পুঁজিবাজারে ধস ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইস দেয়ার আড়াই মাসের মধ্যে সূচকের সবচেয়ে বড় পতন দেখল বিনিয়োগকারীরা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছিল, এমন কোম্পানিগুলোকে দেখা গেছে দরপতনের শীর্ষ তালিকায়, যার মধ্যে আছে তুমুল আলোচিত ওরিয়ন গ্রুপের সবচেয়ে বড় কোম্পানি ওরিয়ন ফার্মাও।
সাপ্তাহিক বন্ধ ও ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক পড়ল ১১৯ পয়েন্ট। গত ২৮ জুলাই ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর এক দিনে এত বেশি সূচক পড়েনি।
এই পতনের মধ্য দিয়ে ডিএসইর সাধারণ সূচক নেমে গেছে সাড়ে ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে।
ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর গত ১০ আগস্ট ৭৮ পয়েন্ট সূচকের পতন হয়েছিল অর্থনীতি নিয়ে নানা উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ায়। এরপর ৫ সেপ্টেম্বর সূচক পড়ল ৫৮ পয়েন্ট, যদিও এক পর্যায়ে কমে গিয়েছিল ৬৮ পয়েন্ট। তবে সামগ্রিকভাবে এই সময়ে ছয় শ পয়েন্টের বেশি সূচক বেড়েছিল।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান এখন ৬ হাজার ৪৪৯ পয়েন্ট, যা গত ৫ সপ্তাহের সর্বনিম্ন। গত ৫ সেপ্টেম্বর সূচক ছিল ৬ হাজার ৪৩১ পয়েন্ট।
দরপতনের এই দিনে লেনদেন বেড়েছে প্রায় আড়াই শ কোটি টাকা। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ১ হাজার ১৬৯ কোটি ৮৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। সেটি ২৪৭ কোটি ৬৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪১৭ কোটি ৫২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।
এত বড় পতনের দিন কোনো শেয়ারের গুণাগুণ, খাতের সম্ভাবনা- ইত্যাদির কিছুই কাজ করেনি। কেবল ১৯টি কোম্পানির দর বেড়েছে, বিপরীতে হারিয়েছে ১৬৭টি কোম্পনি। আর দর ধরে রাখতে পারে ১৮২টি, যেগুলোর দর আসলে কমার সুযোগ ছিল না ফ্লোর প্রাইসের কারণে। এগুলো দীর্ঘদিন ধরেই একটি দরেই হাতবদল হচ্ছে।
এই দরপতনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পড়েছে গত দুই মাসে বেশি বেড়েছিল, এমন কোম্পানির দর। তবে এর ভিড়েও তুমুল আলোচিত ওরিয়ন ইনফিউশনের দর বেড়েছে অনেকটাই। ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন ১০৪ টাকায় হাতবদল হওয়া কোম্পানিটির শেষ লেনদেন হয়েছে আট শ টাকা ছাড়িয়ে।
তবে ইনফিউশনের দর বাড়লেও ওরিয়ন গ্রুপের বাকি তিন কোম্পানি দর হারিয়েছে। ওরিয়ন ফার্মা, কোহিনূর ক্যামিকেলস, বিকন ক্যামিকেলসের বড় দরপতন সূচকের পতনে বড় ভূমিকা রেখেছে।
সব মিলিয়ে ১৫টি কোম্পানির দর কমেছে ৯ শতাংশের বেশি, আরও আটটির দর কমেছে ৮ শতাংশের বেশি, ৭ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে আরও সাতটি কোম্পানি, চারটি কোম্পানি দর হারিয়েছে ৬ শতাংশের বেশি, ১৫টির দর কমেছে ৫ শতাংশের বেশি, ১৫টির দর কমেছে ৪ শতাংশের বেশি, ২০টির পতন হয়েছে ৩ শতাংশের বেশি, ১৩টি কোম্পানি দর হারিয়েছে ২ শতাংশের বেশি।
আতঙ্কের কারণে বড় পতন বলে মনে করেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সকালবেলা বাজার শুরু হয়েছে প্রফিট টেকিংয়ের মাধ্যমে। কিন্তু বড় পতন হয়েছে প্যানিকের কারণে। গুজব ছিল যে ফ্লোরপ্রাইস তুলে নেয়া হচ্ছে। আর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে অর্থনীতির গতি থমকে যাওয়ার বিষয়টি উঠে আসায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবার্তাকে ভুলভাবে গ্রহণ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। যার কারণে সেল প্রেসার ছিল।’
ওরিয়ন গ্রুপের চার কোম্পানির হালচাল
এই গ্রুপের তুমুল আলোচিত কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশনের দর এক দিনে যতটা বাড়া সম্ভব প্রায় ততটাই বেড়ে হয় শেষ লেনদেন। তবে শেষ মুহূর্তের সমন্বয়ে দর কিছুটা কম বেড়েছে।
আগের দিন দর ছিল ৭৫৩ টাকা ৭০ পয়সা। লেনদেন শুরুই হয় ৭৭১ টাকা ১০ টাকায়। দিন শেষে দর দাঁড়ায় ৭৯৯ টাকা ৭০ পয়সায়, তবে শেষ লেনদেন হয়েছে ৮১০ টাকা ২০ পয়সায়।
গত ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন দর ছিল ১০৪ টাকা ৭০ পয়সা। এই কয় দিনে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের কোম্পানিটির দর ৬৯৫ টাকা বেড়েছে।
তবে বাকি তিন কোম্পানি দর হারিয়েছে তার সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি পতন হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮.৮৫ শতাংশ বা ১৩ টাকা ১০ পয়সা দরপতন হয়েছে ওরিয়ন ফার্মার।
আগের দিন দর ছিল ১৪৮ টাকা। লেনদেন শুরু হয় ১৪৯ টাকা টাকা ৭০ পয়সায়। তবে দিন শেষ করে ১৩৪ টাকা ৯০ পয়সায়। দাম কমার সুযোগ ছিল ১৩৩ টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত। নেমেওছিল সে পর্যায়ে।
কোম্পানিটি সূচক কমিয়েছে ৫.৯৮ পয়েন্ট।
বিকন ফার্মার দর কমেছে ২৪ টাকা ২০ পয়সা বা ৬.৩৬ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ৩৮০ টাকা ৮০ পয়সা। লেনদেন শুরু হয় ৩৯০ টাকায়। দিন শেষ করেছে ৩৫৬ টাকা ৬০ পয়সায়। নামার সুযোগ ছিল ৩৫১ টাকা ৩০ পয়সা পর্যন্ত। নেমেওছিল সেখান পর্যন্ত।
গত ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারে দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন দর ছিল ২৪০ টাকা ৮০ পয়সা।
এই একটি কোম্পানিই সূচক কমিয়েছে ১০.৯১ পয়েন্ট।
গ্রুপের অপর কোম্পানি কোহিনূর কেমিক্যালসের দর কমেছে ৪০ টাকা ২০ পয়সা বা ৫.৮৬ শতাংশ।
আগের দিন দর ছিল ৬৮৬ টাকা। লেনদেন শুরু করে ৭০৭ টাকায়, তবে দিন শেষে নেমে আসে ৬৪৫ টাকা ৮০ পয়সায়। এক পর্যায়ে নেমেছিল ৬৩৫ টাকায়।
কমেছে বেক্সিমকো গ্রুপের দরও
ওরিয়ন গ্রুপের মতো অতটা না হলেও দর হারিয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কোম্পানি বেক্মিমকো লিমিটেডের দর কমেছে ২ টাকা ২০ পয়সা বা ১.৬৮ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ১৩১ টাকা ৩০ পয়সা, দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ১২৯ টাকা।
বেক্সিমকো ফার্মার দর কমেছে ৬ টাকা ৮০ পয়সা বা ৪ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ১৬৯ টাকা ৮০ পয়সা, দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ১৬৩ টাকা।
গ্রুপের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯.১৭ শতাংশ বা ৫ টাকা দর হারিয়েছে শাইনপুকুর সিরামিকস। আগের দিন দর ছিল ৫৪ টাকা ৫০ পয়সা, বর্তমান দর ৪৯ টাকা ৫০ পয়সা।
ব্যাংকিং খাতে এই গ্রুপের কোম্পানি আইএফআইসি দর হারিয়েছে ৩.২৩ শতাংশ বা ৪০ পয়সা। আগের দিন দর ছিল ১২ টাকা ৪০ পয়সা, নেমেছে ১২ টাকায়।
৫০ পয়সা বা ০.৫৭ শতাংশ দর হারিয়েছে বেক্সিমকো সুকুক বন্ড। আগের দিন দর ছিল ৮৮ টাকা। দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা।
পতনের শীর্ষে তারা, যাদের দর বেড়েছিল বেশি
ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর দুই মাসের কিছু বেশি সময়ে বিপুল সংখ্যক কোম্পানির শেয়ার একটি জায়গায় স্থির হয়ে থাকলেও কিছু কোম্পানির শেয়ারদর লাফাচ্ছিল। পতনের এই দিন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব কোম্পানির বিনিয়োগকারীরাই।
সবচেয়ে বেশি পতন হওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৮টির দর এই কয় দিনে ৫০ শতাংশের বেশি একটির দর ৫০ শতাংশের কাছাকাছি বেড়েছিল। এগুলোর সবগুলোই একদিনে যতটা দর হারানো সম্ভব প্রায় ততটাই দর হারিয়েছে।
এই তালিকার শীর্ষে থাকা কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারদর দর ফ্লোর প্রাইস দেয়ার আগে ছিল ৩৭ টাকা ৭০ পয়সা। দুই মাসের কিছু বেশি সময়ে ৫০ শতাংশের বেশি বেড়ে দর উঠে যায় ৫৪ টাকা ৩০ পয়সায়। এক দিনেই ৯.৯৮ শতাংশ কমে দর দাঁড়িয়েছে ৪৬ টাকায়।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯.৭০ শতাংশ দর হারিয়েছে পেনিনসুলা চিটাগং। ফ্লোর প্রাইস দেয়ার আগে ২৬ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হওয়া কোম্পানিটির শেয়ার অস্বাভাবিক লাফ দিয়ে এক পর্যায়ে উঠে যায় ৪৪ টাকা ৯০ পয়সায়। গত কয়েক দিনে এমনিতেই দরপতনে থাকা কোম্পানিটির দর একদিনে যতটা কমা সম্ভব, প্রায় ততটাই কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ টাকা ৬০ পয়সায়। আরও ১০ পয়সা কমার সুযোগ ছিল কেবল।
তৃতীয় অবস্থানে ছিল বসুন্ধরা পেপার মিলস, যার দর কমেছে ৯.৬৮ শতাংশ বা ৮ টাকা ২০ পয়সা। ২৮ জুলাই ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৪৮ টাকা ৮০ পয়সা। এই কয়দিনে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে সর্বোচ্চ দর দাঁড়ায় ৯৬ টাকায়। তবে গত কয়দিন ধরে এমনিতেই সংশোধনে ছিল। বর্তমান দর দাঁড়িয়েছে ৭৬ টাকা ৫০ পয়সা।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা মালেক স্পিনিং মিলসের দর কমেছে ৯.৬০ শতাংশ বা ৩ টাকা ৬০ পয়সা। আগের দিন দর ছিল ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা, বর্তমান দর ৩৩ টাকা ৯০ পয়সা।
ফ্লোর প্রাইস দেয়ার আগের দিন দর ছিল ২৬ টাকা ৮০ পয়সা। ৬০ শতাংশের মতো দর বেড়ে সম্প্রতি উঠে যায় ৪৪ টাকা ১০ পয়সা।
পঞ্চম অবস্থানে ছিল ইউনিক হোটেল, যার দর কমেছে ৯.৫২ শতাংশ বা ৬ টাকা ৭০ পয়সা। বর্তমান শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৬৩ টাকা ৭০ পয়সা।
ফ্লোর প্রাইস দেয়া দিন কোম্পানিটির দর ছিল ৫৩ টাকা ৯০ পয়সা। দুই মাসের কিছু বেশি সময়ে সেখান থেকে ৫০ শতাংশের মতো বেড়ে হয়ে গিয়েছিল ৮১ টাকা ৮০ পয়সা।
ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত জাহাজ কোম্পানি শিপিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ দর হারিয়েছে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা বা ৯.৪৯ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ১৫৭ টাকা, এক দিন পরেই দাঁড়িয়েছে ১৪২ টাকা ১০ পয়সা।
ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন দর ছিল ১০৫ টাকা ৭০ পয়সা। সম্প্রতি উঠে গিয়েছিল ১৭৩ টাকা পর্যন্ত।
সপ্তম অবস্থানে থাকা বিবিএস ক্যাবলস দর হারিয়েছে ৯.৪২ শতাংশ বা ৫ টাকা ৭০ পয়সা। আগের দিন দর ছিল ৬০ টাকা ৫০ পয়সা, দাঁড়িয়েছে ৫৪ টাকা ৮০ পয়সায়।
ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৫১ টাকা ২০ পয়সা। বেড়ে হয়েছিল ৬২ টাকা ২০ পয়সা।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
সর্বোচ্চ সীমা বা ১০ শতাংশ দরবৃদ্ধি হয়েছে ইন্দোবাংলা ফার্মার। শীর্ষে থাকা কোম্পানির শেয়ার ২১ টাকা থেকে বেড়ে সর্বশেষ হাতবদল হয়েছে ২৩ টাকা ১০ পয়সায়।
নাভানা সিএনজির দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩২ টাকায়। আগের দিনে ক্লোজিং প্রাইস ছিল ২৯ টাকা ২০ পয়সা।
৯ দশমিক ৫২ শতাংশ দর বেড়ে মুন্নু সিরামিকসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১৩ টাকা ৮০ পয়সায়। আগের দিনের সর্বশেষ দর ছিল ১০৩ টাকা ৯০ পয়সা।
এ ছাড়াও দরবৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে আফতাব অটোস, ওরিয়ন ইনফিউশন, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, সোনালী পেপার, মনোস্পুল, বিডিকম ও হাক্কানি পাল্প।
সূচক কমাল যারা
সবচেয়ে বেশি ১০ দশমিক ৯১ পয়েন্ট সূচক কমেছে বিকন ফার্মার দরপতনে। কোম্পানিটির দর কমেছে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ০৭ পয়েন্ট কমেছে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশের কারণে। শেয়ার প্রতি দাম কমেছে ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ।
ওরিয়ন ফার্মার দর ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে ৫ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট।
এ ছাড়া বেক্সিমকো ফার্মা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ইউনিটক হোটেল, বেক্সিমকো লিমিটেড, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, সি-পার্ল ও শাহজিবাজার পাওয়ারের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ৫২ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট।
বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ২ দশমিক ৬ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে সোনালী পেপার। এদিন শেয়ারটির দর বেড়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
ওরিয়ন ইনফিউশনের দর ৬ দশমিক ১ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ২৪ পয়েন্ট।
আর কোনো কোম্পানি সূচক ১ পয়েন্ট যোগ করতে পারেনি।
তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল সূচকে যোগ করেছে শূন্য দশমিক ৭৯ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
এর বাইরে মুন্নু সিরামিকস, আফতাব অটোস, ইন্দোবাংলা ফার্মা, নাভানা সিএনজি, বিডিকম, ইসলামী ব্যাংক ও মনোস্পুল সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৬ দশমিক ০২ পয়েন্ট।
কোন খাত কেমন
দরপতনের পাল্লা ভারি থাকায় যে ১৯টি কোম্পানির দরবৃদ্ধি হয়েছে তার মধ্যে ওষুধ ও রসায়ন এবং বস্ত্র খাতের ২টি করে চারটি, প্রকৌশল এবং কাগজ ও মুদ্রণ খাতের ৪টি করে আটটি এবং আইটি, খাদ্য, ব্যাংক, জীবন বিমা, জুট, সিরামিকস ও ট্যানারি খাতের ১টি করে ৭টি কোম্পানির দরবৃদ্ধি হয়েছে।
শীর্ষ পাঁচের একটি ছাড়া সবকটিতে ব্যাপক দরপতন হয়েছে।
৩০২ কোটি টাকা লেনদেন করে শীর্ষে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতের ২০টি বা ৬৬.৬৭ শতাংশ কোম্পানির দরপতন হয়েছে। দর অপরিবর্তিত ছিল ৮টির।
পরের স্থানে থাকা বিবিধ খাতেও দরপতনের সংখ্যা বেশি। ১০টি বা ৭৬.৯২ শতাংশ কোম্পানির দরপতনের বিপরীতে আগের দরে লেনদেন হয়েছে ৩টি কোম্পানির। খাতের কোনো কোম্পানির দরবৃদ্ধি হয়নি। লেনদেন হয়েছে ১৮৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৭৩ কোটি ২০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে প্রকৌশল খাতে। সংখ্যায় সর্বাধিক দরপতন হয়েছে খাতটিতে। ২৫টি বা ৫৯.৫২ শতাংশ কোম্পানির দরপতন হয়েছে। ১৩টির শেয়ার লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে।
শীর্ষ পাঁচের একমাত্র খাত হিসেবে দরবৃদ্ধি হয়েছে কাগজ ও মুদ্রণ খাতে। ১৪৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।
প্রকৌশল খাতের সমান ৪টি কোম্পানির দরবৃদ্ধি হলেও দরবৃদ্ধির হার ৬৬.৬৭ শতাংশ। কারণ লেনদেন হয়েছে ৬টি কোম্পানির। বাকি দুটির একটি করে দরপতন ও অপরিবর্তিত দরে লেনদেন হয়েছে।
আর কোনো খাতের লেনদেন শত কোটির ঘর ছুঁতে পারেনি।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত লেনদেনের পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। হাতবদল হয়েছে ৬৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। খাতের সমান ১১টি কোম্পানির দরপতন ও অপরিবর্তিত দরে শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
জ্বালানি খাতে ৬৭ কোটি ৫৬ লাখ বা ৫.১৩ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। বাকি খাতের লেনদেন ছিল ৫ শতাংশের নিচে।
উল্লেখযোগ্য দরপতনের মধ্যে বস্ত্র খাতে ১৬টি, আইটি ৮টি, সেবা ও ভ্রমণ খাতের সবকটি, ব্যাংকের ১৩টি ও সাধারণ বিমার ৯টি কোম্পানির দরপতন দেখা গেছে।
আরও পড়ুন:ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ২০ জনের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব জব্দ করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশে বৃহস্পতিবার তাদের বিও হিসাব স্থগিত করেছে বিএসইসি।
নির্দেশনায় বিএসইসি যাদের বিও হিসাব জব্দ করেছে তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তার স্ত্রী লুতফুল তাহমিনা খান, ছেলে সফি মুদাসসের খান ও মেয়ে শাফিয়া তাসনিম খান; সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তার স্ত্রী নুরুন ফাতেমা হাসান ও মেয়ে নাফিসা জুমাইনা মাহমুদ; সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কনিকা; সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও তার স্ত্রী শারমিন মুস্তারি; সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার স্ত্রী রুখমিলা জামান চৌধুরী, তার আত্মীয় জারা জামান, বোন রোকসানা জামান চৌধুরী, ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও মেয়ে জেবা জামান চৌধুরী।
এছাড়া পিরোজপুর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ, তার স্ত্রী উম্মে কুলসুম, ছেলে সাম্মাম জুনাইদ ইফতির বিও হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন থেকে টানা চার দিন পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে দেখা যায় দেশের পুঁজিবাজারকে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও নতুন উদ্যমে শুরু করার প্রত্যয় চোখে পড়ে। অনেকে নতুন করে কিছু পুঁজি বিনিয়োগে এনেছেন। অনেকে আবার শেয়ার কিনে রাখতে অন্যদের পরামর্শ দিয়েছেন।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধারণা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে পুঁজিবাজারে সুদিন ফিরবে। তবে সেই সুদিনের দেখা মিলছে না। ওই চার কর্মদিবসের পর থেকে পরের পাঁচ কর্মদিবসের গল্পটা পুরনো হতাশার।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইতে চার কর্মদিবসে ৭৮৬ পয়েন্ট সূচক বাড়ার পর বিনিয়োগকারীরা উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল। এরপর ৮ কর্মদিবসে সূচক পড়ল ৪০৮ পয়েন্ট। এর মধ্যে পাঁচদিনেই পড়ল ৩৪৫ পয়েন্ট।
সবশেষ বুধবারের পতন ছিলো অনেকটাই অনাকাঙ্ক্ষিত। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক হারিয়েছে ১০৮ পয়েন্ট।
বর্তমান ডিএসইর প্রধান সূচকটি নেমে এসেছে পাঁচ হাজার ৬০৬ পয়েন্টে। তবে সবচেয়ে বেশি হতাশা ছড়াচ্ছে মোট লেনদেনের পরিমাণ। সরকার পতনের পর একদিনে লেনদেন উঠে এসেছিলো দুহাজার কোটি টাকা, যা বর্তমানে নেমে এসেছে চার ভাগের এক ভাগে। সবশেষ কর্মদিবসে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫৩৬ কোটি টাকার।
হঠাৎ এমন দরপতনে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। প্রতিদিনই তাদের বিনিয়োগের অর্থ কমে আসছে।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী জসিম উদ্দিনের ব্যাখা ছিলো এমন- ‘আমরা তো ভাবছিলাম আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন হবে না। গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সেটা করেও দেখাতে পারেনি। একের পর এক দুর্নীতি আর লুটপাটে বাজার থেকে নিঃস্ব হতে হয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।
‘সবার মধ্যে আশা ছিলো ওদের পতনের পর পুঁজিবাজার অনেক উপরে উঠবে। প্রথম কয়েকদিন হলোও তাই। তবে এখন কী যে হচ্ছে বুঝতে পারছি না। সকাল শুরু হলেই দেখি পতন আর পতন। এগুলো আর কত দেখতে হবে। নতুন সরকারের উচিত আগে পুঁজিবাজার ঠিক করা।’
বুধবার দেখা যায়, লেনদেনে অংশ নেয়া প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের দর কমেছে। অংশ নেয়া কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১১টির, কমেছে ৩৭১টির। আর অপরিবর্তিত ছিলো ১২টি কোম্পানির শেয়ার দর।
হতাশ আরেক বিনিয়োগকারী আনিস বলেন, ‘আমাদের কী করা উচিত তা জানি না ভাই। হতাশ হয়ে সবাই মার্কেট ছাড়তেছে। ভাবলাম সরকার পরিবর্তন হইছে, তাই অনেক দিন পর কিছু শেয়ার কিনলাম। তবে যা হচ্ছে তাতে আবার হতাশ হলাম।’
অন্তর্বর্তী সরকারের বেছে নেয়া মাশরুর রিয়াজ বিএসইসির চেয়ারম্যান হওয়া নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর গত সোমবার নেতৃত্বে আসেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তিনি নেতৃত্বে আসার পর টানা তিন কর্মদিবসেই দরপতন হল পুঁজিবাজারে।
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন ড. এম মাশরুর রিয়াজ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ড. এম মাশরুর রিয়াজকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। তবে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট দু-একটি গোষ্ঠী তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকার তথা সালমান এফ রহমানের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে মর্মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার শুরু করে।
গত ১৩ আগস্ট তার নিয়োগের প্রজ্ঞাপন হলেও মাশরুর রিয়াজকে বিএসইসিতে যোগ দিতে দেখা যায়নি। পরে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, তার বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখছেন। তবে সরকারের খতিয়ে দেখার আগেই মাশরুর রিয়াজ নিজে থেকেই বিএসইসি চেয়ারম্যান পদে যোগ না দেয়ার কথা জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়কে।
ড. এম মাশরুর রিয়াজ বাংলাদেশের একজন অর্থনীতিবিদ। তিনি পলিসি এক্সচেঞ্জ নামক একটি গবেষণা সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি বিশ্বব্যাংকেও চাকরি করেছেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান পদে যোগ না দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সামনে বহু গবেষণার কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমি এই সময়টাকে কাজে লাগাতে চাই। দেশের অর্থনীতি নিয়ে একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে ভূমিকা রাখতে চাই।
‘বিশেষ করে সামষ্ট্রিক অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও আর্থিক খাত নিয়ে নীতি প্রণয়ন ও সংস্কার বাস্তবায়নে ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে। এসব বিবেচনায় আমি বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এর আগে একটি ছবিকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাশরুর রিয়াজকে আগের সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে তুলে ধরেন অনেকে। এরপর বিএসইসির কিছু কর্মকর্তাও তাকে নিয়ে আপত্তি তোলে। তবে এরপর আবার তারা তাদের আপত্তি তুলে নেয়। এসব কারণে যোগদানে অনিচ্ছুক কিনা- এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান মাশরুর রিয়াজ।
এদিকে মাশরুর রিয়াজ যোগ দেবেন না জানতে পেরে নতুন করে বিএসইসির চেয়ারম্যান খুঁজতে শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে অনেকের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে বলেও জানা গেছে।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরদিন থেকে টানা তিনদিন ব্যাপক উত্থান হয় দেশের দুই পুঁজিবাজারে। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইতে গত সপ্তাহের শেষ তিনদিনে সাধারণ সূচক বেড়েছে প্রায় ৭ শ’ পয়েন্ট। পাশাপাশি লেনদেনেও বেশ গতি দেখা গিয়েছিলো সেই কয়েক দিনে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতেও বাজারে ছিলো তেজিভাব। রোববার প্রথম কর্মদিবসে লেনদেন ছাড়িয়ে যায় দুই হাজার কোটি টাকার ঘর। এদিনও ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে প্রায় ৯০ পয়েন্ট। টানা চারদিন উড়তে থাকা পুঁজিবাজার ধাক্কা খায় সোমবার এসে। সেদিন সকালে সূচকের উত্থান হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিক্রির চাপে কমতে থাকে মূল্যসূচক। সোমবারের ধারা অব্যাহত ছিলো মঙ্গলবারেও।
এদিন সকাল থেকেই কমতে থাকে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স। দুপুরে কিছুটা উত্থান হলেও দিনশেষে সূচকটি ৬৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান নিয়েছে ৫ হাজার ৮ শ ৬৭ পয়েন্টে। এ নিয়ে টানা দুই দিনে সূচকটি কমেছে ১৪৭ পয়েন্ট।
ডিএসইতে এদিন মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৫ কোটি টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট, যা তার আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১ শ ২৮ কোটি টাকা কম। প্রধান সূচকের পাশাপাশি এদিন কমেছে অপর দুই সূচক ডিএস-৩০ ও ডিএসইএস।
লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির দরপতন হয়েছে এদিন। ১০৬ টি প্রতিষ্ঠানের দর বাড়ার বিপরীতে কমেছে ২৬৯ টির আর অপরিবর্তিত দেখা গেছে ২৪ টি কে।
পুঁজিবাজারের মঙ্গলবারের আচরণকে স্বাভাবিক দর সংশোধন বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারিরা। অনেকেই গত কয়েকদিনে দর বাড়তে দেখে মুনাফার জন্য হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করেছেন বলেও জানিয়েছেন।
জাহিদ হোসেন নামে পুঁজিবাজারের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘স্বাভাবিক নিয়মেই বাজার সংশোধন হয়েছে। এখানে ভয় পাওয়ার কারণ নাই। ৮০০ সূচক বাড়ার পর দুইশ কমবে এটাই স্বাভাবিক, বরং না কমলেই বুঝতাম ব্যাপারটা অস্বাভাবিক।’
আরেক বিনিয়োগকারী ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘অনেকদিন ধরে কোন শেয়ার বিক্রি করি না লোকসান ছিলো বলে। এখন দেখলাম কিছুটা হলেও লোকসান কমে এসেছে। আবার টাকারও দরকার ছিলো। তাই কিছু শেয়ার আজকে বিক্রি করলাম।’
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ এম মাশরুর রিয়াজ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক এই কর্মকর্তা বর্তমানে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আজ মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘ড. এম মাশরুর রিয়াজকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ১৯৯৩ এর ধারা ৫ ও ৬ বিধান প্রতিপালন ও উক্ত আইনের ধারা ৫(২) অনুসারে তাকে আগামী চার বছরের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো।’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে দেশের আর্থিক খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পর পদত্যাগ করেছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। শনিবার তিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে ই-মেইলে তার পদত্যাগপত্র পাঠান।
চেয়ারম্যান পদ শূন্য হওয়ায় বর্তমান কমিশনার মোহাম্মদ মোহসীন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রোববার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপ-সচিব ফরিদা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এই আদেশ জারি করা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কমিশনার মোহাম্মদ মোহসীন চৌধুরী বিএসইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে। বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পদত্যাগপত্র দাখিলের তারিখ অর্থাৎ ১০ আগস্ট থেকে এই আদেশ কার্যকর হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম করোনা মহামারির শুরুতে অর্থাৎ ২০২০ সালে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান। করোনার ছোবলে ভঙ্গুর এক পুঁজিবাজারে সাময়িক গতি ফেরাতে প্রথম দিকে বেশকিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে দুর্বল শেয়ার যোগসাজশে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। পুঁজিবাজারে কয়েকটি কারসাজি চক্রকে ইন্ধন দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের ২৮ মে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি পক্ষের আপত্তি থাকার পরও চেয়ারম্যান হিসেবে পুনরায় নিয়োগ পান তিনি।
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে পুঁজিবাজার। ফলে দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে বর্তমান পুঁজিবাজার বাধাহীন গতিতে ছুটে চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের উভয় পুঁজিবাজারে বিদায়ী সপ্তাহে (৫ থেকে ৮ আগস্ট) সূচকের রেকর্ড উত্থানে লেনদেন হয়েছে।
একইসঙ্গে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে বাজার মূলধন বেড়েছে ৯০ হাজার ৯৩২ কোটি ৫ টাকা। তবে আলোচ্য সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) টাকার পরিমাণে লেনদেন বাড়লেও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) কমেছে।
ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য জানা গেছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৩৩৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৩৯৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৯৪৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৩ হাজার ৯১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৩৬৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৫০ হাজার ৫৪৫ কোটি ২ লাখ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৯০.৮৭ পয়েন্ট বা ১১.০৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯২৪ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ২৩১.৮৮ পয়েন্ট বা ১২.২০ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ১৩২ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১০৯.৫৩ পয়েন্ট বা ৯.৪০ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ২৭৪ পয়েন্টে এবং ডিএসএমইএক্স সূচক ৭৪.৪৭ পয়েন্ট বা ৪.৯০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৪৬ পয়েন্টে।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৩৯টির, দর কমেছে ১১টির ও দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৭টির। আর লেনদেন হয়নি ১৬টির।
অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ২৬০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩৯৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
গেল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২৭ হাজার ২৫২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৮৩৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৪০ হাজার ৩৮৭ কোটি ৩ লাখ টাকা কমেছে।
সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১ হাজার ৬৮০.৫২ পয়েন্ট বা ১১.১১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭৯৯ পয়েন্টে। সিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ১২.১৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৩৬৯ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স ১১.১৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ১৩২ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ৮.৫০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৬ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স ২.১৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১১৪ পয়েন্টে।
গত সপ্তাহে সিএসইতে মোট ৩২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২৫৬টির, দর কমেছে ৫৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৯টির শেয়ার ও ইউনিট দর।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য