কারওয়ান বাজারের রাস্তা ধরে সবজির দোকানগুলোর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বিক্রেতার হাঁকডাক ভেসে এলো, তিনি কাঁচা মরিচের বস্তা অর্ধেকটা খুলে রেখে ডাকছিলেন, ‘মরিচ ৪০, মরিচ ৪০’।
কিছুক্ষণ হেঁটে আরেক দূর এগিয়ে গিয়েও দেখা যায়, সেই বিক্রেতা একইভাবে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছিলেন।
অথচ সপ্তাহ তিনেক আগেও এই কারওয়ান বাজারে মরিচ বিক্রি হয়েছে ২৬০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি দরে, মহল্লার দোকানে তা ৩০০ ছাড়িয়ে যায়।
এরপর ভারত থেকে আমদানিতে মরিচের সরবরাহ বাড়ে আর ধীরে ধীরে কমে আসে দাম।
রান্নার এই উপকরণের পাশাপাশি দাম কমতে শুরু করেছে পাইকারি আড়তের পাশে কারওয়ান বাজারের খুচরা বাজারেও।
সবজি বিক্রেতা সায়িম আলী বলেন, ‘গত সপ্তাহেও যে দামে বেচছি, এই সপ্তাহে দাম কমছে ১০ থাইক্যা ১৫ টাকা। মালের আমদানি ভালো, দাম কম।’
বাজারে গিয়ে জানা গেল, কেবল বাড়তেই থাকা নিত্যপণ্যের বাজারে এখন দর একটু একটু করে কমতে শুরু করেছে। সরকার ৯টি পণ্যের দর বেঁধে দেবে জানানোর পর থেকে কমছে সবজি, মাছের দরও। তবে কিছুটা কমলেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দাম যে অনেকটাই বেশি, সেটা বলাই বাহুল্য।
শীতের জনপ্রিয় সবজি শিম উঠেছে দুই সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলে। শুরুতে দাম ছিল আড়াই শ টাকা। সেটির দাম দুই বিক্রেতা চাইলেন ১২০ টাকা। ১০০ করে দেয়া যাবে কি না, জানতে চাইলে এক বিক্রেতা ১১০ টাকা দাম রাখার প্রস্তাব করেন।
শীতের আরেক সবজি টম্যাটোর দাম কমেছিল ঈদের পর পরই। তবে পরে আবার বেড়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে কমে আবার ৮০ থেকে ১০০ টাকায় নামতে দেখা গেছে।
বছরজুড়ে পাওয়া যায় যে সবজি, সেই বেগুনের মধ্যে লম্বাটা ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেল।
এই সময়ের সবচেয়ে সস্তা সবজি পেঁপে কেউ ২০ টাকা, কেউ ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছিলেন। কাঁকরোলের দর দিনে ৪০, রাতে গেলে ৩০। একই অবস্থা পটোল, চিচিঙ্গার ক্ষেত্রে। দিনে ৪০, রাতে ৩০ টাকা।
আলুও পাঁচ কেজির এক পাল্লা নিলে দর ধরে ২৬ থেকে ২৮ আর কেজি নিলে ৩০। আর গত কয়েক বছরের মধ্যে লেবুর দর এখন সবচেয়ে কম। ডজন ২০ টাকা দরেও ডেকে ডেকে বিক্রি করতে দেখা যায়।
সবজির পাশাপাশি দাম কমেছে আদারও। গত সপ্তাহে কেজি ছিল ১২০ টাকা, সেটি নেমে এসেছে ১০০ টাকায়। কেজিতে এক টাকা কমে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকায়।
চাল-আটার দরেও ভাটার টান
চালের আমদানি শুল্ক আরও কমিয়ে দেয়ার পর দামের ঊর্ধ্বগতি থেমে শুরু হয়েছে নিম্নগতি। সরু চালের মধ্যে নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৬৪ থেকে ৭৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬৫ থেকে ৮০ টাকা। অর্থাৎ দাম কমেছে কেজিতে ১ থেকে ৪ টাকা।
মাঝারি চাল পাইজামের দর গত সপ্তাহে ছিল ৫৫ থেকে ৬০, সেটি নেমেছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায়।
৫৫ থেকে ৫৮ টাকার মোটা স্বর্ণা চালের দর নেমেছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের ‘সিয়াম রাইস ট্রেডার্স’ নামের প্রতিষ্ঠানের মালিক রহিম বেপারি তালুকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দাম ধীরে ধীরে কমছে। গেল সপ্তাহে যে দামে চাল বিক্রি করেছি, তা এ সপ্তাহে ৫-৭ টাকা কম।’
পাইকারি চাল বিক্রেতা মফিজুল আহমেদ বলেন, ‘দাম বাড়লেই ক্রেতা বেশি থাকে। সবাই তখন বেশি বেশি কিনতে আসে। আর দাম কমলে ক্রেতাও কমে যায়৷ তারা ভাবে দাম আরও কমবে। তাই সবাই অপেক্ষা করে।’
খোলা আটাও কিছুটা কমে মিলছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজির দর ৫০ টাকা থাকলেও এ সপ্তাহে মিলছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায়। তবে এ দাম এক মাস আগের তুলনায় প্রায় ২২ শতাংশ বেশি।
বিপণনকারী দু-একটি কোম্পানি আটার দুই কেজির প্যাকেটের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে ১২৫ টাকা, যা এ সপ্তাহেও অপরিবর্তিত আছে।
বিভিন্ন বাজারে দেশি মসুর ডালের কেজি ১২০ টাকা। ভারতীয় মসুরের ডাল পাঁচ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়।
নতুন দাম অনুযায়ী বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৮২ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৪৫ টাকায়। পাম তেল লিটারপ্রতি ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের ডজন ১২০-এর নিচে
কদিন আগে প্রায় প্রতিদিনই বাড়তে থাকা ডিমের হালি একপর্যায়ে ১৭০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল, সেটি প্রশমিত হয়েছে।
খুচরা পর্যায়ে হচ্ছে ৪০ টাকা হালি আর পাইকারিতে কিনলে ডজন মিলছে ১০৮ টাকায়।
ব্রয়লারে মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০০ থেকে নেমে এসেছে ১৭০ টাকা। তবে সোনালি মুরগির ক্ষেত্রে বিপরীতমুখী প্রবণতা। আগের সপ্তাহে যা ছিল ২৮০ টাকা, সেটি এখন ৩০০ টাকা।
দেশি মুরগি সেই আগের দাম ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ওদিকে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ার পর ধীরে ধীরে এই মাংস যে ৭০০ টাকায় উঠে যায়, সেখান থেকে যেন নামার নাম নেই। কোনো দোকানে কেজিতে ৬৮০, কোথাও ৭০০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা কেজিতে।
গরুর মাংস বিক্রেতা জমির মিয়া বলেন, ‘গরুর মাংসের দাম কমব কি না, সেইটা বলা যায় না।’
স্বস্তি দিচ্ছে মাছও
গত সপ্তাহে যে রুই ৩২০ টাকায় কিনতে হয়েছে, তা এ সপ্তাহে মিলছে ৩০০ টাকায়।
রকম ভেদে তেলাপিয়া ও পাঙাশ ১৩০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি, শিং ৩৫০ থেকে ৪৬০, কই ২০০ থেকে ২৫০, পাবদা ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
এই সময়ের ‘হার্টথ্রব’ ইলিশ এক কেজির নিচে ৮৫০ আর এক কেজি হলে ১ হাজার ১০০ আর এর চেয়ে বেশি হলে ১ হাজার ৬০০ টাকা হিসাবেও দাম চাইতে দেখা গেছে বিক্রেতাদের।
আরও পড়ুন:ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর তা আমদানি করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি)।
বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়। সূত্র: ইউএনবি
তবে বৈঠকে পেঁয়াজের দাম প্রকাশ করা হয়নি। কারণ প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য আবারও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে আসবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ভারতের ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ এক্সপোর্ট লিমিটেডের কাছ থেকে জিটুজি (সরকার বনাম সরকার) ভিত্তিতে এসব পেঁয়াজ আমদানি করবে টিসিবি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব সাংবাদিকদের জানান, ক্রয় প্রস্তাবটি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে আসার পর পেঁয়াজের দাম প্রকাশ করা হতে পারে।
রমজানে চাহিদা বাড়ায় ভারত থেকে আমদানি করা আলুর আরেকটি চালান বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে এসেছে।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে ১৩ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ৩২টি ট্রাকে এক হাজার টন আলু নিয়ে আসা হয়েছে বেনাপোলে।
আলুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হলো ইন্টিগ্রেটেড ফুড অ্যান্ড বেভারেজ এবং রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের পেপসিকো ইন্ডিয়া হোল্ডিংস। আলুর চালান বন্দর থেকে খালাস নিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করেছে ট্রান্সমেরিন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
বেনাপোল চেকপোস্ট কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বুধবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ভারতের পেট্রাপোল বন্দর হয়ে ১৩ ও ১৪ মার্চ ২০০ টন করে এবং ১৯ মার্চ ৩০০ ও ২৪ মার্চ রাতে ৩০০ টন আলু আমদানি করা হয়।’
ট্রান্সমেরিন লজিস্টিক লিমিটেড সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘চারটি চালানে ভারতীয় ৩২টি ট্রাকে এক হাজার টন আলু আমদানি করা হয়। প্রতি টন আলুর আমদানি খরচ পড়েছে ১৯৪ ডলার।’
এ বিষয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘আমদানি করা আলুর তিনটি চালানের ৭০০ টন ইতোমধ্যে বন্দর থেকে খালাস করা হয়েছে। শেষ চালানের ৩০০ টন বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় আছে।
‘আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খালাসের অনুমতি চাইলে দ্রুত ছাড়করণে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।’
এর আগে গত বছরের ২ ডিসেম্বর ভারত থেকে তিনটি ট্রাকে ৭৪ টন আলু আমদানি করা হয়। এরপর চলতি মাসে চারটি চালানে আরও এক হাজার টন আলু আমদানি করা হয়েছে।
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে সাশ্রয়ী মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক)। বাজারের তুলনায় গরুর মাংস কেজিতে ২০০ টাকা কমে ৫৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
নগরীর টাউনহল মাঠে সোমবার বেলা ১১টার দিকে গরুর মাংস বিক্রি শুরু হয়।
নগরীর স্টেশনরোড থেকে মাংস নিতে এসেছেন ভ্যানচালক ফাইজুল মিয়া।
তিনি বলেন, ‘বাজারে এক কেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখানে ২০০ টাকা কম হওয়ায় কিনতে এসেছি। রমজান মাসে নিশ্চই সিটি করপোরেশনের এটি মহৎ উদ্যোগ।’
শহরের গাঙ্গিনাড়পাড় এলাকা থেকে আসা জাহানারা খাতুন বলেন, ‘স্বামী না থাকায় প্রতিদিন গাঙ্গিনাড়পাড়ে তরিতরকারি বিক্রি করি। সময় যত যাচ্ছে, সব পণ্যসহ মাংসের দামও বাড়ছে। দাম বেশির কারণে মাংস কিনে খেতে পারি না। এখানে দাম কম হওয়ায় এক কেজি কিনে নিয়েছি।’
অটোরিকশা চালক লিটন মিয়া বলেন, ‘যাত্রী নিয়ে অটোরিকশা চালিয়ে টাউনহল মোড়ে যাচ্ছিলাম। মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে কম দামে মাংস কিনছে দেখতে পেয়ে যাত্রী নামিয়ে এসে আমিও মাংস কিনেছি।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী বলেন, ভর্তুকি মূল্যে প্রত্যেকের কাছে এক কেজি করে গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। প্রথম দিন লোকজন সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে মাংস কিনে নিয়েছে।
পবিত্র রমজান মাসজুড়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও মঙ্গলবার মাংস বিক্রির এ কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:সড়ক-মহাসড়কে ট্রাকে চাঁদাবাজির চেয়েও ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
শনিবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ পুলিশ স্টাফ কলেজে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন সাইবার সিকিউরিটি কোর্স উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি রোধে পুলিশ-র্যাব কঠোর অবস্থানে রয়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে যে জিনিস ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সেটাই অল্প কিছু দূরে নিয়ে ৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। চাঁদাবাজির চেয়ে ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফার চিন্তা-ভাবনা পণ্যের দামে বেশি প্রভাব ফেলে।
‘যশোর থেকে পণ্য নিয়ে ঢাকায় আসতে একটি ট্রাকের কত টাকা চাঁদা দিতে হয় হয় সেই হিসাব ধরে আমরা পরিসংখ্যান করেছি। চাঁদাবাজির চেয়ে অধিকতর মুনাফার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঢাকায় বাড়ে। চাঁদাবাজি রোধে পুলিশের স্পেশাল ড্রাইভ চলছে।’
তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজি বন্ধে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে ইতোমধ্যে ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। ভবিষ্যতে সব মহাসড়ককে ক্যামেরার আওতায় আনা হবে।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও ভোক্তা অধিকারসহ বিভিন্ন ফোর্স এখানে কাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে যখনই আসে তখনই তারা অর্পিত দায়িত্ব পালন করে। যারা অধিক মুনাফা করছে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পাড়া-মহল্লায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি শুরু হলে অধিক মুনাফা রোধ করা সম্ভব হবে।’
রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সিলিন্ডার কিংবা গ্যাস সংযোগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন থাকা দরকার। ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা অনুযায়ী অগ্নিকাণ্ড রোধে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সংযোজন করলে ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারব।
‘রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে দেয়ার জন্য জায়গা দিয়েছি। তারপরও তারা গোপনে আবারও চলে আসে। আইন ভঙ্গ করে, রাজউকের অনুমোদন না নিয়ে যত্রতত্র সিলিন্ডার ব্যবহার না করার জন্য সবার প্রতি নির্দেশনা দেয়া আছে। নাশকতার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান।
সভাপতিত্ব করেন পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর (অতিরিক্ত আইজিপি) ড. মল্লিক ফখরুল ইসলাম।
আরও পড়ুন:পেঁয়াজ রপ্তানিতে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়িয়েছে ভারত। শনিবার দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারত থেকে মার্চের শেষে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ তৈরি হবে- এমন ভাবনায় দেশের বাজারে কিছুটা স্বস্তি এসেছিল। দামও অনেকটা কমে আসে। তবে প্রতিবেশী দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত করার খবরে দেশের বাজারে আবারও অস্থিরতা সৃষ্টির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত বছরের ডিসেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত। শনিবারের বিবৃতিতে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত রপ্তানিতে এই স্থগিতাদেশ অব্যাহত থাকবে।
ভারতে লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
প্রসঙ্গত, ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পেঁয়াজ রপ্তানিকারী দেশ। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, নেপাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতীয় পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশেও রপ্তানি হয় ভারতীয় পেঁয়াজ।
ডিসেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর থেকে দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দামে ধস নামে। আর দেশটি থেকে পেঁয়াজ আমদানিকারী দেশগুলোর বাজারে দাম বাড়তে থাকে হু হু করে।
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। রাজ্যটিতে গত ডিসেম্বরে প্রতি ১০০ কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল চার হাজার পাঁচশ রুপি, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার দুশ রুপি।
বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে। কয়েক দিন আগে এই দর ১২০ টাকা ছুঁয়েছিল।
ভারতের কৃষিপণ্য রপ্তানি সংক্রান্ত সরকারি সংস্থা হর্টিকালচার এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের (হেপা) প্রেসিডেন্ট অজিত শাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়। প্রতি বছরই মার্চ-এপ্রিল মাসে (আন্তর্জাতিক) বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দেয়। এতদিন ভারতীয় পেঁয়াজ এই ঘাটতি সামাল দিতো। সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে এ বছরের তিন মাসে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ পৌঁছায়নি, সেজন্যই এ ঘাটতি।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর কাঁচাবাজারে গরুর মাংস, মুরগি ও ডিমের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও সবজি, আলু ও পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে।
শুক্রবার কারওয়ান বাজার, মহাখালী, রামপুরা, মালিবাগসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। খবর ইউএনবির
রাজধানীতে গরুর মাংস ও মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। শুক্রবার প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। গত সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় ৫০ টাকা বেড়েছে। খাসির মাংস প্রতি কেজি ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকায়।
ব্রয়লার মুরগির দামও বেড়েছে, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা কেজি। যা আগে বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। এ ছাড়া সোনালি মুরগির দাম বেড়ে ৩৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
একইভাবে প্রতি কেজি কক মুরগি ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, মুরগির খাবার ও ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম বাড়ায় মাংসের দামও বেড়েছে।
প্রায় সবজির দাম কমলেও নতুন আসা মৌসুমি সবজির দাম যেমন সজনে ডাটা, শিম, করলার দাম বেশি। যা মান ভেদে ১০০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বেগুনসহ অন্যান্য সবজি প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং লাউ, চালকুমড়া ও ফুলকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মান ভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৬০ টাকা, রসুন ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা এবং আদা ২০০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের দাম প্রতি ডজন ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে এক ডজন বাদামি ডিম ১৪৫ টাকা, হাঁসের ডিম প্রতি হালি (৪টি) ৭০ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিম ৮০ টাকা (চারটি) দরে বিক্রি হচ্ছে। এ সপ্তাহে রান্নার অন্যান্য পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজশাহীর সিল্ক শ্রমিকরা। এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে শো রুমগুলো। সেই সঙ্গে কারখানাগুলোতে চলছে দিন রাত ব্যস্ততা, তবে এখনও এখানকার শিল্কপাড়া সেভাবে জমে না উঠলেও ক্রেতারা আসছেন এবং পছন্দের পণ্যটি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
বিক্রেতারা বলছেন, ১৫ রোজার পর থেকে বাড়তি চাপ আশা করছেন তারা। এবারে ভালো ব্যবসার আশা করছেন সিল্ক ব্যবসায়ীরা। রোজার শেষ পর্যন্ত এখানে ৫০ কোটি টাকা ব্যবসার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রমজানের কদিন আগে থেকেই ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে রাজশাহী নগরীর সিল্ক কারখাগুলোতে কারিগররা ব্যস্ততম সময় শুরু করেন।
সপুরা সিল্কে গিয়ে দেখা গেল, কারিগররা কেউ রেশমের গুটি থেকে সূতা তৈরি করছেন, কেউ কাপড় তৈরিতে ব্যস্ত আবার কেউ কাঠের ফ্রেমে বেঁধে শাড়ি, ওড়না, পাঞ্জাবি ইত্যাদিতে বাহারি রঙের কারুকার্য জুড়ে দিয়ে তৈরি করছেন নান্দনিক নকশা।
উষা সিল্কের শো রুমে গিয়ে দেখা মিলল, থরে থরে সাজানো সিল্ক পণ্য।
সিল্কের শ্রমিকরা জানান, সারা বছরজুড়েই তাদের হাতে কাজ থাকে, তবে অন্য সময়ের চেয়ে এ রমজান মাসের ব্যস্ততাটা অন্যরকম। এখন শুধু কাজ আর কাজ। রাজশাহীর সপুরা সিল্ক, উষা সিল্ক, আমানা সিল্ক, রাজশাহী সিল্কসহ সব প্রতিষ্ঠানেই এখন ক্রেতার জন্য অপেক্ষা চলছে।
তারা বলছেন, এবার সিল্কের শাড়ি ও পাঞ্জাবির দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতারা। এর পাশাপাশি থ্রিপিস ও অন্য সামগ্রী কিনছেন তারা।
রাজশাহী সপুরা সিল্কে শাড়ি কিনতে গিয়েছিলেন নাহিদা আখতার।
তিনি বলেন, ‘সিল্কের প্রতি ঝোঁক আগে থেকেই। ঈদ আসলে আগ্রহ বাড়ে আরও বেশি। এবারে কিছু নতুন ডিজাইন এসেছে। প্রথমে বাচ্চাদের কাপড় কিনব। পরে নিজের পছন্দ করে শাড়ি নেব।’
নওরিন আরা বললেন, তিনি সিল্কের শাড়ি কিনবেন ঈদে। যেসব শাড়ি দেখছেন সেগুলো ভালোই লাগছে তার। দাম নিয়েও কোনো অভিযোগ নেই নওরিনের।
তিনি বলেন, ‘সব কিছুরই দাম বেড়েছে এ কারণে কাপড়ের দাম কিছুটা বাড়বে এটা ধরে নিয়েই বাজারে এসেছি।’
রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশনের ম্যানেজার সেলিম রেজা বলেন, ‘রমজান এখন শুরু। আমার প্রস্তুতি রেখেছি। আশা করছি অন্য বছরের চাইতে এবার বেশ ভালো ব্যবসা করব। কিছু ক্রেতা এখন সন্ধ্যায় আসছে, তবে ১৫ রমজানের পর থেকে হয়ত ভালোভাবে ক্রেতারা আসবে।’
সপুরা সিল্ক মিলস লিমিটেডের ম্যানেজার সাইদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবারের চাইতে এবার আমরা আরও বেশ ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি। রমজানের শুরুতে এবার ছুটিও গেছে। ফলে ওই কয়েকদিন বেশ ভালো ব্যবসা হয়েছে। মানুষের ভিড়ও ছিল।’
তিনি বলেন, ‘এবার আমরা তিন হাজার থেকে শুরু করে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত শাড়ি বানিয়েছি। পাঞ্জাবি আমাদের এখানে আছে ৪৫০০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে, শার্ট ২৫০০ থেকে ৪ হাজার, থ্রিপিস ৬৫০ টাকা থেকে ৪০ হাজার। আমরা সকাল থেকে রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত খোলা রাখি। এবারের দাম আগের মতোই রাখা হয়েছে।’
রাজশাহী সিল্ক মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, ‘রমজান কেবল শুরু। এখনই বলা যাচ্ছে না কেমন বেচাকেনা হবে, তবে আমরা আশাবাদী ভালোই হবে। এবার আমরা আশা করছি অন্তত ৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য