টানা কয়েক দফা বেড়ে চূড়ায় ওঠার পর স্বর্ণের দাম বেশ খানিকটা কমেছে। দেশের বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের ভরি ২ হাজার ২৭৪ টাকা কমে ৮২ হাজার ৫৬ টাকায় নেমে এসেছে।
আমেরিকান মুদ্রা ডলারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছিল স্বর্ণের দাম। ডলারের দাম কমতে শুরু করায় স্বর্ণের দামও কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
দশ দিন আগে গত ৭ আগস্ট অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের ভরি ৮৪ হাজার ৩৩১ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই মূল্যবান এই ধাতুটি এত দামে বিক্রি হয়নি।
বুধবার রাতে সব ধরনের স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বাজুস। স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম কমায় সাধারণ স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত মে মাসে স্বর্ণের ভরি বাড়তে বাড়তে ৮২ হাজার ৪৬৬ টাকায় উঠেছিল। এরপর বিশ্ববাজারে দাম কমায় তা ৭৫ হাজার টাকার নিচে নেমে এসেছিল।
এর পর আন্তর্জাতিক বাজারে দরবৃদ্ধি এবং স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণেল দাম বাড়ায় জুলাই ও আগস্ট মাসে টানা কয়েক দফা বেড়ে সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের ভরি ৮৪ হাজার ৩৩১ টাকায় উঠেছিল।
বৃহস্পতিবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের প্রতি ভরি স্বর্ণ কিনতে লাগবে ৮২ হাজার ৫৬ টাকা। বুধবার পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৮৪ হাজার ৩৩১ টাকায়। দাম বেড়েছে ২ হাজার ২৭৪ টাকা।
অন্যান্য মানের স্বর্ণের দামও প্রায় একই হারে বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় টানা তিন দফা কমানোর পর গত ২৬ জুলাই প্রতি ভরি সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৩৪১ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। দুই দিনের ব্যবধানে ২৮ জুলাই আরও ২ হাজার ৭৪১ টাকা বাড়ানো হয়। ৩ আগস্ট ভরিতে আরও ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়ানো হয়। সবশেষ ৭ আগস্ট বাড়ানো হয় ১ হাজার ৯৮৩ টাকা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ৮ মার্চ দেশের বাজারে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৯ হাজার ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস। তার চার দিন আগে ৪ মার্চ বাড়ানো হয়েছিল ভরিতে ৩ হাজার ২৬৫ টাকা।
এরপর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমতে শুরু করায় ১৫ মার্চ দেশের বাজারে ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। ২১ মার্চ কমানো হয় ভরিতে আরও ১ হাজার ৫০ টাকা।
কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় ১১ এপ্রিল সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৮৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস।
এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় ২৫ এপ্রিল প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানো হয়। ১০ মে একই পরিমাণ কমানো হয়েছিল।
দুই দফায় ভরিতে ২ হাজার ৩৩২ টাকা কমানোর পর ১৭ মে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়ানো হয়।
চার দিনের ব্যবধানে ২১ মে সেই স্বর্ণের দাম এক ধাক্কায় ভরিতে ৪ হাজার ১৯৯ টাকা বাড়িয়ে দেয় বাজুস। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে স্বর্ণের দাম উঠে যায় ৮২ হাজার ৪৬৬ টাকায়।
বিশ্ববাজারে দাম কমায় ২৬ মে সেই স্বর্ণের দাম ভরিতে ২ হাজার ৯১৬ টাকা কমিয়ে ৭৯ হাজার ৫৪৮ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। প্রায় দেড় মাস পর ৬ জুলাই আরও ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস।
বাজুসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের মূল্য হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বুধবার বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিশ্ববাজারে বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম, ২.৬৫ ভরি) স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৭৬১ ডলার ৬৬ সেন্ট। এর আগে ৬ আগস্ট রাতে যখন স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়, তখন প্রতি আউন্সের দাম ছিল ১ হাজার ৭৭৪ ডলার ৯৬ সেন্ট।
মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বাড়তে বাড়তে ২ হাজার ৬০ ডলারে উঠেছিল।
১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি।
বৃহস্পতিবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ৮২ হাজার ৫৬ টাকায় বিক্রি হবে। বুধবার পর্যন্ত এই মানের স্বর্ণ ৮৪ হাজার ৩৩১ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কমেছে ২ হাজার ২৭৪ টাকা।
২১ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ভরিতে ২ হাজার ১৫৮ টাকা কমে ৭৮ হাজার ৩২৪ টাকা হয়েছে। এই দশ দিন ৮০ হাজার ৪৮২ টাকায় বিক্রি হয়েছে এই মানের স্বর্ণ।
১৮ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৮৬৬ টাকা কমে হয়েছে ৬৭ হাজার ১২৬ টাকা। বুধবার পর্যন্ত ৬৮ হাজার ৯৯৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
আর সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৬৯১ টাকা কমে হয়েছে ৫৫ হাজার ২৮৭ টাকা। এই দশ দিন এই মানের স্বর্ণ ৫৬ হাজার ৯৭৯ টাকা ভরিতে বিক্রি হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশের সকল স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না জানানো পর্যন্ত বাজুসের বেঁধে দেয়া দামে স্বর্ণ বিক্রি করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের দামেই বিক্রি হবে এই ধাতু।
আরও পড়ুন:
দাম কমানোর অংশ হিসেবে আলু, পেঁয়াজ ও কীটনাশকে শুল্ক কমানোর কথা জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিগত জুলাই ও আগস্ট, ২০২৪ মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং এর প্রেক্ষিতে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে দেশে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটেছে যা এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। উপরন্তু দেশের পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কীটনাশক, আলু ও পেঁয়াজের মতো গুরুত্বপূর্ণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমানোর ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করেছে।
‘এ প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সার্বিক বিশ্লেষণপূর্বক কর ছাড়ের মাধ্যমে উল্লিখিত পণ্যগুলোর আমদানি সহজ করে সরবরাহ বৃদ্ধি করার উদ্যোগ গ্রহণ করত কীটনাশকের ওপর প্রযোজ্য ২৫% আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে আমদানি শুল্ক ৫% নির্ধারণ করে ও সমুদয় রেগুলেটরি শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। অধিকন্তু আলুর আমদানিতে বিদ্যমান ২৫% আমদানি শুল্ক ১০% কমিয়ে ১৫% নির্ধারণ করা হয়েছে এবং প্রযোজ্য ৩% রেগুলেটরি ডিউটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘পেঁয়াজের ওপর প্রযোজ্য ৫% রেগুলেটরি ডিউটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আলু এবং পেঁয়াজ অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদনের মাধ্যমে যেহেতু দেশের মোট চাহিদার সিংহভাগ মেটানো হয় এবং আমদানি শুল্ক কম থাকলে দেশীয় উৎপাদনের ওপর প্রযোজ্য প্রতিরক্ষণ হ্রাস পায়, ফলে কৃষককে আলু ও পেঁয়াজ উৎপাদনে উৎসাহিত করতে উল্লিখিত শুল্ক ছাড় সাময়িক সময়ের জন্য তথা আগামী ৩০ নভেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত বলবৎ করা হয়েছে।’
ডিজেল, পেট্রল ও অকটেনের মতো জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
খুলনার খালিশপুরে রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনকালে শনিবার বেলা ১১টার দিকে প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
জ্বালানি তেলের দাম কমানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডিজেলের দাম ১০৬.৭৫ টাকা থেকে ১.২৫ টাকা কমিয়ে ১০৫.৫০ টাকা, অকটেনের দাম ১৩১ টাকা থেকে ৬ টাকা কমিয়ে ১২৫ টাকা এবং পেট্রলের দাম ১২৭ টাকা থেকে ৬ টাকা কমিয়ে ১২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আজ রাত ১২টা থেকে কার্যকর হবে।’
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। এই সকল অনিয়ম ও দুনীতির মাধ্যমে দেশের অর্থ লোপাট হয়েছে, যা খুঁজে বের করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে একজন বিচারপতিকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বজনপ্রীতি ও কিছু মানুষকে সুবিধা দিতে অপ্রয়োজনে বেসরকারি খাতে অনেক অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং ওইসব প্রকল্পের ভর্তুকির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয়েছে।’
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানি ছাড়া বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর নির্বাহী ক্ষমতা বাতিল করে সরকার মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বলে জানিয়েছে ইউএনবি।
বার্তা সংস্থাটির খবরে বলা হয়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জারি করা গেজেটে বলা হয়, এ সংশোধনীর মাধ্যমে বিইআরসি আইন-২০০৩ এর ৩৪ (ক) ধারা বিলুপ্ত হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী ক্ষমতার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারকে দিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ৩৪ (ক) ধারা প্রবর্তন করেছিল।
গণশুনানি ছাড়া সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াবে না বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন এ সংশোধনী আনা হয়।
ইউএনবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সর্বশেষ এ সংশোধনীর পর সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ বা গ্যাসের দাম বাড়াতে চাইলে তাকে বিইআরসিতে প্রস্তাব দিতে হবে। সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বিইআরসি গণশুনানি করে ৯০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।
কিছুতেই যেন আটকানো যাচ্ছে না স্বর্ণের দাম। দফায় দফায় দাম বৃদ্ধিতে নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে স্বর্ণের বাজারে।
মাত্র দুদিনের ব্যবধানে আবারও দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোঘণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এবার প্রতি ভরিতে সর্বোচ্চ এক হাজার ৯২৬ টাকা বাড়িয়ে স্বর্ণের নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
দাম বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম হবে এক লাখ ২৭ হাজার ৯৪২ টাকা। দেশের ইতিহাসে এত দাম কখনই হয়নি স্বর্ণের।
বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববার এ তথ্য জানানো হয়। সংগঠনটি জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের দাম বেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার থেকে নতুন এই দাম কার্যকর হবে।
নতুন দাম অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) এক লাখ ২৭ হাজার ৮৪২ টাকা, ২১ ক্যারেটের ভরি ১ লাখ ২২ হাজার ১২২ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৪ হাজার ৬৮৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম পড়বে ৮৬ হাজার ৫৪৭ টাকা।
স্বর্ণের দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে রূপার দাম।
আরও পড়ুন:আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দ্রব্যমূল্য জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সব দফতরকে আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে এসব দফতরের কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
রোববার রাজধানীর কাওরানবাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এই আল্টিমেটাম দেয়া হয়। বাজার তদারকিসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে কাজ করার লক্ষ্যে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নয়টি সুপারিশ করেন। সেগুলো হলো- বিপ্লবী ছাত্র-জনতা টিম করে প্রতিটি শহর, জেলা, উপজেলা, পাড়া, মহল্লায় বাজার মনিটরিং করবে; তবে তারা কাউকে জরিমানা করতে পারবে না, আইন নিজের হাতে তোলা যাবে না; প্রতিটি জেলা-উপজেলায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মতবিনিময় সভার আয়োজন করা; প্রতিটি বিক্রেতার নিত্যপণ্য ক্রয়ের রসিদ রাখা; প্রতিটি দোকানে মূল্য তালিকা টানানো; কেউ বাজার, রাস্তা, দোকান দখল করে ব্যবসা করলে তাকে উৎখাত করা; রাস্তায় চাঁদাবাজি প্রতিরোধ করা; ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের জনবল বৃদ্ধি ও দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমরা চাপমুক্ত হতে চাই তোমাদের (শিক্ষার্থী) মাধ্যমে। তোমাদের হাতটা এত শক্তিশালী হয়েছে, আমার মনে হয় তোমরা যেখানে হাত দেবে সেখানেই সোনা ফলবে। আমরা আসলেই ব্যর্থ হয়েছি। আমরা এখন তোমাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখি।’
উপ-পরিচালক আতিয়া সুলতানার সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণা) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মিজানুর রহমান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অনেকে।
ইরি-বোরো মৌসুমের শেষ সময় হওয়ায় নওগাঁয় বেড়েছে ধানের দাম। এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।
জেলায় গত এক মাসের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে।
নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজার সূত্রে জানা যায়, প্রকারভেদে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে দুই থেকে চার টাকা বেড়ে কাটারিভোগ ৬৮ থেকে ৭০ টাকা, জিরাশাইল ৬৪ থেকে ৬৬ টাকা এবং ব্রি-২৮ ও ২৯ চাল ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালকল মালিকরা বেশি দামে ধান কেনায় চাল উৎপাদনে খরচ বেশি পড়ছে। তাদের বেশি দামে চাল কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। গত এক মাসের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের চালের দাম ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে।
তাদের ভাষ্য, বেশি দামে চাল কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন খাদ্যবান্ধন কর্মসূচি চালু থাকায় ক্রেতারা খোলা বাজার থেকে খুবই কম চাল কেনায় বাজার প্রায় ক্রেতা শূন্য।
সুলতানপুর মহল্লার বাসিন্দা রিকশাচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘বাড়িতে পাঁচজন সদস্য। প্রতিদিন আড়াই কেজি চাল লাগে। এক মাস আগে এক বস্তা ব্রিআর-২৮ চাল দুই হাজার ৬৫০ টাকায় কিনেছিলাম। পাঁচ দিন আগে কিনতে হয়েছে দুই হাজার ৭৫০ টাকায়।
‘এ ছাড়া তো নিত্যপণ্যের অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও বেশি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আমাদের আয়-রোজগার আগের তুলনায় কমেছে। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজার সমিতির সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, ‘এই সময়ে চালের দাম কিছুটা বাড়তি থাকে। প্রকারভেদে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। বাজার প্রায় ক্রেতাশূন্য হওয়ায় ব্যবসায় মন্দা চলছে। চালের দাম বাড়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের কষ্ট বেড়েছে।’
নওগাঁ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘হাটে-বাজারে ধান ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৫২০ টাকা মণ। গত এক মাসে প্রকারভেদে সব ধরনের ধানের দাম মণে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। চালকল মালিকরা বেশি দামে ধান কিনে চাল উৎপাদন করতে খরচ বেশি পড়ছে।
‘পাইকারিতে ৫০ কেজি ওজনের বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে চাল বিক্রি হচ্ছে কাটারিভোগ ৬৫ থেকে ৬৭ টাকা, জিরাশাইল ৬২ থেকে ৬৪ টাকা এবং ব্রি-২৮ চাল ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা, তবে বাজার স্বাভাবিক হতে আউশ-আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের পর বাজারে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীতে শুক্রবার ভোর থেকেই ছিল ভারী বর্ষণ। জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। আর কাঁচাবাজারে সবজির দাম যেন এদিন সেই ভোগান্তি আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছে। বৃষ্টির অজুহাতে এদিন সবজির দাম আগের দিনের তুলনায় ছিল বেশি।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব ধরনের সবজিই বিক্রি হচ্ছে আগের চেয়ে বেশি দামে। টমেটো ২০০ টাকা কেজি এবং পেঁয়াজের দাম ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
এ ছাড়া প্রতিকেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৫০- ১৭০ টাকায়, শসা ৮০-১২০ টাকায়, কাঁচা মরিচ ২৬০ টাকা, ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে হঠাৎ করে বেগুনের দাম কেজিতে ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। লম্বা বেগুন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কিছুদিন আগেও ছিল ৮০-১০০ টাকায়। আর সবুজ গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০- ১০০ টাকায়। কালো গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।
রাজধানীর মেরাদিয়া হাট বাজার, গোড়ান বাজার, খিলগাঁও রেলগেট কাঁচাবাজারসহ বেশকিছু বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, করলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, কাঁকরোল ৮০-৯০ টাকায়, পেঁপে ৫০-৬০ টাকায়, ঢেঁড়স ৭০- ৮০ টাকায়, পটল ৫০-৬০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৬০-৮০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০-৮০ টাকা, বরবটি ১০০- ১২০ টাকায়, কচুর লতি ৮০- ১০০ টাকায়, কচুরমুখী ১০০- ১২০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকায়। প্রতিটি লাউ ৭০- ৮০ টাকায়, চাল কুমড়া ৬০ টাকা, ফুলকপি ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে।
সবজির বাজারে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা দাবি করছেন, বন্যায় ও বৃষ্টির কারণে সবজির উৎপাদন কমে গেছে। অন্যদিকে উচ্চমূল্যের বাজারে নাকাল অবস্থা সাধারণ মানুষের। প্রতিনিয়তই বাজারে এসে হিমশিম খেতে হয় সাধারণ মানুষের।
প্রায় দেড় মাস ধরে কোরবানির ঈদের আগে থেকেই বাজারে পেঁয়াজের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়।
দক্ষিণ বনশ্রীর এলাকার এক মুদি দোকানি জানান, গত সপ্তাহ দেশি পেঁয়াজ ৯৫ থেকে ৯৮ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়েছে। তবে এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম ১২০ টাকা হয়েছে। এই দাম শুনলে ক্রেতারা তেমন একটা কিনতে চায় না। আর ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কম হলেও বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের সঙ্গে নিম্নমানের ভারতীয় পেঁয়াজ মিশিয়ে বিক্রি করছেন অনেকে। ফলে দেশি পেঁয়াজের দামে বিক্রি হচ্ছে কম দামি ভারতীয় পেঁয়াজ। যদি ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে পাওয়া যেত তাহলে দাম হতো সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য