চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে আমদানি করে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে চায় সরকার। এর ফলে দাম নিয়ে সম্প্রতি যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা সহসাই কেটে যাবে বলে আশা করছে সরকার।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চালের জোগান বাড়াতে বড় ধরনের ক্রয় পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রায় ১৪ লাখ টন খাদ্যশস্য (চাল ও গম) কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এসব পণ্য দেশে আনা হবে। এর মধ্যে বেশিরভাগ আমদানি করা হবে সরকারিভাবে অর্থাৎ জি-টু-জি ভিত্তিতে। কিছু আসবে উম্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে।
সূত্র জানায়, খরার কারণে এ বছর বোরো ফসলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ কারণে আমদানি করে ঘাটতি পূরণে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ১৩ লাখ ৩০ হাজার টন খাদ্যশস্য কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ৫ লাখ টন গমসহ ৮ লাখ ৩০ হাজার টন চালের দর প্রস্তাব ক্রয়কমিটির বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
অবশিষ্ট খাদ্যশস্য কেনার প্রক্রিয়া চলছে। খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র বলেছে, জি-টুজি এর ভিত্তিতে মিয়ানমার থেকে ২ লাখ টন আতপ চাল কেনার জন্য গত সপ্তাহে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। প্রতি টন চালের দাম পড়তে পারে ৪৫৫ ডলার।
প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আরও ২ লাখ টন সেদ্ধ চাল আনা হবে। ভারতের চালের দাম পড়বে প্রতি টন ৪৪৩ দশমিক ৫০ ডলার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাদ্য অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে মিয়ানমার ও ভারতের চাল দেশে ঢুকবে।
জানা যায়, উম্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ১ লাখ টন চাল ও গম সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে পঞ্চাশ হাজার টন চাল এবং বাকি অর্ধেক গম। সূত্র বলেছে, চালের জন্য দরপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর এবং গমের জন্য ১৮ সেপ্টেম্বর।
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি সহজ করা হয়েছে। চালের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২০ শতাংশ কমানো হয়েছে।
শুল্ক কমানোর পর বেসরকারিভাবে চালের নতুন চালান দেশে আসলে বাজার স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সরকারি গুদামে চালের মজুত ২০ লাখ টন। খাদ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, সরকারি গুদামে বর্তমানে যে সক্ষমতা তাতে সাড়ে ২০ লাখ টনের বেশি চাল রাখা সম্ভব নয়।
নিয়ম অনুযায়ী, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কমপক্ষে সাড়ে ১০ লাখ টন চালের মজুত থাক বাঞ্ছনীয়। সে বিবেচনায় দেশে খাদ্যের মুজত যথেষ্ট নিরাপদ বলে নিউজবাংলাকে জানান খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাখাওয়াত হোসেন।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে ৫০ লাখ দুস্থ পরিবারকে ১৫ টাকা করে ৩০ কেজি চাল এবং খোলা বাজারে ৩০ টাকা করে এক কোটি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ শুরু হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রতি পরিবারে চার জন করে ধরলে মোট ছয় কোটি লোক সাশ্রয়ী দামে চাল পাচ্ছে। এতে করে বাজারে চাল সহজলভ্য হবে এবং দাম কমে আসবে।
আরও পড়ুন:গভীর নিম্নচাপের কারণে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় সুন্দরবনসহ বাগেরহাটের বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে আশ্রয় নিয়েছে এক হাজারের বেশি ফিশিং ট্রলার। ফলে আপাতত সাগরে মাছ শিকার বন্ধ। এ অবস্থায় ভরা মৌসুমে ইলিশ আহরণে বিপর্যয় নেমে এসেছে।
ত্তাল সাগরে বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ায় সাগরে টিকতে না পারায় এসব ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালসহ বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য বন্দর কেবি ঘাট, শরণখোলা, রায়েন্দা, মোংলা ও রামপাল ঘাটে এসে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।
শনিবার দিনভর বাগেরহাটে ৫৭ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে মোংলা আবহাওয়া অফিস। বাগেরহাটে থেমে থেমে বৃষ্টির মধ্যে বয়ে যাচ্ছে ঝড়ো হাওয়া।
সাগর উত্তাল থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বৈরী আবহাওয়া কারণে মোংলা বন্দরের জেটি ও পশুর চ্যানেলের আউটার বারে অবস্থানরত সব বাণিজ্যিক জাহাজে পণ্য উঠা-নামার কাজ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে মৎস্য আহরণে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা এখন মাছ ধরা নিয়ে সাগরে ব্যস্ত সময় কাটানোর কথা। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর বড় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ইলিশ আহরণে দেখা দিয়েছে চরম বিপর্যয়।
সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় ২৩ জুলাই। ওই সময় প্রথম সাগরে রওনা হয়েই টানা এক সপ্তাহের দুর্যোগের কবলে পড়তে হয়েছে জেলেদের।
গত রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) থেকে চলতি সপ্তাহে দু’দফা নিম্নচাপ ও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে বঙ্গোপসাগর। উত্তাল ঢেউয়ে সাগরে কোনো ট্রলার নামতে পারছে না। ফের বন্ধ হয়ে গেছে ইলিশ আহরণ।
বর্তমানে বাগেরহাটের হাজারের বেশি ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনসহ উপকূলীয় বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। গত দেড় মাসে তিন দফা দুর্যোগে পড়ে কোটি কোটি টাকা লোকসানে পড়েছেন বাগেরহাটের শরণখোলাসহ উপকূলের মহাজন ও আড়ৎদাররা।
শনিবার দুপুরে শরণখোলার মৎস্য আড়ৎদাররা জানিয়েছেন, নিম্নচাপের কারণে গত রোববার থেকে টানা তিন দিন সাগরে জাল ফেলতে পারেনি জেলেরা। মাঝখানে দু’দিন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) আবহাওয়া কিছুটা স্বাভাবিক হলে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা ট্রলারগুলো সাগরে ছুটে যায়। কিন্তু এরই মধ্যে ফের হানা দিয়েছে গভীর নিম্নচাপ। ফলে শুক্রবার ভোর থেকে আবারও সব ফিশিং ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে আসে।
গভীর সাগর থেকে ফিরে আসা ট্রলারগুলো বর্তমানে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের মেহের আলীর চর এবং বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য বন্দর কেবি ঘাট, শরণখোলা, রায়েন্দা, মোংলা ও রামপাল ঘাটে এসে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।
শরণখোলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘একের পর এক দুর্যোগের কারণে সাগরে জাল ফেলা যাচ্ছে না। প্রতি ট্রিপে একেকটি ট্রলারে দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু মাছ না পাওয়ায় অধিকাংশ মালিক-মহাজনের চালান খোয়াতে হচ্ছে। এমনিতেই এ বছর প্রত্যেক আড়ৎদার ও মহাজন লাখ লাখ টাকা লোকসানে রয়েছে।’
আবুল হোসেন আরও বলেন, ‘ইলিশের যখন ভরা মৌসুম তখনই ৬৫ দিন থাকে নিষেধাজ্ঞা। এর পর আবার অক্টোবর মাসে শুরু হবে ইলিশের প্রজনন মাস। তখন ২২ দিন দেশের সব নদী ও সমুদ্রে সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
ফলে ছয় মাসের ইলিশ মৌসুমের তিন মাস চলে যায় নিষেধাজ্ঞায়। বাকি সময় দফায় দফায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাগর-নদীতে ঠিকমতো জাল ফেলা যায় না। ফলে একদিকে লোকসানের ঘানি টানতে টানতে মহাজনরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত লাখ লাখ জেলে চরম সংকটে পতিত হচ্ছে।’
আড়ৎদার, ট্রলার মালিক সর্বোপরি জেলেদের দুর্দশা বিবেচনা করে তাদের স্বার্থে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আর না দেয়ার দাবি জানান এই ফিশিং ট্রলার মালিক নেতা।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু তিনদিনের ভারত সফর শেষে আজ শনিবার বিকেলে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।
কূটনৈতিক সূত্র এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের পরিচালক সামিয়া ইসরাত রনি ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডোনাল্ড লু’কে স্বাগত জানান।
এর আগে শনিবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থ বিষয়ক সহকারী সচিব ব্রেন্ট নেইম্যান ঢাকায় আসেন।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এটিই ঢাকায় কোনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের প্রথম সফর।
যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলটির এই সফরে দুই দেশের মধ্যে বহুমাত্রিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে আলোচনার ফোকাস হবে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আগামীকাল রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
পরে প্রতিনিধি দলটি পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। ওইদিন বিকেলে প্রতিনিধি দল প্রধান নেইম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
নেইম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলে লু ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (ইউএসএআইডি) উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কর ও যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ রয়েছেন।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থ বিষয়ক সহকারী সচিব ব্রেন্ট নেইম্যান আজ শনিবার সকালে ঢাকায় পৌঁছেছেন। তিনি ঢাকা-ওয়াশিংটন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনায় তার দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা) খন্দকার মাসুদুল আলম ব্রেন্ট নেইম্যানকে স্বাগত জানান।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানানোর জন্য ঢাকা একটি ব্যাপক ও বহুমুখী আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আজই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। তিনি বর্তমানে নয়াদিল্লি সফর করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলটির প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস, পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও অন্যান্য আনুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন প্রতিনিধি দলের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করবেন। এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
পররাষ্ট্র সচিব সফর প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আলোচনায় শুধু একটি বিষয় নয়, বিস্তৃত বিষয় থাকবে।’
যুক্তরাষ্ট্রর পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন অগ্রাধিকারে অবদান রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হবে।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, এই সফরকালে সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল জুড়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আর্থিক স্থিতিশীলতা জোরদারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবেন। ঢাকায় লু অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বৈঠকের জন্য একটি আন্তঃসংস্থা প্রতিনিধি দলে যোগ দেবেন।
প্রতিনিধি দলে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ, ইউএসএআইডি ও দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিসের প্রতিনিধিরা থাকবেন।
আরও পড়ুন:প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় বন্ধ হওয়া দুই শতাধিক কারখানার বেশির ভাগে শনিবার উৎপাদন শুরু হয়েছে।
শিল্পাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতিও অনেকটাই স্বাভাবিক বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।
শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম শনিবার সকালে এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, আজ শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো সড়ক অবরোধসহ কারখানায় হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি অনেক স্বাভাবিক রয়েছে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক বন্ধ থাকা ৮৬টি কারখানার মধ্যে ৫০টি খুলেছে। আর সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়া বাকি ১৩৩টি কারখানার মধ্যে বেশির ভাগ কারখানাই আজ খোলা রয়েছে। শুধু ১৩টি কারখানায় এখনও সাধারণ ছুটি রয়েছে।
তিনি আরও জানান, শিল্পাঞ্চলে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশের বাড়তি সদস্য। এ ছাড়া শিল্পাঞ্চলে যৌথ বাহিনীর টহল অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুন:আইএলও কনভেনশনে স্বাক্ষর করার সব শর্ত পূরণ করার অংশ হিসেবে শ্রমিকদের পাওনা যথাযথভাবে মেটানোর জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে শ্রমিক-মালিক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘ন্যাশনাল বিজনেস ডায়ালগ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা জেনেভা কনভেনশনে যোগ দিতে পারিনি। এটা বহুদিন পড়ে আছে। শ্রমিক, মালিক, সরকার- সবাই যখন একটি টিম হলাম তখন ওটাও আমরা করে ফেলব।
‘ওটা না করলে সামনে এগুনো কষ্টকর হবে। যেখানেই যাবেন এটা বাধা দেবে। বলবে- তোমরা শ্রমিকদের যা শর্ত, প্রাপ্য এগুলোতে সই করছো না। কাজেই যদি আমাদের এগুতে হয় পরিষ্কারভাবে হতে হবে।’
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সাহস দেন, এগিয়ে আসেন; আমরা সবাই মিলে আইএলও কনভেনশনে স্বাক্ষর করে ফেলি। আমার একটা বড় আশা, যে মেয়াদকাল আমরা এখানে থাকব, শ্রমিক-মালিক সম্পর্কটা সুন্দরভাবে গড়ে তুলব।’
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, এফআইসিসিআই, বিএবি, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ চেম্বার অফ ইন্ডাস্ট্রিজের মতো সংগঠনের নেতা ও সদস্যরা অংশ নেন।
আরও পড়ুন:ছাত্র-জনতার স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে যা প্রয়োজন তা-ই করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ব্যবসায়ীদেরও সেই সুযোগ গ্রহণ করে সরকারের সঙ্গে একজোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘ন্যাশনাল বিজনেস ডায়ালগ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় ড. ইউনূস এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মূল লক্ষ্য, যে কয়টা দিন আছি আমরা একসঙ্গে কাজ করব। এই নতুন বাংলাদেশের জন্য যা প্রয়োজন তাই করব। যেন বলে যেতে পারি, এই আমাদের একটা সুযোগ দিয়েছিল, আমরা সেই সুযোগের পূর্ণ ব্যবহার করেছি। আমরা অতীতের পচা বাংলাদেশ থেকে নতুন তরতাজা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আর পচন নয়, সুস্থ-সবল জাতি হিসেবে দাঁড়াতে চাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা যদি মন ঠিক করেন, খুব দ্রুত নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। চলুন একসঙ্গে কাজ করি আমরা।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ছাত্র-জনতার লক্ষ্য ছিল- একটা নতুন বাংলাদেশ হবে। তাদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা একটা নতুন সুযোগ পেলাম। এই সুযোগ না এলে আমাদের যে পচন ধরেছিল সেই পচন থেকে মুক্তির কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না, হঠাৎ করে সব বাধা আমাদের থেকে চলে গেল।’
নতুন বাংলাদেশ গড়তে গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ দেয়া শত শত ছাত্র-জনতার কথা স্মরণ করিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে যারা সামনে বসে আছেন তারা বিশ্বমাপের উদ্যোক্তা। এই বিশ্বমাপের উদ্যোক্তা ওই যুবককে যে প্রাণ দিয়েছে তার কাছে কি শপথ নেবে?
‘যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য শহীদরা প্রাণ দিয়েছে সেই নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়বই। সুযোগ জাতির জীবনে বার বার আসে না।’
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে অন্তর্বতী সরকারের প্রধান বলেন, ‘নতুন করে যে স্বপ্ন ছাত্র-জনতা জাগিয়ে দিয়েছে সেটা যদি আপনার মনে রেখাপাত করে তাহলে সে স্বপ্ন পূরণে আপনিও শরিক হবেন। এই সুযোগ আর কখনো আসে কি না জানি না। এই সুযোগকে আমরা যেন হারিয়ে না ফেলি। এই সুযোগ হারিয়ে ফেললে জাতির কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।’
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আজকে আমরা একযোগে এই স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই- সরকার এবং সরকারের বাইরে যারা সবাই একজোট, এক টিম। এটা একটা কমপ্যাক্ট টিম। আপনারা সেই টিমের সদস্য। যেটুকু সময় আমরা এই দায়িত্বে আছি, আমরা টিম হিসেবে কাজ করতে চাই।’
তৈরি পোশাক শিল্পকে বিশ্বের এক নম্বরে নিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে যে দুই নম্বরে আছি, কী করে আমরা এক নম্বর হবো, আমাদের মেয়াদকালে যদি আপনারা এক নম্বরে নিয়ে যেতে পারেন আমরাও স্মরণ করব- যাক বাবা, একটা কিছু তো করেছি। সব কিছু আমরা জানি না, আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু একযোগে কাজ করলে অভিজ্ঞতা এসে যাবে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা ধরনা দেই ব্যবসায়ীদের কাছে, যারা ইউরোপে আছে, আমেরিকাতে আছে তাদের কাছে। আমাদের ফরিয়াদ কী করতে হবে, তারাও কৌতূহল নিয়ে দেখছে। তাদেরকে আহ্বান জানাই- এখানে এসে শরিক হোন।’
তিনি বলেন, ‘নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে গেলে অনেক সুবিধা হারিয়ে ফেলব। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায় শক্ত প্রতিযোগী হওয়ার জন্য আমরা সামর্থ্য অর্জন করতে চাই। আমরা পেছনে থাকতে চাই না। সে জন্য তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমি একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দিয়েছি।’
আরও পড়ুন:চলমান শ্রমিক অসন্তোষের জেরে ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বৃহস্পতিবার ২১৯টি পোশাক কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এগুলোর মধ্যে ৮৬টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আর ১৩৩টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।
শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম জানান, আজ শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো সড়ক অবরোধসহ কারখানায় হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি, তবে আগে থেকেই কিছু কারখানায় অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু দাবি নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। সেসব কারখানার শ্রমিকরা আজ কাজে ফেরেননি।
তিনি জানান, আজ সকালেও বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশের পর কর্মবিরতিসহ কারখানা থেকে বের হয়ে গেলে সব মিলিয়ে শিল্পাঞ্চলের ২১৯টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী বন্ধ ঘোষণা করা হয় ৮৬টি কারখানা। বাকি ১৩৩টি কারখানায় আজকের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
এ কর্মকর্তা আরও জানান, শিল্পাঞ্চলে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশের বাড়তি সদস্য। এ ছাড়া শিল্পাঞ্চলে যৌথবাহিনীর টহল অব্যাহত আছে।
মন্তব্য