আরও একটি কোম্পানির শেয়ারদর কারসাজি করে বাড়ানোর অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরুকে জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
আর্থিক খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি আইপডিসির শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে এবার তার দণ্ড হয়েছে দেড় কোটি টাকা।
এর আগেও সাতটি কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি করে ১৩৭ কোটি টাকা মুনাফা করে, ১০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসানের ব্যবসায়িক অংশীদার।
হিরু সমবায় অধিদপ্তরের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা, যিনি গত কয়েক বছরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে শত কোটি টাকার বেশি কামিয়েছেন বলে বিএসইসির তদন্তেই ধরা পড়েছে।
আগের জরিমানার বিষয়গুলো স্বীকার করলেও হিরু দাবি করেছেন, দেড় কোটি টাকা জরিমানার বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। তার কাছে কোনো চিঠি যায়নি।
তবে তিনি আইপিডিসির শেয়ার কেনার বিষয়টি নিশ্চিত্ করে বলেছেন, ‘আইডিপিসি তো একটি ভালো শেয়ার। সেটা কিনলেও সমস্যা?’
‘ভাই আমরা তো পুঁজিবাজার ভালো করার জন্য কাজ করেছি। এ রকম করলে আর পুঁজিবাজারে ব্যবসা করা যাবে না’- নিউজবাংলার প্রশ্নে এক ধরনের বিরক্তিও প্রকাশ করেন তিনি।
বিএসইসির এক কর্মকর্তা জানান, কমিশনের সাম্প্রতিক এক বৈঠকে হিরুকে জরিমানার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এই কারসাজিতে কত টাকা হিরু আয় করেছেন, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি। আর হিরু কত টাকায় শেয়ার কিনে কত টাকায় বিক্রি করেছেন, সেটিও জানাতে পারেননি।
শেয়ারদর কত বেড়েছে
গত দেড় বছরে আর্থিক খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর হারালেও ব্যতিক্রম ছিল আইপিডিসি। ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ারটি লেনদেন হয়েছে ২২ টাকা ৩০ পয়সায়। এরপর কয়েক দফা শেয়ারটির দর লাফ দিয়েছে।
ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর শেয়ারদর লাফ দিয়ে হয়ে যায় ৪৮ টাকা ৬০ পয়সা। এরপর গত ২৭ মার্চ দর নেমে আসে ৩৩ টাকা ৮০ পয়সায়। এরপর আবার দেয় লাফ। গত ২৭ আগস্ট দর আবার বেড়ে হয় ৭৭ টাকা ২০ পয়সা।
পরে সেখান থেকে দর আবার নামতে থাকে। এখন শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৫৭ টাকা ৬০ পয়সা।
শেয়ারদর এভাবে লাফালেও কোম্পানির আর্থিক অবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে এমন নয়। লভ্যাংশও খুব ভালো হয়েছে, এমন নয়।
২০২০ সালে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৯০ আয় করে ১ টাকা ২০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছে। পরের বছর শেয়ার প্রতি আয় বেড়ে ২ টাকা ৩৭ পয়সা হলেও লভ্যাংশ বাড়েনি। আগের বছরের একই হারে লভ্যাংশ পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
চলতি বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ১৯ পয়সা, আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ১১ পয়সা।
আগে কত টাকা জরিমানা
এর আগে এশিয়ান ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে হিরু জরিমানা দেন ৭২ লাখ টাকা। গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনায় জরিমানা ছিল ৪২ লাখ টাকা। ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে জরিমানা দেন ৯৫ লাখ টাকা।
এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার নিয়েও কারসাজির অভিযোগে হিরুকে জরিমানা করা হয় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ফরচুন সুজ লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবর জরিমানা দেন ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
বিডিকমের শেয়ার নিয়ে কারসাজিতে জরিমানা হয় ৫৫ লাখ টাকা। ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দাম নিয়ে কারসাজি করে জরিমানা দেন ৩ কোটি টাকা।
এসব কোম্পানির শেয়ারদরও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছিল। কোম্পানির মৌলভিত্তির তুলনায় শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার পর লেনদেনও বেড়ে গিয়েছিল। পরে শেয়ারদর কমতে কমতে এক পর্যায়ে যেখান থেকে বেড়েছিল, তার কাছাকাছি তার তারও নিচে নেমে আসে অনেকগুলোর।
এতে বিনিয়োগকারী বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার পাশাপাশি তাদের টাকা আটকে গেছে। এটিও বাজারে লেনদেন কমে যাওয়ার একটি কারণ। শেয়ারদর কমে গেলে লোকসানে বিক্রি করতে চান না বহুজন।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) একটি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালককে মারধর করেছেন কয়েকজন ঠিকাদার। নগরের টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ের চারতলায় রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ঠিকাদাররা প্রকল্প পরিচালকের কক্ষের টেবিল ও বাইরের নামফলক ভাংচুর করেন।
চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, স্বচ্ছতার মাধ্যমে হওয়া টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কাজ না পেয়ে ঠিকাদাররা ওই হামলা চালিয়েছেন।
সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম নগরীর সড়ক উন্নয়নে ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। এর মধ্যে এখন ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্টের (ইজিপি) মাধ্যমে ২২০ কোটি টাকার দরপত্র প্রক্রিয়ার মূল্যায়ন চলছে। নানা কারণে হামলাকারীরা সেই প্রক্রিয়ায় কাজ পাচ্ছেন না। তাতে ক্ষুব্ধ ছিলেন তারা।
হামলার শিকার মো. গোলাম ইয়াজদানী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী। তাকে গত বছরের ১৪ আগস্ট ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
চসিক সূত্র বলেছে, রোববার নগরের আন্দরকিল্লায় পুরোনো নগর ভবনে সাধারণ সভা হয়। সেই সভা শেষ করে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে টাইগারপাসে অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ে নিজের দপ্তরে আসেন প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানী। তিনি দপ্তরে ঢোকার পর পরই ৮-১০ জন ঠিকাদার অনুমতি ছাড়াই তার কক্ষে ঢুকে তর্ক জুড়ে দেন। একপর্যায়ে তারা অতর্কিতভাবে প্রকল্প পরিচালকের ওপর হামলা চালান। ঠিকাদাররা তাকে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। অফিস সহকারী তিলক দে প্রকল্প পরিচালককে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করা হয়। হামলার পর দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন ওই ঠিকাদাররা।
রোববার সন্ধ্যায় প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নামফলক ভেঙে ফেলা হয়েছে। কার্যালয়ের এখানে-ওখানে ভাঙা কাচ। এ সময় মো. গোলাম ইয়াজদানী বলেন, ‘আমি ঘটনার পর থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি। এ নিয়ে এখন আর কথা বলতে চাচ্ছি না।’
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের প্রকল্প পরিচালককে মারধরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম সিটির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘হামলাকারী ঠিকাদারদের মধ্যে মো. সাহাবুদ্দিন, মো. ফেরদৌস, হাবিব, সুভাস, কঙ্কন, নাজিম ও ফিরোজ ছিলেন। এই সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’
হামলার বিষয়ে রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই অ্যাকশনে যাচ্ছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে কারা ছিলেন। ছবি বের করছি। সাহাবুদ্দিন নামে একজনের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। স্বচ্ছতার মাধ্যমে কাজ দেয়া হচ্ছে। এখানে তো মামার বাড়ির কোনো আবদার নেই। নিয়ম অনুযায়ী যদি এই ঠিকাদাররা কাজ না পান আমাদের কী করার আছে? আমরা মামলা করব।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমি রোববার সিটি করপোরেশনে যাইনি। হামলার অভিযোগ সঠিক নয়।’
আরও পড়ুন:ঢাকার কেরানীগঞ্জে স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়ায় ফাহমিদা আক্তার নামে এক গৃহবধূ দগ্ধ হয়েছেন। এ সময় তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে স্বামী পারভেজ খানও দগ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ থানাধীন আমবাগিচার বাসায় রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পারভেজ খান জানান, তিনি লঞ্চে লস্কর পদে কর্মরত। তার স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার পোশাক শ্রমিক। রোববার বিকেলে বাজার থেকে মাছ ও মুরগি এনে ফ্রিজে রাখতে বললে স্ত্রী অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে স্ত্রীর সঙ্গে তার সামান্য তর্ক-বিতর্ক হয়। এই ঘটনার জের ধরে ফাহমিদা অভিমান করে রান্নাঘর থেকে কেরোসিন নিয়ে নিজের গায়ে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে তিনিও দগ্ধ হন।
বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইউব হোসেন জানান, ফাহমিদা আক্তারের শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে টেঁটা বিদ্ধ করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে ওলি মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে। তিনি ওই এলাকার মৃত শহীদ মিয়ার ছেলে এবং ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য।
রোববার রাত সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের তাতুয়াকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিরাজুল ইসলাম জানান, সাবেক ইউপি সদস্য অলি মিয়ার সঙ্গে একই এলাকার ইকবাল হোসেনের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। তবে অলি মিয়া বাড়িতে থাকতেন না। একজনের জানাযা নামাজে শরিক হতে দীর্ঘদিন পর তিনি নিজ বাড়িতে আসেন।
পূর্ববিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষ তাতোয়াকান্দি গ্রামে ওলি মিয়াকে একা পেয়ে হামলা চালায়। অলি মিয়া দৌড় দিলে হামলাকারীরা তার দিকে টেঁটা ছুড়ে মারে। টেঁটা তার মুখ ও গলায় বিদ্ধ হয়। পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ।
ইকবাল ও তার সমর্থকরা চলে গেলে স্থানীয়রা ওলি মিয়াকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সিরাজুল ইসলাম আরও জানান, ইকবালের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে। পরবর্তী অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:জাপানি নারী নাকানো এরিকোর জিম্মায় থাকবে তার দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা। একই সঙ্গে মেয়েদের নিয়ে জাপানেও যেতে পারবেন তিনি।
ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান রোববার এ রায় ঘোষণা করেন।
এর আগে ২২ জানুয়ারি দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৯ জানুয়ারি দিন ঠিক করেছিল আদালত।
২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানের এরিকো ও বাংলাদেশি আমেরিকান শরীফ ইমরান বিয়ে করেন জাপানি আইন অনুযায়ী। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বাসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন এরিকো। তারা হলো জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা। তাদের কন্যারা টোকিওর চফো সিটিতে আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসআইজে) শিক্ষার্থী ছিল।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান বিয়েবিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। ২১ জানুয়ারি ইমরান এএসআইজে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ মা এরিকোর সম্মতি না থাকায় তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে ইমরান তার মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে তার সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শিশুদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সাক্ষাতের আদেশ দেয়। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
এরিকোর অভিযোগ, ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার দুই মেয়ে জেসমিন ও লাইলাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
এরপর মা এরিকো বাংলাদেশে এসে মামলা করেন এবং সন্তানের খোঁজ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। বিষয়টি গড়ায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ পর্যন্ত। আপিল বিভাগ ৩ মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন বিচারিক আদালতকে। মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর দুই কন্যাকে নিয়ে মা নাকানো এরিকো জাপানে যেতে চাইলে আটকে যান বিমানবন্দরে।
এ ঘটনায় ২৯ ডিসেম্বর বাবা ইমরান শরিফ ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালতে মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন:বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো কাজ না করতে আইনজীবীসহ বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
রোববার সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি আয়োজিত বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।
বারের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করে প্রধান বিচারপতি বলেন, খেলা বিশ্বব্যাপী আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়, যেটা আমরা দেখেছি বিশ্বকাপে। খেলাধুলায় শরীর-মন ঠিক থাকে।
তিনি বলেন, ‘কারণে-অকারণে আইনজীবীরা অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে এ কথা শুনতে চাই না। কার দোষ, কার দোষ না, সেটা আমি বলতে চাই না। আমরা এমন কোনো কাজ করব না যাতে জুডিশিয়ারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা বিচার প্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
তিনি বলেন, ‘বার যদি বেঞ্চকে সম্মান করে তাহলে বেঞ্চ সম্মানিত হবে। আর বেঞ্চ যদি আইনজীবীকে সম্মান করে তাহলে আইনজীবীরা সম্মানিত হবেন। একে অপরকে সম্মান করে কথা বলা উচিত। অসহিষ্ণু না হয়ে আমাদের ধৈর্য্য ধারণ করে জুডিশিয়ারির সম্মান রক্ষা করতে হবে।
‘জুডিশিয়ারিকে হেফাজত করা ও শক্তিশালী করা আমার একার পক্ষে সম্ভব না। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা কামনা করি।’
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান এবং আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ।
সমিতির সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল জানান, প্রতি বছর আইনজীবীদের জন্য বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও আয়োজন করা হয়েছে। এবারের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ব্যাডমিন্টন, লুডু, টেবিল টেনিস, পুলসহ বিভিন্ন ইনডোর খেলা অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর একটি ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়েছে আরেক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়া এক আসামির ফোনালাপে।
মায়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কারাগার থেকে মাকে হত্যা মামলার কথা জানিয়েছিলেন মো. আরিফ। পরে রিমান্ডে নেয়া হলে পুলিশের কাছে আগের হত্যার ঘটনা স্বীকার করেন তিনি।
রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি জানান, গত ২২ জানুয়ারি ভোরে যাত্রাবাড়ীর ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের পাশের সড়কে ছুরিকাঘাতে খুন হন খলু মিয়া। সিসি টিভি ফুটেজে তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যেতে দেখা যায় কয়েকজনকে।
হাফিজ আক্তার জানান, খলু মিয়া নারায়ণগঞ্জের রূপসী এলাকায় গার্মেন্টস কর্মী হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ওইদিন গাইবান্ধা থেকে সোনালী পরিবহনে করে রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটায় গোলাপবাগে পৌঁছান তিনি। সেখান থেকে হেঁটে যাওয়ার সময় ছুরিকাঘাতের শিকার হন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ক্লুলেস এ ঘটনার তদন্তে নেমে বেশকিছু ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করেও কোন কুলকিনারা করতে পারছিল না থানা পুলিশ। এরই মধ্যে ২৬ জানুয়ারি একটি ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে যাত্রাবাড়ী এলাকার নিজ বাসা থেকে আরিফকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
তিনি জানান, গ্রেপ্তারের পর কারাগার থেকে আরিফ তার মায়ের সঙ্গে ফোনালাপে জানান, অন্য কোনো ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, আগের ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডিএমপির এই কর্মকর্তা জানান, আরিফের এই বক্তব্য সন্দেহজনক হওয়ায় খলু মিয়া হত্যা মামলায় তাকে শোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এর ভিত্তিতে আরিফের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
তিনি জানান, রিমান্ডে আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে খলু মিয়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য। একপর্যায়ে খলু মিয়াকে খুনের দায় স্বীকার করেন আরিফ, পরে তার হেফাজত থেকে খলু মিয়ার খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।
আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে হাফিজ আক্তার জানান, একাধিক ছিনতাই মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হওয়ায় আরিফ দীর্ঘদিন ধরে তার নিজ বাসায় অবস্থান না করে পলাতক ছিলেন। কিন্তু খুনের ঘটনার পরপর পুলিশি তৎপরতা দেখে হত্যার ঘটনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে আগের ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার হতে তিনি বাসায় অবস্থান করছিলেন।
তিনি জানান, ঘটনার সময় আরিফ সহযোগীদের নিয়ে একটি ছুরিসহ ধলপুর নতুন রাস্তায় একটি ব্যাটারির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। খলু মিয়া রাস্তা দিয়ে আসার পথে তারা তার গলায় ছুরি ধরলে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে খলুর বুকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যান আরিফসহ কয়েকজন।
আরও পড়ুন:হিটার হৃদয় গত ২ থেকে ৩ বছর ধরে মোহাম্মদপুর এলাকায় ‘বিডিএসকে’ (ব্রেভ ডেঞ্জার স্ট্রং কিং) গ্যাং এর নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। সে স্থানীয় একটি স্কুল থেকে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। হৃদয় বিভিন্ন সময়ে লেগুনার হেলপার হিসেবে কাজ করত। পাশাপাশি ‘বিডিএসকে’ গ্যাং পরিচালনা করত।
সন্ত্রাসী গ্রুপ ‘বিডিএসকে’ গ্যাং এর প্রধান হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়সহ আটজন সদস্যকে দেশি ও বিদেশি অস্ত্রসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও ফরিদপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার রাতে ফরিদপুর, রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ স্টেশন, মোহাম্মদপুর বেড়িবাধ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ‘বিডিএসকে’ গ্রুপের লিডার শ্রীনাথ মন্ডল ওরফে হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়, রবিন ইসলাম ওরফে এসএমসি রবিন, রাসেল ওরফে কালো রাসেল, আলামিন ওরফে ডিশ আলামিন, লোমান ওরফে ঘাড়ত্যাড়া লোমান, আশিক ওরফে হিরো আশিক, জোবায়ের ইসলাম ওরফে চিকনা জোবায়ের, সুমন ওরফে বাইট্টা সুমনকে গ্রেপ্তার করে।
রোববার দুপুরে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রুপের সদস্যদের মাধ্যমে হৃদয় মোহাম্মদপুর, আদাবর ও বেড়িবাধ এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা পরিচালনা, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। সে একাধিকবার কারাভোগ করেছে।
তিনি আরও জানান, ৭ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ৮টায় রাজধানীর আদাবর তিন রাস্তার মোড় এলাকায় একজন ভুক্তভোগীকে জখম করে তার কাছে থাকা মোবাইল ও টাকা ছিনতাইকারীরা নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই ভুক্তভোগীকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। একইভাবে কিছুদিন আগে একই এলাকার এক কলেজ শিক্ষার্থীর কাছ থেকেও একই কায়দায় ছিনতাইকারীরা মোটা অংকের অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
র্যাব উক্ত ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে উল্লেখিত সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। যেখানে দেখা যায়, ৮ থেকে ১০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল।
পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মোহাম্মদপুরে তাদের আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি চাপাতি, ১টি রামদা, ১টি চাইনিজ কুড়াল, ৪টি চাকু (বড় ও ছোট), ২টি হাঁসুয়া, ১টি কাঁচি এবং ১টি লোহার রড উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে খন্দকার আল মঈন জানান, ‘বিডিএসকে গ্যাং এর প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য রয়েছে। তাদের গ্যাং লিডার হৃদয়ের নেতৃত্বে গত ২ থেকে ৩ বছর আগে গ্যাং গঠন করে। এই গ্রুপের সদস্যরা আগে সবুজ বাংলা গ্রুপ, টপ টেন গ্রুপ ও ভাই বন্ধু গ্রুপের অন্তর্ভূক্ত ছিল। গ্রেপ্তারকৃতরা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত।
তিনি আরও জানান, তারা বিভিন্ন সময় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ আশেপাশের এলাকায় মারামারিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত। তারা এই এলাকাগুলোতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের জন্য ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করত। এ ছাড়াও তারা মাদকসেবনসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশের নামে মাদক, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মারামারিসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য