পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, দুই বছরের করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল বাংলাদেশের অর্থনীতি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ফের বিপদে ফেলে দিয়েছে। তার পরও বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে আমরা ভালো অবস্থায় আছি। আমাদের রপ্তানি আয় বাড়ছেই, প্রবাসীরা বেশি বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন। মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ঠিক, তবে শিগগিরই নিম্নমুখী হবে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমলেও এখনো ছয় মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। সব মিলিয়ে অক্টোবর থেকে আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে।
মিন্টো রোডে নিজের বাসায় নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন আশার কথাই শুনিয়েছেন মৃদুভাষী কিন্তু দৃঢ়চেতা ‘প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী’ মানুষ এম এ মান্নান।
নিউজবাংলা: দুই বছরের বেশি সময়ের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় কেমন চলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি?
এম এ মান্নান: আমি সরকারে রয়েছি টানা ৯ বছর। অর্থনীতিকে মোটামুটি কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। ২০০৯-১০ সালের দিকে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখেছিলাম, এই দুটো পাশাপাশি ছিল, একটির সঙ্গে আরেকটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এটিই নিয়ম।
২০১৯ সালে প্রথম যখন করোনার আবির্ভাব হয় অপ্রত্যাশিতভাবে। পৃথিবীর কোনো বৈজ্ঞানিক, কেউ-ই এটা সম্পর্কে বুঝতে পারেননি চীনের উহানে যখন শুরু হয়। কোন দিকে যাচ্ছিল? কেউ বোঝেননি।
আমি মনে করেছিলাম, আমাদের দিকে মনে হয় আসবে না। পশ্চিমের দিকে চলে গেল। সিল্করুট ধরে প্রায়ই যাচ্ছিল ইউরোপ হয়ে পশ্চিমের দিকে। পরে যখন দেখলাম আবার আমাদের দিকে আসছে এবং ভালোই এসেছিল, বড় ধাক্কা বলা যায়। প্রতিবেশী বিশাল অর্থনীতির দেশ ভারতের ভয়ংকর অবস্থা শুরু হলো। যেহেতু নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আমাদের দিকে অনেক আঘাত আসা শুরু করল।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে, প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমাদের যে উঠতি সময় ছিল, এটা ভীষণভাবে ধাক্কা খেল। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮-এর কাছাকাছি চলে গিয়েছিল, বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, সেটা ৪-এর কাছাকাছি চলে এলো।
এখানে বলে রাখা উচিত, এই চারও কিন্তু তখন বিস্ময়কর ভালো ছিল। কারণ আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে গিয়েছিল। চীন নেতিবাচকের কাছাকাছি ছিল, অন্যান্য দেশও তাই। আইএমএফের তালিকা আমার অফিসে রয়েছে। সেই অনুযায়ী, এই অঞ্চলের ১২টি দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান চমৎকার ছিল।
সেই জায়গা থেকে ২০২১ সালে যখন ভাবলাম করোনা চলে গেছে, কিন্তু একুশের শেষের দিকে আবার সেকেন্ড ওয়েভ আসা শুরু করল। ২০২২ সালের শুরুতে প্রথম ভালোই উঠল। এখন আবার নামছে। শুধু আমাদের দেশে নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এটা ওঠানামা করছে।
নিউজবাংলা: করোনায় কতটা ক্ষতি হয়েছে অর্থনীতি?
এম এ মান্নান: অবশ্যই আমাদের বড় ক্ষতি করেছে। তার মাশুল এখনো দিতে হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতির তুলনায় আমরা তো খুবই সামান্য অংশ। বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে শতকরা তুলনায় গেলে দুই শতাংশ হব না হয়তো। কিন্তু যেহেতু চলাচল, সংযুক্তি এবং আন্তসম্পর্ক অনেক বেশি, তাই ধাক্কাটা ভালোই লেগেছিল। আমরা যেখানে বিক্রি করি, ইউরোপ-আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, কারণ পূর্ব দিকে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য কম ছিল। ফলে ওই তিন জায়গায় কিন্তু ব্যাপকভাবে ধাক্কা খায়। যে কারণে আমাদের কাজ করার ওয়েজ ইকোনমি, কাজ করার সুযোগ কমে আসে। প্রবাসে আমাদের যে শ্রমিক ভাইয়েরা মাটি কামড়ে পড়েছিল, তাদের বেতন কমে আসছিল। ১০০ দিরহামের জায়গায় মালিক বলছিল এখন ৫০ দিরহাম নাও, দিতে পারছি না। তারা বাড়িতে কম টাকা পাঠাল, রেমিট্যান্স পড়ে গেল।
ইউরোপ-আমেরিকায় মাসে মাসে কাপড় বদলায়। এটা ওই দেশের ফ্যাশন। শীতে, গরমে, শরতে, বসন্তে নানা ধরনের কাপড় পরে তারা, সেটাও তাদের কমে গেল। যেহেতু ওই সময় আয় কমে যায়। আমাদের লক্ষাধিক শ্রমিক গার্মেন্টসে কাজ করে। প্রথমদিকে আমাদের এক্সপোর্টে একটা আঘাত এল। সব মিলিয়ে করোনায় অনেকটা পিছিয়ে গেলাম আমরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে গতিতে আগাচ্ছিলাম, তাতে হোঁচট খেলাম। তবে চলতি বছরের মাঝামাঝি এসে মনে হচ্ছিল আমরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছিলাম। বিশ্বের পণ্ডিতরাও তাই বলছিলেন। কিন্তু এই সময়ে আরেক দুর্ভাগ্য এসে গেল, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ।
নিউজবাংলা: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো চলছে। এই যুদ্ধ আমাদের অর্থনীতিকে কতটা আঘাত করছে?
এম এ মান্নান: দুই বছরের করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলাম আমরা, আমাদের অর্থনীতি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ফের বিপদে ফেলে দিয়েছে। তার পরও বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে আমরা ভালো অবস্থায় আছি। আমাদের রপ্তানি আয় বাড়ছেই, প্রবাসীরা বেশি বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন। মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ঠিক, তবে শিগগিরই নিম্নমুখী হবে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমলেও এখনো ছয় মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। সব মিলিয়ে অক্টোবর থেকে আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে।
তবে আমি বলব, এটা না যুদ্ধ, না শান্তিকর পরিস্থিতি, ঝুলে আছে। আজকালকার যুদ্ধ এতদিন চলে না। এক-দেড় মাসে শেষ হয়ে যায়। অস্ত্রের কারণে বা আলোচনার কারণে। কিন্তু এই দুইটা এখানে ব্যর্থ। রাশিয়া একটা পরাশক্তি। ইউক্রেন তারই এক অংশ ছিল একসময়। ইউক্রেন পরাশক্তি না হলেও আমাদের চেয়ে অনেক বড় শক্তি। তার পেছনে অন্য পরাশক্তি সার্বিকভাবে আছে।
কিন্তু সার্বিকভাবে ইউক্রেন শুধু যুদ্ধের ক্ষেত্র বা পানিপথের মাঠ। যুদ্ধ চলছে মোঘল ও রাজপুতের মধ্যে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, রাশিয়ানরা পুরো চাপ দিচ্ছে না। একটা বিড়াল ইঁদুর খেলা চলছে।
যুদ্ধ শেষ হচ্ছে না কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে। অস্ত্রের চেয়ে, মৃত্যুর চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। পশ্চিমাদের যেহেতু অর্থনৈতিক শক্তি বেশি। ব্যবসা-বাণিজ্য, আর্থিক চলাফেরা তারা নিয়ন্ত্রণ করে। তারা তখন নিষেধাজ্ঞা দিল, অমুকের সঙ্গে এটা করলে আমার সঙ্গে তুমি নাই। গ্রামের খেলা হলে আমরা যেমনটা করতাম। এটা এখন বিশ্ব মানচিত্রে চলছে।
এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা তার নেতৃত্বে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়াকে দাবানোর জন্য এই অস্ত্র ব্যবহার করছে। এটা আমাদের ওপর প্রভাব ফেলে। আমাদের সাবধানে বিকিকিনি করতে হয়।
আমাদের একটা ভীষণ অভিজ্ঞতা আছে নিষেধাজ্ঞার। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কারা আমাদের সঙ্গে ছিল তা আমরা জানি। স্বাধীনতার পরে আমাদের একমাত্র উৎপাদন ছিল পাট। এটা আমাদের বন্ধু নয়, শুধু ক্রেতা কিউবার কাছে বিক্রি করতে গেলে হুঁশিয়ারি করা হলো। বলা হলো, কিউবাতে হাত দিতে গেলে পার পাবে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর জেদ, প্রয়োজন, সাহস থেকে তিনি পাট বিক্রি করলেন।
তখন আমাদের ওপরে এল একটা আঘাত। খাদ্যপণ্যভর্তি জাহাজ অলরেডি ভারতীয় উপমহাসাগরে আছে, চট্টগ্রামে ভিড়বে, আমাদের তখন বেশ খাদ্যাভাব, ওই সময় তারা এটা পরিহার করল। এটা গড়িয়ে গড়িয়ে অনেক দূর গেছে… বলতে চাই না।
নিউজবাংলা: এ যুদ্ধের মধ্যে আমরা কোন অবস্থায় আছি?
এম এ মান্নান: একটা বিশেষ ভারসাম্যহীন অবস্থায় আমরা আছি। পশ্চিমে একটা ভারসাম্যের মধ্যে ছিল, এটা নষ্ট হয়ে গেছে। গত দুই দশকে নতুন ভারসাম্য সৃষ্টির একটা কাজ চলছে। এই ভারসাম্যটা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এক প্রান্তে এশিয়া সঙ্গে রাশিয়া, অন্য প্রান্তে ইউরোপ সঙ্গে মার্কিনিরা। নতুন ভারসাম্য সৃষ্টির কাজ চলছে, ভারসাম্য আসবে। তা ছাড়া চলতে পারে না। আমি মনে করি, আগামী পাঁচ-ছয় বছর লাগবে। ক্রিটিক্যাল মোমেন্টে আছে।
আমাদের মতো অর্থনীতির প্রধান উপজীব্য হলো খাদ্য। আমরা মাঝারি পর্যায়ে উঠছি মাত্র। ওরা অস্ত্র বা অন্যান্য ডিজিটাল জিনিস, ফিন্যান্স। এসবের মধ্যে আছে, আমরা এসবে পৌঁছায়নি। আমাদের এই মুহূর্তে অবস্থান, কাজ করব, খাব, এই পর্যায়ে আছি।
আমরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ইমপোর্ট করতে হয় কিছুটা। ঘরে কিছু খাবার না থাকলে ভীতির মধ্যে থাকি। এ জন্যই স্টক বিল্ডআপ করতে চাই। আমাদের ইমপোর্ট করতে হয়। ইমপোর্টের প্রধান একটা কেন্দ্র রাশিয়া, ইউক্রেন। গম, সানফ্লাওয়ার অয়েল, ভুট্টা, এসব বন্ধ করে দিল। হুহু করে দাম বাড়ল সারা বিশ্বে।
এ ছাড়া ভয়ংকর ভবিষ্যদ্বাণী করল যে, চরম দুর্দিন আসবে। তবে আন্ডারগ্রাউন্ডে কিছু মানুষ ভালো ভালো কথা বলেছে। খাদ্যের নিষেধাজ্ঞা ছিল, সেটা রিলাক্সড হয়ে গেল। অঘোষিতভাবে হলেও প্রত্যাহার করল। ইউক্রেন, রাশিয়া রপ্তানি শুরু করল এবং দামটা পড়ে গেল। কিন্তু ইউক্রেন রাশিয়ার মাঠে উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে ক্ষতিটা হচ্ছে সেটা আগামী বছর আমরা ফিল করব।
নিউজবাংলা: এরই মধ্যে দেশে বন্যা হলো। বন্যায় কতটা ক্ষতি হয়েছে আমাদের?
এম এ মান্নান: হ্যাঁ, বন্যায় ভালোই ক্ষতি হয়েছে আমাদের সুনামগঞ্জ, সিলেট এবং কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষতি হলো। ফসলের অত ক্ষতি না হলেও অবকাঠামো, চলাচল, ব্যবসা-বাণিজ্যের হাটবাজার ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। এ ছাড়া আমাদের অভ্যন্তরীণ কিছু অনিশ্চয়তা আছে। আমাদের মধ্যে আন্ডারগ্রাউন্ড একটা শঙ্কা আছে, রাজনৈতিক পরিবেশ। সার্বিকভাবে উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীলতা অসম্ভব প্রয়োজন। বিশেষ করে দরিদ্র ইকোনমি ও মাঝারি ইকোনমির জন্য। আমরা যদি কাজ করার জায়গায় না যেতে পারি, কাজ করব কীভাবে, সেটা যদি বন্ধ হয়ে যায়?
এগুলো মিলে আমরা একটা দোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে আছি। অর্থনীতি একটু ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমবে না সেপ্টেম্বরেও মনে হয়। তবে অক্টোবর নাগাদ নামা শুরু করবে। আশা করছি, সার্বিকভাবে আশা করছি, অক্টোবরের পর থেকেই আশাদের অর্থনীতি আবার ঘুরে দাাঁড়াতে শুরু করবে।
কারণ, আমাদের প্রধান উপজীব্য যেটা- চাল, এর দাম কিন্তু কমা শুরু হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে অন্যগুলো পড়বে। আমাদের দুই মাস একটু ওয়েট করতে হবে। কিন্তু এই দুই মাসই শেষ নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত ওই দুই পক্ষ (ইউক্রেন-রাশিয়া) কোনো একটা ভারসাম্য বা আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে না আসে।
তবে আমার মনে হয়, আমাদের দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের কিন্তু কারেন্টে কারেন্টে ট্রেডিংয়ে ইমব্যালেন্স থাকে। এটা কিন্তু টেক্সটবুক ইকোনমিকসের একটা ব্যাপার। কেন থাকে? কারণ, তারা ওপরের দিকে ওঠার পথে আছে। ওঠার পথে থাকলে আমদানি সাধারণত বেশি থাকে প্রয়োজনে। আরেকটা হলো প্রসেসিং। ইমিডিয়েট প্রয়োজন চাল, ডাল, তেল আর প্রসেসিং এনে তৈরি করে পাঠানো। যেমন কাপড়, কাপড়ের সবকিছু আমরা ইমপোর্ট করি। প্রসেস করে শ্রম দিয়ে অ্যাড করে পাঠাই। এই যে একটা সেক্টর, এটার অংশ কিন্তু আমরা।
আমরা মনে করি, আমরা এখন এই খাতে আছি। এটাকে বাঁচাবার শ্রেষ্ঠ উপায় হলো আমাদের রিজার্ভ। রিজার্ভটা তড়িয়ে তড়িয়ে বাড়ছিল। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন একটু কমেছে, ৪৮ বিলিয়নে উঠেছিল, এখন ৩৮, ৩৭-এ নেমেছে। নামার কারণও আছে। রপ্তানির তুলনায় আমদানি একটু বেড়ে গেছে। ক্যাশের ওপরে চাপ পড়েছে। রেমিট্যান্স ফল করেছিল।
এই দুইটা এবং আমাদের ধান, চাল উৎপাদন যদিও ভালো ছিল, কিন্তু একটা-দুইটা প্রাকৃতিক কারণে আমরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। এটা থেকে আমরা এখন উঠতে শুরু করেছি।
আমাদের অর্থনীতিতে প্রাথমিক মূলধন এখনো কৃষি। আত্মবিশ্বাস ও নিরাপত্তা হলো, ঘরে চাল আছে। এই বিষয়টা কৃষির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের যেহেতু তেল, গ্যাস নেই তাই আমাদের ক্যাশ ইনকাম কায়িক পরিশ্রম। দেশের ভেতরে কায়িক পরিশ্রম করি, গার্মেন্টস, শাকসবজি ফলাই। কৃষি হোক আর বিদেশে গিয়েও কায়িক পরিশ্রম করি, বিভিন্ন জায়গায়। এই দুইটার মধ্যে একটা ভাটা পড়ে- এটা হয়েছিল।
নিউজবাংলা: রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। সেটা নেমে ৩৭ বিলিয়নে নেমে এসেছে। আপনি কী এটাকে যথেষ্ট মনে করছেন?
এম এ মান্নান: আমি মনে করি, এটা যথেষ্ট এবং সন্তোষজনক। এখন যে রিজার্ভ আছে ৩৭ বা ৩৮ বিলিয়ন, আইএমএফ বলেছে, এত ভয়ের কিছু নেই। পাঁচ-ছয় মাসের আমদানি সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। কিন্তু রিজার্ভ কিছুটা পড়েছে অস্বীকার করছি না। আরেকটা বিষয় অস্থির করে তুলেছিল। তাইওয়ানের ইস্যুটা। সেটাও মনে হয় একটু ঠাণ্ডা হয়েছে।
আমার ধারণা, অক্টোবর থেকে ওখানে যুদ্ধ ক্লিয়ার না হোক, যদি আর না বাড়ে বা ক্যাট-মাউসের খেলা চলে আমরা মোটামুটি ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানে যেতে পারব। এসব দিক থেকে অক্টোবর থেকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমার বিশ্বাস।
নিউজবাংলা: এবার সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় আমনের চাষ শুরু করতে কৃষকদের দেরি হয়েছে। এতে কী খাদ্য উৎপাদনে কোনো সমস্যা হবে?
এ এ মান্নান: আমন কিন্তু বিশাল বড় অংশ। এক শতে যদি ধরি, ৬০ থেকে ৬৫ আছে বোরো, আমন ৩৫ বা ৪০ এর মধ্যে আছে। আমার মোটা দাগে যেটা মনে হয়, এটা তো আগে ছিল, বোরো তো পরে বাড়ল। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি আশীর্বাদ, কারণ উত্তরবঙ্গ এবং বরেন্দ্র অঞ্চলে রোপণ করা হয়ে গেছে।
বৈজ্ঞানিকদের কিছু প্রজেকশন দেখেছি, তারা কিছু নিচের দিকে আশঙ্কা করছেন। হয়তো এক শর জায়গায় নব্বই বা পঁচাশি হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে একটা ভালো দিক, সরকার একটা ভালো রিজার্ভ গড়ে তুলেছে। ২০ লাখ টন খাদ্য ধরে রেখেছে হাতে। এটা মনস্তাত্ত্বিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাপারীরা (ব্যবসায়ীরা) স্টক করেছিল, এখন তারা ছাড়বে। আমদানি ওপেন করে দেয়া হয়েছে। কারবারিরা দেখছেন, কোনো ফায়দা হবে না। সরকার নিজে আমদানি শুরু করেছে, দামও পড়ছে।
এটা বলা হয় প্রোপার প্রাইসিং বা ন্যায়সঙ্গত প্রাইসে রয়েছে। সুতরাং অক্টোবর থেকে আমার দৃঢ়বিশ্বাস একটা টার্ন অ্যারাউন্ড হবে। শুধু একটাই আশঙ্কা, আমাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত গ্লোবাল সিচুয়েশন। আমাদের সরকার এটাকে খুব সাবধানে মোকাবিলা করছে।
নিউজবাংলা: সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করে এলেন। এই সফরকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন আপনি?
এম এ মান্নান: এখানে একটা কথা আমি বলতে চাই, পছন্দ করি বা নাই করি, বাস্তববাদী হতে গেলে বলতে হবে, ভারতের অর্থনীতি, রাজনীতি, চলাফেরা নানাভাবে আমাদের অ্যাফেক্ট করে। সুতরাং ওইখানকার বিষয়ে আমাদের অ্যাফেক্ট করতে পারে।
ব্যবসা-বাণিজ্য উভয়ের জন্য লাভজনক না হলে কোনো দিন ব্যবসা হয় না। দ্বিতীয়ত, ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি বেশি, আবহমানকাল থেকেই। কখনো আমি দেখিনি যে, ঘাটতি নেই। এটা নিয়ে আমাদের অনেকের মনে একটা অস্বস্তি থাকে। মার্কিনিদের সঙ্গেও তাই, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আরও ভয়ংকর। আমরা ১০০ টাকা এক্সপোর্ট করি আর দশ টাকা ইমপোর্ট করি না। তাই বলে তো আমরা কান্নাকাটি করি না। এটাকে দেখতে হবে সার্বিক বিচারে।
সার্বিক বিচারে ভারতের যে মার্কেট, অর্থনৈতিক দৃঢ়তা বা অবস্থান আমাদের সঙ্গে তার ব্যবসার যে অ্যাডভান্টেজ সেটাকে আমরা অমান্য করতে পারব না। তার ডাইভার্সিফাইড প্রোডাক্ট এক ট্রাকে আমার বর্ডারে ঢুকে যায়, আমার একটা প্রোডাক্ট ঢুকতে পারে। যদিও আমাদের অত প্রোডাক্ট নেই। তার বাজারের গভীরতা অনেক বেশি। আমার রাজস্থান পৌঁছাতে তিন দিন লাগবে। সেই জায়গায় কলকাতা থেকে সিলেট পৌঁছাতে কয় ঘণ্টা লাগবে? এগুলো বাস্তবিক বিষয়ে বিবেচনা করা উচিত। আমি এতে ভীত, শঙ্কিত নই। বছরের শেষে হিসাব করে যেটাকে আমরা প্রবৃদ্ধি বলি, প্লাস মাইনাসে সব করি, রিজার্ভের হিসাব করি, প্রতিনিয়ত পকেটে হাত দিয়ে বাজার করা যায় না। এমনটা আমরা ব্যক্তিজীবনে করিও না।
ভারত সম্পর্কে অনেকেই এটাকে অন্য একটা রং দেয়ার চেষ্টা করে। লুটে নিয়ে গেল, আমাদের মাল বিক্রি করছে, তারা কি টাকা দেবে না? আশার কথা, সাম্প্রতিক সময় বেশ বেড়েছে। ভারত কি ডিউটি ফ্রি করে দেবে? কালকে থেকে যদি বলে ডিউটি ফ্রি করে দিলাম, আমরা পারব? কারণ আমি যে প্রোডাক্ট নিয়ে যাব, সেই প্রোডাক্ট তার চেয়ে সস্তায় সেখানে উৎপাদন হচ্ছে। সে কেন কিনবে আমারটা?
আমি মনে করি, ভারতের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও প্রসারিত হওয়া দরকার। বর্ডার হাট, ট্রানজিট পয়েন্ট, চলাফেরা, আসা-যাওয়া আরও বেশি হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হবে। একটা হয় দৃশ্যমান ব্যবসা, অফিশিয়ালি অন্যদিকে অদৃশ্যমান ব্যবসাগুলো কি কেউ হিসাব করে দেখেছে?
আমাদের নাগরিকরা ও তাদের নাগরিকরা বর্ডারে কত লাখ, কোটি নাগরিক রয়েছেন, ব্যবসা করছেন। সেটা হিসাব করে দেখলে দেখা যাবে, কত কোটি টাকার ব্যবসা করছে! সুতরাং এটাকে প্রতিনিয়ত সমালোচনার চোখে না দেখে ইতিবাচকভাবে দেখা প্রয়োজন। আমাদেরও যেমন বিকল্প নাই, ভারতেরও বিকল্প নাই। এটা তাদের অনুধাবন করা উচিত। কারণ যদি আমাদের দেশ ১৬০ মিলিয়ন না হতো, ১০ মিলিয়ন হতাম, কী হতো আমাদের অবস্থাটা?
আমি যদি ১৬০ মিলিয়ন, বিশ্বব্যাপী একটা পরিযায়ী জাতি, সর্বত্র বিচরণ করছি। তারও তো আমার দিকে তাকাতে হবে সম্মানের চোখে। ৫ কোটি, ১০ কোটি হলে তাকাত না। কিন্তু পাঁচ কোটি, ১০ কোটি যদি আবার সিঙ্গাপুর, হংকংয়ের মতো হয় সেটাও বিচার করার বিষয়। কারণ তার প্রযুক্তি, চালচলন অনেক ভালো। এটা এভাবে দেখতে হবে।
চীন, ভিয়েতনাম আদর্শিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে এককাতারে নয়। কিন্তু ব্যবসার ব্যাপারে চীনারা হংকং, ভিয়েতনাম বাদ দেন, তাইওয়ানের সঙ্গেও ব্যবসা করছে। আসা-যাওয়া করে। এই যে তাদের ব্যবসা থেকে রাজনীতি সরিয়ে ব্যবসা করা, এই মনোভাব আমাদের আনতে হবে। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনীতি মেলানো ঠিক হবে না। আমাদের এখানে এটা খুব বেশি। এটা যেন আমরা না করি এবং এভাবে চলি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফর থেকে দেখলাম, এই সফরের ৮০ ভাগই ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত। ভারতের সঙ্গে আমাদের অনিষ্পত্তির বড় বিষয় হলো, তিস্তা পানি, বর্ডারে দুই একটা বিষয় আছে। এটা কাছাকাছি বাস করলে যা হয়।
আর মনস্তাত্ত্বিকভাবে সবচেয়ে খারাপ যে ভারতের সীমান্তরক্ষীরা আমাদের লোকজনদের মাঝে মাঝে যে গুলি করে হত্যা করে। এটা দৃশ্য তো খুবই অন্যায়। আমাদের দেশের নাগরিকরা এটা নিয়ে চকিত। ভারতের এটা বোঝা উচিত।
আমি যতদূর জানি, ভারত কেন্দ্র থেকে বলেছিল, এটাকে জিরোতে নিয়ে আসবে। কিন্তু যেকোনো কারণে এটা হয়নি। আমি মনে করি, এটা সফরের বিভিন্ন কমিউনিকেশনে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্ডার কিলিং এবং তিস্তা- এই দুইটা বিষয় যদি সমাধান করি, অন্যান্য বিষয় সমাধান হয়ে যাবে।
নিউজবাংলা: ডলারের বাজারের অস্থিরতা অর্থনীতিকে বড় ধরনের চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই অস্থিরতা কীভাবে সামাল দেয়া যায়।
এম এ মান্নান: বলা উচিত কি না জানি না। তবে আমার একান্ত নিজের মতো, এটা কিছুটা মেকানিক্যাল। দীর্ঘদিন টাকাটাকে আমরা ছিপি আটকে রাখার মতো রেখেছিলাম। ছিপি যদি লুজ হয়, হঠাৎ ব্রার্স্ট হয়ে গেলে যা হয় তাই হয়েছে। অনেকে বলে, এটাকে অনেকটা বাঁধভাঙা ঢেউয়ের মতো এক লাফে ১২০ টাকায় উঠল। এটা আর্টিফিশিয়াল নয়, ন্যাচারাল। ওইটা রিয়েল প্রাইসে ছিল না। রিয়েল প্রাইসে নামা শুরু করেছে।
এখন ১০৪ বা ১০৫-এর মধ্যে রয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, গত ১০ বছরে আমরা যদি ধীরে ধীরে করতাম তাহলে এখন এই জায়গায় থাকতাম। আমার ধারণা, এখানেই থাকবে এবং আরও স্ট্যাবল হবে। আমাদের সিচুয়েশনটা ইমপ্রুভ করবে। সুতরাং মূল্যস্ফীতি, প্রাইস লেভেল বেড়ে যাওয়া, বাণিজ্য ঘাটতি- এগুলোর সব কারণ কিন্তু টাকার একটা কৃত্রিম লেভেলে ধরে রাখার প্রচেষ্টা। যারা করেছিলেন ভালো করার জন্যই করেছিলেন। সে তর্কে যাব না। বিষয়টা মেকানিক্যাল। কারণ বাজার শেষ বিচারে তার জায়গা খুঁজে বের করবেই। যা-ই করা হোক না কেন।
নিউজবাংলা: দেশে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে। হরতাল-অবরোধ-জ্বালাও-পোড়াও নেই। অর্থনীতিতে কতটা স্বস্তি দিচ্ছে এই পরিবেশ।
এম এ মান্নান: স্থিতিশীলতার কথা আমি বলেছি। এটা শুধু মুখের কথা নয়। যারা উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ, তারা সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে, সামাজিক স্থিতিশীলতা, পরিবেশ থাকা চাই উন্নয়নের জন্য। আমরা বলতাম, মাহাথির মোহাম্মদ চমৎকার করেছেন মালয়েশিয়াকে। তার মূল শক্তি ছিল স্থিতিশীলতা। একটানা ২২, ২৩ বছর তার দল, তিনি একটা স্ট্যাবল পলিসির মাধ্যমে মালয়েশিয়ার পরিবর্তন করেছেন। কোরিয়া, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, চায়না সবার ক্ষেত্রে তাই। কিন্তু আমরা যখন ঘরে আসি, তখন এই শব্দটা (স্থিতিশীলতা) ভুলে যাই, অন্যদিকে চলে যাই।
হরতালের উৎপত্তি কোথায় থেকে বুঝতে হবে। তার জন্ম হলো- আমাদের উপমহাদেশ যখন পরাধীন ছিলাম, আমাদের নেতৃবৃন্দ যেহেতু অস্ত্র দিয়ে ব্রিটিশদের সঙ্গে পারে নাই, তারা অসহযোগ আন্দোলন একটা অস্ত্র হিসেবে নিয়ে এসেছিল। এটা মাথায় রয়ে গেছে।
তারা কার সঙ্গে অসহযোগ করেছে? ব্রিটিশদের সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু একই অস্ত্র ব্যবহার করেছেন পাঞ্জাবিদের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই অস্ত্র এখন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে নয়। তাই চলছে। বাংলাদেশের মানুষ হরতাল-অবরোধ চায় না; নিজের ভালো চায়। বাংলাদেশের ভালো চায়, দেশের উন্নয়ন চায়। তাই হচ্ছে। মানুষ বুঝে গেছে, কিসে ভালো হবে, তাই করছে।
নিউজবাংলা: ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দেশে জাতীয় নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে আপনার দল আওয়ামী লীগ কি আবার সরকার গঠনের রায় পাবে?
এম এ মান্নান: এখানে আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই। আমি আওয়ামী লীগ করি বা আওয়ামী লীগের নেতা বলে বলছি না, আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। গত ১২-১৩ বছরে শেখ হাসিনা বাংলাদেশটাকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, তাকে ছাড়া অন্য কাউকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভাবতেই পারে না এ দেশের মানুষ। তাই আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রী, আমাদের শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমার জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসব; সরকার গঠন করব এবং দেশের আরও উন্নয়ন করব।
নিউজবাংলা: ধন্যবাদ স্যার আপনাকে।
এম এ মান্নান: আপনাকেও ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন:
সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই সবজির অনেক দাম বেড়েছে। প্রায় সব সবজির দামই ৮০ টাতা থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। এদিকে কাঁচামরিচের দাম প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এখন আড়াইশ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। বেগুন ও শসার দাম উঠেছে ৮০ থেকে ১২০ টাকার ঘরে। মাছ ও মুরগিও আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, গত সপ্তাহে যেসব সবজির দাম ছিল প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে, সেগুলোর দাম এখন ৬০ থেকে ১০০ টাকা। যেমন—৬০ টাকার গোল ও লম্বা বেগুন এখন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, ঝিঙে ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল এখন ৬০ টাকা, কাঁকরোল, লতি, বরবটি, করলা ৮০ টাকা, ৪০ টাকার পটোল, ঢেঁড়শ, লাউ, মুলা এখন ৬০ টাকা কেজি।
কচুরমুখীর কেজি ৫০ থেকে বেড়ে ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে বেড়ে ১৪০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, কাঁচা কলা (হালি) ৪০ টাকা, কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। সবজির মধ্যে কেফসি প্রজাতির সবুজ কাঁচামরিচ ২৮০ টাকা কেজি, হলুদ মরিচ ৮০০ টাকা কেজি, চাইনিজ ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি, গাজর ১৪০ টাকা, শসা (হাইব্রিড) ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, দেশি শসা ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। আর ২০০ টাকার কাঁচামরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা প্রতি কেজি।
এদিকে বাজারে ব্রয়লার, পাকিস্তানি ও দেশি মুরগির দামও আগের মতোই চড়া। বাজারে আজ ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকা কেজি দরে। আর পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩১০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা।
বিক্রেতা শিপন জানান, ‘বড় সাইজের ব্রয়লার এখন কম আসছে, তাই দাম কিছুটা বেশি। পাকিস্তানি ও দেশি মুরগির দাম এক মাস ধরে প্রায় একই আছে, তবে আগে কিছুটা কমে পাওয়া যেত।’
মাছের বাজারেও তেমন কোনও পরিবর্তন নেই। গতকাল শুক্রবার হওয়ায় অনেক ধরনের মাছের দাম কিছুটা বেশি দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের মতো আজও দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের রুই মাছের দাম প্রতিকেজি ৪৫০ টাকা, দেড় থেকে ২ কেজির দাম প্রতিকেজি ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা, এক থেকে দেড় কেজির ওজনের রুই মাছের দাম প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা, আর এক কেজির কম ওজনের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি দরে।
এছাড়া পোয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে, মৃগেল মাছ প্রতি কেজি ২৮০ টাকা, তেলাপিয়ার দাম প্রতি কেজি আড়াইশ টাকা, এক কেজি থেকে কিছুটা বেশি পাঙাশের দাম ১৮০ টাকা কেজি, দেড় কেজি বেশি ওজনের পাঙাশের দাম ২৫০ টাকা কেজি। শিং মাছ প্রতি কেজি সাড়ে পাঁচশত থেকে ৬০০ টাকা। চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা প্রতি কেজি, আর ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা কেজি।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সফল গার্মেন্টস ক্রেতা, বিপনন ও সরবরাহকারী এবং সোর্সিং এক্সিবিশন খ্যাত ইনটেক্স বাংলাদেশের ১৬তম আসর আজ রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)-তে শুরু হয়েছে। এই তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল সোর্সিং শোতে ১০টিরও বেশি দেশের ১২৫টির অধিক কোম্পানি অংশ নিচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী ক্রেতা, সরবরাহকারী এবং উৎপাদনকারীদের জন্য একটি গতিশীল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
পোশাক খাতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ-এর নিত্য উদ্ভাবনী কৌশল ও উন্নতমানের দ্রুত উৎপাদন ক্ষমতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাহিদায় প্রাধান্য পাচ্ছে।
২০২৬ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্প রপ্তানি ৫৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ইনটেক্স-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা, সাপ্লাই চেইনে বৈচিত্র্য আনা এবং টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পে উদ্ভাবন প্রদর্শনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, গেস্ট অব অনার হিসেবে ছিলেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন।
এছাড়াও বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং এলএবিসিসিআই, কেবিসিসিআই ও বিজিসিসিআই-এর মতো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সংস্থার নেতৃবৃন্দও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
মাহবুবুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ এখন পোশাক খাতে বিশ্ব বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দ্রুত টেকসই ও মূল্য-সংযোজিত পোশাক উৎপাদনের একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। উদ্ভাবন, কমপ্লায়েন্স এবং দক্ষ কর্মী নিয়োগে কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশটি দায়িত্বশীল ফ্যাশন ও টেক্সটাইল সোর্সিংয়ের পরবর্তী অধ্যায় নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। আমরা বিশ্বাস করি, ইনটেক্স বাংলাদেশের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে মানসম্পন্ন পণ্য নিশ্চিত করবে”
এই বছরের এক্সপোতে বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য প্যাভিলিয়নের মধ্যে ভারতের (টেক্সপ্রোসিল ও পেডেক্সিলের মাধ্যমে) তুলা, মিশ্র সুতা ও টেকসই টেক্সটাইল প্রদর্শন করছে। চীন নিয়ে এসেছে টেকনিক্যাল ফ্যাব্রিক ও গার্মেন্টস ট্রিম। দক্ষিণ কোরিয়া পরিবেশবান্ধব পারফরম্যান্স উপকরণ প্রদর্শন করছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড ও জাপান নিয়ে এসেছে প্রিমিয়াম শার্টিং ও বোনা পণ্য। বাংলাদেশি প্রদর্শনকারীরা নিটওয়্যার, ডেনিম এবং ভার্টিক্যালি ইন্টিগ্রেটেড উৎপাদন সমাধানের অগ্রগতি তুলে ধরছে।
এক্সপোর মূল্যবোধ আরও বাড়াতে ইন্টারেক্টিভ বিজনেস ফোরাম (আইবিএফ) দুটি সেশনের আয়োজন করেছে। প্রথম সেশনে টেক্সটাইল উৎপাদন ও ফ্যাশনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সংযুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হবে, অন্যদিকে দ্বিতীয় সেশনে বৈশ্বিক শুল্ক ও বাণিজ্য পরিবর্তনের বাংলাদেশি রপ্তানির প্রভাব নিয়ে আলোচনা হবে। এই সেশনগুলোতে এ শিল্পের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা অংশ নিচ্ছেন, যা ব্যবসায়িক স্থিতিস্থাপকতা ও বৃদ্ধির কৌশল প্রদান করবে।
প্রদর্শনীর পাশাপাশি, ইনটেক্স বাংলাদেশ ২০২৫-এ ব্যবসায়িক সভা (বি২বি), ভিআইপি নেটওয়ার্কিং এবং ক্রেতা-সরবরাহকারীদের মধ্যে ম্যাচমেকিং সুবিধা রয়েছে— যা সোর্সিং ও ব্যবসায়িক সম্প্রসারণের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞতা প্রদান করছে।
ওয়ার্ল্ডেক্স ইন্ডিয়ার আয়োজিত এই ইভেন্টটি বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিজিবিএ, ইপিবি এবং আইবিসিসিআই, এলেবিসিসিআই, কেবিসিসিআই ও বিজিসিসিআইয়ের মতো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার সমর্থন পেয়েছে।
বাংলাদেশ যখন আরও উদ্ভাবনী ও টেকসই টেক্সটাইল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে, ইনটেক্স বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারের সাপ্লাই চেইনের সাথে দেশটিকে সংযুক্ত করার একটি প্রধান সমর্থক হিসেবে কাজ করছে।
দেশে ২০২৪ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ—এফডিআই আগের বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ কমেছে। গত বছর প্রকৃত এফডিআই এসেছে ১২৭ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। ২০২৩ সালে নিট এফডিআই ছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্টে বিদেশি বিনিয়োগ আসার ওই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে ২০২৪ সাল শেষে বিদেশি বিনিয়োগের স্থিতি ১ হাজার ৮২৯ কোটি ডলার, যা দেশের জিডিপির মাত্র ৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় এ ক্ষেত্রে গড় হার ১৩ শতাংশ।
ভারতের হার ১৪ শতাংশ। ভুটানের মতো দেশে এ হার ১৭ শতাংশ। বাংলাদেশে ২০২৪ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগে অর্থের ঘোষণার পরিমাণও কমেছে।
ঘোষিত অর্থের পরিমাণ ১৭৫ কোটি ডলার। গত বছরের তুলনায় যা ৩৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে মাত্র ৭০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।
গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২১ সালে দেশের বাইরে সর্বাধিক ৮ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব যখন আরো গভীর সহযোগিতা ও বিস্তৃত সুযোগ সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা, তখন ঘটছে তার বিপরীত। ২০২৪ সালে বৈশ্বিকভাবে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ১১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় ধাক্কা। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে মন্দা, শিল্প খাতে চাপ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি কম মনোযোগ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বাণিজ্য উত্তেজনা, নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং ভূরাজনৈতিক বিভাজন বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশকে আরো জটিল করে তুলছে।
তবে অন্ধকারে কিছুটা আশার আলোও রয়েছে। ডিজিটাল অর্থনীতিকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এর প্রবৃদ্ধি এখনো অসম। ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে ডিজিটাল পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। কারণ, ডিজিটাল সংযুক্তি হতে পারে অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতির একটি শক্তিশালী চালিকাশক্তি, যদি তা সবার কাছে পৌঁছানো যায়। প্রতিবেদনটি সরকারগুলোকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিএস) অর্জনে সহায়তা করার বিষয়ে ব্যবহারিক নির্দেশনা দিয়েছে। এ সময়টাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একসঙ্গে কাজ করার, যাতে আরো সহনশীল ও টেকসই বিশ্ব গড়ে তোলা যায়। সে লক্ষ্যে প্রতিবেদনটি বিভিন্ন নীতিগত ধারণা ও পরামর্শ তুলে ধরেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং এর আগ থেকে জ্বালানি সংকটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। যার প্রভাব কিছুটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হলেও সেটি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সন্তোষজনক নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০২৪ এ প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে এফডিআই প্রবাহ বেড়েছিল ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২০২২ সালে প্রবাহ ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়ে ছিল ৩৪৮ কোটি ডলার। ২০২৩ সালে ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমে প্রবাহ হয়েছে ৩০০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ভিয়েতনামে বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। কম্বোডিয়ায় এফডিআই প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালে হয়েছে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ। পাকিস্তানে এফডিআই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
২০২৩ সালে ৪৫টি স্বল্পোন্নত দেশে (এলডিসি) এফডিআই ১৭ শতাংশ বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলারে দাড়িয়েছে। এর প্রায় ৫০ শতাংশ প্রবাহ কেন্দ্রীভূত ছিল কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, বাংলাদেশ, উগান্ডা এবং সেনেগাল—এ পাঁচ দেশে। গত এক দশকে স্বল্পোন্নত দেশের বহিঃখাতগুলোয় অর্থায়নের অন্যান্য উৎসের তুলনায় এফডিআই প্রবৃদ্ধিই পিছিয়ে আছে। সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন সহায়তা এবং রেমিট্যান্স হার স্বল্পোন্নত দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় বেশি। ওই বছর বৈশ্বিকভাবে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ ১০ শতাংশের বেশি কমে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে স্থবির ছিল।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ধানের আরও তিনটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে একটি লবণাক্ততা সহনশীল, একটি উচ্চফলনশীল বোরো এবং অন্যটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী। এ নিয়ে ব্রি আটটি উচ্চফলনশীল বা হাইব্রিড জাতসহ মোট ১২১টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে।
নতুন উদ্ভাবিত তিনটি জাত হলো; লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি-১১২, উচ্চফলনশীল বোরো ব্রি-১১৩ ও ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ব্রি-১১৪। গত বুধবার জাতীয় বীজ বোর্ডের (এনএসবি) ১১৪তম সভায় নতুন এ তিনটি জাত অনুমোদন করা হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সভাপতিত্বে বোর্ড সভায় ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলোর মধ্যে ব্রি ধান-১১২ লবণাক্ততা সহনশীল ও মাঝারি জীবনকালীন রোপা আমনের জাত। এ জাতের ডিগপাতা প্রচলিত ব্রি ধান-৭৩-এর চেয়ে খাড়া। ব্রি ধান-১১২ লবণাক্ততার মাত্রাভেদে হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ১৪ থেকে ৬ দশমিক ১২ টন ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের জীবনকাল ১২০ থেকে ১২৫ দিন এবং গাছের উচ্চতা ১০৩ থেকে ১০৫ সেন্টিমিটার। গাছের কাণ্ড মজবুত। এ কারণে ঢলে পড়ে না। এ জাতের ধানের চাল মাঝারি চিকন ও সাদা। ভাত ঝরঝরে। এটি লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। দানা মাঝারি চিকন ও শিষ থেকে ধান সহজে ঝরে পড়ে না। জীবনকাল তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে ফসল কর্তনের পর মধ্যম উঁচু থেকে উঁচু জমিতে সূর্যমুখী ও লবণ সহনশীল সরিষা আবাদের সুযোগ তৈরি হবে।
ব্রি ধান-১১৩ জাতটি বোরো মৌসুমের জনপ্রিয় জাত ব্রি-২৯-এর বিকল্প হিসেবে ছাড়করণ করা হয়েছে। এটি মাঝারি চিকন দানার উচ্চফলনশীল জাত। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা এবং ধান পাকলেও সবুজ থাকে। গাছ শক্ত ও মজবুত বিধায় সহজে হেলে পড়ে না। জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৩ দিন। চালের আকার-আকৃতি মাঝারি চিকন ও রং সাদা। দেখতে অনেকটা নাজিরশাইলের মতো। এ ধানের চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ এবং ভাত ঝরঝরে। এ ছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় দেখা গেছে, জাতটি ব্রি ধান-৮৮-এর চেয়ে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি ফলন দিয়েছে। এ জাতের গড় ফলন হেক্টরে ৮ দশমিক ১৫ টন। উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে জাতটি হেক্টরে ১০ দশমিক ১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।
কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, নতুন ব্রি ধান-১১৪ বোরো মৌসুমের দীর্ঘ জীবনকালীন ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা। গাছ মজবুত এবং হেলে পড়ে না। পাতার রং গাঢ় সবুজ। এর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৭ দশমিক ৭৬ টন। দানা মাঝারি মোটা এবং সোনালি বর্ণের। ভাত ঝরঝরে হয়। জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাসম্পন্ন। ফলে এ জাতের ধান চাষে কৃষককে ব্লাস্ট রোগ নিয়ে বাড়তি চিন্তা করতে হবে না, উৎপাদন খরচ সাশ্রয় হবে।
ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, জাতগুলো অনুমোদন লাভ করায় এখন আমরা এসব ধানের বীজ বাজারজাত করতে পারব। কৃষকেরা এ জাতের ধান চাষ করে লাভবান হবেন। তাদের উৎপাদনও বাড়বে। উপকূলীয় অঞ্চলে পানিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকায় অনেক সময় ধান চাষ করা যেত না। এখন আমাদের ব্রি ধান-১১২ সেসব এলাকায় সহজে চাষ করা যাবে। এ ছাড়া অন্য জাতগুলো আমাদের ধান উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।
সূত্র: বাসস
আগামী ২১ ও ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং এর অধীনে সব কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর কার্যালয় খোলা থাকবে। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও ওই দুই দিনও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মূলত রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে এনবিআর। গত ২ জুন আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২২ জুন বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) মোট ৩ লাখ সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা আদায় করেছে। এটি সাময়িক হিসাব। ভ্যাটের রিটার্ন দাখিলের হিসাবের এই সংখ্যা আরও বাড়বে। লক্ষ্য অর্জনে শুধু জুন মাসেই সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে।
এনবিআরকে চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। মূল লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে ডলার-টাকার বিনিময় হার এখন থেকে বাজারনির্ভরভাবে নির্ধারণের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এ সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ আগামী জুন মাসের মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের ঋণ কিস্তি পাবে বলেও জানান তিনি।
ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের দর-কষাকষি চলছিল। মূলত সে কারণে আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় করছিল না। এর মধ্যে গতকাল জানা যায়, বাংলাদেশ ডলারের বিনিময় আরও নমনীয় করতে রাজি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারে ঋণের দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করতে রাজি হয়েছে আইএমএফ।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত ৯ মাসে রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করা হয়নি, তবুও বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে এবং তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। এ অবস্থায় বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে ব্যাংকারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, বাজারভিত্তিক করায় হঠাৎ করে ডলারের রেট অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘদিন ধরে ডলারের রেট ১২২ টাকার আশপাশে রয়েছে এবং তা সেখানেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ডলারের রেট দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা-সরবরাহ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, বাইরের দেশের নির্দেশে নয়। বর্তমানে বাজারে ডলারের সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে।
তবে, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দুবাইভিত্তিক কিছু সিন্ডিকেট বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক থাকবে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ড. মো. হাবিবুর রহমান, কবির আহমেদ, উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ এবং নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
এদিকে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের জুনের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির জন্য নির্ধারিত ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার একত্রে ছাড় করবে।
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে সকল বিষয় সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে উভয়পক্ষ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা বিনিময় হারসহ অন্যান্য সংস্কার কাঠামো বিষয়ে সম্মত হয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং বিনিময় হার ব্যবস্থায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে অধিকতর পর্যালোচনার লক্ষ্যে চতুর্থ রিভিউ সম্পন্ন হওয়ার পর উভয় রিভিউয়ের জন্য নির্ধারিত কিস্তির অর্থ একত্রে ছাড় করা হবে বলে বিগত তৃতীয় রিভিউয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ রিভিউয়ের সময় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ব্যাংক-ফান্ড সভায় এবিষয়ে আলোচনা চলমান ছিল।
এ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, জাপান এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরও প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা জুন মাসের মধ্যে পাবে বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এ অর্থ পাওয়া গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে। ফলে মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয় যে, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে যেসকল সংস্কার কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব বিবেচনায় পরিকল্পিত এবং জাতীয় স্বার্থে গৃহীত। এ সকল সংস্কার কর্মসূচির ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যক্রম শুধুমাত্র কারিগরি সহায়তা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
বাণিজ্যযুদ্ধের তীব্রতা কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। পরস্পরের ওপর আরোপ করা পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য শুল্ক ৯০ দিনের জন্য ব্যাপক পরিসরে কমাতে একমত হয়েছে দুই দেশ। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা কমাতেই এই চুক্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর বিবিসির।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের আগে চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। পরে নতুন শুল্ক যখন ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন তখন তিনি বলেছিলেন তিন মাস সবার জন্য বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক হার প্রযোজ্য হবে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দুপক্ষের মধ্যে আলোচনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, গঠনমূলক ও দৃঢ় আলোচনার পর উভয় দেশ ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করতে রাজি হয়েছে। এর আওতায় দেশ দুটি পারস্পরিক শুল্ক ১১৫ শতাংশ কমাবে।
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত বর্তমান ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। অন্যদিকে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপ করা ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। উভয় দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আগামী ১৪ মে থেকে শুল্কের এই কাঁটছাট কার্যকর হবে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে স্কট বেসেন্ট বলেন, আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি যে, আমাদের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। দুই পক্ষের প্রতিনিধিদলই একমত হয়েছে যে তারা বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না। মার্কিন অর্থমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশই নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পেরেছে। আমাদের লক্ষ্য ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যের পথে অগ্রসর হওয়া এবং এটি তারই সূচনা।
প্রথম দফায় শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল এবং বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কাও জোরালো হয়েছিল। তবে এবার এই চুক্তির ঘোষণায় বিশ্ব শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
শুল্ক কমানোর চুক্তির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববাজারে চাঙাভাব দেখা দেখা গেছে। হংকংয়ের প্রধান সূচক ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ স্টক ফিউচারের উত্থান হয়েছে। এছাড়া বাড়তি শুল্ক স্থগিতের খবরে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দর বেড়ে ছয় মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউরোপীয় শেয়ারবাজারগুলোও উচ্চমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু করে এবং মার্কিন বাজারগুলোও ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, এই সময়সীমার মধ্যে চীনের উচিত হবে ফেন্টানিল নামক ভয়াবহ মাদকের অবৈধ রপ্তানি বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া। এ বিষয়ে চীনের সদিচ্ছা দেখে ওয়াশিংটন আশাবাদ প্রকাশ করেছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের প্রবেশ ঠেকাতে চীন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না এমন অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।
মন্তব্য