পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, ‘দুই বছরের করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল বাংলাদেশের অর্থনীতি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ফের বিপদে ফেলে দিয়েছে। তারপরও বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে আমরা ভালো অবস্থায় আছি। বাংলাদেশের এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা এবং অস্থির ডলারের বাজারকে সুস্থির করা। আর এ জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হলেও ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শামসুল আলম।’
বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককে এই পরামর্শ দিয়েছেন মৃদুভাষী কিন্তু দৃঢ়চেতা মানুষ শামসুল আলম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিউজবাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি।
দুই বছরের বেশি সময়ের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় কেমন চলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি?
বাংলাদেশের অর্থনীতি কেমন আছে সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি কোন রাখঢাক না করে যেটা প্রকৃত অবস্থা, সেটাই তুলে ধরেছেন। চ্যালেঞ্জটা আপনারা জানেন। এই চ্যালেঞ্জটা কিন্তু বিশ্বব্যাপী সবার জন্য। এটা এখন কোনো একক দেশের বিষয় না। করোনাভাইরাস যেমন কোনো একক দেশের বিষয় ছিল না। সে রকম ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সমগ্র বিশ্বকে প্রভাবিত করেছে। বিশেষ করে দরদামের ক্ষেত্রে, পরিবহন ব্যয়ের ক্ষেত্রে। মূল্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়েছে এই যুদ্ধের কারণে।
করোনার ধাক্কা সামলে যে সময় আমাদের মতো দেশগুলো ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। বেশ কিছু দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিছু কিছু দেশ অবশ্য সংকটের সম্মুখীন হচ্ছিল। বার্তাসংস্থা রয়টার্স যেটা বলেছিল ১২টি দেশ যেকোনো সময় বিপদে পড়তে পারে শ্রীলঙ্কার মতো। এটা মাসখানেক আগের বিশ্লেষণ। সেই সময় রয়টার্সের সেই গবেষণায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে বলা হয়েছে স্থিতিশীল। সেই ১২টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম ছিল না। তার পরে অবস্থাটা একটু পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী দরদামের কারণে। অন্যান্য দেশেও বেড়েছে, আমাদের দেশেও বেড়েছে।
সেই ঘটনা আপনারা শুনেছেন। সব দেশেই মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে চলে গেছে। আমেরিকার মতো একটি পরিপক্ব অর্থনীতিতে, যুক্তরাজ্যের মতো একটি মহাশক্তিধর পরিপক্ব অর্থনীতিতেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সে ক্ষেত্র সব কিছু মিলিয়ে মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি গত জানুয়ারি থেকেই একটু একটু করে বাড়ছিল। সেটা বাড়ছিল কারণ করোনাভাইরাসের পরে সব দেশেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, ফলে চাহিদা বাড়ছিল। সে অবস্থায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ লাগে।
এই যুদ্ধ আমাদের মহা সংকটে ফেলে দেয়। বিশেষ করে গমের ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু ৪০ শতাংশ গম ইউক্রেন থেকে আমদানি করতাম। সেই অবস্থায় মার্চ থেকে মূল্যস্ফীতি যেন আরেকটু বাড়া শুরু করল। সেই যুদ্ধের কারণে যেহেতু পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে গেল হঠাৎ করে। ফলে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ল। বিশেষ করে দুগ্ধপণ্য, ভোগ্যপণ্য চিনি- খাদ্যপণ্য ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে গেল। সবই কিন্তু আন্তর্জাতিক পণ্য, যেটা আমরা আমদানি করি। সেই বাড়ার ফলে সর্বশেষ এসে আমরা বাজেটও ঘোষণা করলাম। তখনও আমরা মোটামুটি আশাবাদী ছিলাম যে, আমরা এগোচ্ছি মূল্যস্ফীতি বাড়া সত্ত্বেও। যদিও জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। জুলাইতে এসে আবার একটু কমল, তখন ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এই করোনাভাইরাসের মধ্যে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কিন্তু আমি বলব সহনশীল ছিল। কারণ ২০১৩ সালে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি উঠেছিল ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ।
আমি যেটা বলতে চাচ্ছি এরচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকার ক্ষমতা নিয়েছিল। ব্যবস্থাপনা করছিল। তারপর সুন্দরভাবে আস্তে আস্তে মূল্যস্ফীতি কমে এল। অর্থনীতির গতিশীলতা বাড়ল। সর্ব ক্ষেত্রেই আমরা অগ্রসর হচ্ছিলাম। এখনকার যে মূল্যস্ফীতি অবশ্যই এটা বেশি। এটাকে আমি কোনোভাবেই হালকা করে দেখছি না। আমি যেটা পত্রপত্রিকায় দেখলাম যে, আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ; আর সেপ্টেম্বরে কমে হয়েছে ৯ দশমিক ১ শতাংশ। ৯ শতাংশের ওপর মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। যদিও এটা আগের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়নি।
ভারতেও তাজা শাক-সবজি নিয়ে মূল্যস্ফীতি ১১ শতাংশ এই সেপ্টেম্বরে। আর খাদ্যের মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ বা ৯ দশমিক ৯। সেই অর্থে আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি আমরা খুব বেশি খারাপ করে ফেলছি, বিষয়টি তা না। আমি তুলনাটা দিচ্ছি এই জন্য যে, এই পরিস্থিতি এখন সবাইকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। উন্নত দেশ হোক, ভারত হোক, ভারত তো এখন অনেক উচ্চ প্রশংসিত দেশ, উন্নয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেরও যথেষ্ট সুনাম আছে আমরাও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা এশিয়ান টাইগার কাব বা ব্যাঘ্র শাবক হিসেবে আমরা চিহ্নিত হয়েছি। এখন এই মূল্যস্ফীতিটা যদি আমরা ধরি। মূল্যস্ফীতির বাইরে কিন্তু অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। এটা হলো স্বস্তির বিষয়।
অর্থনীতির অন্য সূচকগুলো নিয়ে কিছু বলবেন?
অর্থনীতির অন্য সূচকগুলো ভালোই আছে বলা যায়। শুধু আমি নয়, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ সব দাতা সংস্থা বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল আছে। আমাদের গত জুন পর্যন্ত শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ। আর যদি ম্যানুফ্যাকচারিং বলি, সেটাও ছিল এই জুনে ১২ শতাংশ। সেবা খাত বেড়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। এতে বোঝা যায় অর্থনীতির যে সাধারণ গতিপ্রবাহ, কর্মকাণ্ড-ব্যবসা বাণিজ্য সবই কিন্তু এর মধ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। এখনো যাচ্ছে বলে আমি মনে করি। যদিও এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নিতে হয়। যেটা প্রবৃদ্ধিকে আসলে আঘাত করে। যেমন- আমরা আমদানিকে যখন নিয়ন্ত্রণ করি, যদিও শিল্পপণ্য আমদানি আমরা বন্ধ করিনি বেশি মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের ভোগ কমে যাবে। তো সামগ্রিক অর্থে ভোগ কমে গেলে অর্থনীতির যে গুণিতক ফলাফল প্রবৃদ্ধির ওপরে আঘাত আসবে। দ্বিতীয় হলো- মুদ্রা সরবরাহকে আমরা একটু নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। আমরা রেপোর রেট বা নীতি সুদের হার বাড়িয়েছি। নীতি সুদ হার বাড়ানোর অর্থ হলো মুদ্রা সরবরাহকে টেনে ধরা। এর মানে হলো প্রবৃদ্ধি যেভাবে হওয়ার কথা কিছুটা হলেও একটু ধীরগতি হতে পারে। যদি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বেশ ভালোভাবে করতে চান, তাহলে আপনাকে প্রবৃদ্ধিকে স্যাক্রিফাইস করতে হবে।
সেই প্রবৃদ্ধিও এডিবি বলছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। যদিও আমাদের বাজেটে প্রাক্কলন ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। আমার যেটা মনে হয়, এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের তো প্রায় এক কোয়ার্টার চলে গেল, হয়তো আমাদের প্রক্ষেপিত সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সেটা আসলে মনে হয় হবে না। তবে ৬ শতাংশের ওপরে যদি থাকে, সেটাও বাংলাদেশের জন্য অনেক ভালো পারফরম্যান্স হবে বলে আমি মনে করি।
বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। বিশ্বব্যাংক সব সময়ই একটু কনজারভেটিভ-রক্ষণশীল। বিশ্বব্যাংক যা বলেছে, প্রতিবারই বাংলাদেশে তার বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এবারও তাই হবে আশা করি। তবে আমি আবারও বলছি, বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হলেও সেটাকে আমি খুবই ভালো বলে মনে করি। এ কথা ঠিক যে, সেপ্টেম্বরে রপ্তানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স কিছুটা কমেছে। তবে এক মাস দেখে কোনো কিছুর প্রভাব বলে দেয়া কঠিন। আমি বরং তিন মাসের হিসাবটা দিই, এটাই বেশি নির্ভরযোগ্য। অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রতি মাসের হিসাব নিয়ে কথা বলার চেয়ে কয়েক মাসের গড় নিয়ে কথা বললে বেশি সঠিকভাবে রিফ্লেক্ট করে।
সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স কমলেও জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর হিসাব করলে তিন মাসে আমাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ। কিন্তু গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রেমিট্যান্স ১৯ শতাংশ কমে গিয়েছিল। তাই তিন মাসের ধারাটা যদি আমলে নিই তাহলে এখনই শঙ্কিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। আমি মনে করি সামনে রেমিট্যান্স বাড়বে। আমাদের প্রচুর লোক বিভিন্ন দেশে গেছে গত অর্থবছরে; প্রায় ১০ লাখ লোক গিয়েছে। এর আগের বছর গিয়েছিল মাত্র সাড়ে ৩ লাখ। তাই রেমিট্যান্স বাড়বে, আর বাড়বেটা কারণ হলো- মধ্যপ্রাচ্যে এই যুদ্ধের ফলে লাভবান হচ্ছে অস্ত্র যারা বিক্রি করে সেসব দেশ। দুই হলো যারা তেল বিক্রি করে। মধ্যপ্রাচ্যে এই যুদ্ধে তারা লাভবান হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে এখন প্রচুর কাজকর্ম শুরু হয়েছে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। তারা বিলাসবহুল প্রাসাদ বানাচ্ছে। তার মানে আমাদের লেবার ফোর্সের কিন্তু ডিমান্ড থাকবে। গত বছর যেমন ১০ লাখ গিয়েছে, এবারও তাই যাবে। যাওয়ার হারটা কিন্তু বেশি। আর দুই হলো- চীন-আমেরিকার যুদ্ধের কারণে রপ্তানির অনেক চাহিদা আমাদের দিকে চলে আসছে। যদিও ব্যবসায়ীরা দুই-একজন বলছেন, তাদের অর্ডারগুলো কমে গেছে, আমার মনে হয় এটা হচ্ছে সাময়িক। রপ্তানি যদি আমরা প্রপার চ্যানেলে ধরি, রপ্তানি আয়টি এখনো অস্বস্তিকর অবস্থায় পৌঁছেনি। কিন্তু অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ যে কমছেই। ৩৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
আমি সে আলোচনাতেই আসছিলাম। সেটা আমি বলছি, রেমিট্যান্স বাড়বে, এখনো ইতিবাচক গত বছরের তুলনায়। একই সঙ্গে রপ্তানি আয়েও ভালো প্রবৃদ্ধি আছে। এটা ঠিক, আমাদের রিজার্ভ চাপের মধ্যে আছে, ৪ অক্টোবর ছিল ৩৬ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন। যেটা গত বছর এই সময়ে ছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই অর্থে প্রায় ১০ বিলিয়ন কিন্তু কম। কিন্তু এই যে ৩৬ বিলিয়ন, এটাও আমাদের জন্য সন্তোষজনক। ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। আর রপ্তানি আয়ের কথা বলছি, গত অর্থবছর প্রথম ৩ মাসে রপ্তানি বেড়েছিল ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এবার বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। যদিও কয়েকজন ব্যবসায়ী বলছেন, আমাদের রপ্তানি কমে যাচ্ছে। কিন্তু মোটা দাগে গত তিন মাসে আমাদের রপ্তানি কিন্তু ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়েছে।
আর আমদানির উল্লম্ফন কিন্তু কমেছে। গত বছর প্রথম তিন মাসে আমদানি বেড়েছিল ৪৬ শতাংশ। আর এই বছর প্রথম দুই মাসে আমদানি বড়েছে ১৬ শতাংশ। যেহেতু আমরা আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছি। এটা একটি ভালো লক্ষণ, সরকার যে নীতি নিয়েছে, সেটা কার্যকর হচ্ছে। আমদানিকে নিয়ন্ত্রণ করছি, যাতে ডলারের চাহিদাটা কমে আসে। আমাদের সব নীতির লক্ষ্য হচ্ছে ফরেন এক্সচেঞ্জকে স্ট্যাবেল করা। আরেকটা হলো মূল্যস্ফীতিকে কিভাবে বাগে আনতে পারি। এর মধ্যেই আমাদের সব নীতি কিন্তু নিবন্ধিত। আমরা প্রবৃদ্ধি নিয়ে সত্যি কথা বলি, এই মুহূর্তে ভাবছি না এত।
প্রবৃদ্ধি মূল্যবান, এটাকে আমি অবহেলা করছি না। কিন্তু প্রায়োরিটি দিচ্ছি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ডলারটাকে স্ট্যাবল করা। ডলার স্ট্যাবল না হলে আরো ক্ষতি হয়ে যাবে। এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ডলারটাকে স্ট্যাবল করতে প্রতি মুহূর্তে লক্ষ রাখছে আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংক, ফিন্যান্স ডিভিশন। বাংলাদেশ ব্যাংক তো নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছে এখন। প্রতিটি মুহূর্ত তাদের জন্য এখন মূল্যবান।
মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা এবং ডলারের বাজারকে স্বাভাবিক করতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। আপনি এ বিষয়ে কী ভাবছেন?
এটা আমি বলব অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। আমার একটি পরামর্শ থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। এটা মনে হয়, এখন একটি বাস্তবতা হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। দেখুন যদি মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশ হয়। তাহলে আমানতের সুদের হার আপনি ৬ শতাংশ রাখেন কী করে? তার মানে এখন যদি একজন ব্যাংকে আমানত রাখে সে ৩ শতাংশ টাকা হারাবে। এটাতো সমর্থনযোগ্য না। এ ছাড়া ডলার স্ট্যাবল বা স্থিতিশীল করার জন্য আমি মনে করি ঋণের সুদের হার কিছুটা হলেও বাড়ানো দরকার। কারণ, কম থাকাতে সস্তায় পেয়ে যাচ্ছে বড় বড় বিনিয়োগকারীরা। তাতে হচ্ছে কি? তারা সস্তায় পেয়ে বেশি বিনিয়োগ করলে সমস্যা। কিন্তু আমি তো চাচ্ছি চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে। কাজেই সুদের হার বাড়ালে তখন তারা কম নেবে। তখন তারা কম ঋণ নিতে চাইবে, কারণ তখন কস্ট অব ক্যাপিটাল বেড়ে যাবে। যেহেতু এখন ৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি। এটা একটু কমানোর জন্য সুদের হার একটু বাড়ানো দরকার। এটা অর্থনীতিবিদ হিসেবে আমার নিজের মূল্যায়ন।
কৃচ্ছ্রসাধন বা ব্যয় সংকোচন করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে আছে কি না?
আমরা এখন প্রকল্প অনেক কম গ্রহণ করছি। আমরা আগে একটি একনেকে ১২ থেকে ১৪টি প্রকল্প বিচার-বিশ্লেষণ করতাম। সেটি এখন গড়ে নেমে এসেছে ৬টায়। যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ, আমরা এখন সেগুলোই নিচ্ছি। যেগুলো অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান করবে, কৃষি উৎপাদনকে বাড়াবে, যেটা আমাদের পণ্য পরিবহনকে আরো সহজ করবে, যে প্রকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহকে আরো শক্তিশালী করবে- এগুলোতো প্রকল্প নিতেই হবে, এগুলোই নিচ্ছি আমরা। আর যেগুলো বিল্ডিং সাজানো, এখন তা না করলেও চলবে- সেগুলোকে আমরা কিন্তু পিছিয়ে রাখছি। এটা হবে যখন আমাদের অবস্থা স্বাভাবিক হবে, তখন হবে।
কিন্তু অনেক প্রকল্প আছে যাদের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ হচ্ছে বিদেশ থেকে কেনাকাটা। যদি এখন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমাই, তাহলে বিদেশ থেকে কেনাকাটা কমে আসবে, আর তাতে ডলার কম লাগবে। কাজেই একটি হলো প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় অনেক সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। আবার প্রকল্প কিন্তু নিচ্ছিও। সেই প্রকল্পগুলো নেয়া হচ্ছে- যেগুলো উৎপাদন ব্যবস্থাকে সহায়তা করবে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা আর মনে করিনা যে, নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় করা দরকার আছে; এখন এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের চিন্তা করা দরকার যে, আমরা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব কি না। আমরা এখন অর্ধেকের কম বাতি জ্বালিয়ে অফিস করি। এসি ২৫-এ দিই। এভাবে দেশের সব নাগরিকের উচিত এই সাশ্রীয় কর্মসূচি যেন আমরা সবাই বাস্তবায়ন করি। দেশপ্রেমিক প্রত্যেক নাগরিকেরই এই হিসাব করা উচিত বলে আমি মনে করি। এই সমস্য কোনো দলের না। এই সমস্যা পুরো দেশের। এটা বিশ্বের সমস্যা। কাজেই সবার উচিত নিজের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, অর্থনীতির স্বার্থে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে যে সাশ্রীয় কর্মসূচিগুলো আমরা নিয়েছি, সেটাকে সহযোগিতা করা।
রেমিট্যান্স-রপ্তানি আয় ছাড়া রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য আর কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
বৈদেশিক মুদ্রাকে স্থিতিশীল রাখার জন্য রিজার্ভটাকে বাড়াতেই হবে। রিজার্ভ বাড়লে আমদানির ক্ষেত্রে আমরা স্বচ্ছন্দে থাকি। শ্রীলঙ্কা শেষ পর্যন্ত আর কিছুই আমদানি করতে পারছিল না। তো সে জন্য রিজার্ভটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে জন্য আমরা চাচ্ছি ডলার আনতে। এখন ডলার কিভাবে বাড়ে- বৈদেশিক সহায়তার কারণে, এফডিআই (সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ)-এর কারণে। গত অর্থবছরে আমরা ভালো এফডিআই পেয়েছি; ৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। তার আগের বছর এসেছিল ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন। চলতি অর্থবছরেও এফডিআইপ্রবাহ বেশ ভালো। আমরা এখন চেষ্টা করছি স্বল্প সুদে, সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিতে। সেটা আইএমএফ হোক বিশ্বব্যাংক বা এডিবি হোক। এখন আমার মনে হয়, ইআরডিকেও (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) বিনিদ্র রজনী কাটানো উচিত।
যত বৈদেশিক মুদ্রা এখন সংগ্রহ করা যায়। আমরা স্বল্প সুদে ঋণ চাচ্ছি যেমন লাইবর প্লাস ওয়ান বা এক শতাংশের কম। আর পরিশোধের সময় হচ্ছে ২৫ থেকে ৪০ বছর। ঋণের ক্ষেত্রে জাপান তো কখনো সুদ নেয় না। সেটা মাপ করে দেয়; দিয়ে আবার বলে এটা আবার তোমরা খাটাও অন্য জায়গায়। ঋণটাকে এখন নেয়ার ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সক্রিয়। তবে সেসব ক্ষেত্রে ঋণ নেব, যেগুলোর লাভ ফিরে আসবে। আমরা ফিরিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করব। ইআরডির উচিত এখন বিনিদ্র রজনী কাটানো ঋণ আনার জন্য। আমরা এখন একটি আরামদায়ক জায়গায় আছি। আমাদের মোট ঋণ আমাদের দেশ-বিদেশে মিলে দেশজ আয়ের তুলনায় ৩৯ শতাংশ। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ মাত্র ১৪ শতাংশ। আমরা দুটো মিলে যেতে পারি প্রায় ৬৭ শতাংশে। নেওয়ার সক্ষমতা এখনও আমাদের আছে।
যেসব প্রকল্প আমাদের সক্ষমতা বাড়াবে- এ রকম প্রকল্পে আমাদের ঋণ নিতে হবে। নেয়ার সুযোগ আছে। আমাদের এখন ডলার দরকার, সেটাও দরকার। আর উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখার তো চেষ্টা করতে হবে সার্বিকভাবে। পুঁজির যে আমাদের সংকট, সেটা কাটিয়ে উঠব তো আসলে ডলার পেলেই। কাজেই আমার পরামর্শ হবে, ঋণের বিষয়ে আমাদের নেগোসিয়েশনের জন্য আমাদের সর্বশক্তি বিনিয়োগ করা দরকার। এ বিষয়ে ইআরডি, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসা দরকার।
এ কথা ঠিক যে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যে আলোচনাটা আগের মতোই হয়, দেশে দুর্নীতি কমেনি। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই?
দুর্নীতি কমানোর চেষ্টা সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়। আবার দুর্নীতিকে এক দিনে কমানো সম্ভব না। এর গোড়া অনেক গভীরে পতিত। ছড়িয়ে আছে শিকড় সব জায়গায়। তবে দুর্নীতি প্রতিরোধে যতই আপনি শক্ত হবেন বা ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাবেন, আপনার জনপ্রিয়তা হুহু করে বেড়ে যাবে। এটা স্বাভাবিক, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটা দেখা গেছে।
একটি বিষয় দেখবেন দুর্নীতি বিষয়ে পদক্ষেপগুলো কিন্তু অনেক দৃশ্যমান। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজিকে দুদক ডেকেছে। একজন প্রাক্তন সেনাপতি এখনো জেলে আছেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ট্রাস্টি এখনো জেলে। ব্যাংকের বেশ কিছু এমডি জেলে গেল। বহু সাজা হচ্ছে, হয়তো আরও হওয়া উচিত।
আমাদের দুর্নীতি তো সব জায়গায় ছড়িয়ে আছে। সরকারি চাকরিতে বেতন বাড়ানো হলো, কিন্তু দুর্নীতি কমল না। এটা আসলে একটি সামাজিক ব্যাধি। বেতন বাড়ানো-কমানোর সঙ্গে মনে হয় না দুর্নীতি যুক্ত আছে। না হলে বড়লোকেরা দুর্নীতি করে কেন। যারা বড়লোক তারা কেউ বউয়ের নামে কেউ শালার নামে অ্যাপার্টমেন্ট কিনছে। ভালো সুশাসন হলে দুর্নীতি কমে আসবে, একদম নাই করে দিতে পারবেন না। এটা কোনো দেশই পারেনি। তবে মাত্রাটা অনেক কমিয়ে আনতে হবে। আমার দেশে এখন বড় সমস্যা আয় বৈষম্যের। নানাভাবে আমাদের দেশে এখন লুটপাট হচ্ছে, সেটা বন্ধ করতে হবে। যে যেখানে জড়িত আছে, সেখানে তাকে শাস্তি দিতে হবে। এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি দৃশ্যমান।
আরও পড়ুন:
বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে ডলার-টাকার বিনিময় হার এখন থেকে বাজারনির্ভরভাবে নির্ধারণের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এ সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ আগামী জুন মাসের মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের ঋণ কিস্তি পাবে বলেও জানান তিনি।
ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের দর-কষাকষি চলছিল। মূলত সে কারণে আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় করছিল না। এর মধ্যে গতকাল জানা যায়, বাংলাদেশ ডলারের বিনিময় আরও নমনীয় করতে রাজি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারে ঋণের দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করতে রাজি হয়েছে আইএমএফ।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত ৯ মাসে রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করা হয়নি, তবুও বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে এবং তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। এ অবস্থায় বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে ব্যাংকারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, বাজারভিত্তিক করায় হঠাৎ করে ডলারের রেট অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘদিন ধরে ডলারের রেট ১২২ টাকার আশপাশে রয়েছে এবং তা সেখানেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ডলারের রেট দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা-সরবরাহ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, বাইরের দেশের নির্দেশে নয়। বর্তমানে বাজারে ডলারের সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে।
তবে, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দুবাইভিত্তিক কিছু সিন্ডিকেট বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক থাকবে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ড. মো. হাবিবুর রহমান, কবির আহমেদ, উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ এবং নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
এদিকে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের জুনের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির জন্য নির্ধারিত ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার একত্রে ছাড় করবে।
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে সকল বিষয় সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে উভয়পক্ষ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা বিনিময় হারসহ অন্যান্য সংস্কার কাঠামো বিষয়ে সম্মত হয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং বিনিময় হার ব্যবস্থায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে অধিকতর পর্যালোচনার লক্ষ্যে চতুর্থ রিভিউ সম্পন্ন হওয়ার পর উভয় রিভিউয়ের জন্য নির্ধারিত কিস্তির অর্থ একত্রে ছাড় করা হবে বলে বিগত তৃতীয় রিভিউয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ রিভিউয়ের সময় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ব্যাংক-ফান্ড সভায় এবিষয়ে আলোচনা চলমান ছিল।
এ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, জাপান এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরও প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা জুন মাসের মধ্যে পাবে বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এ অর্থ পাওয়া গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে। ফলে মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয় যে, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে যেসকল সংস্কার কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব বিবেচনায় পরিকল্পিত এবং জাতীয় স্বার্থে গৃহীত। এ সকল সংস্কার কর্মসূচির ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যক্রম শুধুমাত্র কারিগরি সহায়তা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
বাণিজ্যযুদ্ধের তীব্রতা কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। পরস্পরের ওপর আরোপ করা পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য শুল্ক ৯০ দিনের জন্য ব্যাপক পরিসরে কমাতে একমত হয়েছে দুই দেশ। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা কমাতেই এই চুক্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর বিবিসির।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের আগে চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। পরে নতুন শুল্ক যখন ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন তখন তিনি বলেছিলেন তিন মাস সবার জন্য বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক হার প্রযোজ্য হবে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দুপক্ষের মধ্যে আলোচনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, গঠনমূলক ও দৃঢ় আলোচনার পর উভয় দেশ ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করতে রাজি হয়েছে। এর আওতায় দেশ দুটি পারস্পরিক শুল্ক ১১৫ শতাংশ কমাবে।
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত বর্তমান ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। অন্যদিকে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপ করা ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। উভয় দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আগামী ১৪ মে থেকে শুল্কের এই কাঁটছাট কার্যকর হবে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে স্কট বেসেন্ট বলেন, আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি যে, আমাদের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। দুই পক্ষের প্রতিনিধিদলই একমত হয়েছে যে তারা বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না। মার্কিন অর্থমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশই নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পেরেছে। আমাদের লক্ষ্য ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যের পথে অগ্রসর হওয়া এবং এটি তারই সূচনা।
প্রথম দফায় শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল এবং বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কাও জোরালো হয়েছিল। তবে এবার এই চুক্তির ঘোষণায় বিশ্ব শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
শুল্ক কমানোর চুক্তির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববাজারে চাঙাভাব দেখা দেখা গেছে। হংকংয়ের প্রধান সূচক ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ স্টক ফিউচারের উত্থান হয়েছে। এছাড়া বাড়তি শুল্ক স্থগিতের খবরে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দর বেড়ে ছয় মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউরোপীয় শেয়ারবাজারগুলোও উচ্চমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু করে এবং মার্কিন বাজারগুলোও ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, এই সময়সীমার মধ্যে চীনের উচিত হবে ফেন্টানিল নামক ভয়াবহ মাদকের অবৈধ রপ্তানি বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া। এ বিষয়ে চীনের সদিচ্ছা দেখে ওয়াশিংটন আশাবাদ প্রকাশ করেছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের প্রবেশ ঠেকাতে চীন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না এমন অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।
টাকা পাচার ঠেকাতে বিশেষ ইউনিট গঠন করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মূলত বাণিজ্যের আড়ালে যে বিদেশে টাকা পাচার হয়, তা প্রতিরোধ করতেই এমন উদ্যোগ। দুই প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার হয় বলে মনে করে এনবিআর। এগুলো হলো-আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং। এসব কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব লোকসান হয় বলে মনে করে এনবিআর।
সম্প্রতি এনবিআর মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল নামে ১০ বছরের একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। সেখানে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।
গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) উদ্ধৃতি দিয়ে এনবিআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে (মিথ্যা ঘোষণা) ৭০ শতাংশ অর্থ পাচার হয়ে থাকে।
টাকার পাচার রোধে এনবিআর তিনটি উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে। প্রথমত, আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা ও ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার ঠেকাতে দক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে বিশেষায়িত একটি ইউনিট গঠন করা যেতে পারে। এই ইউনিটের সদস্যরা প্রতারণা হয় বা হতে পারে- এমন বিল অব এন্ট্রিগুলো তদারকি ও তদন্ত করবেন। এই ইউনিট গঠন হলে একদিকে টাকা পাচার বন্ধের পাশাপাশি এনবিআরের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির সক্ষমতা বাড়বে।
সাধারণত আমদানিকালে তুলনামূলক বেশি দাম দেখিয়ে অর্থ দেশের বাইরে পাচার করা হয়। মূলত মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এভাবে টাকা পাচার করা হয়। দুই বছর আগে এনবিআর পাচার টাকা ফেরত আনার সুযোগ দিলেও কেউ তা নেননি।
এনবিআরের দ্বিতীয় সুপারিশ হলো, বিদেশি কূটনীতিক মিশনে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের জন্য এটাশে পদ সৃষ্টি করা। এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং ইস্যুটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। যেসব দেশ থেকে পণ্য আসে, সেখানে পণ্যের মূল্য কত, তা জানা সম্ভব হয় না। আবার নানাভাবে বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার হয়। এনবিআর বলছে, বিভিন্ন দূতাবাসে, বিশেষ করে বাংলাদেশে বড় বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোতে রাজস্ব খাতে কর্মকর্তাদের জন্য এটাশে পদ সৃষ্টির সুপারিশ করেছে এনবিআর। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, ভারতের মতো দেশ এমন পদ সৃষ্টি করেছে বলে এনবিআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এনবিআরের তৃতীয় সুপারিশ হলো, পাচার টাকা ফেরত আনতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া; যেসব দেশে পাচার হয়, সেখানে তদারকি ও পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধি; আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করা। এসব করা হলে পাচার টাকা চিহ্নিত করে ফেরত আনা সহজ হবে। এ ছাড়া টাকা পাচারে সহায়তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনার কথাও বলেছে এনবিআর।
এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, টাকা পাচারের কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায় সরকার। টাকা পাচার বন্ধ করতে পারলে অর্থনীতি আরও চাঙা হবে। এ ছাড়া সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের রাঘববোয়াল (ক্রীড়নক), আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এই পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি রিপোর্টস (জিএফআইআরএস) এবং কিছু নির্দিষ্ট পূর্বানুমানের ভিত্তিতে টাকা পাচারের হিসাব করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।
দেশ থেকে কারা, কীভাবে, কোথায় টাকা পাচার হয়েছে- সেই চিত্র তুলে ধরে শ্বেতপত্রে বলা হয়, টাকা পাচারের জন্য দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের ক্রীড়নক, আমলাদের মধ্যে এক ধরনের অনৈতিক চক্র গড়ে ওঠে। ঘুষ-দুর্নীতি, আর্থিক অপরাধ, মিথ্যা ঘোষণার আড়ালে বাণিজ্য, ব্যাংক থেকে চুরি করা টাকা, খেলাপি ঋণের অর্থ, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে দেখানো, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, কর ফাঁকি- এসব কর্মকাণ্ডের অর্থ পাচার করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ করের অভয়ারণ্য নামে পরিচিত ছোট ছোট দেশে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয়েছে। মূলত বাড়ি কিনে এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ করে টাকা পাচার করা হয়।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি এবং আটটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার চার দিনের চীন সফরের তৃতীয় দিন শুক্রবার দুই দেশের মধ্যে এ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও স্মারকগুলো স্বাক্ষর হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়, সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে রয়েছে দুই দেশের কালজয়ী সাহিত্য ও শিল্পকর্মের অনুবাদ ও সৃজন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও খবর আদান-প্রদান, গণমাধ্যম, ক্রীড়া এবং স্বাস্থ্য খাতে বিনিময় সহযোগিতা। এর পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় চীন সফরে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ বিষয়ে সহযোগিতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়েছে।
এগুলো হলো বিনিয়োগ আলোচনা শুরু করা, চীনের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু, মোংলা বন্দরের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ, একটি রোবট ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ এবং একটি কার্ডিয়াক সার্জারি গাড়ি অনুদান।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের উত্থাপিত বিষয়গুলো চীন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং।
স্থানীয় সময় শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট এ কথা জানান।
ড. ইউনূসের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্টের বৈঠককে অত্যন্ত সফল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ইউএনবিকে বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশকে দেওয়া চীনা ঋণের সুদের হার কমানো ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় দেশটির সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়টি ছিল।’
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আলোচনা অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ, গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ হয়েছে।’
প্রেস সচিব বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার এটি ছিল প্রথম দ্বিপক্ষীয় বিদেশ সফর। এখন পর্যন্ত এটি একটি বড় সফলতা।’
প্রেসিডেন্ট শির বক্তব্যের বরাতে শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও কারখানা স্থাপনে চীন তার দেশের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করবে।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট শি ফুজিয়ান প্রদেশের গভর্নর থাকাকালীন দুইবার বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন। সে কথাও উল্লেখ করেছেন চীনের রাষ্ট্রপ্রধান।
প্রেসিডেন্ট শির উদ্বৃতি দিয়ে শফিকুল আলম বলেন, তিনি বাংলাদেশি আম ও কাঁঠাল খেয়েছেন। এগুলো সুস্বাদু। আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশ আগামী মৌসুমে এ দুটি ফল চীনে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করবে।
চীনা প্রেসিডেন্ট ও প্রধান উপদেষ্টা চীনের পিপলস গ্রেট হলে করা বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
তারা দুই দেশের সম্পর্ককে জোরদার করা ও ঢাকা-বেইজিংয়ের পারস্পরিক ও কৌশলগত স্বার্থকে এক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার উপায় নিয়েও আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের বাজারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সি৩২ ইলেকট্রিক বাইক এনেছে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড রিভো। অত্যাধুনিক ৭২ ভোল্ট ২৬ অ্যাম্পিয়ার সম্পূর্ণ গ্রাফিন ব্যাটারি পরিচালিত এই ইলেকট্রিক বাইকের উদ্বোধন ঘোষণা করেন রিভো বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ভেন নি।
ফিচার
সি৩২-এর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য শক্তিশালী ১৮০০ ওয়াট মোটর, যা ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে। বাইকটির ইকো মোডে গতি ৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং একবার চার্জে এটি ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে।
অন্যদিকে স্পোর্ট মোডে সর্বোচ্চ গতি ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং এক চার্জে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।
সি৩২ ইলেকট্রিক বাইকে উন্নত ৭২ ভোল্ট ২৬ অ্যাম্পিয়ার গ্রাফিন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে, যা পাঁচ শতাধিক চার্জিং সাইকেল সাপোর্ট করে এবং প্রতিটি পূর্ণ চার্জে মাত্র ২.০৮ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে।
ব্যাটারিটি সম্পূর্ণ চার্জ হতে ১০.৬ ঘণ্টা সময় নেয়, যা রাতে চার্জ দিয়ে দিনব্যাপী ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
নিরাপত্তা এবং আরামকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে রিভো সি৩২। এতে রয়েছে সামনে ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনে ড্রাম ব্রেক সিস্টেম, যা সর্বোচ্চ স্টপিং পাওয়ার নিশ্চিত করে।
ফ্রন্ট ও রিয়ার হাইড্রোলিক সাসপেনশন থাকার ফলে রাইডাররা মসৃণ ও আরামদায়ক রাইড উপভোগ করতে পারেন। এমনকি অপ্রশস্ত বা অসমান রাস্তাতেও।
রাতে নিরাপদ যাত্রার জন্য সি৩২-এ রয়েছে পূর্ণ এলইডি লাইটিং সিস্টেম, যার মধ্যে এলইডি হেডলাইট, টেইললাইট এবং টার্ন সিগন্যাল অন্তর্ভুক্ত।
রিভো সি৩২ শুধু শক্তিশালী পারফরম্যান্সই দেয় না, এটি ডিজাইনেও বেশ কার্যকর। ১৪০ কেজি ওজনের মজবুত অথচ হালকা ফ্রেম এবং সামনে ও পিছনে ৯০/৮০-১২'' ভ্যাকুয়াম টায়ার যুক্ত বাইকটি দুর্দান্ত গ্রিপ এবং স্থিতিশীলতা প্রদান করে।
২০৫ এমএম পর্যন্ত গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স থাকায় এটি যেকোনো ধরনের রাস্তার জন্য উপযোগী। সিট বাকেটে ২৪ লিটার স্টোরেজ স্পেস রয়েছে, যা ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বহনের জন্য আদর্শ।
ব্যবহারকারীবান্ধব ডিজাইন এবং আরামের সমন্বয়ে এটি শহরের যাতায়াতকারী এবং দূরপাল্লার রাইডারদের জন্য একটি পারফেক্ট পছন্দ।
এখন থেকে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯০০ টাকা মূল্যে বাংলাদেশের সব শোরুমে পাওয়া যাচ্ছে।
সি৩২ যাতায়াতকে সহজ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব করতে উন্নত প্রযুক্তি, শক্তিশালী পারফরম্যান্স নিশ্চিত করছে, যা প্রতিদিনের যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবেশ সচেতন রাইডারদের জন্য আদর্শ হতে পারে।
আরও পড়ুন:আলু রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এ স্থলবন্দর দিয়ে নতুন করে আরও ১০৫ টন আলু গিয়েছে নেপালে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৫৫৪ টন আলু নেপালে রপ্তানি করা হলো।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কোয়ারিনটিন ইন্সপেক্টর উজ্জল হোসেন জানান, বুধবার বিকেলে স্থলবন্দর দিয়ে পাঁচটি ট্রাকে ১০৫ টন আলু নেপালে গেছে।
তিনি জানান, আলুগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এগুলো রপ্তানি করছে থিংকস টু সাপ্লাই ও ফাস্ট ডেলিভারি নামে দুটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে থিংকস টু সাপ্লাই ৪২ ও ফাস্ট ডেলিভারি ৬৩ টন রপ্তানি করে। এ ছাড়াও বন্দরটি দিয়ে হুসেন এন্টারপ্রাইজ, ক্রসেস এগ্রো, সুফলা মাল্টি প্রোডাক্টস লিমিটেড এবং লোয়েড বন্ড লজিস্টিক নামের কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানও নেপালে আলু রপ্তানি করছে।
উজ্জ্বল হোসেন বলেন, রপ্তানিকারকরা প্রয়োজনীয় নথিসহ অনলাইনে আবেদন করলে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের ল্যাবে পরীক্ষা করার পর ফাইটোসেনেটারি সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। রপ্তানিকৃত আলুগুলো স্টারিজ এবং লেডিও রোজেটা জাতের।
মন্তব্য