বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতার যে সমস্যা নিয়ে বারবার আলোচনা হয়, সেটির বাইরে নয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও। শেয়ারদর বাড়তে থাকলে বা কমতে থাকলে প্রায়ই তারা নিত্যনতুন সিদ্ধান্ত নিতে থাকে।
এর একটি উদাহরণ হতে পারে এসএমই মার্কেট নিয়ে। স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর জন্য চালু করা আলাদা প্লাটফর্মে কারা শেয়ার কিনতে পারবেন, তা নিয়ে এক বছরের মধ্যে তিনবার নতুন নতুন সিদ্ধান্ত জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
সংস্থাটি প্রায়ই নীতি পাল্টায়, একেকবার একেক সিদ্ধান্ত নেয়, শেয়ারদর কমতে থাকলেও বাজারে হস্তক্ষেপ করে আবার এও বলে যে, পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিকভাবে চলতে দেয়া উচিত।
বিভিন্ন সময় হুটহাট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বিএসইসি। নীতিগত সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কিছুদিন পরই আগের অবস্থানে চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আবার দেখা গেছে, বিনিয়োগকারীরা কোনো দাবি জানাতে থাকলে মানা হবে না জানিয়েও পরে সূচক পড়তে থাকলে সেটা করা হয়েছে।
বিএসইসির সাবেক একজন চেয়ারম্যান বলেছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার যেটি কাজ নয়, সেটি করতে গিয়ে বারবার বিনিয়োগকারীর আস্থায় বরং চিড় ধরাচ্ছে বিএসইসি। আবার তাদের যে কাজ, সুশাসন নিশ্চিত করা, সেটিতে তারা সফল হচ্ছে না।
পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলোর সুশাসন নেই, কথাটি বলেছেন খোদ বিএসইসির একজন কমিশনার। আরেকজন কমিশনার বলেছেন, নিজেদের স্বার্থে কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ক্ষতি করছে পুঁজিবাজারের। কিছু ব্রোকারেজ হাউস বিনিয়োগকারী, ডিএসই এমনকি বিএসইসিকে মিথ্যা তথ্য দেয়।
বিএসইসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান এসব বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, সংস্থাটির কাজ এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।
তদন্তের নির্দেশ এক দিনেই প্রত্যাহার
২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি বিএসইসি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায় ৩০ কর্মদিবসে যেসব কোম্পানির শেয়ারদর ৫০ শতাংশ বেড়েছে, সেগুলো নিয়ে তদন্ত করে তাদের রিপোর্ট দিতে হবে ডিএসইকে। এই নির্দেশনা আসার পর ১৩ জানুয়ারি ৯১ পয়েন্ট সূচকের পতন হয়। সেদিনই তদন্তের নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
স্বল্প মূলধনি কোম্পানি নিয়ে সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন নেই
আবার ২০২১ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর ক্রমাগত বেড়ে চলার পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেসব কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয়। তবে তদন্তে কী পাওয়া গেল, সেটি নিয়ে আর কিছু জানানো হয়নি।
এরপর ডিসেম্বরে সিদ্ধান্ত জানানো হয়, কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকা করতে হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ করতে হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বহু কোম্পানির মূলধন বাড়ানোর কোনো উদ্যোগই নেই।
এই নির্দেশনায় কম মূলধনি কোম্পানিগুলোর দর আবার বাড়তে থাকে সে সময়। কিন্তু যেসব কোম্পানির মূলধন কম, তা বাড়ালেই কোম্পানির উন্নতি হবে, এই নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রি-ওপেনিং সেশন
২০২০ সালের অক্টোবরে পুঁজিবাজারে প্রি-ওপেনিং সেশন এবং পোস্ট-ওপেনিং সেশনের চালু করা হয়। লেনদেন শুরুর ১৫ মিনিট আগে বাই বা সেল অর্ডার বসিয়ে রাখা যেত। বাজার যখন উঠছিল, তখন এ নিয়ে কথা হয়নি। তবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যখন সংশোধন শুরু হয় তখন অন্যান্য নানা বিষয়ের পাশাপাশি এটি নিয়েও কথা উঠতে থাকে।
পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতনের মধ্যে গত ২২ মে প্রি-ওপেনিং সেশন বন্ধ করে দেয়া হয়। সে সময় এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে কারসাজির বিষয়টি উঠে আসে। লেনদেন শুরুর আগেই শেয়ারের সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন দরে বিপুলসংখ্যক শেয়ার বসিয়ে রাখা হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে এসব কার্যাদেশ বাতিল কিংবা পরিবর্তন হয়ে যায়। কিন্তু লেনদেনের শুরুতেই শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আতঙ্কে বাজারে দরপতন হতে থাকে।
কারসাজির সুযোগ করে দেয়ার সন্দেহে যেটি বন্ধ করা হয়েছিল, সেটি আবার চালু হয়েছে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে। যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, তবে স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং ইঞ্জিনের চাপ কমানো।
এবার প্রি-ওপেনিং সেশনের সময় রাখা হয়েছে ৫ মিনিট। অর্থাৎ সকাল সাড়ে ৯টায় লেনদেন শুরুর ৫ মিনিট আগে থেকেই শেয়ার কেনাবেচার অর্ডার দিয়ে রাখা যাবে ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে। আর পোস্ট ক্লোজিং সেশনের সময় ১টা ৫০ মিনিট থেকে ২টা পর্যন্ত।
এসএমইতে বিনিয়োগসীমা পরিবর্তন
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর এসএমই বোর্ড চালুর পর বেশ আশাবাদী ছিল বিএসইসি। সেখানে শেয়ার কেনাবেচা করার সুযোগ ছিল সীমিত। প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল, যাদের বিনিয়োগ কমপক্ষে এক কোটি টাকা, তারাই সেখানে বিনিয়োগ করতে পারবেন।
এতে দেখা যায়, বিনিয়োগকারীর সংখ্যা খুবই কম, আর এই বোর্ডের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর সেভাবে বাড়ছিল না।
এরপর যোগ্য বিনিয়োগকারী হওয়ার শর্ত শিথিল করা হয়। প্রথমে জানানো হয়, যাদের বিনিয়োগ ৫০ লাখ টাকা, তারাই সেখানে শেয়ার কেনাবেচা করতে পারবেন। এতেও যখন শেয়ারগুলো দর হারাতে থাকে।
পরে চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিনিয়োগসীমা ৫০ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ২০ লাখ টাকায় বিনিয়োগ নামিয়ে আনে বিএসইসি।
এরপর গত ২৮ মার্চ সিদ্ধান্ত হয়, যোগ্য বিনিয়োগকারী হতে কাউকে আবেদন করতে হবে না। যার বিনিয়োগ ২০ লাখ টাকা, তাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এই মার্কেটে শেয়ার কেনাবেচার জন্য যোগ্য বিনিয়োগকারী হিসেবে নিবন্ধিত করে নেবে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ।
বিনিয়োগসীমা কমানোর পর এসএমই বোর্ডের শেয়ার বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে, সেই সঙ্গে বাড়ে লেনদেন। তবে মূলবাজারে হয় উল্টো চিত্র। কমে যেতে থাকে লেনদেন ও শেয়ারদর।
বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্ত হলো এই বোর্ডে শেয়ার কেনাবেচা করতে হলে বিনিয়োগকারীর কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে।
যারা আগের নির্দেশনার আলোকে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ দিয়ে যোগ্য হয়েছেন, তাদের যোগ্যতা ধরে রাখতে বিনিয়োগ আরও ১০ লাখ টাকা বাড়াতে হবে। এ জন্য তাদের সময় দেয়া হয়েছে তিন মাস।
যারা এই শর্ত পূরণ করতে পারবে না, তাদের মধ্যে যাদের কাছে এসএমই খাতের শেয়ার আছে, সেসব শেয়ার শুধু তারা বিক্রি করতে পারবেন।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারও বিনিয়াগ ৩০ লাখ টাকা হলে তাকে এসএমইর জন্য যোগ্য বিনিয়োগকারী হতে আবেদন করতে হবে না। প্রতি প্রান্তিকে এসএমইতে লেনদেনের যোগ্য করতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিনা খরচে রেজিস্ট্রেশন করা হবে। এ জন্য প্রতি প্রান্তিকে সিডিবিএল বা ডিপি বিনিয়োগকারীর বিস্তারিত তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দেবে।
দরপতনের সীমা বারবার পরিবর্তন ও ফ্লোর প্রাইস
মার্চের শুরুতে ব্যাপক দরপতনের মধ্যে গত ৮ মার্চ বিনিয়োগকারীদের রক্ষায় স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের নির্দেশের পাশাপাশি দর কমার সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করেছিল কমিশন।
এই নির্দেশ জারির পর দিন ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার। তবে এই উত্থান বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বিশেষ করে রোজায় এপ্রিলের শুরু থেকে পুঁজিবাজার ক্রমেই নিম্নমুখী হতে থাকে। বহু কোম্পানির শেয়ারগুলো প্রায় প্রতিদিনই ২ শতাংশ করে দর হারাতে থাকে। কিন্তু এই পড়তি দামেও শেয়ার কেনার ক্রেতা পাওয়া যায়নি।
একপর্যায়ে বাজারের লেনদেন এক হাজার কোটি টাকা থেকে কমে ধীরে ধীরে নেমে আসে ৪০০ কোটি টাকার কমে।
এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের একটি সংগঠন পুঁজিবাজারের আবার ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেয়ার দাবি ওঠে, যদিও তা নাকচ করে দেয় বিএসইসি।
এপ্রিল মাসে রোজার শুরু থেকে পতনের মধ্যে পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক বিভিন্ন ফেসবুক পেজে আবার ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দাবি উঠতে থাকে। পরে সেই দাবি নিয়ে ১৮ এপ্রিল বিএসইসিতে যায় পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। সে সময় বিএসইসি তাদের না করে দেয়।
২০ এপ্রিল এক দিনে কোনো কোম্পানির শেয়ারের দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করে বিএসইসি। শেয়ারের দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা আগের মতোই ১০ শতাংশ রাখা হয়।
এরপর বাজার পরিস্থিতি অবনতি হলে ২৫ মে আবারও দরপতনের সীমা ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়।
এতে পতন রক্ষা করতে না পেরে সর্বশেষ ২৮ জুলাই ফ্লোর প্রাইস আরোপের ঘোষণা দেয় বিএসইসি। জানানো হয় পরের কার্যদিবস রোববার থেকে ফ্লোর প্রাইসের পাশাপাশি এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ থাকবে না।
‘বিএসইসির যেটা কাজ নয়, সেটাতে গুরুত্ব’
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘বিএসসির কাজ হচ্ছে সুষ্ঠুভাবে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ক্যাপিটাল মার্কেট বা স্টক মার্কেট পরিচালনা করা। রেগুলেশনস অনুযায়ী স্বচ্ছভাবে ট্রেড হচ্ছে, সেটা দেখাশোনা করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে সুষ্ঠুভাবে লেনদেন হলে ইনডেক্স যেখানে যাবার সেখানে যাবে। যার যে প্রাইসে যাবার সেখানে যাবে। ইনডেক্স নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ নয়।
সুশাসন নিয়ে বিএসইসির একজন কমিশনার যে বক্তব্য রেখেছেন, সেটি নিয়েও সমালোচনা করেন ফারুক সিদ্দিকী। বলেন, ‘খুব বেশি হলে কয়েকটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে এই গভর্ন্যান্স আছে। আর ব্যাংকের মধ্যে কয়েকটি দেখা যায়। তাছাড়া বাংলাদেশের কোনো ক্ষেত্রে গভর্ন্যান্স নেই। তবে কোম্পানিতে কর্পোরেট গভর্ন্যান্স নেই, সেটা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কেউ বলতে পারেন না, কারণ তাদের কাজ হচ্ছে এটা এনসিওর করা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘কোম্পানির পরিচালকরা এবং অডিটররা সঠিক তথ্য তুলে ধরে না। এখানে বেশির ভাগ উদ্যোক্তা আসে শেয়ার বেচার জন্য। সেটা হয়ে গেলে ড্যাম কেয়ার।
‘সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে ডিএসই, বিএসইসি মিলে। কিন্তু তারা বলছে, আমরা তো গাইডলাইন দিয়ে রেখেছি। আমি বিনিয়োগকারীদের বলব, যারা গভর্ন্যান্স মেনে চলে তাদের শেয়ার হোল্ড করতে।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কোম্পানির তালিকাভুক্তির পরের বছর বা কয়েক বছর পরে জালিয়াতি, মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের ঠকানোর বিষয় উঠে আসছে। তাহলে যারা অনুমতি দিয়েছিল তারা তো দায় এড়াতে পারে না
‘অডিটরের বিষয়গুলো দেখবে ফিন্যানশিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি)। আর সার্বিক বিষয়গুলো দেখবে রেগুলেটর। রেগুলেটরকে অনেক পাওয়ার দেয়া আছে। কোথায় কী অনিয়ম, সেগুলো খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়া তাদের দায়িত্ব।’
‘কোম্পানির আসার সময় অডিট ঠিকমতো হয়েছে কি না, ট্যাক্স-ভ্যাট দেয় কি না- এসব বিষয় ভালো করে যাচাই করে অনুমোদন দিলে খারাপ কোম্পানি আসার সুযোগ পায় না।’
আবু আহমেদ বলেন, ‘শেয়ারের পতনরোধ করা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ নয়। পত্রিকায় দেখলাম, ইএসএ ও পশ্চিমের আরও কয়েকটি মার্কেটে ব্যাপক পতন হয়েছে। কই, তারা তো ফ্লোর প্রাইস দেয়নি।’
বিনিয়োগকারীরা ক্ষুব্ধ
মাসুম জামান নামের এক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিনিয়োগ শিক্ষা নাই, লং টার্মে বিনিয়োগ করেন না বলে সবাই। বিএসইসি তো বিনিয়োগকারীদের চেয়ে আরও অস্থির।’
সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যখন মার্কেট পড়ল, তখন ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দাবি জানানো হলো, বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতারা মিটিং করে চিঠি দিল, কিন্তু তখন ফ্লোর প্রাইস দিল না। পরে আবার ঠিকই দিল, মাঝখান থেকে আমাদের টাকাগুলো গেল।
‘আবার এই যে প্রি ওপেনিং সেশন চালু করল, চালু করবে তো কদিন আগে কারসাজির কথা বলে বন্ধ করল কেন?’
আরেক বিনিয়োগকারী ফিদুল বিশ্বাস বলেন, ‘এসএমই বোর্ডের শেয়ার নিয়ে কী হচ্ছে দেখেছেন তো? বিএসইসি এলিজিবল ইনভেস্টর হওয়ার জন্য বিনিয়োগের সীমা কয় দফায় পরিবর্তন করল। এতে কী হলো? এসএমই মার্কেটের শেয়ারদর বেড়ে আকাশে উঠল। এভাবে বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের মানে কী? উনারা কি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন না?’
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর এক ব্রোকার বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেগুলো নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বা বাস্তবায়ন করেছে তা অবশ্যই পুঁজিবাজারের স্বার্থেই করেছে। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা পাল্টানোর ক্ষেত্রে দ্রুততা বা ধীরগতি দেখা গেছে কিছু ক্ষেত্রে। এসব ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আরও বেশি পরিণত আচরণ আশা করে সবাই।’
বিএসইসি কী বলছে
বারবার সিদ্ধান্ত- এ বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘ক্যাপিটাল মার্কেটের রেগুলেটর হিসেবে বিভিন্ন সময়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে, সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আপ-ওয়ার্ড মার্কেটে এক রকম, ডাউন-ওয়ার্ড মার্কেটে আরেক রকম সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বাজারের লিক্যুইডিটি, বাজারের সার্বিক অবস্থা, বাজারে ট্রান্সপারেন্সি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, যে ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, সেই সিচুয়েশন চেঞ্জ হলে, সেই সিচুয়েশনে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়। রেগুলেটরের তো এটাই কাজ। পলিসি লেভেলে যুগোপযোগী করে বিভিন্ন সময় বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ জন্য এটা সুপারভাইজ করতে রেগুলেটরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
‘কোনো কিছু যদি পরিবর্তন করা লাগে, তাহলে পাবলিক ইস্যু রুলস কতবার পরিবর্তন হচ্ছে? সেই একবার করে রেখেছিল, সেটাই তো সারাজীবন চলতে পারে না। বিভিন্ন পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যে কারণে কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা আইনের মধ্যে থেকেই করেছে। আমরা মনে করছি, তা পারফেক্টলিই নিচ্ছে।’
কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রভাব বাজারে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএসইসির মুখপাত্র। তিনি বলেন, ‘এর সুফল আমরা মার্কেটে বর্তমানে দেখতে পাচ্ছি এবং আগামী দিনেও দেখতে পারব। রিফরমেশন একটা কনটিনিউয়াস প্রসেস, এটা চলতে থাকবে। বিভিন্ন সময়ে এটা যুগোপযোগী করার জন্য রিফর্ম হবে। সম্প্রতি কমিশন যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তা ক্যাপিটাল মার্কেটের জন্য হেল্পফুল এবং কাঙ্ক্ষিত ক্যাপিটাল মার্কেট গ্রোথ অর্জনে সহায়ক হবে।’
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির আয় বা উৎপাদন বাড়ার বিষয়ে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। দরবৃদ্ধি পাওয়ার মতো কোনো খবরও সামনে আসেনি। তবে ৬ মাসে ৫ গুণের বেশি দরবৃদ্ধির পর জানা গেল মুনাফা বৃদ্ধি এবং আরেকটি কোম্পানির অংশীদারত্ব কিনছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
কোম্পানিটির নাম সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা। মালিকানায় রয়েছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটুর পরিবার। গত ৬ মাসে সি পার্লের শেয়ারদর বেড়েছে ৫১৮ শতাংশের বেশি। আর চলতি অর্থবছরের দুই প্রান্তিকে কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে ৩৮৬ শতাংশের বেশি।
অনেকেই মনে করেন, দরবৃদ্ধির পালে হাওয়া দিয়েছে মুনাফা বৃদ্ধি ও আরেকটি কোম্পানির অংশীদারত্ব কেনার বিষয়টি। তবে এ খবর সামনে আসার কয়েক মাস আগে থেকেই হু হু করে দর বাড়ছে সি পার্লের।
বিনিয়োগকারীদের অনেকে বলছেন, কোম্পানির এসব ইতিবাচক খবর আগেই ফাঁস করে শেয়ারদর বাড়িয়ে নেয়ার কৌশল নতুন নয়। এভাবে দর বাড়িয়ে পরবর্তী সময় শেয়ার বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নেন তারা।
সম্প্রতি সি পার্লকে বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডসের (বিডি ওয়েল্ডিং) ৩০ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণের অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। উৎপাদন বন্ধ ও বিগত ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করা বিডি ওয়েল্ডিংয়ের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে বর্তমানে ৩১ দশমিক ০১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ২৫ দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার আইসিবির কাছে আছে। সি পার্লের ৩০ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণের জন্য আইসিবির কাছে থাকা সব শেয়ার সি পার্লের কাছে বিক্রি করে দেয়া হবে। বাকি ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ শেয়ার এমডি ও পরিচালকদের কাছ থেকে বিক্রি করা হবে।
যদিও ওই কোম্পানিটি সরাসরি সি পার্ল অধিগ্রহণ করছে না। এর অংশীদারত্ব কিনবেন সি পার্লের পরিচালক মেয়র ইকরামুল হক টিটু, তার ভাই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমিনুল হক শামীম ও ভাতিজা সামিউল হক সাফা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সি পার্লের কোম্পানি সচিব আজাহারুল মামুন বলেন, ‘কোম্পানির মালিকানা আমরা অর্থাৎ সি পার্ল কিনছে এমন নয়, আমাদের মালিকপক্ষ ব্যক্তিগতভাবে কিনছেন।’
গত মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে কোম্পানি জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) নিট মুনাফা হয়েছে ৪২ কোটি ২৭ লাখ টাকা, অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৫০ পয়সা। আগের অর্থবছরে একই সময়ে নিট মুনাফার পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, অর্থাৎ ইপিএস ছিল ৭২ পয়সা। সেই হিসাবে ৬ মাসে ইপিএস বেড়েছে ২ টাকা ৭৮ পয়সা বা ৩৮৬ দশমিক ১১ শতাংশ।
আর চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) নিট মুনাফা হয়েছিল ২৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা, অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ২৩ পয়সা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে নিট মুনাফা হয়েছিল ৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বা ইপিএস ছিল ৮১ পয়সা। এ হিসাবে ইপিএস বেড়েছে ১ টাকা ৪২ পয়সা বা বা ১৭৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ১৭ পয়সা।
অন্যদিকে ২০২২ সালের ৩১ জুলাইয়ে কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ৪৫ টাকা ৯০ পয়সা। সেখান থেকে ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারিতে দর দাঁড়ায় ২৮৩ টাকা ৮০ পয়সায়। অর্থাৎ এই সময়ে বেড়েছে ২৩৭ টাকা ৯০ পয়সা বা ৫১৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এরপর কয়েক দিন দরপতন হলেও বুধবার ৫ টাকা ৭০ পয়সা ও বৃহস্পতিবার ১ টাকা ৮০ পয়সা বেড়ে শেয়ারদর অবস্থান করছে ২৭১ টাকায়।
কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিষয়ে মাসুম জামান নামের বিনিয়োগকারী বলেন, ‘এ রকম ক্ষেত্রে যেমনটা দেখেছি যে, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আগেই পজেটিভ নিউজগুলো লিক করে শেয়ারদর বাড়িয়ে নেয়। তার পর শেয়ার বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নেয়। অতীতে এ রকম অনেক হয়েছে।’
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী বলেন, ‘এক দিনে দর বাড়েনি। অনেক দিন থেকেই দর বাড়ছে সি পার্লের। নতুন কোম্পানি অধিগ্রহণের খবরে বেড়ে থাকতে পারে।’
শেয়ারদর বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে সি পার্লের কোম্পানি সচিব আজাহারুল মামুন বলেন, ‘মার্কেটে কেন শেয়ারদর বাড়ছে, সেটার পেছনে অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আমাদের কাছে নেই।’
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে দরপতনের হিড়িকের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি বাড়তি নজরদারি ব্যবস্থায় (এএসএম) রাখা হয়েছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধনকুবের গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে।
ভারতের মুম্বাইভিত্তিক বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (বিএসই) ও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই) থেকে বৃহস্পতিবার পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার এ খবর জানায় এনডিটিভি।
নজরদারিতে থাকা প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো- আদানি এন্টারপ্রাইজ, আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকনোমিক জোন এবং আম্বুজা সিমেন্টস।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ গ্রুপের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে পুঁজিবাজারে লেনদেনে প্রতারণা ও শেয়ার দরে কারসাজির অভিযোগ করা হয়। এর পর থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দরে ধস নামে।
ওই প্রতিবেদনকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে আদানি গ্রুপ বলেছে, তাদের কোম্পানিগুলো সব আইন মেনে চলছে।
বেশ কয়েকটি বিষয়ের ভিত্তিতে কোনো কোম্পানিকে এএসএমের আওতায় রাখা হয়। এর মধ্যে রয়েছে কোম্পানির আয়ের ওপর গ্রাহকদের অংশীদারত্ব, প্রাইস-আর্নিং রেশিও ইত্যাদি।
এনএসই ও বিএসই জানিয়েছে, আদানি গ্রুপের তিনটি কোম্পানি নির্ধারিত মানদণ্ডে পড়ায় এগুলোকে এএসএমের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে অন্যান্য দিনের মতো বৃহস্পতিবারও আদানি গ্রুপের হোল্ডিং কোম্পানি আদানি এন্টারপ্রাইজেসের শেয়ার ২৬ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে। গ্রুপের অন্য কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দরপতনও অব্যাহত রয়েছে।
সব মিলিয়ে ছয় দিনে পুঁজিবাজার থেকে কোম্পানিগুলোর ৮ লাখ ৭৬ হাজার কোটি রুপি উধাও হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:চারটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফেরার হওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে আসার পর আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয়েছে ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (আইসিবি)। তবে এবার জানা গেল লোপাট করা অর্থের পরিমাণ আরও বেশি।
২০৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (ইউএফএস) লিমিটেডসহ ১১ জনের নাম উল্লেখসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে আইসিবি। ১১ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন থানায় করা মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) খতিয়ে দেখছে।
আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ইউনিভার্সেল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে আইসিবির পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে।’
মামলার নথিতে বলা হয়েছে, অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতারণামূলকভাবে টাকা আত্মসাৎ করার অপরাধ চিহ্নিত হয়েছে। আত্মসাৎকৃত ২০৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা উদ্ধার করতে এ মামলা করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ইউএফএস, ইউএফএসের চেয়ারম্যান সৈয়দ আলমগীর ফারুখ চৌধুরী, কোম্পানির এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীর, পরিচালক ইসরাত আলমগীর, আলিয়া হক আলমগীর, মাহিদ হক, মোহাম্মদ জাকির হোসেন, মোহাম্মদ মাসুম চৌধুরী, মোসাম্মত উম্মে ইসলাম সোহানা, সৈয়দা শেহরীন হোসেন, তারিক মাসুদ খান, সৈয়দা মেহরীন হুসেইনসহ অজ্ঞাতনামাসহ অনেকে।
এর আগে চারটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা নিয়ে ১৩ অক্টোবর দুবাই পাড়ি জমান প্রতিষ্ঠানটির এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীর। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। ২০১৮ সাল থেকে তহবিল সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির তদন্তে উঠে আসে।
এই জালিয়াতির ক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রতিবেদন জালিয়াতি এবং ভুয়া এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিড রেট) দেখিয়ে বিএসইসিকে অন্ধকারে রাখা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ৪ বছর নিষ্ক্রিয় ছিল ফান্ডের ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান (গ্যারান্টি দেয়া প্রতিষ্ঠান) আইসিবি।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি এ খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ২ জানুয়ারি এমডির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চায় হাইকোর্ট। পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীরের দুবাই পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানাতে নির্দেশ দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও আইসিবিকে ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়।
৩ জানুয়ারি ইউএফএস ও এর এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীরসহ ১৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত বা জব্দ করা হয়। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন বন্ধে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এ কথা জানিয়ে চিঠি পাঠায়।
এ তালিকায় নাম আছে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনস লিমিটেড, ইউএফএসের এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীর, আলিয়া হক আলমগীর, মাহিদ হক, তারেক মাসুদ খান, মোহাম্মাদ জাকির হোসেন, মোসা. উম্মে ইসলাম সোহানা, ইশরাত আলমগীর, সৈয়দা মেহরীন রহমান, সৈয়দ আলমগীর ফারুক চৌধুরী ও সৈয়দা শেহরীন হুসাইনের।
অ্যাকাউন্ট স্থগিত রাখার তালিকায় আরও আছে- ইউএফএস-আইবিবিএল শরিয়া ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড ৩৮, ইউএফএস-ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ড এবং ইউএফএস-পদ্মা লাইফ ইসলামিক ফান্ড।
এদিকে বিনিয়োগকারী এবং পুঁজিবাজারের স্বার্থে ইউএফএস ও তাদের সব ফান্ডের নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে শেয়ারবাজারে নিষিদ্ধ করা হয়। বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়, ইউএফএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় চারটি ফান্ড ইউএফএস-আইবিবিএল শরিয়া ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পদ্মা লাইফ ইসলামিক ইউনিট ফান্ড ও ইউএফএস-ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ডের নিরীক্ষা করে আসছে আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস। নিরীক্ষক মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর অনুসন্ধানের জন্য তদন্তের শুনানিতে উপস্থিত হয়নি। এ থেকে স্পষ্ট যে, তদন্ত কমিটির সঙ্গে নিরীক্ষক অপেশাদার আচরণ করেছে। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর ধারা ২০-এ দ্বারা প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ম্যানেজার, ট্রাস্টি, কাস্টোডিয়ান, ইস্যুকারী এবং সম্পদ ব্যবস্থাপককে নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে যে, নিরীক্ষক আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে ইউএফএসের অধীনে থাকা কোনো মিউচ্যুয়াল ফান্ডের নিরীক্ষার অনুমতি দেয়া হবে না। কমিশন আরও নির্দেশ দিয়েছে, নিরীক্ষককে কোনো মিউচুয়াল ফান্ড এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির নিরীক্ষক হতে অনুমতি দেবে না কমিশন। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত জারি থাকবে।
এ ছাড়া কোম্পানিটির ফান্ড সংশ্লিষ্টদের কাছে ২৩টি তথ্য চায় কমিশন, যা ৮ জানুয়ারির মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছিল। বিএসইসির চিঠিতে যেসব তথ্য চাওয়া হয়ে, সেগুলো হলো-ইউএফএসের ব্যবস্থাপনার ইউএফএসইপিএল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং ইউএফএসইপিএল প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ডের আগের ও বর্তমানের সব আর্থিক প্রতিবেদন, ফান্ড দুটির সব ব্যাংক স্টেটমেন্টের তথ্য, ফান্ড দুটিতে উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ ও তাদের ব্যাংক হিসাবের স্টেটমেন্ট, ফান্ডগুলোর গ্রাহক ও তাদের টাকার পরিমাণের তথ্য, ফান্ড দুটিতে বিনিয়োগ কমিটির সদস্যদের তালিকা।
সে সঙ্গে ফান্ড দুটির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যেসব ব্যবসায় বিনিয়োগ আছে সেগুলো ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ জমা দিতে বলা হয়। ফান্ডগুলোর পোর্টফোলিওতে থাকা কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থার বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়।
ফান্ড দুটির বিনিয়োগের অবস্থা এবং নির্দিষ্ট সীমার বিষয়ে প্রকাশ করা তথ্য, অতালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ফান্ড দুটির বিনিয়োগের বিষয়ে ট্রাস্টি থেকে প্রাপ্ত কনসেন্ট লেটার, ফান্ডগুলোর সম্পদ মূল্য ও শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা ফি এবং সংশ্লিষ্ট সব তথ্য কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছিল।
ব্যাংকগুলো দেশের ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারদের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে যে ঋণ দিয়ে থাকে তার ওপর প্রভিশন ১ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দেশের পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতের বিনিয়োগ টানতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে এর কতটা ইতিবাচক প্রভাব প্রভাব তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি) থেকে সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়।
তাতে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক বা স্টক ডিলারদের ঋণ দিয়ে থাকে। সেখানে আগে অশ্রেণিবদ্ধ ঋণে ২ শতাংশ প্রভিশন রাখার নিয়ম ছিল। এখন থেকে ১ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হবে।
বিআরপিডি’র পরিচালক মাকসুদা বেগম বলেন, ‘দেশের আর্থিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগে থেকেও এমনটা দাবি ছিল। দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকে আমরা একটু আকর্ষণীয় করতে চেয়েছি। আমরা দেখলাম যে বিবেচনা করার মতো সুযোগ আছে। এর ফলে ব্যাংকের যে খুব একটা লোকসান হবে তা কিন্তু না। বরং এর ফলে দেশের পুঁজিবাজার যদি চাঙ্গা হয় তাহলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।’
এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর জন্য দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আর একটু আকর্ষণীয় করে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এর ফলে যে খুব বেশি ইমপ্যাক্ট হবে তা আমি মনে করি না।’
দ্য এসোসিয়েশন অফ ব্যাংকারস, বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, ‘ব্যাংক কোথায় কত বিনিয়োগ করবে তা নির্ভর করছে তাদের পরিকল্পনার ওপর। এই পদক্ষেপে যে বড় কোনো পরিবর্তন হবে সেটা আমি বিশ্বাস করি না।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘এখন আগের তুলনায় প্রভিশন কম করতে হবে। আগে ব্যাংকগুলো ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক বা স্টক ডিলারদের ঋণ দিলে এর ওপর ২ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হতো। অর্থাৎ কোনো ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা ঋণ দিলে তাকে ২ কোটি টাকা প্রভিশন রাখতে হতো। এখন ১০০ কোটি টাকা ঋণ দিলে ১ কোটি টাকা প্রভিশন রাখতে হবে। ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে ঋণ ১০০ কোটি টাকাই দিচ্ছে। শুধু ব্যাংক প্রভিশন কম রাখবে।’
আরও পড়ুন:টানা পতনের পর দুই কর্মদিবসে উত্থান তো বটেই, শত কোটি টাকার বেশি লেনদেন বৃদ্ধিতে কিছুটা স্বস্তি মিলছে পুঁজিবাজারে। দরপতনের সংখ্যা কমে দর বৃদ্ধির কাছাকাছি চলে এসেছে। ফ্লোর প্রাইসে লেনদেনের সংখ্যা বেড়েছে মাত্র একটি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৬ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে বৃহস্পতিবার। এদিন হাতবদল হয়েছে ৬৮৭ কোটি ১২ লাখ ২২ হাজার টাকার শেয়ার, যা আগের দিনের চেয়ে ১০৬ কোটি ৪৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা বেশি। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫৮০ কোটি ৬৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
২০২০ সালে করোনা মহামারির পর গত ডিসেম্বরে লেনদেন নেমে আসে ২ শ’ থেকে ৩ শ’ কোটির ঘরে। ৪ জানুয়ারি বাজার-সংশ্লিষ্টদের ডেকে বৈঠক করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বাজার ভালো করতে সব পক্ষকে নামতে বলার পর লেনদেন বাড়তে থাকে। ১৮ জানুয়ারি হাজার কোটি ছুঁই ছুঁই লেনদেন হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণায় বাজার ছোটে উল্টো পথে। পরের ১১ কর্মদিবসের ৯ দিনই লেনদেন হয় ৫ শ’ থেকে ৬ শ’ কোটির ঘরে।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবারের চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল ২৫ জানুয়ারি। ওইদিন হাতবদল হয়েছিল ৭৩৪ কোটি ৬০ লাখ ৯ হাজার টাকা।
আগের দিন সূচক ও লেনদেন বাড়লেও দর বৃদ্ধির তুলনায় দরপতন হয়েছিল ৩ গুণের বেশি। বৃহস্পতিবার দর বৃদ্ধির তুলনায় দরপতন বেশি ছিল ১২টি। তবে অপরিবর্তিত দরে লেনদেনের সংখ্যা বেশি ছিল, যার সবই ফ্লোর প্রাইসে অবস্থান করছে।
লেনদেন হয়নি ৫৬টি কোম্পানির। এর মধ্যে একটির লেনদেন বন্ধ ছিল রেকর্ড ডেট সংক্রান্ত কারণে। লেনদেন হওয়া ৩৩৫টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৭৯টির। বিপরীতে দরপতন হয়েছে ৯১টির। এ ছাড়া আগের দিনের চেয়ে ১টি বেড়ে অপরিবর্তিত দরে বা ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হয়েছে ১৬৫টির।
সপ্তাহের প্রথম তিন কর্মদিবসে যতটুকু সূচক পড়েছিল, দুই দিনে তার কাছাকাছি ফিরে এসেছে। রবি, সোম ও মঙ্গলবার মিলিয়ে ২৯ পয়েন্ট সূচক পতনের পর দুই দিনে বাড়ল ২৭ পয়েন্ট। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ১৭ পয়েন্ট বেড়ে সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৯৪ পয়েন্টে, যা ২৬ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। অর্থাৎ গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসের চেয়ে সূচক এখনও ২ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে।
লেনদেনের বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস থেকে কোম্পানিগুলো বের হয়ে আসছে। তাছাড়া বাজারের সব কটি ইনডিকেটরই ভালো যাচ্ছে। আশা করছি, বাজার আরও ভালো হবে।’
আরও পড়ুন:মঙ্গলবার পতনের মধ্য দিয়ে টানা তিন দিন মূল্যসূচকের পতনে লেনদেন হলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। দরপতন হলেও বেশিরভাগ কোম্পানির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। কমেছে টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণ। আরেক বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে।
ডিএসইতে এদিন ৫৭৩ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ৬৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা বেশি। আগের দিন ডিএসইতে ৫০৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৬৭ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২১৯ পয়েন্টে।
ডিএসইতে ৩২৭টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩১টির, কমেছে ১৩৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬১টির। আরেক বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিচ সূচক সিএএসপিআই ১৯ পয়েন্ট কমেছে। লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সোমবার মূল্য সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। আরেক বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্রে লেনদেন শেষ হয়েছে।
ডিএসইতে ৫০৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা বেশি। রোববার ডিএসইতে ৪৮৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৭৮ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৭০ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২৫ পয়েন্টে।
৩৩৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩২টির, কমেছে ১৩৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭০টির।
আরেক বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৭ পয়েন্ট কমেছে। ১২ কোটি ৮৮ লাখ ৩২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
মন্তব্য