চেক নগদায়নের আগে শেয়ার কেনা নয়-এই সিদ্ধান্ত না পাল্টালে পুঁজিবাজার চাপে পড়বে, চিঠি দিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে স্টক ব্রোকাররা জানানোর পর বিনিয়োগকারীরা দেখছেন চাপ কাকে বলে। এখন আবার ফ্লোর প্রাইস নিয়ে গোপনে আপত্তির কথা বলাবলি হচ্ছে। এটি শেয়ারকে তার নির্ধারিত দরে যেতে বাধা দিচ্ছে, এমন কথা বলে সেটিও তুলে দেয়ার কথা বলছেন কেউ কেউ।
অতীতে দেখা গেছে, কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়লে বিএসইসি অল্প সময়ে, এমনকি ২৪ ঘণ্টাতেও সিদ্ধান্ত পাল্টেছে। কিন্তু এবার তেমনটা হচ্ছে না।
ফ্লোর প্রাইসে বিপুল সংখ্যক কোম্পানির ক্রেতা না থাকলেও দরপতন ঠেকাতে দেয়া এই সিদ্ধান্ত পাল্টানোর কারণ দেখছে না বিএসইসি। চেক নির্দেশনা নিয়েও এখন পর্যন্ত অনড় তারা।
ফ্লোর প্রাইসে যে সংকট
গত ২৮ জুলাই ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর ৩১ জুলাই থেকে প্রতিটি শেয়ারের একটি সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেয়া হয়েছে। এই দরের নিচে নামতে পারছে না বলে দুই শতাধিক কোম্পানি দর ধরে রাখতে পারছে।
সমস্যা হচ্ছে, বেঁধে দেয়া এই সর্বনিম্ন দরে শেয়ারের ক্রেতা নেই। এসব কোম্পানির মধ্যে আছে শক্তিশালী মৌলভিত্তির কোম্পানি, যার মধ্যে কয়েকটি বিপুল পরিমাণ মুনাফায় থাকা বহুজাতিক কোম্পানিও।
বিপুল সংখ্যক শেয়ারের ক্রেতা না থাকার পাশাপাশি গত প্রায় তিন মাসে অস্বাভাবিক উত্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর এখন উল্টো দৌড়ের কারণে বাজারে রীতিমতো আতঙ্ক। দর পড়তে থাকার পর চাহিদা কমে গেছে সেগুলোরও।
এতে দুই হাজার কোটি থেকে লেনদেন নেমে এসেছে ৭০০ কোটি টাকার ঘরে এবং তা আরও নিম্নমুখী।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইসে আটকে যাওয়ায় শেয়ার বিক্রি করতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা। এতে করে ফান্ড রিলিজ না হওয়ার কারণে সেক্টরাল মুভমেন্ট হচ্ছে না।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও মনে করেন ফ্লোর প্রাইস এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস যে পর্যায়ে আছে, এটা এখন শাখের করাত। মানে এদিকেও কাটবে ওই দিকেও কাটবে। এটাকে উইথ ড্র করলে মার্কেট ফল করবে। এর ফলে বিভিন্ন জায়গা থেকে আবার চাপ প্রয়োগ বা দাবি উঠবে এটা আবার দেয়া হোক। আবারও দিতে হবে। এটা সুস্থ মার্কেটের প্রক্রিয়া না। আমাদের মার্কেটে বাধ্য হয়ে বিএসইসি এ ধরনের দিতে হয়েছে। সুস্থ মার্কেটে এসব জিনিস যায় না, আপেও না ডাউনেও না।’
কমিশন কী বলছে
গত ৩১ জুলাই থেকে দ্বিতীয় দফা ফ্লোর প্রাইস কার্যকর হওয়ার পরে দুই বার এই সুবিধা উঠে যাবে, এমন গুজবে বাজারে পতন ঘটে।
বিএসইসির পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে ফ্লোর প্রাইস থাকবে অনির্দিষ্টকালের জন্য।
গত শনিবার রাজধানীতে সাংবাদিকদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালাতেও সেই বিষয়টি আবার তুলে ধরেন বিএসিইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ফ্লোর প্রাই তুলে দেয়ার বিষয়ে কমিশন চিন্তা করছে না।’
উত্তরণের উপায় কী
এখান থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠাগুলোর সামর্থ্য বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন রিচার্ড ডি রোজারিও। তিনি বলেন, ‘যতদিন মার্কেটে ইনস্টিটিটিউশনাল ইনভেস্টর না বাড়বে ততদিন পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকবে। আপেও ঘটতে থাকবে ডাউনেও ঘটতে থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যদি ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টর বেশি থাকত, তাহলে দর বাড়তে থাকলে শেয়ার সাপ্লাই দিত। এরপর যদি বাড়তে থাকতো তাহলে বিএসইসির হাতে আইপিও থাকে, কয়েকটা আইপিও যদি নামিয়ে দেয়া হয় তাহলে মার্কেট স্লো হয়ে যায়। বাইরের দেশে কিন্তু এভাবেই চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স করেই কাজগুলো করা হয়।
স্টক ব্রোকারদের সমিতির এই নেতা বলেন, ‘এই মার্কেটে কয়েকটা জায়গায় ডেভেলপ করা দরকার হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে একটা হলো- মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সংখ্যা বাড়ানো। আইসিবি একটা সংগঠন প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, এটার তেমন কোনো কার্যক্রমই নাই। ইউনিট ফান্ড বিক্রি করার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে এদের সাইজটা বড় করা যায়।
‘শিল্প ঋণ সংস্থা যেটা এখন অকার্যকর হয়ে গেছে। আরেকটা সংগঠন কার্যকর হয়ে গেছে। এসব জিনিসগুলো ঠিক করতে হবে।’
চেক নির্দেশনা নিয়ে আপত্তি যেখানে
১১ অক্টোবর স্টক ব্রোকারদের প্রতি জারি করা বিএসইসির এক নির্দেশনায় বলা হয়, চেকের টাকা নগদায়নের আগে তা দিয়ে শেয়ার কেনা যাবে না। এই সিদ্ধান্ত না পাল্টালে পুঁজিবাজারে চাপ আরও বাড়বে বলে স্টক ব্রোকাররা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে চিঠি দেয়।
গত সোমবার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারের পরদিনই পুঁজিবাজারে চাপ বাড়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এখন পর্যন্ত তাদের অবস্থানে অনড় আছে। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো আভাস নেই তাদের।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের অনেকেই লেনদেন কমার পেছনে চেক নগদায়নের ইস্যুটি উল্লেখ করেছেন। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরাম এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সায়েদুর রহমান বলেন, ‘চেক নগদায়নের জন্য যদি বসে থাকি তাহলে বিনিয়োগকারী ডিমোরালাইজড হবে। কারণ, চেক দিলে সেটা নগদায়ন হতে ২৪ ঘণ্টা বা কখনও সেটা ৩৬ ঘণ্টাও লেগে যেতে পারে। তাহলে শেয়ার কিনতে পারবেন ২৪ বা ৩৬ ঘণ্টা পরে। তাহলে বিনিয়োগকারী কী করবেন?
‘আরেকটা পার্ট হলো- ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স, লিজিং, এরা কিন্তু ব্রোকারেজ হাউসে টাকা রাখে না। সারাদিন ট্রেড করে বিকালে চেক বা পে অর্ডার নিয়ে যায়। তারা কী করবে?’
এ বিষয়ে ডিবিএ সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ‘চেকের যে জিনিসটা করা হয়েছে, ব্রোকারেজ হাউসের জন্য খুবই ভালো। ব্রোকাররা খুব খুশি হবে। ক্লায়েন্টরা চেক দিয়ই শেয়ার কিনতে চায়, সেখান থেকে তারা মুক্ত হচ্ছে, কিন্তু এটা হতে পারে না। রিয়েল টাইম ব্যাংকিং না আসে তার আগে এটা করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘বড় বড় গ্রুপ, প্রতিষ্ঠান যারা তারা চেক দিয়ে ট্রেড করে। আমার হাউসে এক প্রতিষ্ঠান ১০ কোটি টাকার অর্ডার দিয়েছে, কিন্তু দিনের শেষে ইস্যু করে গেছে ৪০ লাখ টাকা। সে কি আমাকে ১০ কোটি টাকা দিয়ে ফেলে রাখবে? যেহেতু রিয়েল টাইম ব্যাংকিং না, এটা দিতে গেলেও দুই সময় লাগবে আবার নিতে গেলেও দুইদিন সময় লাগবে। টাকার তো ভ্যালু আছে, সে এভাবে ফেলে রাখবে না।
‘আবার মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর আন্ডারে ব্রোকারেজগুলো ট্রেড করে তারা দিন শেষে অ্যামাউন্টটা থাকে সেটা থাকে দিতে হয় চেক হিসাবে। এখন আগে থেকেই যদি তাদেরকে টাকা দিয়ে আসতে হয় তাহলে অনেক ঝামেলার ব্যাপার এবং হবেও না।’
তিনি বলেন, ‘যে বড় বড় প্রতিষ্ঠান ট্রেড করছে তারা কখনও ক্যাশ দিয়ে ট্রেড করে? চেক পাশ হওয়ার পরে ট্রেড করে? কখনই না। তারা চেক দিয়েই ট্রেড করে। এখন চেক যদি বাউন্স করে সেটার জন্য তো আইন আছেই। বিচার হতেই পারে, সুযোগ আছে।
‘আমরাও যে সবার চেক দিয়েই শেয়ার কিনি তা নয়। কোনটা বাউন্স হওয়ার আশঙ্কা আছে, কোনটার নাই, এসব বুঝেই তো করি। কিছু কিছু যে হয় না, তা নয়, এসব তো ব্যবসার মধ্যেই থাকবেই।’
বিএসইসির বক্তব্য নেই
এ বিষয়ে জানতে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কমিশনার বা সুপারভিশন অ্যান্ড রেগুলেশন অব ইন্টারমিডিয়ারিজ (এসআরআই) বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলেন।
কমিশনার এবং ওই বিভাগের নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম ও পরিচালক মনসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
অতিরিক্ত পরিচালক গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার স্যারদের সঙ্গে কথা বললেই ভালো হয়।’
আরও পড়ুন:সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে আবারও সূচকের পতন ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে। দুই পুঁজিবাজারে সবকটি সূচক কমলেও বেড়েছে সামগ্রিক লেনদেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরীয়া ভিত্তিক ডিএসএস ১ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ কমেছে আধা পয়েন্টের বেশি।
সূচক কমলেও গতদিনের তুলনায় বেড়েছে লেনদেন। ডিএসইতে মোট ৪৮২ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগেরদিন ছিল ৪৫১ কোটি টাকা।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের। ৩৯৫ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫০, বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৬ কোম্পানির। সারাদিনের লেনদনে দাম অপরিবর্তিত ছিল ৫৯ কোম্পানির শেয়ারের।
ক্যাটাগরির হিসাবে এ এবং জেড ক্যাটাগরির বেশিরভাগ শেয়ারেরই দাম ছিল নিম্নমুখী। বি ক্যাটাগরিতে দাম বেড়েছে অধিকাংশ শেয়ারের। মধ্যম মানের শেয়ারের এই ক্যাটাগরিতে লেনদেন হওয়া ৮২ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৯, কমেছে ৩৩ এবং অপরিবর্তিত আছে ১০ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে তালিকাভুক্ত ৩৬ কোম্পানির ২৪টিরই দাম ছিল উর্ধ্বমুখী। দাম কমেছে ৪ এবং অপরিবর্তিত আছে ৮ কোম্পানির।
ব্লক মার্কেটে লেনদেন হওয়া ২৬ কোম্পানির ২৬ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। এরমধ্যে ব্যাংক এশিয়া সর্বোচ্চ ১০ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার ব্লক মার্কেটে বিক্রি করেছে।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে ১০ শতাংশ দাম বেড়ে শীর্ষে আছে প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। অন্যদিকে ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ দাম হারিয়ে তলানিতে তাল্লু স্পিনিং মিলস।
চট্টগ্রামেও পতন
ঢাকার মতো পতন হয়েছে চট্টগ্রামের সূচকেও। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১ পয়েন্টের বেশি।
তবে সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে সিএসই'র বাজারে। সারাদিনে সিএসইতে মোট ৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গতদিন ছিল ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
লেনদেনে অংশ নেয়া ১৯৩ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৮৬, কমেছে ৭৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ২৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষে আছে পদ্মা ইসলামি লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড এবং ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ দাম কমে তলানিতে বিচ হ্যাচারি লিমিটেড।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকার পুঁজিবাজারে প্রধান সূচকের উত্থান হলেও সার্বিক সূচক কমেছে চট্টগ্রামে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শুরুতেই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক সূচক ডিএসইএস ১ ও বাছাইকৃত শেয়ার ব্লু-চিপের সূচক কমেছে ১১ পয়েন্ট।
লেনদেনে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২৩১, কমেছে ৬৮ এবং অপরিবর্তিত আছে ৭৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
শুরুর প্রথম ঘণ্টায় ডিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ১৩০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১৩ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ৭০ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৪০, কমেছে ১৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ১১ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথম ঘণ্টায় মোট লেনদেন ৭৩ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:টানা দুই দিন উত্থানের পর তৃতীয় দিন মঙ্গলবারও ঢাকার পুঁজিবাজারে বইছে সুবাতাস।
সূচক বৃদ্ধির পাশাপাশি লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় শেয়ার ও ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় ছাড়িয়েছে ৩০০ কোটি টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৪৭ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচক ডিএসইএস এবং ব্লু-চিপ কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ১০ পয়েন্ট করে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির বেশির ভাগেরই দাম বেড়েছে। ১০৯ কোম্পানির দরপতন এবং ৫৩ কোম্পানির দাম অপরিবর্তিত থাকার বিপরীতে দাম বেড়েছে ২৩০ কোম্পানির।
ঢাকার মতো চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারেও বইছে চনমনে হাওয়া। লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১০২ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৫৭ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৮৭, কমেছে ৫১ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৯ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেনের প্রথমার্ধে সিএসইতে ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রবিবারের লেনদেনে সূচকের উত্থান হয়েছে ঢাকার পুঁজিবাজারে; বেড়েছে সবকটি সূচক।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে পতন দিয়ে শুরু হয়েছে লেনদেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৩ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরিয়াহভিত্তিক ডিএসইএসের উত্থান দশমিকের নিচে এবং বাছাইকৃত শেয়ার ব্লু-চিপ সূচকের উত্থান হয়েছে ৫ পয়েন্ট।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় দাম বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের। দরবৃদ্ধির ২৪৫ কোম্পানির বিপরীতে দর কমেছে ৮৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৫৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ডিএসইতে দিনের শুরুতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ১৯০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৫ পয়েন্ট। সূচক কমলেও বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেন হওয়া ১০২ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৫, কমেছে ২৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথম দুই ঘণ্টায় লেনদেন ছাড়িয়েছে ২ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:গত সপ্তাহের উত্থানের ধারা ধরে রেখে এ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন হয়েছে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শুরুতেই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক সূচক ডিএসইএসের উত্থান দশমিকের নিচে থাকলেও বাছাইকৃত শেয়ার ব্লু-চিপের সূচক বেড়েছে ৩ পয়েন্ট।
লেনদেনে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৬৯, কমেছে ৮৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৮৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
শুরুর ৩০ মিনিটে ডিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ৫০ কোটি টাকা। ঢাকার মতোই চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক বেড়েছে ১০ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২২, কমেছে ৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথম আধা ঘণ্টায় মোট লেনদেন ৩০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:ঢাকার পুঁজিবাজারে গত এক সপ্তাহের লেনদেনে বেড়েছে সূচক ও মূলধন। তবে পুঁজিবাজার ইতিবাচক দিকে মোড় নিলেও কমেনি মন্দ কোম্পানির শেয়ারের দৌরাত্ম্য।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত পাঁচ কার্যদিবসে শীর্ষ শেয়ারের তালিকায় থাকা দশ কোম্পানির মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানি মাত্র দুটি।
বাকি আট কোম্পানির মধ্যে মধ্যম মানের ‘বি’ ক্যাটাগরির সংখ্যা তিন এবং লভ্যাংশ না দেওয়া এমন মন্দ কোম্পানির সংখ্যা পাঁচ।
সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে শীর্ষে উঠে এসেছে নিউ লাইন ক্লোথিংস লিমিটেড। কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের সর্বশেষ লভ্যাংশ দিয়েছে ২০২১ সালে।
কোম্পানিটির সর্বশেষ বার্ষিক সভা হয়েছে ২০২২ সালে। এরপর থেকে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দিয়ে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে আছে কোম্পানিটি।
লেনদেনে শীর্ষ কোম্পানিগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে থাকা অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেড কোম্পানিটিও ‘জেড’ ক্যাটাগরির। কোম্পানিটি ২০১৬ সালের পর আর কোনো লভ্যাংশ না দিয়েও হয়ে উঠেছে বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ‘তারল্য সংকটের মধ্যে সূচকের উত্থান হওয়ায় দ্রুত মুনাফা পাওয়ার আশায় অনেক বিনিয়োগকারী খারাপ শেয়ারে অর্থলগ্নি করছেন। এতে করে মন্দ কোম্পানির শেয়ার ফুলেফেঁপে উঠলেও ঝুঁকি বাড়ছে পুঁজিবাজারে।’
তিনি বলেন, ‘বাজারে ভুল তথ্য ছড়িয়ে সুবিধাভোগী কিছু কোম্পানি এসব মন্দ কোম্পানিকে টার্গেট করেই অর্থ লোপাটের পরিকল্পনা করছে। শুধু কোম্পানিই নয়, বাজার অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে অনেক ব্রোকারেজ হাউসও জড়াচ্ছে কারসাজিতে।’
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি প্রতারণামূলক সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে চার ব্রোকারেজ হাউসের বিরুদ্ধে।
সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে পিছিয়ে আছে ব্যাংক খাত। পাঁচ কর্মদিবসে এ খাতে শেয়ারের দাম কমেছে ২৩ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত সপ্তাহে এ খাতের সূচক ৬৪৮ পয়েন্ট থেকে কমে ৪৯৪ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
ব্যাংকের পাশাপাশি দাম কমেছে বিমা খাতেও। পাঁচ কার্যদিবসে বিমা খাতে শেয়ারের দাম কমেছে ১৬ দশমিক ৬২ শতাংশ।
ব্যাংক-বিমা পিছিয়ে পড়লেও ভালো অবস্থানে রয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। এ খাতে শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এ ছাড়া জ্বালানি খাতে শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশের ওপরে।
সর্বোপরি পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২২ পয়েন্ট, ব্লু-চিপ ডিএস-৩০ বেড়েছে ৬ এবং শরিয়াহভিত্তিক ডিএসইএস বেড়েছে ৭ পয়েন্ট।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে ১৮৩ কোম্পানির দাম বেড়েছে, কমেছে ১৬৬টির দাম এবং অপরিবর্তিত আছে ৪৯ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ডিএসইতে সপ্তাহের ব্যবধানে গড় লেনদেন ১ শতাংশের মতো কমলেও মোট বাজার মূলধন বেড়েছে ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
প্রথাগত লেনদেনের বাইরেও সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটে ১০৬ কোটি টাকার শেয়ার বেচাকেনা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার বিক্রি করে এসিআই লিমিটেড। কোম্পানিটি পাঁচ দিনে ব্লক মার্কেটে ২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করে।
সপ্তাহব্যাপী লেনদেনে সবচেয়ে বেশি রিটার্ন আসে সিরামিক খাত থেকে। রিটার্নের হিসাবে তলানিতে আছে আর্থিক খাত, জীবনবিমা ও সাধারণ বিমা। সর্বোপরি মার্কেট রিটার্ন বেড়েছে দশমিক ৫০ শতাংশ।
গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো পুঁজিবাজার সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স বিএসইসির কাছে নিজেদের প্রাথমিক দুটি সুপারিশ জমা দেয়।
মার্জিন ঋণ ও মিউচুয়াল ফান্ড সংক্রান্ত এসব সুপারিশ আমলে নেওয়া হলে শেয়ারবাজারের অস্থিরতা অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে। বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বাড়ে ১০ পয়েন্ট।
শরিয়াহভিত্তিক ডিএসইএস ৩ এবং ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ বাড়ে ৪ পয়েন্ট।
লেনদেনের শুরুতেই দাম বাড়ে ১৭৭ কোম্পানির, কমে ১৩৩টির এবং অপরিবর্তিত থাকে ৭৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেনের দুই ঘণ্টায় ডিএসইতে ১৭০ কোটি টাকার ওপর শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়।
লেনদেনের শুরুতে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক বাড়ে ২৮ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ১১০ কোম্পানির মধ্যে দাম বাড়ে ৭০, কমে ২২ এবং অপরিবর্তিত থাকে ১৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম। মোট শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন ছাড়ায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য