চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। আগস্টে এই হার ছিল ১৪ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। সেপ্টেম্বরে তা কমে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
এর অর্থ হলো ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি ঋণ নিয়েছেন। আগের মাস আগস্টে গত বছরের আগস্টের চেয়ে বেশি নিয়েছিলেন ১৪ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ।
সংকটকালে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ আরও কমলেও সমস্যা নেই বলে মনে করেন অর্থনীতির দুই গবেষক আহসান এইচ মনসুর ও মঞ্জুর হোসেন। তারা বলেছেন, অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এখন মূল্যস্ফীতি। সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি এখন ৯ শতাংশের উপরে অবস্থান করছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে হলে, বাজারে টাকারপ্রবাহ কমাতে হবে। সেক্ষত্রে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানো ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই। এ অবস্থায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন তারা।
বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো সুদ হার বাড়ানোর পর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি সেপ্টেম্বরে কিছুটা কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আগের মাস আগস্টের চেয়ে প্রবৃদ্ধির হার কমেছে দশমিক ৭৭ শতাংশীয় পয়েন্ট। বেসরকারি খাতে ঋণ দেয়ার পরিমাণ আগস্টে বেড়েছিল ১৪ দশমিক ০৭ শতাংশ।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণপ্রবাহের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকার সামান্য বেশি। ১ মাস আগে যা ছিল ১৩ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।
বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রবাহের ধারা বোঝার অন্যতম এই সূচক বলছে, এ সময়ে আমদানি-পরবর্তী অর্থায়ন ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির পরিমাণ কমলেও ঋণপ্রবাহ কমেনি। যে কারণে গত সেপ্টেম্বরে বেসরকারি পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের ঋণ নেয়ার প্রবণতাও খুব একটা কমেনি। গত ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছিল ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর শেষে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বেড়ে হয়েছে ২৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা আগের মাস আগস্টে ছিল ২৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত অর্থবছর শেষে এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৮ দশমিক ১৮ শতাংশ।
সার্বিক হিসাবে সেপ্টেম্বর শেষে দেশে অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৪২ শতাংশ, যা আগস্টে ছিল ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়। আর বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ।
ঋণের হালনাগাদ সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে অভ্যন্তরীণ খাতে ঋণের মোট পরিমাণ হচ্ছে ১৭ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। ১ মাস আগে যা ছিল ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২২ কোটি টাকা। আর সরকারি খাতে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, টানা আট মাস ধরে বাড়তে বাড়তে ২০২২ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকটি ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক ০৭ শতাংশে উঠেছিল।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ফেব্রুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি কমে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে আসে। মার্চে তা দশমিক ৫৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশে ওঠে। এপ্রিল মাসে তা ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশে ওঠে। মে মাসে তা আরও বেড়ে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ওঠে।
জুনে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশে ওঠে। জুলাই মাসে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশে ওঠে। সবশেষ আগস্টে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। শেষ পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থবছর শেষ হয়।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। এরপর থেকেই কমতে থাকে এই সূচক।
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশে বিনিয়োগে মন্দা চলছিল। এর প্রধান কারণ ছিল, দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের চিত্রও ছিল হতাশাজনক। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে তা আরও কমতে থাকে। প্রতি মাসেই কমতে কমতে গত বছরের মে মাসে তা ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে আসে, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।
‘তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে যে ঋণ প্রবৃদ্ধি বেশ বেড়েছিল, সেটা কিন্তু বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে নয়, এটা বেড়েছিল মূলত টাকার বিপরীতে ডলারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে। গত কয়েক মাস ধরে আমদানিকারকদের এলসি খুলতে বেশি টাকা লাগছে। অর্থাৎ বেশি টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হচ্ছে। আর তাতে ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। ‘
আহসান মনসুর বলেন, ‘আমি কয়েক মাস ধরে নয়-ছয় সুদের হার তুলে দিয়ে বাড়ানোর কথা বলে আসছি। আইএমএফের কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে একই কথা বলছে। আর দেরি না করে ব্যাংক ঋণ ও আমানতের সুদের হার বাড়িয়ে দিতে হবে। তানাহলে মূল্যস্ফীতির লঅগাম টেনে ধরা যাবে না।
‘এখন যে ঋণ নিচ্ছে, সে বিনা পয়সায় নিচ্ছে। কারণ মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি। যারা (ব্যাংক) টাকা দিচ্ছে তারা তো লুজার। আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংকগুলো ঋণ দিচ্ছে। যারা ঋণ নিচ্ছে, তারা আবার খেলাপিও হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে, তারা বড়লোক হচ্ছে। আর যারা সঞ্চয়কারী তারা বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের আয় কমে যাচ্ছে। এখানে আরেকটি আয়বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। এটি হতে দেয়া যাবে না।’
‘তাই এখন বেসরকারি খাতে ঋণ কমলেও কোনো সময়সা নেই। তাই লক্ষ্যটি এখন জিডিপি প্রবৃদ্ধি থেকে সরিয়ে নিতে হবে। মনোযোগ দিতে হবে মূল্যস্ফীতি কমানোর দিকে। আর এক্সচেঞ্জ রেটকে স্থিতিশীল করার দিকে। এখন সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের এখন প্রথম লক্ষ্য হবে, এক্সচেঞ্জ রেটের ওপর চপ কমানো। রিজার্ভ বাড়ানো। মূল্যস্ফীতিটাকে যদি বহুলাংশে কমিয়ে আনতে পারি। অর্থাৎ ৬-৭ শতাংশের মধ্যেও যদি আনতে পারি। তাহলেও কিন্তু একটি অর্জন হবে। সেদিকটাতেই আমাদের মেইন ফোকাস করতে হবে। এরপর প্রবৃদ্ধি আমার যা-ই হোক ঠিক আছে। আমাদের ফোকাস এখন প্রবৃদ্ধি না। প্রবৃদ্ধি এখন কমে গেলে সমস্যা নেই। এই সংকটের সময় ৫ শতাংশ হলেও সমস্যা নেই।’
একই কথা বলেছেন অর্থনীতির আরেক গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির দুই বছরের ধাক্কা না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বেশ চাপ সৃষ্টি করেছে। বেড়ে গেছে সব ধরনের পণ্যের দাম; মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। আমাদের অর্থনীতি সংকটের মধ্যে পড়েছে। এই সংকটের মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমলেও কোনো সমস্যা নেই।’
‘এখন আমাদের ঋণের লাগাম টেনে ধরলেই বরঞ্চ ভালো ফল দেবে। আর সেটি দ্রুত করতে হবে। আমি মনে করি, ব্যাংক ঋণ ও আমানতের সুদহার নয়-ছয় থেকে বারো-নয় করা উচিত।’
আরও পড়ুন:ঈদের আগে মার্চ মাসে রেকর্ড রেমিট্যান্সের পর এবার রিজার্ভ নিয়ে সুখবর দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মাস শেষ হওয়ার আগেই দেশের রিজার্ভ ছাড়িয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দেশের রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ২৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুযায়ী, বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ২০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার।
নিট রিজার্ভ গণনা করা হয় আইএমএফের বিপিএম-৬ পরিমাপ অনুসারে। গ্রস রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বাদ দিলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ পাওয়া যায়।
মার্চের ৯ তারিখ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল বাবদ ১৭৫ কোটি ডলার পরিশোধ করায় গ্রস রিজার্ভ নেমে আসে ২৫ বিলিয়নের নিচে এবং বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২০ বিলিয়নের থেকেও কমে যায়।
আকুর বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬-এর মান অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ হয়েছিল ১৯ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার, যা এ কয়েক দিনে আবার ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠে এসেছে।
এর আগে মার্চের প্রথম ২৬ দিনে আসে ২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স, যা দেশের ইতিহাসে যেকোনো মাসের তুলনায় সর্বোচ্চ।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার জন্য আগামী ১৭ এপ্রিল দিন ঠিক করেছেন ঢাকার একটি আদালত।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ঠিক ছিল মঙ্গলবার। তবে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান নতুন এ দিন ঠিক করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জালিয়াতি করে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করা হয়। পরে ওই টাকা ফিলিপাইনে পাঠানো হয়।
দেশের অভ্যন্তরের কোনো একটি চক্রের সহায়তায় হ্যাকার গ্রুপ রিজার্ভের অর্থ পাচার করে বলে ধারণা করেন সংশ্লিষ্টরা।
ওই ঘটনায় একই বছরের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপপরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মতিঝিল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইন-২০০৬- এর ৫৪ ধারা ও ৩৭৯ ধারায় একটি মামলা করেন।
মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে।
আরও পড়ুন:রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থের ৮০ শতাংশ ফেরত আনা হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বাকি অর্থ আদায়ে মামলা চলছে। মামলায় জিতে বাকি অর্থও ফেরানো সম্ভব।
রাজধানীর একটি হোটেল শনিবার ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ায় দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স প্রবাহ স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠানই ২০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। সেসব অর্থ উদ্ধারে কাজ চলছে। বিদেশিরাও সহযোগিতা করছেন।
গভর্নর বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন তথা এফবিআইসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। বিদেশি আইনজীবীও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আনতে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ায় বছরে সরকারের ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। গত ৫ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩০০ কোটি ডলার। রপ্তানি বেড়েছে ২৫০ কোটি ডলার।
তিনি বলেন, প্রশিক্ষিত কর্মী বিদেশে পাঠাতে পারলে রেমিট্যান্স বছরে ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হবে।
সৌদি আরবকে টপকে রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষে উঠে এসেছে দুবাই।
একে আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে গভর্নর জানান, সৌদি আরব থেকে অর্থ প্রথমে দুবাইয়ে আসছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে আসছে। দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান এই সুযোগে মুদ্রা বিনিময় হার ম্যানুপুলেট (হস্তক্ষেপ) করার চেষ্টা করছে।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ২ হাজার ৪৯০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। এ ছাড়া বিপিএম-৬ গণনার মান অনুযায়ী রিজার্ভ এখন দুই হাজার কোটি ডলার হয়েছে।
গত ৮ জানুয়ারি বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৫৭ কোটি ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১৬৭ কোটি ডলার।
এ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘চার মাস চলার মতো রিজার্ভ আছে। তাই ভয়ের কিছু নেই।’
আরও পড়ুন:নতুন বছরে প্রথম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে পদ্মা ব্যাংক পিএলসির, যা ব্যাংকটির ১২১তম সভা।
ব্যাংকের হেড অফিসে গত ৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় সভাটি।
মো. শওকত আলী খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পদ্মা ব্যাংকের পর্ষদ সভায় অন্য পরিচালকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবর রহমান, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন, তামিম মারজান হুদা, শাহনুল হাসান খান, ডা. ফারহানা মোনেম, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান, ব্যারিস্টার-এট-ল’ এবং এইচএম আরিফুল ইসলাম এফসিএ।
সভা পরিচালনা করেন পদ্মা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মো. তালহা (চলতি দায়িত্বে)।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা ডিসেম্বর মাসে রেকর্ড পরিমাণ ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। এটা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় ৩২ শতাংশ বেশি।
প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দেশে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে প্রবৃদ্ধি ২৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কারণ এই সময়কালে মোট ১৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। গত বছর এটা ছিল ১০ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, সরকার অনাবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) বৈধ চ্যানেলে দেশে অর্থ প্রেরণে উৎসাহিত করায় দেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ১২ সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। বিএফআইইউর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
একইসঙ্গে তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ইতোমধ্যে পাঠিয়েছে সংস্থাটি।
হিসাব তলব করা সাংবাদিকরা হলেন- সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ্র বাদল, ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন, বাংলাদেশ পোস্টের বিশেষ প্রতিনিধি নুরুল ইসলাম হাসিব, নাগরিক টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক দ্বীপ আজাদ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসের সাবেক প্রধান বার্তা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, উপ-প্রধান বার্তা সম্পাদক মো. ওমর ফারুক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের সাবেক মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি হোসনে আরা মমতা ইসলাম সোমা, দৈনিক জনকণ্ঠের ডেপুটি এডিটর ওবাইদুল কবীর মোল্লা, দৈনিক জাগরণ সম্পাদক আবেদ খান, ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত এবং গ্লোবাল টিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।
বিএফআইইউর নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, হিসাব তলব করা ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী ইত্যাদি চিঠি দেয়ার তারিখ থেকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউ-তে পাঠানোর জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশে সুশাসনের ভিত্তি মজবুত হওয়ায় অর্থ পাচার উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। অর্থ এখন আর বিদেশে ডাইভার্ট হচ্ছে না; বরং তা দেশের মধ্যেই অবস্থান করছে।
শনিবার টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ইসলামী ব্যাংকের ৪০০তম শাখা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, ‘যারা অর্থ নিয়ে দেশ ছেড়েছে, তাদের অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি। ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হবো, হয়তো একটু সময় লাগবে। তবে আমরা হাল ছাড়ব না।’
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘একসময় আমাদের রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছিল। ব্যালেন্স অফ ক্রেডিটের কারণে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটেছিল। আমরা সেই সংকট থেকে বেরিয়ে এসেছি। এখন রিজার্ভ আর কমছে না।
‘গত ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এক ডলারও বিক্রি করেনি। ব্যালেন্স অফ পেমেন্টের ঘাটতিও দূর হয়েছে। বর্তমানে এটি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। গত পাঁচ মাসে অতিরিক্ত তিন মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে।’
দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ‘বিদেশে কর্মরত ভাই-বোনদের পাঠানো টাকা এখন খুব দ্রুত এবং নিরাপদে পরিবারের হাতে পৌঁছাচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইতিহাস বলে, ইসলামী ব্যাংক দেশের এক নম্বর রেমিট্যান্স সংগ্রাহক প্রতিষ্ঠান।’
ব্যাংকিং খাতে আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে খাদ্যপণ্যের উচ্চ মূল্যই মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণ। তবে আমরা আশা করছি, আগামী চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে খাদ্যপণ্যের দাম কমে একটি স্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। মনে রাখতে হবে, ব্যাংক কোনো ব্যক্তি বা পারিবারিক প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি আমানতকারী প্রতিষ্ঠান, যা জনগণকে সেবা দেয়।’
ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড অফ ডাইরেক্টরসের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা।
বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল, এফসিএস চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম, রিস্ক কমিটির চেয়ারম্যান ড. এম মাসুদ রহমান এবং ইনডিপেন্ডেন্ট ডাইরেক্টর মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব।
অনুষ্ঠানে শরীয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য