পাশের দেশ ভারতে পোশাক রপ্তানিতে আশা জাগানিয়া সাফল্য অর্জন করে চলেছে বাংলাদেশ; কিন্তু চীনে বাড়ছে না; উল্টো কমছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বৃহস্পতিবার দেশভিত্তিক রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ ভারতে প্রায় ১৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা।
এই অঙ্ক গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বা ৯৯ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের এই দুই মাসে দেশটিতে ৯ কোটি ৪৬ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে ভারতে ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১০ কোটি ৫৯ লাখ ৭০ হাজার ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর নিট পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৮ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার ডলার। বেড়েছে ৯৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
তবে বিশ্বের সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ চীনে পোশাক রপ্তানির তথ্য হতাশাজনক। এই দুই মাসে চীনে মাত্র ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ২১ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে চীনে পোশাক রপ্তানি থেকে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছিল।
ভারতে পোশাক রপ্তানির এই উল্লম্ফন আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে- এমন আশার কথা শুনিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক, রপ্তানিকারক ও অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রপ্তানি বাজার হতে চলেছে ভারত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হোঁচট খেলেও খুব বেশি সমস্যা হবে না। বছর শেষে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হবে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে যে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে তাতে ভারতে বাংলাদেশের পোশাকসহ অন্য সব পণ্য রপ্তানি বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
গত দুই অর্থবছরে সব দেশেই বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেশ বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভারতে। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারের মাইলফলক ছুঁয়েছে, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫৫ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছিল ৭২ কোটি ডলার (ওভেন ৪০ কোটি ও নিট ৩১ কোটি ৫৬ লাখ ডলার)।
অন্যান্য পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাতপণ্য রপ্তানি থেকে ১৯ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ২০ হাজার ডলার, প্লাস্টিকদ্রব্য থেকে ৩ কোটি ৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং কটন ও কটন প্রোডাক্টস থেকে ৪ কোটি ডলারের মতো আয় হয়েছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে মাত্র তিনটি অর্থবছরে ভারতে পণ্য রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের বেশি হয়েছে, তাও সেটা গত তিন বছরে। তার আগের বছরগুলোয় ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে।
২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ভারতে ১২৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেন, যা ছিল এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে এ আয় বেশি ছিল প্রায় ১৭ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতের বাজারে ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে ১০৯ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলারে নেমে আসে।
২০১১ সালে ভারত বাংলাদেশকে অস্ত্র ও মাদক বাদে সব পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দেয়। যদিও সেই সুবিধা খুব বেশি কাজে লাগাতে পারছিলেন না বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। ২০১১ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের বেশ কিছু কারখানার কাছ থেকে পোশাক নিয়ে টাকা দেয়নি ভারতীয় কোম্পানি লিলিপুট। সে জন্য বেশ কয়েক বছর পোশাক রপ্তানিতে ভাটা পড়ে। কিন্তু গত কয়েক বছরে ভারতের বিভিন্ন শহরে পোশাকের নামিদামি বিদেশি অনেক ব্র্যান্ড বিক্রয়কেন্দ্র খোলায় তাতে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পায়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানির এক প্রতিবেদনে ২০১৯ সালে বলা হয়েছিল, দুই বছরের মধ্যে ৩০০টি আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড ভারতে বিক্রয়কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা করছে। কারণ, দেশটির মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে ১৯ শতাংশ হারে বাড়বে, যা কিনা চীন, ব্রাজিল ও মেক্সিকোর তুলনায় দ্রুত। ২০২২ সালে ভারতের কাপড়ের বাজার হবে ৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের।
গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই কাছাকাছি উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহের দিকে মনোযোগ বাড়িয়েছে। আবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অবকাঠামোগত যোগাযোগের উন্নতিও এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি আরও বাড়ানো সম্ভব। এর জন্য রপ্তানিকারকদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে নির্ধারিত মান পরিপালনের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। তবে ভারতের বাজারে অনেক সময় অযৌক্তিকভাবে অশুল্ক বাধা আরোপ করা হয়। এই বাধা দূর করার ক্ষেত্রে কূটনৈতিক যোগাযোগের পাশাপাশি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং রপ্তানিকারকদের নেগোসিয়েশন দক্ষতা বাড়াতে হবে।’
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এ গবেষক আরও বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ বর্তমানে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) স্বাক্ষর নিয়ে আলোচনা করছে। বাংলাদেশ যথাযথ নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে এ চুক্তি করলে ভারতে রপ্তানি বাড়বে। একই সঙ্গে এ দেশে ভারতের বিনিয়োগ বাড়বে। ভারতের বিনিয়োগকারীদের উৎপাদিত পণ্য তাদের দেশে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানি হবে। ফলে আমাদের রপ্তানি কমবে।’
‘প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে বেশ আলো আলোচনা হয়েছে। ‘সেপা’র বিষয়েও দ্রুত ভালো সিদ্ধান্ত আসবে বলে মনে হচ্ছে। সার্বিকভাবে বলা যায়, ভারতে আমাদের রপ্তানি দিন দিন বাড়বেই বলে মনে হচ্ছে।’
একই কথা বলেছেন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও ভারতে রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমরা অর্থবছর শুরু করেছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় আমাদের প্রধান দুই বাজার আমেরিকা-ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় আমরা পোশাক রপ্তানিতে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। ওই দেশগুলোর মানুষ এখন পোশাক কেনা কমিয়ে দিচ্ছেন। এ অবস্থায় আমরা যদি ভারতে আমাদের রপ্তানি আরও বাড়াতে পারি, তাহলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হয়।’
দেশের অন্যতম শীর্ষ পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইভিন্স গ্রুপের কর্ণধার পারভেজ বলেন, ‘ভারতে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের কদর বাড়ছে। ভৌগোলিক কারণেই ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। এখন থেকে তা বাড়তেই থাকবে বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে। প্রায় দেড়শ কোটি লোকের চাহিদা মেটাতে ভারতকে বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনতেই হবে। ভারতে পোশাক তৈরি করতে যে খরচ হয়, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করলে তার থেকে অনেক কম পড়ে। সে কারণে সব হিসাব-নিকাশ করেই তারা এখন বাংলাদেশ থেকে বেশি বেশি পোশাক কিনছে।’
‘ভারতের অনেক ব্যবসায়ী এখন বাংলাদেশের কারখানায় পোশাক তৈরি করে তাদের দেশে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছেন। এতে তাদের একদিকে যেমন লিড টাইম কম লাগছে, অন্যদিকে খরচও কম হচ্ছে।‘
সব মিলিয়ে ভারতের বিশাল বাজার বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য আগামী দিনে ‘সুদিন’ বয়ে আনবে বলে মনে করছেন পারভেজ।
‘ভারতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ব্র্যান্ড-সচেতনতা। এ কারণে সেখানে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোও শক্ত অবস্থান তৈরি করছে। আবার আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোও দেশটিতে নতুন নতুন বিক্রয়কেন্দ্র খুলতে শুরু করেছে। সেই সুফলই এখন পাচ্ছে বাংলাদেশ।
`এটা অব্যাহত রাখতে হবে। দুই দেশের সরকারের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বিজেপি ও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে। এটাই উপযুক্ত সময়। সরকার ও বেসরকারি খাত মিলে ভারতের বাজার ধরতে একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’
বাংলাদেশের নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ভারতের দুইজন বায়ার আমার কারখানা পরিদর্শনে এসেছিলেন। তারা দুইজন আমার পুরোনো ক্রেতা। এবার তারা এসেছেন আরও বেশি অর্ডার দিতে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ভারতে আমাদের পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। আমরা বেশ ভালোভাবেই ভারতের বাজারে প্রবেশ করছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো ভারতে আমাদের রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছে। এটা বাড়ছেই। সত্যি কথা বলতে কি, ভারতের বাজার যদি আমরা মোটামুটি ভালোভাবে ধরতে পারি, তাহলে আর আমাদের পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হবে না। কেননা, ভারত আমাদের পাশের দেশ, পরিবহন খরচ খুবই কম পড়বে। আমাদের মুনাফা বেশি হবে।’
‘ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে যদি কখনো কোনো কারণে সমস্যা হয়, তাহলেও আমাদের সমস্যা হবে না।’
অন্যান্য দেশেও ভালো প্রবৃদ্ধি
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে (ইইউ) বাংলাদেশ ৩৪৪ কোটি (৩.৪৪ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। এই দুই মাসে জার্মানিতে রপ্তানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এ ছাড়াও স্পেন এবং ফ্রান্সে রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৫২ ও ৩৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
জুলাই-আগস্ট সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ। যুক্তরাজ্য এবং কানাডায় রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ৩৫ দশমিক ৬৪ ও ১৮ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এই দুই মাসে অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩৮ শতাংশের মতো। এর মধ্যে জাপানে বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ। তবে রাশিয়া ও চীনে রপ্তানি কমেছে যথাক্রমে ৫৮ দশমিক ২৯ শতাংশ ও ১৩ দশমিক ২১ শতাংশ।
আরও পড়ুন:যুবসমাজের জন্য সার্বজনীন সামরিক প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি), যাতে দেশের প্রতিরক্ষায় যুবসমাজ অংশগ্রহণ করতে পারেন।
ওসমানী মিলনায়তনে মঙ্গলবার ডিসি সম্মেলনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ সংক্রান্ত অধিবেশনে তারা এ প্রস্তাব দেন।
অধিবেশন শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল হাফিজ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, ‘সিভিল মিলিটারি কোঅপারেশন কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসকরা প্রশ্ন করেছিলেন। সিভিল প্রশাসনের অফিসাররা যে অরিয়েন্টেশন করেন, ডিভিশন পর্যায়ে এই অরিয়েন্টেশনগুলা করা সম্ভব কি না, যাতে সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে সামরিক বাহিনী বা সশস্ত্র বাহিনীর বোঝাপড়া আরও বৃদ্ধি কীভাবে করা যায়।’
‘আর একটা প্রশ্ন ছিল, আমাদের যুব সমাজের জন্য একটি ইউনিভার্সেল মিলিটারি (সর্বজনীন সামরিক) প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় কি না, যেখানে যুবসমাজের যারা আছেন, তারা মিলিটারি ট্রেনিং পেতে পারেন এবং দেশের প্রতিরক্ষায় তারা অংশগ্রহণ করতে পারেন।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, ‘তারা নিজ নিজ কয়েকটি জেলায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে চান সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। রিমোট জায়গায় বা চরাঞ্চলে যেখানে হয়তো বেশি পরিমাণ ফোর্স দরকার বা লজিস্টিক নিয়ে যেতে হবে এই ধরনের এলাকায় তারা অভিযান পরিচালনা করতে চান। সে সংক্রান্ত প্রশ্ন ছিল।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নেভির কাছে প্রশ্ন ছিল কীভাবে জাটকাবিরোধী অভিযানের বা আমাদের নদীতে যে সম্পদ আছে, সেই সম্পদ রক্ষায় তারা আরও কীভাবে ওতপ্রোতভাবে সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা করতে পারেন।
‘আমাদের সেনাবাহিনীর জন্য প্রশ্ন ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফন্ট যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, তার কারণে কয়েকটি জেলায় পর্যটন শিল্প ব্যাহত হচ্ছে। এ পর্যটন শিল্প ব্যাহত হওয়ার কারণে সেখানকার ইয়াং জেনারেশন কাজ হারাচ্ছে, চাকরি হারাচ্ছে এবং তারা সন্ত্রাসের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। সেখান থেকে কীভাবে উত্তরণ করতে পারি সে সংক্রান্ত প্রশ্ন ছিল।’
আবদুল হাফিজ বলেন, ‘দুই-একটি জেলায় অস্ত্র এবং গোলাবারুদ নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো কীভাবে ধ্বংস করা যায়, সে বিষয়ে প্রশ্ন ছিল। এ ধরনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তারা উত্থাপন করেছিলেন।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, ‘আমি উল্লেখ করেছি, স্বৈরাচার এবং তাদের দোসররা বিভিন্ন জায়গায় একত্রিত হচ্ছে এবং কর্মসূচি দিচ্ছে। তারা দেশকে একটা অরাজকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। সে ব্যাপারে তাদের সজাগ থাকতে হবে।’
আরও পড়ুন:জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ মত তুলে ধরেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘সারা দেশে জনপ্রতিনিধি না থাকায় জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এমনকি অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্তি পেতে তারাও দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চান।’
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলেছি, জাতীয় নির্বাচন আগে হতে হবে, তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন।’
অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন জনগণের দাবি উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, তারাও এ মতের পক্ষে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি যাচ্ছে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় জনপ্রতিনিধিরা নেই। তাদের দায়িত্বগুলো বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকরা পালন করছেন।
‘সেই জায়গা থেকে তাদের যে সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে, আজকের ডিসি সম্মেলনে আমরা সেগুলো শুনেছি এবং এগুলো অ্যাড্রেস করেছি।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভাগীয় কমিশনারদের প্রত্যেকেই মূল দায়িত্বের বাইরে কিছু না কিছু অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসকদের অতিরিক্ত সময়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। সমস্যাটা হলো একজন অফিসার যখন নিজ দায়িত্বের বাইরে আরও দুই-তিনটা দায়িত্ব পালন করেন, তার পক্ষে কোনোটাই যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, যে কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বে নিয়ে আসা উচিত।’
অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সর্বশেষ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মিটিংয়েও স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা এখনও চলমান আছে। চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনও সরকার নেয়নি।
‘আশা করছি খুব দ্রুতই কোনো একটা সিদ্ধান্ত আসবে। হয় আমরা দ্রুতই জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করব, অন্যথায় প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে।’
আরও পড়ুন:প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জানিয়েছেন, চলতি মাসেই শতভাগ স্কুলে বই পৌঁছে যাবে।
ডিসি সম্মেলনের শেষ দিন মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান গণশিক্ষা উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা বলেন, দেশের ৮৫ ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে। এ মাসেই বাকি স্কুলগুলোতেও বই পৌঁছে যাবে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকরা যুক্ত রয়েছেন। ডিসিরা প্রাথমিক শিক্ষার নানান সমস্যা চিহ্নিত করেছেন, যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ যেন সঠিকভাবে হয়, সে বিষয়ে ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিবন্ধন নেই, সেগুলোকে দ্রুত নিবন্ধনের আওতায় আনার জন্য ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছেও বলে জানান উপদেষ্টা।
ওই সময় প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক পদে সুপারিশপ্রাপ্তদের নিয়োগের আন্দোলনে বিষয় জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা জানান, সুপারিশপ্রাপ্তদের প্রতি তার সহমর্মিতা আছে, তবে বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন:দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতির দিকে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার এক বৈঠক শেষে এমন দাবি করেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতির দিকে। আরও ভালো করার জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট চলছে। যতদিন ডেভিলরা থাকবে, ততদিন অপারেশন চলবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশ থেকে দুর্নীতি কমাতে হবে। সব লেভেলে যেন দুর্নীতি কমে, সে জন্য ডিসিদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।’
ওই সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, সীমান্ত এলাকায় বিজিবি বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। গাজীপুর জিএমপি, শিল্প পুলিশে জনবল বাড়ানোর প্রস্তাবও সংশ্লিষ্ট ডিসি দিয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কীভাবে আরও উন্নতি করা যায়, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা সীমান্ত এলাকায় বিজিবি বৃদ্ধি করার জন্য বলেছেন।
‘নৌ পুলিশ বৃদ্ধি করার জন্য বলেছেন। গাজীপুরে জনবল বৃদ্ধির কথা বলেছেন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের জনবল বৃদ্ধির জন্য বলেছেন।’
পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র না দেওয়া এবং এসপি ও ওসিদের এসিআর লেখার প্রস্তাব করেছিলেন ডিসিরা। এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে তা জানতে চান একজন সাংবাদিক।
জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এসব বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কারণ আলোচনার সময় ছিল খুব কম।’
আরও পড়ুন:গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারকসহ ১৬ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে মঙ্গলবার তাদের হাজির করা হয়।
সকাল ১০ টার পর ১৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। তারা হলেন সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, সালমান এফ রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারক এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলায় ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবং আরেক মামলায় তার পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
যাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, তাদের মধ্যে শেখ হাসিনা ছাড়াও তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনার ফুপাত ভাই ও সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তার দুই ভাতিজা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস ও যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ রয়েছেন।
এ ছাড়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের বিরুদ্ধে।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন শেখ হাসিনা। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই এখন রয়েছেন আত্মগোপনে।
এদিকে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
আরও পড়ুন:আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ৫ ফেব্রুয়ারি হস্তান্তর করা হয়।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন।
পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সংস্কার প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। পাশাপাশি বিষয়টি কমিশনের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়। মোট ১৭ অধ্যায়ের প্রস্তাবের দ্বাদশ অধ্যায়ে রয়েছে অংশটি।
কমিশনের প্রতিবেদনে জনপ্রশাসনে কার্যকারিতার লক্ষ্যে সংস্কারের যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে নাগরিক পরিষেবা প্রদানে জনপ্রশাসনের ভূমিকা, নাগরিক পরিষেবার কার্যকারিতা, আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতার দৌরাত্ম্য সম্পর্কে প্রতিবেদনে সুপারিশমালা পেশ করা হয়েছে।
সুপারিশে আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার বিষয়ে বলা হয়, ‘নাগরিক সেবা প্রদানের বিষয়ে প্রশাসনিক পদ্ধতি তথা আমলাতান্ত্রিক বিধিবিধান সহজতর ও ডিজিটাল করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে জনপ্রশাসনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সঠিক নীতি-নির্ধারণের স্বার্থে তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করা এবং নীতি-নির্ধারকদের কাছে তা পেশ করার নীতি চালু করা যেতে পারে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘রাষ্ট্রীয় সম্পদ নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ প্রদান টার্গেট জনগোষ্ঠীর চাহিদা ও তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে হতে হবে। নাগরিকদের বিবিধ সরকারি পরিষেবা প্রদানের জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেন্টার স্থাপন করা এবং সেখানে তাদের অভিগম্যতা সহজতর করার উদ্যোগ নিতে হবে।
‘একটি গতিশীল ও কার্যকর পদ্ধতি চালু করতে হবে যাতে নাগরিকদের মতামত দেয়ার সুযোগ থাকে এবং তারা যেন স্বস্তি বোধ করে যে তাদের কথা শোনা হয়।’
কার্য সম্পাদনে প্রযুক্তি গ্রহণ ও প্রয়োগ বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়, ‘কার্যবিধিমালা, মন্ত্রণালয়/বিভাগের কর্মবণ্টন ও সচিবালয় নির্দেশমালা পর্যালোচনা করে তা সংশোধন বা বিয়োজন এবং অনলাইনে তা সহজলভ্য করার উদ্যোগ নিতে হবে। মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোকে পাঁচটি ক্লাস্টারে ভাগ করা যেতে পারে।
‘সরকারি পরিষেবা সহজতর করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় অনলাইন পোর্টাল স্থাপন করা। সরকারি পরিষেবা পদ্ধতি গতিশীল করার জন্য ই-গভর্ন্যান্স কৌশল বাস্তবায়ন করা। ডিজিটাল টুল ও ডাটা ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের অধিকতর দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ খাতে বেশি বিনিয়োগ করা।’
সুপারিশে উল্লেখ করা হয়, ‘নাগরিকদের সেবা প্রদান ও সম্পদ বরাদ্দের ক্ষেত্রে নারী ও পিছিয়ে পড়া সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিকরণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সোমবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধিবেশন শেষে এ ঘোষণা দেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘জেলা প্রশাসকরা অভিযোগ করেছেন, অনেক জায়গায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে। তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চান জেলা প্রশাসকরা।
‘জামুকার (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) অধ্যাদেশ পরিবর্তন হচ্ছে। তারপর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
তিনি বলেন, ‘টিআর-কাবিখাতে বরাদ্দ নিবিরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যথাযথভাবে যেন পুনর্বাসন কার্যক্রম চলে। এখন থেকে ইউএনওরা টিনসহ কিছু সামগ্রী স্থানীয়ভাবে সরকারের নিয়ম অনুযায়ী কিনবেন।’
অভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই অভ্যত্থানের পর সরকারি কর্মকর্তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে মনে করি। তাই স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
‘এ মাসের মধ্যেই জুলাই অধিদপ্তর গঠন হবে। জুলাই অভ্যুত্থানে মৃত্যুবরণ করা সবাই জুলাই শহীদ। আর আহতরা জুলাই যোদ্ধা হিসেবে খ্যাত হবেন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য