গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে বস্ত্রশিল্প নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তারা বলেছেন, বস্ত্র কারখানাগুলোতে গড়ে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। গ্যাস সমস্যা তো ছিলই। সব মিলিয়ে বস্ত্র শিল্পের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।
শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন বস্ত্র শিল্পমালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।
তিনি বলেন, ‘যেসব মিল ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশনের মাধ্যমে চালু থাকে বিশেষত ঢাকার আশপাশে- নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, মাধবদী, আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর, শ্রীপুর, ভালুকা অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় অবস্থিত। এসব মিল মূলত গত কয়েক মাস যাবৎ গড়ে ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। বিদ্যুৎ থাকা সময়ে মিলগুলো মোট উৎপাদন ক্ষমতার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারে।’
বস্ত্র খাতে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট নিয়ে সমস্যা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে এসব কথা বলেন তিনি।
বিটিএমএ সভাপতি খোকন বলেন, ‘আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে, বাংলাদেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতটি বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মধ্যে ছিল।’
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সামগ্রিক বিশ্ব পরিস্থিতির ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে আমাদের প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতটি একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। যে বিষয়টি ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আমাদেরকে সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তা হলো জ্বালানি তথা গ্যাসের তীব্র সংকট। যার কারণে আমাদের মিলগুলোর উৎপাদন দীর্ঘদিন যাবৎ কার্যত বন্ধ রয়েছে।’
‘সমস্যার সমাধানের জন্য আমরা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানি উপদেষ্টাসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি। বিভিন্ন দফায় শরণাপন্ন হওয়ার পরও এর কোনো সমাধান নেই, বরং সমস্যাটি বর্তমানে তীব্র ও অসহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে।’
খোকন বলেন, ‘২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানিতে টেক্সটাইল খাত মোট ২৯ বিলিয়ন ডলারের মূল্য সংযোজন করেছে। তবে এর মধ্যে নিটওয়্যার খাতে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের হার ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। অন্যদিকে মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্রে ওভেন ও ডেনিমের হার হচ্ছে ৪৫ শতাংশ।’
তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরে আমরা স্থানীয়ভাবে মোট ৭ বিলিয়ন মিটার কাপড়ের জোগান দিয়েছি। যার মূল্য আনুমানিক ৮ বিলিয়ন ডলারের মতো, অন্যথায় উক্ত চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতো হতো, যা ডলারের বিদ্যমান সংকটকে আরও বাড়াত। শিল্প উৎপাদনের মূল নিয়ামক হচ্ছে জ্বালানি। অথচ গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে আমাদের টেক্সটাইল মিলগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের উৎপাদন সক্ষমতার ৩৫-৪০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করতে পারছে না। ছোট ও মাঝারি মানের ফেব্রিক মিলগুলোর অবস্থা আরও খারাপ।’
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের জানামতে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, পলাশ, কালীবাড়ি, মাধবদী ইত্যাদি এলাকায় অনেক ছোট-খাটো মিল রয়েছে। ওই সব মানুষের জীবন-জীবিকা মূলত তাঁতনির্ভর এবং মিলগুলো পরিচালিত হয় সাধারণত বিদ্যুৎ দিয়ে। ফলে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে মিলগুলোর যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তা পূরণ করার কোনো বিকল্প নেই।’
‘এ ছাড়া ডায়িং মিলগুলোর সমস্যাটি অত্যন্ত প্রকট। লোড শেডিংয়ের কারণে মিলগুলোর মূল্যবান রং এবং রসায়ন নষ্ট হচ্ছে। একই সঙ্গে সাইজিং মেশিন বন্ধ থাকায় সুতাও নষ্ট হচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত মিলগুলোকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে অনেকে ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার চিন্তা করছেন।’
খোকন বলেন, প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতে বর্তমান বিনিয়োগ দেড় লাখ কোটি টাকারও বেশি, যা আমেরিকান মুদ্রা ডলারে ১৬ বিলিয়নের মতো। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই বিভিন্ন ব্যাংকের বিনিয়োগ। মিলগুলোর উৎপাদন কমে যাওয়ায় ক্রমাগত লোকসানের কারণে উদ্যোক্তারা ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘অনেক শিল্প ইতোমধ্যে রুগ্ণ হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। অপরদিকে টেক্সটাইল খাতে আগামী ২০২৫ সনের মধ্যে আরও ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হতে যাচ্ছে। ফলে যদি জ্বালানির নিশ্চয়তা না পাওয়া যায় উক্ত বিনিয়োগ নিশ্চিতভাবে অপবিনিয়োগ হতে বাধ্য।’
খোকন বলেন, ‘যারা ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) ঋণ নিয়ে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করেছে তারাও সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। অথচ এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান কঠোর । ফলে নির্ধারিত সময়ে উক্ত অর্থ পরিশোধ করতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী মিলগুলো পরবর্তী সময়ে এই ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা হারাবেন, যদিও এর জন্য আমরা বা মিল কর্তৃপক্ষ কোনোক্রমেই দায়ী নই।’
বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ‘টাকার সঙ্গে ডলারের বিনিময় হারের তারতম্যও আমাদের জন্য আরেকটি চিন্তার কারণ। কেননা, ব্যাংক যখন উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয় তখন প্রতি ডলারের মূল্য ছিল ৮৪ থেকে ৮৫ টাকা। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে ১০৭ টাকা করে। এই বিশাল তারতম্যের কারণে উদ্যোক্তাদের লিমিট শেষ হয়ে যাচ্ছে আগেই। নতুন করে লিমিট না বাড়ানোয় আমাদের অনেক সদস্য মিলই সময়মতো এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছেন।’
‘এমনিতেই আন্তর্জাতিক বিশ্বে নানাবিধ অস্থিরতার কারণে আমরা নানাবিধ চাপের মধ্যে রয়েছি। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দা পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় জ্বালানির অভাবে যদি আমরা মিল নিরবচ্ছিন্নভাবে চালাতে না পারি তাহলে ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে আমরা শংকিত।’
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি গ্লোবাল জিডিপির বিবেচনায় বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে ৪১তম। অর্থনীতির ব্যাপকতা বিবেচনায় আমাদের জ্বালানির ব্যবহারও অনেক বেশি। ক্যাপটিভে আমাদের মিলগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১৭০০ মেগাওয়াট। এ ক্ষেত্রে জ্বালানি ক্রয়ে ডলারের বর্তমান মূল্য বিবেচনায় আমাদের অবস্থান ২৫তম। অন্য দিকে বিশ্বের টেক্সটাইলের বাজারটি হচ্ছে প্রায় ৬৮০ বিলিয়ন ডলারের মতো; যেখানে বাংলাদেশের শেয়ার হচ্ছে ৬.৮ শতাংশ, যা ২০২২ সালের শেষ নাগাদ ৭ শতাংশে উপনীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
‘বাংলাদেশের জিডিপির আকার হচ্ছে ৪০০ বিলিয়ন ডলার, যেখানে শিল্প খাতে অবদান হচ্ছে ৩৩.৩২ শতাংশ, যার ৮৪ শতাংশই টেক্সটাইল ও ক্লথিং থেকে আসে। উপরোক্ত সম্ভাবনাগুলো বিবেচনায় নিয়ে এখাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে।’
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে অর্জিত মোট রপ্তানি আয়ের ৫২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে টেক্সটাইল এবং ক্লদিং থেকে অর্জিত আয়ের পরিমাণ ৪৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে স্থানীয়ভাবে তৈরি টেক্সটাইল সামগ্রীর অবদান হচ্ছে ২৯ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ এর মাধ্যমে প্রাইমারি টেক্সটাইল সেক্টর প্রায় ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার স্থানীয়ভাবে রিটেনশন করতে পেরেছে, যা শতাংশ হিসেবে ৪৫.৫ শতাংশ।
খোকন বলেন, ‘আমাদের ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশনের মিলগুলো বার্ষিক ১৬৯.১ বিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস ব্যবহার করে। এর বিপরীতে গ্যাস ট্যারিফ হিসাবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মতো বিল পরিশোধ করে। এই গ্যাস ব্যবহার এবং তার সাথে অন্যান্য ইনপুট ব্যবহারের মাধ্যমে মিলগুলো ২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি সাশ্রয় করে থাকে।’
‘এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই পরিমাণ গ্যাস মিলগুলোকে সরবরাহ করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আমরা স্থানীয়ভাবে সাশ্রয় করব কি না? এমন পরিস্থিতিতে টেক্সটাইল খাতের মিলগুলোতে যদি গ্যাসের অব্যাহত সংকট চলতে থাকে তাহলে আমাদের মিলগুলো যে ২১ বিলিয়ন ডলার রিটেনশন করেছে তা বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সরকার ডলার ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলার জন্য যে সাশ্রয় নীতি গ্রহণ করেছেন তা বাধাগ্রস্ত হতে বাধ্য।’
‘ফলশ্রুতিতে গ্যাস সংকটের কারণে মিলগুলোতে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়ে বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নতুন বেকারত্বের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টিসহ সামগ্রীক ভাবে অর্থনীতির সাইকেলটি সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।’
‘তাই টেক্সটাইল খাতের সম্ভাবনা, অবদান ও গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে খাদ্য পণ্যের অনুরূপ টেক্সটাইল খাতকে অগ্রাধিকার প্রদান করে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে টেক্সটাইল খাতে যেকোনোভাবেই হোক নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ অব্যাহত রাখার অনুরোধ করছি। কেননা, প্রধানমন্ত্রী আগামীতে যে বাংলাদেশের স্বপ্ন তার সিংহভাগ এ খাতটির মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে বলে আমরা মনে করি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিটিএমএ সহসভাপতি ফজলুল হক ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, পরিচালক মোশাররফ হোসেন, আবদুল্লাহ জোবায়ের, সৈয়দ নুরুল ইসলাম, মোনালিসা মান্নান প্রমুখ।
আরও পড়ুন:বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য অক্ষুণ্ন রেখে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০ বছর মেয়াদি ‘সুন্দরবন ইকোট্যুরিজম মাস্টারপ্ল্যান (২০২৫-২০৪৫)’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি গতানুগতিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মতো নয়, বরং সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশকে অক্ষুন্ন রেখে কীভাবে টেকসই পর্যটন বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন করা যায়, তার একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ করা হয়েছে।
মাস্টারপ্ল্যানটি বন বিভাগ অনুমোদন দিলে ইউনেস্কো ঘোষিত এই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইউএসএআইডির আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় বাংলাদেশ বন বিভাগ ও সোলিমার ইন্টারন্যাশনাল এই উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। ইউএসএআইডি ইকোট্যুরিজম অ্যাক্টিভিটি পাইলট প্রকল্পের অধীনে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে তিন বছর মেয়াদে এ মাস্টারপ্ল্যানের বড় একটি অংশ বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।
ডেপুটি চিফ অব পার্টি হিসেবে এ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে নেতৃত্ব দেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. ওয়াসিউল ইসলাম।
তিনি জানান, এই মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে প্রায় দুই বছর সময় লেগেছে। এটি মূলত সুন্দরবনের পরিবেশ ও অর্থনীতির সমন্বয়ে একটি টেকনিক্যাল রোডম্যাপ। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশীয় পর্যটন শিল্পের প্রবৃদ্ধি ঘটবে, স্থানীয়দের অর্থনৈতিক ভিত মজবুত হবে এবং এর মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।’
ড. মো. ওয়াসিউল বলেন, ‘সুন্দরবনে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথও খুলবে, যা জাতীয় অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবনের কোলাহলমুক্ত, শান্ত, সুনিবিড় পরিবেশ এবং রাতের জ্যোৎস্না বিশেষভাবে উপভোগ করে থাকেন। এই চাহিদা কাজে লাগাতে পারলে পর্যটন খাত দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।’
মাস্টারপ্ল্যানটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর কমিউনিটিভিত্তিক ইকোট্যুরিজম মডেল। বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয়, ট্যুরিস্ট পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, জাতীয় ও আঞ্চলিক ট্যুর অপারেটর এবং স্থানীয় বাসিন্দাসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে এটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
ড. ওয়াসিউল বলেন, ‘স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে পরিকল্পনাটি তৈরি হওয়ায় বিরোধের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। স্থানীয়রা সরাসরি ইকোট্যুরিজমে অংশ নেবে এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগতভাবে উপকৃত হবে।’
পরিকল্পনায় বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরতা কমানোর বিষয়টি অগ্রাধিকার পেয়েছে। পর্যটনের মাধ্যমে বিকল্প ও টেকসই জীবিকা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে সুন্দরবনের পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় থাকে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই পদ্ধতি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ওপর চাপ কমাবে এবং ঘূর্ণিঝড় ও জোয়ার-ভাটার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে এর সহনশীলতা বাড়াবে।’
এই প্রকল্পের অধীনে ২০০ জনের বেশি ইকো-গাইডকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা পর্যটকদের গাইড করবে এবং মানুষ-বন্যপ্রাণীর সংঘাত কমিয়ে আনবে। তাদের তত্ত্বাবধানে নিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিশ্চিত হবে, যা পরিবেশের ক্ষতি কমাবে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষক জানান, দাকোপ এলাকায় যে সকল ইকো-কটেজ স্থাপন করা হয়েছে, সেসব কটেজে কর্মরত স্থানীয় কর্মচারীদেরও গেস্ট ম্যানেজমেন্ট এবং পর্যটক সেবা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে পর্যটকদের সাথে কোনো ধরনের সংঘাত বা ভুল বোঝাবুঝি হওয়ার সুযোগ কম থাকে।
পর্যটকদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য মাস্টারপ্ল্যানে প্রধান তিনটি প্রবেশপথ মোংলা, মুন্সীগঞ্জ ও শরণখোলায় তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলো পর্যটকদের নৌকা ভাড়া করা, ইকো-গাইড নিয়োগ করা এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন সুবিধা পেতে সাহায্য করবে।
বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বাসসকে জানান, প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ পর্যটক সুন্দরবনে ভ্রমণ করতে আসেন।
তিনি বলেন, ‘এ বিপুল সংখ্যক পর্যটককে নিয়ন্ত্রণ করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। এই মাস্টারপ্ল্যানটি বনের ক্ষতি না করে দায়িত্বশীল ইকো-ট্যুরিজমকে উৎসাহিত করছে। এটি একটি সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
ইমরান আহমেদ জানান, পরিকল্পনাটি বর্তমানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সুন্দরবনভিত্তিক ইকোট্যুরিজম খুলনাকে জাতীয় রাজস্বের একটি বড় উৎসে পরিণত করবে।’
সুন্দরবনের আশপাশের গ্রামবাসীরাও পরিকল্পনাটি নিয়ে আশাবাদী। তারা জানান, আগে কিছু ব্যক্তিগত কটেজে অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছিল। তবে নতুন পরিকল্পনায় সরকারি তত্ত্বাবধান থাকায় একসঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জনকল্যাণ নিশ্চিত হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ২০ বছর মেয়াদি এই মাস্টারপ্ল্যান সুন্দরবনকে টেকসই পর্যটনের আদর্শ রূপে গড়ে তুলবে, যা বন সংরক্ষণকে উৎসাহিত করবে, স্থানীয়দের শক্তিশালী করবে এবং বিশ্বজুড়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের আকৃষ্ট করবে।
সূত্র: বাসস
বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা ঢাকা ইলেকটিক্স সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ১২৫ কোটি টাকার বেশি লোকসান করেছে। রোববার প্রকাশিত কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি গত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি ।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ডেসকোর শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ১৫ পয়সা। ডেসকোর মোট শেয়ারের সংখ্যা ৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮০৪। সে হিসাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিট লোকসান হয়েছে ১২৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা ৪৪ হাজার ৮৮২ টাকা।
নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছর শেষে ডেসকোর শেয়ার প্রতি নিট সম্পত্তি দাঁড়িয়েছে ৩৫ টাকা ৩৩ পয়সা, শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ৯৩ পয়সা।
কোম্পানির মূল্য-সংবেদনশীল তথ্যের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেহেতু কোম্পানির চলতি বছরে লোকসান হয়েছে এবং অবণ্ঠিত পুঞ্জীভূত মুনাফা ঋণাত্মক, তাই পরিচালনা পর্ষদ এ বছর কোনো লভ্যাংশ সুপারিশ করতে পারেনি।
টানা তিন বছর ধরে লোকসানে রয়েছে ডেসকো। এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ১২ টাকা ৭২ পয়সা। সে হিসেবে নিট লোকসান হয় ৫০৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কোম্পানি শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ১৩ টাকা ৬১ পয়সা। সে হিসাবে নিট লোকসান হয় ৫৪১ কোটি ২১ লাখ টাকা।
কোম্পানির মূল্য-সংবেদনশীল তথ্যের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত শনিবার ডেসকোর পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত ৩০ জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব বিবরণী অনুমোদিত হয়। সভায় ২০২৬ সালের ১৭ জানুয়ারি সকাল ১০টায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ২৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। এর জন্য রেকর্ড ডেট রাখা হয়েছে আগামী ২০ নভেম্বর।
প্রায় এক মাসের স্থিতিশীলতা ভেঙে আবারও বেড়েছে এশিয়ার স্পট মার্কেটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম। ইউরোপে আগেভাগে শীত শুরু হওয়া এবং ইউক্রেনের গ্যাস অবকাঠামোয় রাশিয়ার হামলার প্রভাবেই এই জ্বালানি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর: রয়টার্স ও মার্কেট স্ক্রিনার।
শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় নভেম্বরে সরবরাহের জন্য গত সপ্তাহে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির গড় মূল্য ছিল ১১ ডলার, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১০ ডলার ৬০ সেন্ট। ডিসেম্বর সরবরাহের জন্য গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে ১১ ডলার ২০ সেন্ট প্রতি এমএমবিটিইউ।
এফজিইর গ্যাস ও এলএনজি সাপ্লাই অ্যানালিটিকস বিভাগের পরিচালক সিয়ামাক আদিবি বলেন, ‘ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেছে, কারণ অক্টোবরের শুরুতেই ঠাণ্ডা আবহাওয়া দেখা দিয়েছে। ফলে বৈশ্বিক বাজারে এলএনজির দামও ঊর্ধ্বমুখী।’
তিনি আরও জানান, ‘ইউরোপে গ্যাস মজুত বাড়ানোর গতি কমলেও রিগ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল থেকে সরবরাহ উচ্চমাত্রায় রয়েছে। তবে এশিয়ার বাজারে চাহিদা এখনো তুলনামূলক কম। মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকার বাজারেও মৌসুমি প্রভাবে চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। ফলে চলতি শীত মৌসুমে এলএনজির দিকনির্দেশনা নির্ভর করবে ইউরোপের ওপর।’
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটস জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে নভেম্বরে সরবরাহের জন্য এলএনজির গড় মূল্য ছিল প্রতি এমএমবিটিইউ ১০ ডলার ৩৩ সেন্ট, যা নেদারল্যান্ডসের টিটিএফ ফিউচার সরবরাহ চুক্তির তুলনায় ৬৩ সেন্ট কম।
অন্যদিকে, আর্গাস এলএনজির মূল্য নির্ধারণ করেছে ১০ ডলার ৩৬ সেন্ট এবং স্পার্ক কমোডিটিস ১০ ডলার ৩০ সেন্ট প্রতি এমএমবিটিইউ।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের আটলান্টিক এলএনজির ব্যবস্থাপক এলি ব্লেকওয়ে জানান, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার সাম্প্রতিক হামলায় প্রায় ৩০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন ব্যাহত হয়েছে। তা ছাড়া অক্টোবরেই ইউরোপে শীত শুরু হওয়ায় গ্যাস মজুত থেকে উত্তোলন শুরু হয়েছে, যা দামের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত গত বছরের তুলনায় ১১ শতাংশের বেশি কম। ফলে পর্যাপ্ত সরবরাহ বজায় রাখতে শীত মৌসুমে ইউরোপকে তুলনামূলক বেশি দামে এলএনজি আমদানি করতে হতে পারে।’
তবে আইসিআইএসের সিনিয়র এলএনজি বিশ্লেষক অ্যালেক্স ফ্রোলি মনে করেন, সেপ্টেম্বরে চীনের এলএনজি আমদানি হ্রাস এবং মিসরের দুর্বল চাহিদা ইউরোপীয় বাজারের দামের ওপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আনতে পারে।
অন্যদিকে স্পার্ক কমোডিটিসের বিশ্লেষক ম্যাক্স গ্লেন-ডোয়েপেল জানান, ‘বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপে রপ্তানির প্রণোদনা এখনো বেশি, কারণ উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় সরবরাহের তুলনায় ইউরোপীয় বাজারে মূল্য সুবিধা বেশি।’
এদিকে এলএনজির পরিবহন খরচও কিছুটা কমেছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত আটলান্টিক রুটে পরিবহন ব্যয় কমে দৈনিক ২২ হাজার ডলার, আর প্রশান্ত মহাসাগরীয় রুটে তা স্থির হয়েছে ২৪ হাজার ডলারে।
শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে বেসরকারি খাতের পুঁজি, উদ্ভাবন ও সম্পৃক্ততা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে আইসিসি বাংলাদেশের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংলাপে ইউনিসেফের প্রাইভেট ফান্ডরেইজিং ও পার্টনারশিপস বিভাগের পরিচালক কার্লা হাদ্দাদ মারদিনি এ আহ্বান জানান।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশ ও ইউনিসেফের মধ্যে আয়োজিত এ সংলাপে শিশুদের অধিকার রক্ষা, টেকসই উন্নয়ন এবং সামাজিক কল্যাণে বেসরকারি খাতের ভূমিকা নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা হয়। রোববার আইসিসি বাংলাদেশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নে আইসিসি বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধভাবে কাজ করছে। প্যারিসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের বাংলাদেশ অধ্যায় হিসেবে আইসিসি বাংলাদেশ দায়িত্বশীল ব্যবসা পরিচালনা ও নৈতিক কর্পোরেট চর্চা প্রচারে নিরলসভাবে কাজ করছে, যা জাতীয় অগ্রাধিকার ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তিনি আরও জানান, ইউনিসেফের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আইসিসি বাংলাদেশ নিয়মিত সহযোগিতা করে আসছে। ২০২২ সালে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় ইউনিসেফ বাংলাদেশের কার্যক্রমে ১৫ লাখ টাকা অনুদান দেয় সংস্থাটি। পরে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার শিশুদের জন্য চিকিৎসা, খাদ্য ও মানবিক সহায়তায় ইউনিসেফ প্যালেস্টাইনের কার্যক্রমে তিন কোটি টাকা অনুদান প্রদান করে।
সংলাপে ইউনিসেফের পরিচালক কার্লা হাদ্দাদ মারদিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এখনই বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ, উদ্ভাবন ও সহযোগিতাকে কাজে লাগানো জরুরি। ব্যবসায়ী সমাজকে একত্রিত করে যৌথ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমরা আইসিসি বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন আইসিসি বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এ. কে. আজাদ, এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি. রহমান, ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বিজিএমইএ সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার বিদ্যা অমৃত খান, প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেডের এমডি ফজলুল হক, উত্তরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, সায়হাম কটন মিলসের এমডি প্রকৌশলী সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, আইসিসি বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল আতাউর রহমানসহ ইউনিসেফ ও আইসিসি বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ইউনিসেফ প্রতিনিধি দল বৈঠকে বলেন, বেসরকারি খাত শুধু অর্থনৈতিক সহায়তার মাধ্যমেই নয়, তাদের প্রভাব, প্ল্যাটফর্ম ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে শিশু অধিকার, লিঙ্গ সমতা ও তরুণদের ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সভা শেষে আইসিসি বাংলাদেশ ও ইউনিসেফ ভবিষ্যৎ সহযোগিতার জন্য একটি যৌথ রোডম্যাপ প্রণয়নে সম্মত হয়। এই রোডম্যাপের মূল লক্ষ্য হবে করপোরেট সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, নীতিগত সংলাপ জোরদার এবং শিশু ও তরুণদের কল্যাণে সম্প্রদায়ভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা। এটি ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর স্বাক্ষরিত আইসিসি বাংলাদেশ–ইউনিসেফ সমঝোতা স্মারকের আওতায় পরিচালিত হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি, লালদিয়ার চর এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও টার্মিনাল ডিসেম্বরের মধ্যে বিদেশি অপারেটরের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ।
তিনি বলেন, তিন টার্মিনালের মধ্যে পানগাঁও ছেড়ে দিতে কিছুটা সময় নেওয়া হবে।
এছাড়া নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) অক্টোবরের মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল, সেটারও কিছুটা সময় নেওয়া হচ্ছে।
রোববার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপার্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘সমুদ্রগামী জাহাজশিল্পে বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সচিব এ কথা বলেন।
মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, আলোচনা শুরু হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি অপারেটরদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটেজিক ইস্যু আছে, ভৌগোলিক ইস্যু আছে। আমরা মনে করি, সেটা বড় কোনো বিষয় হবে না। শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বন্দরে বিদেশি অপারেটর কাজ করছে। সেখানে কোনো সমস্যা না হলে এখানে সমস্যা হবে কেন?
চট্টগ্রাম বন্দরের ক্যাপাসিটি বাড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও যেটা নেই, আমরা তা করছি, বন্দরের মধ্যে কন্টেইনার খুলে পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছি। চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩টি গেট আছে, এর মধ্যে স্ক্যানিং মেশিন আছে মাত্র ৬টি। তার মধ্যে আবার ৩-৪টি নষ্ট থাকে। এভাবে বন্দর চলতে পারে না। এজন্য আমরা বন্দরের ক্যাপাসিটি বাড়াতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছি। এটা করতে পারলে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে যাবে।
‘ব্যবসায়ীরা বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিরোধিতা করছেন, এরপরও বন্দর কি ছেড়ে দেওয়া হবে?’— এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, তারা আগে এমন নানা কথা বলেন, কিন্তু পরে পরিস্থিতি দেখে আর কথা বলেন না।
‘বন্দরের উন্নয়নে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে, এজন্য খরচ বাড়ানো হবে, এটা বহন করতে পারবেন কি না’—এমন এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, সেবার মান বাড়ানো হলে, দ্রুত সেবা দেওয়ার মাধ্যমে বন্দরে অযথা জাহাজ বসিয়ে রাখা হ্রাসের মাধ্যমে ড্যামারেজ কমিয়ে আনতে পারলে বাড়তি খরচ দিতে কোনো সমস্যা হবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমুদ্রগামী জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, জাহাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে একই দেশে দুই ধরনের পতাকার অস্তিত্ব রয়েছে। আইন অনুযায়ী সরকারি টাকায় কেনা পণ্য শুধু দেশের পতাকাবাহী জাহাজ বহন করতে পারবে। সরকার মালিকানাধীন জাহাজ বোঝাতে সরকারি পতাকাবাহী জাহাজের কথা বলা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, তাহলে দেশের বেসরকারি জাহাজ কোন দেশের পতাকা বহন করে?
মূল প্রবন্ধে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জায়দী সাত্তার বলেন, দেশে জাহাজভাঙা শিল্প ও ছোট জাহাজ নির্মাণ খাত বড় জাহাজ নির্মাণের ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। জাহাজ রপ্তানির জন্য প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ আছে। এগুলো ঠিক মতো সরবরাহ করতে পারলে কার্যাদেশ আরও বাড়বে। এজন্য প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে জাহাজ নির্মাণশিল্প উপযোগী ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নির্ভর করে জাহাজ নির্মাণশিল্প। বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য এখন ইতিবাচক রয়েছে। এ সুবিধা কাজে লাগাতে পারলে জাহাজ নির্মাণশিল্প দুই বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত করা সম্ভব।
স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে দেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন উন্নয়নশীল দেশের উপযোগী শিল্পের দিকে যেতে হবে। জাহাজ নির্মাণশিল্প সেই শিল্প যা শুধু তৈরি পোশাক নির্ভর শিল্পের বাইরে টেকসই শিল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফের সভাপতি দৌলত আক্তার মালা, পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। অস্বাভাবিক ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রতিবাদে রোববার চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু বে ভিউতে ব্যবসায়ীদের সমন্বয় সভায় বক্তারা এ দাবি করেন। বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলোচনা না করা পর্যন্ত এ ট্যারিফ স্থগিত করার দাবি জানানো হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের ব্যানারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এসএম আবু তৈয়বের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এশিয়ান গ্রুপের প্রধান এমএ সালাম।
এতে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক, বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি সেলিম রহমান, মেট্রোপলিটন চেম্বারের
সহ-সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন, সাবেক পরিচালক খায়রুল আলম সুজন, বিজিপিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী, বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরীসহ, বেপজার সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভিরসহ ব্যবসায়ী নেতারা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ২০০৩ সালে বাফার সঙ্গে গার্মেন্টসের যখন সমস্যা হয়েছিলো তখন আমি চেম্বারের সভাপতি ছিলাম। বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ একসঙ্গে প্রতিরোধ করতে পেরেছিলাম। এবার বন্দরের নতুন ট্যারিফ সাধারণ মানুষকে দিতে হবে। বন্দর নিয়ে যে খেলা শুরু হয়েছে তা খেলতে দেওয়া হবে না। বন্দরে চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে একজন প্রতিনিধিকে পরিচালক করতে হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, বন্দরের মাশুল ব্যবসায়ীরা পেমেন্ট করব না। এটা জনগণকে পেমেন্ট করতে হবে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে স্বাধীন পরিচালক আছে, বন্দরে নেই কেন? আমরা কারও গোলাম না। আমার টাকায় আপনারা চালান। ট্যারিফ বাড়ানো ষড়যন্ত্র। মোংলা, পায়রায় বাড়াননি। আমি ৪০ বছর ব্যবসা করছি। কচি খোকা নই। বন্দর বাঁচাতে হবে। বন্দরকে কস্ট বেইজড ট্যারিফ করতে হবে। আমরা কি গোলাম? কলুর বলদ? অন্তর্বর্তীকালীন কেন ট্যারিফ বাড়াবে? আর কোনো টাকা বন্দরের বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। এনসিটির পর একটি পতেঙ্গা টার্মিনাল হয়েছিল, সেটি দিয়ে দিয়েছেন!
বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, আরএমজি ব্যবসায়ীরা বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি দুটোই করে। ভিয়েতনাম, ভারত ও মালয়েশিয়ার চেয়ে আমাদের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস বেশি। ২৯ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় বন্দরকে লস করতে দেখিনি। তাহলে বন্দরে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ কেন বাড়াতে হবে?
মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, আমরা ট্যারিফ বাড়ানোর বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম বন্দর জনগণের টাকায় তৈরি সেবার জন্য। ২০২৩ সালের বন্দর আইনে উপদেষ্টা পরিষদ বাতিল করেছে। স্বাধীনতার সময় বন্দরে কাঁটাতারের বেড়া ছিল। পৃথিবীতে সাড়ে চার হাজার বন্দর আছে। আড়াই হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। বাড়াতে হলে জাতীয় সংসদ বাড়াবে। এ দেশের গার্মেন্টস থেকে বায়ার পোশাক কিনবে না। ভিয়েতনাম, ভারতে চলে যাবে বায়ার। বন্দর আমাদের কাছে নেই। আমাদের চুষে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করছে। আমদানি খরচ বাড়লে রপ্তানি খরচ বাড়বে। সব শিপিং এজেন্টদের সমভাবে নির্ধারণের দায়িত্ব চিটাগাং চেম্বারের।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি এবং পরবর্তীতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে আগ্রহী বাংলাদেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এ আগ্রহের কথা জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার অফিসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যকার বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন(ইইউ) বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার। ইইউ-এর সাথে বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্ভাবনার সম্ভাব্যতা যাচাই ও বাণিজ্যিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের পর বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি এবং পরবর্তীতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নে অগ্রসর হতে চায়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার বলেন, সম্পর্কোন্নয়নে বাণিজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে উভয় পক্ষেরই সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ আছে।
বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান, স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিসটিয়াগা, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিয়ান ব্রিক্স মুলার, ফ্রান্স দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ফ্রেডরিক ইনজা, জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন এনজা ক্রিস্টেন, ইতালি দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ফ্রেডরিকো জামপ্রেল্লি, সুইডেন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ইভা স্মেডব্রেগ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ ডেলিগেশনের ট্রেড অ্যাডভাইজার আবু সাইদ বেলাল উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য