সংকট উত্তরণে অর্থনীতিবিদরা ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়ানোর পরামর্শ দিলেও গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার তা নাকচ করে দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘মহামারি করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় ব্যাংকঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দেয়া যাচ্ছে না। কারণ এখন সুদহারের এক অঙ্কের (৯ শতাংশ) নির্দেশনা তুলে দিলে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিঘ্নিত হবে সরবরাহ। তাই লেন্ডিং ক্যাপ (ঋণের সুদহার) তুলে নেয়া হবে না।’
রাজধানীর মিরপুরে শনিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ‘নবম বার্ষিক ব্যাংকিং কনফারেন্স’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন গভর্নর।
তিনি বলেন, ‘গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর পরই আমি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সমস্যা ও সম্ভাবনা জানার চেষ্টা করেছি। এখন যে সমস্যা (ডলার সংকট) দেশে বিরাজ করছে এটি বেশিদিন থাকবে না। সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী ধারাও নিম্নমুখী হবে।’
বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য ও আমেরিকান মুদ্রা ডলারের দাম বেড়ে গেছে। এর প্রভাবে বেড়েছে খাদ্য, ভোগ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। চাপে পড়েছে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তসহ নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে চাপে আছে প্রায় সব দেশ। তারা মুদ্রা সরবরাহ কমাতে সুদহার বাড়ানোর ওপরই মূলত ভরসা করছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে সুদের হার কয়েক দফা বাড়িয়েছে। ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক (ইসিবি) বাড়াচ্ছে একটু ধীরগতিতে। রাশিয়া বাড়িয়েছে। বড় অর্থনীতির মধ্যে কেবল জাপানই শূন্য সুদের হার বজায় রেখেছে। আর ৮০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে পুরো বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে সুদের হার কমিয়েছে তুরস্ক।
সুদের হার যে কয়টি দেশ বাড়ায়নি, তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশও। এখানে ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশই রেখে দেয়া হয়েছে। আর এই সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির জনগোষ্ঠী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গাড়ি, দামি ফ্ল্যাট, স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন বিলাসপণ্য কিনছেন। ঋণের সুদ কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও দেদার ব্যাংকঋণ নিচ্ছেন। ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ ঋণ যাচ্ছে, আমানত আসছে তার চেয়ে কম। ফলে দেশে মূলত মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যাচ্ছে।
২০২০ সালের এপ্রিলে ব্যাংকঋণের সুদহার নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় আর করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছিল একই সময়ে। ওই সময়ে সব ধরনের ভ্রমণ বন্ধ হয়ে যায়। কেনাকাটাও ছিল কম। এ সময় আমানত বাড়ে। ব্যবসায়ীরাও নতুন বিনিয়োগ বন্ধ রাখেন। বরং কম সুদের ঋণ ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করে উদ্যোক্তাদের। আবার এই ঋণ নিয়ে অনেকেই অপব্যবহার করেন। ব্যাংকেরও মুনাফা বাড়ে, কারণ নতুন করে ঋণখেলাপি হওয়া স্থগিত রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে গত বছর থেকে করোনার প্রকোপ কমে এলে ঋণ নেয়া বাড়তে থাকে। আমানতের সুদহার কমে এলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছরের আগস্টে নির্দেশনা দেয়, ব্যক্তির মেয়াদি আমানতের সুদহার তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির কম হবে না। এরপরও ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি আগের চেয়ে কমে যায়, এর বিপরীতে ঋণ বাড়ে বেশি। গত জুনে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা আগের ৪৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
করোনা মহামারির ধাক্কা কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে ওলোটপালট করে দিয়েছে। তার প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিও সংকটে পড়েছে।
এ অবস্থায় অর্থনীতিবিদেরা ব্যাংকঋণের সুদের হারের সীমা তুলে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন কিছুদিন ধরে।
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর জুলাই মাসের প্রথম দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডলারের বিপরীতে টাকার মান অনেক কমে গেছে। এখন যে করেই হোক টাকাকে শক্তিশালী করতে হবে। আর সেজন্য ছয় মাস-নয় মাস বা এক বছরের জন্য হলেও ঋণের সুদের হার বাড়াতে হবে। এতে বেসরকারি খাত কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে ভালো ফল দেবে।’
রাশিয়া সুদের হার বাড়িয়ে বেশ ভালো ফল পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেনও একই পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে গভর্নর রউফ তালুকদার প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অনুষ্ঠানে বলেন, ‘সুদহার সীমা তুলে দিলে অর্থ খরচ আরও বাড়বে উদ্যোক্তাদের। পাশাপাশি ব্যাংকেরও তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ বৃদ্ধি পাবে। আমরা উদ্যোক্তাদের কম খরচে ঋণ দিতে চাই। যাতে উৎপাদন খরচ কমে আসে।’
পরিচালকদের হস্তক্ষেপে ব্যাংকেরই ক্ষতি
অনুষ্ঠানে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার কাজে পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ করতে মানা করেছেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
তিনি বলেন, পরিচালকদের জন্য নির্দিষ্ট দায়িত্বের বাইরে হস্তক্ষেপ করলে তা ব্যাংকের জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গভর্নর লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ব্যাংকের পরিচালক ও ব্যবস্থাপনার কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ও কাজ সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী তারা কাজ করবেন। পরিচালকরা ব্যবস্থাপনার কাজ করবেন না। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করে যাবেন।’
দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকের মালিকদের সংগঠন এবং ব্যাংকের নির্বাহীদের সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে এ বার্তা দিয়েছেন বলে জানান নতুন গভর্নর রউফ তালুকদার।
সুশাসনের উপর জোর দিতে গিয়ে গর্ভনর বলেন, ‘ব্যাংক শুধু মুনাফাই করবে না, সুশাসনের চর্চাও অব্যাহত রাখবে, নইলে পুরো খাতটিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে দেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার আগ্রাসনে বিশ্বে সরবরাহ ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর জেরে দেশে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারও বেশ চাপে পড়েছে।
এ পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন কোনো উদ্যোগ নেবে কি না- এ প্রশ্নে গভর্নর বলেন, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে তিনি আশাবাদী।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বড় ধরনের উদ্বেগ নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘এখন যে মূল্যস্ফীতি, তা কিন্তু আমদানির কারণে … তেল ও সার কিনে আনতে হয়। তেলের দাম বেড়েছে। সার বিকল্প উপায়ে কম দরে কেনার চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যে পদ্ধতিতে এগোচ্ছে …ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ ভালোর দিকে আছে।’
সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যে দিয়ে পার করছে। ডলারের দাম ব্যাংকেই ১১০ টাকায় আর খোলা বাজারে ১২০ টাকায় উঠেছিল।
ডলার লেনদেনে অতিরিক্ত মুনাফা করায় সম্প্রতি দেশীয় ও বহুজাতিক ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে পরবর্তী কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে- তা জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষ হলে কথা বলব।’
বৈদেশিক মুদ্রাবাজার যে বেশ চাপে রয়েছে, তা উঠে এসেছে এবারের বার্ষিক ব্যাংকিং কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবিবের মূল প্রবন্ধে।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির বর্তমান চিত্রে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যাপ্ত উদ্যোগ না নিলে বাজেটে নেয়া বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন দুরূহ হয়ে দাঁড়াবে।’
এ প্রসঙ্গে গভর্নর রউফ তালুকদার বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ সরবরাহ বাড়িয়ে বৈশ্বিক এ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যে উদ্যোগ নিচ্ছে, তা আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।’
মূলপ্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, মুদ্রাবাজারে সরবরাহ অর্থ সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে মুদ্রানীতিতে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির চাপে ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়া মানেই অর্থ পরিশোধ কমে যাবে ব্যাংকে। যার ফলে খেলাপির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্যে বিআইবিএম এর মহাপরিচালক ড. আকতারুজ্জামান বলেন, ‘বার্ষিক ব্যাংকিং কনফারেন্স ব্যাংকারদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করে দেয় নিজেদের কাজের অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ পরস্পরের সঙ্গে বিনিময় করার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেয়া নীতিমালার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণও উঠে আসে এখানে।’
প্রতি বছর বার্ষিক ব্যাংকিং কনফারেন্সের আয়োজন করে বিআইবিএম। এতে দেশি-বিদেশি ব্যাংকাররা অংশ নেন। ব্যাংক পরিচালনায় বিষয়ভিত্তিক প্লেনারি সেশনে একাধিক প্রেজেন্টেশন পেপার উপস্থাপন করা হয়।
কোভিড মহামারির কারণে গত ২০২০ ও ২০২১ সালে এ আয়োজন হতে পারেনি। দুই বছরের বিরতির পর এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
দুই দিনব্যাপী এবারের আয়োজনে ভারত, মালয়েশিয়া ও নেপাল থেকে ব্যাংকাররা অংশ নিচ্ছেন অনলাইনে।
আরও পড়ুন:রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে অর্থবছরের শেষ দিন আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের সব ব্যাংকের শাখাগুলোতে ব্যাংকিং লেনদেন চলবে।
সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৩০ জুন সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরের চেয়ে এবার বেশি রাজস্ব আদায় হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।
সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে নারী কেলেং্কারীসহ দুর্নীতি, অর্থপাচার, শেয়ার কারসাজি ও যৌন হয়রানিসহ একাধিক অভিযোগ এনেছেন ব্যাংকের এক গ্রাহক
গতকাল বুধবার (২৫ জুন) দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এসব অভিযোগ তুলে লিখিত আবেদন জমা দেন শিমুল সর্দার নামে এক গ্রাহক। একই অভিযোগে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং আর্থিক খাত বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার কাছেও চিঠি পাঠিয়েছেন।
দুদকে দেওয়া ১০ পাতার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আলমগীর কবির দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ— তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নামে-বেনামে ঋণ দিয়েছেন, চলতি ঋণের সুদ মওকুফ করেছেন এবং অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে একক সিদ্ধান্তে ঋণ অনুমোদন করেছেন। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে বর্তমানে সাউথইস্ট ব্যাংকের হাজার কোটি টাকার আমানত ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবির ব্যাংকটির অর্থ সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনায় একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেছিলেন। ব্যাংকের প্রতিটি বড় সিদ্ধান্ত—যেমন নতুন শাখা খোলা, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, বুথ বসানো, সফটওয়্যার কেনা ইত্যাদিতে তার একক নিয়ন্ত্রণ ছিল। এসব কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই ছিল তার আত্মীয়স্বজন বা ঘনিষ্ঠজনদের মালিকানাধীন।
সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির গুরুতর অভিযোগও তুলেছেন অভিযোগকারী। অভিযোগে বলা হয়, আলমগীর কবির একাধিক নারী কর্মকর্তাকে নিজের অফিসে ডেকে নিয়ে তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে হয়রানি করেছেন। এসব ঘটনার কিছু প্রমাণ ইতোমধ্যে ভুক্তভোগীদের কাছে রয়েছে এবং তারা আইনগত পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন। এছাড়া তিনি নিজের পছন্দের কিছু নারীকে ব্যাংকের অধীনস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘গ্রিন স্কুল’ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড’-এ চাকরি দিয়েছেন বলেও অভিযোগে জানান।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, শেয়ার কারসাজির অভিযোগে আলমগীর কবিরকে ইতোমধ্যে ১২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তার নেতৃত্বে সাউথইস্ট ব্যাংকের ২৩২ কোটি টাকা বে লিজিংয়ে বিনিয়োগ করা হয়, যা বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৪-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড বর্তমানে আর্থিকভাবে এতটাই দুর্বল যে, প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকের পাওনা ফেরত দিতে পারছে না।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বে লিজিংয়ের পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়ায় ১৭২ কোটি টাকায়। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান সুরাইয়া বেগম—যিনি আলমগীর কবিরের স্ত্রী—তাঁর মাধ্যমে ব্যাংকটির সঙ্গে বে লিজিংয়ের লেনদেন ‘ব্যাংকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে লেনদেন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। এতে করে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ২৭ (১-খ) ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, আলমগীর কবির ব্যাংকের ফাউন্ডেশন ও শিক্ষা বিভাগের তহবিল থেকেও অর্থ তুলে এনে বে লিজিংয়ে সরবরাহ করেছেন। ব্যাংকের মেয়াদি আমানত ও কলমানির অর্থ আটকে আছে ওই প্রতিষ্ঠানটিতে। বারবার চিঠি পাঠিয়েও কোনো অর্থ ফেরত পায়নি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। শুধু মূলধন নয়, প্রতিষ্ঠানটি সুদও পরিশোধ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর ২৯ তম বার্ষিক সাধারন সভা ২৪ জুন ২০২৫ইং তারিখে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ২০২৪ইং সালের নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন এবং ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন করা হয়। পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জনাব মোস্তফা কামাল সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন কোম্পানীর পরিচালক মিসেস বিউটি আক্তার, ব্যারিষ্টার হাসান রাজিব প্রধান, জনাব মনজুর মো: সাইফুল আজম এফসিএমএ, মিসেস তাহমিনা বিনতে মোস্তফা, জনাব তায়েফ বিন ইউসুফ, মিসেস তানজিমা বিনতে মোস্তফা, জনাব ওয়াশিকুর রহমান, জনাব তানভীর আহমেদ মোস্তফা , মিসেস সামিরা রহমান, মিসেস তাসনিম বিনতে মোস্তফা, জনাব মোঃ বেলায়েত হোসেন ভূইয়া, জনাব মোহাম্মদ সাইদ আহমেদ রাজা এবং মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সানা উল্লাহ, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা শেখ বিল্লাল হোসেন এফসিএ, কোম্পানীর অডিটর এ.কে.এম. আমিনুল হক এফসিএ, সিনিয়র পার্টনার মেসার্স এ.হক এন্ড কোং চাটার্ড একাউন্টেন্টস এবং আবদুর রহিম মিয়া, এফসিএ, পার্টনার মেসার্স ইসলাম জাহিদ এন্ড কোং, চাটার্ড একাউন্টেন্টস, মোঃ ফিরোজুল ইসলাম সিনিয়র এক্সিঃ ভাইস প্রেসিডেন্ট (অর্থ ও হিসাব) ও কোম্পানী সচিব মো: মাসুদ রানা এবং কোম্পানীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ারহোল্ডার সভায় সংযুক্ত ছিলেন।
মেঘনা ব্যাংক পিএলসি’র ১২তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ২৩ জুন ২০২৫, সোমবার রাজধানীর মহাথালীতে অবস্থিত ম্যাডোনা টাওয়ারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের সম্মানিত চেয়ারপার্সন মিসেস উজমা চৌধুরী।
বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান জনাব তানভীর আহমেদ, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান জনাব মো. আলী আক্তার রেজভী, এফসিএ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান জনাব মোহাম্মদ মামুনুল হক। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক জনাব রজব আলী, জনাব এম. নজরুল ইসলাম এবং জনাব হাবিবুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব কাজী আহ্সান খলিল এবং ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি সচিব জনাব সজিব কুমার সাহা, এফসিএ এবং ব্যাংকের সম্মানিত শেয়ারহোল্ডারবৃন্দ।
সভায় ব্যাংক নিজেদের পরিষেবা বৃদ্ধি, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি প্রচারণা, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখা এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
সম্প্রতি সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি. বরিশাল জেলায় অবস্থিত বিভিন্ন স্কুল থেকে আগত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকদের নিয়ে লিড ব্যাংক হিসেবে ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা এর নির্দেশনায় “স্কুল ব্যাংকিং কনফারেন্স-২০২৫” আয়োজন করেছে।
উক্ত কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব ইমতিয়াজ আহমেদ মাসুম, নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব), বাংলাদেশ ব্যাংক, বরিশাল এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব আবিদুর রহমান চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব), সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি., জনাব মোঃ আলী হোসেন, অতিরিক্ত পরিচালক, ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা, জনাব মোঃ হারুনুর রশিদ, জেলা শিক্ষা অফিসার, বরিশাল এবং সম্মানিত অতিথি জনাব মোঃ মাহাবুব-উল আলম, উপপরিচালক, ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা।
উক্ত কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন সাউথইস্ট ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মোহাম্মদ রাশেদুল আমিন। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মধ্য হতে উক্ত কনফারেন্সে জাহানারা ইসরাইল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বরিশাল থেকে রাবিয়া কামাল (দশম শ্রেণী) এবং বরিশাল জেলা স্কুল, বরিশাল থেকে মোঃ হাসনাইন বিন কবির (দশম শ্রেণী) বক্তব্য রাখেন।
উক্ত কনফারেন্সে বরিশাল জেলার ৪৫ টি তফসিলী ব্যাংকের ৪৫ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্কুল থেকে ১৮০ জন শিক্ষার্থী ও ৪৫ জন শিক্ষক এবং অতিথি সহ সর্বমোট ৩৫০ জন অংশগ্রহণ করেন। কনফারেন্সে বক্তারা শৈশব থেকেই সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও দায়িত্বশীল অর্থ ব্যবস্থাপনার অভ্যাস গড়ে তোলা ও আধুনিক ব্যাংকিং প্রযুক্তির সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের পরিচিত করানোর লক্ষ্যে স্কুল ব্যাংকিং এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন।
এছাড়াও স্কুল ব্যাংকিং এর উপর নির্মিত ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী, র্যালী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিক্ষার্থীদের জন্য কুইজ প্রতিযোগিতা আয়োজনের মধ্য দিয়ে কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
১৬ জুন, ২০২৫ তারিখে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি. এর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের ৪০তম সভা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়, গুলশান-১, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব মুঃ ফরীদ উদ্দীন আহমদ। সভায় পর্ষদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান জনাব মোঃ হুমায়ুন কবীর, স্বতন্ত্র পরিচালক ড. শহিদুল ইসলাম জাহীদ, জনাব মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জনাব মোঃ হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সর্বজনাব শফিউদ্দিন আহমেদ এবং মোহাম্মদ ইকবাল কার্যপোলক্ষ্যে সভায় যোগদান করেন। সভায় ব্যাংকের ব্যবসা বাণিজ্য, আমানত ও রেমিট্যান্স সংগ্রহ বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ আদায়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।
জনতা ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান ১৫ জুন রোববার জনতা ব্যাংক স্টাফ কলেজ ঢাকা কর্তৃক আয়োজিত ২৫ (পঁচিশ) দিন ব্যাপী ফাউন্ডেশন কোর্স ফর অফিসার্স (ব্যাচ ০৫/২০২৫) শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স উদ্বোধন করেন। উক্ত প্রশিক্ষণ কোর্সে জনতা ব্যাংকের ৫০ জন সিনিয়র অফিসার অংশগ্রহণ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনতা ব্যাংক স্টাফ কলেজের ডিজিএম-স্টাফ কলেজ ইনচার্জসহ অন্যান্য নির্বাহী ও অনুষদ সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য