চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কৃষি ও পল্লিঋণ খাতে ৬ হাজার ৫৮৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এই অঙ্ক লক্ষ্যমাত্রার ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার এই হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে।
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। কোভিড মহামারি এবং সাম্প্রতিক বিশ্ব পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কৃষির গুরুত্ব অধিকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই কৃষি খাতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের মাধ্যমে সহায়তা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করছে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্য বাড়ানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কৃষি ও পল্লিঋণ বিতরণ হয়েছিল ৫ হাজার ২১০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বিতরণ হয়েছে ৬ হাজার ৫৮৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এ হিসাবে এই তিন মাসে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।
জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ২ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা; যা লক্ষ্যমাত্রার ২০ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৪ হাজার ২২৮ কোটি টাকা, লক্ষ্যমাত্রার ২২ দশমিক শূন্য চার শতাংশ।
গ্রাহকদের আমানত নিরাপদ উল্লেখ করে প্রয়োজন ছাড়া ব্যাংক থেকে টাকা না তোলার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বানের কথা জানিয়েছেন।
ব্যাংকিং খাতে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সব গ্রাহক একসঙ্গে টাকা তুলতে গেলে বিশ্বের কোনো ব্যাংকের পক্ষেই তা দেয়া সম্ভব নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে অনেক গ্রাহক টাকা তুলতে যাওয়ায় কয়েকটি ব্যাংক তাদের টাকা দিতে পারছে না। জমাকৃত টাকা নিয়ে আতঙ্কিত হবেন না। সবাই তাদের আমানত করা টাকা ফেরত পাবেন। সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে।’
গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের অধীনে থাকা ব্যাংকগুলোসহ ১১টি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দিতো। কিন্তু তা স্থগিত করায় অনেক ব্যাংক এখন গ্রাহকদের নগদ টাকা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
ব্যাংক খাত সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্সের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে মুখপাত্র বলেন, ব্যাংকিং সংস্কার নিয়ে একটি টাস্কফোর্স কাজ করছে। জনবলের দক্ষতা বাড়াতে আরেকটি টাস্কফোর্স কাজ করছে। তৃতীয় টাস্কফোর্স পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে কাজ করছে। টাস্কফোর্সে বিভিন্ন দেশ থেকে আইনজীবী ও পরামর্শক নিয়োগের কাজ চলছে।
বর্তমান গভর্নরের মেয়াদে তিন দফায় নীতি সুদহার বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়িয়েছে বলেই এখন মূল্যস্ফীতি কমেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে নয় দশমিক ৯২ শতাংশ, যা আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আগামী ছয় মাস এই পতনের ধারা অব্যাহত থাকলে তা ছয় শতাংশে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:বকেয়া ঋণের টাকা আদায়ে এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি নিলামে তুলছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। এস আলম গ্রুপের কাছে পাওনা এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য জনতা ব্যাংক গ্রুপটির অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেডের জামানত সম্পত্তি নিলাম করার ঘোষণা দিয়েছে।
গত ১ নভেম্বর জনতা ব্যাংক পত্রিকায় নিলাম সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ২০ নভেম্বর নিলামের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তথ্য অনুযায়ী, এই ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম ও গাজীপুরে এস আলম গ্রুপের ১৮৬০ শতাংশ জমি, যার বাজারমূল্য সর্বোচ্চ ৩৫৮ কোটি টাকা। এই দাম পাওনা টাকার এক পঞ্চমাংশেরও কম। ফলে এই সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করেও খেলাপি ঋণ পুরোপুরি আদায় করা সম্ভব নয়।
বকেয়া বাকি টাকা আদায়ে আরও আইনি পদক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে। অর্থঋণ আদালত আইনের ১২(৩) ধারা অনুযায়ী, ব্যাংক মামলা করার আগেই জামানতের সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা আদায় সম্ভব।
দেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) ২০২১ সালের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিকা না মেনে ঋণসীমা অতিক্রম করে অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালে সাধারণ বিমা ভবনে অবস্থিত জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রাম করপোরেট শাখা থেকে গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন প্রাথমিকভাবে ৬৫০ কোটি টাকা ঋণ নেয়। এই ঋণ ২০২১ সাল পর্যন্ত সুদ-আসলে মোট এক হাজার ৭০ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় পৌঁছেছে।
এর মধ্যে ৬১৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা পিএডি (পেমেন্ট এগেইনস্ট ডকুমেন্ট), ২২৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা এলটিআর (ট্রাস্ট রিসিপ্ট) ঋণ এবং ২২৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা সিসি হাইপো ঋণ। সুদ-আসল মিলিয়ে ঋণের পরিমাণ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হেলাল আহমেদ চৌধুরীকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আগামী তিন বছর তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করবেন।
গত ৩১ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপ-সচিব আফছানা বিলকিসের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ দেয়া হয়।
সোমবার প্রকাশ করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, হেলাল আহমেদ চৌধুরীকে তার যোগদানের তারিখ থেকে তিন বছর মেয়াদে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর বিধান অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন গ্রহণসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এর আগে ৯ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হাসেমকে অপসারণ করে সরকার। যিনি ২০২০ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
রেমিট্যান্স প্রবাহে সুবাতাস বইছে। গত অক্টোবর মাসে দেশে ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে ৩১ অক্টোবর একদিনেই রেমিট্যান্স এসেছে ৯৮ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
এই সময়ে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৮ হাজার ৯৩৮ মিলিয়ন ডলার; ২০২৩ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ছিল ৬ হাজার ৮৭৮ মিলিয়ন ডলার।
শুধু ২০২৪ সালের অক্টোবরেই রেমিট্যান্স প্রবাহ ২ হাজার ৩৯৫ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালের অক্টোবরে ছিল এক হাজার ৯৭১ মিলিয়ন ডলার।
বিদেশে বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি, উন্নত রেমিট্যান্স চ্যানেল এবং মৌসুমি প্রবাহ রেমিট্যান্স বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
অর্থনীতিবিদরা এসব পরিসংখ্যানের ইতিবাচক প্রভাব তুলে ধরে বলছেন, মজবুত রেমিট্যান্স প্রবাহ অভ্যন্তরীণ খরচ বাড়াতে পারে এবং দেশের জন্য বহিরাগত অর্থনৈতিক চাপের প্রভাব কমাতে তা সহায়ক হতে পারে।
স্থায়ী রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করার চলমান প্রচেষ্টায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:ব্যাংকিং খাতকে লক্ষ্যবস্তু করে সাইবার হামলা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ায় সব তফসিলি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পেমেন্ট সেবাদানকারীদের সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ সাইবার সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্সের (বিসিএসআই) নিয়মিত তথ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের পর শুক্রবার এই সতর্কতামূলক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কিছু ব্যাংক ডুয়াল-কারেন্সি কার্ডে ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কিত অবৈধ লেনদেনের শিকার হয়েছে, যা দেশব্যাপী সাধারণ গ্রাহকদের প্রভাবিত করছে।
নির্দেশনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় সাইবার অপরাধীদের ক্রমবর্ধমান কার্যকলাপকে তুলে ধরেছে, যারা অনবরত জনসাধারণ এবং ব্যাংক গ্রাহকদের একইভাবে হয়রানি করছে।
সাইবার হামলার এই ঊর্ধ্বগতি শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী সাইবার হুমকি বৃদ্ধির প্রবণতাকে চিহ্নিত করে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে, যেখানে ম্যালওয়্যার আক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বার বার ঘটে থাকে।
এসব সাইবার হুমকি প্রতিরোধে তথ্য আদান-প্রদান, যাচাইকরণ বৃদ্ধি, ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) ব্যবহার, টু-ফ্যাক্টর/মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, লগইন প্রচেষ্টার সংখ্যা সীমিত রাখাসহ বেশ কিছু জরুরি পদক্ষেপ বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকটি বর্ণিত ঝুঁকির বিষয়ে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পরিচালক (আইসিটি) তদারকি করবেন বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা চাহিদামতো তুলতে না পারায় ন্যাশনাল ব্যাংকের সিলেট নগরের শিবগঞ্জ শাখায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন গ্রাহকরা। এতে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে শাহপরাণ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের শিবগঞ্জ শাখায় তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেন ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। এর আগে সোমবার গ্রাহকরা টাকা না পেয়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জে ন্যাশনাল ব্যাংকের আরেকটি শাখায় তালা লাগিয়ে দেন। এ সময় তারা সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
বিক্ষোভকারী গ্রাহকরা জানান, ন্যাশনাল ব্যাংকের শিবগঞ্জ ব্রাঞ্চে বেশ কয়েকদিন থেকে নিজেদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে এসে তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গ্রাহকরা বিভিন্ন অংকের চেক নিয়ে নগদ উত্তোলনের জন্য গেলে তাদের দেয়া হচ্ছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। কারণ জানতে চাইলে বলা হচ্ছে, ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট রয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার ব্যাংকের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন অর্ধশতাধিক গ্রাহক।
ন্যাশনাল ব্যাংকের শিবগঞ্জ ব্রাঞ্চের সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজার সাব্বির হানান বলেন, ‘গ্রাহকদের চাহিদামতো টাকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ নানা গুজবে গ্রাহকরা এখন শুধু টাকা তুলতে আসছেন। কেউ জমা দিচ্ছেন না।
‘গ্রাহকরা একসঙ্গে টাকা উত্তোলনের জন্য ভিড় করায় ব্যাংকের শাখাগুলোতে পর্যাপ্ত নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। এজন্য গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। আশা করি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন জানান, বিক্ষোভের খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গ্রাহকদের বুঝিয়ে গেটের তালা খোলা হয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডির সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি টাকা পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:শেখ হাসিনার শাসনামলে সরকার প্রধানের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় ব্যাংক খাত থেকে এক হাজার সাতশ’ কোটি ডলার পাচার করেছে। এর মধ্যে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম একাই এক হাজার কোটি ডলার দেশের বাইরে পাচার করে নিয়ে গেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়ে বলেছেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যাংক ডাকাতির এটাই সবচেয়ে বড় ঘটনা।
গভর্নর বলেন, ‘দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) সদস্যরা বড় ব্যাংকগুলো দখলে সহায়তা করেছেন। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে নিয়মিতভাবে অর্থ পাচার হয়েছে।
‘গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ব্যাংকের সিইওদের বাধ্য করার জন্য চাপ না দিলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই জালিয়াতি সম্ভব ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘নতুন শেয়ারহোল্ডারদের ঋণ ও আমদানি চালান বাড়ানোর মতো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা বা এক হাজার ৬৭০ কোটি ডলার উত্তোলন করা হয়েছে।’
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এস আলম গ্রুপ ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে অন্তত এক হাজার কোটি ডলার পাচার করেছে।
‘প্রতিদিন তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ঋণ দিচ্ছিলেন।’
আহসান এইচ মনসুর জানান, শেখ হাসিনার সহযোগীদের বৈদেশিক সম্পদ তদন্তে তিনি যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বন্দুকের মুখে সাইফুল আলমের কাছে শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য করেছিলেন। তারা বোর্ড সদস্যদের বাড়ি থেকে অপহরণ করেছেন। একের পর এক ব্যাংক একই জবরদস্তিমূলক পন্থায় অধিগ্রহণ করা হয়েছে।’
তবে আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল উরকুহার্ট অ্যান্ড সুলিভানের মাধ্যমে এস আলম গ্রুপ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে একে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছে।
গ্রুপটির বিবৃতিতে বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় ব্যবসাী গ্রুপের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অভিযানকে যথাযথ প্রক্রিয়ার লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এটা বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলাকে ক্ষুণ্ণ করেছে।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান। তার শাসনামল ভোট কারচুপি, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার তার প্রশাসনের অধীনে আত্মসাতের অভিযোগ আনা তহবিল পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য