অসাধু ব্যবসায়ী, কারবারি ও বিপণন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণেই ডিমের দাম বেড়েছে। ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য শুধু খামারিদের দায়ি করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন মৎস ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
এ জন্য উৎপাদনের পাশাপাশি বিপণন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে বলে জানান মন্ত্রী।
শুক্রবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, কারবারি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টি করে। বাজার ব্যবস্থাপনায় জড়িতদের সঙ্গে পোল্ট্রি বা ডিম উৎপাদনে সম্পৃক্তদের এক করে অভিযুক্ত করলে বিষয়টি নির্দয় হবে। কারণ, উৎপাদন ও বিপণন দুটি আলাদা অংশ।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শ ম রেজাউল করিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ।
‘প্রতিদিন একটি ডিম, পুষ্টিময় সারা দিন’ স্লোগান সামনে রেখে প্রতিবছরের মতো এ বছরও বাংলাদেশে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পালন হয় বিশ্ব ডিম দিবস।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স (ওয়াপসা) বাংলাদেশ শাখা ও বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
এ ছাড়া দেশের ৬১ জেলা, সব বিভাগীয় শহর এবং চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার, ডিমের পুষ্টিগুণবিষয়ক জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে শোভাযাত্রা, বিদ্যালয় ও এতিমখানায় ডিম বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘বর্তমানে ডিমের উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু ডিম উৎপাদনে ব্যয় বেড়েছে। পোল্ট্রি উৎপাদন খাতে সম্পৃক্তরা এগিয়ে আসার কারণে ডিম উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। ডিম ও মাংস উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন তারা।’
সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ডিমের ভারসাম্যপূর্ণ মূল্য নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘উৎপাদনকারী, বিপণনে জড়িত এবং ভোক্তা এসব বিষয় ভারসম্য নিশ্চিত করে ডিমের দাম সমন্বয় করা হবে। পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাজার ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উইং এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডিমের মূল্য বৃদ্ধিজনিত সমস্যার সমাধান করা হবে।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘করোনা ও রমজানের সময় ভ্রাম্যমাণ ব্যবস্থায় কম দামে গরুর মাংস, ডিমসহ অন্যান্য পণ্য আমরা বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেছি। ভর্তুকি না দিয়েও কম দামে অনেক পণ্য সর্বত্র দেয়া হয়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি নজরদারিতে নিলে আরও ভারসাম্যপূর্ণ মূল্য ডিমের ক্ষেত্রে আসবে।’
করোনা পরিস্থিতিতে যারা পোল্ট্রি ও ডিম উৎপাদনে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের অনেক ভোগান্তি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ খাতে যারা বিনিয়োগ করেছে তাদের ক্ষয়-ক্ষতি ভুলে গেলে চলবে না। পোল্ট্রি ও ডিম উৎপাদনে যারা প্রান্তিক পর্যায়ে সম্পৃক্ত, তাদের করোনাসহ অন্যান্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নগদ প্রণোদনা দিয়েছে।’
ডিমের দাম সবার জন্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কোনো উদ্যোগ আছে কিনা এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘রাষ্ট্র পোল্ট্রি খাতে সম্পৃক্তদের সহায়তার চেষ্টা করছে। দেশে কেউ প্রাণী ও মাছের খাবার তৈরির কারখানা বা শিল্প স্থাপন করতে চাইলে সরকার আমদানির কর মওকুফ করে দিচ্ছে। বৈশ্বিক সংকটের সমাধান সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। সরকারের সুযোগ করে দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি থাকলে সেটা বিবেচনা করা হবে। সরকারের সাধ্যের মধ্যে পোল্ট্রি ও ডিম উৎপাদনে সম্পৃক্তদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ডিমের দামের সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের উত্তরে রেজাউল করিম জানান, ডিমের মূল্য বৃদ্ধিতে কোথাও সিন্ডিকেট থাকলে বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের সঙ্গে কথা বলে সেটা দূর করা হবে। মনোপলি ব্যবসার মাধ্যমে ডিমের দাম নির্ধারণ করে জনগণকে জিম্মি করার কোনো ব্যবসায়িক প্রচেষ্টা যদি থাকে নিশ্চয়ই সরকার সেটা মেনে নেবে না।
পাশাপাশি উৎপাদনে যে প্রকৃত ব্যয় হচ্ছে, যারা প্রচুর বিনিয়োগ করছেন তাদের ব্যয়ের চেয়ে কম মূল্যে ডিম বিক্রি করতে বলা যায় না। আবার, অতি মুনাফালোভীরা ইচ্ছেমতো মুনাফা করবে, আর মানুষকে জিম্মি করে রাখবে এটাও করতে দেয়া হবে না বলে জানান।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব নাহিদ রশীদ বলেন, ‘ডিম হচ্ছে সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের উৎকৃষ্ট একটি প্রাণিজ আমিষ। বিগত বছরগুলোর তুলনায় দেশে ডিমের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। আমরা চাই দেশের মানুষ যেন কম দামে ডিম খেতে পারে। ডিম দিয়ে তৈরি ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য রপ্তানির কথাও ভাবতে হবে।’
অনুষ্ঠানে ‘ডিম: প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. বজলুর রহমান মোল্লা।
আলোচনায় অংশ নেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) ডা. রেয়াজুল হক ও বারডেম হাসপাতালের পুষ্টি বিভাগের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ মহুয়া।
এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, বিপিআইসিসি ও ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমানও বক্তব্য রাখেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে রেজিস্টার্ড পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা ৮৬ হাজার ৫৪১টি। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ৩৫ লাখ পিস ডিম উৎপাদন হয়েছে। ১০ বছরের মধ্যে এই উৎপাদন তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে।
বিপিআইসিসির হিসাবে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ডিমকেন্দ্রিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
এই বড় শিল্পের সুরক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দেশের ৬১ জেলায় প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন (এলডিডিপি) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বলেও জানানো হয়।
আরও পড়ুন:দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আড়াই মাস পর ভারত থেকে আলু আমদানি শুরু হয়েছে।
মেসার্স প্রিয়ম এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠান আলু আমদানি করেছে।
দিনাজপুর হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী বুধবার রাত ১০টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, দেশের বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে ভারত থেকে আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা আলু আমদানি করেছেন।
এ ব্যবসায়ী জানান, বুধবার দুপুরে ভারত থেকে রাত আটটা পর্যন্ত পাঁচটি ট্রাকে ১০৮ টন আলু আমদানি করা হয়েছে।
টনপ্রতি আলু ১৮০ ডলারে আমদানি হচ্ছে, যা কেজি দরে ২১ দশমিক ৬ টাকা পড়েছে বলে জানান হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সহসভাপতি শহীদুল ইসলাম শহীদ।
তিনি বলেন, ‘আমদানিকারকরা পাইকারি বাজারে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা কেজি ধরে আমদানি করা আলু বিক্রি করবেন।
খুচরা বাজারে এ আলু পরিবহন খরচসহ ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেই খুচরা ব্যবসায়ীদের পুষিয়ে যাবে।’
হিলি স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট পারভেজ হোসেন জানান, দেশে আলুর বাজারে উর্ধ্বগতি চলমান। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারত থেকে আলু আমদানি করতে ব্যবসায়ীদের অনুমতি দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, বাজারে আমদানি বাড়লে আলুর বাজারদর নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। সে কারণেই ভারত থেকে ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ আড়াই মাস পর বুধবার পাঁচটি ট্রাকে এ আলু আমদানি করেছেন।
সর্বশেষ গত ৮ জুলাই ভারত থেকে আলু আমদানি করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের খোলা বাজারে কমেছে ইউএস ডলারের দাম।
বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যবসায়ী ও মানি চেঞ্জারদের ভাষ্য, বর্তমানে খোলা বাজারে এক ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২১ থেকে ১২২ টাকায়, যা তিন সপ্তাহ আগেও ছিল ১২৫ টাকা।
গত ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিদেশ ভ্রমণের চাহিদা কমে যাওয়া এবং খোলাবাজারে ডলারের প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ডলারের বিনিময় হার নিম্নমুখী হয়েছে।
সাধারণত ভ্রমণকারীরা খোলা বাজার থেকে বৈদেশিক মুদ্রা কিনে থাকেন। তাদের চাহিদা কমে যাওয়ায় ডলারের দামও কমতির দিকে।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে নতুন শুল্কায়নে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।
এর ফলে পেঁয়াজের দাম শিগগিরই কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস রহমান মঙ্গলবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাত আটটা নাগাদ নতুন শুল্কায়নে ভারতীয় চারটি ট্রাকে ১২৩ টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে।
হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ এবং রপ্তানিমূল্য টনপ্রতি ৫৫০ ডলার থেকে ১৪৫ ডলার কমিয়ে ৪০৫ ডলার নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি কাস্টমস সার্ভারে সংযুক্ত না হওয়ায় গত ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার ভারতের সার্ভারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি সংযুক্ত হওয়ায় সেই জটিলতা কাটিয়ে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বেড়ে দাম কমবে বলে প্রত্যাশা আমদানি-রপ্তানিকারক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের।
এর আগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ সংকটের অজুহাতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। এরপর গত মার্চ মাসে অনির্দিষ্টকালের জন্য দ্বিতীয় দফায় নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত সরকার।
ভারতের ওই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের সংকট দেখা দেয়ায় দফায় দফায় দাম বাড়তে থাকে। এরপর প্রায় ৫ মাস পর গত ৪ মে ন্যূনতম ৫৫০ ডলার রপ্তানি মূল্য এবং ৪০ শতাংশ হারে শুল্ক নির্ধারণ করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ভারত সরকার।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম শহিদ জানান, নতুন নিয়ম সার্ভারে সংযুক্ত হওয়ায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক কমে আসবে বলে তারা আশা করছেন। ফলে পেঁয়াজের দাম বাজারে অনেকাংশে কমে আসবে।
স্থলবন্দর উদ্ভিদ বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী জানান, হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহ বাড়িয়েছেন। মঙ্গলবার নতুন করে আরও চার ব্যবসায়ী এলসি খুলেছেন। এসব পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করলে পণ্যটির বাজারদর নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:দাম কমানোর অংশ হিসেবে আলু, পেঁয়াজ ও কীটনাশকে শুল্ক কমানোর কথা জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিগত জুলাই ও আগস্ট, ২০২৪ মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং এর প্রেক্ষিতে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে দেশে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটেছে যা এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। উপরন্তু দেশের পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কীটনাশক, আলু ও পেঁয়াজের মতো গুরুত্বপূর্ণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমানোর ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করেছে।
‘এ প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সার্বিক বিশ্লেষণপূর্বক কর ছাড়ের মাধ্যমে উল্লিখিত পণ্যগুলোর আমদানি সহজ করে সরবরাহ বৃদ্ধি করার উদ্যোগ গ্রহণ করত কীটনাশকের ওপর প্রযোজ্য ২৫% আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে আমদানি শুল্ক ৫% নির্ধারণ করে ও সমুদয় রেগুলেটরি শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। অধিকন্তু আলুর আমদানিতে বিদ্যমান ২৫% আমদানি শুল্ক ১০% কমিয়ে ১৫% নির্ধারণ করা হয়েছে এবং প্রযোজ্য ৩% রেগুলেটরি ডিউটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘পেঁয়াজের ওপর প্রযোজ্য ৫% রেগুলেটরি ডিউটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আলু এবং পেঁয়াজ অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদনের মাধ্যমে যেহেতু দেশের মোট চাহিদার সিংহভাগ মেটানো হয় এবং আমদানি শুল্ক কম থাকলে দেশীয় উৎপাদনের ওপর প্রযোজ্য প্রতিরক্ষণ হ্রাস পায়, ফলে কৃষককে আলু ও পেঁয়াজ উৎপাদনে উৎসাহিত করতে উল্লিখিত শুল্ক ছাড় সাময়িক সময়ের জন্য তথা আগামী ৩০ নভেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত বলবৎ করা হয়েছে।’
ডিজেল, পেট্রল ও অকটেনের মতো জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
খুলনার খালিশপুরে রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনকালে শনিবার বেলা ১১টার দিকে প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
জ্বালানি তেলের দাম কমানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডিজেলের দাম ১০৬.৭৫ টাকা থেকে ১.২৫ টাকা কমিয়ে ১০৫.৫০ টাকা, অকটেনের দাম ১৩১ টাকা থেকে ৬ টাকা কমিয়ে ১২৫ টাকা এবং পেট্রলের দাম ১২৭ টাকা থেকে ৬ টাকা কমিয়ে ১২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আজ রাত ১২টা থেকে কার্যকর হবে।’
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। এই সকল অনিয়ম ও দুনীতির মাধ্যমে দেশের অর্থ লোপাট হয়েছে, যা খুঁজে বের করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে একজন বিচারপতিকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বজনপ্রীতি ও কিছু মানুষকে সুবিধা দিতে অপ্রয়োজনে বেসরকারি খাতে অনেক অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং ওইসব প্রকল্পের ভর্তুকির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয়েছে।’
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানি ছাড়া বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর নির্বাহী ক্ষমতা বাতিল করে সরকার মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বলে জানিয়েছে ইউএনবি।
বার্তা সংস্থাটির খবরে বলা হয়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জারি করা গেজেটে বলা হয়, এ সংশোধনীর মাধ্যমে বিইআরসি আইন-২০০৩ এর ৩৪ (ক) ধারা বিলুপ্ত হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী ক্ষমতার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারকে দিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ৩৪ (ক) ধারা প্রবর্তন করেছিল।
গণশুনানি ছাড়া সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াবে না বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন এ সংশোধনী আনা হয়।
ইউএনবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সর্বশেষ এ সংশোধনীর পর সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ বা গ্যাসের দাম বাড়াতে চাইলে তাকে বিইআরসিতে প্রস্তাব দিতে হবে। সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বিইআরসি গণশুনানি করে ৯০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।
কিছুতেই যেন আটকানো যাচ্ছে না স্বর্ণের দাম। দফায় দফায় দাম বৃদ্ধিতে নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে স্বর্ণের বাজারে।
মাত্র দুদিনের ব্যবধানে আবারও দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোঘণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এবার প্রতি ভরিতে সর্বোচ্চ এক হাজার ৯২৬ টাকা বাড়িয়ে স্বর্ণের নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
দাম বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম হবে এক লাখ ২৭ হাজার ৯৪২ টাকা। দেশের ইতিহাসে এত দাম কখনই হয়নি স্বর্ণের।
বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববার এ তথ্য জানানো হয়। সংগঠনটি জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের দাম বেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার থেকে নতুন এই দাম কার্যকর হবে।
নতুন দাম অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) এক লাখ ২৭ হাজার ৮৪২ টাকা, ২১ ক্যারেটের ভরি ১ লাখ ২২ হাজার ১২২ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৪ হাজার ৬৮৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম পড়বে ৮৬ হাজার ৫৪৭ টাকা।
স্বর্ণের দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে রূপার দাম।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য