ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ অব ইন্ডিয়া (এমসিএক্স) পরিদর্শনে গেছে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য পণ্য ক্লিয়ারিং, সেটেলমেন্ট, ট্রেডিং, গুদামজাতকরণ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনই এ সফরের প্রধান উদ্দেশ্য।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন সিএসইর পরিচালক এমদাদুল ইসলাম, আইটি প্রধান মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন, ট্রেক মার্কেটিং অ্যান্ড সার্ভিসেস প্রধান মর্তুজা আলম, বিজনেস প্রমোশনের প্রধান মোহাম্মদ মনিরুল হক এবং ডিজিএম ফয়সাল হুদা।
মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সফর শুরু হয়েছে। আগামী শনিবার পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করবেন।
সময় তারা পণ্য বিনিময়কে আরও বিকাশের জন্য প্রমিত ডেলিভারি সিস্টেম প্রক্রিয়া বোঝার জন্য প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ‘বুলিয়ন ভল্ট’ (ভল্ট পরিষেবা প্রদানকারী) পরিদর্শন করবে।
এর পরে তারা মিউচুয়াল ফান্ড, ইটিএফ এবং অন্যান্য পণ্যের ওপর আলোচনার জন্য মেটাল ওয়্যারহাউস বা বিনিময়ের নিয়ম মেনে গুদামজাতকরণ প্রক্রিয়ার ডেমো দেখবেন।
নিয়ন্ত্রক পরিকাঠামো যেমন সিডিএসএল কমোডিটি রিপোজিটরি লিমিটেডের কার্যক্রমও দেখবেন তারা। এ ছাড়াও টেস্টিং ল্যাব বা তুলা অ্যাসেইং প্রসেসের ডেমো পর্যবেক্ষণ করবেন সিএসইর প্রতিনিধিরা।
এই সফরের মধ্য দিয়ে ডেমো লাইভ ট্রেডিং অন ট্রেড ওয়ার্কস্টেশনের অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন প্রতিনিধিরা। গুদামজাতকরণ বা কৃষি গুদামের প্রক্রিয়ার ওপর প্রেজেন্টেশন দেখবেন তারা। এ ছাড়াও ওয়্যাররিংহাউজ বা কৃষিপণ্য গুদামজাতকরণ ও বিতরণের জন্য পণ্য রসিদ তথ্য সিস্টেমের ডেমো (কমআরআইএস) সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নেবেন।
গত ১১ অক্টোবর কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বিষয়ে খসড়া বিধিমালা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করেন সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম।
কৃষিপণ্য, গবাদিপশু, মাছ, বনজ সম্পদ, খনিজ ও জ্বালানি পণ্যসহ উৎপাদিত যেকোনো পণ্য কেনাবেচা বা লেনদেনের উদ্দেশে যে এক্সচেঞ্জ বা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে, সেটিই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নামে পরিচিত।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ অনুযায়ী, উল্লেখিত পণ্যসামগ্রী কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বেচাকেনা হবে।
এই পদ্ধতিতে কেনাবেচাটা হয় কাগুজে বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে। মূল পণ্যটি কোনো গুদামে বা মাঠে থাকে। সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর এটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি বা হস্তান্তর হয়।
ধরা যাক, কমোডিটি এক্সচেঞ্জে আলু কেনাবেচা হলো। সরাসরি কৃষক বা হিমাগারের মালিক, যার মালিকানায় পণ্যটি রয়েছে তিনি এই আলু বিক্রি করতে পারবেন। আর কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে যে কেউ এই আলু কিনতে পারবেন।
আইনের মাধ্যমে এই আলু কেনাবেচার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য নির্ধারিত একটি সময় বেঁধে দেয়া হবে। ওই সময় ক্রয়াদেশটি যার হাতে থাকবে, তাকে বিক্রিত ওই আলু বুঝিয়ে দেয়া হবে।
সিএসই জানিয়েছে, ইন্টারেক্টিভ প্রতিক্রিয়ায় সিএসই ও ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ অফ ইন্ডিয়ার (এমসিএক্স) কোর টিমের মধ্যে একাধিক ব্রেনস্টর্মিং সেশন এবং সিএসই, বিএসইসি ও অন্য প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডারদের সাম্প্রতিক অনসাইট ভিজিটের ওপর ভিত্তি করে সামঞ্জস্যপূর্ণ পণ্য ডেরিভেটিভস সেগমেন্ট সংক্রান্ত প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার খসড়া বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ তৈরি এবং বিকাশের জন্য খসড়া বিধিমালাটি (দুটি ধাপে বিভক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে) কমিশনের কাছে পর্যালোচনা এবং প্রতিক্রিয়ার জন্য জমা দেয়া হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে সিএসইর পর্ষদ সভার সিদ্ধান্তের পর কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরুর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন চেয়ে চিঠি দেয়া হয়। পাশাপাশি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের প্রয়োজনীয়, সম্ভাবনা নিয়ে একটি ধারণাপত্রও কমিশনে জমা দেয়া হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি ৩০ অক্টোবর শর্ত সাপেক্ষে প্রাথমিক সম্মতি দেয়া হয়।
ওই সময় কমোডিটি এক্সচেঞ্জের বিষয়ে সিএসই যে ধারণাপত্রটি জমা দেয় তাতে বলা হয়, ২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল সরকারের পক্ষ থেকে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু পরে এ উদ্যোগ গতি হারায়। ফলে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আলোচনা থেকে হারিয়ে যায়।
কিন্তু সিএসই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বেশ আগ্রহী। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ২০১৭ সালের আগস্টে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার আগ্রহ প্রকাশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দেয় সিএসইর তৎকালীন সভাপতি।
অর্থ মন্ত্রণালয় ওই চিঠি বিএসইসিতে পাঠায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে। এরপর বিএসইসি ও সিএসইর মধ্য এ নিয়ে বেশ কয়েক দফা চিঠি চালাচালি চললেও একপর্যায়ে বিষয়টি আলোচনার টেবিলের বাইরে চলে যায়।
এরপর গত বছরে সিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে এক বৈঠকে বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সংস্থাটি উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে ধারণাপত্র তৈরি ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলেন।
তারই অংশ হিসেবে গত আগস্টে সিএসইর পর্ষদে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও এ জন্য অনুমোদন গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ জন্য অভ্যন্তরীণ একটি কমিটিও গঠন করা হয়।
এরপর কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ভারতে মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের (এমসিএক্স) সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে সিএসই। এমনকি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে এমসিএক্সকে পরামর্শক নিয়োগের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। এ অবস্থায় পরামর্শক নিয়োগের আগে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের প্রয়োজনীয় দেখা দেয়। সে জন্য প্রাথমিক অনুমোদন দয়ে বিএসইসি। এ জন্য যেসব শর্ত দেয়া হয় তার মধ্যে ছিল- কমোডিটি পণ্যের মান নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণ, পণ্যাগার বা ওয়্যারহাউস প্রতিষ্ঠা ও তার জন্য নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার কাঠামোগত চূড়ান্ত প্রস্তাব তৈরি করা।
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের (বেক্সিমকো) শেয়ার কারসাজির দায়ে নয় বিনিয়োগকারীকে ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
মঙ্গলবার বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এই জরিমানা আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে কোনো কোম্পানির শেয়ার কারসাজির দায়ে এতো বড় অঙ্কের অর্থ জরিমানা এর আগে আর করা হয়নি।
উল্লিখিত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মারজানা রহমানকে ৩০ কোটি, ট্রেড নেক্সট ইন্টারন্যাশনালকে চার কোটি এক লাখ, মুশফিকুর রহমানকে ১২৫ কোটি, মমতাজুর রহমানকে ৫৮ কোটি, জুপিটার ব্যবসাকে ২২ কোটি ৫০ লাখ, অ্যাপোলো ট্রেডিংকে ১৫ কোটি ১০ লাখ, এআরটি ইন্টারন্যাশনালকে ৭০ কোটি, আবদুর রউফকে ৩১ কোটি এবং ক্রিসেন্ট লিমিটেডকে ৭৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়াও কমিশন সভায় নয়টি কোম্পানির আইপিও/আরপিওর তহবিলের ব্যবহার পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত হয়।
কোম্পানিগুলো হলো- বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বেস্ট হোল্ডিং, ইনডেক্স এগ্রো, জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, রিং শাইন টেক্সটাইল, সিকদার ইন্স্যুরেন্স ও সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস।
আরও পড়ুন:ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিএলসি) শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বুধবার বিএসইসির এক আদেশে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম ও পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে উঠা-নামা করেছে, যা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে মনে হচ্ছে।
বিএসইসির আদেশে বলা হয়, উল্লিখিত স্ক্রিপের ইউনিটের এমন অস্বাভাবিক উঠা-নামার পেছনে বাজার কারসাজি, অভ্যন্তরীণ লেনদেন, অন্যান্য বাজারের অপব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণ উদঘাটনে ৬ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কেনাবেচা তদন্ত করবে ডিএসই।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার চেষ্টা করছে। তাই তারা বড় অঙ্কের শেয়ার কিনছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে এই ব্যাংকের শেয়ারের দাম হু হু করে বেড়েছে।
জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে পুঁজিবাজারে কারসাজির অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকায় দেশসেরা এই ক্রিকেটারকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে এই কারসাজি করেন সাকিব আল হাসান।
সাকিব আল হাসানের পাশাপাশি শেয়ারবাজারের আলোচিত চরিত্র আবুল খায়ের ওরফে হিরু, তারা বাবা আবুল কালাম মাতবর, মো. জাহিদ কামাল, হিরুর প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্ট, ইসহাল কমিউনিকেশন ও লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে কারসাজিতে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এ কারণে এসব ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকেও জরিমানা করা হয়েছে।
এর আগে একাধিক শেয়ার কারসাজির তদন্ত প্রতিবেদনে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নাম উঠে আসে। তবে কারসাজির প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তাকে জরিমানা করেনি বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, ফরচুন সুজ, বিডিকম অনলাইন, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার কারসাজির বিষয়ে করা তদন্ত প্রতিবেদনে সাকিব আল হাসানের নাম জড়ায়। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কারসাজির জন্য তাকে জরিমানা করা হয়নি। এবারই প্রথম সাকিবের বিরুদ্ধে শেয়ার কারসাজির প্রমাণ মিললো।
এর আগে শেয়ারবাজারে কারসাজির অভিযোগ তদন্তে সাকিবের নাম যতবার উঠে আসে সবগুলোতেই আলোচিত শেয়ার কারসাজিকারী আবুল খায়ের হিরুর নাম ছিল। সাকিবের বিরুদ্ধে কারসাজির প্রমাণ না মিললেও হিরুর বিরুদ্ধে কারসাজির প্রমাণ মেলে এবং তাকে জরিমানা করা হয়।
এবারও সাকিবের সঙ্গে শেয়ার কারসাজিতে হিরুর নামে উঠে এলো। প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকায় হিরুকে ২৫ লাখ এবং সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জারিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবরকে ১০ লাখ, মো. জাহিদ কামালকে এক লাখ, হিরুর প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্টকে এক লাখ, ইসহাল কমিউনিকেশনকে ৭৫ লাখ ও লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বিএসইসির এর আগে ‘দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম’-এর শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নিয়োগ বাতিল করে। গত ২৮ আগস্ট জরুরি সভা করে এই সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
আরও পড়ুন:ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ২০ জনের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব জব্দ করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশে বৃহস্পতিবার তাদের বিও হিসাব স্থগিত করেছে বিএসইসি।
নির্দেশনায় বিএসইসি যাদের বিও হিসাব জব্দ করেছে তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তার স্ত্রী লুতফুল তাহমিনা খান, ছেলে সফি মুদাসসের খান ও মেয়ে শাফিয়া তাসনিম খান; সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তার স্ত্রী নুরুন ফাতেমা হাসান ও মেয়ে নাফিসা জুমাইনা মাহমুদ; সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কনিকা; সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও তার স্ত্রী শারমিন মুস্তারি; সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার স্ত্রী রুখমিলা জামান চৌধুরী, তার আত্মীয় জারা জামান, বোন রোকসানা জামান চৌধুরী, ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও মেয়ে জেবা জামান চৌধুরী।
এছাড়া পিরোজপুর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ, তার স্ত্রী উম্মে কুলসুম, ছেলে সাম্মাম জুনাইদ ইফতির বিও হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন থেকে টানা চার দিন পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে দেখা যায় দেশের পুঁজিবাজারকে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও নতুন উদ্যমে শুরু করার প্রত্যয় চোখে পড়ে। অনেকে নতুন করে কিছু পুঁজি বিনিয়োগে এনেছেন। অনেকে আবার শেয়ার কিনে রাখতে অন্যদের পরামর্শ দিয়েছেন।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধারণা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে পুঁজিবাজারে সুদিন ফিরবে। তবে সেই সুদিনের দেখা মিলছে না। ওই চার কর্মদিবসের পর থেকে পরের পাঁচ কর্মদিবসের গল্পটা পুরনো হতাশার।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইতে চার কর্মদিবসে ৭৮৬ পয়েন্ট সূচক বাড়ার পর বিনিয়োগকারীরা উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল। এরপর ৮ কর্মদিবসে সূচক পড়ল ৪০৮ পয়েন্ট। এর মধ্যে পাঁচদিনেই পড়ল ৩৪৫ পয়েন্ট।
সবশেষ বুধবারের পতন ছিলো অনেকটাই অনাকাঙ্ক্ষিত। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক হারিয়েছে ১০৮ পয়েন্ট।
বর্তমান ডিএসইর প্রধান সূচকটি নেমে এসেছে পাঁচ হাজার ৬০৬ পয়েন্টে। তবে সবচেয়ে বেশি হতাশা ছড়াচ্ছে মোট লেনদেনের পরিমাণ। সরকার পতনের পর একদিনে লেনদেন উঠে এসেছিলো দুহাজার কোটি টাকা, যা বর্তমানে নেমে এসেছে চার ভাগের এক ভাগে। সবশেষ কর্মদিবসে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫৩৬ কোটি টাকার।
হঠাৎ এমন দরপতনে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। প্রতিদিনই তাদের বিনিয়োগের অর্থ কমে আসছে।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী জসিম উদ্দিনের ব্যাখা ছিলো এমন- ‘আমরা তো ভাবছিলাম আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন হবে না। গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সেটা করেও দেখাতে পারেনি। একের পর এক দুর্নীতি আর লুটপাটে বাজার থেকে নিঃস্ব হতে হয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।
‘সবার মধ্যে আশা ছিলো ওদের পতনের পর পুঁজিবাজার অনেক উপরে উঠবে। প্রথম কয়েকদিন হলোও তাই। তবে এখন কী যে হচ্ছে বুঝতে পারছি না। সকাল শুরু হলেই দেখি পতন আর পতন। এগুলো আর কত দেখতে হবে। নতুন সরকারের উচিত আগে পুঁজিবাজার ঠিক করা।’
বুধবার দেখা যায়, লেনদেনে অংশ নেয়া প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের দর কমেছে। অংশ নেয়া কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১১টির, কমেছে ৩৭১টির। আর অপরিবর্তিত ছিলো ১২টি কোম্পানির শেয়ার দর।
হতাশ আরেক বিনিয়োগকারী আনিস বলেন, ‘আমাদের কী করা উচিত তা জানি না ভাই। হতাশ হয়ে সবাই মার্কেট ছাড়তেছে। ভাবলাম সরকার পরিবর্তন হইছে, তাই অনেক দিন পর কিছু শেয়ার কিনলাম। তবে যা হচ্ছে তাতে আবার হতাশ হলাম।’
অন্তর্বর্তী সরকারের বেছে নেয়া মাশরুর রিয়াজ বিএসইসির চেয়ারম্যান হওয়া নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর গত সোমবার নেতৃত্বে আসেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তিনি নেতৃত্বে আসার পর টানা তিন কর্মদিবসেই দরপতন হল পুঁজিবাজারে।
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন ড. এম মাশরুর রিয়াজ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ড. এম মাশরুর রিয়াজকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। তবে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট দু-একটি গোষ্ঠী তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকার তথা সালমান এফ রহমানের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে মর্মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার শুরু করে।
গত ১৩ আগস্ট তার নিয়োগের প্রজ্ঞাপন হলেও মাশরুর রিয়াজকে বিএসইসিতে যোগ দিতে দেখা যায়নি। পরে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, তার বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখছেন। তবে সরকারের খতিয়ে দেখার আগেই মাশরুর রিয়াজ নিজে থেকেই বিএসইসি চেয়ারম্যান পদে যোগ না দেয়ার কথা জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়কে।
ড. এম মাশরুর রিয়াজ বাংলাদেশের একজন অর্থনীতিবিদ। তিনি পলিসি এক্সচেঞ্জ নামক একটি গবেষণা সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি বিশ্বব্যাংকেও চাকরি করেছেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান পদে যোগ না দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সামনে বহু গবেষণার কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমি এই সময়টাকে কাজে লাগাতে চাই। দেশের অর্থনীতি নিয়ে একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে ভূমিকা রাখতে চাই।
‘বিশেষ করে সামষ্ট্রিক অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও আর্থিক খাত নিয়ে নীতি প্রণয়ন ও সংস্কার বাস্তবায়নে ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে। এসব বিবেচনায় আমি বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এর আগে একটি ছবিকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাশরুর রিয়াজকে আগের সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে তুলে ধরেন অনেকে। এরপর বিএসইসির কিছু কর্মকর্তাও তাকে নিয়ে আপত্তি তোলে। তবে এরপর আবার তারা তাদের আপত্তি তুলে নেয়। এসব কারণে যোগদানে অনিচ্ছুক কিনা- এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান মাশরুর রিয়াজ।
এদিকে মাশরুর রিয়াজ যোগ দেবেন না জানতে পেরে নতুন করে বিএসইসির চেয়ারম্যান খুঁজতে শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে অনেকের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে বলেও জানা গেছে।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরদিন থেকে টানা তিনদিন ব্যাপক উত্থান হয় দেশের দুই পুঁজিবাজারে। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইতে গত সপ্তাহের শেষ তিনদিনে সাধারণ সূচক বেড়েছে প্রায় ৭ শ’ পয়েন্ট। পাশাপাশি লেনদেনেও বেশ গতি দেখা গিয়েছিলো সেই কয়েক দিনে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতেও বাজারে ছিলো তেজিভাব। রোববার প্রথম কর্মদিবসে লেনদেন ছাড়িয়ে যায় দুই হাজার কোটি টাকার ঘর। এদিনও ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে প্রায় ৯০ পয়েন্ট। টানা চারদিন উড়তে থাকা পুঁজিবাজার ধাক্কা খায় সোমবার এসে। সেদিন সকালে সূচকের উত্থান হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিক্রির চাপে কমতে থাকে মূল্যসূচক। সোমবারের ধারা অব্যাহত ছিলো মঙ্গলবারেও।
এদিন সকাল থেকেই কমতে থাকে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স। দুপুরে কিছুটা উত্থান হলেও দিনশেষে সূচকটি ৬৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান নিয়েছে ৫ হাজার ৮ শ ৬৭ পয়েন্টে। এ নিয়ে টানা দুই দিনে সূচকটি কমেছে ১৪৭ পয়েন্ট।
ডিএসইতে এদিন মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৫ কোটি টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট, যা তার আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১ শ ২৮ কোটি টাকা কম। প্রধান সূচকের পাশাপাশি এদিন কমেছে অপর দুই সূচক ডিএস-৩০ ও ডিএসইএস।
লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির দরপতন হয়েছে এদিন। ১০৬ টি প্রতিষ্ঠানের দর বাড়ার বিপরীতে কমেছে ২৬৯ টির আর অপরিবর্তিত দেখা গেছে ২৪ টি কে।
পুঁজিবাজারের মঙ্গলবারের আচরণকে স্বাভাবিক দর সংশোধন বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারিরা। অনেকেই গত কয়েকদিনে দর বাড়তে দেখে মুনাফার জন্য হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করেছেন বলেও জানিয়েছেন।
জাহিদ হোসেন নামে পুঁজিবাজারের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘স্বাভাবিক নিয়মেই বাজার সংশোধন হয়েছে। এখানে ভয় পাওয়ার কারণ নাই। ৮০০ সূচক বাড়ার পর দুইশ কমবে এটাই স্বাভাবিক, বরং না কমলেই বুঝতাম ব্যাপারটা অস্বাভাবিক।’
আরেক বিনিয়োগকারী ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘অনেকদিন ধরে কোন শেয়ার বিক্রি করি না লোকসান ছিলো বলে। এখন দেখলাম কিছুটা হলেও লোকসান কমে এসেছে। আবার টাকারও দরকার ছিলো। তাই কিছু শেয়ার আজকে বিক্রি করলাম।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য