ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে ‘শর্ট নোটিশে’ কলমানি ধার বেড়ে গেছে। ব্যাংকগুলো তারল্য চাপে থাকায় তিন ও সাত দিনের জন্য অন্য ব্যাংক থেকে শর্ট নোটিশে আগের চেয়ে টাকা ধার করা বাড়িয়েছে। তারল্যে চাপে থাকা ব্যাংকগুলো কলমানিতে পর্যাপ্ত টাকা না পাওয়ায় শর্ট নোটিশে ধার নেয়া বাড়িয়েছে।
আর এ জন্য বেশি সুদ গুনতে হচ্ছে। কলমানিতে সুদের হার যেখানে ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ; শর্ট নোটিশে ধার করা সুদের হার সেখানে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছে।
একাধিক বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলোতে এক রকমের তারল্য চাপের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ সময়ে ওভারনাইটের চেয়ে শর্ট নোটিশে টাকা ধার নেয়া বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র বলছে, ওভারনাইট (এক দিনের জন্য) ঋণের চেয়ে শর্ট নোটিশে টাকা ধার করার দিকে বেশি ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে এক দিনের মধ্যে টাকা ধার দেয়া থেকে শর্ট নোটিশে টাকা দিলে বেশি সুদ পাওয়া যায়, ফলে ব্যাংকগুলোও শর্ট নোটিশে টাকা ধার দিতে বেশি আগ্রহী।
আবার শর্ট নোটিশে টাকা ধার নেয়ার সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। চলতি বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম সাত দিনে শর্ট নোটিশের গড় সুদ ছিল সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ০১ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অক্টোবরের ১৫ দিনে এটির গড় দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছর জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসের চেয়ে প্রতি কার্যদিবসে আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে শর্ট নোটিশের সুদের হার বেড়েছে।
জুনে সাত দিনের শর্ট নোটিশে ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ থেকে ৬ দশমিকের আশপাশের মধ্যে ছিল। জুলাইতে এটি ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশের ওপর চলে যায়।
আগস্টেও প্রতি কার্যদিবসে শর্ট নোটিশে ৭ শতাংশের ওপর সুদের হার ছিল।
সেপ্টেম্বরে বেশির ভাগ কর্মদিবসে এটির হার ৭ দশমিক ২০ শতাংশ ছাড়ায়।
অক্টোবরের ১১ দিনে শর্ট নোটিশে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশের ওপর সুদে টাকা ধার নিয়েছে ব্যাংকগুলো।
ট্রেজারি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রতিদিন ডলার বিক্রি করার কারণে বাজার থেকে তারল্যের সংকট তৈরি হয়েছে। ডলার বিক্রি করায় টাকা চলে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। সে সঙ্গে বেসরকারি খাতে বেড়েছে ঋণপ্রবাহ। অন্যদিকে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণও কমেছে। সব মিলিয়ে নগদ টাকার সংকট ব্যাংকে।
অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে তারল্য না থাকায় কলমানিতে টাকা নেয়া বাড়বে, তবে কলমানিতে টাকা না থাকলে ব্যাংক তখন শর্ট নোটিশে টাকা ধার করে। গত কয়েক মাস ধরে শর্ট নোটিশের সুদের হার বেড়েছে। ফলে বোঝা যায়, ব্যাংকগুলো তারল্য চাপের মধ্যে আছে এবং কলমানিতে টাকা না পেয়ে শর্ট নোটিশে ধার নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমানত কমে যাওয়া, বেসরকারি খাতে রেকর্ড পরিমাণে ঋণ দেয়া ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অধিক টাকা চলে যাওয়ার জন্য এ সংকটের মধ্যে পড়ছে ব্যাংকগুলো। তবে এই চাপ কমে এলে কলমানি এবং শর্ট নোটিশের সুদের হার কমে আসবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছর অক্টোবর মাসে ৭ দিনের শর্ট নোটিশে প্রতি কার্যদিবসে গড়ে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ধার করেছে ব্যাংকগুলো। গত ছয় মাসের মধ্যে কোনো দিন এ গড় এক হাজার কোটি পার হয়নি।
চলতি বছরের জুনে প্রতি কার্যদিবসে শর্ট নোটিশে বেশিরভাগ সময় ১৪০ কোটি টাকা থেকে শুরু করে ৪৫০ কোটি টাকার লেনদেন করে ব্যাংকগুলো। যদিও এ সময়ে কয়েক বার ৭০০ কোটি টাকার ওপর লেনদেন হয়। জুন শেষে প্রতি কার্যদিবসে গড়ে ৩৬০ কোটি টাকার ওপর লেনদেন হয়।
জুলাইতে ৭ দিনের কর্মদিবসে শর্ট নোটিশে লেনদেন করা আরও বেড়ে যায়। এ মাসে ১৫ দিনের ওপর প্রতি কার্যদিবসে ৩৫০ কোটি টাকা থেকে ৬৫০ কোটি টাকার ওপর ধার নেয় ব্যাংকগুলো। একাধিকবার ১ হাজার কোটি টাকার ওপর ধার নেয়া হয়। জুনে প্রতি কার্যদিবসে ৬০০ কোটি টাকার ওপর ৭ দিনের শর্ট নোটিশে ধার নেয় ব্যাংকগুলো।
আগস্টে এই গড় হার জুলাই থেকে আরও ১০০ কোটি টাকা বেড়ে যায়। এ সময়ে ১৪ বারের বেশি ৪০০ কোটির ওপর ধার নেয় ব্যাংকগুলো। ১ হাজার কোটি টাকার ওপর ধার নেয় একাধিকবার। আগস্ট মাসের প্রতি কার্যদিবসে ধার নেয়ার হার ৬৯০ কোটি টাকার ওপর।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে টাকা ধার দিয়েছে। সেপ্টেম্বরের আগের মাসগুলোতে শর্ট নোটিশে সুদের হার আরও কম ছিল।
ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তারল্য চাপে পড়লে সাধারণত একটি ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে টাকা সংগ্রহ করে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও টাকা সংগ্রহ করতে পারে।
অর্থনীতিবিদ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কলমানি থেকে ব্যাংকগুলো টাকা ধার নেয়া বাড়িয়ে দিলে এবং সুদের হার বেড়ে গেলে বোঝা যায় যে, ব্যাংক তারল্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া ওভারনাইটের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো রেপো রেট ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশের বেশি চার্জ করতে পারে না। তাই বাজারে তারল্য চাপ বেড়েছে কিনা সেটি বোঝার অন্যতম টুল হিসেবে ৩ ও ৭ দিনের জন্য শর্ট নোটিশে টাকা ধার করার সুদের হার পর্যালোচনার মাধ্যমে উঠে আসে।
কয়েক মাসের এই হার বিবেচনা করলে দেখা যায়, এই হারটি ক্রমাগত বাড়ছে। অর্থাৎ বাজারে এক রকমের তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে।
তিন ও সাত দিনের শর্ট নোটিশে টাকা ধার করার বিষয়টির কারণ হিসেবে দুইটি ব্যাখ্যা বলছে একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে তারল্য চাপ তৈরি হলে ওভারনাইট কলমানিতে চাহিদা বেড়ে গেলে ব্যাংকগুলো একটি নেগোসিয়েশন করে।’
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ওভারনাইট কলমানিতে যেখানে গড় সুদের হার ৫ দশমিক ৮০ শতাংশের আশপাশে সেখানে তিন ও সাত দিনের শর্ট নোটিশে গড় সুদের হার সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছিল।
আরও পড়ুন:এনআরবিসি ব্যাংকের ১২তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় গত বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন, লভ্যাংশ, ২০২৫ সালের জন্য নিরীক্ষক নিয়োগ ও তাদের সম্মানী অনুমোদন করা হয়। ২১ আগস্ট, ২০২৫, বৃহস্পতিবার, কুর্মিটোলা গল্ফ ক্লাবে ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ও চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন প্রধানিয়ার সভাপতিত্বে হাইব্রিড পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত সভায় স্বশরীর ও অনলাইন প্লাটফর্মে স্বতন্ত্র পরিচালক, উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডারবৃন্দ অংশ নেন।
সভায় স্বতন্ত্র পরিচালক ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ, এফসিএ, স্বতন্ত্র পরিচালক ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান মো. নুরুল হক, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. আবুল বশর, মো. আনোয়ার হোসেন ও ব্যারিস্টার মো: শফিকুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. মো. তৌহিদুল আলম খান, ডিএমডি ও সিএফও হারুনুর রশীদ এবং কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আহসান হাবিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় শেয়ারহোল্ডারদের অনলাইন প্লাটফর্মে প্রদত্ত সর্বোচ্চ ভোটের মাধ্যমে ৪ টি এজেন্ডা পাস করা হয়। এছাড়া অনলাইন এবং সশরীরে উপস্থিত বিনিয়োকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া।
এজিএমে অংশগ্রহণকারী সকল স্বতন্ত্র পরিচালক, শেয়ারহোল্ডার, গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, আমানতকারী ও সাধারন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় এনআরবিসি ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমরা ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার মাধ্যমে নতুন পরিচালনা পর্ষদ আমনতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। তিনি আরও বলেন, ঋণশৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে ব্যাংকের গুণগত সম্পদ ও মুনাফা বৃদ্ধি করাই এই পর্ষদের লক্ষ্য। এক্ষেত্রে, তিনি সবাইকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ, এফসিএ, বলেন, ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আস্থার কারণে আমানতের পরিমান ২০ হাজার কোটি টাকার মাইলফলক অতিক্রম করেছে। সুবিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে টেকসই ব্যবসায়িক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা সফল হলে শেয়ারহোল্ডারগণ তাদের বিনিয়োগের কাঙ্খিত সুফল পাবেন বলে আমরা আশাবাদী।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. মো. তৌহিদুল আলম খান বলেন, আমানতকারী ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এনআরবিসি ব্যাংকের প্রাণশক্তি। আমরা দক্ষ পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে ব্যাংকের স্বার্থ সংরক্ষণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কমপ্লায়েন্স, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ নিশ্চিত করতে চাই।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে যাত্রা করা এনআরবিসি ব্যাংক পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হয় ২০২১ সালে। বর্তমানে সারাদেশে ব্যাংকটির ১০৯টি শাখা এবং ৪১৫টি উপশাখার মাধ্যমে প্রথাগত ব্যাংকিং সেবার পাশাপাশি শরীয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং সেবাও প্রদান করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত Sustainability Rating 2024- এ দেশের শীর্ষ ১০ টেকসই ব্যাংকের মধ্যে গৌরবময় অবস্থান অর্জন করেছে পূবালী ব্যাংক পিএলসি।
এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাননীয় গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আলী-এর নিকট টেকসই অর্থায়নে শ্রেষ্ঠত্বের সনদ ও ক্রেস্ট হস্তান্তর করেন।
এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের মাননীয় ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার, অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং পূবালী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইছা উপস্থিত ছিলেন।
এই অর্জন পূবালী ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি ভিশনের প্রতিফলনÑ সুশাসন, পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন, প্রযুক্তিনির্ভর সেবা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিংকে সমন্বিত করে জাতীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করা।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২০২৪ সালের সাসটেইনেবল রেটিং এর জন্য ক্রেস্ট ও সম্মাননা স্মারক অর্জন করেছে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। ২০ আগস্ট ২০২৫ইং তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর এর নিকট থেকে উক্ত ক্রেস্ট ও সম্মাননা গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বাংলাদেশ বাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মনোজ কুমার হাওলাদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট এর পরিচালক চৌধুরী লিয়াকত আলী এবং শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এম. সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ২০২৪ সালে ব্যাংকিং কার্যক্রমে বিভিন্ন সূচকে সন্তোষজনক অগ্রগতি ও উৎকর্ষতার জন্য এই সম্মানজনক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সাল থেকে সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স, গ্রীণ রিফাইন্যান্স, কর্পোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর), কোর ব্যাংকিং সাসটেইনেবেলিটি এবং ব্যাংকিং সেবার পরিধি ক্যাটাগরীর উপর ভিত্তি করে এই পুরস্কার প্রদান করে আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই ধরনের সম্মানজনক স্বীকৃতি অর্জন শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যাংকিং কার্যক্রমকে আরো বেগবান করার পাশাপাশি গ্রাহকদের সাথে ব্যাংকের সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্ক ১০,০০০ কোটি টাকার নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এই ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি আমানত সংগ্রহে ব্যাংকটির টেকসইতার প্রতিফলন।
বিগত কয়েক বছর ধরে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের এই লক্ষণীয় ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্যাংকটির ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্কের এমন মাইলফলক ব্যাংকিং খাতে আমানত সংগ্রহে নতুন বেঞ্চমার্ক তৈরি করে চলেছে।
এই সাফল্য উদ্যাপনের লক্ষ্যে ব্যাংকটি ২০ আগস্ট ২০২৫ ঢাকায় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আয়োজনে ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্কের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগ দেন ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও (কারেন্ট চার্জ) তারেক রেফাত উল্লাহ খান এবং ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব ব্রাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক শেখ মোহাম্মদ আশফাক। এ সময় ব্র্যাংকটির ব্রাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের রিজিওনাল হেড, ক্লাস্টার হেড এবং ব্রাঞ্চ ম্যানেজারসহ উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র জোনাল হেড (নর্থ) এ. কে. এম. তারেক এবং সিনিয়র জোনাল হেড (সাউথ) তাহের হাসান আল মামুন।
ব্যাংকের এমন সাফল্যে গ্রাহক আস্থা এবং গ্রাহকদের সাথে সুসম্পর্কের বিষয়টির ওপর জোর দিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও (কারেন্ট চার্জ) তারেক রেফাত উল্লাহ খান বলেন, “গ্রাহকের সাথে আস্থার সম্পর্ককে আমরা আমানত সংগ্রহে সবচেয়ে বড় দক্ষতা হিসেবে দেখি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ২০২৫ সালের বাকি সময়ে এবং সামনের বছরগুলোতেও ডিপোজিট প্রবৃদ্ধিতে আমাদের এমন সাফল্য অব্যাহত থাকবে।”
ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি.:
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অর্থায়নে অগ্রাধিকার দেয়ার ভিশন নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি. ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত দেশের অন্যতম দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী একটি ব্যাংক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ‘BRACBANK’ প্রতীকে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হয়। ১৯১টি শাখা, ৯৭টি উপশাখা, ৩৩০টি এটিএম, ৪৪৬টি এসএমই ইউনিট অফিস, ১,১২৩টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯ হাজারেরও বেশি মানুষের বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক কর্পোরেট ও রিটেইল সেগমেন্টেও সার্ভিস দিয়ে আসছে। ব্যাংকটি দৃঢ় ও শক্তিশালী আর্থিক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে এখন সকল প্রধান প্রধান মাপকাঠিতেই ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষে অবস্থান করছে। বিশ লাখেরও বেশি গ্রাহক নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক বিগত ২৪ বছরেই দেশের সবচেয়ে বৃহৎ জামানতবিহীন এসএমই অর্থায়নকারী ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও নিয়মানুবর্তিতায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা। একই সঙ্গে আমদানির ক্ষেত্রে ৩০ টনের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বুধবার হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের পক্ষ থেকে সংগঠনটির কার্যালয়ে জারুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। আমদানির অনুমতি অব্যাহত না রাখলে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘গত ১৪ আগস্ট পেঁয়াজের আইপি দেয় সরকার, ফলে ১৭ আগস্ট থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। এতে দেশের বাজারে পণ্যটির সররবাহ বাড়ায় দাম কমে আসছিল। কিন্তু ১৯ আগস্ট থেকে আবারো হঠাৎ করে আইপি বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
এখন আমদানিকারকরা আবেদন করলেও কোনো আইপি ইস্যু করা হচ্ছেনা। এতে করে আমদানিকারকরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। হঠাৎ করে আইপি বন্ধের কারণে সীমান্তের ওপারে শতাধিক পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক আটকা পড়ে আছে।
সংবাদ সম্মেলনে যেসব আমদানিকারক ইতোমধ্যে আইপির জন্য আবেদন করেছেন ও ভারতে পেঁয়াজ কিনে ট্রাকে লোড করে রেখেছেন তাদের জন্য পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির দাবি জানানো হয়। আমদানি উন্মুক্ত থাকলে দেশের বাজারে দাম কমে আসবে বলেও জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
সেসময় সেখানে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক ও আমদানিকারক রিপন হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
টানা চার কার্যদিবস সূচকের উত্থানের পর বুধবার পতনের মুখে পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রামের পুঁজিবাজার; কমেছে সূচক, বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম ও সার্বিক লেনদেন।
উত্থান দিয়ে লেনদেনে শুরু হলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সূচকের পতন হতে থাকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। লেনদেনে শেষে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩১ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরিয়াভিত্তিক ডিএসইএস কমেছে ১১ পয়েন্ট এবং বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ শেয়ার ডিএস-৩০ কমেছে ১৮ পয়েন্ট।
ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৮ কোম্পানির মধ্যে দাম কমেছে বেশিরভাগের। ১২৪ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২২৩ কোম্পানি এবং অপরিবর্তিত ৫১ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ক্যাটাগরির হিসাবে এ, বি এবং জেড- তিন ক্যাটাগরিতেই দাম কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির। সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দেওয়া এ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হওয়া ২১৯ কোম্পানির মধ্যে ৭২ কোম্পানির দরবৃদ্ধির পাশাপাশি দর কমেছে ১২৩ এবং অপরিবর্তিত ২৪ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ব্লক মার্কেটে ২৯ কোম্পানির ২৩ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। এশিয়াটিক ল্যাবরেটারিজ সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
লেনদেন কমেছে ডিএসইতে; সারাদিনে ৯৫৩ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে, যা গতদিন ছিল ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষে ইনফরমেশন সার্ভিস নেটওয়ার্ক লিমিটেড এবং ৭ শতাংশের ওপর দাম কমে তলানিতে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
চট্টগ্রামেও পতন
ঢাকার মতোই সূচকের পতন হয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই), সার্বিক সূচক কমেছে ৭৫ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ২২৮ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৯০, কমেছে ১০৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ২৯ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
গতদিনের লেনদেন অর্ধেকে নেমে এসেছে সিএসইতে। সারাদিনে ৯ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গতদিন ছিল ১৮ কোটি টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষে ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং ৯ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে তলানিতে মেট্রো স্পিনিং লিমিটেড।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেছেন, পোশাকশিল্পে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ পাওয়া যায় না। পর্যাপ্ত গ্যাসের চাপ না থাকায় অনেক কারখানা তাদের পূর্ণ উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না। গ্যাস না থাকায় শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে রপ্তানি এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বুধবার বিজিএমইএ সভাপতি জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে তার সচিবালয়স্থ কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে এসব কথা বলেন। পোশাক শিল্পের সংকট মোকাবিলায় বিজিএমইএ সভাপতি পাঁচটি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করেন। এ সময় বিজিএমইএ পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম ও এ বি এম সামছুদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা ধরে রাখা এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সুরক্ষিত রাখতে পোশাক শিল্পের পথ সুগম করা অত্যন্ত জরুরি।
তিনি তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান গ্যাস পরিস্থিতি এবং গ্যাস সংকটের কারণে সৃষ্ট নানা সমস্যা তুলে ধরেন। এ সংকট মোকাবিলায় বিজিএমইএ সভাপতি পাঁচটি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করেন।
এগুলো হলো: দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সুরক্ষার জন্য গ্যাসের নতুন সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে শ্রমঘন পোশাক ও বস্ত্র শিল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, তিতাস গ্যাসের নতুন সংযোগ অনুমোদনের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় কর্তৃক যাচাই-বাছাই কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানান, যাতে করে কারখানাগুলো সময়মতো উৎপাদন শুরু করতে পারে, লোড বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই, শুধু সরঞ্জাম পরিবর্তন, পরিমার্জন বা স্থানান্তরের জন্য আবেদনকারীদের একটি আলাদা তালিকা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত প্রদান করার অনুরোধ জানানো হয়, কম লোড বৃদ্ধির আবেদনকারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়, যা ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলো দ্রুত উৎপাদনে যেতে সাহায্য করবে, ধামরাই ও মানিকগঞ্জের মতো যেসব এলাকার গ্যাস পাইপলাইনের শেষ প্রান্তে অবস্থিত কারখানাগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে যায়, সেখানে অন্তত ৩-৪ পিএসআই চাপ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিজিএমইএ সভাপতির কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং বলেন, বেসরকারি উদ্যোগে সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত পোশাকশিল্পকে সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। এ খাতের সমস্যাগুলো নিরসনে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক রয়েছে।
মন্তব্য