে বলে ধারণা করেন সংশ্লিষ্টরা।
ওই ঘটনায় একই বছরের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপপরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মতিঝিল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইন-২০০৬- এর ৫৪ ধারা ও ৩৭৯ ধারায় একটি মামলা করেন।
মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে।
আরও পড়ুন:রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থের ৮০ শতাংশ ফেরত আনা হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বাকি অর্থ আদায়ে মামলা চলছে। মামলায় জিতে বাকি অর্থও ফেরানো সম্ভব।
রাজধানীর একটি হোটেল শনিবার ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ায় দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স প্রবাহ স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠানই ২০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। সেসব অর্থ উদ্ধারে কাজ চলছে। বিদেশিরাও সহযোগিতা করছেন।
গভর্নর বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন তথা এফবিআইসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। বিদেশি আইনজীবীও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আনতে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ায় বছরে সরকারের ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। গত ৫ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩০০ কোটি ডলার। রপ্তানি বেড়েছে ২৫০ কোটি ডলার।
তিনি বলেন, প্রশিক্ষিত কর্মী বিদেশে পাঠাতে পারলে রেমিট্যান্স বছরে ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হবে।
সৌদি আরবকে টপকে রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষে উঠে এসেছে দুবাই।
একে আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে গভর্নর জানান, সৌদি আরব থেকে অর্থ প্রথমে দুবাইয়ে আসছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে আসছে। দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান এই সুযোগে মুদ্রা বিনিময় হার ম্যানুপুলেট (হস্তক্ষেপ) করার চেষ্টা করছে।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ২ হাজার ৪৯০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। এ ছাড়া বিপিএম-৬ গণনার মান অনুযায়ী রিজার্ভ এখন দুই হাজার কোটি ডলার হয়েছে।
গত ৮ জানুয়ারি বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৫৭ কোটি ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১৬৭ কোটি ডলার।
এ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘চার মাস চলার মতো রিজার্ভ আছে। তাই ভয়ের কিছু নেই।’
আরও পড়ুন:নতুন বছরে প্রথম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে পদ্মা ব্যাংক পিএলসির, যা ব্যাংকটির ১২১তম সভা।
ব্যাংকের হেড অফিসে গত ৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় সভাটি।
মো. শওকত আলী খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পদ্মা ব্যাংকের পর্ষদ সভায় অন্য পরিচালকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবর রহমান, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন, তামিম মারজান হুদা, শাহনুল হাসান খান, ডা. ফারহানা মোনেম, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান, ব্যারিস্টার-এট-ল’ এবং এইচএম আরিফুল ইসলাম এফসিএ।
সভা পরিচালনা করেন পদ্মা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মো. তালহা (চলতি দায়িত্বে)।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা ডিসেম্বর মাসে রেকর্ড পরিমাণ ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। এটা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় ৩২ শতাংশ বেশি।
প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দেশে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে প্রবৃদ্ধি ২৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কারণ এই সময়কালে মোট ১৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। গত বছর এটা ছিল ১০ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, সরকার অনাবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) বৈধ চ্যানেলে দেশে অর্থ প্রেরণে উৎসাহিত করায় দেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ১২ সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। বিএফআইইউর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
একইসঙ্গে তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ইতোমধ্যে পাঠিয়েছে সংস্থাটি।
হিসাব তলব করা সাংবাদিকরা হলেন- সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ্র বাদল, ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন, বাংলাদেশ পোস্টের বিশেষ প্রতিনিধি নুরুল ইসলাম হাসিব, নাগরিক টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক দ্বীপ আজাদ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসের সাবেক প্রধান বার্তা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, উপ-প্রধান বার্তা সম্পাদক মো. ওমর ফারুক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের সাবেক মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি হোসনে আরা মমতা ইসলাম সোমা, দৈনিক জনকণ্ঠের ডেপুটি এডিটর ওবাইদুল কবীর মোল্লা, দৈনিক জাগরণ সম্পাদক আবেদ খান, ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত এবং গ্লোবাল টিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।
বিএফআইইউর নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, হিসাব তলব করা ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী ইত্যাদি চিঠি দেয়ার তারিখ থেকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউ-তে পাঠানোর জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশে সুশাসনের ভিত্তি মজবুত হওয়ায় অর্থ পাচার উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। অর্থ এখন আর বিদেশে ডাইভার্ট হচ্ছে না; বরং তা দেশের মধ্যেই অবস্থান করছে।
শনিবার টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ইসলামী ব্যাংকের ৪০০তম শাখা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, ‘যারা অর্থ নিয়ে দেশ ছেড়েছে, তাদের অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি। ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হবো, হয়তো একটু সময় লাগবে। তবে আমরা হাল ছাড়ব না।’
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘একসময় আমাদের রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছিল। ব্যালেন্স অফ ক্রেডিটের কারণে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটেছিল। আমরা সেই সংকট থেকে বেরিয়ে এসেছি। এখন রিজার্ভ আর কমছে না।
‘গত ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এক ডলারও বিক্রি করেনি। ব্যালেন্স অফ পেমেন্টের ঘাটতিও দূর হয়েছে। বর্তমানে এটি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। গত পাঁচ মাসে অতিরিক্ত তিন মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে।’
দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ‘বিদেশে কর্মরত ভাই-বোনদের পাঠানো টাকা এখন খুব দ্রুত এবং নিরাপদে পরিবারের হাতে পৌঁছাচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইতিহাস বলে, ইসলামী ব্যাংক দেশের এক নম্বর রেমিট্যান্স সংগ্রাহক প্রতিষ্ঠান।’
ব্যাংকিং খাতে আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে খাদ্যপণ্যের উচ্চ মূল্যই মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণ। তবে আমরা আশা করছি, আগামী চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে খাদ্যপণ্যের দাম কমে একটি স্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। মনে রাখতে হবে, ব্যাংক কোনো ব্যক্তি বা পারিবারিক প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি আমানতকারী প্রতিষ্ঠান, যা জনগণকে সেবা দেয়।’
ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড অফ ডাইরেক্টরসের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা।
বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল, এফসিএস চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম, রিস্ক কমিটির চেয়ারম্যান ড. এম মাসুদ রহমান এবং ইনডিপেন্ডেন্ট ডাইরেক্টর মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব।
অনুষ্ঠানে শরীয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য