আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘আমরা তো একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। দিন যত যাচ্ছে, পরিস্থিতি ততই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কতো হবে-সেদিকে না তাকিয়ে অর্থনীতির সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের সূচক মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতেই সরকারের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। তানাহলে দেশে ধনী-গরিবের বৈষম্য কিন্তু আরও বেড়ে যাবে; সমাজে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।’
বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সরকারকে এই পরামর্শ দিয়েছেন ড. আহসান এইচ মনসুর। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিউজবাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি।
প্রশ্ন: দুই বছরের বেশি সময়ের করোনাভাইরাস মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় কেমন চলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই আশঙ্কার কথা বলছেন, অনিশ্চয়তার কথা বলছেন। খরচ কমানোর আহ্বান জানিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করছেন। আপনার কাছে সার্বিক পরিস্থিতি কেমন মনে হচ্ছে? কোন পথে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি?
আহসান এইচ মনসুর: বাংলাদেশ কোনো ব্যতিক্রম দেশ নয়। সারা পৃথিবীতে সংকট চলছে। এর মধ্যে কিছু দেশ কম খারাপ। আর কিছু দেশ বেশি খারাপ অবস্থায় আছে। কেউ স্বস্তিতে নেই। কাউকে দোষারোপ করব না। নিজের ঘর গোছাতে হবে। অন্যের ঘর দেখে লাভ নেই। বিশেষ করে এই আপৎকালীন আমাদের কিছু কাজ করতে হবে। আমাদের সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। আমাদের দেশে জেঁকে বসেছে। ভালোভাবেই বাড়ছে। সামনে খুব একটা ভালো হবে আশা করা কঠিন। সরবরাহ বাড়লে মূল্যস্ফীতি কমবে। কিন্তু সেখানে সমস্যা আছে। যদি আমন ধান ভালোভাবে ঘরে আসে, সেটা ভালোহবে। বোরোর জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। ২০২৩ সালের প্রথম দিকে আসবে বোরো ধান। সে জন্য আমাদের দরকার জ্বালানি, বিদ্যুৎ আর সার। কিন্তু এ তিনটি জিনিস নিয়ে আমাদের টানাপোড়েন আছে। এগুলো আমাদের বাইরে থেকে আনতে হয়। আর এগুলোর দাম বেড়ে গেছে। আমন ধানে শুধু সার লাগে। এ ছাড়া শীতকালীন সবজি উৎপাদন আর বাজারজাতকরণে মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের আলুর হিমাগার আছে। অন্যকিছুর নেই। আমাদের হিমাগার লাগবে। যদিও তারপর সমস্যা থেকে যাবে। আমাদের ডিমান্ড সাইডটি দেখতে হবে। গত বছর আমাদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট হয়েছে ১৮ বিলিয়ন ডলার। আর কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট মানে হচ্ছে আমরা সরকারি খাত-ব্যক্তি খাত মিলিয়ে বাইরে থেকে ঋণ হিসেবে নিয়েছি। আমরা যদি ১৮ বিলিয়ন করে ঋণ নিই। তাহলে তো সেটি আমাদের জন্য টেকসই হবে না। আমাদের জন্য খুব বেশি হয়ে যায়। আমাদের আমদানি কমাতে হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে আমাদের রপ্তানি আর রেমিট্যান্স কমে আসছে। সেপ্টেম্বরে খারাপ এসেছে। অক্টোবরেও খারাপ আসছে। এটি যদি ধারাবাহিকভাবে চলে, তাহলে কিন্তু আমাদের সমস্যা আরও বড় হবে।
প্রশ্ন: প্রায় এক বছর ধরে ডলারের বাজার অস্থির। নানা পদক্ষেপ নিয়ে বাগে আসছে না। সমস্যা আসলে কোথায়? কীভাবে সমাধান হবে?
আহসান এইচ মনসুর: বিনিময় হার সব দেশেই সমস্যা। আমাদের দেশে একটু বেশি খারাপ। ডলারের দাম বেশ বেড়েছে। কারণ আমারা অনেক দিন ধরে আটকে রেখেছিলাম ডলারের দাম। ডলারের দাম কিন্তু এখনো স্থিতিশীল নয়।এভাবে তো চলতে দেয়া যায় না। আমাদের রিজার্ভ কম। সরকারি হিসাব থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে হয় ২৮ বিলিয়ন। এর থেকে প্রতি মাসে যদি আরও ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার চলে যায়, তাহলে আমরা চাপে পড়ে যাব। এভাবে রিজার্ভ যদি ২৩ বিলিয়নে নেমে আসে, তাহলে কিন্তু স্বস্তি আর থাকবে না। তখন কিন্তু আমাদের স্পেকুলেটিভ প্রেসারে ধরে ফেলতে পারে। বাংলাদেশ দুর্বল,বাংলাদেশের রিজার্ভ কম। বাংলাদেশের সামর্থ্য কমে আসছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এ জায়গাটিতে বাংলাদেশের যাতে যেতে না হয়, সেটিনিশ্চিত করতে হবে। যে করেই হোক, করতেই হবে। এক্সচেঞ্জ রেট এখন যে জায়গায় আছে অর্থাৎ ১ ডলার কিনতে এখন যে ১০৫ বা ১০৬ টাকা লাগছে, সেটি কিন্তু রিজার্ভ থেকে প্রতিদিন যে প্রচুর ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিক্রি করছে বলেই পাওয়া যাচ্ছে। ডলার বিক্রি না করলে হয়তো এটি ১১৫ টাকা হয়ে যেত। এখন একটি সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এটি সাসটেইনেবল না। সরকার চিরকাল রিজার্ভ বিক্রি করে এক্সচেঞ্জ রেট ধরে রাখতে পারবে না।
তাই আমাদের ডলারের দাম স্থিতিশীল করতে হবে। আমাদের সুদের হার বাড়াতে হবে। আমাদের টাকার মানকে বাড়তে দিতে হবে। আমরা যদি আইএমএফের সঙ্গে আলোচনাটা চালিয়ে যেতে পারি। ঋণটা ঠিকঠাক মতো পাই। তাহলে আমরা আগে থেকেই একটি ভালো জায়গায় থাকতে পারব।
প্রশ্ন: তাহলে কি আপনি বলতে চাচ্ছেন আইএমএফের ঋণ পেলে সরকার কি সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে? অর্থনীতিতে চাপ অনেকটা কমে আসবে?
আহসান এইচ মনসুর: অবশ্যই। আইএমএফের মূল কাজ হচ্ছে ক্রাইসিস ঠেকানো। আইএমএফের ঋণ একটি আস্থার সৃষ্টি করে। বিশ্বব্যাংক তখন পাশে থাকবে। বিশ্বব্যাংক তখন ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে।এডিবি এগিয়ে আসবে। জাইকা আসবে। সবাই এগিয়ে আসবে। তখন তারা সবাই তাদের সাপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসবে। আমাদের শুধু ব্যালান্স অব পেমেন্ট আর বাজেট সাপোর্টটি নিতে হবে। যাতে সরকার ব্যালান্স অব পেমেন্টে আর বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারে কোনো ক্রাইসিস ছাড়া।
একটি দিক দিয়ে কিন্তু আমরা এখনো স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছি। দেশে কিন্তু খাদ্যের কোনো সংকট নেই। দাম বেশি এটিই সমস্যা। এ অবস্থায় আমরা যদি বাজারটিকে ভালোভাবে মনিটর করে দামটিনিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি আর ফ্যামিলি কার্ডসহ সরকার গরিব মানুষকে কম দামে খাবার সরবরাহের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি যদি আর বাড়ানো যায় তাহলে মূল্যস্ফীতি লাগামের মধ্যে রাখা যাবে। একটি বিষয় সরকারের নীতিনির্ধারকদের ভালোভাবে মনে রাখতে হবে, মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখাই কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এটি যদি আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি, অন্য সমস্যা মোকাবিলা করা সহজ হবে।
প্রশ্ন: কিন্তু দেশে মূল্যস্ফীতি তো বেড়েই চলেছে। আগস্ট-সেপ্টেম্বর দুই মাসেই মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি। সরকার চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে সঙ্গে নিয়ে সেটি অর্জন করা কি সম্ভব?
আহসান এইচ মনসুর: প্রথমেই আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, সাড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন এবার কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার যে লক্ষ্য বাজেটে সরকার ধরেছে, সেটিও সম্ভব নয়।
তাই লক্ষ্যটি এখন প্রবৃদ্ধি থেকে সরিয়ে নিতে হবে। মনোযোগ দিতে হবে মূল্যস্ফীতি কমানোর দিকে। আর এক্সচেঞ্জ রেটকে স্থিতিশীল করার দিকে। এখন সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দিকে খেয়ালরাখতে হবে। আমার প্রথম লক্ষ্য হবে, আমাদের এক্সচেঞ্জ রেটের ওপর চপ কমানো। রিজার্ভ বাড়ানো। আমাদের বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে। মূল্যস্ফীতিটাকে যদি বহুলাংশে কমিয়ে আনতে পারি। অর্থাৎ ৬-৭ শতাংশের মধ্যেও যদি আনতে পারি। তাহলেও কিন্তু একটি অর্জন হবে। সেদিকটাতেই আমাদের মেইন ফোকাস করতে হবে। এরপর প্রবৃদ্ধি আমার যা-ই হোক ঠিক আছে। আমাদের ফোকাস এখন প্রবৃদ্ধি না। প্রবৃদ্ধি এখন কমে গেলে সমস্যা নেই। কিন্তু ম্যাক্রো কমে গেলে সমস্যা। ম্যাক্রো যদি খারাপ থাকে কর্মসংস্থান হবে
না। বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে আসবেন না। যেকোনো মূল্যে স্থিতিশীলতা আনতে হবে।
প্রশ্ন: সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে শিল্প স্থাপনের প্রধান উপাদান ক্যাপিটাল মেশিনারি বা মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিও কমছে। এতে দেশে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
আহসান এইচ মনসুর: আমাদের এখনকার যে ক্যাপাসিটি আছে, সেটি কিন্তু আন্ডার ইউটিলাইজড। অর্থাৎ আমি তো আরও ৩০ শতাংশ বিক্রি করতে পারি। আমাকে বুঝতে হবে এই সংকটের মুহূর্তে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবেন কি? আমি হলে করতাম না। আমার এখন ফোকাস ম্যাক্রো। এই দুটি পরিস্থিতি যদি এখন স্বাভাবিক হয়।
সব বিনিয়োগকারী এখন চিন্তা করবেন আমি আরেকটি নতুন হোটেল এখন বানাব কেন। এখনকার হোটেলগুলো খালি। আমি এখন বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তিত হব না। কারণ আমার ক্যাপাসিটির কিন্তু কোনো অভাব নেই। আমি চাইলে এখন ৪০ শতাংশ বেশি রপ্তানি করতে পারব। কিন্তু পারছি না, কারণ ডিমান্ড নেই। সমস্যা যখন চাহিদা। তখন বিনিয়োগ চিন্তা না। বিনিয়োগ তো এখন সম্ভব না। আমি তখনই বিনিয়োগ করব, যখন আমার পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে যাবে। এই জায়গা থেকে পরিবর্তন হলে আমি লাইন বাড়ানোর চেষ্টা করব। তাই বিনিয়োগ নিয়ে আমি চিন্তিত নই। তবে এটি পরিবর্তন হতে সময় লাগবে না। বাইরের অর্থনীতি পরিবর্তন হলে এটিও পরিবর্তন হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: ডলারের দাম কমাতে আর কী পদক্ষেপ নিতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক?
আহসান এইচ মনসুর: আমাদের ডলারের একটি রেটে যেতে হবে। আমাদের দেশে অনেকগুলো রেট। এখনই একটি রেটে যেতে হবে। মার্কেট ইউনিফাইড হওয়া দরকার। এক্সপোর্টাররা বলছেন আমাদের কম দিচ্ছে,ইম্পোর্টাররা বলছেন আমাদের কাছ থেকে বেশি নিচ্ছে। এ সমস্যাটি হতো না। আমাদের মুদ্রাবাজার এখনো আনস্টেবেল। আইএমএফের ঋণ এলে, রপ্তানি বাড়লে, রেমিট্যান্স বেশি এলে এক্সচেঞ্জ রেট ঠিক হতে পারে।
সুদের হার ঠিক করা উচিত। যে ঋণ নিচ্ছে, সে বিনা পয়সায় নিচ্ছে। কারণ মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশ। যারা টাকা দিচ্ছে তারা তো লুজার। আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমরা দিয়ে দিচ্ছি। যারা ঋণ গ্রহণকারী তাদের কাছে তারা আবার খেলাপিও হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে, তারা বড়লোক হচ্ছে। আর যারা সঞ্চয়কারী তারা বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের আয় কমে যাচ্ছে। এখানে আরেকটি আয়বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। এটি হতে দেয়া যাবে না। এখনই বাংলাদেশে আয়বৈষম্য অনেক বেশি। মূল্যস্ফীতি আরও বাড়লে বৈষম্য আরও বেড়ে যাবে। সম্পদশালীরা সম্পদদার হচ্ছে। যাদের সম্পদ নেই তাদের আয় কমে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রী বারবার দেশবাসীকে খরচ কমানোর আহ্বান জানিয়ে বলছেন, সামনে কঠিন সময়, ২০২৩ সালটি খুবই কঠিন যাবে। কিন্তু সংকট মোকাবিলার পথ খুঁজে বের করতে আপনাদের মতো অর্থনীতিবিদ, গবেষকদের সঙ্গে বসছে না কেন?
আহসান এইচ মনসুর: পৃথিবীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করে ইকোনমিক টিম। ইংল্যান্ডে কী হলো? যখন দেখা গেল, পলিসিটি ঠিক হয়নি। কে পদত্যাগ করলেন অর্থমন্ত্রী। কেন, কারণ তাদের পলিসি ঠিক হয়নি।যে এই দায়িত্ব নিলেন তার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বেশি। খারাপ সময়ে একটি অর্থনৈতিক নেতৃত্ব দরকার। আমাদের এখানে রাজনৈতিক নেতৃত্বটা কোথায় খুঁজে পাচ্ছি না। সরকারের কী দায়িত্ব এখন। একটি সমস্যা কেন হচ্ছে, কী কীভাবে হচ্ছে চিহ্নিত করতে হবে। তারপর আমাদের রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। সবগুলোকে এক জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। একটি কৌশলের অংশ হিসেবে নিয়ে আসতে হবে। এখন বিচ্ছন্নভাবে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটির পর একটি নোটিফিকেশন দিচ্ছে। কিছু জায়গায় কাজ হচ্ছে, কিছু জায়গায় হচ্ছে না। কিছু জায়গায় ঠেকা
দিয়ে রাখা আছে। এগুলো বিচ্ছিন্ন নীতি। এগুলো এক জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। বলতে হবে আমরা এই জায়গায় আছি। আমাদের হাতে এই এই পলিসি আছে। আইএমএফ এই জিনিসগুলো চাচ্ছে। এই জিনিসগুলোর মধ্যে আমরা এগুলো দেব। আমাদের স্বার্থেই করব। আইএমএফ তো আর পয়সা নিয়ে যাবে না বাংলাদেশ থেকে। আইএমএফের রিফর্ম তাদের বেনিফিটের জন্য না। আমাদের বেনিফিটের জন্য। বলতে হবে আমরা এভাবে বাংলাদেশকে স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে যাব। জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশকে ঠিক করে ফেলব। এই রোডম্যাপটি দরকার। এই রোডম্যাপটি কাদের সাহায্য নিয়ে তৈরি হবে। যারা এক্সপার্ট আছেন তাদের নিয়ে বসে এগুলো করতে হবে। এখানে একজন মোয়াজ্জিনকে তো আজান দিতে হবে। মৌলভি সাহেবকে তো নামাজ পড়াতে হবে। সেই মৌলভিসাহেব কই। আমাদের লিডারশিপ লাগবে তো। সেই নেতৃত্ব ছাড়া এখন একটি ভাসমান নৌকার মতো হচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে অর্থনীতির কী হবে?
আহসান এইচ মনসুর: ২০২৩ সালে সংঘাত হতেই পারে। সরকার বহুদিন ধরে ক্ষমতায়। এটি স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। আমাদের দেশে এটি বেশি হয়ে যায়। এটি মারামারি পর্যায়ে চলে যায়। কিন্তু রাস্তা গরম হবে, মাঠ গরম হবে।এটি তো স্বাভাবিক। আমি বলব, এই গরম হওয়ার আগেই আমরা যদি অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোকে ঠান্ডা করে ফেলতে পারি, তাহলে সরকারের জন্য ভালো। দেশের জন্য ভালো।
আমদের সময় আছে আগামী তিন-চার মাস। এর মধ্যেই আমি আশা করব সরকার সবার সঙ্গে বসে একটি রোডম্যাপ করবে। এক মাসের মধ্যে যদি বসতে পারে। জানুয়ারির মধ্যে সব শেষ করতে পারলে সরকার নির্বাচনের আগে সমস্যা কিছুটা কমাতে পারবে।
আরও পড়ুন:বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে ডলার-টাকার বিনিময় হার এখন থেকে বাজারনির্ভরভাবে নির্ধারণের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এ সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ আগামী জুন মাসের মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের ঋণ কিস্তি পাবে বলেও জানান তিনি।
ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের দর-কষাকষি চলছিল। মূলত সে কারণে আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় করছিল না। এর মধ্যে গতকাল জানা যায়, বাংলাদেশ ডলারের বিনিময় আরও নমনীয় করতে রাজি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারে ঋণের দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করতে রাজি হয়েছে আইএমএফ।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত ৯ মাসে রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করা হয়নি, তবুও বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে এবং তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। এ অবস্থায় বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে ব্যাংকারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, বাজারভিত্তিক করায় হঠাৎ করে ডলারের রেট অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘদিন ধরে ডলারের রেট ১২২ টাকার আশপাশে রয়েছে এবং তা সেখানেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ডলারের রেট দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা-সরবরাহ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, বাইরের দেশের নির্দেশে নয়। বর্তমানে বাজারে ডলারের সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে।
তবে, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দুবাইভিত্তিক কিছু সিন্ডিকেট বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক থাকবে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ড. মো. হাবিবুর রহমান, কবির আহমেদ, উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ এবং নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
এদিকে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের জুনের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির জন্য নির্ধারিত ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার একত্রে ছাড় করবে।
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে সকল বিষয় সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে উভয়পক্ষ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা বিনিময় হারসহ অন্যান্য সংস্কার কাঠামো বিষয়ে সম্মত হয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং বিনিময় হার ব্যবস্থায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে অধিকতর পর্যালোচনার লক্ষ্যে চতুর্থ রিভিউ সম্পন্ন হওয়ার পর উভয় রিভিউয়ের জন্য নির্ধারিত কিস্তির অর্থ একত্রে ছাড় করা হবে বলে বিগত তৃতীয় রিভিউয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ রিভিউয়ের সময় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ব্যাংক-ফান্ড সভায় এবিষয়ে আলোচনা চলমান ছিল।
এ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, জাপান এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরও প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা জুন মাসের মধ্যে পাবে বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এ অর্থ পাওয়া গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে। ফলে মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয় যে, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে যেসকল সংস্কার কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব বিবেচনায় পরিকল্পিত এবং জাতীয় স্বার্থে গৃহীত। এ সকল সংস্কার কর্মসূচির ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যক্রম শুধুমাত্র কারিগরি সহায়তা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
বাণিজ্যযুদ্ধের তীব্রতা কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। পরস্পরের ওপর আরোপ করা পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য শুল্ক ৯০ দিনের জন্য ব্যাপক পরিসরে কমাতে একমত হয়েছে দুই দেশ। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা কমাতেই এই চুক্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর বিবিসির।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের আগে চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। পরে নতুন শুল্ক যখন ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন তখন তিনি বলেছিলেন তিন মাস সবার জন্য বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক হার প্রযোজ্য হবে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দুপক্ষের মধ্যে আলোচনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, গঠনমূলক ও দৃঢ় আলোচনার পর উভয় দেশ ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করতে রাজি হয়েছে। এর আওতায় দেশ দুটি পারস্পরিক শুল্ক ১১৫ শতাংশ কমাবে।
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত বর্তমান ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। অন্যদিকে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপ করা ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। উভয় দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আগামী ১৪ মে থেকে শুল্কের এই কাঁটছাট কার্যকর হবে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে স্কট বেসেন্ট বলেন, আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি যে, আমাদের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। দুই পক্ষের প্রতিনিধিদলই একমত হয়েছে যে তারা বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না। মার্কিন অর্থমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশই নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পেরেছে। আমাদের লক্ষ্য ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যের পথে অগ্রসর হওয়া এবং এটি তারই সূচনা।
প্রথম দফায় শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল এবং বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কাও জোরালো হয়েছিল। তবে এবার এই চুক্তির ঘোষণায় বিশ্ব শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
শুল্ক কমানোর চুক্তির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববাজারে চাঙাভাব দেখা দেখা গেছে। হংকংয়ের প্রধান সূচক ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ স্টক ফিউচারের উত্থান হয়েছে। এছাড়া বাড়তি শুল্ক স্থগিতের খবরে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দর বেড়ে ছয় মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউরোপীয় শেয়ারবাজারগুলোও উচ্চমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু করে এবং মার্কিন বাজারগুলোও ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, এই সময়সীমার মধ্যে চীনের উচিত হবে ফেন্টানিল নামক ভয়াবহ মাদকের অবৈধ রপ্তানি বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া। এ বিষয়ে চীনের সদিচ্ছা দেখে ওয়াশিংটন আশাবাদ প্রকাশ করেছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের প্রবেশ ঠেকাতে চীন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না এমন অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।
টাকা পাচার ঠেকাতে বিশেষ ইউনিট গঠন করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মূলত বাণিজ্যের আড়ালে যে বিদেশে টাকা পাচার হয়, তা প্রতিরোধ করতেই এমন উদ্যোগ। দুই প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার হয় বলে মনে করে এনবিআর। এগুলো হলো-আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং। এসব কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব লোকসান হয় বলে মনে করে এনবিআর।
সম্প্রতি এনবিআর মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল নামে ১০ বছরের একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। সেখানে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।
গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) উদ্ধৃতি দিয়ে এনবিআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে (মিথ্যা ঘোষণা) ৭০ শতাংশ অর্থ পাচার হয়ে থাকে।
টাকার পাচার রোধে এনবিআর তিনটি উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে। প্রথমত, আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা ও ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার ঠেকাতে দক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে বিশেষায়িত একটি ইউনিট গঠন করা যেতে পারে। এই ইউনিটের সদস্যরা প্রতারণা হয় বা হতে পারে- এমন বিল অব এন্ট্রিগুলো তদারকি ও তদন্ত করবেন। এই ইউনিট গঠন হলে একদিকে টাকা পাচার বন্ধের পাশাপাশি এনবিআরের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির সক্ষমতা বাড়বে।
সাধারণত আমদানিকালে তুলনামূলক বেশি দাম দেখিয়ে অর্থ দেশের বাইরে পাচার করা হয়। মূলত মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এভাবে টাকা পাচার করা হয়। দুই বছর আগে এনবিআর পাচার টাকা ফেরত আনার সুযোগ দিলেও কেউ তা নেননি।
এনবিআরের দ্বিতীয় সুপারিশ হলো, বিদেশি কূটনীতিক মিশনে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের জন্য এটাশে পদ সৃষ্টি করা। এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং ইস্যুটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। যেসব দেশ থেকে পণ্য আসে, সেখানে পণ্যের মূল্য কত, তা জানা সম্ভব হয় না। আবার নানাভাবে বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার হয়। এনবিআর বলছে, বিভিন্ন দূতাবাসে, বিশেষ করে বাংলাদেশে বড় বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোতে রাজস্ব খাতে কর্মকর্তাদের জন্য এটাশে পদ সৃষ্টির সুপারিশ করেছে এনবিআর। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, ভারতের মতো দেশ এমন পদ সৃষ্টি করেছে বলে এনবিআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এনবিআরের তৃতীয় সুপারিশ হলো, পাচার টাকা ফেরত আনতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া; যেসব দেশে পাচার হয়, সেখানে তদারকি ও পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধি; আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করা। এসব করা হলে পাচার টাকা চিহ্নিত করে ফেরত আনা সহজ হবে। এ ছাড়া টাকা পাচারে সহায়তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনার কথাও বলেছে এনবিআর।
এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, টাকা পাচারের কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায় সরকার। টাকা পাচার বন্ধ করতে পারলে অর্থনীতি আরও চাঙা হবে। এ ছাড়া সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের রাঘববোয়াল (ক্রীড়নক), আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এই পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি রিপোর্টস (জিএফআইআরএস) এবং কিছু নির্দিষ্ট পূর্বানুমানের ভিত্তিতে টাকা পাচারের হিসাব করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।
দেশ থেকে কারা, কীভাবে, কোথায় টাকা পাচার হয়েছে- সেই চিত্র তুলে ধরে শ্বেতপত্রে বলা হয়, টাকা পাচারের জন্য দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের ক্রীড়নক, আমলাদের মধ্যে এক ধরনের অনৈতিক চক্র গড়ে ওঠে। ঘুষ-দুর্নীতি, আর্থিক অপরাধ, মিথ্যা ঘোষণার আড়ালে বাণিজ্য, ব্যাংক থেকে চুরি করা টাকা, খেলাপি ঋণের অর্থ, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে দেখানো, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, কর ফাঁকি- এসব কর্মকাণ্ডের অর্থ পাচার করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ করের অভয়ারণ্য নামে পরিচিত ছোট ছোট দেশে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয়েছে। মূলত বাড়ি কিনে এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ করে টাকা পাচার করা হয়।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি এবং আটটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার চার দিনের চীন সফরের তৃতীয় দিন শুক্রবার দুই দেশের মধ্যে এ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও স্মারকগুলো স্বাক্ষর হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়, সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে রয়েছে দুই দেশের কালজয়ী সাহিত্য ও শিল্পকর্মের অনুবাদ ও সৃজন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও খবর আদান-প্রদান, গণমাধ্যম, ক্রীড়া এবং স্বাস্থ্য খাতে বিনিময় সহযোগিতা। এর পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় চীন সফরে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ বিষয়ে সহযোগিতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়েছে।
এগুলো হলো বিনিয়োগ আলোচনা শুরু করা, চীনের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু, মোংলা বন্দরের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ, একটি রোবট ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ এবং একটি কার্ডিয়াক সার্জারি গাড়ি অনুদান।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের উত্থাপিত বিষয়গুলো চীন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং।
স্থানীয় সময় শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট এ কথা জানান।
ড. ইউনূসের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্টের বৈঠককে অত্যন্ত সফল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ইউএনবিকে বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশকে দেওয়া চীনা ঋণের সুদের হার কমানো ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় দেশটির সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়টি ছিল।’
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আলোচনা অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ, গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ হয়েছে।’
প্রেস সচিব বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার এটি ছিল প্রথম দ্বিপক্ষীয় বিদেশ সফর। এখন পর্যন্ত এটি একটি বড় সফলতা।’
প্রেসিডেন্ট শির বক্তব্যের বরাতে শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও কারখানা স্থাপনে চীন তার দেশের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করবে।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট শি ফুজিয়ান প্রদেশের গভর্নর থাকাকালীন দুইবার বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন। সে কথাও উল্লেখ করেছেন চীনের রাষ্ট্রপ্রধান।
প্রেসিডেন্ট শির উদ্বৃতি দিয়ে শফিকুল আলম বলেন, তিনি বাংলাদেশি আম ও কাঁঠাল খেয়েছেন। এগুলো সুস্বাদু। আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশ আগামী মৌসুমে এ দুটি ফল চীনে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করবে।
চীনা প্রেসিডেন্ট ও প্রধান উপদেষ্টা চীনের পিপলস গ্রেট হলে করা বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
তারা দুই দেশের সম্পর্ককে জোরদার করা ও ঢাকা-বেইজিংয়ের পারস্পরিক ও কৌশলগত স্বার্থকে এক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার উপায় নিয়েও আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের বাজারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সি৩২ ইলেকট্রিক বাইক এনেছে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড রিভো। অত্যাধুনিক ৭২ ভোল্ট ২৬ অ্যাম্পিয়ার সম্পূর্ণ গ্রাফিন ব্যাটারি পরিচালিত এই ইলেকট্রিক বাইকের উদ্বোধন ঘোষণা করেন রিভো বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ভেন নি।
ফিচার
সি৩২-এর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য শক্তিশালী ১৮০০ ওয়াট মোটর, যা ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে। বাইকটির ইকো মোডে গতি ৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং একবার চার্জে এটি ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে।
অন্যদিকে স্পোর্ট মোডে সর্বোচ্চ গতি ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং এক চার্জে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।
সি৩২ ইলেকট্রিক বাইকে উন্নত ৭২ ভোল্ট ২৬ অ্যাম্পিয়ার গ্রাফিন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে, যা পাঁচ শতাধিক চার্জিং সাইকেল সাপোর্ট করে এবং প্রতিটি পূর্ণ চার্জে মাত্র ২.০৮ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে।
ব্যাটারিটি সম্পূর্ণ চার্জ হতে ১০.৬ ঘণ্টা সময় নেয়, যা রাতে চার্জ দিয়ে দিনব্যাপী ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
নিরাপত্তা এবং আরামকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে রিভো সি৩২। এতে রয়েছে সামনে ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনে ড্রাম ব্রেক সিস্টেম, যা সর্বোচ্চ স্টপিং পাওয়ার নিশ্চিত করে।
ফ্রন্ট ও রিয়ার হাইড্রোলিক সাসপেনশন থাকার ফলে রাইডাররা মসৃণ ও আরামদায়ক রাইড উপভোগ করতে পারেন। এমনকি অপ্রশস্ত বা অসমান রাস্তাতেও।
রাতে নিরাপদ যাত্রার জন্য সি৩২-এ রয়েছে পূর্ণ এলইডি লাইটিং সিস্টেম, যার মধ্যে এলইডি হেডলাইট, টেইললাইট এবং টার্ন সিগন্যাল অন্তর্ভুক্ত।
রিভো সি৩২ শুধু শক্তিশালী পারফরম্যান্সই দেয় না, এটি ডিজাইনেও বেশ কার্যকর। ১৪০ কেজি ওজনের মজবুত অথচ হালকা ফ্রেম এবং সামনে ও পিছনে ৯০/৮০-১২'' ভ্যাকুয়াম টায়ার যুক্ত বাইকটি দুর্দান্ত গ্রিপ এবং স্থিতিশীলতা প্রদান করে।
২০৫ এমএম পর্যন্ত গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স থাকায় এটি যেকোনো ধরনের রাস্তার জন্য উপযোগী। সিট বাকেটে ২৪ লিটার স্টোরেজ স্পেস রয়েছে, যা ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বহনের জন্য আদর্শ।
ব্যবহারকারীবান্ধব ডিজাইন এবং আরামের সমন্বয়ে এটি শহরের যাতায়াতকারী এবং দূরপাল্লার রাইডারদের জন্য একটি পারফেক্ট পছন্দ।
এখন থেকে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯০০ টাকা মূল্যে বাংলাদেশের সব শোরুমে পাওয়া যাচ্ছে।
সি৩২ যাতায়াতকে সহজ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব করতে উন্নত প্রযুক্তি, শক্তিশালী পারফরম্যান্স নিশ্চিত করছে, যা প্রতিদিনের যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবেশ সচেতন রাইডারদের জন্য আদর্শ হতে পারে।
আরও পড়ুন:আলু রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এ স্থলবন্দর দিয়ে নতুন করে আরও ১০৫ টন আলু গিয়েছে নেপালে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৫৫৪ টন আলু নেপালে রপ্তানি করা হলো।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কোয়ারিনটিন ইন্সপেক্টর উজ্জল হোসেন জানান, বুধবার বিকেলে স্থলবন্দর দিয়ে পাঁচটি ট্রাকে ১০৫ টন আলু নেপালে গেছে।
তিনি জানান, আলুগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এগুলো রপ্তানি করছে থিংকস টু সাপ্লাই ও ফাস্ট ডেলিভারি নামে দুটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে থিংকস টু সাপ্লাই ৪২ ও ফাস্ট ডেলিভারি ৬৩ টন রপ্তানি করে। এ ছাড়াও বন্দরটি দিয়ে হুসেন এন্টারপ্রাইজ, ক্রসেস এগ্রো, সুফলা মাল্টি প্রোডাক্টস লিমিটেড এবং লোয়েড বন্ড লজিস্টিক নামের কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানও নেপালে আলু রপ্তানি করছে।
উজ্জ্বল হোসেন বলেন, রপ্তানিকারকরা প্রয়োজনীয় নথিসহ অনলাইনে আবেদন করলে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের ল্যাবে পরীক্ষা করার পর ফাইটোসেনেটারি সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। রপ্তানিকৃত আলুগুলো স্টারিজ এবং লেডিও রোজেটা জাতের।
মন্তব্য