× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

অর্থ-বাণিজ্য
Prime Ministers visit to India Main objective to reduce trade deficit
google_news print-icon

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: প্রধান লক্ষ্য বাণিজ্য ঘাটতি কমানো

প্রধানমন্ত্রীর-ভারত-সফর-প্রধান-লক্ষ্য-বাণিজ্য-ঘাটতি-কমানো
অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ভারতে পণ্য রপ্তানিতে ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের মাইলফলক অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা
আশার কথা হচ্ছে, প্রথমবারের মতো আমরা ভারতে ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছি। এই ধারা আমরা অব্যাহত রাখতে চাই। আমাদের রপ্তানিকারকরা ভারতে আরও বেশি পণ্য রপ্তানি করে, আরও বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আনবেন, এমনটাই চাই। আশা করছি, এই সফরের মধ্য দিয়ে প্রত্যাশা পূরণ হবে: বাণিজ্যমন্ত্রী

গত অর্থবছরে পাশের দেশ ভারতে পণ্য রপ্তানিতে আশা জাগানিয়া সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ; অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে পণ্য রপ্তানিতে ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের মাইলফলক অর্জন করেছে। আগের অর্থবছরের চেয়ে যা ৮১ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য এই পরিসংখ্যান অবশ্যই সুসংবাদ। তবে ভারত থেকে পণ্য আমদানির তথ্য মোটেও সুখের নয়। একই অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ ১ হাজার ৬১৬ কোটি (১৬.১৬ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে। এ হিসাবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার ৪১৮ কোটি (১৪.১৮ বিলিয়ন) ডলারের রেকর্ড ছুঁয়েছে।

পাহাড়সম এই বাণিজ্য ঘাটতির মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে সোমবার সকালে দিল্লি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার তিনি নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে দুই দেশের মধ্যে আলোচিত ‘সেপা’ (কম্পি্রহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট) নামক বাণিজ্য চুক্তি সই করার ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হবে।

অর্থাৎ দুই দেশ ‘সেপা’ চুক্তির বিষয়ে একমত হবে এবং কত দিনে চূড়ান্ত চুক্তি হবে, চুক্তি হলে কোন দেশ, কতটা লাভবান হবে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিধি কতটা বাড়বে- এ সবই থাকবে সমঝোতা চুক্তিতে।

বাংলাদেশ এই চুক্তির ব্যাপারে খুবই আশাবাদী। চূড়ান্ত চুক্তি হলে এবং সেই চুক্তির আওতায় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমবে বলে প্রতাশা করছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: প্রধান লক্ষ্য বাণিজ্য ঘাটতি কমানো
২০১৭ সালে ভারত সফরে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান নরেন্দ্র মোদি। ছবি: টুইটার

‘এই চুক্তি সই হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিধি বাড়বে। কমবে বাণিজ্য ঘাটতিও’- এমনটা প্রত্যাশা করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নিউজবাংলাকে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফর আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশার কথা হচ্ছে, প্রথমবারের মতো আমরা ভারতে ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছি। এই ধারা আমরা অব্যাহত রাখতে চাই। আমাদের রপ্তানিকারকরা ভারতে আরও বেশি পণ্য রপ্তানি করে, আরও বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আনবেন, এমনটাই চাই। আশা করছি, এই সফরের মধ্য দিয়ে প্রত্যাশা পূরণ হবে।’

দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক জোট সার্কের আট সদস্য দেশের ছয়টিতে বাংলাদেশ যা রপ্তানি করে, এক ভারতেই বাংলাদেশ রপ্তানি করে তার ছয় গুণ বেশি। আবার চীনের পর বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে ভারত থেকেই।

এ রকম এক অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে ‘সেপা’ চুক্তি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয় ২০২০ সালে। মূলত স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের দিক থেকেই এই চুক্তির প্রস্তাবটি ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের বাণিজ্য চুক্তির পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনব্যবস্থা চালু হলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য আরও বাড়বে।

২০২১ সালের মার্চে বিশ্বব্যাংক ‘সমৃদ্ধির জন্য আন্তযোগাযোগ: দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বাঞ্চলের সমন্বিত পরিবহনব্যবস্থা চালুর চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ’শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের মাত্র ১০ শতাংশ হয় ভারতের সঙ্গে। আর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের হয় মাত্র ১ শতাংশ। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলেই ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে ১৮২ শতাংশ, আর বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি বাড়বে ১২৬ শতাংশ। আর নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনব্যবস্থা চালু হলে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে ২৯৭ শতাংশ, বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি বাড়বে ১৭২ শতাংশ।

‘সেপা’ চুক্তির মধ্যে অন্যতম প্রধান বিষয় থাকবে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। বাংলাদেশ এখন মুক্ত কোনো দেশের সঙ্গেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেনি।

শুল্ক ও অশুল্ক বাধার কারণে উভয় দেশের বাণিজ্য কীভাবে ব্যাহত হচ্ছে, শুল্কস্টেশনগুলোকে কীভাবে আরও বেশি কার্যকর করা যায় এবং বাণিজ্য বৃদ্ধিতে দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য এলাকাকে (সাফটা) কীভাবে আরও কাজে লাগানো যায়—এসব বিষয়ে দুই দেশ ইতোমধ্যে একটি সমীক্ষা শেষ করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে এই সমীক্ষা নিয়ে আলোচনার পর চূড়ান্ত চুক্তি করার ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছাবে দুই দেশ।

ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য এখন বাংলাদেশ

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি ব্যাপক হারে বেড়েছে। ভারতের হিসাবে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে তাদের কাছ থেকে যেসব দেশ পণ্য আমদানি করেছে, তার মধ্যে চতুর্থ বৃহত্তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। দুই বছর আগে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল নবম। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল পঞ্চম স্থানে।

ভারতের অর্থবছর এপ্রিল থেকে পরবর্তী বছরের মার্চ পর্যন্ত (এপ্রিল-মার্চ)। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে সে দেশের পণ্যের এক নম্বর আমদানিকারক দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন এবং বাংলাদেশ।

এর আগের অর্থবছরে বাংলাদেশের ওপরে ছিল হংকং। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে জার্মানি, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য এবং হংকংয়ে বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের পণ্য রপ্তানি বেশি ছিল।

ভারত গত অর্থবছরে সারা বিশ্বে ৪২ হাজার ২০০ কোটি (৪২২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে করেছে ১ হাজার ৬১৬ কোটি ডলার, যা তাদের মোট রপ্তানির ৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৯৬৯ কোটি ডলার, যা ভারতের রপ্তানির ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ।

গত অর্থবছরে ভারত থেকে সর্বাধিক ৭ হাজার ৬১৭ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ভারতের মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশ। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীন থেকে ভারতের রপ্তানি আয় এসেছে যথাক্রমে মোটের ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং ৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: প্রধান লক্ষ্য বাণিজ্য ঘাটতি কমানো
পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। ছবি: নিউজবাংলা

বাণিজ্য বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সরবরাহ চেইন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে তুলনামূলক কম দূরত্বের বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য উচ্চহারে বেড়েছে। বাংলাদেশকে রপ্তানি বাড়ানোয় মনোযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে তারা মনে করেন।

বাংলাদেশ ভারত থেকে অনেক ধরনের পণ্য আমদানি করে। আমদানির উল্লেখযোগ্য অংশ হলো তুলাসহ তৈরি পোশাকের বিভিন্ন কাঁচামাল। এ ছাড়া প্রধান প্রধান আমদানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে পেঁয়াজ, চিনি, ফলসহ ভোগ্যপণ্য, বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, লোহা ও ইস্পাত, প্লাস্টিক ইত্যাদি।

অন্যদিকে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক, কৃষিপণ্য, হিমায়িত খাদ্য, পাট ইত্যাদি।

বাংলাদেশের রপ্তানি

ভারতীয় ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের পণ্য। এর আগের অর্থবছরের চেয়ে যা ৮১ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে তারা ১০৯ কোটি ডলারের পণ্য নিয়েছিল। ভারত গত অর্থবছরে তার মোট আমদানির শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে নিয়েছে। ভারতের আমদানি গন্তব্যের বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০তম।

বাণিজ্য ঘাটতি

ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়লেও গত অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। ভারতের ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানির তুলনায় রপ্তানির পার্থক্য অর্থাৎ বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার ৪১৮ কোটি ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৮৬০ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে। বাংলাদেশ ছিল গত অর্থবছরে ভারতের ১৬তম বাণিজ্য অংশীদার। দুই দেশের মধ্যে মোট ১ হাজার ৮১৩ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে বাংলাদেশ ছিল ভারতের ১৯তম বাণিজ্য অংশীদার।

২০.৫৩% প্রবৃদ্ধি নিয়ে শুরু নতুন অর্থবছর

গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ ভারতের বিশাল বাজারে পণ্য রপ্তানিতে বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে নতুন অর্থবছর শুরু হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ভারতে ১৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের জুলাইয়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি।

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এই বাজারে ১২ কোটি ৬১ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে মাত্র তিনটি অর্থবছরে ভারতে পণ্য রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের বেশি হয়েছে, তাও সেটা গত তিন বছরে। তার আগের বছরগুলোয় ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে।

২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ভারতে ১২৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেন, যা ছিল এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে এ আয় বেশি ছিল প্রায় ১৭ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতের বাজারে ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে ১০৯ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলারে নেমে আসে।

২০১১ সালে ভারত বাংলাদেশকে অস্ত্র ও মাদক বাদে সব পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দেয়। যদিও সেই সুবিধা খুব বেশি কাজে লাগাতে পারছিলেন না বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। ২০১১ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের বেশ কিছু কারখানার কাছ থেকে পোশাক নিয়ে টাকা দেয়নি ভারতীয় কোম্পানি লিলিপুট। সে জন্য বেশ কয়েক বছর পোশাক রপ্তানিতে ভাটা পড়ে। কিন্তু গত কয়েক বছরে ভারতের বিভিন্ন শহরে পোশাকের নামিদামি বিদেশি অনেক ব্র্যান্ড বিক্রয়কেন্দ্র খোলায় তাতে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পায়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানির এক প্রতিবেদনে ২০১৯ সালে বলা হয়েছিল, দুই বছরের মধ্যে ৩০০টি আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড ভারতে বিক্রয়কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা করছে। কারণ দেশটির মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে ১৯ শতাংশ হারে বাড়বে, যা কিনা চীন, ব্রাজিল ও মেক্সিকোর তুলনায় দ্রুত। ২০২২ সালে ভারতের কাপড়ের বাজার হবে ৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের।

‘সেপা’ হলে কমবে বাণিজ্য ঘাটতি

গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই কাছাকাছি উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহের দিকে মনোযোগ বাড়িয়েছে। আবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অবকাঠামোগত যোগাযোগের উন্নতিও এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে।’

তিনি বলেন, ‘ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি আরও বাড়ানো সম্ভব। এর জন্য রপ্তানিকারকদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে নির্ধারিত মান পরিপালনের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। তবে ভারতের বাজারে অনেক সময় অযৌক্তিকভাবে অশুল্ক বাধা আরোপ করা হয়। এই বাধা দূর করার ক্ষেত্রে কূটনৈতিক যোগাযোগের পাশাপাশি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং রপ্তানিকারকদের নেগোসিয়েশন দক্ষতা বাড়াতে হবে।’

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এ গবেষক আরও বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ বর্তমানে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) স্বাক্ষর নিয়ে আলোচনা করছে। বাংলাদেশ যথাযথ নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে এ চুক্তি করলে ভারতে রপ্তানি বাড়বে। একই সঙ্গে এ দেশে ভারতের বিনিয়োগ বাড়বে। ভারতের বিনিয়োগকারীদের উৎপাদিত পণ্য তাদের দেশে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানি হবে। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি কমবে।’

একই কথা বলেছেন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও ভারতে রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমরা অর্থবছর শুরু করেছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় আমাদের প্রধান দুই বাজার আমেরিকা-ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় আমরা পোশাক রপ্তানিতে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। ওই দেশগুলোর মানুষ এখন পোশাক কেনা কমিয়ে দিচ্ছেন। এ অবস্থায় আমরা যদি ভারতে আমাদের রপ্তানি আরও বাড়াতে পারি, তাহলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হয়।’

দেশের অন্যতম শীর্ষ পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইভিন্স গ্রুপের কর্ণধার আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘ভারতে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের কদর বাড়ছে। ভৌগোলিক কারণেই ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। এখন থেকে তা বাড়তেই থাকবে বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে। প্রায় দেড় শ কোটি লোকের চাহিদা মেটাতে ভারতকে বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনতেই হবে। ভারতে পোশাক তৈরি করতে যে খরচ হয়, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করলে তার থেকে অনেক কম পড়ে। সে কারণে সব হিসাব-নিকাশ করেই তারা এখন বাংলাদেশ থেকে বেশি বেশি পোশাক কিনছে।’

‘ভারতের অনেক ব্যবসায়ী এখন বাংলাদেশের কারখানায় পোশাক তৈরি করে তাদের দেশে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছেন। এতে তাদের একদিকে যেমন লিড টাইম কম লাগছে, অন্যদিকে খরচও কম হচ্ছে।

‘সব মিলিয়ে ভারতের বিশাল বাজার বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য আগামী দিনে ‘সুদিন’বয়ে আনবে বলে মনে করছেন পারভেজ।

‘ভারতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ব্র্যান্ড-সচেতনতা। এ কারণে সেখানে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোও শক্ত অবস্থান তৈরি করছে। আবার আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোও দেশটিতে নতুন নতুন বিক্রয়কেন্দ্র খুলতে শুরু করেছে। সেই সুফলই এখন পাচ্ছে বাংলাদেশ। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। দুই দেশের সরকারের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বিজেপি ও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে। এটাই উপযুক্ত সময়। সরকার ও বেসরকারি খাত মিলে ভারতের বাজার ধরতে একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরের মধ্য দিয়ে পথচলা শুরু হবে বলে আমি আশা করছি।’

বাংলাদেশের নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ভারতের দুজন বায়ার আমার কারখানা পরিদর্শনে এসেছিলেন। তারা দুজন আমার পুরোনো ক্রেতা। এবার তারা এসেছেন আরও বেশি অর্ডার দিতে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ভারতে আমাদের পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। আমরা বেশ ভালোভাবেই ভারতের বাজারে প্রবেশ করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের দিকে। প্রথমবারের মতো ভারতে আমাদের রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছে। এটা বাড়ছেই। সত্যি কথা বলতে কি, ভারতের বাজার যদি আমরা মোটামুটি ভালোভাবে ধরতে পারি, তাহলে আর আমাদের পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। কেননা ভারত আমাদের পাশের দেশ, পরিবহন খরচ খুবই কম পড়বে। আমাদের মুনাফা বেশি হবে।’

‘ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে যদি কখনও কোনো কারণে সমস্যা হয়, তাহলেও আমাদের সমস্যা হবে না।’

‘সেপা’ চুক্তি বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই চুক্তি হলে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বছরে ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াতে পারে।

দুই বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষজ্ঞরা এই চুক্তির সম্ভাব্যতা নিয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। এই সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়। সেপা চুক্তির লক্ষ্য হলো—বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য উপযোগী সড়ক, বন্দর ও যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি করা।

এ ছাড়া শুল্ক-অশুল্ক বাধা ও অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক অপসারণ করা। এই চুক্তি সই হলে দুই দেশ যৌথভাবে টেস্টিং সার্ভিস ও ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করতে পারবে। এসবের মাধ্যমে কর্মসংস্হান বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে।

বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কোনো দেশের সঙ্গে এই চুক্তি করতে যচ্ছে। যদিও ভারত ইতোমধ্যে সাতটি দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি সই করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ সেপ্টেম্বর সোমবার দিল্লি পৌঁছবেন। প্রস্তাবিত কর্মসূচি অনুযায়ী পরদিন ৬ সেপ্টেম্বর সকালে রাজঘাটে গান্ধী সমাধিস্হলে শ্রদ্ধা অর্পণ করবেন। দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

ভারতে সিআইআই বা ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৭ সেপ্টেম্বর যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। ভারতের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে কীভাবে উভয় পক্ষই উপকৃত হতে পারে, সে বিষয়টিই সেখানে তুলে ধরবেন তিনি।

এরপর তিনি পবিত্র আজমির শরিফ দরগায় যাবেন। ৮ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরবেন তিনি।

মন্তব্য

আরও পড়ুন

অর্থ-বাণিজ্য
Changa Sylhets tourism sector on the occasion of Eid

ঈদ উপলক্ষে চাঙা সিলেটের পর্যটন খাত

ঈদ উপলক্ষে চাঙা সিলেটের পর্যটন খাত
সিলেটে আগামী কয়েক দিন পর্যটনে চাঙাভাব অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। ছবি: নিউজবাংলা
জাফলং পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়া বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে জাফলংয়ে অনেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও ভালো হয়েছে। এখানকার কোনো হোটেল-রিসোর্টেই এখন কক্ষ খালি নেই। আগামী কয়েক দিন পর্যটক সমাগম বেশি থাকবে বলে আশা করছি।’

কিছুদিন মন্দাবস্থার পর ঈদ উপলক্ষে চাঙা হয়ে উঠেছে সিলেটের পর্যটন খাত। ঈদের ছুটিতে ব্যাপকসংখ্যক পর্যটক এসেছেন সিলেটে। এতে খুশি পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা।

আগামী কয়েক দিন এই চাঙাভাব অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি গন্তব্য গোয়াইনঘাটের জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর। এ দুই জায়গাতেই ঈদের দিন থেকে পর্যটকদের ঢল নেমেছে, তবে ঈদের দিনের চেয়ে তার পরের দিন পর্যটক সমাগম আরও বাড়ে।

জাফলংয়ের পর্যটন খাতের উদ্যেক্তারা জানান, ঈদ মৌসুমে জাফলংয়ে আট থেকে ১০ লাখ পর্যটকের সমাগম হবে বলে আশা করছেন তারা।

জাফলং, সাদাপাথর ছাড়াও বিছনাকান্দি, রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট, পানতুমাই ঝরনা, লালাখাল ও সিলেটের বিভিন্ন চা বাগানে বৃহস্পতিবার থেকেই পর্যটকদের ঢল নামে। সিলেটের বেশির ভাগ হোটেল-রিসোর্ট এখন অতিথিতে পূর্ণ।

সিলেট শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে সাদাপাথর। সাদা পাথুরে নদীর শীতল জল আর পাশেই দিগন্ত বিস্তৃত মেঘালয় পাহাড়। প্রকৃতির এ অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। ঈদ মৌসুমে পর্যটক সমাগম আরও বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

ঈদুল ফিতরের পরের দিন শুক্রবার সাদাপাথরে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের কারণে নদীতে পা ফেলার অবস্থা নেই। ভিড়ের কারণে অনেকে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে ছিলেন; নামতে পারছিলেন না পানিতে।

সাদাপাথর ঘুরতে আসা কুমিল্লার শিউলি বেগম বলেন, ‘এই পরিবেশ অপরূপ। যে কেউ আসলে মন ভালো হয়ে যাবে।’

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থেকে আসা রাজেল মিয়া বলেন,‘দুপুরে সাদাপাথরে এসেছি। সাদাপাথরের ধলাই নদীর শীতল স্পর্শ মনকে চাঙা করে দিয়েছে।

‘সত্যিই অসাধারণ জায়গা। অবসর পেলেই চলে আসি।’

পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ সিলেট রিজিয়নের পরিদর্শক আখতার হোসেন বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। সাদাপাথরে এই ঈদে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোক ঘুরতে আসছেন।

‘আমাদের কয়েকটি টিম সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে। পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করছেন।’

ঈদ উপলক্ষে চাঙা সিলেটের পর্যটন খাত

সিলেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য জাফলং। শনিবার জাফলংয়ে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে মেঘ-পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন দর্শনার্থীরা।

জাফলংয়ে সকাল থেকেই দলবেঁধে পর্যটকেরা ঘুরতে আসেন। নদীতে নেমে কেউ কেউ গোসল করতে ব্যস্ত। আর নৌকা পার হয়ে অনেকের গন্তব্য মায়াবী ঝরনা, খাসিয়া পল্লি ও চা বাগানে। বেলা বাড়ার সঙ্গে দর্শনার্থীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।

পর্যটক সুজন আহমেদ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে পরিবারের সদস্যরা মিলে ঘুরতে এসেছি। জাফলং ভীষণ ভালো লেগেছে।

‘পাহাড় আর পাথরের সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে, তবে বৃষ্টিতে একটু ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।’

এদিকে পর্যটকদের চাপে সিলেটের হোটেল-মোটেলগুলোতে কক্ষ খালি ছিল না। ব্যস্ততা দেখা গেছে রেস্তোরাঁগুলোতেও। পর্যটকের সমাগমে খুশি এখানকার পর্যটন ব্যবসায়ীরাও।

জাফলং পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়া বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে জাফলংয়ে অনেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও ভালো হয়েছে।

‘এখানকার কোনো হোটেল-রিসোর্টেই এখন কক্ষ খালি নেই। আগামী কয়েক দিন পর্যটক সমাগম বেশি থাকবে বলে আশা করছি।’

পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে টুরিস্ট পুলিশ, থানা-পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ রতন শেখ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে সকাল থেকেই পর্যটকে মুখরিত ছিল জাফলং। আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা কাজ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়াও পর্যটকরা বেড়াতে এসে যাতে কোনোভাবেই ভোগান্তিতে না পড়েন, সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে।’

আরও পড়ুন:
তীব্র লোডশেডিং, পানির সংকটে অতিষ্ঠ সিলেটবাসী
সিলেটে গ্রামের চেয়ে বেশি লোডশেডিং শহরে
সিলেট টেস্টে শোচনীয় হার বাংলাদেশের
সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ৬
উদ্ভাবনী পদমর্যাদায় ‘ইনফেকশাস-ডিজিজ’ বিষয়ে প্রথম স্থান সিকৃবির

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Crowds to watch the Eid festival of farmers and farmers in Kurigram

কুড়িগ্রামে কিষাণ-কিষাণীর ঈদ উৎসব, দেখতে ভিড়

কুড়িগ্রামে কিষাণ-কিষাণীর ঈদ উৎসব, দেখতে ভিড় কোলাজ: নিউজবাংলা
কৃষকদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে  ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) নামে একটি সামাজিক সংগঠন। মূলত কৃষকদের ঈদকে প্রাণবন্ত করতে এ উৎসবের আয়োজন করে সংগঠনটি।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলায় ঈদ উৎসবে কিষান-কিষানিদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। সেসব খেলা দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজারো দর্শনার্থী এস ভিড় জমায়।

কৃষকদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) নামে একটি সামাজিক সংগঠন। মূলত কৃষকদের ঈদকে প্রাণবন্ত করতে এ উৎসবের আয়োজন করে সংগঠনটি। খেলা শেষে ৩৫ জন বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।

শুক্রবার দিনব্যাপী ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর বড়ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসব খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

কুড়িগ্রামে কিষাণ-কিষাণীর ঈদ উৎসব, দেখতে ভিড়

দিনব্যাপী চলা অনুষ্ঠানে প্রায় ২২ ধরনের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল হাঁড়ি ভাঙা, বালিশ খেলা, সুঁইসুতা, সাঁতার, তৈলাক্ত কলাগাছ বেয়ে চড়া, স্লো সাইকেল রেস, বেলুন ফাটানো এবং কিষানিদের বল ফেলা, বালিশ খেলা এবং যেমন খুশি তেমন সাঁজোসহ আরও অন্যান্য খেলা। এসব খেলায় অংশ নেন বিভিন্ন বয়সের শতাধিক কিষান-কিষানি।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম, সাংবাদিক শফি খান, রংপুর বিভাগীয় হিসাবরক্ষক সাইদুল হক, ফুল-এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের প্রমুখ।

খেলা দেখতে আসা ময়নাল হক বলেন, ‘গ্রামে এসব খেলা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ১০-১৫ বছর পর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেলা দেখে খুবই আনন্দ পেলাম। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে কৃষকদের হাঁড়ি ভাঙা, সাইকেল খেলা দেখে। এছাড়া কিষানিদের সুঁইসুতা খেলা ও বালিশ খেলা ছিল বেশ আনন্দের।’

কুড়িগ্রামে কিষাণ-কিষাণীর ঈদ উৎসব, দেখতে ভিড়

কৃষক নুর ইসলাম বলেন, ‘কৃষকদের নিয়ে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন সত্যি ভালো লেগেছে। আমরা এখানে শতাধিক কিষান-কিষানি আজকের খেলায় অংশ নিয়েছি। খু্ব ভালো লেগেছে।’

ফুল-এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, ‘কৃষক হাসলে বাংলাদেশ হাসে- এ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে দিনব্যাপী শতাধিক কিষান-কিষানিকে নিয়ে প্রায় ২২টি খেলার আয়োজন করা হয়েছে।

‘এ খেলার মাধ্যমে সমাজে বাল্যবিয়ে বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করেছি। এছাড়া গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতেও এ খেলার আয়োজন করা হয়েছে।’

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Akalima is excited to get a wheelchair on the day of Eid

ঈদের দিন হুইলচেয়ার পেয়ে উচ্ছ্বসিত আকলিমা

ঈদের দিন হুইলচেয়ার পেয়ে উচ্ছ্বসিত আকলিমা ছবি: নিউজবাংলা
জন্মের পর সুস্থ থাকলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে আকলিমার পা দুটি অকেজো হয়ে পড়ে। বর্তমানে সে চলাফেরা করতে পারে না।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে হুইলচেয়ার পেয়ে প্রতিবন্ধী কিশোরী আকলিমা আক্তারের মুখে হাসি ফুটেছে। আর্থিক টানাটানির পরিবারে এতদিন আদরের মেয়ের হুইলচেয়ারের আবদার রক্ষা করতে পারেননি মা-বাবা। অবশেষে ‘প্রান্তিক হাসি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি মানবিক সংগঠনের সহযোগিতায় হুইলচেয়ার পেয়ে ঈদের দিন শুধু মেয়ে নয়, মা-বাবার মুখেও ফুটেছে স্বস্তির হাসি।

জানা গেছে, ধলাপাড়া ইউনিয়নের আষাঢ়িয়াচালা গ্রামের গৃহকর্মী রাবেয়া ও আসলাম দম্পতির একমাত্র মেয়ে আকলিমা। জন্মের পর সুস্থ থাকলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে তার পা দুটি অকেজো হয়ে পড়ে। বর্তমানে সে চলাফেরা করতে পারে না।

অভাবের সংসারে বাবা-মায়ের কোলে বেড়ে উঠলেও বয়স বাড়ায় কষ্ট করে চলাফেরা করতে হয় তাকে। বাকি সময় তাকে শুয়ে-বসেই দিন কাটাতে হয়। অভাব-অনটনের সংসারে তাকে একটি হুইলচেয়ার কিনে দেয়ার মতো সামর্থ্য নেই পরিবারটির।

ঈদের দিন হুইলচেয়ার পেয়ে উচ্ছ্বসিত আকলিমা

হুইলচেয়ার পেয়ে উচ্ছ্বসিত আকলিমা তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘এতদিন আমার চলতে অনেক কষ্ট হয়েছে। এই চেয়ারটি আগে পেলে আমার চলাচলে অনেক সুবিধা হতো। আজ ঈদের দিন চেয়ারটি পেয়ে আমার অনেক ভালো লাগছে। আমি হাঁটতে না পারলেও চেয়ারটি ব্যবহার করে আমার সহপাঠীদের সঙ্গে অন্তত ঘুরতে পারব এবং আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাতায়াত করতে পারব।’

আকলিমার মা রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘বসতবাড়ি ছাড়া আমাদের কোনো সম্পদ নেই। মানুষের খেত-খামারে কাজ করে কোনোরকমে সংসার চালাই। দীর্ঘদিন ধরে একটি হুইল চেয়ারের অভাবে সারা দিন মেয়েটাকে শুয়ে থাকতে হতো। হাত দিয়ে ভর করে চলতে চলতে পা ও আঙুল বিকল হয়ে গেছে। এখন চেয়ার পেয়ে পরিবারের সবারই ভালো লাগছে।’

প্রান্তিক হাসি ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক মো. জাফর আলী বলেন, ‘স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আকলিমা আক্তার নামের একটি মেয়ে ছোট থেকেই এভাবে চার হাত-পায়ে অনেক কষ্টে চলাচল করছে। হাঁটুর ওপর ভর করে চলতে চলতে পায়ে ইনফেকশন হয়ে গেছে।

‘এদিকে তার দুই হাতের অনেকটাই অবশ। আকলিমার পরিবারের আর্থিক অবস্থাও খারাপ। যার কারণে, আমাদের এই উদ্যোগ। আর এই উদ্যোগটা আমরা ঈদের দিনে বাস্তবায়ন করেছি যাতে এই আনন্দের দিনে আনন্দের পরিমাণটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।’

এ বিষয়ে প্রান্তিক হাসি ফাউন্ডেশনের অপর সমন্বয়ক ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী শফিকুল ইসলাম জয় বলেন, ‘আকলিমার মুখে হাসি ফোটানোর এই ক্ষুদ্র প্রয়াসটি আজকের দিনের বড় একটি পাওয়া। আমরা প্রান্তিক অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতেও আমাদের সংগঠনের এরকম মানবিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

আরও পড়ুন:
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট, জরিমানা
প্রতিবন্ধী শিশুকে ঢামেকে ফেলে গেল স্বজন
কীভাবে পড়াশোনা করছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা
প্রতিবন্ধীদের বিদ্যালয় এমপিওভুক্তির দাবিতে মানববন্ধন
শ্রুতিলেখকের কলমে স্বপ্ন যাদের

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Weather may be bearable on Eid day

ঈদের দিনে ‘সহনশীল’ থাকতে পারে আবহাওয়া

ঈদের দিনে ‘সহনশীল’ থাকতে পারে আবহাওয়া ঈদের দিনে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন একজন আবহাওয়াবিদ। ছবি: অপূর্ব দত্ত/নিউজবাংলা
আবহাওয়াবিদ তরিকুল নেওয়াজ কবির বুধবার রাতে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের দিনে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’

ঈদুল ফিতরের দিন বৃহস্পতিবার দেশের আবহাওয়া সহনশীল পর্যায়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের একজন আবহাওয়াবিদ।

তরিকুল নেওয়াজ কবির বুধবার রাতে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের দিনে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’

তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ অব্যাহত থাকা নিয়ে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘পাবনা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, বান্দরবান এবং পটুয়াখালী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকবে।’

ঈদের দিনের তাপমাত্রা নিয়ে তরিকুল নেওয়াজ বলেন, ‘এপ্রিল মাস হচ্ছে বছরের উষ্ণতম মাস, স্বভাবতই একটু গরম থাকে, তবে কালকে ঈদের দিন আমরা আশার করছি যেটা, হালকা মেঘ থাকবে।

‘সেই সাথে একটু সহনশীল পর্যায়ে আবহাওয়াটা থাকবে। এত বেশি গরম থাকবে না হয়তো।’

আরও পড়ুন:
দিনে গরম বাড়বে
বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি, আরও ঘামবে মানুষ
কোথাও কোথাও হতে পারে শিলা বৃষ্টি
ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে পাঁচ বিভাগে
দেশজুড়ে বাড়তে পারে দিন ও রাতের তাপমাত্রা

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
There is no joy of Eid in the families of the hostage crew due to anxiety
জলদস্যুদের কবলে এমভি আবদুল্লাহ

উৎকণ্ঠায় ঈদের আনন্দ নেই জিম্মি ক্রুদের পরিবারে

উৎকণ্ঠায় ঈদের আনন্দ নেই জিম্মি ক্রুদের পরিবারে
জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীরের মা জোসনা বেগম বলেন, ‘মনে শান্তি না থাকলে ঈদের আনন্দ কীভাবে আসবে? ঈদের দিন শুধু প্রার্থনা করে যাব যেন সন্তান দ্রুত মুক্তি পায়, নিরাপদে দেশে আসতে পারে।’

রাত পোহালেই ঈদ। অথচ গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ক্যাপ্টেনসহ ২৩ ক্রুর পরিবারে কারও মুখে হাসি নেই; তাদের ঘরে নেই ঈদের আমেজ। চোখে মুখে দুর্ভাবনা, চিন্তার ভাঁজ কপালে।

চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় কাটছে তাদের দিন। কবে জিম্মিদশা থেকে তারা মুক্তি পাবেন, সেই দিকেই চেয়ে আছেন নাবিকদের পরিবার-স্বজনরা।

জিম্মি নাবিকদের কয়েকজনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার তাদের ঘরে কাপড় চোপড়সহ ঈদের কোনো কেনাকাটা হয়নি। রোজা রেখে দিন কাটছে তাদের।

ঈদের আগে যদি নাবিকরা মুক্তি পান তাহলে এর চাইতে বড় খুশির খবর তাদের কাছে আর কিছু নেই। তারা মুক্তি না পেলে এবারের ঈদ স্বজনদের কাছে আনন্দের হয়ে উঠবে না।

জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খানের মা শাহনূর বেগম বলেন, ‘জিম্মি অবস্থায় বড় ছেলে বিপদের মধ্যে রয়েছে। সেখানে সে ভালো নেই। এ অবস্থায় খাওয়া-দাওয়াও করতে পারছি না।’

আতিকের জন্য পরিবার ও স্বজন সবার মন খারাপ। তারা বলছেন, আমরা এখনও কেউ ঈদের কেনাকাটা করিনি। কারো মন-মানসিকতা ভালো নেই।

আতিক উল্লাহর ভাই আসিফ খান জানান, তাদের কারও মনে শান্তি নেই। ভাই ফিরে না আসা পর্যন্ত তাদের এ উৎকণ্ঠা শেষ হওয়ার নয়।

চট্টগ্রাম শহরে থাকেন জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমদের মা, স্ত্রী আর ছোট ভাই।

তানভীরের মা জোসনা বেগম বলেন, ‘মনে শান্তি না থাকলে ঈদের আনন্দ কীভাবে আসবে? ঈদের দিন শুধু প্রার্থনা করে যাব যেন সন্তান দ্রুত মুক্তি পায়, নিরাপদে দেশে আসতে পারে।’

উৎকণ্ঠায় ঈদের আনন্দ নেই জিম্মি ক্রুদের পরিবারে
জিম্মি জাহাজ এভি আব্দুল্লাহর ২৩ ক্রু। কোলাজ: নিউজবাংলা

জিম্মি জাহাজের নাবিক সামশুদ্দিন শিমুলের সাত বছর বয়সী মেয়ে আয়ুবা তাসনিম সাঈদা তার মায়ের কাছে জানতে চেয়েছে ঈদে আব্বু বাড়ি আসবে কি না। শিমুল সোমালি দস্যুদের কবল থেকে কবে মুক্তি পাবেন, সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত না হলেও সাঈদাকে তার মা সান্তনা দিয়ে বলেছেন, ‘তোমার আব্বু ঈদের পরে আসবে।’

নাবিক তরিকুল ইসলামের বড় ভাই আলমগীর হোসেন বলেন, ‘২৮ দিন ধরে ছোট ভাই জিম্মি অবস্থায় রয়েছে, সেখানে কীভাবে আমরা ভাল থাকি? মা-বাবাসহ পরিবারের কারও মন ভালো নেই।’

নাবিক মোহাম্মদ নুরুদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমাদের জন্য ঈদের আনন্দটা এবার আসে নাই। স্বজনদের জন্য আমরা এতটাই দুশ্চিন্তায় আছি যে ঈদের কোনো প্রস্তুতি বা শপিং কিছুই হয়নি। আমার কিংবা আমার শিশুপুত্রের মাঝে ঈদের কোনো আনন্দ নেই।’

জাহাজ মালিক চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজের ক্রুদের মুক্তির বিষয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে ঈদের পরে তাদের মুক্তির সম্ভাবনা বেশি। তাদের (দস্যুদের) যোগাযোগ চলছে। আমরা সবসময় ক্রুদের পরিবারের সঙ্গে আছি। ঈদের সময়ও আমরা তাদের পাশে থাকব।’

এ বিষয়ে বুধবার চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘জলদস্যুদের হাত থেকে জাহাজ ও এর ক্রু দুটোই উদ্ধার করার ক্ষেত্রে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আশা করছি, শিগগির তাদেরকে মুক্ত করতে পারব। তবে উদ্ধারের দিনক্ষণ বলাটা কঠিন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের (ক্রুদের) পরিবারকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, সরকার সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছে। প্রথমত, যারা অপহরণ করেছে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন পক্ষের মাধ্যমে আলোচনা চলছে। দ্বিতীয়ত, তাদের ওপর মনস্তাত্বিক চাপ তৈরি করা হয়েছে।

‘তারা ভালো আছেন, নিয়মিতভাবে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও রাখছেন। এমনকি ভিডিও কলে কথাও বলছেন। সুতরাং যে উদ্বেগটা কিছুদিন আগে ছিল, সেটি এই মুহূর্তে নেই। আশা করছি তাদেরকে শিগগির মুক্ত করতে পারব।’

উৎকণ্ঠায় ঈদের আনন্দ নেই জিম্মি ক্রুদের পরিবারে
বুধবার চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

অপরদিকে, বন্দি ক্রুদের চলতি মাসেই সুষ্ঠুভাবে উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের (ক্রুদের) পরিবারের কাছে ফেরত দেয়া আমাদের প্রধান দায়িত্ব। সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কোনো ছোট ঘটনা নয়, অনেক বড় ঘটনা। কাজেই দিন-তারিখ দিয়ে এর সমাধান করা সম্ভব নয়। সম্পূর্ণ ঘটনা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আশা করছি, আমরা তাদের সুষ্ঠুভাবে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল, ঈদের আগে নাবিকদের যেন দেশে আনতে পারি, কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি। সেখানে একটা সমস্যা হয়েছে। তবে আশা করছি, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।’

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মাকসুদ আলম জানান, দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ ফলপ্রসূ হচ্ছে।

ক্রুদের পরিবারে ঈদের আনন্দ না থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নে কমডোর মাকসুদ আলম বলেন, ‘তাদের তো এই ঈদে বাড়ি আসার কথা ছিল না। মানসিক অশান্তি থেকে তাদের যতদ্রুত সম্ভব মুক্তি দেয়া যায়, সরকার সে চেষ্টা করছে।

‘তবে তাদের পরিবারে আর্থিক কোনো সমস্যা নেই। সরকার তাদের পরিবারের সঙ্গে আছে। জিম্মিদশা থেকে তাদের মুক্ত করার সব রকমের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

জাহাজে জিম্মি নাবিকদের মধ্যে রয়েছেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর গোসাইলডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা। চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার বরকলে। সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা। থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার বাসিন্দা। ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন টাঙ্গাইল জেলার নাগপুর থানার বাসিন্দা। চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামানের বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলায়। সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম ও থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা। ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ ও ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ ফেনী জেলার বাসিন্দা। ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থানায়।

এছাড়া ক্রুদের মধ্যে মো. শরিফুল ইসলামের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানা এলাকায়, মো. আসিফুর রহমানের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, মোশাররফ হোসেন শাকিল ও আইনুল হকের বাড়ি মিরসরাই উপজেলায়; মো. সাজ্জাদ হোসেন, নুর উদ্দিন ও মোহাম্মদ সামসুদ্দিনের বাড়ি চট্টগ্রামের কর্ণফুলি উপজেলায়; মো. আনোয়ারুল হকের বাড়ি নোয়াখালির কোম্পানিগঞ্জ, জয় মাহমুদের বাড়ি নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া, মো. নাজমুল হকের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার কামারাখন্দ এবং মো. আলী হোসেনের বাড়ি বরিশালে বানাড়িপাড়া গ্রামে।

আরও পড়ুন:
ঈদ কার্ড বানিয়ে নতুন জামা পেল শিশুরা

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Why is the price of meat high in Meherpur on the eve of Eid?

ঈদের আগের দিন মেহেরপুরে মাংসের দাম বেশি কেন

ঈদের আগের দিন মেহেরপুরে মাংসের দাম বেশি কেন ঈদুল ফিতরের আগের দিন বুধবার মেহেরপুরের বামন্দী কসাইখানায় মাংস কাটায় ব্যস্ত কসাই। ছবি: নিউজবাংলা
মাংসের চাহিদা বাড়ায় জেলায় বিক্রেতারা বাড়তি দামে মাংস বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা, তবে বিক্রেতাদের ভাষ্য, তারা বেশি দামে গরু কেনায় মাংসের দামও বেশি নিতে হয়েছে।

ঈদুল ফিতরের আগের দিন বুধবার দেশের অন্য অনেক এলাকার মতো গরুর মাংসের চাহিদা বেড়েছে মেহেরপুরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলার তিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাংস ব্যবসায়ীরা মহিষ, গরু ও ছাগল জবাই করতে ব্যস্ত সময় পার করেন।

মাংসের চাহিদা বাড়ায় জেলায় বিক্রেতারা বাড়তি দামে মাংস বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা, তবে বিক্রেতাদের ভাষ্য, তারা বেশি দামে গরু কেনায় মাংসের দামও বেশি নিতে হয়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিপ্রতি ছাগলের মাংস বিক্রি হয় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়। গরুর মাংস বিক্রি হয় ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজিতে। আর মহিষের মাংস বিক্রি হতে দেখা যায় ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা কেজি দরে।

মাংস কিনতে আসা মন্টু মিয়া বলেন, ‘ঈদের দিন মাংসের দোকানে অনেক ভিড় থাকে। তাই আমরা এক দিন আগেই মাংস কিনে রাখি, তবে মাংসের দাম অন্য সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি। তারপরও কিনতে হবে, ঈদ বলে কথা।’

দিনমজুর জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আগামীকাল ঈদের দিন। পরিবারের সকলকে নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করব। এ বছর ছেলে-মেয়েদের পোশাক কিনতে গিয়ে সব টাকা শেষ হইয়ি গিছে। আজ সেমাই সুজির সাথে মাংস কিনলেই চলবে।

‘বাজারে এসে দেখি প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা করে, কিন্তু মাংসের যে দাম! বাধ্য হয়ে অল্প করে গরুর মাংস কিনব। তা ছাড়া ব্রয়লার মুরগি কিনব।’

স্কুলশিক্ষক শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আমাদের সাতজনের পরিবার। তার মধ্যে দুজনের গরুর মাংস খাওয়া নিষেধ। তাই ছাগলের মাংসও কেনা লাগবে। বাজারে এসে দেখি প্রতি কেজি ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকা করে।

‘মাংস বিক্রেতারা জানে ঈদের ছুটি হওয়ায় ভোক্তা-অধিকার কিংবা মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সম্ভাবনা কম। তাই ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাংস বিক্রেতা মনিরুল বলেন, ‘আমরা ঈদ উপলক্ষে যতগুলো গাছান (জ্যান্ত) গরু কিনেছি, সব ৭২০ টাকা করে কেনা পড়েছে। তাহলে আমাদের পরিশ্রমের দামসহ হিসাব করে বিক্রি করলে ৮০০ টাকা করে বেচা উচিত, কিন্তু তা তো আর পারছি না।’

আরেক মাংস ব্যবসায়ী মঈন উদ্দিন বলেন, ‘ঈদের দুই দিন আগ থেকে শুরু করে ঈদের দিন পর্যন্ত আমার চারটা মহিষ ও ১০টা গরু লাগবে বিক্রির জন্য। সে হিসেবে আমরা এক সপ্তাহ আগ থেকে গরু, মহিষ কেনা শুরু করেছি। হঠাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে গাছান গরু আমাদের ৭২০ টাকা করে কেজি পড়তা পড়ছে।

‘তাই আমরা ৫০ টাকা লাভ হিসেবে মাংস বিক্রি করছি। আমরা ৫০ টাকা বেশি দামে মাংস বেচলেই নিউজ হয়। অথচ আমরা যে ৮০ টাকা করে বেশি দামে গরু কিনলাম, তা আর নিউজ হয় না।

বামন্দী পশুহাট ইজারাদার সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সপ্তাহে দুই দিন পশু হাট বসে। সোম ও শুক্রবার। গত দুই হাটে প্রচুর গরু আমদানি হয়েছে। বিক্রি হয়েছে অনেক বেশি, তবে গত দুই হাট ছাগল ও গরু বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। কারণ ঢাকাসহ বাইরের অনেক বেপারি হাটে আসায় গরুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে।’

আরও পড়ুন:
মরা গরুর মাংস বিক্রির অপরাধে শরণখোলায় আটক ২
গাংনীতে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ
ফরিদপুরে ৫০০ টাকায় গরুর গোশত
মেহেরপুরে মৌমাছির আক্রমণে অন্তত ২৫ জন আহত
মেহেরপুরে মাদক মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার 

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Children got new clothes by making Eid cards

ঈদ কার্ড বানিয়ে নতুন জামা পেল শিশুরা

ঈদ কার্ড বানিয়ে নতুন জামা পেল শিশুরা নতুন জামা পেয়ে খুশি ছোট্ট শিশুরা। ছবি: নিউজবাংলা
ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে শিশুদের মাঝে ঈদ কার্ড প্রতিযোগিতার আয়োজন করে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মন রঙের পাঠশালা’। পরে বিজয়ী ৮ জনকে বিশেষ পুরস্কার ও আয়োজনে অংশগ্রহণ করা সকল শিশুদের হাতে পোশাক তুলে দেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অন্তু চৌধুরী।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে ঈদ কার্ড বানিয়ে ঈদের নতুন পোশাক পেয়েছে অর্ধশতাধিক শিশু শিক্ষার্থীরা।

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে শিশুদের মাঝে ঈদ কার্ড প্রতিযোগিতার আয়োজন করে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মন রঙের পাঠশালা’। পরে বিজয়ী ৮ জনকে বিশেষ পুরস্কার ও আয়োজনে অংশগ্রহণ করা সকল শিশুদের হাতে পোশাক তুলে দেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অন্তু চৌধুরী।

মন রঙের পাঠশালার এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনে শিশুদের অভিভাবকরাও।

বুধবার দুপুরে ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজ মাঠে কোমলমতি শিশুদের হাতে পুরস্কারস্বরূপ ঈদের পোশাক তুলে দেয়া হয়।

ঈদ কার্ড বানিয়ে নতুন জামা পেল শিশুরা

জানা গেছে, মন রঙের পাঠশালার উদ্যোগে ঈদ কার্ড বানানো প্রতিযোগিতায় ৭৫টি শিশু অংশগ্রহণ করে। সংগঠনটি ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সদস্য নিয়ে জেলার তিনটি উপজেলা ফুলবাড়ি, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারীতে ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪ হাজার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও মানসিক বিকাশের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে আসছে সংগঠনটি। এরই ধারাবাহিকতায় ঈদের আগে তারা শিশুদের মাঝে রঙপেন্সিল দিয়ে ঈদ কার্ড বানানোর আয়োজন করে।

ঈদ কার্ড বানানো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া শিশু শিক্ষার্থী মো. ইকবাল অনিক বলে, ‘ঈদ কার্ড বানিয়ে নতুন জামা পুরস্কার পাবো, কখনও ভাবি নাই। সত্যি আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। এ নতুন জামা পরে কাল ঈদ করব।’

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অন্তু চৌধুরী বলেন, ‘ত্রাণ নয়, বরং ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মানসিকতা তৈরি হোক নিজে কিছু করার, ইকোনোমিক্যাল ও স্বাবলম্বী হবার। এবার তাই আমরা ঈদ কার্ড বানানো প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। তারপর তাদের এই প্রচেষ্টাকে আমরা তুলে ধরি এবং ঈদ কার্ডের ছবিগুলো থেকেই এলো তাদের ঈদের উপহার নতুন পোশাক।’

আরও পড়ুন:
চাঁদ দেখা যায়নি, ঈদ বৃহস্পতিবার

মন্তব্য

p
উপরে