দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে সরবরাহ কমিয়ে দেয়া। ফলে বাজারে পণ্যের সংকট সৃষ্টি। আর ঘাটতির কারণে বেড়ে যাচ্ছে দাম।
ভোজ্যতেলের বাজারে এমন চিত্র বরাবরের। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বাড়াতে আবারও সেই পুরোনো কৌশলের আশ্রয় নিতে চলেছেন ব্যবসায়ীরা।
সরকারের কাছে সয়াবিন ও পামওয়েল তেলের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে আমদানি ও উৎপাদক সমিতি। এবার তাদের যুক্তি টাকার বিপরীতে ডলারের উচ্চ মূল্য। দাম বৃদ্ধির এই প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে ট্যারিফ কমিশন। কিন্তু সময় দিতে রাজি নয় কোম্পানিগুলো।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, মিরপুরের শেওড়াপাড়াসহ অলিগলির দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে বাজারে তেলের সংকট হয়েছে। কোম্পানির প্রতিনিধিরা পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করছেন না।
দোকানিরা বলছেন, টাকা দিলেও তেলের চাহিদা নিচ্ছে না সব কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি। ফলে ক্রেতারা চাহিদামতো তেল পাচ্ছে না। কোনো কোনো দোকানে আগে সরবরাহ করা তেল থাকলে তা কিনতে পারছেন কিছু ক্রেতা। তবে চাহিদার তুলনায় তা কম।
বাজার পরিস্থিতি
রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে মদিনা স্টোরের দোকানি আলতাফ হোসেন জানান, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তেলের সরবরাহ নেই। দোকানে সরিষার তেল ছাড়া কোনো সয়াবিন তেল নেই।
তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ কোম্পানির কোনো প্রতিনিধিকে এখন দেখা যায় না। দু-একজনের দেখা পেলেও তাদের বক্তব্য- দাম বাড়বে, তাই তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না।’
জামাল নামে আরেক দোকানি বলেন, ‘আগের কেনা সামান্য তেল আছে। তা-ও শেষ হয়ে যাবে। তেল চাইলে দেয়া হচ্ছে না। যেসব কোম্পানি বেশি পরিমাণ তেল সরবরাহ করে, তারাই চাহিদা নিচ্ছে না। ক্রেতারা পাঁচ লিটারের ক্যান চান। অথচ দোকানে এক ও দুই লিটারের মাত্র কয়েক বোতল ভোজ্যতেল আছে।’
মিরপুর ৬০ ফুট রোডের জহির জেনারেল স্টোরের জসিম জানান, ‘দোকানে তেল নেই। কোম্পানির লোকদের পাওয়া যায় না। দুই-একজনকে পেলেও তার সরবরাহের বিপরীতে অগ্রিম টাকা নেয় না। বলে, কোম্পানি থেকে তেল দেয়া হচ্ছে না।
‘বাধ্য হয়ে ক্রেতারা রাইস ব্রান অয়েল, সরিষা ও সানফ্লাওয়ার তেল নিচ্ছে। কিন্তু সাধারণ ক্রেতারা এত দামি তেল কিনতে পারছে না। এ নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডাও হচ্ছে।’
কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, ‘তেলের সরবরাহ থাকলেও আগের মতো না। দুই-একটি কোম্পানি তেল দিলেও কমিশন কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে বোতলের গায়ে লেখা দামের চেয়ে একটু ছাড় দিয়ে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।’
দামবৃদ্ধির প্রস্তাব
বিশ্ববাজারে দাম ক্রমান্বয়ে কমে আসায় দেশে ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করা হয় ১৮ জুলাই। এক মাস না যেতেই নতুন করে আবার দামবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য পতনের উল্লেখ করে তেলের দামবৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে ভোজ্যতেল উৎপাদক সমিতি।
বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনে পাঠানো প্রস্তাবে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০, বোতলজাত ২০৫ ও পাঁচ লিটার তেলের দাম ৯৬০ টাকা করার কথা বলা হয়।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বোতলজাত সয়াবিন লিটারে ২০ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৪ টাকা ও পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলে ৫০ টাকা দাম বৃদ্ধির কথা বলা হয়।
পর্যালোচনা করছে ট্যারিফ কমিশন
সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা বলেন, ১৮ জুলাই দাম সমন্বয়ের পর আবার ১৫ দিনের মাথায় দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব হাস্যকর।
‘দাম নির্ধারণ করা হয় এক মাসের জন্য। কিন্তু কোম্পানিগুলো নেই নিয়ম মানছে না। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম দ্রুত কমছে। আবার ডলারের বিপরীতে কমছে টাকার মান। সবদিক পর্যালোচনা শেষে সবশেষ যে মূল্য নির্ধারণ হয় তখনও ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখীই ছিল।’
ট্যারিফ কমিশন সূত্র জানায়, ডলারের তেজিভাব কমছে। তবে আগের তুলনায় এখনও বেশি। আমদানি পর্যায়ে ডলারের দাম এবং বিশ্ববাজারে তেলের দাম বিবেচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবে ট্যারিফ কমিশন। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ক্রেতার নাভিশ্বাস
প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম চড়া। বাজারে গিয়ে ক্রেতার নাভিশ্বাস উঠেছে। ভোজ্যতেল যেহেতু ক্রেতার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, তাই এই পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে কেনার ক্ষমতা হারাচ্ছে ভোক্তা। পড়ছে বাড়তি চাপ।
ক্রেতারা বলেন, সংকট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধি এর আগেও করা হয়েছে। এবারও একই কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। ক্রেতাদের স্বার্থ দেখবে কে?
হাতিরপুল বাজারে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতা আলিম উদ্দিন বলেন, ‘বেতন বাড়ছে না। অথচ সবকিছুর দাম বাড়ছে। ভয়াবহ এক সংকট সামনে এসেছে। আগে সংসারে যে পরিমাণ তেল প্রয়োজন হতো, এখন তা প্রায় অর্ধেক কমিয়েও সামাল দেয়া যাচ্ছে না।’
শেওড়াপাড়া বাজারের সানজিদা খাতুন বলেন, ‘তেল পাওয়া যাচ্ছে না। পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেল দিতে পারছে না। অগত্য দুই লিটার নিতে হলো।’
আলিম স্টোরে তেল কিনতে আসা ক্রেতা আমিনুল জানান, ‘তিনটি দোকান ঘুরে এক দোকানে তেল পাওয়া গেছে। তাও বোতলের গায়ে উল্লেখ থাকা দামের চেয়ে ১০ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। তেল কিনতে পকেটের টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে।’
সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা
ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, তরল পদার্থ পরিমাপের একক হিসেবে লিটার ব্যবহৃত হলেও ভোজ্যতেলের পাইকারি বাজারে মণ ও খুচরা বাজারে কেজিতে বিক্রির প্রবণতা রয়ে গেছে। এতে সাধারণ ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খোলা ভোজ্যতেলের মিলগেট মূল্য অতিমাত্রায় পরিবর্তনশীল হওয়ায় সেকেন্ডারি মার্কেটে মূল্য প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। তাই খোলা ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। খোলা ভোজ্যতেলে সেকেন্ডারি বা পাইকারি বাজারে প্রবেশের পর এই তেলের কোনো ব্রান্ডিং থাকে না।
সরকারের এই প্রতিষ্ঠান মনে করে, খোলা ভোজ্যতেল সরবরাহের ক্ষেত্রে পরিশোধনকারী মিলগুলো সরবরাহ আদেশে দেয়া মেয়াদ ১৫ দিন উল্লেখ করলেও তা ৩ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত ছাড়িয়ে গ্রহণ করা হয়। এতে ভিন্ন ভিন্ন মূল্যের এসও (চাহিদাপত্র) বাজারে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন:বিদেশে আয় করে সেদেশের মুদ্রা দেশের ব্যাংকগুলোতে আমানত হিসেবে রাখা যাবে। শুধু তাই নয়, ওই আমানত থেকে মিলবে মোটা অংকের সুদও। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন এক্সেচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্ট-এফইপিডি থেকে জারি করা এক সার্কুলারে এমনটি জানানো হয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরেই আলোচনায় রয়েছে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার বিষয়টি। হিসাবে দেখা যাচ্ছে রেকর্ড পরিমাণ কর্মী বিদেশে গেলেও সে তুলনায় রেমিট্যান্স আসছে না। শোনা যায়, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে অবৈধ হুন্ডিতে পাঠাতে উৎসাহ বাড়ছে প্রবাসীদের। আবার অনেক প্রবাসীর অভিযোগ, তাদের আমানত বিনিয়োগের কোনো ভালো পরিবেশ নেই দেশে। তাই অনেকে বিদেশেই তাদের অর্জিত অর্থ জমা রাখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ইতোপূর্বে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানেও রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা উদ্যোগের কথা বলেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রবাসীদের জন্য এমন সুযোগ দেয়া হলো। আশা করা হচ্ছে, এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নিয়মে রেমিট্যান্স খরা কাটবে।
নতুন নিয়মে প্রবাসী, দেশি-বিদেশি এমনকি বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানও ডলার কিংবা পাউন্ডসহ অন্য বিদেশি মুদ্রায় আমানত জমা করতে পারবেন দেশের ব্যাংকে। জমার বিপরীতে মেয়াদ অনুযায়ী সর্বোচ্চ প্রায় ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদও পাওয়া যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, ব্যাংকের অফশোর ইউনিটের ফরেন কারেন্সি (এফসি) একাউন্টের মাধ্যমে এসব ডিপোজিট সংগ্রহ করতে পারবে দেশের ব্যাংকগুলো। সেক্ষেত্রে মুদ্রাভিত্তিক রেফারেন্স রেটের সঙ্গে মার্কআপ যোগ করে সুদের হার নির্ধারণ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মো. সারওয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এই উদ্যোগের ফলে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে। গ্রাহকরা দেশের ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা রাখলে বিদেশের চেয়েও বেশি সুবিধা পাবেন। শুধু তাই নয়, তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী আমানত ও মুনাফা বিদেশেও পাঠাতে পারবেন। তবে এফসি হিসেবে আমানত করা অর্থ অবশ্যই বৈধভাবে বিদেশে অর্জিত অর্থ হতে হবে।
হিসাবে দেখা গেছে, কোনো গ্রাহক তিন বছর মেয়াদে ডিপোজিট করলে সুদ পাবেন প্রায় ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। গ্রাহকদের সংশ্লিষ্ট কারেন্সিতে সুদ পেমেন্ট করা হবে বলেও নিশ্চিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নতুন সুবিধা অনুযায়ী কোনো প্রবাসী চাইলে তার নিজের অথবা পরিবারের অন্য কারও নামে এফসি একাউন্ট খুলে ফরেন কারেন্সি জমা করতে পারবেন। মেয়াদ শেষে সুদসহ জমা থাকা ফরেন কারেন্সি দেশে ব্যবহার করা যাবে। চাইলে বিদেশেও নিয়ে যাওয়া যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৩৩ কোটি ডলার; এটা সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। অবশ্য পরের মাস অক্টোবরেই রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা দেখা গেছে। এই মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ১৯৮ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
সব মিলে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর এই চার মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৬৮৮ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, যা তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ কম।
আরও পড়ুন:ডলারের দাম আরও ২৫ পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকগুলো। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কেনায় ডলারের দাম পড়বে ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা। আর আমদানিতে পড়বে ১১০ টাকা ২৫ পয়সা।
বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) বুধবার অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা কার্যকর হবে আগামী রোববার থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠন দুটি।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কিনতে ডলারের দাম হবে সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা, যা আগে ছিল ১১০ টাকা। আর আমদানি দায় মেটাতে ডলারের দাম নেয়া যাবে ১১০ টাকা ২৫ পয়সা, আগে যা ছিল ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।
প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে সরকারের ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংকও সমপরিমাণ প্রণোদনা দিতে পারবে। ফলে প্রবাসী আয় পাঠালে ডলারপ্রতি সর্বোচ্চ ১১৫ টাকার কিছু বেশি পাবেন উপকারভোগীরা।
ডলারের জোগান ও চাহিদার ওপর নির্ভর করে সময় সময় বাফেদা ও এবিবি বিদেশি মুদ্রাটির বিনিময় হার নির্ধারণ করে আসছে। এ দুটি সংগঠন মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকসংশ্লিষ্ট। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে তারা সময় সময় ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করছে।
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আরেক দফা বাড়ল। টানা ষষ্ঠ দফা বৃদ্ধির তিন দিনের ব্যবধানে এবার সপ্তম দফায় ভরিতে বাড়ানো হয়েছে এক হাজার ৭৫০ টাকা। সে হিসাবে সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৮৭৫ টাকা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এনামুল হক ভুইয়া লিটনের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়।
দেশের বাজারে আর কখনোই স্বর্ণের দাম এমন উচ্চতায় ওঠেনি। এ নিয়ে টানা সপ্তমবারের মতো দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হলো।
দেশে এর আগে ২৭ অক্টোবর এবং ৬, ১৯ ও ২৬ নভেম্বর টানা চার দফা স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। এর মধ্যে সবশেষ ২৬ নভেম্বর ২২ ক্যারেটের স্বর্ণে ভরিতে বাড়ানো হয় এক হাজার ৭৪৯ টাকা। সে হিসাবে ওই পর্যায়ে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়ায় এক লাখ আট হাজার ১২৫ টাকা।
এছাড়া ১৯ নভেম্বর ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দামে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়ানো হয়। এতে এই মানের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৬ হাজার ৩৭৬ টাকা। সেটিও ছিল দেশের বাজারে স্বর্ণের দামে সর্বোচ্চ।
ব্যক্তি করদাতাদের ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়সীমা দুই মাস বাড়ানো হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত ৩০ নভেম্বর থেকে বাড়িয়ে রিটার্ন জমার শেষ সময় ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এছাড়া কোম্পানি করদাতাদের রিটার্ন জমার মেয়াদ ১৫ জানুয়ারি থেকে দেড় মাস বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে।
বুধবার এক প্রজ্ঞাপনে এই ঘোষণা দেয় এনবিআর।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪০ লাখ ব্যক্তির আয়কর রিটার্ন জমার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এনবিআর। তবে এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক রিটার্নও জমা পড়েনি।
এনবিআরে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১৯ লাখের মতো নাগরিকের রিটার্ন জমা পড়েছে। সারা বছরের যেকোনো সময় রিটার্ন জমা দেয়া যায়। তবে নির্দিষ্ট সময়ের পর সংশ্লিষ্ট আয় বছরের রিটার্ন দাখিল করতে গেলে ৪ শতাংশ জরিমানা দিতে হয়।
এ বছর কোনো আয়কর মেলার আয়োজন করা হয়নি। এর পরিবর্তে এনবিআর করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে সহায়তা করার জন্য দেশব্যাপী কর অঞ্চল অফিস চত্বরে বিশেষ সহায়তা পরিষেবার আয়োজন করেছে।
এক্ষেত্রে করদাতাদের যে বিনিয়োগ রেয়াত পাওয়ার কথা ছিল, সেটিও তারা পাবেন না। ফলে তাদের আরও বেশি কর দিতে হবে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্র শ্রম অধিকারের বিষয়ে সবশেষ যে নীতি প্রকাশ করেছে তা নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস উল্লেখ করেছে। বলা হয়েছে, বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অগ্রাধিকারের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া উচিত।
বাংলাদেশ দূতাবাসের মন্ত্রী (বাণিজ্য) মো. সেলিম রেজা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, ‘শ্রম অধিকার সংক্রান্ত যে স্মারকলিপি যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশকে টার্গেট করা হতে পারে।’
চিঠির অনুলিপি অনুযায়ী, শ্রম অধিকার বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের এ নীতি আরেকটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মেমোরেন্ডামটি সব দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য একটি বৈশ্বিক নীতি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তবু বাংলাদেশ যে তাদের করা টার্গেটগুলোর একটি হতে পারে- এটি মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
‘মেমোরেন্ডামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের শ্রম বিষয়ক ইস্যুগুলো বিশেষভাবে উদ্ধৃত করেছেন সেক্রেটারি অফ স্টেট এবং অ্যাক্টিং সেক্রেটারি অফ লেবার।’
বিশ্বব্যাপী কর্মীদের ক্ষমতায়ন, অধিকার এবং হাই লেবার স্ট্যান্ডার্ড উন্নয়ন ইস্যুতে ১৬ নভেম্বর একটি প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডাম ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘যারা ইউনিয়ন নেতা, শ্রমিক অধিকার রক্ষাকারী ও শ্রমিক সংগঠনকে আক্রমণ করে, হুমকি দেয়, ভয় দেখায়, তাদের জবাবদিহি করতে হবে। যারা এ ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য বিষয়ক জরিমানা এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের মেমোরেন্ডামটি এমন এক সময় ঘোষণা করা হয় যখন ন্যূনতম মজুরি ইস্যুতে বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন-বিক্ষোভ চলছিল।
বাংলাদেশ দূতাবাসের চিঠিতে বলা হয়, ‘মেমোরেন্ডাম অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের ফরেইন মিশন সরাসরি শ্রম বিষয়ক ইস্যু নিয়ে কাজ করবে। এ নীতিটি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহী কূটনীতিক বা মিশনকে অনেক অভ্যন্তরীণ/বাহ্যিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে উৎসাহিত করতে পারে।
‘ধারণা করা হচ্ছে, এ নীতি কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রয়োগ করার সুযোগ আছে; যদি তারা মনে করে যে সেখানে শ্রম অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মেমোরেন্ডাম নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। মেমোরেন্ডামে শ্রম অধিকার সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার পেছনে রাজনীতি রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন উপায়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এটা ব্যবহারের চেষ্টা করবে।’
মেমোরেন্ডামটিকে বাংলাদেশের জন্য একটি সংকেত উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ‘শ্রম ইস্যুর অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র এ নীতির অধীনে যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করতে পারে।
‘মেমোরেন্ডাম বাংলাদেশের পোশাক খাতেও প্রভাব ফেলতে পারে।’
আরও পড়ুন:সোনালী ব্যাংক পিএলসির সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিমের (এসএমটি) ২৩তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন এসএমটির চেয়ারম্যান এবং ব্যাংকের সিইও অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আফজাল করিম। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্চিয়া বিনতে আলী, মীর মোফাজ্জল হোসেন, সুভাষ চন্দ্র দাস, কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম এবং পারসুমা আলমসহ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়, স্থানীয় কার্যালয় ও মাঠ পর্যায়ের সকল জেনারেল ম্যানেজারসহ এসএমটি কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সিইও অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর ব্যাংকের সার্বিক ব্যবসায়িক পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।
ব্যাংক ঋণে নতুন সুদহার নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করা ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার দাঁড়াবে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ। নীতি সুদহার বাড়ানোর পর ব্যাংক ঋণে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করার সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পাঠানো এক সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ‘স্মার্ট’ (সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) সুদহারের সঙ্গে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করে ঋণ দেওয়া যাবে। এতদিন এ হার ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। গত অক্টোবর শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘স্মার্ট’ হার ঘোষণা করেছিলো ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সেই হিসেবে সোমবার থেকে বিতরণ করা ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ।
নতুন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ধার নেওয়ার খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদ হারও বাড়বে। অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আশা, এর ফলে ঋণ বিতরণ কমবে, বাড়বে আমানত সংগ্রহ।
অবশ্য নতুন সুদহার অনুযায়ী, প্রি-শিপমন্টে রপ্তানি ঋণ এবং কৃষি ও পল্লী ঋণে সুদহার নির্ধারণ করতে স্মার্ট সুদহারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করা যাবে, যা এতদিন ছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ। সেই হিসেবে কৃষি ও পল্লী ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার দাঁড়াবে ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় গত জুলাই থেকে সুদহার বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে বলে এরই মধ্যে আশাবাদ জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান। গত রোববার নীতি সুদহার বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সুদহার বাড়িয়ে মুদ্রানীতির সংকোচনের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেদিন নীতি সুদহার হিসেবে পরিচিত ওভারনাইট রেপো সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে এ হার ছিল সাত দশমিক ২৫ শতাংশ।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রেপো সুদহার শূন্য দশমিক ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সাত দশমিক ২৫ শতাংশ করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রেপো রেট বাড়ানোর এ হার ছিল গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রায় দশ শতাংশের ঘরে থাকা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গত জুলাই থেকে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির পথে হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে গত প্রায় পাঁচ মাসে তিন দফায় সুদহার বাড়ানো হলো।
মন্তব্য