অবশেষে বাংলাদেশও একই পথ অনুসরণ করল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপের দেশগুলোর মতো বাংলাদেশ ব্যাংকও মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে রেপো বা নীতি সুদহার বাড়িয়েছে।
এতদিন এই হার ছিল ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। দশমিক ২৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়িয়ে তা ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আমেরিকান মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার ক্রমাগত মান হারানোর প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতির বাড়তি চাপ সামলাতে তিন মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা বাড়ানো হলো এই নীতি সুদহার।
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে সেটি সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো রিসার্চ মুনতাসির কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অর্থনীতিতে যখন রেপো সুদের হার কম থাকে, তখন টাকার প্রবাহ তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। আর টাকার প্রবাহ বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। ফলে যখন মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায় তখন নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর প্রধান কারণ হলো টাকার প্রবাহ আগের চেয়ে কমিয়ে আনা। এতে ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি কমে আসে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকও রেপো সুদহার বাড়িয়ে ঠিক কাজটিই করেছে বলে আমি মনে করি।’
নতুন এই সুদহার আগামী রোববার থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে অবশ্য অন্যান্য নীতি সুদহার যেমন- রিভার্স রেপো ৪ শতাংশ, বিশেষ রেপো ৮ শতাংশ ও ব্যাংক রেটে ৪ শতাংশে কোনো বদল আনা হয়নি।
এর আগে গত ৩০ জুন চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় রেপো সুদহার ৫ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
আর তারও এক মাস আগে ২৯ মে রেপো সুদহার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশে উন্নীত করে। উভয় ক্ষেত্রেই মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এমন নীতি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
রেপো সুদহার হিসেবে পরিচিত নীতি সুদহার বাড়ানোর অর্থ হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ ধার করতে এখন বাড়তি সুদ দিতে হবে ব্যাংকগুলোকে। ব্যাংকগুলো সাধারণত এক থেকে সাত দিনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এমন সুদে টাকা ধার করে থাকে। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে তারল্য ও বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে সুদহারে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়, তাকে বলে ব্যাংক রেট। আর রিভার্স রেপোর মাধ্যমে বাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে।
বৃহস্পতিবার নীতি সুদহার বাড়ানোর আগে বিদেশি মুদ্রায় স্বল্পমেয়াদি ঋণের বিপরীতে সুদহারও ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এসওএফআর বা লাইবরের সঙ্গে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ শতাংশ যোগ করে এ সুদহার নির্ধারণ করা হয়।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে যুদ্ধ বাধলে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম চড়তে থাকে। জ্বালানি ও তেল, খাদ্যশস্যসহ পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে প্রায় দেশই মূল্যস্ফীতির চাপে পড়ে।
বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। গত জুনে তা ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে পৌঁছায়, যা ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরের মাসে সেখান থেকে কমে জুলাইয়ে তা ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়। তবে আগস্টের তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি পরিসংখ্যান ব্যুরো।
মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়াচ্ছে। গত জুলাইয়ে চতুর্থবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার বাড়ায়।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আবার সুদহার বাড়ানোর পথে হাঁটবে না বলে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালকুদার জানালেও বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে রেপো সুদহার বাড়ানোর ঘোষণা এলো।
বাংলাদেশে গত দুই বছর এ সুদহার অপরিবর্তিত ছিল। কোভিড মহামারিকালে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এ বিষয়ে ভাবতে হয়নি। উল্টো ভাইরাস সংক্রমণে লকডাউনে জনজীবন ও অর্থনীতিতে স্থবিরতার মধ্যে ২০২০ সালের ২৯ জুলাই নীতি সুদহার কমিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই সময় অর্থের জোগান বাড়াতে রেপো (পুনঃক্রয় চুক্তি) ও রিভার্স রেপোর সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ‘সম্প্রসারণমুখী’ নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি জানিয়েছিল যে আর কোনো ব্যাংককে একীভূতকরণের সুযোগ দেয়া হবে না। তবে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের জন্য ব্যাংক এশিয়াকে অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন মাত্রার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এশিয়া বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করছে। সূত্র: ইউএনবি
করাচিভিত্তিক ব্যাংক আলফালাহ বুধবার (১৭ এপ্রিল) পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জকে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ব্যাংক আলফালাহ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের বাংলাদেশ পরিচালনা, সম্পদ ও দায় অধিগ্রহণের জন্য প্রাপ্ত বাধ্যবাধকতামুক্ত ইঙ্গিতমূলক প্রস্তাবের ক্ষেত্রে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
এতে বলা হয়, ব্যাংক আলফালাহ বাংলাদেশের ব্যাংক এশিয়ার জন্য যথাযথ কার্যক্রম শুরুর জন্য স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের অনুমোদন চাইছে।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি একীভূতকরণ নিয়ে খুব বেশি আলোচনার অংশ নয়।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে দুই ব্যাংকের নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ পাবে বলে।
মেহেরপুরের মুজিবনগরে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকের কর্মচারীকে অজ্ঞান করে ব্যাংক থেকে টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার শিবপুরে সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় কর্মচারী সাগর শেখকে অজ্ঞান করে টাকা লুটে নিয়ে পালিয়ে যায় অজ্ঞাত দুইজন।
ঘটনার বেশ কিছু সময় পরে স্থানীয়রা অসুস্থ অবস্থায় সাগর শেখকে মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শিবপুর গলাকাটা বাজারে বিপ্লব হোসেন এজেন্ট হিসেবে ব্যাংক পরিচালনা করে আসছেন। সোমবার দুপুরে ব্যাংক কর্মচারী সাগর শেখ কাজ করছিলেন। এ সময় অজ্ঞাতরা ব্যাংকে প্রবেশ করে তাকে অজ্ঞান করে। আশপাশের লোকজন টের পাওয়ার আগেই তারা ব্যাংক থেকে টাকা লুটে নিয়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা আরও জানায়, ঘটনার আগে তারা ব্যাংকে অজ্ঞাত দুজনকে প্রবেশ করতে দেখেছিলেন, তবে তারাই যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। তাদের প্রবেশের কিছুক্ষণ পরে সাগরকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখেন স্থানীয়রা।
ব্যাংক এজেন্ট বিপ্লব হোসেন জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরা ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। অজ্ঞাতরা এ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করে ডাকাতি করেছে বলে ধারণা তার।
বিপ্লব হোসেন আরও জানান, প্রতিদিন ব্যাংকে অনেক টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। এর সঙ্গে প্রতিদিনের লেনদেনের আরও টাকা থাকে। তাই কত টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে তা সঠিক হিসাব না করে বলা যাচ্ছে না।
মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ব্যাংক কর্মচারীর শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। চোখ খুলে তাকাচ্ছে, কিন্তু তার চেতনা ফেরেনি। তাকে কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়েছে না চোখে চেতনানাশক স্প্রে করা হয়েছে তা নিশ্চিত হতে সময় লাগবে।’
মুজিবনগর থানার ওসি উজ্জ্বল দত্ত জানান, খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হাসপাতালে ভর্তি কর্মচারী সুস্থ হলে তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার আশা করা হচ্ছে, তবে পুলিশের তদন্ত শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন:প্রবাসীদের আয়ের একটি বড় অংশই আসে ঢাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখাগুলোতে। অর্থাৎ প্রবাসীদের পরিবারের বেশিরভাগই ঢাকায় থাকেন বা তাদের অধিকাংশ অ্যাকাউন্ট ঢাকার ব্যাংক শাখায়।
ইউএনবি জানায়, রেমিট্যান্সের জেলাভিত্তিক চিত্র নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। সিলেট তৃতীয় এবং কুমিল্লা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
এরপরে রয়েছে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর ও নরসিংদীর অবস্থান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয় প্রতিবেদনে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে প্রবাসীরা ১ হাজার ৫০৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২১৬ কোটি ডলার। তার আগের মাস জানুয়ারিতে দেশে প্রবাসী আয় ছিল ২১০ কোটি ডলার।
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়কালে ঢাকা জেলায় এসেছে ৫২৩ কোটি ডলার এবং চট্টগ্রাম জেলায় এসেছে ১৪২ কোটি ডলার।
এই সময়ে সিলেট জেলা ৮৭০ মিলিয়ন ডলার, কুমিল্লা ৮১০ মিলিয়ন ডলার এবং নোয়াখালী ৪৬০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ কোটি, ফেনীতে ৩৭ কোটি, মৌলভীবাজারে ৩৬ কোটি, চাঁদপুরে ৩৫ কোটি ডলার এবং নরসিংদীতে ২৫০ মিলিয়ন ডলার এসেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলো থেকে বেশি প্রবাসী আয় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এমনটা হচ্ছে না। কারণ অনেক প্রবাসী বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। বরং তারা (প্রবাসীরা) দেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে অর্থ পাচার বাড়ছে।
আরও পড়ুন:ঈদের আগের সপ্তাহে (১ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত) প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৪৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। রেমিট্যান্সে এই বাড়তি গতির মূল কারণ প্রবাসীরা ঈদ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন।
ব্যাংকাররা বলছেন, গত মার্চ মাসে প্রতি সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। সে হিসাবে, এপ্রিলের প্রথম ৫ দিনে রেমিট্যান্স ভালোই এসেছে। মূলত, প্রবাসীরা ঈদ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে অর্থ পাঠানোর কারণেই বেড়েছে রেমিট্যান্স।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, টানা দু’মাস রেমিট্যান্স আয়ে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকার পর ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় দর বাড়ার ঘটনায় মার্চে রেমিট্যান্স দুশ’ কোটি ডলারের নিচে নেমে আসে।
মার্চে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৯৯ কোটি ডলার দেশে পাঠান। ফেব্রুয়ারিতে তা ছিল ২১৬ কোটি ডলার এবং জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, আগের বছরের একই মাসের ২০২ কোটি ডলারের তুলনায় গত মার্চে ১ দশমিক ২৪ শতাংশ রেমিট্যান্স কম এসেছে।
ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্চ মাসের বেশিরভাগ দিনে ডলারের বিনিময় দর কমে দাঁড়ায় ১১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১১৩ টাকায়। সে তুলনায় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ডলারের দর ছিল ১২০ থেকে ১২২ টাকা পর্যন্ত।
তারা বলছেন, ডলারের দাম কমার এই ঘটনা প্রবাসীদের বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে। আর তার প্রভাব পড়ে রেমিট্যান্সের সার্বিক চিত্রে।
আরও পড়ুন:দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চলেছে বেসিক ব্যাংক। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবং সিটি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বৈঠকে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার এবং ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিনের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে এই কৌশলগত একীভূতকরণের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়। সূত্র: ইউএনবি
বেসিক ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের মধ্যে একীভূতকরণ স্বেচ্ছায়ই হতে যাচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়। ১৯ মার্চ সিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ একীভূতকরণের সুপারিশ করার পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তীতে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও উভয় ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।
সংযুক্তিকরণ সত্ত্বেও আগামী তিন বছর দুই ব্যাংক আলাদাভাবে তাদের আর্থিক হিসাব দেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
দেশে ব্যাংক একীভূতকরণের বিস্তৃত প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বর্তমানে বেশ কয়েকটি ব্যাংক সম্ভাব্য সংযুক্তিকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছে। এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পর জনগণকে জানানো হবে।
এ নিয়ে মোট আটটি ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংক পাঁচটি আর বেসরকারি ব্যাংক তিনটি। গত মার্চ মাসে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চুক্তি করেছে পদ্মা ব্যাংক। এর মধ্য দিয়ে ব্যাংক একীভূত করার ধারা শুরু হয়।
এ ছাড়া রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (বিডিবিএল) সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির (পিএলসির) উদ্যোগে ঢাকায় রোজাদারদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
রাজধানীর মহাখালীর আমতলী ঈদগাহ মাঠে বৃহস্পতিবার এ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী এবং ঢাকা-১৭ আসনের এমপি মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা সেন্ট্রাল জোনপ্রধান মাহমুদুর রহমান।
ওই সময় সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গুলশান সার্কেল-১ শাখাপ্রধান এ এস এম নাসির উদ্দিনসহ কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেয়ার শর্ত হিসেবে ২০২৪ সালের মার্চে নির্ধারিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি তাদের অবস্থান তুলে ধরে।
ঋণের তৃতীয় কিস্তির ৪৭০ কোটি ডলার দেয়ার আগে আর্থিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য বাংলাদেশ সফর করছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী ২০২৪ সালের মার্চে ১ হাজার ৯২৬ কোটি ডলার রিজার্ভ রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু প্রকৃত রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, ‘শর্ত পূরণে আইএমএফ কিছুটা কঠোর হওয়ায় সংস্থাটির ঋণের তৃতীয় কিস্তি নিয়ে জটিলতা ও অনিশ্চয়তা রয়েছে।’
‘রিজার্ভ ঘাটতির কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বেশ কিছু ধারণা জানিয়েছেন। আইএমএফ শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে ইতিবাচক হবে বলে আমরা আশা করছি।’
ডলার সংকট নিরসনে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি করে সরকার। ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে আইএমএফের একটি পর্যালোচনা মিশন বাংলাদেশ সফর করছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আইএমএফ নিট রিজার্ভের প্রয়োজনীয়তা সহজ করলেও বাংলাদেশের পক্ষে মার্চের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন।
‘বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি বাংলাদেশের জন্য নিট রিজার্ভের নতুন মান নির্ধারণ করতে পারে বা ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড় বিলম্বিত করতে পারে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য