দেশের অর্থনীতি নিয়ে নানা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েই চলেছে। জুলাই মাসের পর আগস্টেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের গতি বেশ ঊর্ধ্বমুখী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট মাসের ১৬ দিনেই ১১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা, যা গত বছরের আগস্টের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি।
এ হিসাবে প্রতিদিন এসেছে ৭ কোটি ২৬ লাখ ডলার বা প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।
বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলো ১০৫/১০৬ টাকা দরেও রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। সে হিসাব বিবেচনায় নিলে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ আরও বেশি।
মাসের বাকি ১৫ দিনেও এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকার আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও সিরাজুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জুলাই মাসের মতো আগস্টেও ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে।’
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার (২.১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে বেশি ছিল ১২ শতাংশ।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরের প্রথম দেড় মাসে (১ জুলাই থেকে ১৬ আগস্ট) ৩২৮ কোটি ৮০ লাখ (৩.২৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
প্রতি ডলার ৯৫ টাকা হিসাবে টাকার অঙ্কে ওই অর্থের পরিমাণ ৩১ হাজার ৪৬ কোটি টাকা।
করোনা মহামারির পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ধাক্কায় ওলটপালট হয়ে যাওয়া অর্থনীতিতে গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধিতে যখন দেশজুড়ে ক্ষোভ-হতাশা এবং আগামী দিনগুলোতে কী হবে? এই প্রশ্ন সবার মধ্যে তখন স্বস্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো এই অর্থের প্রবাহ। মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের কথা। ভরা করোনা মহামারির মধ্যেও ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
‘মহামারির মধ্যে ওই সময় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন প্রবাসীরা’-এই মন্তব্য করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অর্থনীতিতে যে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে, সেই সংকট কাটাতেও সবার আগে এগিয়ে এসেছেন প্রবাসীরা। আবার বেশি বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন।’
‘এই সময় এটারই খুব দরকার ছিল।’
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সের বিস্ময়কর উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তৈরি হবে নতুন রেকর্ড। এতে অনেকটাই চাপমুক্ত হবে দেশ। ইতোমধ্যে সে লক্ষণও দেখা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) তেমনটি বলেছে। বাংলাদেশ সংকটে নেই; চলমান বৈশ্বিক সংকটে সৃষ্ট অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার শক্তি বাংলাদেশের আছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ বাংলাদেশ নিয়ে এ কথা বলেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ১ থেকে ১৬ আগস্ট ১০০ কোটি ৭০ লাখ (১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আর ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম দেড় মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ১৬ আগস্ট) ২৮৭ কোটি ৮০ লাখ (২.৮৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, চলতি আগস্ট মাসের ১৬ দিনে গত বছরের আগস্টের একই সময়ে চেয়ে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আর দেড় মাসের হিসাবে বেশি এসেছে ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ।
২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে মন্দা দেখা দেয়। পুরো অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি (২১.০৩ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল; গড়ে প্রতিদিন ৫ কোটি ৭৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন ঘটে ২০২০-২১ অর্থবছরে। সে সময় ২ হাজার ৪৭৮ কোটি (২৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। ওই অর্থবছরে প্রতিদিন গড়ে ৬ কোটি ৭৯ ডলার প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে এসেছিল।
এসব হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সে রয়েছে ঊর্ধ্বগতি। এই প্রবণতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে এবং এই অর্থবছরে নতুন রেকর্ড তৈরি হবে বলে মনে করছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরে সাড়ে ৭ লাখ লোক কাজের সন্ধানে বিভিন্ন দেশে গেছেন। তারা ইতোমধ্যে রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেছেন। সে কারণেই ঈদের পরও রেমিট্যান্স বাড়ছে। এই ইতিবাচক ধারা পুরো অর্থবছর জুড়েই অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশা করছি।’
সাধারণত দুই ঈদের আগে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ে; ঈদের পর কমে যায়। তবে এবার কোরবানির ঈদের আগে যে গতিতে রেমিট্যান্স এসেছে, সেই ধারা ঈদের পরেও অব্যাহত আছে।
দেশে গত ১০ জুলাই কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। ঈদের আগে রেমিট্যান্স প্রবাহে ঢল নামে। ঈদের ৯০ কোটি ৯৩ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ঈদের পরে ২১ দিনে এসেছে ১১৮ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের কিছু বেশি।
ঈদের পরেও কেন রেমিট্যান্স বাড়ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েক মাসে ডলারের দর বেশ খানিকটা বেড়েছে। প্রণোদনার পরিমাণ দুই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। এসব কারণে প্রবাসীরা এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সে কারণেই বাড়ছে রেমিট্যান্স।’
তিনি বলেন, ‘এই সময়ে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির খুবই দরকার ছিল। নানা পদক্ষেপের কারণে আমদানি ব্যয় কমতে শুরু করেছে। রপ্তানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে আশা করছি এখন মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।’
আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে বুধবার প্রতি ডলার ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংকগুলো এই দরে ডলার কিনেছে। তবে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলো ১০৬ টাকা পর্যন্ত দরে প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার সংগ্রহ করেছে।
সে হিসাবে কোনো প্রবাসী এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে ১ ডলার দেশে পাঠালে ১০৬ টাকার সঙ্গে নগদ প্রণোদনার ২ টাকা ৫০ পয়সা যুক্ত হয়ে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা পাচ্ছেন।
কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে ডলারের দর প্রায় একই। সে কারণেই প্রবাসীরা এখন অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে ঝুঁকি নিয়ে দেশে টাকা না পাঠিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন বলে জানান ব্যাংকাররা।
১.৮৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি
ডলারের বাজারে ‘স্থিতিশীলতা’ আনতে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি অর্থবছরের ১ মাস ১৬ দিনে (১ জুলাই থেকে ১৬ আগস্ট) বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ১৮৫ কোটি ৩০ লাখ (১.৮৫ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ডলারের বাজারে অস্থিরতা চলছে কয়েক মাস ধরে। বেড়েই চলছিল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর এই মুদ্রার দর। কমছিল টাকার মান। তবে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম কমে ১০৯ টাকা নেমে এসেছে। ব্যাংকগুলোতে কয়েক দিন ধরে একই দামে ‘স্থির’ রয়েছে ডলার দর।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে ৭ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন ও আমদানি ব্যয় কমায় বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজার থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রিজার্ভ ৩৯.৫৩ বিলিয়ন ডলার
প্রতিদিন ডলার বিক্রির কারণে রিজার্ভ চাপের মধ্যে রয়েছে। বুধবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। জুলাই মাসের ৫ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের আমদানি খরচ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে সাত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
১২ জুলাই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। চাহিদা মেটাতে রিজার্ভ থেকে অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রির ফলে আরও কমে গেছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এই সূচক।
আরও পড়ুন:রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে অর্থবছরের শেষ দিন আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের সব ব্যাংকের শাখাগুলোতে ব্যাংকিং লেনদেন চলবে।
সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৩০ জুন সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরের চেয়ে এবার বেশি রাজস্ব আদায় হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।
সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে নারী কেলেং্কারীসহ দুর্নীতি, অর্থপাচার, শেয়ার কারসাজি ও যৌন হয়রানিসহ একাধিক অভিযোগ এনেছেন ব্যাংকের এক গ্রাহক
গতকাল বুধবার (২৫ জুন) দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এসব অভিযোগ তুলে লিখিত আবেদন জমা দেন শিমুল সর্দার নামে এক গ্রাহক। একই অভিযোগে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং আর্থিক খাত বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার কাছেও চিঠি পাঠিয়েছেন।
দুদকে দেওয়া ১০ পাতার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আলমগীর কবির দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ— তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নামে-বেনামে ঋণ দিয়েছেন, চলতি ঋণের সুদ মওকুফ করেছেন এবং অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে একক সিদ্ধান্তে ঋণ অনুমোদন করেছেন। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে বর্তমানে সাউথইস্ট ব্যাংকের হাজার কোটি টাকার আমানত ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবির ব্যাংকটির অর্থ সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনায় একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেছিলেন। ব্যাংকের প্রতিটি বড় সিদ্ধান্ত—যেমন নতুন শাখা খোলা, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, বুথ বসানো, সফটওয়্যার কেনা ইত্যাদিতে তার একক নিয়ন্ত্রণ ছিল। এসব কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই ছিল তার আত্মীয়স্বজন বা ঘনিষ্ঠজনদের মালিকানাধীন।
সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির গুরুতর অভিযোগও তুলেছেন অভিযোগকারী। অভিযোগে বলা হয়, আলমগীর কবির একাধিক নারী কর্মকর্তাকে নিজের অফিসে ডেকে নিয়ে তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে হয়রানি করেছেন। এসব ঘটনার কিছু প্রমাণ ইতোমধ্যে ভুক্তভোগীদের কাছে রয়েছে এবং তারা আইনগত পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন। এছাড়া তিনি নিজের পছন্দের কিছু নারীকে ব্যাংকের অধীনস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘গ্রিন স্কুল’ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড’-এ চাকরি দিয়েছেন বলেও অভিযোগে জানান।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, শেয়ার কারসাজির অভিযোগে আলমগীর কবিরকে ইতোমধ্যে ১২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তার নেতৃত্বে সাউথইস্ট ব্যাংকের ২৩২ কোটি টাকা বে লিজিংয়ে বিনিয়োগ করা হয়, যা বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৪-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড বর্তমানে আর্থিকভাবে এতটাই দুর্বল যে, প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকের পাওনা ফেরত দিতে পারছে না।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বে লিজিংয়ের পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়ায় ১৭২ কোটি টাকায়। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান সুরাইয়া বেগম—যিনি আলমগীর কবিরের স্ত্রী—তাঁর মাধ্যমে ব্যাংকটির সঙ্গে বে লিজিংয়ের লেনদেন ‘ব্যাংকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে লেনদেন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। এতে করে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ২৭ (১-খ) ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, আলমগীর কবির ব্যাংকের ফাউন্ডেশন ও শিক্ষা বিভাগের তহবিল থেকেও অর্থ তুলে এনে বে লিজিংয়ে সরবরাহ করেছেন। ব্যাংকের মেয়াদি আমানত ও কলমানির অর্থ আটকে আছে ওই প্রতিষ্ঠানটিতে। বারবার চিঠি পাঠিয়েও কোনো অর্থ ফেরত পায়নি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। শুধু মূলধন নয়, প্রতিষ্ঠানটি সুদও পরিশোধ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর ২৯ তম বার্ষিক সাধারন সভা ২৪ জুন ২০২৫ইং তারিখে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ২০২৪ইং সালের নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন এবং ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন করা হয়। পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জনাব মোস্তফা কামাল সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন কোম্পানীর পরিচালক মিসেস বিউটি আক্তার, ব্যারিষ্টার হাসান রাজিব প্রধান, জনাব মনজুর মো: সাইফুল আজম এফসিএমএ, মিসেস তাহমিনা বিনতে মোস্তফা, জনাব তায়েফ বিন ইউসুফ, মিসেস তানজিমা বিনতে মোস্তফা, জনাব ওয়াশিকুর রহমান, জনাব তানভীর আহমেদ মোস্তফা , মিসেস সামিরা রহমান, মিসেস তাসনিম বিনতে মোস্তফা, জনাব মোঃ বেলায়েত হোসেন ভূইয়া, জনাব মোহাম্মদ সাইদ আহমেদ রাজা এবং মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সানা উল্লাহ, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা শেখ বিল্লাল হোসেন এফসিএ, কোম্পানীর অডিটর এ.কে.এম. আমিনুল হক এফসিএ, সিনিয়র পার্টনার মেসার্স এ.হক এন্ড কোং চাটার্ড একাউন্টেন্টস এবং আবদুর রহিম মিয়া, এফসিএ, পার্টনার মেসার্স ইসলাম জাহিদ এন্ড কোং, চাটার্ড একাউন্টেন্টস, মোঃ ফিরোজুল ইসলাম সিনিয়র এক্সিঃ ভাইস প্রেসিডেন্ট (অর্থ ও হিসাব) ও কোম্পানী সচিব মো: মাসুদ রানা এবং কোম্পানীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ারহোল্ডার সভায় সংযুক্ত ছিলেন।
মেঘনা ব্যাংক পিএলসি’র ১২তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ২৩ জুন ২০২৫, সোমবার রাজধানীর মহাথালীতে অবস্থিত ম্যাডোনা টাওয়ারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের সম্মানিত চেয়ারপার্সন মিসেস উজমা চৌধুরী।
বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান জনাব তানভীর আহমেদ, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান জনাব মো. আলী আক্তার রেজভী, এফসিএ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান জনাব মোহাম্মদ মামুনুল হক। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক জনাব রজব আলী, জনাব এম. নজরুল ইসলাম এবং জনাব হাবিবুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব কাজী আহ্সান খলিল এবং ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি সচিব জনাব সজিব কুমার সাহা, এফসিএ এবং ব্যাংকের সম্মানিত শেয়ারহোল্ডারবৃন্দ।
সভায় ব্যাংক নিজেদের পরিষেবা বৃদ্ধি, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি প্রচারণা, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখা এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
সম্প্রতি সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি. বরিশাল জেলায় অবস্থিত বিভিন্ন স্কুল থেকে আগত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকদের নিয়ে লিড ব্যাংক হিসেবে ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা এর নির্দেশনায় “স্কুল ব্যাংকিং কনফারেন্স-২০২৫” আয়োজন করেছে।
উক্ত কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব ইমতিয়াজ আহমেদ মাসুম, নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব), বাংলাদেশ ব্যাংক, বরিশাল এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব আবিদুর রহমান চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব), সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি., জনাব মোঃ আলী হোসেন, অতিরিক্ত পরিচালক, ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা, জনাব মোঃ হারুনুর রশিদ, জেলা শিক্ষা অফিসার, বরিশাল এবং সম্মানিত অতিথি জনাব মোঃ মাহাবুব-উল আলম, উপপরিচালক, ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা।
উক্ত কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন সাউথইস্ট ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মোহাম্মদ রাশেদুল আমিন। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মধ্য হতে উক্ত কনফারেন্সে জাহানারা ইসরাইল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বরিশাল থেকে রাবিয়া কামাল (দশম শ্রেণী) এবং বরিশাল জেলা স্কুল, বরিশাল থেকে মোঃ হাসনাইন বিন কবির (দশম শ্রেণী) বক্তব্য রাখেন।
উক্ত কনফারেন্সে বরিশাল জেলার ৪৫ টি তফসিলী ব্যাংকের ৪৫ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্কুল থেকে ১৮০ জন শিক্ষার্থী ও ৪৫ জন শিক্ষক এবং অতিথি সহ সর্বমোট ৩৫০ জন অংশগ্রহণ করেন। কনফারেন্সে বক্তারা শৈশব থেকেই সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও দায়িত্বশীল অর্থ ব্যবস্থাপনার অভ্যাস গড়ে তোলা ও আধুনিক ব্যাংকিং প্রযুক্তির সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের পরিচিত করানোর লক্ষ্যে স্কুল ব্যাংকিং এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন।
এছাড়াও স্কুল ব্যাংকিং এর উপর নির্মিত ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী, র্যালী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিক্ষার্থীদের জন্য কুইজ প্রতিযোগিতা আয়োজনের মধ্য দিয়ে কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
১৬ জুন, ২০২৫ তারিখে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি. এর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের ৪০তম সভা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়, গুলশান-১, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব মুঃ ফরীদ উদ্দীন আহমদ। সভায় পর্ষদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান জনাব মোঃ হুমায়ুন কবীর, স্বতন্ত্র পরিচালক ড. শহিদুল ইসলাম জাহীদ, জনাব মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জনাব মোঃ হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সর্বজনাব শফিউদ্দিন আহমেদ এবং মোহাম্মদ ইকবাল কার্যপোলক্ষ্যে সভায় যোগদান করেন। সভায় ব্যাংকের ব্যবসা বাণিজ্য, আমানত ও রেমিট্যান্স সংগ্রহ বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ আদায়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।
জনতা ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান ১৫ জুন রোববার জনতা ব্যাংক স্টাফ কলেজ ঢাকা কর্তৃক আয়োজিত ২৫ (পঁচিশ) দিন ব্যাপী ফাউন্ডেশন কোর্স ফর অফিসার্স (ব্যাচ ০৫/২০২৫) শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স উদ্বোধন করেন। উক্ত প্রশিক্ষণ কোর্সে জনতা ব্যাংকের ৫০ জন সিনিয়র অফিসার অংশগ্রহণ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনতা ব্যাংক স্টাফ কলেজের ডিজিএম-স্টাফ কলেজ ইনচার্জসহ অন্যান্য নির্বাহী ও অনুষদ সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য