আমদানি ব্যয় কমার পরও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের ওপর চাপ কমছে না। ডলার বিক্রির চাপে কমেই চলেছে অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এই সূচক। দু-এক দিনের মধ্যেই রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-আগস্ট মেয়াদের আমদানির বিল এসেছে ১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। রবি অথবা সোমবার এই দেনা পরিশোধ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন রিজার্ভ কমে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে ৩৭ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাবে বলে হিসাব বলছে।
দেশের অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয় এখন রিজার্ভ নিয়ে। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ তলানিতে নামার পর দেশটি মহাসংকটে পড়ার পর থেকেই বাংলাদেশেও রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে মানুষের মধ্যে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতির গবেষক আতিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেছেন, ‘বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলারে নামলেও কোনো সমস্যা নেই। কেননা, এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আমদানি কমছে; রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ছে। এ অবস্থায় আগামী দিনগুলোতে রিজার্ভ বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে।’
আরেক অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের একশ্রেণির মানুষ রিজার্ভ নিয়ে অযথাই হা-হুতাশ করে। আমি মনে করি, আমাদের রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে যতদিন থাকবে; ততদিন উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।’
ডলারের বাজারে ‘স্থিতিশীলতা’ আনতে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবারও কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দুই মাস এক দিনে (১ জুলাই থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) রিজার্ভ থেকে ২৫৬ কোটি ৯০ লাখ (২.৫৭ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রির কারণেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ার পরও রিজার্ভ কমছে বলে জানিয়েছেন সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান।
মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭৬৭ কোটি (৭.৬৭ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই রিজার্ভ থেকে এক অর্থবছরে এত ডলার বিক্রি করা হয়নি।
অথচ তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় দর ধরে রাখতে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত ১২ জুলাই আকু মে-জুন মেয়াদের ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। এরপর ২০ জুলাই পর্যন্ত রিজার্ভ ৩৯ দশমিক ৮০ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করে। জুলাইয়ের শেষে তা কমে ৩৯ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।
রেমিট্যান্স বাড়ায় জুলাইয়ের শেষের দিকে রিজার্ভ বেড়ে ৩৯ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। ডলার বিক্রির কারণে তা ফের নিম্নমুখী হয়।
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের যে মাইলফলক অতিক্রম করেছিল, তাতে বাজার থেকে ডলার কেনার অবদান ছিল বলে জানান মঞ্জুর হোসেন।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে ওই অর্থবছরে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কিন্তু আগস্ট থেকে দেখা যায় উল্টো চিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে আমদানি ব্যয়। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, চলে পুরো অর্থবছর।
সেই ধারাবাহিকতায় চাহিদা মেটাতে নতুন অর্থবছরেও (২০২২-২৩) ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলার। এর পর থেকেই বাড়তে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার দর।
এই হিসাবে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি।
তবে চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্সপ্রবাহ ফের বাড়তে শুরু করেছে। একই সঙ্গে আমদানি ব্যয়ও কমা শুরু করেছে। এর পরও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে আশার কথা শুনিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বলেছেন, সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে ডলারের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
গত ২৭ আগস্ট বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ‘নবম বার্ষিক ব্যাংকিং কনফারেন্স’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, ‘মহামারি করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে বাংলাদেশ। গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর পরই আমি সব ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সমস্যা ও সম্ভাবনা জানার চেষ্টা করেছি। এখন যে সমস্যা (ডলার সংকট) দেশে বিরাজ করছে, এটি বেশি দিন থাকবে না। সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’
দেশের অর্থনীতি নিয়ে নানা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে আশা জাগাচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। জুলাই মাসের পর আগস্টেও ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সদ্যসমাপ্ত আগস্ট মাসে প্রায় ২০৪ কোটি (২.০৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন তারা।
এই অঙ্ক গত বছরের আগস্টের চেয়ে ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গত বছরের আগস্টে ১৮১ কোটি ডলার এসেছিল।
আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রেমিট্যান্স বেড়েছে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। গত বছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে এসেছিল ৩৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। এই বছরের একই সময়ে এসেছে ৪১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার (প্রায় ২.১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে বেশি ছিল ১২ শতাংশ।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
মার্চ-এপ্রিল মেয়াদে আকুর ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধ করে বাংলাদেশ। তার আগে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদে পরিশোধ করা হয়েছিল ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।
আমদানি কমছেই
অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় ছিল অস্বাভাবিক আমদানি বৃদ্ধি। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে সেই আমদানি বেশ নিম্নমুখী হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক শনিবার আমদানির সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, সদ্য শেষ হওয়া আগস্ট মাসে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানির জন্য ৫ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খুলেছেন দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক আগের মাস জুলাইয়ের চেয়ে ৫ শতাংশ কম। জুলাই মাসে ৬ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে এলসি খোলা হয়েছিল ৮ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। মে মাসে এলসি খোলার অঙ্ক ছিল ৭ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। এপ্রিল মাসে খোলা হয়েছিল ৮ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলারের এলসি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি এলসি খোলা হয়েছিল মার্চ মাসে; ৯ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার। এরপরই আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকও একটার পর একটা পদক্ষেপ নেয়।
ফেব্রুয়ারি ও জানুয়ারি মাসে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ২২ বিলিয়ন ও ৮ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।
একই সঙ্গে এলসি নিষ্পত্তির (সেটেলমেন্ট) পরিমাণও কমছে। আগস্ট মাসে ৭ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। আগের মাস জুলাইয়ে নিষ্পত্তি হয়েছিল ৭ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলারের এলসি। জুনে নিষ্পত্তি হয় ৭ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারের এলসি।
মে মাসে ৭ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়। এপ্রিলে হয় ৬ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারের।
আগের তিন মাস মার্চ, ফেব্রুয়ারি ও জানুয়ারিতে হয় যথাক্রমে ৭ দশমিক ৬৭, ৬ দশমিক ৫৬ এবং ৬ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারের এলসি।
জুলাই মাসের রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তাতে দেখা যায়, এই মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ; যা গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন:পাবনার সাঁথিয়ায় অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখার ভল্ট থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ওই ব্যাংকের প্রধান তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তিনজনকে আটক করা হয়। দিনভর নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাদের সাঁথিয়া থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। তিনজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার আবু জাফর, ব্যবস্থাপক হারুন বিন সালাম ও ক্যাশিয়ার সুব্রত চক্রবর্তী, যাদের বাড়ি পাবনার বিভিন্ন উপজেলায়।
পুলিশের ভাষ্য, টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেছেন ক্যাশিয়ার সুব্রত চক্রবর্তী।
সাঁথিয়া থানা ও অগ্রণী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে অগ্রণী ব্যাংক রাজশাহী বিভাগীয় ও পাবনা আঞ্চলিক শাখা থেকে পাঁচ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে আকস্মিক অডিটে আসেন অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখায়। অডিট শেষে সেখানে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকার আর্থিক অনিয়ম দেখতে পান তারা। পরে অডিট কর্মকর্তা সাঁথিয়া থানাকে অবহিত করলে পুলিশ অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় অগ্রণী ব্যাংক পাবনা আঞ্চলিক শাখার উপমহাব্যবস্থাপক রেজাউল শরীফ বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় অভিযোগ করেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে বিভাগীয় অফিস থেকে পাঁচ সদস্যের অডিট টিম ব্যাংকে অডিট শুরু করে। ওই টিমের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে তিনজনের কাছ থেকে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। পরে রাতে তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, আটককৃতদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার তাদের আদালতে পাঠানো হবে।
তিনি আরও বলেন, অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুন:ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০২৩ সালে ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড সুপারিশ করেছে।
ব্যাংকের ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভার অনুমোদন সাপেক্ষে এ ডিভিডেন্ড প্রদান করা হবে।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসানুল আলমের সভাপতিত্বে বুধবার অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদসহ অন্যান্য পরিচালক, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা এবং অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও কোম্পানি সেক্রেটারি জে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, এফসিএস উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ২৫ জুন ব্যাংকের ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। লভ্যাংশ প্রাপ্তি এবং সাধারণ সভায় যোগদানের ক্ষেত্রে রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১৬ মে।
সভায় অন্যান্য আলোচ্যসূচির সঙ্গে ৩১ মার্চ শেষ হওয়া ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুমোদন করা হয়।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের এপ্রিল মাসের প্রথম ১৯ দিনে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১২৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৯৬ কোটি টাকা।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তথ্যমতে, এপ্রিল মাসের প্রথম ১৯ দিনে বৈধপথে ১২৮ কোটি ১৫ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১১ কোটি ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১০৮ কোটি ৮১ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার এসেছে।
এর আগে মার্চ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে এসেছে ২১০ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে আসে ২১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি জানিয়েছিল যে আর কোনো ব্যাংককে একীভূতকরণের সুযোগ দেয়া হবে না। তবে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের জন্য ব্যাংক এশিয়াকে অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন মাত্রার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এশিয়া বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করছে। সূত্র: ইউএনবি
করাচিভিত্তিক ব্যাংক আলফালাহ বুধবার (১৭ এপ্রিল) পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জকে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ব্যাংক আলফালাহ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের বাংলাদেশ পরিচালনা, সম্পদ ও দায় অধিগ্রহণের জন্য প্রাপ্ত বাধ্যবাধকতামুক্ত ইঙ্গিতমূলক প্রস্তাবের ক্ষেত্রে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
এতে বলা হয়, ব্যাংক আলফালাহ বাংলাদেশের ব্যাংক এশিয়ার জন্য যথাযথ কার্যক্রম শুরুর জন্য স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের অনুমোদন চাইছে।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি একীভূতকরণ নিয়ে খুব বেশি আলোচনার অংশ নয়।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে দুই ব্যাংকের নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ পাবে বলে।
মেহেরপুরের মুজিবনগরে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকের কর্মচারীকে অজ্ঞান করে ব্যাংক থেকে টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার শিবপুরে সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় কর্মচারী সাগর শেখকে অজ্ঞান করে টাকা লুটে নিয়ে পালিয়ে যায় অজ্ঞাত দুইজন।
ঘটনার বেশ কিছু সময় পরে স্থানীয়রা অসুস্থ অবস্থায় সাগর শেখকে মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শিবপুর গলাকাটা বাজারে বিপ্লব হোসেন এজেন্ট হিসেবে ব্যাংক পরিচালনা করে আসছেন। সোমবার দুপুরে ব্যাংক কর্মচারী সাগর শেখ কাজ করছিলেন। এ সময় অজ্ঞাতরা ব্যাংকে প্রবেশ করে তাকে অজ্ঞান করে। আশপাশের লোকজন টের পাওয়ার আগেই তারা ব্যাংক থেকে টাকা লুটে নিয়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা আরও জানায়, ঘটনার আগে তারা ব্যাংকে অজ্ঞাত দুজনকে প্রবেশ করতে দেখেছিলেন, তবে তারাই যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। তাদের প্রবেশের কিছুক্ষণ পরে সাগরকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখেন স্থানীয়রা।
ব্যাংক এজেন্ট বিপ্লব হোসেন জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরা ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। অজ্ঞাতরা এ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করে ডাকাতি করেছে বলে ধারণা তার।
বিপ্লব হোসেন আরও জানান, প্রতিদিন ব্যাংকে অনেক টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। এর সঙ্গে প্রতিদিনের লেনদেনের আরও টাকা থাকে। তাই কত টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে তা সঠিক হিসাব না করে বলা যাচ্ছে না।
মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ব্যাংক কর্মচারীর শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। চোখ খুলে তাকাচ্ছে, কিন্তু তার চেতনা ফেরেনি। তাকে কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়েছে না চোখে চেতনানাশক স্প্রে করা হয়েছে তা নিশ্চিত হতে সময় লাগবে।’
মুজিবনগর থানার ওসি উজ্জ্বল দত্ত জানান, খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হাসপাতালে ভর্তি কর্মচারী সুস্থ হলে তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার আশা করা হচ্ছে, তবে পুলিশের তদন্ত শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন:প্রবাসীদের আয়ের একটি বড় অংশই আসে ঢাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখাগুলোতে। অর্থাৎ প্রবাসীদের পরিবারের বেশিরভাগই ঢাকায় থাকেন বা তাদের অধিকাংশ অ্যাকাউন্ট ঢাকার ব্যাংক শাখায়।
ইউএনবি জানায়, রেমিট্যান্সের জেলাভিত্তিক চিত্র নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। সিলেট তৃতীয় এবং কুমিল্লা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
এরপরে রয়েছে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর ও নরসিংদীর অবস্থান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয় প্রতিবেদনে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে প্রবাসীরা ১ হাজার ৫০৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২১৬ কোটি ডলার। তার আগের মাস জানুয়ারিতে দেশে প্রবাসী আয় ছিল ২১০ কোটি ডলার।
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়কালে ঢাকা জেলায় এসেছে ৫২৩ কোটি ডলার এবং চট্টগ্রাম জেলায় এসেছে ১৪২ কোটি ডলার।
এই সময়ে সিলেট জেলা ৮৭০ মিলিয়ন ডলার, কুমিল্লা ৮১০ মিলিয়ন ডলার এবং নোয়াখালী ৪৬০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ কোটি, ফেনীতে ৩৭ কোটি, মৌলভীবাজারে ৩৬ কোটি, চাঁদপুরে ৩৫ কোটি ডলার এবং নরসিংদীতে ২৫০ মিলিয়ন ডলার এসেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলো থেকে বেশি প্রবাসী আয় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এমনটা হচ্ছে না। কারণ অনেক প্রবাসী বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। বরং তারা (প্রবাসীরা) দেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে অর্থ পাচার বাড়ছে।
আরও পড়ুন:ঈদের আগের সপ্তাহে (১ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত) প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৪৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। রেমিট্যান্সে এই বাড়তি গতির মূল কারণ প্রবাসীরা ঈদ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন।
ব্যাংকাররা বলছেন, গত মার্চ মাসে প্রতি সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। সে হিসাবে, এপ্রিলের প্রথম ৫ দিনে রেমিট্যান্স ভালোই এসেছে। মূলত, প্রবাসীরা ঈদ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে অর্থ পাঠানোর কারণেই বেড়েছে রেমিট্যান্স।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, টানা দু’মাস রেমিট্যান্স আয়ে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকার পর ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় দর বাড়ার ঘটনায় মার্চে রেমিট্যান্স দুশ’ কোটি ডলারের নিচে নেমে আসে।
মার্চে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৯৯ কোটি ডলার দেশে পাঠান। ফেব্রুয়ারিতে তা ছিল ২১৬ কোটি ডলার এবং জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, আগের বছরের একই মাসের ২০২ কোটি ডলারের তুলনায় গত মার্চে ১ দশমিক ২৪ শতাংশ রেমিট্যান্স কম এসেছে।
ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্চ মাসের বেশিরভাগ দিনে ডলারের বিনিময় দর কমে দাঁড়ায় ১১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১১৩ টাকায়। সে তুলনায় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ডলারের দর ছিল ১২০ থেকে ১২২ টাকা পর্যন্ত।
তারা বলছেন, ডলারের দাম কমার এই ঘটনা প্রবাসীদের বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে। আর তার প্রভাব পড়ে রেমিট্যান্সের সার্বিক চিত্রে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য