কারওয়ান বাজারের রাস্তা ধরে সবজির দোকানগুলোর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বিক্রেতার হাঁকডাক ভেসে এলো, তিনি কাঁচা মরিচের বস্তা অর্ধেকটা খুলে রেখে ডাকছিলেন, ‘মরিচ ৪০, মরিচ ৪০’।
কিছুক্ষণ হেঁটে আরেক দূর এগিয়ে গিয়েও দেখা যায়, সেই বিক্রেতা একইভাবে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছিলেন।
অথচ সপ্তাহ তিনেক আগেও এই কারওয়ান বাজারে মরিচ বিক্রি হয়েছে ২৬০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি দরে, মহল্লার দোকানে তা ৩০০ ছাড়িয়ে যায়।
এরপর ভারত থেকে আমদানিতে মরিচের সরবরাহ বাড়ে আর ধীরে ধীরে কমে আসে দাম।
রান্নার এই উপকরণের পাশাপাশি দাম কমতে শুরু করেছে পাইকারি আড়তের পাশে কারওয়ান বাজারের খুচরা বাজারেও।
সবজি বিক্রেতা সায়িম আলী বলেন, ‘গত সপ্তাহেও যে দামে বেচছি, এই সপ্তাহে দাম কমছে ১০ থাইক্যা ১৫ টাকা। মালের আমদানি ভালো, দাম কম।’
বাজারে গিয়ে জানা গেল, কেবল বাড়তেই থাকা নিত্যপণ্যের বাজারে এখন দর একটু একটু করে কমতে শুরু করেছে। সরকার ৯টি পণ্যের দর বেঁধে দেবে জানানোর পর থেকে কমছে সবজি, মাছের দরও। তবে কিছুটা কমলেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দাম যে অনেকটাই বেশি, সেটা বলাই বাহুল্য।
শীতের জনপ্রিয় সবজি শিম উঠেছে দুই সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলে। শুরুতে দাম ছিল আড়াই শ টাকা। সেটির দাম দুই বিক্রেতা চাইলেন ১২০ টাকা। ১০০ করে দেয়া যাবে কি না, জানতে চাইলে এক বিক্রেতা ১১০ টাকা দাম রাখার প্রস্তাব করেন।
শীতের আরেক সবজি টম্যাটোর দাম কমেছিল ঈদের পর পরই। তবে পরে আবার বেড়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে কমে আবার ৮০ থেকে ১০০ টাকায় নামতে দেখা গেছে।
বছরজুড়ে পাওয়া যায় যে সবজি, সেই বেগুনের মধ্যে লম্বাটা ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেল।
এই সময়ের সবচেয়ে সস্তা সবজি পেঁপে কেউ ২০ টাকা, কেউ ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছিলেন। কাঁকরোলের দর দিনে ৪০, রাতে গেলে ৩০। একই অবস্থা পটোল, চিচিঙ্গার ক্ষেত্রে। দিনে ৪০, রাতে ৩০ টাকা।
আলুও পাঁচ কেজির এক পাল্লা নিলে দর ধরে ২৬ থেকে ২৮ আর কেজি নিলে ৩০। আর গত কয়েক বছরের মধ্যে লেবুর দর এখন সবচেয়ে কম। ডজন ২০ টাকা দরেও ডেকে ডেকে বিক্রি করতে দেখা যায়।
সবজির পাশাপাশি দাম কমেছে আদারও। গত সপ্তাহে কেজি ছিল ১২০ টাকা, সেটি নেমে এসেছে ১০০ টাকায়। কেজিতে এক টাকা কমে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকায়।
চাল-আটার দরেও ভাটার টান
চালের আমদানি শুল্ক আরও কমিয়ে দেয়ার পর দামের ঊর্ধ্বগতি থেমে শুরু হয়েছে নিম্নগতি। সরু চালের মধ্যে নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৬৪ থেকে ৭৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬৫ থেকে ৮০ টাকা। অর্থাৎ দাম কমেছে কেজিতে ১ থেকে ৪ টাকা।
মাঝারি চাল পাইজামের দর গত সপ্তাহে ছিল ৫৫ থেকে ৬০, সেটি নেমেছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায়।
৫৫ থেকে ৫৮ টাকার মোটা স্বর্ণা চালের দর নেমেছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের ‘সিয়াম রাইস ট্রেডার্স’ নামের প্রতিষ্ঠানের মালিক রহিম বেপারি তালুকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দাম ধীরে ধীরে কমছে। গেল সপ্তাহে যে দামে চাল বিক্রি করেছি, তা এ সপ্তাহে ৫-৭ টাকা কম।’
পাইকারি চাল বিক্রেতা মফিজুল আহমেদ বলেন, ‘দাম বাড়লেই ক্রেতা বেশি থাকে। সবাই তখন বেশি বেশি কিনতে আসে। আর দাম কমলে ক্রেতাও কমে যায়৷ তারা ভাবে দাম আরও কমবে। তাই সবাই অপেক্ষা করে।’
খোলা আটাও কিছুটা কমে মিলছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজির দর ৫০ টাকা থাকলেও এ সপ্তাহে মিলছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায়। তবে এ দাম এক মাস আগের তুলনায় প্রায় ২২ শতাংশ বেশি।
বিপণনকারী দু-একটি কোম্পানি আটার দুই কেজির প্যাকেটের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে ১২৫ টাকা, যা এ সপ্তাহেও অপরিবর্তিত আছে।
বিভিন্ন বাজারে দেশি মসুর ডালের কেজি ১২০ টাকা। ভারতীয় মসুরের ডাল পাঁচ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়।
নতুন দাম অনুযায়ী বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৮২ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৪৫ টাকায়। পাম তেল লিটারপ্রতি ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের ডজন ১২০-এর নিচে
কদিন আগে প্রায় প্রতিদিনই বাড়তে থাকা ডিমের হালি একপর্যায়ে ১৭০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল, সেটি প্রশমিত হয়েছে।
খুচরা পর্যায়ে হচ্ছে ৪০ টাকা হালি আর পাইকারিতে কিনলে ডজন মিলছে ১০৮ টাকায়।
ব্রয়লারে মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০০ থেকে নেমে এসেছে ১৭০ টাকা। তবে সোনালি মুরগির ক্ষেত্রে বিপরীতমুখী প্রবণতা। আগের সপ্তাহে যা ছিল ২৮০ টাকা, সেটি এখন ৩০০ টাকা।
দেশি মুরগি সেই আগের দাম ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ওদিকে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ার পর ধীরে ধীরে এই মাংস যে ৭০০ টাকায় উঠে যায়, সেখান থেকে যেন নামার নাম নেই। কোনো দোকানে কেজিতে ৬৮০, কোথাও ৭০০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা কেজিতে।
গরুর মাংস বিক্রেতা জমির মিয়া বলেন, ‘গরুর মাংসের দাম কমব কি না, সেইটা বলা যায় না।’
স্বস্তি দিচ্ছে মাছও
গত সপ্তাহে যে রুই ৩২০ টাকায় কিনতে হয়েছে, তা এ সপ্তাহে মিলছে ৩০০ টাকায়।
রকম ভেদে তেলাপিয়া ও পাঙাশ ১৩০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি, শিং ৩৫০ থেকে ৪৬০, কই ২০০ থেকে ২৫০, পাবদা ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
এই সময়ের ‘হার্টথ্রব’ ইলিশ এক কেজির নিচে ৮৫০ আর এক কেজি হলে ১ হাজার ১০০ আর এর চেয়ে বেশি হলে ১ হাজার ৬০০ টাকা হিসাবেও দাম চাইতে দেখা গেছে বিক্রেতাদের।
আরও পড়ুন:পবিত্র রমজান মাসে দাম সহনীয় রাখতে টাটকা ফলের ওপর আমদানি শুল্ক কমিয়েছে সরকার।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গত ১৬ মার্চ জারি করা দুটি প্রজ্ঞাপনে আমদানি পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং ৫ শতাংশ অগ্রিম কর সম্পূর্ণ অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ১০ মার্চ পৃথক প্রজ্ঞাপনে ফল আমদানির ওপর অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। ফলে মোট শুল্ক কমানো হয়েছে ১৫ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, রমজানে দ্রব্যমূল্যে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বৃহত্তর জনস্বার্থে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এনবিআরের দাবি, বৃহত্তর জনস্বার্থে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত কয়েক মাসে ভোজ্যতেল, চিনি, আলু, ডিম, পেঁয়াজ, চাল, খেজুর, কীটনাশকসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণ শুল্ক, ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম করের উল্লেখযোগ্য অংশ অব্যাহতি দিয়েছে।
আরও পড়ুন:যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত ৪ মাসে ভারত থেকে ১৮ হাজার ৮০০ টন চাল আমদানি করা হলেও দেশের বাজারে দামে প্রভাব পড়ছে না।
দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত ৯২টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান শুল্কমুক্ত কোটায় এসব চাল আমদানি করে।
চলতি অর্থবছরে ১৭ নভেম্বর থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত এসব চাল আমদানি করা হয়। তবে ভারত থেকে চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও দেশের বাজারে দামে প্রভাব পড়ছে না।
গত ১৩ মার্চ বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৩৫০ টন চাল আমদানি করা হয়। এ নিয়ে গত চার মাসে ১৮ হাজার ৮০০ টন চাল আমদানি হয় এ বন্দর দিয়ে।
গত ৬ মার্চ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আরিফুল ইসলামের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বেসরকারিভাবে নন বাসমতি সেদ্ধ চাল ও আতপ চাল আমদানির জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে এলসি খোলার সময়সীমা আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হলো।’
দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল ও ক্রেতা সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকার দেশের শীর্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাইরের দেশ থেকে চাল আমদানির অনুমতি দেয়। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে বাইরের দেশ থেকে চাল আমদানির এই সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, আটটি চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গত বছরে ১৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৩ মার্চ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮০০ টন চাল আমদানি করেছে। সারা দেশে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ৯২ প্রতিষ্ঠানকে। দুই লাখ ৭৩ হাজার টন সেদ্ধ এবং এক লাখ ১৯ হাজার টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তাদের।
অনেক প্রতিষ্ঠান এ সময়ের মধ্যে আমদানি করতে পারেনি। তারপরও সরকার ২৫ দিন সময় নির্ধারণ করে দেয় আমদানি করা চাল বাজারজাত করার জন্য। আশানুরূপ চাল আমদানি না হওয়ায় পরে তা প্রথম দফায় ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ায় সরকার। তারপরও আমদানি ধীরগতির কারণে আবারও সময় বাড়ায় সরকার।
এভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল আমদানি না হওয়ায় চতুর্থবারের মতো আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে সরকার। এ সময়ের মধ্যে সব চাল আমদানি হলে বাজারে চালের দাম কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও বাজারে দামের ওপর প্রভাব পড়ছে না। রোজার শুরু থেকেই সব ধরনের চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। অব্যাহতভাবে চালের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, চালের দাম কমানোর জন্য সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পরও মিলছে না সুফল। ভারত থেকে চাল আমদানি হলেও দেশীয় চালের দামের ওপর তার প্রভাব পড়ছে না।
তারা বলছেন, রোজার শুরুতেই সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। পণ্যটির অস্বাভাবিক এ মূল্যবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। রোজায় সবজিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতে পারলেও চাল কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
চাল ব্যবসায়ী দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘রোজার শুরুতেই চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। রোজার আগের ৬৪ টাকা কেজি দরের ২৮ জাতের চাল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৬৯ টাকায়, ৭২ টাকার মিনিকেট ৭৬ টাকায়, ৫২ টাকার মোটা চাল ৫৬ টাকায়, ৮৪ টাকার বাসমতি চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৮ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে।
‘আমদানি করা ভারতীয় একটি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজি দরে। তবে বাজারে ক্রেতাদের মধ্যে ভারতীয় চালের চাহিদা কম।’
তিনি বলেন, ‘রোজার মধ্যে চালের দাম কমার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। ভারতীয় চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও বাজারে দামের ওপর কোনো প্রভাব পড়ছে না। তবে সামনে নতুন চাল বাজারে উঠলে সরবরাহ বাড়লে দাম কমতে পারে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) শামিম হোসেন জানান, ভারত থেকে আমদানি করা চালের ট্রাক স্থলবন্দরে ঢুকলেই দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা তা দ্রুত ছাড় করার ব্যবস্থা নেন, যাতে আমদানি করা চাল দেশের বাজারে দ্রুত সরবরাহ করা যায়।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান জানান, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে বেনাপোল স্থলবন্দরের গুরুত্ব অনেক বেশি। বেনাপোল থেকে কলকাতার দূরত্ব কম হওয়ায় আমদানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের সময় স্বল্পতা ও আর্থিক সাশ্রয় ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়ায়। পণ্য পরিবহনে যাতায়াত ব্যবস্থা রয়েছে উন্নত।
তিনি আরও জানান, এ বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করার পর অতি দ্রুত পৌঁছাতে পারে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের বাজারে।
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত চার মাসে ভারত থেকে ১৮ হাজার ৮০০ টন চাল আমদানি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাল আমদানির জন্য সরকার আবারও এক মাস সময় বাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:দেশে জ্বালানি তেলের দাম মার্চে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
এক অফিস আদেশে শনিবার এমন তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ‘মার্চ মাসের জন্য তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাচ্ছে সরকার। এ জন্য বিদ্যমান মূল্য কাঠামো অনুযায়ী ডিজেল ও কেরোসিন প্রতি লিটার ১০৫ টাকা, অকটেন ১২৬ টাকা এবং পেট্রল ১২২ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।’
এর আগে গেল ৩১ জানুয়ারি পেট্রল, অকটেন, ডিজেল ও কেরোসিনের মতো জ্বালানি তেলের দাম লিটারে এক টাকা বাড়ানো হয়, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে যা কার্যকর করা হয়।
জানুয়ারিতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে এক টাকা কমানো হয়েছিল। পেট্রল ও অকটেনের দাম অপরিবর্তিত ছিল।
গত বছরের মার্চ থেকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ শুরু করেছে সরকার। সে হিসাবে প্রতি মাসে নতুন দাম ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন:সবার আগে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তিনি বলেন, একদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপণ্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে, অন্যদিকে শতাধিক পণ্য ও সেবায় নতুন করে ভ্যাট আরোপ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
এক বিবৃতিতে সোমবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন বা সংস্কার নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। মানুষের জীবন ও জীবিকা নিয়ে চিন্তা করার যেন কেউ নেই। টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইন দিনে দিনে বড় হচ্ছে।
‘এখন প্যান্ট-শার্ট পড়েও স্বল্প দামে চাল-ডাল কিনতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অসংখ্য মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম হওয়ায় অনেকেই ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে না পেরে একবুক কষ্ট নিয়ে খালি হাতে ঘরে ফিরছে।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের কাছে মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম কেনা দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিভাবকরা সন্তান ও পরিজনের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছেন না। সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারছেন না; কিনতে পারছেন না জীবন রক্ষাকারী ঔষধ।
‘এমন বাস্তবতায় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা।’
জিএম কাদের বলেন, ‘দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করি। আমরা মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা বলেই যাব।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে সরকার দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন:বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ড. ওমর বোলাত।
সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সকালে এ সাক্ষাৎ হয়।
ওই সময় বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য দুই বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারে উন্নীত করার বিষয়ে আগ্রহের কথা জানান তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী।
সাক্ষাৎকালে তারা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের আকার বৃদ্ধি, বাংলাদেশে তুরস্কের বিনিয়োগ সম্ভাবনা, হালাল ফুড সনদ প্রাপ্তি ও ইকোনমিক কমিশন গঠন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, তুরস্ক বাংলাদেশের জন্য ভাতৃপ্রতিম দেশ। বিভিন্ন খাতে দীর্ঘদিনের সহযোগিতার ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশ ও তুরস্কের। এর মধ্যে ব্যবসা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি অন্তর্ভুক্ত।
তিনি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণকে উৎসাহিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তুরস্ককে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ হালাল রপ্তানিকারক দেশ উল্লেখ করে বাংলাদেশের হালাল খাবারের বাজার সম্প্রসারণে তুরস্কের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হালাল সনদ প্রাপ্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে তুরস্কের হালাল অ্যাক্রিডিটেশন অথরিটি ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের মধ্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হালাল সনদ প্রাপ্তি সহজ করবে। হালাল খাবার রপ্তানি দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে চমৎকার বিনিয়োগ পরিবেশ রয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ এখন অনেক সহজ করা হয়েছে। বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধাও দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ শিল্প, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, সেবা, নির্মাণশিল্প এবং তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
ওই সময় তিনি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে তুরস্কের বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ড. ওমর বোলাত বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে দুই বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ তুরস্ক থেকে আমদানির চেয়ে রপ্তানি বেশি করে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে।
তিনি জানান, বর্তমানে তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য মূলত টেক্সটাইল খাতকেন্দ্রিক। তুরস্ক বাংলাদেশে টেক্সটাইল খাতের বিভিন্ন যন্ত্র ও কেমিক্যাল রপ্তানি করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে তুরস্ক তৈরি পোশাক আমদানি করে। তুরস্ক কেবল টেক্সটাইল খাতে সীমাবদ্ধ না থেকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বহুমুখীকরণ করতে চায়।
তিনি বাংলাদেশে রিনিউবল এনার্জি, গাড়ি নিমাণ শিল্প, ফার্মাসিটিক্যালস, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত, লজিসটিক্স ও নির্মাণ শিল্প খাতে তুরস্কের বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন তুরস্কের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী মুস্তাফা তাজকু এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব ) মো. আবদুর রহিম খান।
আরও পড়ুন:ভারত থেকে আমদানিকৃত ২৪ হাজার ৬৯০ টন সিদ্ধ চাল নিয়ে ‘এমভি তানাইস ড্রিম’ নামের জাহাজটি বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে।
এটি অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ভারত থেকে আমদানিকৃত চালের প্রথম চালান।
ভারত থেকে ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করা হবে। এর প্রথম চালান আগামীকাল দেশে আসছে।
এরই মধ্যে আমদানিকৃত জাহাজ থেকে এসব চাল দ্রুত খালাসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে।
বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং দাম সহনীয় পর্যায়ের রাখার লক্ষ্যে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানিতে বিদ্যমান সব আমদানি শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি এবং অগ্রিম আয়কর অব্যাহতি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সম্পূর্ণ কর অব্যাহতির এই সুবিধা দেয়া হয়েছে।
এনবিআর সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ১৫ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত আলাদা তিনটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এসব প্রজ্ঞাপনে সানফ্লাওয়ার, ক্যানোলা, সয়াবিন ও পামওয়েল বিক্রির ওপর স্থানীয় পর্যায়ে প্রদেয় মূল্য সংযোজন কর ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সম্পূর্ণ অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
এছাড়া এসব পণ্যের আমদানি পর্যায়ে প্রদেয় মূসক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূসক ছাড়া অন্য কোনো শুল্ক-করাদি অবশিষ্ট নেই। এ লক্ষ্যে সবশেষ তিনটি এসআরও জারি করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এর আগে গত ১৭ অক্টোবর ও ১৯ নভেম্বর জারি করা শুল্ক-করাদি অব্যাহতির প্রজ্ঞাপন দুটি সয়াবিন ও পামওয়েলের ক্ষেত্রে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রযোজ্য ছিল। ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল রাখা এবং ভোক্তাসাধারণের জন্য ভোজ্যতেলের মূল্য সহনীয় রাখার উদ্দেশ্যে সয়াবিন ও পামওয়েলের পাশাপাশি এবার অপরিশোধিত-পরিশোধিত সানফ্লাওয়ার তেল ও ক্যানোলা তেলের আমদানির ওপর বিদ্যমান শুল্ক-কর এবং মূসক কমানো হলো।
সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও পামওয়েলের ঊর্ধ্বমুখী দর বিবেচনায় নিয়ে রমজান মাসে পণ্যটির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যে নতুন প্রজ্ঞাপন তিনটির মেয়াদ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ রাখা হয়েছে।
সানফ্লাওয়ার তেল ও কেনোলা তেলের কাস্টমস ডিউটি, রেগুলেটরি ডিউটি, আগাম কর ও অগ্রিম আয়কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করায় এবং মূল্য সংযোজন কর কমানোর কারণে এসব তেলের আমদানি ব্যয় লিটার প্রতি ৪০-৫০ টাকা কমবে।
এনবিআর আশা করছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নেয়া এসব পদক্ষেপে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে এবং এর ফলে বাজার মূল্য সর্বসাধারণের জন্য সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য