চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। আগস্টে এই হার ছিল ১৪ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। সেপ্টেম্বরে তা কমে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
এর অর্থ হলো ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি ঋণ নিয়েছেন। আগের মাস আগস্টে গত বছরের আগস্টের চেয়ে বেশি নিয়েছিলেন ১৪ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ।
সংকটকালে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ আরও কমলেও সমস্যা নেই বলে মনে করেন অর্থনীতির দুই গবেষক আহসান এইচ মনসুর ও মঞ্জুর হোসেন। তারা বলেছেন, অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এখন মূল্যস্ফীতি। সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি এখন ৯ শতাংশের উপরে অবস্থান করছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে হলে, বাজারে টাকারপ্রবাহ কমাতে হবে। সেক্ষত্রে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানো ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই। এ অবস্থায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন তারা।
বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো সুদ হার বাড়ানোর পর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি সেপ্টেম্বরে কিছুটা কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আগের মাস আগস্টের চেয়ে প্রবৃদ্ধির হার কমেছে দশমিক ৭৭ শতাংশীয় পয়েন্ট। বেসরকারি খাতে ঋণ দেয়ার পরিমাণ আগস্টে বেড়েছিল ১৪ দশমিক ০৭ শতাংশ।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণপ্রবাহের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকার সামান্য বেশি। ১ মাস আগে যা ছিল ১৩ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।
বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রবাহের ধারা বোঝার অন্যতম এই সূচক বলছে, এ সময়ে আমদানি-পরবর্তী অর্থায়ন ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির পরিমাণ কমলেও ঋণপ্রবাহ কমেনি। যে কারণে গত সেপ্টেম্বরে বেসরকারি পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের ঋণ নেয়ার প্রবণতাও খুব একটা কমেনি। গত ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছিল ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর শেষে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বেড়ে হয়েছে ২৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা আগের মাস আগস্টে ছিল ২৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত অর্থবছর শেষে এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৮ দশমিক ১৮ শতাংশ।
সার্বিক হিসাবে সেপ্টেম্বর শেষে দেশে অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৪২ শতাংশ, যা আগস্টে ছিল ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়। আর বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ।
ঋণের হালনাগাদ সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে অভ্যন্তরীণ খাতে ঋণের মোট পরিমাণ হচ্ছে ১৭ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। ১ মাস আগে যা ছিল ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২২ কোটি টাকা। আর সরকারি খাতে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, টানা আট মাস ধরে বাড়তে বাড়তে ২০২২ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকটি ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক ০৭ শতাংশে উঠেছিল।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ফেব্রুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি কমে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে আসে। মার্চে তা দশমিক ৫৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশে ওঠে। এপ্রিল মাসে তা ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশে ওঠে। মে মাসে তা আরও বেড়ে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ওঠে।
জুনে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশে ওঠে। জুলাই মাসে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশে ওঠে। সবশেষ আগস্টে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। শেষ পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থবছর শেষ হয়।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। এরপর থেকেই কমতে থাকে এই সূচক।
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশে বিনিয়োগে মন্দা চলছিল। এর প্রধান কারণ ছিল, দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের চিত্রও ছিল হতাশাজনক। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে তা আরও কমতে থাকে। প্রতি মাসেই কমতে কমতে গত বছরের মে মাসে তা ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে আসে, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।
‘তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে যে ঋণ প্রবৃদ্ধি বেশ বেড়েছিল, সেটা কিন্তু বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে নয়, এটা বেড়েছিল মূলত টাকার বিপরীতে ডলারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে। গত কয়েক মাস ধরে আমদানিকারকদের এলসি খুলতে বেশি টাকা লাগছে। অর্থাৎ বেশি টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হচ্ছে। আর তাতে ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। ‘
আহসান মনসুর বলেন, ‘আমি কয়েক মাস ধরে নয়-ছয় সুদের হার তুলে দিয়ে বাড়ানোর কথা বলে আসছি। আইএমএফের কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে একই কথা বলছে। আর দেরি না করে ব্যাংক ঋণ ও আমানতের সুদের হার বাড়িয়ে দিতে হবে। তানাহলে মূল্যস্ফীতির লঅগাম টেনে ধরা যাবে না।
‘এখন যে ঋণ নিচ্ছে, সে বিনা পয়সায় নিচ্ছে। কারণ মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি। যারা (ব্যাংক) টাকা দিচ্ছে তারা তো লুজার। আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংকগুলো ঋণ দিচ্ছে। যারা ঋণ নিচ্ছে, তারা আবার খেলাপিও হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে, তারা বড়লোক হচ্ছে। আর যারা সঞ্চয়কারী তারা বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের আয় কমে যাচ্ছে। এখানে আরেকটি আয়বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। এটি হতে দেয়া যাবে না।’
‘তাই এখন বেসরকারি খাতে ঋণ কমলেও কোনো সময়সা নেই। তাই লক্ষ্যটি এখন জিডিপি প্রবৃদ্ধি থেকে সরিয়ে নিতে হবে। মনোযোগ দিতে হবে মূল্যস্ফীতি কমানোর দিকে। আর এক্সচেঞ্জ রেটকে স্থিতিশীল করার দিকে। এখন সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের এখন প্রথম লক্ষ্য হবে, এক্সচেঞ্জ রেটের ওপর চপ কমানো। রিজার্ভ বাড়ানো। মূল্যস্ফীতিটাকে যদি বহুলাংশে কমিয়ে আনতে পারি। অর্থাৎ ৬-৭ শতাংশের মধ্যেও যদি আনতে পারি। তাহলেও কিন্তু একটি অর্জন হবে। সেদিকটাতেই আমাদের মেইন ফোকাস করতে হবে। এরপর প্রবৃদ্ধি আমার যা-ই হোক ঠিক আছে। আমাদের ফোকাস এখন প্রবৃদ্ধি না। প্রবৃদ্ধি এখন কমে গেলে সমস্যা নেই। এই সংকটের সময় ৫ শতাংশ হলেও সমস্যা নেই।’
একই কথা বলেছেন অর্থনীতির আরেক গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির দুই বছরের ধাক্কা না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বেশ চাপ সৃষ্টি করেছে। বেড়ে গেছে সব ধরনের পণ্যের দাম; মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। আমাদের অর্থনীতি সংকটের মধ্যে পড়েছে। এই সংকটের মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমলেও কোনো সমস্যা নেই।’
‘এখন আমাদের ঋণের লাগাম টেনে ধরলেই বরঞ্চ ভালো ফল দেবে। আর সেটি দ্রুত করতে হবে। আমি মনে করি, ব্যাংক ঋণ ও আমানতের সুদহার নয়-ছয় থেকে বারো-নয় করা উচিত।’
আরও পড়ুন:কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি জানিয়েছিল যে আর কোনো ব্যাংককে একীভূতকরণের সুযোগ দেয়া হবে না। তবে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের জন্য ব্যাংক এশিয়াকে অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন মাত্রার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এশিয়া বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করছে। সূত্র: ইউএনবি
করাচিভিত্তিক ব্যাংক আলফালাহ বুধবার (১৭ এপ্রিল) পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জকে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ব্যাংক আলফালাহ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের বাংলাদেশ পরিচালনা, সম্পদ ও দায় অধিগ্রহণের জন্য প্রাপ্ত বাধ্যবাধকতামুক্ত ইঙ্গিতমূলক প্রস্তাবের ক্ষেত্রে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
এতে বলা হয়, ব্যাংক আলফালাহ বাংলাদেশের ব্যাংক এশিয়ার জন্য যথাযথ কার্যক্রম শুরুর জন্য স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের অনুমোদন চাইছে।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি একীভূতকরণ নিয়ে খুব বেশি আলোচনার অংশ নয়।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে দুই ব্যাংকের নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ পাবে বলে।
মেহেরপুরের মুজিবনগরে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকের কর্মচারীকে অজ্ঞান করে ব্যাংক থেকে টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার শিবপুরে সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় কর্মচারী সাগর শেখকে অজ্ঞান করে টাকা লুটে নিয়ে পালিয়ে যায় অজ্ঞাত দুইজন।
ঘটনার বেশ কিছু সময় পরে স্থানীয়রা অসুস্থ অবস্থায় সাগর শেখকে মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শিবপুর গলাকাটা বাজারে বিপ্লব হোসেন এজেন্ট হিসেবে ব্যাংক পরিচালনা করে আসছেন। সোমবার দুপুরে ব্যাংক কর্মচারী সাগর শেখ কাজ করছিলেন। এ সময় অজ্ঞাতরা ব্যাংকে প্রবেশ করে তাকে অজ্ঞান করে। আশপাশের লোকজন টের পাওয়ার আগেই তারা ব্যাংক থেকে টাকা লুটে নিয়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা আরও জানায়, ঘটনার আগে তারা ব্যাংকে অজ্ঞাত দুজনকে প্রবেশ করতে দেখেছিলেন, তবে তারাই যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। তাদের প্রবেশের কিছুক্ষণ পরে সাগরকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখেন স্থানীয়রা।
ব্যাংক এজেন্ট বিপ্লব হোসেন জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরা ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। অজ্ঞাতরা এ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করে ডাকাতি করেছে বলে ধারণা তার।
বিপ্লব হোসেন আরও জানান, প্রতিদিন ব্যাংকে অনেক টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। এর সঙ্গে প্রতিদিনের লেনদেনের আরও টাকা থাকে। তাই কত টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে তা সঠিক হিসাব না করে বলা যাচ্ছে না।
মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ব্যাংক কর্মচারীর শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। চোখ খুলে তাকাচ্ছে, কিন্তু তার চেতনা ফেরেনি। তাকে কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়েছে না চোখে চেতনানাশক স্প্রে করা হয়েছে তা নিশ্চিত হতে সময় লাগবে।’
মুজিবনগর থানার ওসি উজ্জ্বল দত্ত জানান, খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হাসপাতালে ভর্তি কর্মচারী সুস্থ হলে তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার আশা করা হচ্ছে, তবে পুলিশের তদন্ত শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন:প্রবাসীদের আয়ের একটি বড় অংশই আসে ঢাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখাগুলোতে। অর্থাৎ প্রবাসীদের পরিবারের বেশিরভাগই ঢাকায় থাকেন বা তাদের অধিকাংশ অ্যাকাউন্ট ঢাকার ব্যাংক শাখায়।
ইউএনবি জানায়, রেমিট্যান্সের জেলাভিত্তিক চিত্র নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। সিলেট তৃতীয় এবং কুমিল্লা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
এরপরে রয়েছে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর ও নরসিংদীর অবস্থান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয় প্রতিবেদনে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে প্রবাসীরা ১ হাজার ৫০৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২১৬ কোটি ডলার। তার আগের মাস জানুয়ারিতে দেশে প্রবাসী আয় ছিল ২১০ কোটি ডলার।
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়কালে ঢাকা জেলায় এসেছে ৫২৩ কোটি ডলার এবং চট্টগ্রাম জেলায় এসেছে ১৪২ কোটি ডলার।
এই সময়ে সিলেট জেলা ৮৭০ মিলিয়ন ডলার, কুমিল্লা ৮১০ মিলিয়ন ডলার এবং নোয়াখালী ৪৬০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ কোটি, ফেনীতে ৩৭ কোটি, মৌলভীবাজারে ৩৬ কোটি, চাঁদপুরে ৩৫ কোটি ডলার এবং নরসিংদীতে ২৫০ মিলিয়ন ডলার এসেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলো থেকে বেশি প্রবাসী আয় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এমনটা হচ্ছে না। কারণ অনেক প্রবাসী বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। বরং তারা (প্রবাসীরা) দেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে অর্থ পাচার বাড়ছে।
আরও পড়ুন:ঈদের আগের সপ্তাহে (১ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত) প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৪৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। রেমিট্যান্সে এই বাড়তি গতির মূল কারণ প্রবাসীরা ঈদ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন।
ব্যাংকাররা বলছেন, গত মার্চ মাসে প্রতি সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। সে হিসাবে, এপ্রিলের প্রথম ৫ দিনে রেমিট্যান্স ভালোই এসেছে। মূলত, প্রবাসীরা ঈদ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে অর্থ পাঠানোর কারণেই বেড়েছে রেমিট্যান্স।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, টানা দু’মাস রেমিট্যান্স আয়ে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকার পর ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় দর বাড়ার ঘটনায় মার্চে রেমিট্যান্স দুশ’ কোটি ডলারের নিচে নেমে আসে।
মার্চে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৯৯ কোটি ডলার দেশে পাঠান। ফেব্রুয়ারিতে তা ছিল ২১৬ কোটি ডলার এবং জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, আগের বছরের একই মাসের ২০২ কোটি ডলারের তুলনায় গত মার্চে ১ দশমিক ২৪ শতাংশ রেমিট্যান্স কম এসেছে।
ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্চ মাসের বেশিরভাগ দিনে ডলারের বিনিময় দর কমে দাঁড়ায় ১১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১১৩ টাকায়। সে তুলনায় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ডলারের দর ছিল ১২০ থেকে ১২২ টাকা পর্যন্ত।
তারা বলছেন, ডলারের দাম কমার এই ঘটনা প্রবাসীদের বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে। আর তার প্রভাব পড়ে রেমিট্যান্সের সার্বিক চিত্রে।
আরও পড়ুন:দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চলেছে বেসিক ব্যাংক। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবং সিটি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বৈঠকে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার এবং ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিনের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে এই কৌশলগত একীভূতকরণের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়। সূত্র: ইউএনবি
বেসিক ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের মধ্যে একীভূতকরণ স্বেচ্ছায়ই হতে যাচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়। ১৯ মার্চ সিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ একীভূতকরণের সুপারিশ করার পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তীতে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও উভয় ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।
সংযুক্তিকরণ সত্ত্বেও আগামী তিন বছর দুই ব্যাংক আলাদাভাবে তাদের আর্থিক হিসাব দেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
দেশে ব্যাংক একীভূতকরণের বিস্তৃত প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বর্তমানে বেশ কয়েকটি ব্যাংক সম্ভাব্য সংযুক্তিকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছে। এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পর জনগণকে জানানো হবে।
এ নিয়ে মোট আটটি ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংক পাঁচটি আর বেসরকারি ব্যাংক তিনটি। গত মার্চ মাসে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চুক্তি করেছে পদ্মা ব্যাংক। এর মধ্য দিয়ে ব্যাংক একীভূত করার ধারা শুরু হয়।
এ ছাড়া রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (বিডিবিএল) সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির (পিএলসির) উদ্যোগে ঢাকায় রোজাদারদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
রাজধানীর মহাখালীর আমতলী ঈদগাহ মাঠে বৃহস্পতিবার এ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী এবং ঢাকা-১৭ আসনের এমপি মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা সেন্ট্রাল জোনপ্রধান মাহমুদুর রহমান।
ওই সময় সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গুলশান সার্কেল-১ শাখাপ্রধান এ এস এম নাসির উদ্দিনসহ কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেয়ার শর্ত হিসেবে ২০২৪ সালের মার্চে নির্ধারিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি তাদের অবস্থান তুলে ধরে।
ঋণের তৃতীয় কিস্তির ৪৭০ কোটি ডলার দেয়ার আগে আর্থিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য বাংলাদেশ সফর করছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী ২০২৪ সালের মার্চে ১ হাজার ৯২৬ কোটি ডলার রিজার্ভ রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু প্রকৃত রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, ‘শর্ত পূরণে আইএমএফ কিছুটা কঠোর হওয়ায় সংস্থাটির ঋণের তৃতীয় কিস্তি নিয়ে জটিলতা ও অনিশ্চয়তা রয়েছে।’
‘রিজার্ভ ঘাটতির কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বেশ কিছু ধারণা জানিয়েছেন। আইএমএফ শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে ইতিবাচক হবে বলে আমরা আশা করছি।’
ডলার সংকট নিরসনে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি করে সরকার। ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে আইএমএফের একটি পর্যালোচনা মিশন বাংলাদেশ সফর করছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আইএমএফ নিট রিজার্ভের প্রয়োজনীয়তা সহজ করলেও বাংলাদেশের পক্ষে মার্চের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন।
‘বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি বাংলাদেশের জন্য নিট রিজার্ভের নতুন মান নির্ধারণ করতে পারে বা ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড় বিলম্বিত করতে পারে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য