রেমিট্যান্সের মতো রপ্তানি আয়েও সুবাতাস বইছে। সদ্য শেষ হওয়া আগস্ট মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪৬০ কোটি ৭০ লাখ (৪.৬০ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত বছরের আগস্টের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার বেশি ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) পণ্য রপ্তানি থেকে ৮৫৯ কোটি ১৮ লাখ (৮.৫৯ বিলিয়ন) ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে, যা গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ দুই মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েছে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ।
বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের প্রধান উৎস রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সে এই উল্লম্ফনের মধ্য দিয়ে অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসছে বলে জানিয়ছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা। মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করেই গত অর্থবছরের মতো রপ্তানি আয়ে সুবাতাস বইছে।
রোববার প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৭১১ কোটি ২৬ লাখ (৭.১১ বিলিয়ন) ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি আয় হয়েছে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ।
দুই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ওলোটপালট হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতিতে রপ্তানি আয় কমবে বলে আশঙ্কা করছিলেন রপ্তানিকারকরা। কিন্তু কোরবানির ঈদের ছুটির কারণে আট-দশ দিন পোশাক কারখানাসহ অন্য সব কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। দ্বিতীয় মাস আগস্টেও সেই উল্লম্ফন অব্যাহত আছে।
আর এতে দেশের অর্থনীতির জন্য ‘খুবই ভালো’ লক্ষণ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতির গবেষক আতিউর রহমান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘রেমিট্যান্সের পর রপ্তানি আয় বাড়ায় অর্থনীতিতে যে চাপ দেখা দিয়েছিল, এই দুই সূচকের ইতিবাচক ধারায় তা অনেকটা কেটে যাবে।’
ইপিবি’র তথ্যে দেখা যায়, ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ৪৬০ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন দেশের রপ্তানিকারকরা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩০ কোটি ডলার। গত বছরের আগস্টে রপ্তানি হয়েছিল ৩৩৮ কোটি ৩১ লাখ ডলারের পণ্য।
এ হিসাবেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। অঅর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ দশমিক ১৮ শতাংশ।
জুলাই মাসে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার (প্রায় ৪ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করছে বাংলাদেশ।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে ৫২ দশমিক শূন্য আট বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। আগের অর্থবছরের (২০২০-২১) চেয়ে বেশি আয় হয়েছিল ৩৪ দশমিক৩৮ শতাংশ।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছে সরকার।
এই অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এসেছে ৪১৩ কোটি ৪০ লাখ (৪.১৩ বিলিয়ন) ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ।
আগামী দিনগুলোতেও রপ্তানি বাড়ার আশা
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প-মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নানা ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেও দুই মাসে সার্বিক রপ্তানিতে ২৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অবশ্যই একটা ভালো দিক। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ২৬ শতাংশের বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে এই উল্লম্ফন আমাদের আশান্বিত করেছে। এই সঙ্কটের সময় রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয় বাড়াটা খুবই দরকার ছিল। এর মধ্য দিয়ে রিজার্ভ বাড়বে। ডলারের বাজারে যে অস্থিরতা চলছে, সেটাও কেটে যাবে বলে আশা করছি।’
আগামী দিনগুলোতেও এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে-আশার কথা শুনিয়ে দেশের অন্যতম শীর্ষ পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইভিন্স গ্রুপের কর্ণধার পারভেজ বলেন, ‘এ কথা ঠিক যে, যুদ্ধের কারণে আমাদের পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে। সে কারণে এখন সেখানকার মানুষদের খাদ্যের জন্য বেশি খরচ করতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু অতিপ্রয়োজনীয় কম দামি পোশাক তাদের কিনতেই হবে। আমরা প্রচুর কম দামি পোশাক রপ্তানি করি। সে কারণে আমার মনে হয় না যে যুদ্ধের কারণে আমাদের রপ্তানিতে খুব একটা প্রভাব পড়বে।’
‘এছাড়া চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আমেরিকান ক্রেতারা চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বাংলাদেশে আসছেন। ভিয়েতনাম থেকেও অনেক অর্ডার বাংলাদেশে আসছে। তাই আগামী দিনগুলোতে আমাদের রপ্তানি বাড়বে বলেই আমার কাছে মনে হচ্ছে।’
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যুদ্ধের প্রভাব রপ্তানি আয়ে পড়বে। তবে আমার মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের রপ্তানি খুব একটা কমবে না। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও দেশটির অর্থনীতিতে কোনো সংকট নেই। সে কারণে ওই দেশের লোকজন পোশাক কেনা কমিয়ে দেবে এমনটা আমার কাছে মনে হয় না।
নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম যুদ্ধের কারণে আমাদের রপ্তানি আয় বেশ কমে যাবে। কিন্তু তা হয়নি; মোটামুটি ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এটাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।’
‘তবে এখানে একটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে, গত জুনে কিন্তু ৪ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছিল। সে তুলনায় জুলাই ও আগস্ট মাসে কিন্তু কম এসেছে।
হাতেম বলেন, ‘আশা করছি, যুদ্ধ পরিস্থিতি তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আমাদের রপ্তানির ইতিবাচক ধারাও অব্যাহত থাকবে। বলা হচ্ছে, ইউরোপ-আমেরিকায় মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষজন পোশাক কেনা কমিয়ে দেবে। কিন্তু আমরা অতিপ্রয়োজনীয় পোশাক বেশি রপ্তানি করি। সে কারণে এ ধরনের পোশাক তাদের কিনতেই হবে।’
‘যতো সংকটই থাকুক না কেনো আমাদের প্রবৃদ্ধি হবে। হয়তো গত অর্থবছরের মতো অতো বেশি হবে না। তবে, রপ্তানি বাড়বে।’
পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৬.১০ শতাংশ
মূলত পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করেই জুলাই-আগস্ট সময়ে রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন হয়েছে। ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই দুই মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি এসেছে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-আগস্ট সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮২ দশমিক ৭৮ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। যার মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি এসেছে প্রায় ৮ শতাংশ।
ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ৩ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। লক্ষ্যে চেয়ে বেশি আয় হয়েছে ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ।
জুলাই-আগস্ট সময়ে পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৬ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার।
পাট খাতে ফের আশার আলো
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সার্বিক রপ্তানিতে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে ছিল হতাশার চিত্র। আগের অর্থবছরের চেয়ে এ খাত থেকে ৩ শতাংশের মতো কম বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছিল।
কিন্তু চলতি অর্থবছরে পাট খাতেও আশা জাগানিয়া শুরু হয়েছে। ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ১৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলার দেশে এসেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম এসেছে।
জুলাই-আগস্ট সময়ে এই খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১৮ কোটি ১৪ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।
অন্যান্য খাত
অন্যান খাতের মধ্যে জুলাই-আগস্ট সময়ে হোম টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে ২৬ কোটি ৮৫ লাখ ২০ হাজার ডলার এসেছে; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২২ কোটি ৩২ লাখ ৩০ হাজার ডলার এসেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে; বেড়েছে ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
এছাড়া এই দুই মাসে স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে ৩ কোটি ৯৩ লাখ ১০ হাজার ডলার, বাইসাইকেল থেকে ২ কোটি ৪৯ লাখ ২০ হাজার ডলার, ক্যাপ বা টুপি থেকে ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার, প্লাষ্ট্রিক পণ্য থেকে ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং হ্যান্ডিক্যাফট রপ্তানি থেকে ৫২ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।
তবে জুলাই-আগস্ট সময়ে রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত হিমায়িত মাছ ও কৃষিপণ্য থেকে রপ্তানি আয় কমেছে। ওষুধ রপ্তানি থেকেও আয় কমেছে।
হিমায়িত মাছ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৮ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার; কমেছে ৭ দশমিক ২১ শতাংশ। কৃষিপণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১৭ কোটি ৮২ লাখ ২০ হাজার ডলার; কমেছে ১৪ শতাংশ।
ওষুধ রপ্তানি থেকে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার আয় হয়েছে। যা গত বছরের জুলাই-আগস্টের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম।
আরও পড়ুন:ইরানের ইস্পাহানে বৃহস্পতিবার রাতে ইসরায়েলের হামলার খবরে শুক্রবার পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে উল্লেখ করে রয়টার্স জানিয়েছে, এশিয়ার শেয়ার ও বন্ডে ধস নামে, যেখানে উল্লম্ফন দেখা যায় স্বর্ণ ও অশোধিত জ্বালানি তেলের দামে।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি হামলার বিষয়টি জানার পর পুঁজিবাজার ও তেলের বাজারে শুরুতে যে প্রভাব পড়ে, সেটি কমে এসেছে। হামলার পরিসর ছোট এবং কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়নি বলে ইরানের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এমন বাস্তবতা সৃষ্টি হয়।
শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিভিত্তিক এমএসসিআইয়ের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সূচকের পতন হয় দুই দশমিক ছয় শতাংশ, যেটি পরবর্তী সময়ে কমে দাঁড়ায় দুই শতাংশে।
অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার শঙ্কায় ব্রেন্টের অশোধিত জ্বালানি তেলের দাম শুরুতে চার দশমিক দুই শতাংশ বাড়লেও পরবর্তী সময়ে তা কমে বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়ায় দুই দশমিক চার শতাংশ। মূল্যবৃদ্ধি কমার পর ব্যারেলপ্রতি ব্রেন্টের অশোধিত তেলের দাম দাঁড়ায় ৮৯ দশমিক ২২ ডলারে।
সিরিয়ার দামেস্কে গত ১ এপ্রিল ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার জবাবে গত শনিবার রাতে ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় নগর ইস্পাহানে ইসরায়েলি হামলার খবর পাওয়া গেছে।
ইরানের বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজ জানায়, ইস্পাহানের একটি বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, তবে কী কারণে এ বিস্ফোরণ হয়েছে তা জানা যায়নি।
‘নির্ভরযোগ্য সূত্রের’ বরাত দিয়ে ইরানের বার্তা সংস্থা তাসনিমের খবরে বলা হয়, ‘ইস্পাহান প্রদেশের পরমাণু ক্ষেত্রগুলো সম্পূর্ণ নিরাপদ।’
দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, ইস্পাহানের কাছে বিস্ফোরণের পর কয়েকটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়। সেখানে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়নি।
ইস্পাহান শহরের কাছে ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক ক্ষেত্র রয়েছে, যেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে দাবি করেছে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম।
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৬৫ টাকা বাড়িয়ে রেকর্ড ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের সাড়ে তিন মাসে অষ্টমবারের মতো স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হলো।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৃহস্পতিবার বৈঠক করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। নতুন নির্ধারিত এই দাম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই কার্যকর হবে।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী- ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৬৫ টাকা বেড়ে ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৯৯৪ টাকা বেড়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ২০২ টাকা, ১৮ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৬৫৬ টাকা বেড়ে ৯৭ হাজার ৮৮৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৩৮৮ টাকা কমে ৭৮ হাজার ৮০২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সবশেষ দশ দিন আগে ৮ এপ্রিল বাজুস ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৭৪৯ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা নির্ধারণ করে। এতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। ১০ দিনের ব্যবধানে আবারও দাম বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে দেশের স্বর্ণের বাজারে উচ্চ দামের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হলো।
অবশ্য স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতাদের আরও বেশি অর্থ গুনতে হবে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে স্বর্ণের গহনা বিক্রি করা হয়। সেসঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হবে ১ লাখ ২৯ হাজার ১১৯ টাকা।
এদিকে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেট ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা আছে।
আরও পড়ুন:ভারতে লোকসভা নির্বাচনের কারণে ১৭, ১৮ ও ১৯ এপ্রিল পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পাথরসহ সকল প্রকার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারত। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপারও বন্ধ থাকবে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামা পারভীন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয় ।
এদিকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বুধবার দুপুরে ৩ দিন বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ভারতের লোকসভা নির্বাচন কারনে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে আজ (বুধবার) থেকে শুক্রবার বন্দর দিয়ে দুই দেশের মাঝে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এ সময় অফিস যথারীতি খোলা থাকবে।’
শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে স্থলবন্দর দিয়ে পুনরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কর্মকর্তা অমৃত অধিকারী জানান, দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধের সঙ্গে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাওয়া-আসাও বন্ধ থাকবে।
হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই বন্দর দিয়ে পার হতে আসা যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে, জরুরি চিকিৎসার জন্য যাতায়াতকারী মানুষের দূর্ভোগ বেড়েছে।
আরও পড়ুন:বিষয়বস্তু অবহিত না করে ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থিভাবে ‘রূপান্তর’ শিরোনামের একটি নাটক প্রচার করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’কে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে ওয়ালটন।
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সব ধরনের বিজ্ঞাপনী চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিষয়টির জন্য ওয়ালটন গ্রুপ ক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
ওয়ালটনের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’ এর স্বত্বাধিকারী মোহন আহমেদকে মঙ্গলবার ওই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।
ওয়ালটনের পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট রাইসুল ইসলাম রিয়াদ স্বাক্ষরিত আইনি নোটিশে উল্লেখ করে যা বলা হয়, ‘আপনি লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান এর স্বত্বাধিকারী। আপনার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার নির্মিত ছয়টি নাটকে ওয়ালটন ফ্রিজ ব্র্যান্ডিং করতে সম্মত হয়। শর্ত থাকে যে, উক্ত নাটকসমূহে দেশের আইন, নীতি, নৈতিকতা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হয় এরকম কোনো বিষয় অর্ন্তভুক্ত হবে না। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, উক্ত নাটকসমূহের মধ্যে ‘রূপান্তর’ নাটকটিতে এমন কিছু বিষয় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে, যাতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ও মানুষের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে।’
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘ওয়ালটন কর্তৃপক্ষকে নাটকটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে পূর্বে অবহিত না করে রূপান্তর নাটক প্রচার করায় আপনার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হলো এবং সেই সঙ্গে কেন আপনার বিরুদ্ধে ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থিভাবে নাটক প্রচারের জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে জানানোর জন্য বলা হলো।’
এর আগে ফেসবুক-ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকে ‘রূপান্তর’ নাটকটি প্রত্যাহারের জন্য বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে নির্দেশ দেয় ওয়ালটন। তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুক-ইউটিউবসহ সব মাধ্যম থেকে নাটকটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
এরপর বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ওয়ালটন গ্রুপের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থি নাটকে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’কে লিগাল নোটিশ দেয় ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।
আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ওয়ালটনের ভাষ্য, দেশের মানুষের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনো কর্মকাণ্ড কখনও তারা সমর্থন করে না এবং এসব কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকে না। অনাকাঙ্ক্ষিত এই বিষয়টির জন্য ওয়ালটন গ্রুপ মর্মাহত এবং সম্মানিত ক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন রূপালী ব্যাংক পিএলসির মহাব্যবস্থাপক মো. ফয়েজ আলম। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে তিনিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকের আট জন মহাব্যবস্থাপককে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।
ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি হওয়ার আগে তিনি রূপালী ব্যাংক পিএলসিতে মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মো. ফয়েজ আলম ১৯৯৮ সালে বিআরসির মাধ্যমে সিনিয়র অফিসার পদে রূপালী ব্যাংকে যোগদান করেন। কর্মজীবনে ব্যাংকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখার শাখা ব্যবস্থাপক, জোনাল অফিস এবং প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। পেশাগত প্রয়োজনে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও আরব অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণসহ দেশ-বিদেশে ব্যাংকিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন।
ফয়েজ আলমের জন্ম ১৯৬৮ সালে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার যোগীরনগুয়া গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ অনার্সসহ এমএ পাশ করার পর এমফিল ডিগ্রিও অর্জন করেন খ্যাতিমান এই ব্যাংকার।
পেশাগত জীবনের বাইরে ফয়েজ আলম একজন সফল লেখকও। বাংলাদেশে তিনি অগ্রণী উত্তর উপনিবেশী তাত্ত্বিক, প্রাবন্ধিক ও কবি হিসেবে বিশেষ খ্যাতিমান। এডওয়ার্ড সাঈদের বিখ্যাত গ্রন্থ অরিয়েন্টালিজম-এর অনুবাদক হিসেবেও তার আলাদা খ্যাতি আছে। তার পনেরটির বেশি গ্রন্থ এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে।
হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার ক্রমিক নম্বর নিয়ে বুথ-৪ এ প্রবেশ করে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যালট সংগ্রহ করলেন ভোটার। গোপন কক্ষে গিয়ে নিজের ভোট প্রদানও করলেন। ভোট দেয়া শেষে কক্ষের বাইরে গণমাধ্যমকর্মীরা ওই ভোটারের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি জানালেন, ‘ভোটার কীভাবে হলাম নিজেও বলতে পারি না।’
মঙ্গলবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির নির্বাচনে ভোট দিয়ে এক তরুণ ভোটার নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির ভোটার কীভাবে হওয়া যায়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও জানি না কীভাবে ভোটার হলাম। আমাকে ফোনে নিশ্চিত করা হয়েছে যে আমি চেম্বারের একজন ভোটার, তাই ভোট দিতে এসেছি।’
তার কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়, তার নিজস্ব কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে কি না? জবাবে তিনি জানান, তিনি একজন বাইক (মোটরসাইকেল) মেকানিক। তার নিজস্ব একটি প্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের এখনও নামকরণও করা হয়নি।
প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা না হলে ট্রেড লাইসেন্স কীভাবে হলো বা আদৌ ট্রেড লাইসেন্স হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি আর কোনো জবাব না দিয়ে সরে পড়েন।
ভোট দিয়ে বের হচ্ছিলেন লিমন নামের আরেক ভোটার। তিনি জানান, সদর উপজেলার নারগুণ থেকে তিনি এসেছেন ভোট দিতে। তার ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ট্রেড লাইসেন্স আছে কি না এবং কী প্রক্রিয়ায় ভোটার হলেন- জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি৷ এ সময় তাকে ক্যামরার সামনে কথা বলতে না করেন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্যানেলের এক প্রার্থী।
ভোট দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন দুলালি ইসলাম। তিনি জানান, তার মামা একটি হিমাগারের ম্যানেজার। তিনিই তাকে ভোটার হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ‘দুলালি ফার্মেসী’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে তার।
চেম্বারের ভোটার হতে প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র জমা দিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন মনে নেই।’
এদিকে ভোটের একদিন আগে সোমবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে ৭ কারণ উল্লেখ করে ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দুটি প্যানেলের মধ্যে আলমগীর-মুরাদ ও সুদাম প্যানেল ভোট বর্জন করে। এ সময় প্রার্থীরা নির্বাচনের অনিয়ম, ভোটার তালিকা নিয়ে অসঙ্গতিসহ নানা কারণ উল্লেখ করেন।
এর আগে, গত ১৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে ভোটার তালিকা সংশোধন ও নির্বাচনের তারিখ পেছানোর জন্য নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন জানিয়েছিল প্যানেলটি। সে সময় ভোটের মাঠে থাকার কথা জানালেও অবশেষে ভোটের আগের রাতে তারা ভোট বর্জন করেন। ফলে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াই অংশ নিয়েছে দুলাল-বাবলু ও আরমান প্যানেল।
চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির নির্বাচন নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সচেতন মহলে মিশ্র প্রতিত্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
জাতীয় তেল গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ঠাকুরগাঁও সদস্য সচিব মো. মাহবুব আলম রুবেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ ঠাকুরগাঁও চেম্বারের ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, আমরা দেখছি এখানে সাধারণ শ্রমিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ভোটার হয়েছেন। অনেকেই আছেন যারা কোনো ব্যবসার সঙ্গেই জড়িত না।
‘তাহলে অন্য যে প্যানেলটি অভিযোগ করেছে- নিরপেক্ষ ভোটার তালিকা হয়নি। সেটার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি। এই নির্বাচনে ব্যবসায়ীরা তাদের সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচনে ব্যর্থ হয়েছেন।’
ভোটারদের প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি নির্বাচনি বোর্ডের আহ্বায়ক ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘ভোটার তালিকা নিয়ে বেশ কিছু প্রার্থী অভিযোগ করছেন। খসড়া তালিকা প্রকাশের পর অভিযোগ আপিল কর্তৃপক্ষের নিকট জানানোর সুযোগ ছিল। নির্ধারিত সময়র মধ্যে করা আপিলগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আপিল নিষ্পত্তির পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পর অভিযোগ করায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু দীর্ঘ বছর যাবৎ ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির কমিটি ছিল না, তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে চেম্বারের প্রশাসনের দায়িত্ব দিয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আছে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।’
আরও পড়ুন:ভোজ্যতেলের ওপর শুল্ক অব্যাহতির সময়সীমা শেষ হয়েছে সোমবার (১৫ এপ্রিল)। এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিভিওআরভিএমএফএ) সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।
বিভিওআরভিএমএফএ’র নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম মোল্লার পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কাঁচামাল আমদানি ও ভোজ্যপণ্য উৎপাদনে কর অব্যাহতির মেয়াদ ১৫ এপ্রিল শেষ হচ্ছে বিধায় পরদিন ১৬ এপ্রিল থেকে ভ্যাট অব্যাহতির আগের নির্ধারিত মূল্যে পণ্য সরবরাহ করা হবে।
নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ১৭৩ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতল ৮৪৫ টাকা ও এক লিটার পাম তেল ১৩২ টাকায় বিক্রি করা হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত ফেব্রুয়ারিতে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত (অপরিশোধিত) সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে।
এদিকে মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করা যেতে পারে, তবে সময় লাগবে।
‘ভোজ্যতেলের নতুন চালান আমদানির ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য