সংকটকালীন অর্থনীতিতে ব্যাংকখাতের গুরুত্ব এবং ব্যাংকের পতন ঠেকানো কেন জরুরি তা নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ গবেষণার জন্য অর্থনীতিতে নোবেল জয় করেছেন আমেরিকার অর্থনীতিবিদ বেন বারনাঙ্কে, ডগলাস ডায়মন্ড ও ফিলিপ ডাইবভিগ।
বেন বারনাঙ্কে ২০০৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ডায়মন্ড শিক্ষকতা করছেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর বুথ স্কুল অফ বিজনেসের ফাইন্যান্সের অধ্যাপক। আর ডাইপভিগ সেইন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ওলিন বিজনেস স্কুলের ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক।
সোমবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস ‘এসভেরিজেস রিকসব্যাংক প্রাইজ ইন ইকোনোমিক সায়েন্সেস’ শীর্ষক এ পুরস্কার ঘোষণা করে। এর মধ্য দিয়েই শেষ হলো এবারের সব ক্যাটাগরিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা।
নোবেল কমিটি বলেছে, এই তিন অর্থনীতিবিদের গবেষণা সমাজ কীভাবে আর্থিক সংকট মোকাবিলা করে তা বুঝতে সাহায্য করে। বিশেষ করে তারা সংকটের সময় অর্থনীতিতে ব্যাংকগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়ার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটিয়েছেন৷ তাদের গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ব্যাংক ধস ঠেকানো কেন জরুরি সেটা তারা দেখিয়েছেন।
নোবেল কমিটি আরও বলেছে, ‘আধুনিক ব্যাংকিং গবেষণা স্পষ্ট করেছে, কেন আমাদের ব্যাংক প্রয়োজন, সংকটের সময় কীভাবে এই খাতকে কম ঝুঁকিপূর্ণ রাখা যায় এবং কীভাবে ব্যাংকের পতন আর্থিক সংকটকে আরও ঘণীভূত করে। বেন বারনাঙ্কে, ডগলাস ডায়মন্ড ও ফিলিপ ডাইবভিগ ১৯৮০-এর দশকে এই গবেষণার ভিত্তি দিয়েছিলেন। আর্থিক বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক সংকট মোকাবিলায় তাদের বিশ্লেষণগুলো বাস্তবতার বিচারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
‘অর্থনীতি সচল রাখতে হলে সঞ্চয়কে বিনিয়োগের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে একটি দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতি বিদ্যমান। অপ্রত্যাশিত কোনো ব্যয়ের মুখোমুখি হলে সঞ্চয়কারীরা তাদের সঞ্চিত অর্থ তাৎক্ষণিক তুলতে চান, অন্যদিকে বাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ীদের সামনে এই নিশ্চয়তা থাকা দরকার যে, তারা ঋণ নেয়ার পর নির্ধারিত সময়ের আগে পরিশোধ করতে বাধ্য হবেন না।’
বেন বারনাঙ্কে, ডগলাস ডায়মন্ড ও ফিলিপ ডাইবভিগ তাদের দেয়া তত্ত্বে দেখিয়েছেন, ব্যাংকগুলো কীভাবে এ সমস্যার সর্বোত্তম সমাধান দেয়। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তারা অনেক সঞ্চয়কারীর কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করে, আমানতকারীরা যখন ইচ্ছা তাদের অর্থ তুলতে পারেন, পাশাপাশি ঋণগ্রহীতারা দীর্ঘমেয়াদে ঋণ পান।
নোবেল কমিটি বলেছে, ‘তাদের (৩ নোবেলজয়ী) বিশ্লেষণ এটাও দেখিয়েছে, দ্বান্দ্বিক দুটি কার্যক্রম চালাতে গিয়ে ব্যাংকগুলো তাদের আসন্ন ধস সম্পর্কিত গুজবের মুখেও পড়তে পারে। বিপুলসংখ্যক সঞ্চয়কারী একযোগে তাদের আমানত তুলতে ছুটে গেলে গুজবটি পরিপূর্ণ মাত্রা পায় এবং এভাবে চালু একটি ব্যাংক ধসে পড়তে পারে। এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে সরকার আমানত বিমা প্রদান এবং শেষ অবলম্বন হিসেবে ঋণদাতার ভূমিকা নিয়ে ব্যাংকের পতন ঠেকাতে পারে।’
এর আগে গত বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ডেভিড কার্ড, জোশুয়া ডি অ্যাংগ্রিস্ট ও গুইডো ডব্লিউ ইমবেনস।
চলতি বছরের নোবেল পুরস্কার ঘোষণা শুরু হয় গত ৩ অক্টোবর। প্রথম দিন চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল জয় করেন সুইডিশ বিজ্ঞানী এসভান্তে পেবো।
পরদিন ঘোষণা করা হয় পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল। এই বিষয়ে এবার এ পুরস্কার পেয়েছেন ফ্রান্সের অ্যালাঁ আসপে, যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ ক্লাউসার ও অস্ট্রিয়ার আন্টন সেইলিংগার।
এর পরদিন রসায়নেও নোবেল পুরস্কার পান তিন বিজ্ঞানী। ‘ক্লিক কেমিস্ট্রি’ ও ‘বায়োঅর্থোগোনাল কেমিস্ট্রি’র ভিত্তি দিয়ে এই পুরস্কার জয় করেছেন আমেরিকার ক্যারোলাইন আর বারটোজ্জি, কে ব্যারি শার্পলেস এবং ডেনমার্কের মর্টেন মেলডাল।
পরদিন এ বছরের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান ফ্রান্সের লেখক আনি আরনোঁ। সর্বশেষ ৭ অক্টোবর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয় করেন বেলারুশের মানবাধিকারকর্মী অ্যালিয়েস বিয়ালিয়াৎস্কি এবং যুদ্ধরত দুই দেশ ইউক্রেন-রাশিয়া ভিত্তিক দুই মানবাধিকার সংগঠন।
আগামী ডিসেম্বরে সুইডেনের স্টকহোমে নোবেল সপ্তাহে ছয় বিভাগে নোবেল বিজয়ীদের হাতে তুলে দেয়া হবে পুরস্কারের পদক, সনদ ও অর্থ। সম্মানজনক এই পুরস্কারের অর্থমূল্য এক কোটি সুইডিশ ক্রোনার (১১ লাখ মার্কিন ডলার)।
সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে ও তার রেখে যাওয়া অর্থে ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেয়া শুরু হয়। প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে দেয়া হয় বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার।
আরও পড়ুন:BREAKING NEWS:
— The Nobel Prize (@NobelPrize) October 10, 2022
The Royal Swedish Academy of Sciences has decided to award the 2022 Sveriges Riksbank Prize in Economic Sciences in Memory of Alfred Nobel to Ben S. Bernanke, Douglas W. Diamond and Philip H. Dybvig “for research on banks and financial crises.”#NobelPrize pic.twitter.com/cW0sLFh2sj
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আসন্ন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট নমিনি কমলা হ্যারিস বৃহস্পতিবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নারী সম্পর্কিত বক্তব্য ‘অত্যন্ত আপত্তিকর’ উল্লেখ করে নিন্দা করেছেন।
নির্বাচনের চূড়ান্ত সময়ে গর্ভপাতের অধিকারকে সামনে নিয়ে আসায় এবং এদিকে অভিবাসীদের অপমান ও হেয় করে দেয়া ট্রাম্পের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন হ্যারিস।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, বুধবার এক সমাবেশে ট্রাম্প ‘আমেরিকার নারীদের সুরক্ষা দিতে চাই’ মন্তব্য করার পরিপ্রেক্ষিতে হ্যারিস এই বক্তব্যকে সবার জন্য আপত্তিকর বলে উল্লেখ করেছেন।
ফিনিক্সে বৃহস্পতিবার নির্বাচনি সমাবেশে হ্যারিস বলেন, নারীদের তাদের নিজ দেহ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত ও কর্তৃত্ব থাকা উচিত- ট্রাম্প তা বিশ্বাস করেন না। ট্রাম্প সেই ব্যক্তি যিনি ‘নারীদের তাদের পছন্দের জন্য শাস্তি দেয়া উচিত’ এমন উক্তিও করেছেন। তিনি স্প্যানিস স্লোগান ‘সি সে পুয়েদে’ অর্থাৎ আমরাও পারি’ উচ্চারণ করে বলেন, ‘তবে আমরা নারীদের বিশ্বাস করি।’
উভয় প্রার্থী হোয়াইট হাউসের দৌড়ে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোতে ভোট-যুদ্ধের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ৫ নভেম্বর ভোট শেষ হওয়ার পাঁচ দিন আগে ল্যাটিনো ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।
ওদিকে কালো ওভারকোট ও কালো ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’ লিখিত ক্যাপ পরিহিত ট্রাম্প সীমান্ত রাজ্য নিউ মেক্সিকোতে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্যে অভিবাসন দৌড়ের এক অন্ধকার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘অভিবাসীরা আমেরিকা জুড়ে হিংসাত্মক হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে।’
ডেমোক্র্যাটিক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান সাবেক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দোদুল্যমান ভোটারদের সিদ্ধান্ত পক্ষে টানতে সাতটি সুইং স্টেটে একে অপরকে তাড়া করছেন।
নেভাদার লাস ভেগাসে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পপ আইকন জেনিফার লোপেজ তার তারকা শক্তিকে মঞ্চে নিয়ে আসবেন বলে হ্যারিস আরও একটি উৎসাহী বার্তা দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন:গর্ভপাত নিষিদ্ধ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা মেক্সিকোকে বেছে নিয়েছেন গর্ভপাতের জন্য। দেশটির গাইনোকোলজিস্টদের পরামর্শে তারা গিয়ে ঢুকছেন অপারেশন থিয়েটারে।
টেক্সাসের হিউস্টন থেকে মেক্সিকোতে এসেছেন স্যান্ড্রা নামের এক নারী। যুক্তরাষ্ট্রের ওই রাজ্যে ইচ্ছাকৃত গর্ভপাত সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। তাই তিনি বাধ্য হয়ে গর্ভপাতের জন্য মেক্সিকো এসেছেন।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে মেক্সিকোর সুপ্রিম কোর্ট গর্ভপাতকে বৈধ ঘোষণা করে। এই ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত দেশটির ১৫টি রাজ্য গর্ভপাতকে বৈধতা দিয়েছে।
মেক্সিকোর নারীবাদী সংগঠনগুলো গর্ভপাত বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত থেকে দুশ’ কিলোমিটার দূরের জনপদ মন্টারের বাসিন্দা স্যান্ড্রা কারদোনা ও ভ্যানেসা গিমেনেয। এই দুই নারী গর্ভপাত করাতে আসা আমেরিকান নারীদের তাদের বাসায় স্বাগত জানান।
সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা এই নারীরা যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতে ইচ্ছুক নারীদের জন্য অবৈধ পথে গর্ভপাতে ব্যবহৃত কিট সরবরাহ করছেন। তবে এসব কিট মেইলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো অসম্ভব। তাই অবৈধ পথে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তারা এসব কিট যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে থাকেন। উদ্দেশ্য, এসব কিট ব্যবহার করে নারীরা যেন নিজ বাসায়ই সহজে গর্ভপাত করাতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের প্রচারণায় উঠে এসেছে গর্ভপাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়টি। অনুমান করা যায়, বিশেষ করে নারী ভোটারদের কাছে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গর্ভপাতের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পুলিশ কর্মকর্তাদের বহনকারী একটি গাড়ির কাছে মোটরসাইকেলের সঙ্গে সংযুক্ত শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে পাঁচ শিশুসহ সাতজন নিহত হয়েছে।
শুক্রবার বেলুচিস্তানের মাসতুং জেলায় এই বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় পুলিশ প্রধান ফতেহ মোহাম্মদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি জানায়, বেলুচিস্তান প্রদেশের মাসতুং জেলায় এই হামলা চালানো হয়। বোমা হামলার সময় স্কুলের বাচ্চাদের বহনকারী একটি মোটরচালিত রিকশা কাছাকাছি অবস্থানে ছিল। বোমার বিস্ফোরণে পাঁচ শিশু, একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও একজন পথচারী নিহত হন।
তাৎক্ষণিকভাবে কেউ এ হামলার দায় স্বীকার না করলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনী ও বেসামরিক লোকজনকে টার্গেট করে হামলা জোরদার করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো। তাই তাদেরকেই এই হামলার জন্য সন্দেহ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি বোমা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীদের দেশ থেকে নির্মূল না করা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন তারা।
বেলুচিস্তানে দীর্ঘদিন ধরেই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো প্রধানত নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে আসছে। বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) ও অন্য গোষ্ঠীগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে স্বাধীনতা দাবি করছে।
বিএলএ বিদেশি নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। গত মাসে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর করাচির একটি বিমানবন্দরের বাইরে চীনা নাগরিকদের লক্ষ্য করে বোমা হামলায় চীনের দুই শ্রমিক নিহত ও আটজন আহত হন। পরে বিএলএ ওই হামলার দায় স্বীকার করে।
বেইজিংয়ের বহু বিলিয়ন ডলারের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে হাজার হাজার চীনা শ্রমিক পাকিস্তানে বড় অবকাঠামো প্রকল্প নির্মাণ করছে।
বেইজিং বার বার পাকিস্তানে তার নাগরিকদের জন্য উন্নত নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে আসছে।
আরও পড়ুন:লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ তাদের নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা করেছে। ইসরায়েলের হামলায় নিহত হিজবুল্লাহর সাবেক প্রধান হাসান নাসরাল্লাহর স্থলাভিষিক্ত হলেন নাইম কাসেম।
হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুরা কাউন্সিলের মতামতের ভিত্তিতে নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা করা হলো। সূত্র: আল জাজিরা।
খবরে বলা হয়, নাইম কাসেম ডেপুটি লিডারের পদ থেকে হিজবুল্লাহর নতুন প্রধান হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন হাসান নাসরাল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছেন।
সেপ্টেম্বরে বিমান হামলা চালিয়ে লেবাননের বৈরুতে হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েল। এর মধ্য দিয়ে হিজবুল্লাহ প্রধানের পদটি খালি হয়ে যায়। সে সময় থেকে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন হিজবুল্লাহর নবনির্বাচিত এই প্রধান।
লেবাননে উপর্যুপরি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। আগ্রাসী রাষ্ট্রটি হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের নেতাকে টার্গেট করেছে। তাদের মধ্যে ছিলেন নাসরাল্লাহর আপন চাচাতো ভাই এবং সম্ভাব্য উত্তরসূরি হাশেম সাফিউদ্দিন। তিনিও ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন। হত্যার বেশ কয়েকদিন পর সাফিউদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসরায়েলি সেনারা।
হিজবুল্লাহর বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, লক্ষ্য অর্জনে তাদের মৌলিক বিধিমালা অনুযায়ী নাইম কাসেমকে হিজবুল্লাহর প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সংগঠনটি মনে করে মানবকল্যাণের লক্ষ্য অর্জনে তাদের কাজে মহান আল্লাহই নতুন এই প্রধানের অভিভাবক।
নাইম কাসেম লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। লেবাননে শিয়া আমাল আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হয় তার রাজনৈতিক সক্রিয়তা। তিনি ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে দলটি ত্যাগ করেন, যা অনেক তরুণ লেবাননের শিয়া কর্মীদের রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনাকে বদলে দেয়। পরে ১৯৮২ সালে লেবাননে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডদের সমর্থনে প্রতিষ্ঠিত হিজবুল্লাহ গঠনের দিকে পরিচালিত সভায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
হিজবুল্লাহর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাইম কাসেম। ইসলামিক রিলিজিয়াস এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। এছাড়া মুস্তাফা স্কুলের পরামর্শদাতা হিসেবেও রয়েছেন হিজবুল্লাহর নতুন এই প্রধান। ১৯৯১ সালে তিনি হিজবুল্লাহর ডেপুটি সেক্রেটারির দায়িত্বে আসেন।
আরও পড়ুন:প্রায় ১০০ বছর বয়সী মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
তার কার্যালয় মঙ্গলবার জানায়, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের জন্য ভর্তি হওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
মাহাথিরের কার্যালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে এএফপি জানায়, মাহাথিরকে সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি যথারীতি অফিসে কাজ করবেন।
জুলাই মাসে মাহাথিরের ৯৯ বছর বয়স পূর্ণ হয়। তার জন্মদিনের কয়েক দিন পর একটানা কাশির জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চলতি বছরের শুরুতে প্রায় তিন মাস হাসপাতালে কাটিয়েছিলেন তিনি।
মাহাথির ১৯৮১ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত এবং ২০১৮ থেকে ২০২২ সালে ৯২ বছর বয়সে মালয়েশিয়ার নেতৃত্ব দেন। তিনি এখনও রাজনীতিতে সক্রিয়।
আরও পড়ুন:ভারতে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেই বাংলায় পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন মোদি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেছেন, ‘বিজেপি ক্ষমতায় এলে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশের সমস্যা আর থাকবে না। বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে বেআইনি অনুপ্রবেশ বন্ধ করে দেবে বিজেপি সরকার।’
রোববার ভারতের পোট্রাপোল সীমান্তে যাত্রী টার্মিনাল ভবন এবং মৈত্রী দ্বার উদ্বোধনকালে অমিত শাহ এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও নিশানা করেন।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তনু ঠাকুর আমাকে জানিয়েছেন যে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে পাঁচ/ছয় হাজার মানুষ প্রতিদিন কল্যাণী এমসে চিকিৎসার জন্য আসেন। ২০২৬ সালে আপনারা পরিবর্তন এনে দিন রাজ্যে। বেআইনি অনুপ্রবেশ বন্ধ করে দেব।’
পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের বরাবরের অভিযোগ- বাংলার প্রাপ্য টাকা দেয় না কেন্দ্রীয় সরকার। অমিত শাহ এ বিষয়ে উল্টো প্রশ্ন তুলে বলেন, “গত ১০ বছরে বাংলাকে কী দিয়েছেন মমতা? তৃণমূল তো কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে রয়েছে। কেন্দ্রে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন বাংলাকে দুই দশমিক ৯ লাখ কোটি টাকা দেয়া হয়েছিল।
“মোদি সরকার বাংলাকে গত ১০ বছরে দিয়েছে ৭ দশমিক ৭৪ লাখ কোটি টাকা। কিন্তু মোদির দেয়া টাকা বাংলায় এসে দুর্নীতির বলি হয়ে যায়। বাংলায় ‘অচ্ছে দিন’ আর বেশি দূরে নেই। আমরা বাংলাকে আরও উন্নত আরও সুজলা-সুফলা করে তুলব।”
মোদি সরকারের আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়েছে বলে উল্লেখ করেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘মোদি যখন কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছিলেন তখন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার কোটি। এখন তা ৩০ হাজার কোটি হয়েছে। ব্যবসা বেড়েছে, কাজ বেড়েছে এবং বাংলায় কর্মসংস্থানও হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, আগামী ১৩ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের ছয়টি কেন্দ্রে বিধানসভার উপনির্বাচন রয়েছে। অমিত শাহর এই সফর কার্যত সেই ভোটের প্রচারও বটে।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
আরও পড়ুন:রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ইলন মাস্কের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং রাশিয়ার সাবেক ও বর্তমান একাধিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রকাশ করা প্রতিবেদনে এমনটা জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগামী ৫ নভেম্বর। দিনটি যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচন ঘিরে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য জনগণের সামনে আসতে শুরু করেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় এবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে উঠে এলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ইলন মাস্কের গোপন যোগাযোগের খবর। ২০২২ সাল থেকে নিয়মিত তাদের মাঝে ফোনে কথোপকথন চলছে বলে জানায় জার্নালটি।
চলতি মেয়াদে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে জোরালো প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন টেসলা সিইও। ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারও খরচ করছেন তিনি। বিজয়ী হলে মাস্ককে তার প্রশাসনে একটি পদ দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প।
এর আগে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের যোগাযোগ রয়েছে বলেও জোরালো গুঞ্জন উঠেছিল। কয়েকটি পক্ষ দাবি করে বসে, হোয়াইট হাউস ছাড়ার পরও পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। এরই মাঝে ইলন মাস্কের এই খবর রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে।
প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০২২ সালে ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্যপদ না দিতে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন ইলন মাস্ক। এর পরের বছর রাশিয়ান সেনাদের ওপর আক্রমণের জন্য কিয়েভকে স্টারলিঙ্ক সেবা দিতেও অস্বীকৃতি জানান তিনি। এছাড়া রাশিয়ার অনুরোধে তাইওয়ানকে স্টারলিংক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে চীনেরও উপকার করেছেন স্পেস এক্স সিইও।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ব্যক্তিগত নানা বিষয় ছাড়াও ব্যবসা এবং ভূ-রাজনীতি নিয়ে একাধিকবার ফোনে কথা হয়েছে ইলন মাস্ক ও পুতিনের মধ্যে। যদিও জার্নালের প্রতিবেদনটিকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।
২০২২ সালে ইলন মাস্ক স্বীকার করেন পুতিনের সঙ্গে মহাকাশ বিষয়ে তার একবার কথা হয়েছিল। যদিও এরপর আর নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টি প্রকাশ করেননি কেউ। স্পেস এক্সের সঙ্গে নাসা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি প্রকল্প চালু থাকায় সামরিক ও সংবেদনশীল নানা বিষয়ে ইলন মাস্কের ধারণা রয়েছে। ফলে রাশিয়ার সঙ্গে তার যোগাযোগের খবরে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য