× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

অর্থ-বাণিজ্য
It is not possible for the government alone to deal with the crisis
google_news print-icon

‘সরকারের একার পক্ষে সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয়’

সরকারের-একার-পক্ষে-সংকট-মোকাবিলা-সম্ভব-নয়
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। ছবি: নিউজবাংলা
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘দুই বছরের করোনা মহামারির ধাক্কা কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরও বেশ চাপ সৃষ্টি করেছে। বেড়ে গেছে সব ধরনের পণ্যের দাম। সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। দিন যত যাচ্ছে, সংকট তত বাড়ছে। মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। সরকারের একার পক্ষে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সম্মিলিতভাবে সংকট মোকাবিলা করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।’

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি এবং ইটিবিএল সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিজওয়ান রাহমান বলেছেন, দুই বছরের করোনা মহামারির ধাক্কা কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরও বেশ চাপ সৃষ্টি করেছে। বেড়ে গেছে সব ধরনের পণ্যের দাম। সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। দিন যত যাচ্ছে, সংকট তত বাড়ছে। মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। সরকারের একার পক্ষে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সম্মিলিতভাবে সংকট মোকাবিলা করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিসহ দেশের সব মানুষকে এই অনুরোধ করেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিউজবাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি

দুই বছরের বেশি সময়ের করোনাভাইরাস মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তছনছ হয়ে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি। যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে কেমন চলছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য?

প্রতিদিন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ভালো অবস্থায় আছে সেটিও বলা যাবে না; আবার খুব খারাপ আছে সেটিও বলা যাবে না। ব্যবসায়ীরা এই মুহূর্তে খুবই কনফিউজড। গতি কোন দিকে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা বুঝতে পারছেন না। বাংলাদেশে বর্তমানে যে সমস্যাগুলো হচ্ছে, এগুলো কিন্তু শুধু বৈশ্বিক কারণে। এখন এটি কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এ রকম সমস্যা ১০ বছর আগে হলে বাংলাদেশে এত সমস্যা হতো না। কিন্তু এখন বাংলাদেশ একটি গ্লোবাল প্লেয়ার। আজকে যদি বাংলাদেশে কিছু হয়, তাহলে বিশ্ববাজারে পাটের দাম বেড়ে যাবে। বিশ্ববাজারে চায়ের দাম বেড়ে যাবে। বাংলাদেশের কিছু হলে বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাকের (আরএমজি) দাম বেড়ে যাবে। ওষুধের দাম বেড়ে যাবে। চামড়ার তৈরি জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। কারণ আমরা এগুলো বিশ্বের কাছে সরবরাহ করি।

সার্বিকভাবে বাংলাদেশ এখন একটু হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের ডলার ক্রাইসিস আছে। এনার্জি ক্রাইসিস আছে, এগুলো মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। এখন আমাদের ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি, পলিটিক্যাল ডিপ্লোমেসি আরও স্ট্রং হতে হবে। আমাদের এখন শক্ত হতে হবে। আমাদের এনার্জি ক্রাইসিস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের এলএনজি আমদানি করতে হবে। আমি রাশিয়া থেকে নেব না ব্রুনাই থেকে নেব, না চায়না থেকে নেব সেটি বিষয় নয়। দেশের স্বার্থের জন্য আমাদের এগুলো করতে হবে। এটি ক্রাইসিস মোমেন্ট। সব সিদ্ধান্ত ঠান্ডা মাথায় নিতে হবে।

এই মুহূর্তে সরকারের হাতেও তেমন কোনো কন্ট্রোল নেই। দুটি দেশের যুদ্ধের কারণে এই সমস্যা হয়েছে। সরকারের এখানে কী করার থাকতে পারে। ডলারের দামের অবস্থাটা দেখেন। কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ১২০ টাকাও উঠে গিয়েছিল; কিছুই করার নেই। এখন কেউ এলসি খুলতে পারছে না। আমাকে একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী বললেন, তিনি ২১ হাজার ডলারের এলসি খুলতে পারছেন না। এখানে তো আমাদের বলার কিছু নেই। জ্বালানি নিয়ে আমাদের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক ধরনের কথা হয়েছে। গত বুধবারও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে আমিও ছিলাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এই সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। সরকারের একার এখানে কিছু করার নেই। যে সরকারই থাকুক, কিছু করতে পারবে না।

তবে আমরা একটি বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি। আমাদের এত রিজার্ভ দিয়ে কী করব। এর থেকে ২ বিলিয়ন ডলার ছেড়ে দেন। কিছু তেল নিয়ে আসেন। আমাদের এনার্জি কিনে আনা দরকার। আবার আপনি বাংলাদেশে সারের ভর্তুকি কমাতে পারবেন না। আমেরিকার মতো দেশ এখনো সারে ভর্তুকি দেয়। আপনি অন্যান্য ব্যবসা থেকে ভর্তুকি কমিয়ে আনেন। আমাদেরও সেটি করতে হবে, না হলে আমরা খাদ্যে নিরাপত্তা দিতে পারব না। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বলেন, আর অর্থনীতি বলেন, কেমন যাচ্ছে সেটি বিষয় না। কতদিন যাবে সেটি হচ্ছে বিষয়। এই যুদ্ধ কতদিনে থামবে, তা কেউ কিছু বলতে পারছেন না। তাই সবকিছুই এখন অনিশ্চিত। এই অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সামনে রেখেই আমাদের চলতে হচ্ছে। কতদিন চলতে হবে জানি না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই আশঙ্কার কথা বলছেন, অনিশ্চয়তার কথা বলছেন। খরচ কমানোর আহ্বান জানিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করছেন। এতে কি দেশবাসীর মধ্যে ভয়-শঙ্কা আরও বাড়ছে? আপনার কাছে সার্বিক পরিস্থিতি কেমন মনে হচ্ছে? কোন পথে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের ভালোর জন্যই এসব কথা বলছেন। যাতে মানুষ সতর্ক হয়। আমরা একসময় ভালো অবস্থায় ছিলাম। কয়েক বছর আমাদের গ্রোথ (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) ছিল ৮ শতাংশের ওপর। তারপর যখন আমরা করোনাভাইরাসের মধ্যে হিমশিম খেয়ে গেলাম। তখনও কিন্তু বাংলাদেশে ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে; যা ছিল এই অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আমি এ কথাগুলো নির্দলীয় কথা বলছি। সব সময়ই আমি এই ধরনের কথা বলি। সরকার যেখানে ভুল করছে, সেটি বলি। আবার ঠিক করলেও বলি। করোনার সময় সরকার অনেক ভুল করেছে আমরা সেটি বলেছি তো। আবার বাংলাদেশ সরকার করোনাভাইরাসের সময় ভালো দেশ পরিচালনা করেছে। সরকার বাংলাদেশের মতো ১৭ কোটির জনসংখ্যার দেশে অনেক ভালোভাবে অর্থনীতি সামলেছে। সবাই তখন ভালো ভূমিকা পালন করেছেন।

তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে কিন্তু প্রচুর সমালোচনা হয়েছে। এখন এই সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ঘরের সামনে চাষ করুন। এটি তো গুলশানের বাসিন্দাদের বলেননি। এটি নিয়ে ভয় পেয়ে লাভ নেই। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সামনে ডলারের দাম ১৩০ টাকা যাবে না- কোনো বাংলাদেশি ব্যবসায়ী কি সেই গ্যারান্টি দিতে পারবেন? বর্তমানে জ্বালানির দাম চার গুণ হয়ে গেছে, এটি যে ৪০ গুণ হবে না সেটি কি কেউ বলতে পারবেন? সে জন্য প্রধানমন্ত্রী বলতেই পারেন আপনাকে সাশ্রয়ী হতে। আপনি এখন যেভাবে চলছেন, সেভাবে যদি চলতে থাকেন তাহলে আপনি আর তিন মাস চলতে পারবেন। আপনি যদি সাশ্রয়ী হয়ে চলতে থাকেন, তাহলে তিন বছর চলতে পারবেন।

আশা করা যায় তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধ-টুদ্ধ সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। আমি এটিকে এভাবে দেখি। যারা সরকারবিরোধী, তারা হয়তো অন্যভাবে দেখেন। একেকজন একেকভাবে চিন্তা করেন।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে। তবে বাংলাদেশ যে খারাপ অবস্থায় যাবে না সেটির কোনো গ্যারান্টি নেই। তবে শ্রীলঙ্কা হবে সেটিও ঠিক না। বাংলাদেশের বেসরকারি খাত খুব শক্তিশালী। খুব খারাপ সময়ে এই খাত ৬ থেকে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দিয়েছে।

করোনার মধ্যে সব দেশ যখন খুব খারাপ অবস্থায় ছিল, বাংলাদেশ তখন ভালো ছিল। এখন প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন তুমি সাবধানে থাকো, সেটিকে নেগেটিভ হিসেবে নেয়া যাবে না।

প্রায় এক বছর ধরে ডলারের বাজার অস্থির। নানা পদক্ষেপ নিয়েও বাগে আসছে না। এক মাসের বেশি সময় ধরে বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তার পরও ডলারের দাম কমছে না। সমস্যা আসলে কোথায়? কীভাবে সমাধান হবে? ডলারের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে?

ডলারের বাজার বলা যাচ্ছে না কোন দিকে যায়। এটি পুঁজিবাজারের মতো হয়ে গেছে। কোন দিকে যায় বলা যায় না। গত বছর আমি আমার আগামী তিন বছরের ফোরকাস্টিংটা করেছিলাম। তখন আমি ডলারের দাম ৮৪-৮৫ টাকা ধরেছিলাম। এখন আমি দেখছি সেই ডলার ১১০, ১১৫ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। সেটি মানিয়ে নেয়া আমাদের জন্য খুব কঠিন। আমরা কোনো ধারণা করতে পারছি না আগে থেকে। যার কারণে আমাদের সব সময় একটি বাফার ধরে রাখতে হয়। এখন কিন্তু রপ্তানিকারকদের জন্য শুধু আমদানি খোলা। আর সবার জন্য আমদানি বন্ধ। শুধু তৈরি পোশাকের কাঁচামালের জন্য এলসিটা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। তখন যারা বাধ্যতামূলকভাবে এলসি করবে। ডলারের দাম আরও বেড়ে যাবে।

আমি মনে করি বাংলাদেশ সমস্যা থেকে উতরে যাবে। বাংলাদেশে এখনো ৩৬ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে। তখন তো ডলারের প্রাইজটি সেখানে এফেক্ট করবে। গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে একটি করেছিল। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। সেটি তো আমরা ব্যবসায়ীরা মিলে বিদ্যুৎ প্রস্তাব দিলাম যে আপনি এই ডেভেলপমেন্ট ব্যবহার করেন এখন। আপনি তো এখন গ্যাস ডেভেলপমেন্ট করছেন না। দরকার হলে আপনি আমাদের বিদ্যুতের দাম বাড়িয় দেন। বিদ্যুতের দাম যদি বাড়াতে হয় আপনাকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে হবে। এটির জন্য যা যা করণীয় আপনি করেন।

আপনি এখন ফার্নিচার কিনবেন নাকি এলএনজি কিনবেন। গ্যাস ডেভেলপমেন্টের বিষয়ে আমরা পরে আসি। কারণ গ্যাস পেতে পেতে তো আমাদের ১০ বছর লাগবে।

তবে আমি এ ক্ষেত্রে সরকারকে বলব আপনারা সব সময় একটি বিপদে একটি শর্ট টার্ম সলিউশনকে লং টার্ম বানিয়ে ফেলেন। এটি আর করেন না। আপনারা এখন শর্ট টার্ম সলিউশন করেন। একই সঙ্গে লং টার্ম ডিসিশনটি নিয়ে নেন। আওয়ামী লীগ সরকার যে ১৩-১৪ বছর ক্ষমতায় ছিল, এতদিনে তো কয়েকটি গ্যাসফিল্ড খুঁড়ে ফেলতে পারত। কিন্তু সেটি করা হয়নি। আমাদের কমপ্লেইন করে লাভ নেই। এখন করব, এই মুহূর্তে করব। ১০ বছর পরে গিয়ে আমরা পাব। এটি কিন্তু পদ্মা সেতুর মতো একটি মাইলফলক থাকবে। আপনি এক্সপেনসিভ ফুয়েলের ওপর ডিপেন্ডেন্ট থাকতে পারবেন না। যেহেতু আপনি আমদানিনির্ভর দেশ। আপনি রপ্তানি কমাতে পারবেন না। আবার বিশ্ববাজারে যদি তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে আপনার রপ্তানি বাজার তো ধসে পড়বেই। বাংলাদেশের সিঙ্গেল লার্জেস্ট এক্সপোর্ট ডেস্টিনেশন হচ্ছে জার্মানি। বাংলাদেশের টোটাল এক্সপোর্টের ১৫ শতাংশ জার্মানিতে যায়। আমাদের ৮৩-৮৪ শতাংশ রপ্তানি যায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে। সেসব দেশে যদি মূল্যস্ফীতি বাড়তেই থাকে, তাহলে ওই সব দেশের লোক পোশাক কেনা কমিয়ে দেবে- এটিই স্বাভাবিক। তাহলে নিশ্চিতভাবেই আগামী বছর আমার রপ্তানি আয় কমে যাবে।

যুক্তরাজ্যে এখন ১০০ শতাংশের ওপর মূল্যস্ফীতি। সেখানে তো পণ্যের চাহিদা কমে যাবে। লন্ডনে আমার এক্সপোর্ট কমে যাবে। যদি এক্সপোর্ট কমে যায়, তাহলে আমার আয় কমে যাবে। এখানে তো বাংলাদেশের কিছু করার নেই। একসময় বিশ্বে সমস্যা হলে বাংলাদেশের কিছু হতো না। তখন বাংলাদেশ ছিল একটি পুঁটি মাছ। আজকে বাংলাদেশ কিন্তু বোয়াল মাছ। বিশাল ব্যাপার। এ জন্য আমি আবার দৃষ্টি আকর্ষণ করব সরকারের এবং বেসরকারি খাতের। রপ্তানি বাজার এবং পণ্য দুটিকে একসঙ্গে বহুমুখী করা লাগবে। আপনি আমেরিকার ওপর ডিপেন্ডেন্ট থাকবেন সারাক্ষণ। আপনি সারাক্ষণ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ওপর ডিপেন্ডেন্ট থাকবেন। আপনি নিজে যে এত বড় একটি মহাদেশে বাস করেন, সেটি কি ভুলে গেছেন। এশিয়ায় আপনার এক্সপোর্ট মাত্র ১১ শতাংশ কেন ভাই? ৮৪ শতাংশ যাচ্ছে ইউরোপ আর আমেরিকায় এবং ৪ শতাংশ যাচ্ছে আফ্রিকায়। তাই আমি বলছি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতেই হবে। আমি বলছি না বাড়াতে; আপনাকে আফ্রিকার মার্কেট এক্সপ্লোর করতে হবে, আপনাকে এশিয়ার মার্কেট এক্সপ্লোর করতে হবে। আপনাকে চায়নায় যেতে হবে। চায়না থেকে আমি শুধু মাল কিনব কেন? আমি চায়নায় মাল বেঁচতে পারি না। এটি তো সম্ভব। আপনাকে পণ্য বহুমুখীকরণ করতে হবে। আপনি গার্মেন্টস করছেন ভালো কথা। সেটি কিন্তু আমরা চামড়াশিল্পের জন্য করতে পারি। আমরা পাটশিল্পের জন্য করতে পারি। সেটি আমরা কৃষি খাতের জন্য করতে পারি। আমরা তথ্যপ্রযুক্তির জন্য করতে পারি। প্রতিটি খাতের জন্য যদি আমরা করতে পারি, তাহলে কিন্তু আমাদের পণ্য ডাইভারসিফাই হবে। এই সবকিছুর মধ্যে আপনি যতক্ষণ না আপনার এক্সপোর্ট বাড়াবেন। আপনি ডলারটিকে কন্ট্রোল করতে পারবেন না। আপনি ডলারের প্রাইজ রিভাইস করতে পারবেন না। বিশ্ববাজার যতদিন ঠিক না হবে, ততদিন এই সমস্যা থাকবেই। যখন দুনিয়ার বড় বড় সাহেব মনে করবে যে অস্ত্রের ব্যবসা বন্ধ করে একটি শান্তির ব্যবসা করতে পারতাম। তাহলে হয়তো এই সমস্যার সমাধান হবে।

আপনি রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের পাশাপাশি বাজার বাড়ানোর কথা বলছেন। এরই মধ্যে কিন্তু আমরা পাশের দেশ ভারতে আমাদের রপ্তানি বাড়তে দেখছি। গত অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে ভারতে। প্রায় দেড় শ কোটি মানুষের দেশ ভারতের বাজার নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?

ভারতের বাজার আসলে ডিপ্লোমেটিক ইস্যু। এ বিষয়গুলো কূটনৈতিক, এখানে বেসরকারি খাতের করার কিছু নেই। এ বছরের জুলাইয়ে আমরা ৪৯ জনের একটি দল ভারত গিয়েছিলাম, প্রায় ৪০০-৫০০ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বললাম। ব্যবসায়ীরা কিন্তু ব্যবসা করার জন্য অস্থির। কিন্তু আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আর তাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কী কথা হয়, সেটি তো আমরা বলতে পারব না। তাদের মধ্যে কী ধরনের সম্পর্ক আছে, সেটির ওপর দুই দেশের ব্যবসা নির্ভর করে।

আমি তো মনে করি নর্থইস্ট রিজিয়নটিকে দিল্লির সঙ্গে কানেক্ট করার জন্য বাংলাদেশ শুড বি দ্য হাব। ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যান্ড দ্য সেভেন সিস্টারস। এটি তো একটি ডিপ্লোমেটিক ইস্যু। এখানে আমরা কী করতে পারি। আমি নিজে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে বললেন আমরা দেখছি। আমি ওনাকে বললাম আপনি তো দেখছেন আমার জন্মের আগে থেকে। আপনি যখন একটি দেশের থেকে আপনার ৬০ শতাংশের বেশি আমদানি করবেন, সেই দেশের প্রতি আপনি অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি ইম্পোজ করতে পারেন। এখন আপনি আমাকে বলেন, গোটা ভারতের ৬০ শতাংশ কি বাংলাদেশ থেকে ইম্পোর্ট হয়? সেটি কোনো দিন সম্ভব না, বাংলাদেশে কোনো পাটই নেই। তার পরও কেন আপনি আমার ওপরে অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি দিচ্ছেন। এগুলো হচ্ছে ডিপ্লোমেটিক ইস্যু। এগুলোকে আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। এ ছাড়া অনেক ঝামেলা আছে, সেগুলো আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এগুলো এক রাতে ঠিক হবে না। এগুলো চালিয়ে যেতে হবে।

বুধবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেশের নাগরিকের কাছে যথাযথ মূল্যে সরবরাহ করার আহ্বান জানিয়েছেন। আপনি কি মনে করেন ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফা করছেন, বেশি দামে দেশবাসীর কাছে পণ্য বিক্রি করছেন?

সত্যি কথা বলতে কী বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্যসহ সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদেরও খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তারা বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ডলারের দাম বাড়ার প্রভাবও পড়েছে পণ্যমূল্যে। সবকিছু মিলিয়েই কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। এতে দেশের সাধারণ মানুষ যে খুবই কষ্টে আছে, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। এই কঠিন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদের ব্যবসায়ীদের কম লাভে পণ্য বিক্রি করে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি।

মনে রাখতে হবে, করোনা মহামারির সময় কিন্তু সরকার আমাদের প্রণোদনা দিয়েছে। এখন যদি আমরা সরকারের পাশে, মানুষের পাশে না দাঁড়াই, তাহলে কিন্তু ঠিক হবে না। এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন, প্রধানমন্ত্রী আপ্রাণ চেষ্টা করছেন, কিন্তু ওনার নেতৃবৃন্দ উল্টাটি করছেন। প্রধানমন্ত্রী মোবাইলের মাধ্যমে টাকা দিলেন, আর ওনার এক নেতার কাছে ৩০০ জনের সিম পাওয়া গেল। যা-ই হোক, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সবাইকে ইউনাইটেড হওয়ার জন্য। আমরা যদি সবাই একসঙ্গে উঠে দাঁড়াই, তাহলে তো মনে হয় না আমাদের কোনো সমস্যা হবে। মহামারিতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু আমরা তো সার্ভাইব করে গেছি। প্রধানমন্ত্রী এখন আমাদের বলছেন, মুনাফা একটু কম করতে। এই মুহূর্তে মুনাফা না করলে ভালোই হয় বলে আমি মনে করি। কিন্তু অনেকে এখন হয়তো চিন্তা করছেন যে আমি তো গত দুই-তিন বছর হিমশিম খেয়ে গেছি। এখন একটু পুষিয়ে নিই।

বর্তমান পরিস্থিতিতে নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য একটি জিনিস চাওয়া যেমন ডিফিকাল্ট, একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্য চাওয়া কিন্তু আরও কঠিন। সে কিন্তু চায় না, তার মধ্যে একটি ইগো কাজ করে। মধ্যবিত্তরা সমস্যায় থাকে, কোন দিকে যাব আমরা। তবে সব ব্যবসায়ী খারাপ না। একজনের জন্য সব ব্যবসায়ীকে খারাপ বলা যাবে না। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে যারা খারাপ ব্যবসায়ী তারাই ভালো আছে, যারা ভালো ব্যবসায়ী তারাই বিপদে আছে। যা-ই হোক, সেটি ভিন্ন আলোচনা। আমি বলতে চাই, এই মুহূর্তে মুনাফা করা ঠিক না। এর পরে আবার সময় আসবে, তখন মুনাফা করবেন। এভাবেই তো বাংলাদেশ এগিয়েছে। আগে মানুষ বাংলাদেশকে চিনত না। এখন সবাই সমীহ করে।

নির্বাচন কমিশন ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে অর্থনীতির কী হবে? ব্যবসা-বাণিজ্যেরই বা কী হবে?

এটি তো বাংলাদেশের রাজনীতির বিউটি। প্রতি পাঁচ বছরেই হয়। এটি তো ভালো আমাদের বিরোধী দলরা সমাবেশ করছে। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং হবে সেটিই স্বাভাবিক। তবে অতীতের মতো সংঘাতের রাজনীতি যেন না হয়, সেটি সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। এটি যেন ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো বাধা সৃষ্টি না করে, সেটিই মনে রাখতে হবে।

রাজনীতি করা সবার অধিকার। আমরা চাই একটি শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠু পরিবেশ। সেটি থাকলেই ভালো, সরকারি দল-বিরোধী দল সবাই রাজনীতি করবে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ওপর, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর একটু চোখ রাখবেন প্লিজ! বাস-টাসগুলো পুড়িয়ে দিয়েন না, আমরা আমাদের ব্যবসা করি, আপনারা আপনাদের রাজনীতি করেন। আসুন, সবাই মিলেমিশে দেশটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই।

আরও পড়ুন:
‘জঙ্গিদের অনলাইন কার্যক্রমও এখন নিয়ন্ত্রণে’
ওষুধ শিল্প ভিন্ন উচ্চতায় উঠে যাবে
১০ বছরের মধ্যে দেশে গাড়ি তৈরি হবে: নিউজবাংলাকে নাভানার সিইও

মন্তব্য

আরও পড়ুন

অর্থ-বাণিজ্য
The 5th Intex Bangladesh Exhibition starts in Dhaka

ঢাকায় শুরু ১৬তম ইনটেক্স বাংলাদেশ এক্সিবিশন

ঢাকায় শুরু ১৬তম ইনটেক্স বাংলাদেশ এক্সিবিশন

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সফল গার্মেন্টস ক্রেতা, বিপনন ও সরবরাহকারী এবং সোর্সিং এক্সিবিশন খ্যাত ইনটেক্স বাংলাদেশের ১৬তম আসর আজ রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)-তে শুরু হয়েছে। এই তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল সোর্সিং শোতে ১০টিরও বেশি দেশের ১২৫টির অধিক কোম্পানি অংশ নিচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী ক্রেতা, সরবরাহকারী এবং উৎপাদনকারীদের জন্য একটি গতিশীল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।

পোশাক খাতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ-এর নিত্য উদ্ভাবনী কৌশল ও উন্নতমানের দ্রুত উৎপাদন ক্ষমতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাহিদায় প্রাধান্য পাচ্ছে।

২০২৬ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্প রপ্তানি ৫৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ইনটেক্স-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা, সাপ্লাই চেইনে বৈচিত্র্য আনা এবং টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পে উদ্ভাবন প্রদর্শনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, গেস্ট অব অনার হিসেবে ছিলেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন।

এছাড়াও বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং এলএবিসিসিআই, কেবিসিসিআই ও বিজিসিসিআই-এর মতো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সংস্থার নেতৃবৃন্দও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

মাহবুবুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ এখন পোশাক খাতে বিশ্ব বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দ্রুত টেকসই ও মূল্য-সংযোজিত পোশাক উৎপাদনের একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। উদ্ভাবন, কমপ্লায়েন্স এবং দক্ষ কর্মী নিয়োগে কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশটি দায়িত্বশীল ফ্যাশন ও টেক্সটাইল সোর্সিংয়ের পরবর্তী অধ্যায় নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। আমরা বিশ্বাস করি, ইনটেক্স বাংলাদেশের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে মানসম্পন্ন পণ্য নিশ্চিত করবে”

এই বছরের এক্সপোতে বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য প্যাভিলিয়নের মধ্যে ভারতের (টেক্সপ্রোসিল ও পেডেক্সিলের মাধ্যমে) তুলা, মিশ্র সুতা ও টেকসই টেক্সটাইল প্রদর্শন করছে। চীন নিয়ে এসেছে টেকনিক্যাল ফ্যাব্রিক ও গার্মেন্টস ট্রিম। দক্ষিণ কোরিয়া পরিবেশবান্ধব পারফরম্যান্স উপকরণ প্রদর্শন করছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড ও জাপান নিয়ে এসেছে প্রিমিয়াম শার্টিং ও বোনা পণ্য। বাংলাদেশি প্রদর্শনকারীরা নিটওয়্যার, ডেনিম এবং ভার্টিক্যালি ইন্টিগ্রেটেড উৎপাদন সমাধানের অগ্রগতি তুলে ধরছে।

এক্সপোর মূল্যবোধ আরও বাড়াতে ইন্টারেক্টিভ বিজনেস ফোরাম (আইবিএফ) দুটি সেশনের আয়োজন করেছে। প্রথম সেশনে টেক্সটাইল উৎপাদন ও ফ্যাশনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সংযুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হবে, অন্যদিকে দ্বিতীয় সেশনে বৈশ্বিক শুল্ক ও বাণিজ্য পরিবর্তনের বাংলাদেশি রপ্তানির প্রভাব নিয়ে আলোচনা হবে। এই সেশনগুলোতে এ শিল্পের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা অংশ নিচ্ছেন, যা ব্যবসায়িক স্থিতিস্থাপকতা ও বৃদ্ধির কৌশল প্রদান করবে।

প্রদর্শনীর পাশাপাশি, ইনটেক্স বাংলাদেশ ২০২৫-এ ব্যবসায়িক সভা (বি২বি), ভিআইপি নেটওয়ার্কিং এবং ক্রেতা-সরবরাহকারীদের মধ্যে ম্যাচমেকিং সুবিধা রয়েছে— যা সোর্সিং ও ব্যবসায়িক সম্প্রসারণের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞতা প্রদান করছে।

ওয়ার্ল্ডেক্স ইন্ডিয়ার আয়োজিত এই ইভেন্টটি বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিজিবিএ, ইপিবি এবং আইবিসিসিআই, এলেবিসিসিআই, কেবিসিসিআই ও বিজিসিসিআইয়ের মতো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার সমর্থন পেয়েছে।

বাংলাদেশ যখন আরও উদ্ভাবনী ও টেকসই টেক্সটাইল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে, ইনটেক্স বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারের সাপ্লাই চেইনের সাথে দেশটিকে সংযুক্ত করার একটি প্রধান সমর্থক হিসেবে কাজ করছে।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Foreign investment in the country has decreased by 5 percent

দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৩ শতাংশ

দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৩ শতাংশ

দেশে ২০২৪ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ—এফডিআই আগের বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ কমেছে। গত বছর প্রকৃত এফডিআই এসেছে ১২৭ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। ২০২৩ সালে নিট এফডিআই ছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্টে বিদেশি বিনিয়োগ আসার ওই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ২০২৪ সাল শেষে বিদেশি বিনিয়োগের স্থিতি ১ হাজার ৮২৯ কোটি ডলার, যা দেশের জিডিপির মাত্র ৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় এ ক্ষেত্রে গড় হার ১৩ শতাংশ।

ভারতের হার ১৪ শতাংশ। ভুটানের মতো দেশে এ হার ১৭ শতাংশ। বাংলাদেশে ২০২৪ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগে অর্থের ঘোষণার পরিমাণও কমেছে।

ঘোষিত অর্থের পরিমাণ ১৭৫ কোটি ডলার। গত বছরের তুলনায় যা ৩৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে মাত্র ৭০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।

গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২১ সালে দেশের বাইরে সর্বাধিক ৮ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব যখন আরো গভীর সহযোগিতা ও বিস্তৃত সুযোগ সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা, তখন ঘটছে তার বিপরীত। ২০২৪ সালে বৈশ্বিকভাবে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ১১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় ধাক্কা। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে মন্দা, শিল্প খাতে চাপ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি কম মনোযোগ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বাণিজ্য উত্তেজনা, নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং ভূরাজনৈতিক বিভাজন বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশকে আরো জটিল করে তুলছে।

তবে অন্ধকারে কিছুটা আশার আলোও রয়েছে। ডিজিটাল অর্থনীতিকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এর প্রবৃদ্ধি এখনো অসম। ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে ডিজিটাল পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। কারণ, ডিজিটাল সংযুক্তি হতে পারে অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতির একটি শক্তিশালী চালিকাশক্তি, যদি তা সবার কাছে পৌঁছানো যায়। প্রতিবেদনটি সরকারগুলোকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিএস) অর্জনে সহায়তা করার বিষয়ে ব্যবহারিক নির্দেশনা দিয়েছে। এ সময়টাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একসঙ্গে কাজ করার, যাতে আরো সহনশীল ও টেকসই বিশ্ব গড়ে তোলা যায়। সে লক্ষ্যে প্রতিবেদনটি বিভিন্ন নীতিগত ধারণা ও পরামর্শ তুলে ধরেছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং এর আগ থেকে জ্বালানি সংকটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। যার প্রভাব কিছুটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হলেও সেটি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সন্তোষজনক নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০২৪ এ প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে এফডিআই প্রবাহ বেড়েছিল ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২০২২ সালে প্রবাহ ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়ে ছিল ৩৪৮ কোটি ডলার। ২০২৩ সালে ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমে প্রবাহ হয়েছে ৩০০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ভিয়েতনামে বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। কম্বোডিয়ায় এফডিআই প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালে হয়েছে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ। পাকিস্তানে এফডিআই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

২০২৩ সালে ৪৫টি স্বল্পোন্নত দেশে (এলডিসি) এফডিআই ১৭ শতাংশ বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলারে দাড়িয়েছে। এর প্রায় ৫০ শতাংশ প্রবাহ কেন্দ্রীভূত ছিল কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, বাংলাদেশ, উগান্ডা এবং সেনেগাল—এ পাঁচ দেশে। গত এক দশকে স্বল্পোন্নত দেশের বহিঃখাতগুলোয় অর্থায়নের অন্যান্য উৎসের তুলনায় এফডিআই প্রবৃদ্ধিই পিছিয়ে আছে। সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন সহায়তা এবং রেমিট্যান্স হার স্বল্পোন্নত দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় বেশি। ওই বছর বৈশ্বিকভাবে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ ১০ শতাংশের বেশি কমে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে স্থবির ছিল।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Bri has invented three new varieties of rice

নতুন আরো তিন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে ব্রি

নতুন আরো তিন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে ব্রি

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ধানের আরও তিনটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে একটি লবণাক্ততা সহনশীল, একটি উচ্চফলনশীল বোরো এবং অন্যটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী। এ নিয়ে ব্রি আটটি উচ্চফলনশীল বা হাইব্রিড জাতসহ মোট ১২১টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে।

নতুন উদ্ভাবিত তিনটি জাত হলো; লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি-১১২, উচ্চফলনশীল বোরো ব্রি-১১৩ ও ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ব্রি-১১৪। গত বুধবার জাতীয় বীজ বোর্ডের (এনএসবি) ১১৪তম সভায় নতুন এ তিনটি জাত অনুমোদন করা হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সভাপতিত্বে বোর্ড সভায় ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলোর মধ্যে ব্রি ধান-১১২ লবণাক্ততা সহনশীল ও মাঝারি জীবনকালীন রোপা আমনের জাত। এ জাতের ডিগপাতা প্রচলিত ব্রি ধান-৭৩-এর চেয়ে খাড়া। ব্রি ধান-১১২ লবণাক্ততার মাত্রাভেদে হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ১৪ থেকে ৬ দশমিক ১২ টন ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের জীবনকাল ১২০ থেকে ১২৫ দিন এবং গাছের উচ্চতা ১০৩ থেকে ১০৫ সেন্টিমিটার। গাছের কাণ্ড মজবুত। এ কারণে ঢলে পড়ে না। এ জাতের ধানের চাল মাঝারি চিকন ও সাদা। ভাত ঝরঝরে। এটি লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। দানা মাঝারি চিকন ও শিষ থেকে ধান সহজে ঝরে পড়ে না। জীবনকাল তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে ফসল কর্তনের পর মধ্যম উঁচু থেকে উঁচু জমিতে সূর্যমুখী ও লবণ সহনশীল সরিষা আবাদের সুযোগ তৈরি হবে।

ব্রি ধান-১১৩ জাতটি বোরো মৌসুমের জনপ্রিয় জাত ব্রি-২৯-এর বিকল্প হিসেবে ছাড়করণ করা হয়েছে। এটি মাঝারি চিকন দানার উচ্চফলনশীল জাত। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা এবং ধান পাকলেও সবুজ থাকে। গাছ শক্ত ও মজবুত বিধায় সহজে হেলে পড়ে না। জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৩ দিন। চালের আকার-আকৃতি মাঝারি চিকন ও রং সাদা। দেখতে অনেকটা নাজিরশাইলের মতো। এ ধানের চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ এবং ভাত ঝরঝরে। এ ছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় দেখা গেছে, জাতটি ব্রি ধান-৮৮-এর চেয়ে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি ফলন দিয়েছে। এ জাতের গড় ফলন হেক্টরে ৮ দশমিক ১৫ টন। উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে জাতটি হেক্টরে ১০ দশমিক ১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।

কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, নতুন ব্রি ধান-১১৪ বোরো মৌসুমের দীর্ঘ জীবনকালীন ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা। গাছ মজবুত এবং হেলে পড়ে না। পাতার রং গাঢ় সবুজ। এর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৭ দশমিক ৭৬ টন। দানা মাঝারি মোটা এবং সোনালি বর্ণের। ভাত ঝরঝরে হয়। জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাসম্পন্ন। ফলে এ জাতের ধান চাষে কৃষককে ব্লাস্ট রোগ নিয়ে বাড়তি চিন্তা করতে হবে না, উৎপাদন খরচ সাশ্রয় হবে।

ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, জাতগুলো অনুমোদন লাভ করায় এখন আমরা এসব ধানের বীজ বাজারজাত করতে পারব। কৃষকেরা এ জাতের ধান চাষ করে লাভবান হবেন। তাদের উৎপাদনও বাড়বে। উপকূলীয় অঞ্চলে পানিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকায় অনেক সময় ধান চাষ করা যেত না। এখন আমাদের ব্রি ধান-১১২ সেসব এলাকায় সহজে চাষ করা যাবে। এ ছাড়া অন্য জাতগুলো আমাদের ধান উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।

সূত্র: বাসস

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Customs VAT and Tax Office will be open on June 23 and 26

২১ ও ২৮ জুন কাস্টমস, ভ্যাট ও কর কার্যালয় খোলা থাকবে

২১ ও ২৮ জুন কাস্টমস, ভ্যাট ও কর কার্যালয় খোলা থাকবে

আগামী ২১ ও ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং এর অধীনে সব কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর কার্যালয় খোলা থাকবে। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও ওই দুই দিনও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মূলত রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে এনবিআর। গত ২ জুন আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২২ জুন বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) মোট ৩ লাখ সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা আদায় করেছে। এটি সাময়িক হিসাব। ভ্যাটের রিটার্ন দাখিলের হিসাবের এই সংখ্যা আরও বাড়বে। লক্ষ্য অর্জনে শুধু জুন মাসেই সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে।

এনবিআরকে চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। মূল লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
From now on the dollar will be market based Governor

এখন থেকে ডলারের দাম হবে বাজারভিত্তিক: গভর্নর

জুনের মধ্যে আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়
এখন থেকে ডলারের দাম হবে বাজারভিত্তিক: গভর্নর

বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে ডলার-টাকার বিনিময় হার এখন থেকে বাজারনির্ভরভাবে নির্ধারণের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।

এ সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ আগামী জুন মাসের মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের ঋণ কিস্তি পাবে বলেও জানান তিনি।

ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের দর-কষাকষি চলছিল। মূলত সে কারণে আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় করছিল না। এর মধ্যে গতকাল জানা যায়, বাংলাদেশ ডলারের বিনিময় আরও নমনীয় করতে রাজি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারে ঋণের দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করতে রাজি হয়েছে আইএমএফ।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত ৯ মাসে রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করা হয়নি, তবুও বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে এবং তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। এ অবস্থায় বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে ব্যাংকারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, বাজারভিত্তিক করায় হঠাৎ করে ডলারের রেট অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘদিন ধরে ডলারের রেট ১২২ টাকার আশপাশে রয়েছে এবং তা সেখানেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ডলারের রেট দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা-সরবরাহ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, বাইরের দেশের নির্দেশে নয়। বর্তমানে বাজারে ডলারের সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে।

তবে, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দুবাইভিত্তিক কিছু সিন্ডিকেট বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক থাকবে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ড. মো. হাবিবুর রহমান, কবির আহমেদ, উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ এবং নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।

এদিকে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের জুনের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির জন্য নির্ধারিত ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার একত্রে ছাড় করবে।

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে সকল বিষয় সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে উভয়পক্ষ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা বিনিময় হারসহ অন্যান্য সংস্কার কাঠামো বিষয়ে সম্মত হয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং বিনিময় হার ব্যবস্থায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে অধিকতর পর্যালোচনার লক্ষ্যে চতুর্থ রিভিউ সম্পন্ন হওয়ার পর উভয় রিভিউয়ের জন্য নির্ধারিত কিস্তির অর্থ একত্রে ছাড় করা হবে বলে বিগত তৃতীয় রিভিউয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ রিভিউয়ের সময় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ব্যাংক-ফান্ড সভায় এবিষয়ে আলোচনা চলমান ছিল।

এ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, জাপান এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরও প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা জুন মাসের মধ্যে পাবে বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এ অর্থ পাওয়া গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে। ফলে মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয় যে, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে যেসকল সংস্কার কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব বিবেচনায় পরিকল্পিত এবং জাতীয় স্বার্থে গৃহীত। এ সকল সংস্কার কর্মসূচির ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যক্রম শুধুমাত্র কারিগরি সহায়তা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
The United States and China agree to reduce tariffs

শুল্ক কমাতে একমত যুক্তরাষ্ট্র ও চীন

শুল্ক কমাতে একমত যুক্তরাষ্ট্র ও চীন

বাণিজ্যযুদ্ধের তীব্রতা কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। পরস্পরের ওপর আরোপ করা পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য শুল্ক ৯০ দিনের জন্য ব্যাপক পরিসরে কমাতে একমত হয়েছে দুই দেশ। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা কমাতেই এই চুক্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর বিবিসির।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের আগে চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। পরে নতুন শুল্ক যখন ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন তখন তিনি বলেছিলেন তিন মাস সবার জন্য বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক হার প্রযোজ্য হবে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দুপক্ষের মধ্যে আলোচনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, গঠনমূলক ও দৃঢ় আলোচনার পর উভয় দেশ ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করতে রাজি হয়েছে। এর আওতায় দেশ দুটি পারস্পরিক শুল্ক ১১৫ শতাংশ কমাবে।

চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত বর্তমান ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। অন্যদিকে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপ করা ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। উভয় দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আগামী ১৪ মে থেকে শুল্কের এই কাঁটছাট কার্যকর হবে।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে স্কট বেসেন্ট বলেন, আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি যে, আমাদের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। দুই পক্ষের প্রতিনিধিদলই একমত হয়েছে যে তারা বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না। মার্কিন অর্থমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশই নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পেরেছে। আমাদের লক্ষ্য ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যের পথে অগ্রসর হওয়া এবং এটি তারই সূচনা।

প্রথম দফায় শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল এবং বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কাও জোরালো হয়েছিল। তবে এবার এই চুক্তির ঘোষণায় বিশ্ব শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

শুল্ক কমানোর চুক্তির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববাজারে চাঙাভাব দেখা দেখা গেছে। হংকংয়ের প্রধান সূচক ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ স্টক ফিউচারের উত্থান হয়েছে। এছাড়া বাড়তি শুল্ক স্থগিতের খবরে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দর বেড়ে ছয় মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউরোপীয় শেয়ারবাজারগুলোও উচ্চমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু করে এবং মার্কিন বাজারগুলোও ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, এই সময়সীমার মধ্যে চীনের উচিত হবে ফেন্টানিল নামক ভয়াবহ মাদকের অবৈধ রপ্তানি বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া। এ বিষয়ে চীনের সদিচ্ছা দেখে ওয়াশিংটন আশাবাদ প্রকাশ করেছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের প্রবেশ ঠেকাতে চীন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না এমন অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
NBR will form special units to prevent money smuggling

টাকা পাচার ঠেকাতে বিশেষ ইউনিট গঠন করবে এনবিআর

টাকা পাচার ঠেকাতে বিশেষ ইউনিট গঠন করবে এনবিআর
টাকার পাচার রোধে এনবিআর তিনটি উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে। প্রথমত, আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা ও ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার ঠেকাতে দক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে বিশেষায়িত একটি ইউনিট গঠন করা যেতে পারে। এই ইউনিটের সদস্যরা প্রতারণা হয় বা হতে পারে- এমন বিল অব এন্ট্রিগুলো তদারকি ও তদন্ত করবেন। এই ইউনিট গঠন হলে একদিকে টাকা পাচার বন্ধের পাশাপাশি এনবিআরের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির সক্ষমতা বাড়বে।

টাকা পাচার ঠেকাতে বিশেষ ইউনিট গঠন করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মূলত বাণিজ্যের আড়ালে যে বিদেশে টাকা পাচার হয়, তা প্রতিরোধ করতেই এমন উদ্যোগ। দুই প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার হয় বলে মনে করে এনবিআর। এগুলো হলো-আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং। এসব কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব লোকসান হয় বলে মনে করে এনবিআর।

সম্প্রতি এনবিআর মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল নামে ১০ বছরের একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। সেখানে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।

গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) উদ্ধৃতি দিয়ে এনবিআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে (মিথ্যা ঘোষণা) ৭০ শতাংশ অর্থ পাচার হয়ে থাকে।

টাকার পাচার রোধে এনবিআর তিনটি উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে। প্রথমত, আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা ও ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার ঠেকাতে দক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে বিশেষায়িত একটি ইউনিট গঠন করা যেতে পারে। এই ইউনিটের সদস্যরা প্রতারণা হয় বা হতে পারে- এমন বিল অব এন্ট্রিগুলো তদারকি ও তদন্ত করবেন। এই ইউনিট গঠন হলে একদিকে টাকা পাচার বন্ধের পাশাপাশি এনবিআরের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির সক্ষমতা বাড়বে।

সাধারণত আমদানিকালে তুলনামূলক বেশি দাম দেখিয়ে অর্থ দেশের বাইরে পাচার করা হয়। মূলত মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এভাবে টাকা পাচার করা হয়। দুই বছর আগে এনবিআর পাচার টাকা ফেরত আনার সুযোগ দিলেও কেউ তা নেননি।

এনবিআরের দ্বিতীয় সুপারিশ হলো, বিদেশি কূটনীতিক মিশনে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের জন্য এটাশে পদ সৃষ্টি করা। এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং ইস্যুটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। যেসব দেশ থেকে পণ্য আসে, সেখানে পণ্যের মূল্য কত, তা জানা সম্ভব হয় না। আবার নানাভাবে বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার হয়। এনবিআর বলছে, বিভিন্ন দূতাবাসে, বিশেষ করে বাংলাদেশে বড় বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোতে রাজস্ব খাতে কর্মকর্তাদের জন্য এটাশে পদ সৃষ্টির সুপারিশ করেছে এনবিআর। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, ভারতের মতো দেশ এমন পদ সৃষ্টি করেছে বলে এনবিআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এনবিআরের তৃতীয় সুপারিশ হলো, পাচার টাকা ফেরত আনতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া; যেসব দেশে পাচার হয়, সেখানে তদারকি ও পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধি; আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করা। এসব করা হলে পাচার টাকা চিহ্নিত করে ফেরত আনা সহজ হবে। এ ছাড়া টাকা পাচারে সহায়তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনার কথাও বলেছে এনবিআর।

এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, টাকা পাচারের কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায় সরকার। টাকা পাচার বন্ধ করতে পারলে অর্থনীতি আরও চাঙা হবে। এ ছাড়া সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের রাঘববোয়াল (ক্রীড়নক), আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এই পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি রিপোর্টস (জিএফআইআরএস) এবং কিছু নির্দিষ্ট পূর্বানুমানের ভিত্তিতে টাকা পাচারের হিসাব করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।

দেশ থেকে কারা, কীভাবে, কোথায় টাকা পাচার হয়েছে- সেই চিত্র তুলে ধরে শ্বেতপত্রে বলা হয়, টাকা পাচারের জন্য দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের ক্রীড়নক, আমলাদের মধ্যে এক ধরনের অনৈতিক চক্র গড়ে ওঠে। ঘুষ-দুর্নীতি, আর্থিক অপরাধ, মিথ্যা ঘোষণার আড়ালে বাণিজ্য, ব্যাংক থেকে চুরি করা টাকা, খেলাপি ঋণের অর্থ, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে দেখানো, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, কর ফাঁকি- এসব কর্মকাণ্ডের অর্থ পাচার করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ করের অভয়ারণ্য নামে পরিচিত ছোট ছোট দেশে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয়েছে। মূলত বাড়ি কিনে এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ করে টাকা পাচার করা হয়।

মন্তব্য

p
উপরে