ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আধুনিক প্রযুক্তির ভ্যাট আদায়ের মেশিন ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) চালুর পর এর সুফল মিলছে। প্রচলিত প্রথায় যে পরিমাণ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আদায় হয়, ইএফডি মেশিন বসানোর পর তার চেয়ে বহুগুণ আহরণ হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, একটি দোকানে আগে যেখানে মাসে গড়ে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকার ভ্যাট আদায় হতো, সেখানে ইএফডি মেশিন বসানোর পর আদায় হচ্ছে গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। তার মানে ভ্যাট আদায়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ইএফডি ব্যবহারে।
ভ্যাট আদায় বাড়াতে সারা দেশে তিন লাখ ইএফডি মেশিন বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। আগামী তিন বছরে পর্যায়ক্রমে এসব মেশিন ভ্যাট পরিশোধে সামর্থ্য রয়েছে- এমন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসানো হবে। ইতোমধ্যে ক্রয়সংক্রান্ত এবং অর্থনৈতিক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ-সংক্রান্ত দরপ্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ইএফডি মেশিন বসানো সম্পন্ন হলে বছরে কমপক্ষে ‘অতিরিক্ত’ ২৬ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আহরণ হবে। আদায় আরও বৃদ্ধির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
এনবিআর সূত্র জানায়, পরীক্ষামূলক ইএফডি চালুর পর এ পর্যন্ত প্রায় আট হাজার মেশিন বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে সেপ্টেম্বরে ভ্যাট এসেছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। আর আগস্টে আদায় হয়েছে ৩৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
গত বুধবার এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে ইএফডি লটারি ড্র উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য (মূসক মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন) ড. মইনুল খান বলেছেন, ইএফডি মেশিনের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এই মেশিন বসানোর ফলে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। যখন তিন লাখ মেশিন বসানো সম্পন্ন হবে, তখন দীর্ঘমেয়াদে আরও সুফল মিলবে বলে মত দেন তিনি।
ভ্যাট আদায় বাড়াতে ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন পরীক্ষামূলক চালু করা হয়। অতিমারি করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে এর কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। এখন আবার জোর দেয়া হয়েছে। এই ব্যবস্থা জনপ্রিয় ও ক্রেতাদের ভ্যাট দিতে উৎসাহিত করতে গত বছর থেকে নিয়মিত লটারির ড্রয়ের আয়োজন করে আসছে এনবিআর। ইএফডি হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির হিসাব যন্ত্র। এটি ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার বা ইসিআরের উন্নত সংস্করণ। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এই যন্ত্র বসানোর ফলে এনবিআরের কর্মকর্তারা প্রতিদিনের বিক্রির প্রকৃত তথ্য জানতে পারেন। ফলে তথ্য গোপনের সুযোগ নেই ব্যবসায়ীদের। এই পদ্ধতিতে ফাঁকি বন্ধ হওয়ায় ভ্যাট আদায় বর্তমানের চেয়ে বহুগুণ বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছে সরকার।
বর্তমানে মোট রাজস্বের ৩৯ শতাংশই আদায় হয় ভ্যাট থেকে। ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, বিপণিবিতান, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ ২৫টি খাতে ইএফডি বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দৈনিক গড়ে বিক্রয় ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভ্যাটমুক্ত। এর বেশি হলে প্রযোজ্য হারে ভ্যাট দিতে হয়। চলতি অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট থেকে আসবে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
আদায় করবে এজেন্ট: আগে সিদ্ধান্ত ছিল, ব্যবসায়ীদের ইএফডি মেশিন সরবরাহ করবে এনবিআর। পরবর্তী সময়ে ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এজেন্টের মাধ্যমে আদায়ের পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ জন্য ‘জেনেক্স ইনফোসিস লি.’ নামে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। যে পরিমাণ ভ্যাট আহরণ হবে তার ভিত্তিতে নির্ধারিত হারে কমিশন দেয়া হবে। এই প্রথম বেসরকারি খাতের একটি প্রতিষ্ঠানকে রাজস্ব আদায়ে অনুমতি দিল সরকার। প্রতিষ্ঠানটি মেশিন সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। বিনিময়ে পাবে সার্ভিস চার্জ বা কমিশন। কমিশনের হার আদায়কৃত ভ্যাটের শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ হতে পারে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানকে রাজস্ব আদায়ের মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেয়া যায় কি না– এ প্রশ্নের উত্তরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সিস্টেম অটোমেশন হলে কোনো সমস্যা নেই। আমরা অটোমেশন সম্পন্ন করেছি। তা ছাড়া পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস বা পিপিআর অনুযায়ী এতে কোনো বাধা নেই। বর্তমান পিপিআরের সঙ্গে ভ্যাট আইনের কোনো সাংঘর্ষিক নেই বলে মত দেন ওই কর্মকর্তা।
এনবিআর বলেছে, ইএফডি বসানো সম্পন্ন হলে রাজস্ব আয় বাড়বে। ঘরে বসেই তদারক করা যাবে। সূত্র জানায়, বর্তমানে অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩ লাখ ৮০ হাজার। এনবিআর দাবি করেছে, এখন ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান মাসিক ভ্যাট রিটার্ন জমা দেয়।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে ২০ লাখ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে কতটি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট দেয়ার সামর্থ্য আছে, তার কোনো সঠিক সংখ্যা নেই। জানা যায়, যোগ্য প্রতিষ্ঠান নিয়ে জরিপ করছে রাজস্ব বোর্ড।
যোগাযোগ করা হলে জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড কোম্পানির সচিব জুয়েল রাশেদ সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, আমাদের সঙ্গে চুক্তি হয়নি এখনো। এটি হলে নিয়োগের শর্তসমূহ জানা যাবে। এরপর কাজ শুরু হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ কাজে অভিজ্ঞতা না থাকলেও কোনো অসুবিধা হবে না। কারণ আমরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছি। আমরা শুধু মেশিন সরবরাহ করব এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেব। ফলে কাজটি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ নয়- মন্তব্য করেন তিনি।
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায় বিশাল ভ্যাট ফাঁকি
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে এ খাতের অংশ চলতি মূল্যে সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা, যা শতকরা হারে ১৫ শতাংশ। জিডিপির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে পাঁচটি খাত প্রধান চালিকাশক্তি। এর মধ্যে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা অন্যতম। উৎপাদন বা ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের পরই এ খাতের অবস্থান। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায় বিপুল পরিমাণ ভ্যাট আহরণের সম্ভাবনা থাকলেও বাস্তবতা হচ্ছে খুব কমই ভ্যাট আসে। বছরে মাত্র ৭০০-৮০০ কোটি টাকা। অথচ আদায়ের সম্ভাবনা আছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায় আদায়যোগ্য ভ্যাটের ৯০ শতাংশই ফাঁকি হয়। এর প্রধান কারণ দুটি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই আওতার বাইরে। দ্বিতীয়ত, অটোমেশন না করা।
এনবিআরের সাবেক সদস্য রেজাউল হাসান বলেন, ‘ছোট ব্যবসায়ীদের মূল সমস্যা হচ্ছে তারা যে লেনদেন করে থাকে, তার জন্য কোনো হিসাব সংরক্ষণ করে না। যে কারণে সরকার থেকে রেয়াত বা ভ্যাট ফেরত পায় না। তিনি আরও বলেন, ‘এ খাত থেকে ভ্যাট আদায় বাড়াতে হলে সামর্থ্যবান সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে আওতায় এনে অটোমেশন করতে হবে। তা হলে আদায় বর্তমানের চেয়ে বহুগুণ বাড়বে।’
জানা যায়, দু-তিনটি খাত ছাড়া বেশির ভাগ খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায় ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, ৫ শতাংশ ভ্যাট তাদের জন্য অনেক বেশি। এই হারে ভ্যাট দিতে হলে তাদের ব্যবসায় কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ ‘মূল্য সংযোজন’ করতে হয়। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় এ খাতে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন হয়। কাজেই নিট বা প্রকৃত মূল্য সংযোজন যা হয়, তার ওপর ভিত্তি করেই এ খাত থেকে ভ্যাট আদায় করা উচিত। নিয়ম অনুযায়ী, যেকোনো ব্যবসায় যে পরিমাণ ‘মূল্য সংযোজন’ হয়, তার ওপর ভিত্তি করে প্রযোজ্য হারে ভ্যাট আদায় করে সরকার। মাসিক রিটার্নের সময় এই ভ্যাট পরিশোধ করা হয়।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘২০১৯ সালের ভ্যাট আইন অনুযায়ী ভোক্তার কাছ থেকে সরাসরি ভ্যাট আহরণ করবে খুচরা ও পাইকারি প্রতিষ্ঠান। এ জন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি যন্ত্র বসানোর কথা। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এখন পর্যন্ত অল্পসংখ্যক প্রতিষ্ঠানে তা স্থাপন করতে পেরেছে। ফলে ভ্যাট আদায় নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। যতদিন পর্যন্ত রাজস্ব বোর্ড সব দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন স্থাপন করতে না পারে, ততদিন পর্যন্ত খুচরা ও পাইকারি থেকে ভ্যাট আদায় বাড়বে না।’
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৬৫ টাকা বাড়িয়ে রেকর্ড ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের সাড়ে তিন মাসে অষ্টমবারের মতো স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হলো।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৃহস্পতিবার বৈঠক করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। নতুন নির্ধারিত এই দাম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই কার্যকর হবে।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী- ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৬৫ টাকা বেড়ে ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৯৯৪ টাকা বেড়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ২০২ টাকা, ১৮ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৬৫৬ টাকা বেড়ে ৯৭ হাজার ৮৮৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৩৮৮ টাকা কমে ৭৮ হাজার ৮০২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সবশেষ দশ দিন আগে ৮ এপ্রিল বাজুস ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৭৪৯ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা নির্ধারণ করে। এতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। ১০ দিনের ব্যবধানে আবারও দাম বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে দেশের স্বর্ণের বাজারে উচ্চ দামের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হলো।
অবশ্য স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতাদের আরও বেশি অর্থ গুনতে হবে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে স্বর্ণের গহনা বিক্রি করা হয়। সেসঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হবে ১ লাখ ২৯ হাজার ১১৯ টাকা।
এদিকে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেট ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা আছে।
আরও পড়ুন:বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
খোলা সয়াবিন তেলের দাম কমার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি।
সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘…১৪৯ টাকা যেটা খোলাবাজারে ছিল, সেটাকে দুই টাকা কমিয়ে ১৪৭ টাকা সর্বোচ্চ খোলাবাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি হবে।
‘আর আমাদের সয়াবিন তেলের প্রতি লিটার, বোতল যেটা, পেট বোতলে যেটা, যেটার মধ্যে সিল করা থাকে, সেইটা আমাদের নির্ধারিত ছিল ১৬৩ টাকা। সেইখান থেকে বৃদ্ধি করে ১৬৭ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।’
খোলা সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের বোতলের দামের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আর খোলাবাজারে সয়াবিন তেল পাঁচ লিটারের বোতল ৮০০ টাকা ছিল। সেটাকে ৮১৮ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।’
পাম অয়েলের দাম নিয়ে টিটু বলেন, ‘সুপার পাম অয়েল তেল প্রতি লিটার, এটা আগে নির্ধারণ করা ছিল না। এবার আমরা নির্ধারণ করে দিচ্ছি। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৩৫ টাকা লিটার।
‘তো এই চারটা পণ্যের দাম, এইটা কিন্তু আমরা নির্ধারণ করলাম না। আমাদের যারা অ্যাসোসিয়েশনের, তাদের রিকমেন্ডেশনে এবং আমাদের ট্যারিফ কমিশনের অনুমোদনক্রমে উনারা উনাদের অ্যাসোসিয়েশন থেকে চিঠি দিয়ে আগামীকাল থেকে এই মূল্য উনাদের মিল গেট থেকে উনারা কার্যকরী করবে।’
আরও পড়ুন:কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি জানিয়েছিল যে আর কোনো ব্যাংককে একীভূতকরণের সুযোগ দেয়া হবে না। তবে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের জন্য ব্যাংক এশিয়াকে অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন মাত্রার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এশিয়া বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করছে। সূত্র: ইউএনবি
করাচিভিত্তিক ব্যাংক আলফালাহ বুধবার (১৭ এপ্রিল) পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জকে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ব্যাংক আলফালাহ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের বাংলাদেশ পরিচালনা, সম্পদ ও দায় অধিগ্রহণের জন্য প্রাপ্ত বাধ্যবাধকতামুক্ত ইঙ্গিতমূলক প্রস্তাবের ক্ষেত্রে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
এতে বলা হয়, ব্যাংক আলফালাহ বাংলাদেশের ব্যাংক এশিয়ার জন্য যথাযথ কার্যক্রম শুরুর জন্য স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের অনুমোদন চাইছে।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি একীভূতকরণ নিয়ে খুব বেশি আলোচনার অংশ নয়।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে দুই ব্যাংকের নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ পাবে বলে।
বিষয়বস্তু অবহিত না করে ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থিভাবে ‘রূপান্তর’ শিরোনামের একটি নাটক প্রচার করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’কে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে ওয়ালটন।
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সব ধরনের বিজ্ঞাপনী চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিষয়টির জন্য ওয়ালটন গ্রুপ ক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
ওয়ালটনের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’ এর স্বত্বাধিকারী মোহন আহমেদকে মঙ্গলবার ওই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।
ওয়ালটনের পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট রাইসুল ইসলাম রিয়াদ স্বাক্ষরিত আইনি নোটিশে উল্লেখ করে যা বলা হয়, ‘আপনি লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান এর স্বত্বাধিকারী। আপনার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার নির্মিত ছয়টি নাটকে ওয়ালটন ফ্রিজ ব্র্যান্ডিং করতে সম্মত হয়। শর্ত থাকে যে, উক্ত নাটকসমূহে দেশের আইন, নীতি, নৈতিকতা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হয় এরকম কোনো বিষয় অর্ন্তভুক্ত হবে না। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, উক্ত নাটকসমূহের মধ্যে ‘রূপান্তর’ নাটকটিতে এমন কিছু বিষয় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে, যাতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ও মানুষের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে।’
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘ওয়ালটন কর্তৃপক্ষকে নাটকটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে পূর্বে অবহিত না করে রূপান্তর নাটক প্রচার করায় আপনার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হলো এবং সেই সঙ্গে কেন আপনার বিরুদ্ধে ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থিভাবে নাটক প্রচারের জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে জানানোর জন্য বলা হলো।’
এর আগে ফেসবুক-ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকে ‘রূপান্তর’ নাটকটি প্রত্যাহারের জন্য বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে নির্দেশ দেয় ওয়ালটন। তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুক-ইউটিউবসহ সব মাধ্যম থেকে নাটকটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
এরপর বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ওয়ালটন গ্রুপের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থি নাটকে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’কে লিগাল নোটিশ দেয় ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।
আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ওয়ালটনের ভাষ্য, দেশের মানুষের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনো কর্মকাণ্ড কখনও তারা সমর্থন করে না এবং এসব কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকে না। অনাকাঙ্ক্ষিত এই বিষয়টির জন্য ওয়ালটন গ্রুপ মর্মাহত এবং সম্মানিত ক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন রূপালী ব্যাংক পিএলসির মহাব্যবস্থাপক মো. ফয়েজ আলম। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে তিনিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকের আট জন মহাব্যবস্থাপককে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।
ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি হওয়ার আগে তিনি রূপালী ব্যাংক পিএলসিতে মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মো. ফয়েজ আলম ১৯৯৮ সালে বিআরসির মাধ্যমে সিনিয়র অফিসার পদে রূপালী ব্যাংকে যোগদান করেন। কর্মজীবনে ব্যাংকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখার শাখা ব্যবস্থাপক, জোনাল অফিস এবং প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। পেশাগত প্রয়োজনে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও আরব অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণসহ দেশ-বিদেশে ব্যাংকিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন।
ফয়েজ আলমের জন্ম ১৯৬৮ সালে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার যোগীরনগুয়া গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ অনার্সসহ এমএ পাশ করার পর এমফিল ডিগ্রিও অর্জন করেন খ্যাতিমান এই ব্যাংকার।
পেশাগত জীবনের বাইরে ফয়েজ আলম একজন সফল লেখকও। বাংলাদেশে তিনি অগ্রণী উত্তর উপনিবেশী তাত্ত্বিক, প্রাবন্ধিক ও কবি হিসেবে বিশেষ খ্যাতিমান। এডওয়ার্ড সাঈদের বিখ্যাত গ্রন্থ অরিয়েন্টালিজম-এর অনুবাদক হিসেবেও তার আলাদা খ্যাতি আছে। তার পনেরটির বেশি গ্রন্থ এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে।
ভোজ্যতেলের ওপর শুল্ক অব্যাহতির সময়সীমা শেষ হয়েছে সোমবার (১৫ এপ্রিল)। এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিভিওআরভিএমএফএ) সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।
বিভিওআরভিএমএফএ’র নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম মোল্লার পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কাঁচামাল আমদানি ও ভোজ্যপণ্য উৎপাদনে কর অব্যাহতির মেয়াদ ১৫ এপ্রিল শেষ হচ্ছে বিধায় পরদিন ১৬ এপ্রিল থেকে ভ্যাট অব্যাহতির আগের নির্ধারিত মূল্যে পণ্য সরবরাহ করা হবে।
নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ১৭৩ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতল ৮৪৫ টাকা ও এক লিটার পাম তেল ১৩২ টাকায় বিক্রি করা হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত ফেব্রুয়ারিতে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত (অপরিশোধিত) সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে।
এদিকে মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করা যেতে পারে, তবে সময় লাগবে।
‘ভোজ্যতেলের নতুন চালান আমদানির ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
আরও পড়ুন:প্রবাসীদের আয়ের একটি বড় অংশই আসে ঢাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখাগুলোতে। অর্থাৎ প্রবাসীদের পরিবারের বেশিরভাগই ঢাকায় থাকেন বা তাদের অধিকাংশ অ্যাকাউন্ট ঢাকার ব্যাংক শাখায়।
ইউএনবি জানায়, রেমিট্যান্সের জেলাভিত্তিক চিত্র নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। সিলেট তৃতীয় এবং কুমিল্লা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
এরপরে রয়েছে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর ও নরসিংদীর অবস্থান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয় প্রতিবেদনে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে প্রবাসীরা ১ হাজার ৫০৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২১৬ কোটি ডলার। তার আগের মাস জানুয়ারিতে দেশে প্রবাসী আয় ছিল ২১০ কোটি ডলার।
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়কালে ঢাকা জেলায় এসেছে ৫২৩ কোটি ডলার এবং চট্টগ্রাম জেলায় এসেছে ১৪২ কোটি ডলার।
এই সময়ে সিলেট জেলা ৮৭০ মিলিয়ন ডলার, কুমিল্লা ৮১০ মিলিয়ন ডলার এবং নোয়াখালী ৪৬০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ কোটি, ফেনীতে ৩৭ কোটি, মৌলভীবাজারে ৩৬ কোটি, চাঁদপুরে ৩৫ কোটি ডলার এবং নরসিংদীতে ২৫০ মিলিয়ন ডলার এসেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলো থেকে বেশি প্রবাসী আয় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এমনটা হচ্ছে না। কারণ অনেক প্রবাসী বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। বরং তারা (প্রবাসীরা) দেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে অর্থ পাচার বাড়ছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য