কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি এবং খাদ্যসামগ্রীর চড়া দামে বর্তমানে অধিকাংশ দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর সঙ্গে বাংলাদেশের ১৬০ মিলিয়ন মানুষও ভুগছে। এর ফলে সৃষ্ট বিদ্যুৎ সংকট ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি কিছু ক্ষেত্রে তাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাকে সন্দিহান করে তুলছে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুরবস্থার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে।
ঢাকা থেকে বেঞ্জামিন পার্কিন ও নয়াদিল্লি থেকে জন রিড যৌথভাবে এই নিবন্ধ লিখেছেন।
এতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংকট নানা ধরনের দুরবস্থার মুখে ঠেলে দিচ্ছে এবং সেসব দেশকে এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে, যারা আদর্শ উন্নয়ন অর্থনীতি থেকে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবিবেচনাপ্রসূত ব্যয় করেছে। এটি এখন দীর্ঘ প্রচেষ্টায় অর্জিত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল উদীয়মান অর্থনীতির অঞ্চলকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে, যা ভারত ও চীনের ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রের কেন্দ্রে অবস্থিত। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের ঋণদাতাদের মধ্যে অন্যতম হলো বেইজিং। ক্ষুদ্র প্রতিবেশীদের ওপর চীনের প্রভাবে ভারত বেশ অস্বস্তিতে আছে। চলমান সংকট তাদের হাতকে শক্তিশালী করার বিভিন্ন ইঙ্গিত তারা পাচ্ছে।
জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মমর্তা এবং বর্তমানে জর্জ সরস পরিচালিত ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনসের প্রধান মার্ক ম্যালোক ব্রাউন এমনটাই বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘এই সংকট বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও মডেলের দেশগুলোকে বিপদে ফেলছে। গার্মেন্টস শিল্পের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যান্য জায়গার অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে ধসে পড়ছে।’
দুই দশকের মধ্যে গত মে মাসে শ্রীলঙ্কা প্রথম এশিয়া-প্যাসিফিক দেশ হিসেবে ঋণখেলাপি হয়। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার ফলে রাজধানী কলম্বোর রাস্তায় মানুষ বিক্ষোভ করে। ফলে তিনি সেনাবাহিনীর বিমানে গোপনে দেশত্যাগে বাধ্য হন।
পাকিস্তানের আদালত সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে শাস্তির রায় দিয়েছে। সেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বেশি ঘনীভূত হচ্ছে। যদিও দেশটি আমেরিকা ও তার সহযোগী দেশগুলো থেকে ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছে, যা তাকে ঋণখেলাপি হওয়া থেকে রক্ষা করবে। ছোট্ট দেশ নেপাল এবং মালদ্বীপও বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ধাক্কা থেকে সুস্থ আছে, যার বড় কারণ এর সফল রপ্তানি খাত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো ও জলবায়ু পরিবর্তজনিত অভিঘাত মোকাবিলায় সহায়তার জন্য আইএমএফের কাছে ঋণের আবেদন করেছে। এ ফান্ড থেকে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়নসহ বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ আরও ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে দেশব্যাপী জনগণ প্রতিবাদ করেছে। বাংলাদেশ সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য স্কুল ও অফিস সময় কমিয়ে এনেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাশ্রয়ে বিলাস দ্রব্যের ওপর আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ঘানা, ইথিওপিয়া থেকে চিলি পর্যন্ত বিভিন্ন উদীয়মান অর্থনীতির মিল রয়েছে, যেখানে আশির দশকের পর এই প্রথম বৈদেশিক ঋণ সংকট শুরু হয়েছে- যা সেখানে দীর্ঘদিনের সমস্যার কারণে পরিণত হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ জ্বালানি ও খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল, যেমন অপরিশোধিত তেল, কয়লা, খাদ্যসামগ্রী এবং ভোজ্যতেল। গত জুলাইয়ে বাংলাদেশের ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করা হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে কেউ কেউ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দেশটির কাছে ঋণগ্রস্ত রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘যেখানে অন্য সব দেশ চাপের মুখে আছে, সেখানে বাংলাদেশ কোনো গভীর অর্থনৈতিক দুর্দশায় পড়ার মতো বিপদের মধ্যে নেই। বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করলে চলবে না। ঋণদানকারীরা আমাদের প্রজেক্টগুলো সম্পর্কে জানেন, আমাদের ব্যালান্স শিট ভালোমতো জানেন। বাংলাদেশ অর্থ প্রদানের মতো দেশ।’
তিনি ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের পদ্মা ব্রিজের উদ্বোধনকে বিশেষ গুরুত্ব দেন, যা বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে চীন নির্মিত স্থাপনা, যেটি ঢাকার সঙ্গে দেশের একটি বিশাল অংশের যাতায়াতের সময় সাশ্রয় করবে।
আইএমএফ বলেছে, জিডিপির ৩৯ শতাংশ ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ কোনো সংকটের মধ্যে নেই। এই ঋণের অনুপাত প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে অনেক কম। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে কেন্দ্র করে প্রচুর অনিশ্চয়তা রয়েছে, যার ফলে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
যদিও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা ভারতের উদ্বেগ তৈরি করেছে, তবে এটি এখনও সংকট থেকে নিরাপদে আছে। ফলে জুলাইয়ে দেশটি এর প্রতিবেশী দেউলিয়া রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কাকে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে।
ম্যালোক ব্রাউন বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর ওপর চাপ একটি বিশাল সংকটের অংশ, যা বাস্তবিকই বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপদে ফেলে দেয়।’
তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর জন্য প্রণীত মার্শাল প্ল্যানের মতো করে একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নীতি প্রণয়নের আহ্বান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, ‘বাংলাদেশের শ্রমিকদের শ্রম-ঘামে অর্জিত এই শিল্পকে বাঁচাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে এক ধরনের সহনশীলতা দেখতে পাবেন। পশ্চিম এবং এর প্রতিষ্ঠানগুলোর সেদিকে তাকানো উচিত... এটিকে ধ্বংস হতে দেয়া যাবে না।’
১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ থেকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তানের একটি প্রদেশ হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৭১ সালে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে, যা নতুন দেশকে একটি দুর্ভিক্ষের মধ্যে ফেলে দেয়।
পরের দশকগুলোতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া হয়। অদক্ষ উৎপাদন ব্যবস্থা বাদ দেয়া হয়, কর মওকুফ ও বৃহৎ বাজারগুলোতে ডিউটি ফ্রি সুবিধা পায় এবং নারী-পুরুষের বিশাল কর্মসংস্থান তৈরি হয়। বৈদেশিক রেমিট্যান্সও পুঁজি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৯৯১ সাল থেকে দারিদ্র্য ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে অর্ধেক কমে ২০১৬ সালে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসে। সে সঙ্গে শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতেও প্রভূত উন্নয়ন হয়। এর ফলে সাক্ষরতা ও শিশুমৃত্যুর হারেও অভূতপূর্ব সাফল্য আসে। বর্তমানে বাংলাদেশের ২ হাজার ৫০০ ডলার মাথাপিছু আয় ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও বেশি। জাতিসংঘ বাংলাদেশকে ২০২৬ সালের মধ্যে অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ‘অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ কোথাও ছিল না, এমনকি মানচিত্রেও না। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে আমাদের কঠোর প্রচেষ্টার মাধ্যমে।’
১৯৮০ দশকের পর থেকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প দেশের রপ্তানি খাতে ৪ শতাংশ থেকে বর্তমানে ৮০ শতাংশ অবদান রাখছে, যা দেশের পোশাক শিল্প সমিতির মতে ৫০ বিলিয়ন ডলার। এখানে অধিকাংশ শ্রমিকই নারী। এই উন্নতি শ্রমিকদের শোষণ ও ভয়াবহ কর্মপরিবেশের মধ্য দিয়েই তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে আছে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধস, যেখানে প্রায় এক হাজার শ্রমিক মারা যান।
আশুলিয়ার ইউনিয়ন নেতা সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগের থেকে কর্মপরিবেশের উন্নতি হয়েছে, কিন্তু তা যথেষ্ট না। এখনও দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা ঘটে চলেছে। ২০১৮ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন মজুরি ৮ হাজার থেকে আর বাড়েনি। এই মজুরি জুলাই মাসের পর মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধির বাস্তবতায় শ্রমিকদের জন্য যথেষ্ট নয়।
শামীম সরকারের ক্যাপ ফ্যাক্টরির অনেক শ্রমিকের মতোই ১৮ বছর বয়সী রেজওয়ানা আকতার দারিদ্র্যের তাড়নায় গ্রাম ছেড়ে শহরে আসেন কাজের খোঁজে। তার অনেক বন্ধুই এখন বিবাহিত এবং কর্মক্ষেত্রের বাইরে। এই ন্যূনতম মজুরি রেজওয়ানা আখতারের মতো নারীদের কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি দিয়েছে। তবুও এখানে জীবন দুর্বিষহ থেকে গেছে, তার ঘরভাড়া বৃদ্ধির হতাশার মধ্যে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
দেশের গার্মেন্টস শিল্প পোশাক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সব কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করে।
ঢাকাভিত্তিক পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ভিয়েলাটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ডেভিড হাসানাত জানান, তুলার দাম বর্তমানে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তার কোম্পানি ক্রেতা থেকে পণ্যের দাম মাত্র ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, ‘আসলে এই ব্যয় আমাদের অনেক বেশি ভোগাবে।’
বর্ধিত আমদানি ব্যয় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে, যা গত বছরের ৪৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বর্তমানে ৪০ বিলিয়ন ডলারেরও নিচে নেমে এসেছে। এটা পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা রাখে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তিতুমীর জানান, তিনি মনে করছেন বছরের শেষ নাগাদ এটি তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের কমে নেমে যাবে, যাকে অর্থনীতিবিদরা খুবই সংকটাপন্ন বলে মনে করেন।
মুডি অ্যানালিটিক্সের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনীতিবিদ স্টিভ কোকরেন বলেন, ১৯৯৭-৯৮ সালের এশীয় অর্থনৈতিক সংকটের সময় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যেহেতু খুব বেশি বিপদে পড়েনি। তাই তারা এরপর গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংস্কারে মনোনিবেশ করেনি, যা তাদের এ বছরের সংকট থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারত।
শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান কখনই পলিসিমেকিংয়ে উন্নতি করার চেষ্টা করেনি, যা বাংলাদেশ করেছে। বরং তারা বার বার আইএমএফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অভ্যন্তরীণ প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়ার জন্য দেনদরবার করেছে। আর তা কখনোই নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যে তাদের স্থির করতে এবং তারা তাদের পলিসিতে স্থায়ী কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি।
বিশেষভাবে, শ্রীলঙ্কা মহামারির আগে থেকেই বিভিন্ন সমস্যার পথ সৃষ্টি করেছে। দেশটি ২০১৯ সালে জনগণের কর মওকুফের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বন্ড বিক্রি ও চীন থেকে প্রচুর পরিমাণে ঋণ নেয়, যে অর্থ পরে তারা আয় করতে ব্যর্থ হয়েছে।
পাকিস্তানে ট্যাক্স কর্তন এবং রপ্তানি খাত দুর্বল হওয়ার কারণে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ শিলান শাহ বলেন, ‘পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সমস্যা হলো, তাদের ঋণের অধিকাংশই ছিল বৈদেশিক মুদ্রায় নেয়া। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী পুঁজি বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।’
সময়োপযোগী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, শক্তিশালী কর্মক্ষেত্র ও জিডিপির তুলনায় ঋণের হার কম থাকায় ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে এর অবস্থান এখনও স্থিতিশীল আছে। কিন্তু এই সংকট পুঁজি করে চীন আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার করবে বলে নয়াদিল্লি উদ্বেগের মধ্যে আছে।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ ৩ কর্মকর্তাকে আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর। এদিন দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের জিআরও এএসআই মাহবুবুর রহমান জানান, বিকেলে সাঁথিয়া থানা থেকে এনে তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় কেউ তাদের জন্য জামিন আবেদন করেননি। ফলে আদালত তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর এবং ক্যাশিয়ার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট টিম কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসে। দিনভর অডিট করে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আর্থিক অনিয়ম পান। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানায় ওই শাখার ম্যানেজার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের আটক করে সাঁথিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে জিডির ভিত্তিতে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দুদক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ-এর ট্রাস্টি বোর্ডের নতুন চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হলেন ফারুক আহমেদ।
ট্রাস্টি বোর্ডের ৬৬তম সভায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফারুক আহমেদ ২৭ এপ্রিল থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পালন করবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিপ্রাপ্ত ফারুক আহমেদের উন্নয়ন খাতে রয়েছে বিস্তৃত অভিজ্ঞতা।
তিনি এক সময় ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন এবং ঢাকায় বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জেনেভাভিত্তিক গ্যাভি, দ্যা ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স (এঅঠও)-এর বোর্ড সদস্য ছিলেন, এছাড়া তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ফারুক আহমেদ সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি (এসএমসি) এন্টারপ্রাইজের পরিচালনা পরিষদের একজন সদস্য। তিনি বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ ওয়ার্কিং গ্রুপেরও একজন সদস্য।
ফারুক আহমেদ ২০২০ সালের ১৬ মার্চ থেকে আরডিআরএস-এর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
আরডিআরএস বিশ্বাস করে, ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে সংস্থাটি দেশজুড়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখতে এবং এ সম্পর্কিত কার্যক্রমকে বেগবান করতে সক্ষম হবে। প্রেস রিলিজ
উৎসবমুখর পরিবেশে বৃহস্পতিবার উদযাপন করা হয়েছে ১৩৭তম বন্দর দিবস।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে বন্দর ভবন চত্বরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলন করেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল।
ওই সময় বোর্ড সদস্য (প্রকৌশল) কমোডর মোহাম্মদ মাহবুবুবর রহমানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পতাকা উত্তোলনকালে চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থানরত সব জলযান ও জাহাজ থেকে একনাগাড়ে এক মিনিট হুইসেল বাজানো হয়। এরপর বন্দর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল উপস্থিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে বন্দর দিবসের কেক কাটেন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ, বন্দরের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার ও অন্যান্য সংগঠনের নেতারা।
কর্ণফুলীর মোহনায় ১৩৬ বছর আগে ২৫ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর। ইংরেজ শাসনামলের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সালামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীতে জেটি নির্মাণ করেন। পরে ১৮৬০ সালে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করা হয়। ১৮৭৭ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার গঠিত হয়।
১৮৮৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি মুরিং নির্মাণ হয়। একই বছরের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার কার্যকর হয়। এরপর ১৮৯৯ থেকে ১৯১০ সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার এবং আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে যুক্তভাবে চারটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করে। ১৯১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে রেলওয়ের সংযোগ সাধন হয়।
১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মেজর পোর্ট ঘোষণা করা হয়। সেই থেকেই চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখে আসছে।
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে টানা তৃতীয় দিনের মতো কমেছে স্বর্ণের দাম। ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ভরিতে কমেছে ৬৩০ টাকা। সে হিসাবে স্বর্ণের ভরি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৬১ টাকা। আগের দিন বুধবার তা ছিল এক লাখ ১৪ হাজার ১৯১ টাকা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের দাম কমেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিট থেকে স্বর্ণের নতুন নির্ধারিত দাম কার্যকর হবে।
বাজুস এর আগে চলতি এপ্রিল মাসের ৬, ৮ ও ১৮ তারিখ তিন দফা স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ভালো মানের স্বর্ণের ভরিতে ৬ এপ্রিল ১ হাজার ৭৫০ টাকা, ৮ এপ্রিল ১ হাজার ৭৫০ টাকা ও ১৮ এপ্রিল দুই হাজার ৬৫ টাকা বাড়ানো হয়। মাঝে ২০ এপ্রিল ভরিতে ৮৪০ টাকা দাম কমানোর পরদিন ২১ এপ্রিল আবার ৬৩০ টাকা বাড়ায় বাজুস।
এবার শুরু হয় দাম কমানোর পালা। সবশেষ দাম বাড়ানোর দু’দিন পর ২৩ এপ্রিল ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে তিন হাজার ১৩৮ টাকা ও ২৪ এপ্রিল দু’হাজার ৯৯ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। আর বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ভরিতে ৬৩০ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ টানা তিন দিনে স্বর্ণের দাম ভরিতে কমেছে পাঁচ হাজার ৮৬৮ টাকা।
সোনার দামে এমন উত্থান-পতনের কারণ জানতে চাইলে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন নতুন পদ্ধতি বা পলিসি অনুসরণ করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করি। সেটি হচ্ছে বিশ্ব স্বীকৃত ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল পলিসি।
‘এতদিন আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করতাম। সেক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে যখন স্বর্ণের দাম কমত তখন আমরা কমাতাম। আর যখন বাড়ত তখন বাড়াতাম।’
তিরি আরও বলেন, ‘এখন আমরা আমাদের স্বর্ণের সবচেয়ে বড় বাজার তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট ফলো করে দর নির্ধারণ করি। এই বাজারে স্বর্ণের দাম ঘণ্টায় ঘণ্টায় উঠা-নামা করে। সেটা অনুসরণ করে আমরা নতুন দর নির্ধারণ করে থাকি। সেক্ষেত্রে দিনে দু’বারও গোল্ডের দাম বাড়ানো-কমানো হতে পারে।’
আরও পড়ুন:কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাতে সমগ্র বিশ্ব যখন টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হয়, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে টেনে তুলতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বের দরবারে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়।
যদিও একটি শ্রেণি বাজারে নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে বরাবরই সক্রিয় ছিল। তবে দূরদর্শী নেতৃত্বগুণে বিনিয়োগকারীদের অর্থের সুরক্ষা দিতে বারবার বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হতে দেননি অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
সম্প্রতি বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্বাভাবিক আচরণ করছে পুঁজিবাজার। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এ পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে বাজারকে স্থিতিশীল করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এমনকি পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে গতকাল ফ্লোর প্রাইসমুক্ত সব শেয়ারে একদিনের দর কমার নিম্নসীমা (সার্কিট ব্রেকার) ৩ শতাংশে বেঁধে দিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএসইসির সময়োপযোগী এমন পদক্ষেপ বাজারকে আবারও টেনে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সন্দেহভাজন বেশকিছু লেনদেন পরিলক্ষিত হয়েছে বাজারে। এতে বিশেষ একটি শ্রেণি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বাজারকে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করছে। কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও এতে জড়িত রয়েছে। বাজারে অবাঞ্ছিত বিক্রির আদেশ দিয়ে তারা অস্থিরতা তৈরি করছে। তাছাড়া বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে বাজারে একটা শ্রেণি স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে বাজার কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশ কিছু ট্রেডার নিজেদের মধ্যে যোগশাজসের মাধ্যমে প্রথমে কম দরে শেয়ার বিক্রি করত। পরে তাদের দেখাদেখি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যখন প্যানিক হয়ে শেয়ার বিক্রি করত তখন তারা আবার কম দরে শেয়ারগুলো কিনে নিত। এভাবে তারা নিজেদের মধ্যে শেয়ার লেনদেন করে প্যানিক সৃষ্টির মাধ্যমে ভালো শেয়ারগুলোর দাম কমাত। এই কাজে তাদের বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও সহযোগিতা করত।’
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে শেয়ারের দর কমার কথা নয়। গুটি কয়েক অসাধু ট্রেডারের কারসাজিতে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে বড় বড় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল-আমিন বলেন, ‘এক শ্রেণির অসাধু বিনিয়োগকারী চাচ্ছেন বর্তমান কমিশন বিদায় হয়ে নতুন কেউ দায়িত্বে আসুক, যাতে তারা নতুন করে আরও সুযোগ নিতে পারেন। তারাই বিভিন্ন দুর্বল শেয়ারে কারসাজি করে সুবিধা নিচ্ছেন।
‘ফোর্সড সেলের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার তারা কম দরে কিনে নিচ্ছেন। কমিশনের উচিত হবে কারসাজিকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা, যাতে তারা বারবার বাজারকে ম্যানিপুলেট করার সাহস না পায়।’
এদিকে শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক সময়ের টানা পতন ঠেকাতে আবারও শেয়ারের মূল্যসীমায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বিএসইসি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে।
ওই আদেশে বলা হয়, এখন থেকে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। বর্তমানে দরভেদে কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হতে পারে।
দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে আদেশে জানানো হয়েছে। সার্কিট ব্রেকারের এ সিদ্ধান্ত বুধবার থেকে কার্যকর করতে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আজকের এই সার্কিট ব্রেকার আরোপ বাজারে কারসাজি রোধ করবে। এটি সন্দেহভাজন লেনদেন বন্ধ করবে। আর এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ সম্পদশালী একক বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি সক্রিয় হবে বলে আশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ভালো শেয়ার বর্তমানে আন্ডারভ্যালুতে আছে। এখানে তারা বিনিয়োগ করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’
সার্কিট ব্রেকার বাজারের দরপতন ফেরাতে ব্যর্থ হলে আবারও ফ্লোর প্রাইস দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আশা করছি, আমাদের বাজারে আর কখনও ফ্লোর প্রাইস দিতে হবে না। শিগগিরই বাজার একটা স্থিতিশীল অবস্থানে ফিরবে।’
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম একদিনের ব্যবধানে আরেক দফা কমেছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ভরিতে দু’হাজার ১৩৯ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। বলা হয়েছে,
স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নতুন নির্ধারিত দাম বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট থেকে কার্যকর হবে।
বাজুস এর আগের দিন মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়ে ওই দিন থেকে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকা নির্ধারণ করে। সে হিসাবে দুদিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে কমলো ৫ হাজার ২৭৭ টাকা।
নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ১৩৯ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৯৯৫ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের ভরি ১ হাজার ৭১৪ টাকা কমিয়ে ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৩৭৭ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ হাজার ২০৯ টাকা।
অবশ্য স্বর্ণালঙ্কার কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের এর চেয়ে বেশি অর্থ গুনতে হবে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে স্বর্ণের গহনা বিক্রি করা হয়। সে সঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় নূন্যতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হবে ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৫৮ টাকা।
স্বর্ণের দাম কমানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রূপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেট ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রূপার ভরি ১ হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা আছে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের বাজারে গত বছর প্রথমবারের মতো ল্যাপটপ নিয়ে আসে ট্রেন্ডি প্রযুক্তি ব্র্যান্ড ইনফিনিক্স। ইনবুক ওয়াইটু প্লাস নামের ল্যাপটপটি দিচ্ছে চমৎকার ডিজাইন, শক্তিশালী পারফরম্যান্স ও সাশ্রয়ী দামের প্রতিশ্রুতি। অল্প সময়ের মধ্যেই প্রযুক্তিপ্রেমী শিক্ষার্থী ও এক্সিকিউটিভদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে এ ল্যাপটপ।
দেখে নেওয়া যাক কী আছে ইনফিনিক্স ইনবুক ওয়াইটু প্লাস ল্যাপটপটিতে। এর ফিচার, পারফরম্যান্স ও ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতাই বা কেমন।
ডিজাইন ও গঠন
স্লিক ও হালকা ডিজাইনের ইনফিনিক্স ইনবুক ওয়াইটু প্লাস সহজেই সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। শিক্ষার্থী ও ব্যস্ত এক্সিকিউটিভদের জন্য এ ল্যাপটপ যথার্থ। এর পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক মেটালিক ডিজাইন স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে। একই সঙ্গে দেয় প্রিমিয়াম অনুভূতি। স্লিক প্রোফাইল ও প্রাণবন্ত ডিসপ্লের সঙ্গে যুক্ত সরু বেজেল ল্যাপটপটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। ফলে বাজারের একই ধরনের দামি ল্যাপটপের সমকক্ষ হয়ে ওঠে ওয়াইটু প্লাস।
তা ছাড়া এর মসৃণ এজি গ্লাস টাচ প্যানেলের কারণে সিল্কি-স্মুথ ও স্থায়ী টাচের অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। ১.৫ মিলিমিটার কি ট্র্যাভেল এবং ব্যাকলাইটিংযুক্ত রেসপনসিভ কি-বোর্ড টাইপিংকে করে তোলে সহজ ও আরামদায়ক। তাই কম আলোতেও টাইপ করতে কোনো সমস্যা হয় না।
পারফরম্যান্স ও প্রোডাক্টিভিটি
১১তম প্রজন্মের কোর আই৫ প্রসেসর ও ৮ জিবি র্যাম রয়েছে ইনফিনিক্স ওয়াইটু প্লাসে। স্টোরেজের প্রয়োজন মেটাতে এতে আছে ৫১২ জিবি এনভিএমই পিসিআইই এসএসডি। প্রোডাক্টিভিটি সফটওয়্যার, ওয়েব ব্রাউজ করা কিংবা কনটেন্ট স্ট্রিম করাসহ সব ধরনের উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন অ্যাপ্লিকেশন চালানো যায় খুব সহজেই। এর ইন্টিগ্রেটেড ইন্টেল ইউএইচডি গ্রাফিকস সাধারণ গেমিং ও মাল্টিমিডিয়া এডিটিংয়ের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় গ্রাফিকস পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে। উইন্ডোজ ১১ পরিচালিত ইনফিনিক্স ইনবুক ওয়াইটু প্লাসের অপারেটিং সিস্টেম সবার পরিচিত ও ব্যবহার করা সহজ।
ডিসপ্লে ও মাল্টিমিডিয়া অভিজ্ঞতা
উজ্জ্বল রং ও ওয়াইড অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে স্পষ্ট ও পরিষ্কার ভিজ্যুয়াল দেয় ১৫.৬ ইঞ্চি ফুল এইচডি আইপিএস ডিসপ্লেযুক্ত ইনবুক ওয়াইটু প্লাস। ৮৫ শতাংশ স্ক্রিন-টু-বডি রেশিওর সঙ্গে চমৎকার মাল্টিমিডিয়া অভিজ্ঞতার জন্য ডিসপ্লেটি দারুণ। কাজেই আপনার প্রিয় নেটফ্লিক্স সিরিজ দেখা কিংবা ফটো এডিট করা— সবই হবে স্বাচ্ছন্দ্যে।
ল্যাপটপটিতে আছে ডুয়েল এলইডি ফ্ল্যাশ ও এআই নয়েজ ক্যান্সেলেশন প্রযুক্তিযুক্ত ১ হাজার ৮০ পিক্সেলের ফুল এইচডি+ ক্যামেরা। এর ফলে ভিডিও কলের অভিজ্ঞতা হবে আরও উন্নত।
ব্যাটারি লাইফ ও চার্জিং
ইনবুক ওয়াইটু প্লাসের ৫০ ওয়াট-আওয়ার ব্যাটারি ক্যাপাসিটি কোনো চার্জ ছাড়াই প্রতিদিনের কাজে আট ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাকআপ দিতে সক্ষম। পাশাপাশি এর ৪৫ ওয়াট টাইপ-সি পোর্টযুক্ত চার্জারে ডিভাইসটি দ্রুত ও সহজেই চার্জ করা যায়। ফলে ভারী চার্জার বহনের প্রয়োজন হয় না।
দাম
ল্যাপটপটির বর্তমান বাজারমূল্য ৫৮ হাজার ৯৯০ টাকা। অনুমোদিত ইনফিনিক্স রিটেইলার থেকে ল্যাপটপটি কেনা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য