বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আবার ঢালাও দরপতন হলো দেশের পুঁজিবাজারে। স্বল্প মূলধনি কিছু কোম্পানির শেয়ারদর লাফ দিলেও গত কয়েক মাসে লাফিয়ে বাড়ছিল এমন কোম্পানিগুলো দর হারানোয় সূচকের বড় পতন হলো।
সূচকের এই পতনে প্রধান ভূমিকায় ছিল তুমুল আলোচিত ওরিয়ন গ্রুপের চার কোম্পানি, যেগুলো গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে সূচক বৃদ্ধিতে ছিল প্রধান ভূমিকায়। সেই সঙ্গে বড় মূলধনি কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেডের দরপতনও এতে রেখেছে ভূমিকা।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার ১৫ পয়েন্টের পর দ্বিতীয় কর্মদিবসে সূচক কমল ৬৫ পয়েন্ট। কিছুটা কমল লেনদেনও।
বড় পতনের এই দিনে কেবল ২৫টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, কমেছে ১৫৩টির আর আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে ১৮২টি কোম্পানি, সেগুলোর সিংহভাগই লেনদেন হচ্ছে বেঁধে দেয়া সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইসে।
লেনদেনও কিছুটা কমেছে। দিন শেষে হাতবদল হয়েছে ১ হাজার ২৯৭ কোটি ৮৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় ৪৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা কম। রোববার হাতবদল হয়েছিল ১ হাজার ৩৪৩ কোটি ১২ লাখ ৪ হাজার টাকা।
এদিন পতনে থাকা কোম্পানিগুলোর দর এক দিনেই এতটা কমেছে যা বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজের সিইও সুমন দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বল্পমূলধনির দর বাড়ছে, এর দুটো কারণ হতে পারে। প্রথমত, বিএসইসি থেকে পেইড-আপ ক্যাপিটাল বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে, যেটা করার পরিকল্পনা করছে কোম্পানিগুলো। যার কারণে ওই দিকে ধাবিত করছে।
আর দ্বিতীয়ত, এসব শেয়ারের দর বাড়ানো সহজ হয়, ফলে যারা ওমুক ভাই, তমুক ভাই ফলো করেন, তারা এসব শেয়ারের পেছনে দৌঁড়ান, এতেই দর বাড়ে।’
তিনি বলেন, ‘বাজারকে স্বাভাবিকভাবে চলতে দিতে হবে। ফ্লোরপ্রাইস বা বিভিন্ন সময় যে ২ বা ৫ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার দেয়া হয়েছিল সেগুলোর খুব বেশি প্রয়োজন ছিল না। সে সময় যদি পড়ত, একটা সময় গিয়ে মানুষ ঠিকই বুঝতে পারতেন, এবং বিনিয়োগে ফিরে আসতেন। তবে এখন যদি ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া হয় তাহলে হয়ত আবার মার্কেট ডাউন ট্রেন্ডে চলে যেতে পারে।’
অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেগুলোর তরতর করে বেড়েছিল, সেগুলোর তো কমবে। আবার যেগুলোর কারণ ছাড়াই কমে যাবে সেগুলোর বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
পতনের উচ্চহারে ব্যাপক ক্ষতি
নানা গুজব-গুঞ্জনে কিছু কোম্পানির শেয়ারদর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল, সেগুলোর পতনও হয়েছে সবচেয়ে বেশি। লভ্যাংশ-সংক্রান্ত ঘোষণার কারণে মূল্যসীমা না থাকা দুই কোম্পানি দর হারিয়েছে ১৩ শতাংশের বেশি। কিছুদিন ধরে লাফাচ্ছিল এমন চারটি কোম্পানি দর হারিয়েছে ৯ শতাংশের বেশি।
আরও চারটি কোম্পানি দর হারিয়েছে ৮ শতাংশ করে, তিনটি দর হারিয়েছে ৭ শতাংশ করে। আটটি কোম্পানির দর কমেছে ৬ শতাংশের বেশি, ১৩টি কোম্পানির দর কমেছে ৫ শতাংশের বেশি, আরও ৮টির কমেছে ৪ শতাংশের বেশি।
দরবৃদ্ধির বেশির ভাগই স্বল্প মূলধনি
বিপরীতে যেসব কোম্পানির দর বেড়েছে, তার মধ্যে কেবল দুটি করে কোম্পানি আছে যাদের দর যথাক্রমে ৮, ৭, ৫ ও ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। চারটি কোম্পানির দর ২ শতাংশের বেশি ও ৭টি দর বেড়েছে ১ শতাংশের বেশি।
শীর্ষ দশে থাকা ১০টি কোম্পানির সাতটিই স্বল্প মূলধনি। এর মধ্যে একটির দর ১৬ কর্মদিবসে ১৭৫ টাকা ৯০ পয়সা থেকে হয়েছে ৩৯২ টাকা ৩০ পয়সা।
সূচক পতনে বেশি প্রভাব ওরিয়ন গ্রুপের, সঙ্গে বেক্সিমকো লিমিটেড
তবে দরবৃদ্ধি ও পতনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ারসংখ্যা কম থাকায় এগুলো সূচকে প্রভাব বিস্তার করতে পারে কমই। সূচকের বড় পতন হয়েছে মূলত বেক্সিমকো লিমিটেড, ওরিয়ন গ্রুপের চার কোম্পানি, বড় মূলধনি বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জ সিমেন্ট, হঠাৎ করে লাফাতে থাকা সি পার্ল, জেএমআই হসপিটাল, আইসিবি ও সোনালী পেপারের দরপতনে।
বেক্সিমকো লিমিটেডের ৩.৪৪ শতাংশ দরপতনে ৭.৭৪ পয়েন্ট সূচক কমেছে। ওরিয়ন গ্রুপের চার কোম্পানির মধ্যে বিকন ফার্মা ৫.১ পয়েন্ট, ওরিয়ন ফার্মা ৩.৪৮ পয়েন্ট, কোহিনূর কেমিক্যালস ১.৭৫ পয়েন্ট এবং ওরিয়ন ইনফিউশন সূচক কমিয়েছে ১.৪৩ পয়েন্ট।
সব মিলিয়ে এই পাঁচটি কোম্পানিই সূচক ফেলেছে ১৯.৫০ পয়েন্ট।
ওরিয়নের চার কোম্পানির চিত্র
এই গ্রুপের চারটি কোম্পানিই ওষুধ ও রসায়ন খাতের। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় মূলনি ওরিয়ন ফার্মা দর হারিয়েছে ৫.৫১ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ১৩৪ টাকা ৩০ পয়সা। ৭ টাকা ৪০ পয়সা কমে দর দাঁড়িয়েছে ১২৬ টাকা ৯০ পয়সায়।
গত ২০ কর্মদিবসে এটি কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বনিম্ন দর। গত ১৫ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ১১৬ টাকা ২০ পয়সা, পরে বাড়তে বাড়তে উঠে যায় ১৫৬ টাকা ৫০ পয়সা।
শেয়ারদর তরতর করে বাড়তে থাকার সময় লেনদেনও হয়েছে ব্যাপক। এমনও দিন গেছে এক দিনে আড়াই শ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যা এখন নেমে এসেছে ৫০ কোটির ঘরে।
গত ২৮ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন কোম্পানিটির দর ছিল ৭৮ টাকা ৭০ পয়সা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫.৩৬ শতাংশ দর হারিয়েছে স্বল্প মূলধনি কোহিনূর কেমিক্যালস। আগের দিন দর ছিল ৬৩৭ টাকা। ৩৪ টাকা ২০ পয়সা কমে দর দাঁড়িয়েছে ৬০৩ টাকা ৪০ পয়সা।
গত ২৮ জুলাই ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৩৭৯ টাকা ৯০ পয়সা। সম্প্রতি উঠে যায় ৭৫৭ টাকা ৪০ পয়সায়। এই দরে যারা কিনেছেন, তাদের এখন শেয়ার প্রতি ১৫০ টাকা হারিয়ে গেছে।
এই গ্রুপের সবচেয়ে আলোচিত কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশন দর হারিয়েছে ৩.৬৮ শতাংশ বা ৩৪ টাকা ৯০ পয়সা। আগের দিন দর ছিল ৯৪৭ টাকা ৯০ পয়সা, দিন শেষে দর হারিয়েছে ৯১৩ টাকা।
গত ছয় মাসেরও কম সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১২ গুণেরও বেশি বেড়ে এক হাজার টাকা ছুঁয়ে পরে নামতে শুরু করেছে। গত মে-জুন মাসেও দর ছিল ৮০ টাকার নিচে, রোববার দর এক হাজার টাকা ছুঁয়ে কমে।
গত ২৮ জুলাই ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ১০৪ টাকা ৭০ পয়সা। এভারে অস্বাভাবিক হার দর বৃদ্ধির নেপথ্যে কী, তা খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে, এই দর বৃদ্ধির নেপথ্যে কোনো কারসাজি আছে কি না।
গ্রুপের অপর কোম্পানি বিকন ফার্মা দর হারিয়েছে ৩.১৯ শতাংশ বা ১১ টাকা। আগের দিন দর ছিল ৩৪৪ টাকা ৬০ পয়সা, দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩৩৩ টাকা ৬০ পয়সা। দিনের এক পর্যায়ে দর নেমে এসেছিল ২২১ টাকায়।
ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২৪০ টাকা ৬০ পয়সা। বাড়তে বাড়তে তা সম্প্রতি উঠে যায় ৩৯৩ টাকা পর্যন্ত।
গত তিন বছর ধরেই কোম্পানিটির শেয়ারদর ব্যাপকহারে লাফাচ্ছে। তিন বছর আগেও ২০ টাকার ঘরে লেনদেন হচ্ছিল শেয়ারদর। শেয়ারদর এভাবে লাফাতে থাকলেও কোম্পানির ব্যাপক আর্থিক উন্নতি হয়েছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না।
বেক্সিমকোর চার কোম্পানি ও বন্ডের দরে যা হলো
এই গ্রুপের পাঁচ কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বেক্সিমকো লিমিটেড ৩.৪৪ শতাংশ বা ৪ টাকা ৪০ পয়সা দর হারিয়েছে। আগের দিন দর ছিল ১২৭ টাকা ৮০ পয়সা, দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ১২৩ টাকা ৪০ পয়সায়।
গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ারদর অনেকটাই কমেছে। এর আগে এক বছরে বেড়েছে ব্যাপক হারে। ২০২০ সালে ফ্লোর প্রাইস দেয়ার সময় শেয়ারদর ১৩ টাকার ঘরে থাকলেও গত বছর দর ১৯০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ার পাশাপাশি তাদের ব্যবসাও বেড়েছে। তবে গত নভেম্বর থেকে টানা দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীরা বড় লোকসানে আছেন।
ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন কোম্পানিটির শেয়ার দর ১১৪ টাকা ২০ পয়সা ছিল। সেখান থেকে দর ১৪৬ টাকা হয়ে যাওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা হারিয়ে যাওয়া টাকা ফিরে পাওয়ার আশা করেছিলেন, তবে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে দর আবার নিম্নমুখি হয়ে যাওয়ায় সে আশা আর পূরণ হয়নি।
ওরিয়ন গ্রুপের মতো এই গ্রুপের সবগুলো কোম্পানি দর হারায়নি। বেক্সিমকো ফার্মার দর এদিন স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ১.৩১ শতাংশ বা ২ টাকা ১০ পয়সা বেড়েছে। আগের দিন দর ছিল ১৬০ টাকা ২০ পয়সা, দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ১৬২ টাকা ৩০ পয়সা।
এই কোম্পানিটির দর গত দুই বছরে অনেকটাই বেড়েছে। ৯০ টাকার কম থেকে বাড়তে বাড়তে গত বছর ২৩৯ টাকা ৪০ পয়সায় উঠে যায়। কিন্তু গত বছরের অক্টোবর থেকে ক্রমাগত দর হারাচ্ছে।
গ্রুপের আরেক কোম্পানি আইএফআইসি ব্যাংক ফ্লোর প্রাইস থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করছে। ১০ পয়সা দর হারিয়ে শেয়ারদর এখন ১১ টাকা ৯০ পয়সা। কমতে পারবে বড়জোর আর ৪০ পয়সা।
ব্যাংক খাতের যে কোম্পানিটি গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে, তার মধ্যে আছে এটি। গত বছরের নভম্বেরের তৃতীয় সপ্তাহে দর উঠে ২১ টাকা ৮০ পয়সা। সেখান থেকে প্রায় অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে।
আরেক কোম্পানি শাইনপুকুর সিরামিকস ৯০ পয়সা বা ১.৮১ শতাংশ দর হারিয়েছে। আগের দিন দর ছিল ৪৯ টাকা ৬০ পয়সা, দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৪৮ টাকা ৭০ পয়সা।
গত এক বছরে গ্রুপের একমাত্র কোম্পানি হিসেবে শেয়ারদর অনেকটাই বেড়েছে। এই সময়ে ২৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে দর ৫৮ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত উঠে যায়।
এই গ্রুপের গ্রিন সুকুক বন্ড দর হারিয়েছে ১ টাকা। ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের বন্ডের দর আগের দিন ছিল ৮৮ টাকা ৫০ পয়সা, বর্তমান দর ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা।
লাফিয়ে উত্থান, ধপাস করে পতন
৫ কোটির স্বল্পমূলধনি কোম্পানি অ্যাপেক্স ফুডস। গত জুলাইয়ের ২৮ তারিখেও কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ১৬৫ টাকা ৯০ পয়সা। সেখান থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে গতকাল পর্যন্ত শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩১৪ টাকা ৯০ পয়সায়।
আজকে লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে দরপতন বা বৃদ্ধির সীমা না থাকায় একদিনেই কমেছে ১৩.৬৯ শতাংশ বা ৪৩ টাকা ১০ পয়সা। বিশ্বের অন্য বাজারে না ঘটলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে লভ্যাংশ ঘোষণার পরে দর সমন্বয় হতে দেখা যায়। তবে ঘোষিত ২০ শতাংশ বা শেয়ার প্রতি ২ টাকার বিপরীতে এই পতনকে শুধুমাত্র দর সংশোধন বলার উপায় নেই।
একই অবস্থা ফারইস্ট নিটিংয়ের। কোম্পানির শেয়ারপ্রতি ১ টাকা লভ্যাংশের বিপরীতে একদিনেই দর কমেছে ১৩.০৪ শতাংশ বা ৩ টাকা। ২৮ জুলাইয়ে ১৭ টাকায় লেনদেনের পর তরতর করে শেয়ারদর বেড়ে ২৯ আগস্ট ২৪ টাকা ৫০ পয়সা লেনদেন হয়। এরপর ওঠানামার মধ্যে থাকলেও গতকাল পর্যন্ত ২৩ টাকায় শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
একেবারে কম না হলেও ৫৭ কোটি টাকার মূলধনি কোম্পানি বিডি কম। ১২ সেপ্টেম্বরের পর থেকে লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটেছে শেয়ারদর। ওই দিন ৩২ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটি ১২ অক্টোবরে ৭৫ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়। সেখান থেকে তিন কর্মদিবসে কমে আজকে শেয়ার হাতবল হয়েছে ৫৮ টাকা ৯০ পয়সায়।
৩ অক্টোবরে নাভানা সিএনজির শেয়ার ২৬ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেনের পরে হু হু করে দর বেড়ে বৃহস্পতিবারে ৩৫ টাকা ৮০ পয়সায় ঠেকে। এরপর দুই দিনেই কমে দর দাঁড়িয়েছে ৩২ টাকা ২০ পয়সায়। আজকে দর কমেছে একদিনে যতটুকু সম্ভব ততটুকু বা ৯.৫৫ শতাংশ।
স্বল্পমূলধনি অ্যাপেক্স স্পিনিংয়ের দর ২৮ জুলাইয়ে ছিল ১২৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৩০ আগস্ট ১৬৪ টাকা ৩০ পয়সায় উঠেছিল। এরপর দরপতন হলেও ১২ অক্টোবর শেয়ার বেচাকেনা হয় ১৫৫ টাকা ৩০ পয়সায়। সেখান থেকে কয়েক দিনেই শেয়ারদর কমে আজ ১৩৯ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। ১৪ টাকা ১০ পয়সা বা ৯.১৯ শতাংশ দর কমেছে।
আরেক স্বল্পমূলধনি আজিজ পাইপসও দর ধরে রাখতে পারেনি। ১২ সেপ্টেম্বর ৯৬ টাকায় লেনদেন হওয়া শেয়ারদর ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ১৪০ টাকা ২০ পয়সায় ঠেকে। এরপর কয়েকদিনেই দর কমেছে ২৫ টাকার মতো। সোমবার ১১ টাকা ৫০ পয়সা কমে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১৫ টাকা ৬০ পয়সা।
এ ছাড়াও লাফিয়ে লাফিয়ে দর বাড়ার পরে ব্যাপকহারে দর কমেছে ফার কেমিক্যাল, পেনিনসুলা চিটাগং, আফতাব অটোমোবাইলস, ইনডেক্স অ্যাগ্রো, মুন্নু সিরামিকস ও সি-পার্লের মতো কোম্পানির।
শীর্ষ ৫ খাত যেমন
লেনদেনের শীর্ষে ওষুধ ও রসায়ন খাত। সর্বোচ্চ ২০০ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ১৬.২৭ শতাংশ। খাতটিতে ৩টি কোম্পানির দরবৃদ্ধি হয়েছে। আর ১০টির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে। আর দরপতন হয়েছে ১৭টির।
প্রকৌশল খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ৬টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১৫টির লেনদেন হয়েছে আগের দরে। দরপতন হয়েছে ২১টির।
তৃতীয় স্থানে থাকা বিবিধ খাতে লেনদেন হয়েছে ১৪৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। ১টির দরবৃদ্ধি, ৮টির দরপতন ও আগের দরে লেনদেন হয়েছে ৪টি কোম্পানির।
চতুর্থ সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে সেবা ও আবাসন খাতে। খাতের সবকটি বা ৪টির লেনদেনই হয়েছে দরপতনে। হাতবদল হয়েছে ১১৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
১০৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা লেনদেন করে তালিকার পঞ্চম স্থানে ছিল কাগজ ও মুদ্রণ খাত। ৩টির দরবৃদ্ধি, ১টির অপরিবর্তিত দরে ও ২টির লেনদেন হয়েছে দরপতনে।
আরও পড়ুন:ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রেখেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বেঞ্চমার্ক সূচক উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘আগাম শেয়ার নিষ্পত্তি, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে তারল্য সহায়তা এবং সম্ভাব্য মূলধন লাভের কর কমানোসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কারণে বাজারে এই ইতিবাচক পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে।’
বিনিয়োগকারীদেরও সচেতনভাবে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে দেখা যাচ্ছে। তারা হয় পূর্ববর্তী বিনিয়োগ থেকে মুনাফা সুরক্ষিত করেছে বা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উপার্জনের প্রতিবেদনসহ স্টকগুলোতে মূলধন পুনরায় বিনিয়োগ করেছে। এই নির্বাচনমূলক পদ্ধতি আশার সঞ্চার করায় তা সামগ্রিক বাজারের গতিতে অবদান রেখেছে।
বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৬ দশমিক ৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে পাঁচ হাজার ৩১৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় বাজার লেনদেন ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ৬০৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা হয়েছে।
আগের পাঁচ সপ্তাহে ৬১৬ পয়েন্ট হারানোর পর টানা দুই সপ্তাহে ২০২ পয়েন্ট যোগ করেছে ডিএসইএক্স।
ডিএসইর খাতভিত্তিক সূচকগুলোকেও বেশ ভালো করতে দেখা গেছে। ৩০টি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস৩০ ইনডেক্স ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে লেনদেন শেষ করেছে। একইভাবে শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী ডিএসইএস সূচক ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৮৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকায়।
বাজার কার্যকলাপের একটি প্রধান সূচক বাজার লেনদেন এই সপ্তাহে তিন হাজার ২৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের দু’হাজার ৮৩ কোটি টাকার লেনদেনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। সে হিসাবে দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ৬০৬ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের গড় ৪১৬ কোটি টাকার তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন:শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘর্মেয়াদি নীতি সহায়তা দিতে যাচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ প্রথমবারের মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) যাচ্ছেন। এমন খবরে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে পুঁজিবাজার।
দেশের দুই শেয়ারবাজারে বুধবার উল্লেখযোগ্য উত্থানের ধারাবাহিকতা দেখা গেছে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবারও। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছে ১৪৭ পয়েন্টের বেশি।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট ডিএসইর সূচক বৃদ্ধি শুরু হয়। সূচক বৃদ্ধির এই ধারা ১১ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ওই চারদিনে সূচকের উত্থান হয় ৭৮৬ পয়েন্ট। এরপর ১২ আগস্ট শুরু হয় ধারাবাহিক পতন।
টানা দরপতন আর লেনদেন খরার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে দেশের শেয়ারবাজার। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে মূল্যসূচক। সে সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এতে এ বাজারটিতেও সবকটি মূল্যসূচক বেড়েছে। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস দুই শেয়ারবাজারেই মূল্যসূচক বাড়লো।
গতকাল বুধবার থেকে বাজার বড় আকারে ঘুরে দাঁড়ায়। ওইদিন ডিএসইর সূচকে বেড়েছে ১১৮ পয়েন্টের বেশি। আর আজ বৃহস্পতিবার বেড়েছে ১৪৭ পয়েন্টের বেশি।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা শেয়ারবাজারের গুরুত্ব অনুধাবন করে নিজেই বিএসইসিতে যাচ্ছেন। যেখানে এর আগে কোনো মন্ত্রী বা উপদেষ্টা যাননি। শেয়ারবাজারের জন্য এটি একটি ভিন্ন বার্তা। শেয়ারবাজারের প্রতি অর্থ উপদেষ্টার এমন আগ্রহের কারণে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা।
বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জানান, শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা দিতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এসব সহায়তার আওতাভুক্ত হবেন ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারী, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, উচ্চ সম্পদশালী বিনিয়োগকারী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।
রাশেদ মাকসুদ বলেন, অর্থ উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সমন্বিতভাবে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে নীতি সহায়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তার মধ্যে কিছু থাকবে স্বল্প মেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য, আর কিছু বিষয় মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
যেসব নীতি পদক্ষেপের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (আইসিবি) বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তহবিল জোগানে সহায়তা, জরিমানার মাধ্যমে বিএসইসির আদায় করা অর্থ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি-বেসরকারি ভালো ও লাভজনক কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বাজারে আনতে আইপিও আইন সংস্কার ও কর প্রণোদনার ব্যবস্থা করা।
পদক্ষেপগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে- শেয়ারবাজারে লেনদেন নিষ্পত্তির সময় কমিয়ে এক দিনে নামিয়ে আনা, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে পরিমাণ অনাদায়ি পুঞ্জীভূত ঋণাত্মক ঋণ (নেগেটিভ ইক্যুইটি) রয়েছে চূড়ান্তভাবে সেগুলোর নিষ্পত্তি করা, উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে মূলধনি মুনাফার কর হার কমানো, শেয়ার পুনঃক্রয় ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ভবিষ্যতে আর কখনও ফ্লোর প্রাইস আরোপ না করা এবং সুশাসন ও আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন:ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মঙ্গলবার বিনিয়োগকারীদের কার্যক্রম বেড়েছে। এক লাখ ৩৬ হাজার লেনদেনের মাধ্যমে মোট ১৫ দশমিক ৮ কোটি শেয়ার ও ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে, যার মোট লেনদেনের পরিমাণ ৩৪৬ কোটি টাকা। যদিও এটি সোমবারের ৩৫৭ কোটি টাকা থেকে সামান্য কম।
মঙ্গলবার মোট ৩৯৪টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩১২টি কোম্পানির মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে, ৫৭টির কমেছে এবং ২৫টি অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেনের এই অবস্থা বিস্তৃত বাজার পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৮ দশমিক ৮০ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১৭ দশমিক ৩২ পয়েন্টে বন্ধ হয়েছে। ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ২৬ দশমিক ২০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১১৩ দশমিক ৬৬ পয়েন্টে এবং বিশেষায়িত ব্লু-চিপ সূচক ডিএস৩০ ৫২ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৮৫৮ দশমিক ২৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
দর বৃদ্ধির সেরা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- মতিন স্পিনিং মিলস পিএলসি, বিডিকম অনলাইন লিমিটেড, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এসিআই লিমিটেড, মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস লিমিটেড, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, বাংলাদেশ অটোকারস লিমিটেড এবং জেমিনি সি ফুড পিএলসি।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএএসপিআই সূচক ২ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বেড়ে ১৪ হাজার ১৭ দশমিক ৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সিএসইতে দেখা যায়, এক হাজার ৮৩৩টি লেনদেনের মাধ্যমে মোট ৫১ লাখ ৬১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেনের পরিমাণ ১০ কোটি ৮ লাখ টাকা। এই বাজারে সোমবার লেনদেন হয়েছিল ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৮০টি কোম্পানির মধ্যে ১০২টির মুনাফা বেড়েছে, ৫২টির কমেছে এবং ২২টির শেয়ারমূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে। এটিও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক ধারায় ফেরার ইঙ্গিত দেয়।
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের (বেক্সিমকো) শেয়ার কারসাজির দায়ে নয় বিনিয়োগকারীকে ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
মঙ্গলবার বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এই জরিমানা আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে কোনো কোম্পানির শেয়ার কারসাজির দায়ে এতো বড় অঙ্কের অর্থ জরিমানা এর আগে আর করা হয়নি।
উল্লিখিত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মারজানা রহমানকে ৩০ কোটি, ট্রেড নেক্সট ইন্টারন্যাশনালকে চার কোটি এক লাখ, মুশফিকুর রহমানকে ১২৫ কোটি, মমতাজুর রহমানকে ৫৮ কোটি, জুপিটার ব্যবসাকে ২২ কোটি ৫০ লাখ, অ্যাপোলো ট্রেডিংকে ১৫ কোটি ১০ লাখ, এআরটি ইন্টারন্যাশনালকে ৭০ কোটি, আবদুর রউফকে ৩১ কোটি এবং ক্রিসেন্ট লিমিটেডকে ৭৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়াও কমিশন সভায় নয়টি কোম্পানির আইপিও/আরপিওর তহবিলের ব্যবহার পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত হয়।
কোম্পানিগুলো হলো- বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বেস্ট হোল্ডিং, ইনডেক্স এগ্রো, জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, রিং শাইন টেক্সটাইল, সিকদার ইন্স্যুরেন্স ও সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস।
আরও পড়ুন:ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিএলসি) শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বুধবার বিএসইসির এক আদেশে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম ও পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে উঠা-নামা করেছে, যা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে মনে হচ্ছে।
বিএসইসির আদেশে বলা হয়, উল্লিখিত স্ক্রিপের ইউনিটের এমন অস্বাভাবিক উঠা-নামার পেছনে বাজার কারসাজি, অভ্যন্তরীণ লেনদেন, অন্যান্য বাজারের অপব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণ উদঘাটনে ৬ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কেনাবেচা তদন্ত করবে ডিএসই।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার চেষ্টা করছে। তাই তারা বড় অঙ্কের শেয়ার কিনছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে এই ব্যাংকের শেয়ারের দাম হু হু করে বেড়েছে।
জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে পুঁজিবাজারে কারসাজির অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকায় দেশসেরা এই ক্রিকেটারকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে এই কারসাজি করেন সাকিব আল হাসান।
সাকিব আল হাসানের পাশাপাশি শেয়ারবাজারের আলোচিত চরিত্র আবুল খায়ের ওরফে হিরু, তারা বাবা আবুল কালাম মাতবর, মো. জাহিদ কামাল, হিরুর প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্ট, ইসহাল কমিউনিকেশন ও লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে কারসাজিতে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এ কারণে এসব ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকেও জরিমানা করা হয়েছে।
এর আগে একাধিক শেয়ার কারসাজির তদন্ত প্রতিবেদনে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নাম উঠে আসে। তবে কারসাজির প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তাকে জরিমানা করেনি বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, ফরচুন সুজ, বিডিকম অনলাইন, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার কারসাজির বিষয়ে করা তদন্ত প্রতিবেদনে সাকিব আল হাসানের নাম জড়ায়। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কারসাজির জন্য তাকে জরিমানা করা হয়নি। এবারই প্রথম সাকিবের বিরুদ্ধে শেয়ার কারসাজির প্রমাণ মিললো।
এর আগে শেয়ারবাজারে কারসাজির অভিযোগ তদন্তে সাকিবের নাম যতবার উঠে আসে সবগুলোতেই আলোচিত শেয়ার কারসাজিকারী আবুল খায়ের হিরুর নাম ছিল। সাকিবের বিরুদ্ধে কারসাজির প্রমাণ না মিললেও হিরুর বিরুদ্ধে কারসাজির প্রমাণ মেলে এবং তাকে জরিমানা করা হয়।
এবারও সাকিবের সঙ্গে শেয়ার কারসাজিতে হিরুর নামে উঠে এলো। প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকায় হিরুকে ২৫ লাখ এবং সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জারিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবরকে ১০ লাখ, মো. জাহিদ কামালকে এক লাখ, হিরুর প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্টকে এক লাখ, ইসহাল কমিউনিকেশনকে ৭৫ লাখ ও লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বিএসইসির এর আগে ‘দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম’-এর শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নিয়োগ বাতিল করে। গত ২৮ আগস্ট জরুরি সভা করে এই সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
আরও পড়ুন:ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ২০ জনের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব জব্দ করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশে বৃহস্পতিবার তাদের বিও হিসাব স্থগিত করেছে বিএসইসি।
নির্দেশনায় বিএসইসি যাদের বিও হিসাব জব্দ করেছে তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তার স্ত্রী লুতফুল তাহমিনা খান, ছেলে সফি মুদাসসের খান ও মেয়ে শাফিয়া তাসনিম খান; সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তার স্ত্রী নুরুন ফাতেমা হাসান ও মেয়ে নাফিসা জুমাইনা মাহমুদ; সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কনিকা; সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও তার স্ত্রী শারমিন মুস্তারি; সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার স্ত্রী রুখমিলা জামান চৌধুরী, তার আত্মীয় জারা জামান, বোন রোকসানা জামান চৌধুরী, ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও মেয়ে জেবা জামান চৌধুরী।
এছাড়া পিরোজপুর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ, তার স্ত্রী উম্মে কুলসুম, ছেলে সাম্মাম জুনাইদ ইফতির বিও হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
মন্তব্য