× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

অর্থ-বাণিজ্য
Nine six to twelve nine should be made Manjur Hussain
google_news print-icon

নয়-ছয় থেকে বারো-নয় করা উচিত: মঞ্জুর হোসেন

নয়-ছয়-থেকে-বারো-নয়-করা-উচিত-মঞ্জুর-হোসেন
বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন। ছবি: নিউজবাংলা
এখানে একটি বিষয় আলোচনায় আসতে পারে যে, নয়-ছয় সুদের হার তো প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে করা হয়েছিল, কিন্তু মনে রাখতে হবে, তখনকার প্রেক্ষাপট আর এখনকার প্রেক্ষাপট একেবারেই আলাদা। তখন দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ শতাংশের নিচে। আর এখন ৯ শতাংশের ওপর। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি: মঞ্জুর হোসেন

করোনাভাইরাস মহামারির দুই বছরের ধাক্কা না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বেশ চাপ সৃষ্টি করেছে। বেড়ে গেছে সব ধরনের পণ্যের দাম; মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।

আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতির পারদ ৯ শতাংশের ওপরে উঠেছে। অর্থনীতির অন্য সূচকগুলোও নিম্নমুখী। সাত মাস পর সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে গত সেপ্টেম্বরে। ১৩ মাস পর রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধিতে লেগেছে হোঁচট।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৫ দশমিক ৩১ শতাংশ, তবে সেপ্টেম্বরে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর এই দুই সূচকে নেতিবাচক ধারার কারণে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নেমেছে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।

এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা শুনিয়েছেন এ শাস্ত্রের গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন

তিনি বলেন, ‘আমরা তো একটি বৈশ্বিক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা আছে অর্থনৈতিক-সামাজিক সব দিক থেকেই। বিশেষ করে করোনাভাইরাস-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধটা আমার কাছে মনে হয় এখন বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এর প্রভাব বাংলাদেশেও বেশ ভালোই পড়েছে। এ থেকে আমরা কবে মুক্ত হব, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা।’

নিউজবাংলাকে বৃহস্পতিবার দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই অনিশ্চয়তার কথা বলেন মঞ্জুর হোসেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিউজবাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি

দুই বছরের বেশি সময়ের করোনাভাইরাস মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় কেমন চলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই আশঙ্কার কথা বলছেন, অনিশ্চয়তার কথা বলছেন। খরচ কমানোর আহ্বান জানিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করছেন। আপনার কাছে সার্বিক পরিস্থিতি কেমন মনে হচ্ছে?

আমরা তো একটি বৈশ্বিক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা আছে। অর্থনৈতিক-সামাজিক সব দিক থেকেই। বিশেষ করে করোনাভাইরাস-পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধটা আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। বিশ্বের অর্থনীতির জন্য। এখানে রাশিয়া একদিকে, যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ একদিকে হয়ে এমন একটি পর্যায়ে যাচ্ছে, যার ফলে দিন দিন সমস্যাগুলো বাড়ছে; নতুন নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে। এতে সারা বিশ্ব এর দ্বারা এফেক্টেড হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তো এ থেকে আমরা ব্যতিক্রম নই। কারণ একটা হচ্ছে যে, জ্বালানি তেলের উৎসগুলো অনেকটাই সেসব দেশের ওপর নির্ভর করছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। আবার কিছুটা কমছে, আবার বাড়ছে। তেলের একটি অনিশ্চয়তা আছে।

দ্বিতীয়ত আছে খাদ্যসংকটের একটি বিষয়; যেহেতু আমাদের অনেক কিছুই আমদানি করতে হয়। তৃতীয় হচ্ছে আমাদের রপ্তানির বড় বাজার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। সেসব দেশে এখন মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে; অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিচ্ছে। তারা হয়তো এখন তাদের কস্ট অফ লিভিং কমাতে চাইবে। সেই ক্ষেত্রে আমাদের রপ্তানি কমে যেতে পারে। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর অবস্থা যা, আমাদের অবস্থাও তা, তবে আমরা যেহেতু একটি উন্নয়নশীল দেশ, সেহেতু অভিঘাতটা আমাদের ওপর অনেক বেশি হবে অন্যান্য দেশের চাইতে।

এটি হচ্ছে মূলত প্রথম কথা; আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে যে আমরাও কিছুটা কৃচ্ছ্রসাধন করতে গিয়ে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। জ্বালানি তেলকে সাশ্রয় করতে গিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়েছি। দেশের অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছে। উৎপাদনব্যবস্থা অনেকটা কমে গেছে। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার যে অবস্থায় আমরা এসেছিলাম গত কয়েক বছরে, বিদ্যুতে নিরবচ্ছিন্ন ছিলাম, সেখানে ব্যাঘাত ঘটেছে। এগুলো সবই কিন্তু দেশের উৎপাদনব্যবস্থার ওপর একটি প্রভাব ফেলছে। তাতে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বা প্রবৃদ্ধি সেটার ওপর আঘাত আসছে।

সরকার চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে। সেটি কি আদৌ অর্জন করা সম্ভব হবে?

এককথায় বলতে গেলে বলতে হয়, বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এই লক্ষ্য আসলে অর্জন করা খুবই কঠিন। বিশ্বব্যাংক বলেন বা আইএমএফ বলেন, তারা বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে প্রক্ষেপণ, সেটা আগের থেকে কমিয়ে এনেছে। আমাদের ৭ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা ছিল, এখন সবাই বলছে ৬ শতাংশ, এমনকি আরও কমও হতে পারে। এই সবকিছুর সঙ্গে যেটা সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য অ্যাডজাস্ট করেছে। এ ছাড়া অন্য যেসব জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, তার ফলে দেশের মূল্যস্ফীতি একটা খারাপ পর্যায়ে আছে। সেটা আগস্টে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল, সেপ্টেম্বরে এটা ৯-এর ওপরে ৯ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে, কিন্তু যেটা আমরা অনেকবার বলেছি, আমাদের গবেষণায়ও দেখেছি যে, মূল্যস্ফীতি এটাকে বলি আমরা হেডলাইনি ইনফ্লেশন। এটা গড়, এটা সবার ওপর কিন্তু ইনফ্লেশনটা হয়।

প্রত্যেক ক্যাটাগরির মানুষের ওপর ইনফ্লেশনের প্রভাব আলাদা। দরিদ্র শ্রেণির লোকদের ওপর মূল্যস্ফীতির প্রভাব কিন্তু অনেক বেশি। দরিদ্র মানুষ হয়তো ১২ শতাংশ ফিল করছে। আমি হয়তো ৯ শতাংশ করছি; আরেকজন হয়তো ৭ শতাংশ ফিল করছে। কারণ এটা কনজামশন বাস্কেটের ওপর নির্ভর করে আপনি কোন জিনিসগুলো খাচ্ছেন, সেই জিনিসগুলোর দাম কেমন বেড়েছে। সেই হিসাবে এক ধরনের আঘাত তো আছেই। দ্বিতীয় হচ্ছে যে করোনাভাইরাস পরবর্তী যে ধরনের রিকভারির কথা ছিল, যেভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা ছিল, বিশেষ করে কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, সেগুলো কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী কর্মসংস্থান হচ্ছে না।

যেহেতু বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, সে ক্ষেত্রে আমদানি ব্যয় বেড়েছে; তা ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপরেও প্রভাব পড়েছে। তৃতীয় আরেকটি জিনিস আমাদের সবকিছুর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত; দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার, ডলারের মুদ্রা বিনিময় হার। ডলারের মুদ্রা বিনিময় হার একটি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে গেছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতিতে একটি বড় প্রভাব পড়েছে। আমাদের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। ডলারের যে ব্যবস্থাপনা, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে। তারা আসলে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না তারা কী করবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যদিও পুরোপুরি মার্কেটের ওপর ছেড়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই বাংলাদেশের হাতে।

যেহেতু আমাদের একটি বড় অংশ ফটকাবাজারিতে লিপ্ত হয়ে যাই, আমাদের প্রতিষ্ঠানের ম্যাকানিজমগুলো এতটা শক্তিশালী না। সেই দিক থেকে পুরোপুরি যদি আমরা মার্কেটের ওপর ছেড়ে দিই ফল আরও খারাপ হবে, কিন্তু যেটা হয়েছে, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেরা কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে পেরে ব্যাংকগুলোর ওপর নির্ভর করছিল। সেটা আরও খারাপ হয়েছে। তারা তিনটি রেট প্রপোজ করেছে। একটি রেমিটারদের জন্য, একটি এক্সপোর্টারদের জন্য আর একটি ইম্পোর্টারদের জন্য। আরও একটি আছে সাধারণ মানুষের জন্য। এখন এ ধরনের মাল্টিপোল এক্সচেঞ্জ রেট পৃথিবীতে আর কোথাও নেই। এ ছাড়া ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টে এটা আসলে ভালো ভূমিকা রাখে না। একটি বিনিময় হারে অবশ্যই আসতে হবে। আর এই সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশ ব্যাংককে খুব স্ট্রংলি নিতে হবে।

এটা খুব দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশ ব্যাংকে অতীতেও দেখা গেছে, পলিসি রেট খ্যাত সুদের হার ব্যাংকাররা সাজেস্ট করছে। তারপর এক্সচেঞ্জ রেট কীভাবে হবে সেটাও ব্যাংকাররা সাজেস্ট করছে। তারা হচ্ছে এন্ড ইউজার। আর এই ইউজারের ওপর যদি আমি ছেড়ে দিই পলিসি মেকিং, তার ফল কখনও ভালো হয় না। আমি আশা করব যে, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সঠিক এবং শক্ত অবস্থান নেবে। যেটা সঠিক হওয়া দরকার, সেটাই নেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে বিভিন্নজন বিভিন্ন কথা বলবে, কিন্তু আমাদের একটি ইউনিফাইড এক্সচেঞ্জ রেট লাগবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক কি ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সঠিক কাজটি করছে না? কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে?

আমি তো বললাম যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্ষমতার অভাব আছে। আমরা অনেক আগে থেকেই বলেছি যে, মুদ্রা সংকট যখন তৈরি হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে ব্যবস্থাপনা করে আসছে, বিশেষ করে ৪, ৫, ১০ বছর ধরে সেটা তো তারা মেইনটেইন করতে পারবে না। ক্রাইসিস না থাকলে এই ধরনের এক্সচেঞ্জ রেট ম্যানেজ করা যেতে পারে। এতদিন তো প্রায় ফিক্সড ছিল। আসলে এক্সচেঞ্জ রেট ম্যানেজ করার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। অর্থনৈতিক ভিত্তিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সময়ে সময়ে ছাড় দেয়া দরকার ছিল। সেটা না করার ফলে যখন ক্রাইসিস দেখা গেল, রিজার্ভকে ধরে রাখার কথা এলো, তখন এক্সচেঞ্জ রেটকে এই লেভেলের ডেপ্রিসিয়েট না করে তাদের উপায় ছিল না। এখন করার পরও দেখা গেল মার্কেটে বাংলাদেশ ব্যাংক যা রেট বলছে, সেই রেট ফলো হচ্ছে না। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারভাইজরি যে কন্ট্রোল ব্যাংকগুলোর ওপরে সেটার দুর্বলতা দেখা গেল। অনেক ব্যাংক বাড়তি মুনাফা করেছে এই এক্সচেঞ্জ রেট দিয়ে। ইভেন মানি এক্সচেঞ্জগুলোর ওপর কোনো কন্ট্রোল আছে বলে আমার মনে হয় না।

এটি অনেক দিনের পুঞ্জীভূত একটি সমস্যা। একটি সংকটের মুখে তাদের পক্ষে এটি ব্যবস্থাপনা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। তার ফলে প্রপার এক্সচেঞ্জ রেট ম্যানেজমেন্ট করা, প্রপার মনিটরি পলিসি ফর্মুলেশনের জন্য যে সক্ষমতা দরকার, সেটা নতুন করে তো আর এখন বিল্ডআপ করা যাবে না। এখন দরকার হচ্ছে তারা প্রয়োজনে যাদের কাছ থেকে সাজেশন নেয়া দরকার বা তাদের নিজেদের যে এক্সপার্টেজ আছে, সেগুলো ডেভেলপ করে, আমি মনে করি সেন্ট্রাল ব্যাংকের নিজ যোগ্যতায় নিজে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এটি ব্যাংকারদের ওপর একদমই ছেড়ে দেয়া উচিত না। তাতে করে হিতে বিপরীত হবে আসলে।

আমরা এই মুহূর্তে দেখছি, ব্যবসায়ীদের চাপে হোক, যেকোনো কারণেই হোক, সুদের হার আসলে যেভাবে ফিক্স করে রাখা হয়েছে, সেটা আসলে কোনোভাবেই ডিজায়ারেবল না। বর্তমানে দেশের মূল্যস্ফীতির অবস্থা খারাপ। দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমার সুদের হারকে ফিক্সড করে বিনিয়োগকে সুবিধা দিয়ে কার লাভ হবে?

জনগণ যখন খারাপ অবস্থায় থাকে, মূল্যস্ফীতি যখন বেশি থাকে, তখন এমপ্লয়মেন্ট রেটও বাড়তে থাকে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আসলে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ফিন্যান্স ডিভিশনের একটি ভূমিকা থাকা উচিত, এক্সপার্টদেরও ভূমিকা থাকা উচিত। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে যে, আমাদের এক্সপার্টদের মধ্যে অপিনিয়নগুলো এত বিভেদমূলক এবং এতভাবে তারা দ্বিমত পোষণ করেন যে, তাদের মতামত নিয়েও যে সেন্ট্রাল ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট পথে চলতে পারবে, সেটা নিয়েও সমস্য। তার পরও আমি মনে করি ডায়ালগটা হওয়া উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ডায়ালগ করা। সেখান থেকে তারা যেটা ভালো মনে করে, সেটা তারা নিতে পারে। নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট কোনো অর্থনীতিবিদের কথার ওপর সিদ্ধান্ত নেয়ার তো কোনো দরকার নেই।

সরকার বাজেটে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে। সেটা কি সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারটা (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গেল। এই কোয়ার্টার দেখে বলা খুব কঠিন যে, বাংলাদেশে এই অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কী হবে। আমি মনে করি যে, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবির প্রক্ষেপণ আরও রিভিশন হবে। তারা ছয় মাস পর বলবে যে আরও কমে যাবে, নয় মাস পর বলতে পারে অন্য কথা। আমাদের এক কোয়ার্টার পার হয়েছে, সেটার ভিত্তিতে আমাদের বলা হয়েছে যে এই তিন মাসের মতো করে যদি আমরা চলতে পারি তাহলে বছর শেষে আমাদের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ শতাংশের মতো, কিন্তু আমরা এই অবস্থায় চলতে পারব কি না, সেটা নির্ভর করছে অনেক কিছুর ওপর, তবে আমি মনে করি, এই মুহূর্তে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কত হবে, সেটার দিকে বেশি মনোযোগ না দিয়ে মূল্যস্ফীতি কীভাবে আমরা সহনীয় রাখতে পারি, সেটা নিয়েই সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশি কাজ করা উচিত।

আমার মনে হয়, এটাই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বাজারে গেলে দেখতে পাই যে, জিনিসপত্রের মূল্য কীভাবে আকাশচুম্বী ধারণ করছে, সেদিক থেকে সরকারের অনেকগুলো করণীয় আছে। একটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি কমানো বা সহনীয় করার জন্য পলিসিগত কিছু দ্রুত করা দরকার। সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক যেগুলো নিয়েছে সুদের হার বাড়ানো, ইম্পোর্ট কিছুটা কমানো, এর বাইরে ফিসক্যাল কিছু মেজার আছে। যেমন: জনগণকে সহায়তা দেয়া।

বর্তমানে এক কোটি লোককে ১৫ টাকা দরে চাল দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো, যেটাকে আমরা বলি ফিসক্যাল ট্রান্সফার; এ ছাড়া ওপেন মার্কেট সেলস আরও বেশি পরিমাণে বাড়াতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে যেটা দেয়া হয়, সেটা যথেষ্ট না। সেটা যদি আরও বেশি আকারে বাড়ানো হয়, তাহলে সাধারণ জনগণ আরও বেশি আকারে মূল্যস্ফীতির আঘাতটিকে সয়ে যেতে পারবে।

দ্বিতীয় পন্থা হচ্ছে যাদের ফিক্সড সেলারি, তাদের কাছ থেকে কিন্তু দাবি আসা শুরু হয়েছে যেন তাদের বেতনটা বাড়ানো হয় এবং সেটা হয়তো করতে হতে পারে সামনে। যাদের একটি স্থির আয় আছে বা নিম্ন আয় আছে, তাদের পক্ষে কিন্তু মূল্যস্ফীতিকে মোকাবিলা করে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এই কাজগুলো করতে গেলে সরকারের কিন্তু ব্যয় বেড়ে যাবে। ব্যয় যদি বাড়ানো হয়, সে ক্ষেত্রে জিডিপি গ্রোথ হয়তো আরেকটু কম হতে পারে। সেটাও মন্দ হয় না। যদি আমাদের ৫ দশমিক ৫ শতাংশও প্রবৃদ্ধি হয়, তাহলেও ভালো বলে আমি মনে করি। একদিকে মূল্যস্ফীতি কমানোর পলিসিগত পদক্ষেপগুলো যথাযথ হওয়া দরকার, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি যাতে সাধারণ জনগণকে বিপদে ফেলতে না পারে সরকারের দায়িত্ব সাধারণ জনগণকে সহায়তা দেয়া। সেটা পণ্য দিয়েও হতে পারে অথবা টাকা দিয়েও হতে পারে।

আরেকটি হচ্ছে যাদের সেলারি ফিক্সড তাদের সেলারি রিভাইস করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারের বাজেট বেড়ে যাবে। অন্যান্য খাতে ব্যয় কমাতে পারে। এটি একটি জটিল পরিস্থিতি, ম্যানেজ করার মতো, ব্যালান্স করার মতো ক্যাপাসিটি সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কতটুকু আছে আমরা জানি না। এতদিন আমাদের ম্যাক্রো ইকোনমিকস স্ট্যাবিলিটি খুব ভালো ছিল। ব্যবস্থাপনায় কোনো সমস্যা হয়নি। আগে এ রকম কোনো বৈশ্বিক সংকটের মোকাবিলা আমরা করিনি। এই ধরনের সংকট মোকাবিলার জন্য সব ধরনের ব্যালান্স করে আমরা এগোতে পারি কি না, সেটা এখন দেখার বিষয়।

নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আগের মতো যদি দেশে হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি হয়, তাহলে এই সংকটের সময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে বলে আপনি মনে করেন?

সেই আশঙ্কা আছে, তবে বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় একটি রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার, যাতে আমরা সবাই মিলে একভাবে সেটা মোকাবিলা করতে পারি। জনগণের যাতে ক্ষতি না হয়। জনগণের কল্যাণ যাতে ব্যাহত না হয়, সবার এ বিষয়ে একমত হওয়া উচিত। এমন কোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপ এখন নেয়া ঠিক হবে না, যাতে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘার’ মতো অবস্থা হয়। সেদিক থেকে সরকার এবং বিরোধী দল যারা আছে আমাদের আশা থাকবে তারা কিছু জাতীয় ইস্যুতে একমত হয়ে এই সময়টা পার করবেন, যাতে সব ধরনের একটি স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। কীভাবে এই সময়টা পার করা যায়। কারণ আমরা একটি বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে আছি। আবার যদি দেশীয় সংকট তৈরি হয়, সেটা আমাদের অর্থনীতির জন্য খুব ক্ষতিকর হবে।

ডলার সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

আমি মনে করি এই সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা সংস্থাগুলোর মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া, কিন্তু আলোচনার বিষয়টি পুরোপুরি অনুপস্থিত। আলোচনা করতে তো অসুবিধা নেই। সিদ্ধান্ত আপনারাই নেন। আপনি আলোচনার টেবিলে সবাইকে নিয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। কারণ সংকটকালীন সময়টা সাধারণ সময় থেকে আলাদা। সুতরাং সেই সময়টাকে ম্যানেজ করতে হলে দূরদর্শিতার সঙ্গে করতে হবে।

আমাদের দেশে রাশিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নরের মতো গভর্নর হয়তো নেই। আমাদের দেশে আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নরের মতো গভর্নর হয়তো নেই। আমাদের যে রিসোর্স আছে, সেন্ট্রাল ব্যাংকে যদি না থাকে, বাইরে যারা আছেন তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। তাই বলে শুধু ব্যাংকারদের সঙ্গে আলোচনা করে নীতি সিদ্ধান্ত নেয়াটা যৌক্তিক না। পার্সোনালি যদি কারও সঙ্গে আলোচনা হয়ে থাকে, সেটা যথেষ্ট নয়। মুক্ত আলোচনা হওয়া উচিত আসলে দেশের অর্থনীতি কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে সে বিষয়ে। যেখানে মতপার্থক্য থাকবে, সেখানে পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এটা হচ্ছে এক দিকের কথা। এর বাইরে আমরা যে সমস্যাগুলো দেখছি, আমাদের আমদানি বাড়ছে আবার কমছে, এগুলো নির্ভর করছে পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনীতির ওপরে। আমরা একটিমাত্র পণ্য রপ্তানি করি, সেটাও পশ্চিমাদের সঙ্গে। পশ্চিমারা কিন্তু একটি যুদ্ধের মধ্যে আছে। সেটা হয়তো তারা সামাল দিতে পারবে, কিন্তু আমাদের অর্থনীতি ধসে যাবে যদি আমাদের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। আমরা মার্কেট ডাইভারসিফিকেশন করতে পারিনি, প্রোডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন করতে পারিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ২০২৩ সালটা খুবই কঠিন হবে। কতটা কঠিন হবে? আপনার বিশ্লেষণ কী বলে? সামনের দিনগুলো কেমন যাবে?

সামনের দিনগুলো কেমন হবে, সেটা অনেকটাই নির্ভর করছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ওপরে। যুদ্ধ যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে চলে যায়, তাহলে তো কথাই নেই। খুবই অবস্থা খারাপ। আর এটা বর্তমান অবস্থায় যদি লিংগার করতে থাকে এবং সামনে শীত আসছে, সামনে ইউরোপকে যদি রাশিয়া গ্যাস তেল বন্ধ করে দেয়, সেখানে একটি সংকট তৈরি হতে পারে। এই সংকটের চাপ কিন্তু আমাদের দিকে লাগবে। পোশাক রপ্তানির একটি বড় মার্কেট ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ওপেক বলছে, তেলের উৎপাদন কমিয়ে দেবে। তেলের দাম বৃদ্ধির একটি সম্ভাবনা আছে। সবকিছু মিলিয়ে আমি খুব একটি আশাবাদী হওয়ার মতো অবস্থা দেখছি না।

আপনার কাছে শেষ প্রশ্ন। এই যে আপনি অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ, সংকট বা চাপের কথাগুলো বলছেন, এগুলো মোকাবিলা করতে এই মুহূর্তে আমাদের কী কী করা দরকার বলে আপনি মনে করেন?

আমাদের মূল্যস্ফীতি এখন ৯ শতাংশের ওপর। এ অবস্থায় বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে নয়-ছয় সুদের হার থেকে আমাদের দ্রুত বেরিয়ে আসতে হবে। দুটিই বাড়াতে হবে। অর্থাৎ ব্যাংকঋণের সুদের হার যেটা এখন ৯ শতাংশ বেঁধে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সেটা ১২ শতাংশে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। আর আমানতের সুদের হার যেটা ৬ শতাংশ আছে, সেটা ৯ শতাংশে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমি সরাসরি বলতে চাই, নয়-ছয় সুদের হার থেকে বারো-নয় সুদের হার বেঁধে দিতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরামর্শ বলেন আর দাবিই বলেন, এ বিষয়টি আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জোরালোভাবে উপস্থাপন করছি।

এখানে একটি বিষয় আলোচনায় আসতে পারে যে, নয়-ছয় সুদের হার তো প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে করা হয়েছিল, কিন্তু মনে রাখতে হবে, তখনকার পেক্ষাপট আর এখনকার পেক্ষাপট একেবারেই আলাদা। তখন দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ শতাংশের নিচে। আর এখন ৯ শতাংশের ওপর।

এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। প্রধানমন্ত্রীকে আগে বলা হয়েছিল সুদের হার নয়-ছয় থাকলে ভালো হবে। প্রধানমন্ত্রী তখন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কিন্তু এখন যদি এটা বোঝানো যায় যে, এটা বাড়ালেও বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বরং বড় অংশে দেশের জন্য ভালো হবে, তাহলে নিশ্চয়ই সেটা উনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী তো এককভাবে সিদ্ধান্ত নেন না, উনার বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বা যারা পলিসি মেকার আছেন, তাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্তগুলো যাতে তথ্যনির্ভর হয়, তখন উনাকে বোঝানো গেলে তাহলে উনার পক্ষে হয়তো সিদ্ধান্ত ভালোভাবে দেয়া সম্ভব হবে। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী হয়তো এ ধরনের একটি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের জায়গাটা চিন্তা করবেন এবং অবশ্যই একটা ভালো সিদ্ধান্ত নেবেন।

এখানে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আরও একটি অনুরোধ করব। এই কঠিন সংকট মোকাবিলার জন্য তিনি একটি হাই প্রোফাইল কমিটি তৈরি করবেন দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে। এটা মন্ত্রী পর্যায়ে হতে পারে, সচিব পর্যায়ে হতে পারে। অর্থনীতিবিদরা সেখানে থাকতে পারেন, ব্যবসায়ীরা থাকতে পারেন। এটি হয়তো ভালো কাজ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে হতে পারে। সেটা যদি হয় আরও ভালো হবে। সেই কমিটির পরামর্শে সংকট মোকাবিলায় সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী বসতে পারেন। কারণ তারা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে যদি দেশের অবস্থা খারাপ করে ফেলে তাহলে তো সমস্যা আরও বাড়বে। এই জায়গাগুলোতে তো কাজ আছেই। আমরা অর্থনীতিবিদরা তো শুধু বলতে পারি কী করতে হবে, দায়িত্বটা সরকারকেই নিতে হবে। সিদ্ধান্তটাও সরকারকেই নিতে হবে।

আরও পড়ুন:
ব্যাংকঋণের সুদের সীমা ৯ শতাংশ উঠে যাবে?
বিশেষ সুবিধায় ঋণ নিয়মিত করেছেন ১৩ হাজার ৩০৭ গ্রাহক

মন্তব্য

আরও পড়ুন

অর্থ-বাণিজ্য
The vegetable market is heated raw pepper
বাজারদর

সবজির বাজারে উত্তাপ, কাঁচামরিচ আড়াইশ

সবজির বাজারে উত্তাপ, কাঁচামরিচ আড়াইশ

সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই সবজির অনেক দাম বেড়েছে। প্রায় সব সবজির দামই ৮০ টাতা থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। এদিকে কাঁচামরিচের দাম প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এখন আড়াইশ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। বেগুন ও শসার দাম উঠেছে ৮০ থেকে ১২০ টাকার ঘরে। মাছ ও মুরগিও আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, গত সপ্তাহে যেসব সবজির দাম ছিল প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে, সেগুলোর দাম এখন ৬০ থেকে ১০০ টাকা। যেমন—৬০ টাকার গোল ও লম্বা বেগুন এখন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, ঝিঙে ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল এখন ৬০ টাকা, কাঁকরোল, লতি, বরবটি, করলা ৮০ টাকা, ৪০ টাকার পটোল, ঢেঁড়শ, লাউ, মুলা এখন ৬০ টাকা কেজি।

কচুরমুখীর কেজি ৫০ থেকে বেড়ে ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে বেড়ে ১৪০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, কাঁচা কলা (হালি) ৪০ টাকা, কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। সবজির মধ্যে কেফসি প্রজাতির সবুজ কাঁচামরিচ ২৮০ টাকা কেজি, হলুদ মরিচ ৮০০ টাকা কেজি, চাইনিজ ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি, গাজর ১৪০ টাকা, শসা (হাইব্রিড) ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, দেশি শসা ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। আর ২০০ টাকার কাঁচামরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা প্রতি কেজি।

এদিকে বাজারে ব্রয়লার, পাকিস্তানি ও দেশি মুরগির দামও আগের মতোই চড়া। বাজারে আজ ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকা কেজি দরে। আর পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩১০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা।

বিক্রেতা শিপন জানান, ‘বড় সাইজের ব্রয়লার এখন কম আসছে, তাই দাম কিছুটা বেশি। পাকিস্তানি ও দেশি মুরগির দাম এক মাস ধরে প্রায় একই আছে, তবে আগে কিছুটা কমে পাওয়া যেত।’

মাছের বাজারেও তেমন কোনও পরিবর্তন নেই। গতকাল শুক্রবার হওয়ায় অনেক ধরনের মাছের দাম কিছুটা বেশি দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের মতো আজও দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের রুই মাছের দাম প্রতিকেজি ৪৫০ টাকা, দেড় থেকে ২ কেজির দাম প্রতিকেজি ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা, এক থেকে দেড় কেজির ওজনের রুই মাছের দাম প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা, আর এক কেজির কম ওজনের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি দরে।

এছাড়া পোয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে, মৃগেল মাছ প্রতি কেজি ২৮০ টাকা, তেলাপিয়ার দাম প্রতি কেজি আড়াইশ টাকা, এক কেজি থেকে কিছুটা বেশি পাঙাশের দাম ১৮০ টাকা কেজি, দেড় কেজি বেশি ওজনের পাঙাশের দাম ২৫০ টাকা কেজি। শিং মাছ প্রতি কেজি সাড়ে পাঁচশত থেকে ৬০০ টাকা। চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা প্রতি কেজি, আর ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা কেজি।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
The 5th Intex Bangladesh Exhibition starts in Dhaka

ঢাকায় শুরু ১৬তম ইনটেক্স বাংলাদেশ এক্সিবিশন

ঢাকায় শুরু ১৬তম ইনটেক্স বাংলাদেশ এক্সিবিশন

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সফল গার্মেন্টস ক্রেতা, বিপনন ও সরবরাহকারী এবং সোর্সিং এক্সিবিশন খ্যাত ইনটেক্স বাংলাদেশের ১৬তম আসর আজ রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)-তে শুরু হয়েছে। এই তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল সোর্সিং শোতে ১০টিরও বেশি দেশের ১২৫টির অধিক কোম্পানি অংশ নিচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী ক্রেতা, সরবরাহকারী এবং উৎপাদনকারীদের জন্য একটি গতিশীল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।

পোশাক খাতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ-এর নিত্য উদ্ভাবনী কৌশল ও উন্নতমানের দ্রুত উৎপাদন ক্ষমতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাহিদায় প্রাধান্য পাচ্ছে।

২০২৬ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্প রপ্তানি ৫৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ইনটেক্স-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা, সাপ্লাই চেইনে বৈচিত্র্য আনা এবং টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পে উদ্ভাবন প্রদর্শনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, গেস্ট অব অনার হিসেবে ছিলেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন।

এছাড়াও বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং এলএবিসিসিআই, কেবিসিসিআই ও বিজিসিসিআই-এর মতো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সংস্থার নেতৃবৃন্দও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

মাহবুবুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ এখন পোশাক খাতে বিশ্ব বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দ্রুত টেকসই ও মূল্য-সংযোজিত পোশাক উৎপাদনের একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। উদ্ভাবন, কমপ্লায়েন্স এবং দক্ষ কর্মী নিয়োগে কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশটি দায়িত্বশীল ফ্যাশন ও টেক্সটাইল সোর্সিংয়ের পরবর্তী অধ্যায় নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। আমরা বিশ্বাস করি, ইনটেক্স বাংলাদেশের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে মানসম্পন্ন পণ্য নিশ্চিত করবে”

এই বছরের এক্সপোতে বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য প্যাভিলিয়নের মধ্যে ভারতের (টেক্সপ্রোসিল ও পেডেক্সিলের মাধ্যমে) তুলা, মিশ্র সুতা ও টেকসই টেক্সটাইল প্রদর্শন করছে। চীন নিয়ে এসেছে টেকনিক্যাল ফ্যাব্রিক ও গার্মেন্টস ট্রিম। দক্ষিণ কোরিয়া পরিবেশবান্ধব পারফরম্যান্স উপকরণ প্রদর্শন করছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড ও জাপান নিয়ে এসেছে প্রিমিয়াম শার্টিং ও বোনা পণ্য। বাংলাদেশি প্রদর্শনকারীরা নিটওয়্যার, ডেনিম এবং ভার্টিক্যালি ইন্টিগ্রেটেড উৎপাদন সমাধানের অগ্রগতি তুলে ধরছে।

এক্সপোর মূল্যবোধ আরও বাড়াতে ইন্টারেক্টিভ বিজনেস ফোরাম (আইবিএফ) দুটি সেশনের আয়োজন করেছে। প্রথম সেশনে টেক্সটাইল উৎপাদন ও ফ্যাশনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সংযুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হবে, অন্যদিকে দ্বিতীয় সেশনে বৈশ্বিক শুল্ক ও বাণিজ্য পরিবর্তনের বাংলাদেশি রপ্তানির প্রভাব নিয়ে আলোচনা হবে। এই সেশনগুলোতে এ শিল্পের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা অংশ নিচ্ছেন, যা ব্যবসায়িক স্থিতিস্থাপকতা ও বৃদ্ধির কৌশল প্রদান করবে।

প্রদর্শনীর পাশাপাশি, ইনটেক্স বাংলাদেশ ২০২৫-এ ব্যবসায়িক সভা (বি২বি), ভিআইপি নেটওয়ার্কিং এবং ক্রেতা-সরবরাহকারীদের মধ্যে ম্যাচমেকিং সুবিধা রয়েছে— যা সোর্সিং ও ব্যবসায়িক সম্প্রসারণের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞতা প্রদান করছে।

ওয়ার্ল্ডেক্স ইন্ডিয়ার আয়োজিত এই ইভেন্টটি বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিজিবিএ, ইপিবি এবং আইবিসিসিআই, এলেবিসিসিআই, কেবিসিসিআই ও বিজিসিসিআইয়ের মতো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার সমর্থন পেয়েছে।

বাংলাদেশ যখন আরও উদ্ভাবনী ও টেকসই টেক্সটাইল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে, ইনটেক্স বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারের সাপ্লাই চেইনের সাথে দেশটিকে সংযুক্ত করার একটি প্রধান সমর্থক হিসেবে কাজ করছে।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Foreign investment in the country has decreased by 5 percent

দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৩ শতাংশ

দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৩ শতাংশ

দেশে ২০২৪ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ—এফডিআই আগের বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ কমেছে। গত বছর প্রকৃত এফডিআই এসেছে ১২৭ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। ২০২৩ সালে নিট এফডিআই ছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্টে বিদেশি বিনিয়োগ আসার ওই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ২০২৪ সাল শেষে বিদেশি বিনিয়োগের স্থিতি ১ হাজার ৮২৯ কোটি ডলার, যা দেশের জিডিপির মাত্র ৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় এ ক্ষেত্রে গড় হার ১৩ শতাংশ।

ভারতের হার ১৪ শতাংশ। ভুটানের মতো দেশে এ হার ১৭ শতাংশ। বাংলাদেশে ২০২৪ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগে অর্থের ঘোষণার পরিমাণও কমেছে।

ঘোষিত অর্থের পরিমাণ ১৭৫ কোটি ডলার। গত বছরের তুলনায় যা ৩৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে মাত্র ৭০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।

গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২১ সালে দেশের বাইরে সর্বাধিক ৮ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব যখন আরো গভীর সহযোগিতা ও বিস্তৃত সুযোগ সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা, তখন ঘটছে তার বিপরীত। ২০২৪ সালে বৈশ্বিকভাবে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ১১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় ধাক্কা। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে মন্দা, শিল্প খাতে চাপ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি কম মনোযোগ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বাণিজ্য উত্তেজনা, নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং ভূরাজনৈতিক বিভাজন বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশকে আরো জটিল করে তুলছে।

তবে অন্ধকারে কিছুটা আশার আলোও রয়েছে। ডিজিটাল অর্থনীতিকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এর প্রবৃদ্ধি এখনো অসম। ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে ডিজিটাল পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। কারণ, ডিজিটাল সংযুক্তি হতে পারে অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতির একটি শক্তিশালী চালিকাশক্তি, যদি তা সবার কাছে পৌঁছানো যায়। প্রতিবেদনটি সরকারগুলোকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিএস) অর্জনে সহায়তা করার বিষয়ে ব্যবহারিক নির্দেশনা দিয়েছে। এ সময়টাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একসঙ্গে কাজ করার, যাতে আরো সহনশীল ও টেকসই বিশ্ব গড়ে তোলা যায়। সে লক্ষ্যে প্রতিবেদনটি বিভিন্ন নীতিগত ধারণা ও পরামর্শ তুলে ধরেছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং এর আগ থেকে জ্বালানি সংকটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। যার প্রভাব কিছুটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হলেও সেটি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সন্তোষজনক নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০২৪ এ প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে এফডিআই প্রবাহ বেড়েছিল ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২০২২ সালে প্রবাহ ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়ে ছিল ৩৪৮ কোটি ডলার। ২০২৩ সালে ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমে প্রবাহ হয়েছে ৩০০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ভিয়েতনামে বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। কম্বোডিয়ায় এফডিআই প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালে হয়েছে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ। পাকিস্তানে এফডিআই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

২০২৩ সালে ৪৫টি স্বল্পোন্নত দেশে (এলডিসি) এফডিআই ১৭ শতাংশ বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলারে দাড়িয়েছে। এর প্রায় ৫০ শতাংশ প্রবাহ কেন্দ্রীভূত ছিল কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, বাংলাদেশ, উগান্ডা এবং সেনেগাল—এ পাঁচ দেশে। গত এক দশকে স্বল্পোন্নত দেশের বহিঃখাতগুলোয় অর্থায়নের অন্যান্য উৎসের তুলনায় এফডিআই প্রবৃদ্ধিই পিছিয়ে আছে। সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন সহায়তা এবং রেমিট্যান্স হার স্বল্পোন্নত দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় বেশি। ওই বছর বৈশ্বিকভাবে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ ১০ শতাংশের বেশি কমে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে স্থবির ছিল।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Bri has invented three new varieties of rice

নতুন আরো তিন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে ব্রি

নতুন আরো তিন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে ব্রি

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ধানের আরও তিনটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে একটি লবণাক্ততা সহনশীল, একটি উচ্চফলনশীল বোরো এবং অন্যটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী। এ নিয়ে ব্রি আটটি উচ্চফলনশীল বা হাইব্রিড জাতসহ মোট ১২১টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে।

নতুন উদ্ভাবিত তিনটি জাত হলো; লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি-১১২, উচ্চফলনশীল বোরো ব্রি-১১৩ ও ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ব্রি-১১৪। গত বুধবার জাতীয় বীজ বোর্ডের (এনএসবি) ১১৪তম সভায় নতুন এ তিনটি জাত অনুমোদন করা হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সভাপতিত্বে বোর্ড সভায় ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলোর মধ্যে ব্রি ধান-১১২ লবণাক্ততা সহনশীল ও মাঝারি জীবনকালীন রোপা আমনের জাত। এ জাতের ডিগপাতা প্রচলিত ব্রি ধান-৭৩-এর চেয়ে খাড়া। ব্রি ধান-১১২ লবণাক্ততার মাত্রাভেদে হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ১৪ থেকে ৬ দশমিক ১২ টন ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের জীবনকাল ১২০ থেকে ১২৫ দিন এবং গাছের উচ্চতা ১০৩ থেকে ১০৫ সেন্টিমিটার। গাছের কাণ্ড মজবুত। এ কারণে ঢলে পড়ে না। এ জাতের ধানের চাল মাঝারি চিকন ও সাদা। ভাত ঝরঝরে। এটি লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। দানা মাঝারি চিকন ও শিষ থেকে ধান সহজে ঝরে পড়ে না। জীবনকাল তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে ফসল কর্তনের পর মধ্যম উঁচু থেকে উঁচু জমিতে সূর্যমুখী ও লবণ সহনশীল সরিষা আবাদের সুযোগ তৈরি হবে।

ব্রি ধান-১১৩ জাতটি বোরো মৌসুমের জনপ্রিয় জাত ব্রি-২৯-এর বিকল্প হিসেবে ছাড়করণ করা হয়েছে। এটি মাঝারি চিকন দানার উচ্চফলনশীল জাত। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা এবং ধান পাকলেও সবুজ থাকে। গাছ শক্ত ও মজবুত বিধায় সহজে হেলে পড়ে না। জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৩ দিন। চালের আকার-আকৃতি মাঝারি চিকন ও রং সাদা। দেখতে অনেকটা নাজিরশাইলের মতো। এ ধানের চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ এবং ভাত ঝরঝরে। এ ছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় দেখা গেছে, জাতটি ব্রি ধান-৮৮-এর চেয়ে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি ফলন দিয়েছে। এ জাতের গড় ফলন হেক্টরে ৮ দশমিক ১৫ টন। উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে জাতটি হেক্টরে ১০ দশমিক ১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।

কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, নতুন ব্রি ধান-১১৪ বোরো মৌসুমের দীর্ঘ জীবনকালীন ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা। গাছ মজবুত এবং হেলে পড়ে না। পাতার রং গাঢ় সবুজ। এর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৭ দশমিক ৭৬ টন। দানা মাঝারি মোটা এবং সোনালি বর্ণের। ভাত ঝরঝরে হয়। জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাসম্পন্ন। ফলে এ জাতের ধান চাষে কৃষককে ব্লাস্ট রোগ নিয়ে বাড়তি চিন্তা করতে হবে না, উৎপাদন খরচ সাশ্রয় হবে।

ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, জাতগুলো অনুমোদন লাভ করায় এখন আমরা এসব ধানের বীজ বাজারজাত করতে পারব। কৃষকেরা এ জাতের ধান চাষ করে লাভবান হবেন। তাদের উৎপাদনও বাড়বে। উপকূলীয় অঞ্চলে পানিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকায় অনেক সময় ধান চাষ করা যেত না। এখন আমাদের ব্রি ধান-১১২ সেসব এলাকায় সহজে চাষ করা যাবে। এ ছাড়া অন্য জাতগুলো আমাদের ধান উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।

সূত্র: বাসস

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Customs VAT and Tax Office will be open on June 23 and 26

২১ ও ২৮ জুন কাস্টমস, ভ্যাট ও কর কার্যালয় খোলা থাকবে

২১ ও ২৮ জুন কাস্টমস, ভ্যাট ও কর কার্যালয় খোলা থাকবে

আগামী ২১ ও ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং এর অধীনে সব কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর কার্যালয় খোলা থাকবে। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও ওই দুই দিনও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মূলত রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে এনবিআর। গত ২ জুন আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২২ জুন বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) মোট ৩ লাখ সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা আদায় করেছে। এটি সাময়িক হিসাব। ভ্যাটের রিটার্ন দাখিলের হিসাবের এই সংখ্যা আরও বাড়বে। লক্ষ্য অর্জনে শুধু জুন মাসেই সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে।

এনবিআরকে চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। মূল লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
From now on the dollar will be market based Governor

এখন থেকে ডলারের দাম হবে বাজারভিত্তিক: গভর্নর

জুনের মধ্যে আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়
এখন থেকে ডলারের দাম হবে বাজারভিত্তিক: গভর্নর

বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে ডলার-টাকার বিনিময় হার এখন থেকে বাজারনির্ভরভাবে নির্ধারণের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।

এ সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ আগামী জুন মাসের মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের ঋণ কিস্তি পাবে বলেও জানান তিনি।

ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের দর-কষাকষি চলছিল। মূলত সে কারণে আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় করছিল না। এর মধ্যে গতকাল জানা যায়, বাংলাদেশ ডলারের বিনিময় আরও নমনীয় করতে রাজি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারে ঋণের দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করতে রাজি হয়েছে আইএমএফ।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত ৯ মাসে রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করা হয়নি, তবুও বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে এবং তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। এ অবস্থায় বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে ব্যাংকারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, বাজারভিত্তিক করায় হঠাৎ করে ডলারের রেট অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘদিন ধরে ডলারের রেট ১২২ টাকার আশপাশে রয়েছে এবং তা সেখানেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ডলারের রেট দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা-সরবরাহ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, বাইরের দেশের নির্দেশে নয়। বর্তমানে বাজারে ডলারের সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে।

তবে, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দুবাইভিত্তিক কিছু সিন্ডিকেট বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক থাকবে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ড. মো. হাবিবুর রহমান, কবির আহমেদ, উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ এবং নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।

এদিকে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের জুনের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির জন্য নির্ধারিত ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার একত্রে ছাড় করবে।

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে সকল বিষয় সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে উভয়পক্ষ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা বিনিময় হারসহ অন্যান্য সংস্কার কাঠামো বিষয়ে সম্মত হয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং বিনিময় হার ব্যবস্থায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে অধিকতর পর্যালোচনার লক্ষ্যে চতুর্থ রিভিউ সম্পন্ন হওয়ার পর উভয় রিভিউয়ের জন্য নির্ধারিত কিস্তির অর্থ একত্রে ছাড় করা হবে বলে বিগত তৃতীয় রিভিউয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ রিভিউয়ের সময় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ব্যাংক-ফান্ড সভায় এবিষয়ে আলোচনা চলমান ছিল।

এ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, জাপান এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরও প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা জুন মাসের মধ্যে পাবে বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এ অর্থ পাওয়া গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে। ফলে মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয় যে, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে যেসকল সংস্কার কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব বিবেচনায় পরিকল্পিত এবং জাতীয় স্বার্থে গৃহীত। এ সকল সংস্কার কর্মসূচির ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যক্রম শুধুমাত্র কারিগরি সহায়তা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
The United States and China agree to reduce tariffs

শুল্ক কমাতে একমত যুক্তরাষ্ট্র ও চীন

শুল্ক কমাতে একমত যুক্তরাষ্ট্র ও চীন

বাণিজ্যযুদ্ধের তীব্রতা কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। পরস্পরের ওপর আরোপ করা পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য শুল্ক ৯০ দিনের জন্য ব্যাপক পরিসরে কমাতে একমত হয়েছে দুই দেশ। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা কমাতেই এই চুক্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর বিবিসির।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের আগে চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। পরে নতুন শুল্ক যখন ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন তখন তিনি বলেছিলেন তিন মাস সবার জন্য বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক হার প্রযোজ্য হবে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দুপক্ষের মধ্যে আলোচনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, গঠনমূলক ও দৃঢ় আলোচনার পর উভয় দেশ ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করতে রাজি হয়েছে। এর আওতায় দেশ দুটি পারস্পরিক শুল্ক ১১৫ শতাংশ কমাবে।

চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত বর্তমান ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। অন্যদিকে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপ করা ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। উভয় দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আগামী ১৪ মে থেকে শুল্কের এই কাঁটছাট কার্যকর হবে।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে স্কট বেসেন্ট বলেন, আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি যে, আমাদের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। দুই পক্ষের প্রতিনিধিদলই একমত হয়েছে যে তারা বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না। মার্কিন অর্থমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশই নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পেরেছে। আমাদের লক্ষ্য ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যের পথে অগ্রসর হওয়া এবং এটি তারই সূচনা।

প্রথম দফায় শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল এবং বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কাও জোরালো হয়েছিল। তবে এবার এই চুক্তির ঘোষণায় বিশ্ব শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

শুল্ক কমানোর চুক্তির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববাজারে চাঙাভাব দেখা দেখা গেছে। হংকংয়ের প্রধান সূচক ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ স্টক ফিউচারের উত্থান হয়েছে। এছাড়া বাড়তি শুল্ক স্থগিতের খবরে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দর বেড়ে ছয় মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউরোপীয় শেয়ারবাজারগুলোও উচ্চমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু করে এবং মার্কিন বাজারগুলোও ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, এই সময়সীমার মধ্যে চীনের উচিত হবে ফেন্টানিল নামক ভয়াবহ মাদকের অবৈধ রপ্তানি বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া। এ বিষয়ে চীনের সদিচ্ছা দেখে ওয়াশিংটন আশাবাদ প্রকাশ করেছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের প্রবেশ ঠেকাতে চীন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না এমন অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।

মন্তব্য

p
উপরে