নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে অক্টোবর পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
সচিবালয়ে বুধবার এক কোটি পরিবারের মধ্যে টিসিবির ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
কবে নাগাদ বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সেটা বলা যাবে না, তবে আমরা খুব আশাবাদী অক্টোবরের মধ্যে কিছুটা কমে আসবে। কতগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। আমি জানি না, পুতিন সাহেব কবে যুদ্ধ বন্ধ করবেন। সেটা তো আমার হিসাবের মধ্যে নেই।’
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে অভিযোগ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সুযোগ যখন নেয়, সবাই একবারে লাফ দিয়ে নেয়, কিন্তু আমরা তো এসব একবারে শেষ করতে পারব না। তাদের সঙ্গে বসে সেটেল (নিষ্পত্তি) করতে হবে। আমাদের একটু সময় দেন। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি।
‘আমরা এ বিষয়গুলো দেখছি, তবে সবকিছু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে না। আর সব ব্যাপারে আমি আপনাদের বোঝাতে পারব, তা কিন্তু নয়। আমার যেটা কথা…হঠাৎ করে সুযোগ কেউ কেউ নিয়েছে। যে পরিমাণ বাড়ার কথা, তার থেকে অনেক বেশি সুযোগ নিয়েছে, এটা সত্যি কথা। আমরা চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি সচিবকে বলেছি, যে যে মন্ত্রণালয় আছে, সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। ডলারের দাম হঠাৎ করে কত বেশি। খুব চেষ্টা করা হচ্ছে কীভাবে কী করা যায়। আমাদের কাছে হিসাব আছে। ধরেন তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচের জন্য প্রতি কেজিতে ৫০ পয়সা করে বাড়তে পারে, সেখানে ব্যবসায়ীরা ৪ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এখানে কোনো লজিক আছে? নাই৷ তখন, মানে সুযোগটা নিয়ে নিয়েছে। আমাদের একটু সময় দেন। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি। আমরা কষ্টে আছি, স্বীকার করছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যেটা দেখা দরকার, কষ্টটা লাঘব করার জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী কী চেষ্টা করছেন।’
অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা আমরা ব্যবস্থা নেব…সেটা আমরা দেখব। তেলের দাম বাড়ার কারণে সুযোগটা নিচ্ছে।
‘সুযোগ যখন নেয়, সবাই একবারে লাফ দিয়ে নেয়। কিন্তু আমরা তো এসব একবারে শেষ করতে পারব না। তাদের সঙ্গে বসে সেটেল করতে হবে।’
আরও পড়ুন:দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে নতুন শুল্কায়নে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।
এর ফলে পেঁয়াজের দাম শিগগিরই কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস রহমান মঙ্গলবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাত আটটা নাগাদ নতুন শুল্কায়নে ভারতীয় চারটি ট্রাকে ১২৩ টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে।
হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ এবং রপ্তানিমূল্য টনপ্রতি ৫৫০ ডলার থেকে ১৪৫ ডলার কমিয়ে ৪০৫ ডলার নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি কাস্টমস সার্ভারে সংযুক্ত না হওয়ায় গত ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার ভারতের সার্ভারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি সংযুক্ত হওয়ায় সেই জটিলতা কাটিয়ে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বেড়ে দাম কমবে বলে প্রত্যাশা আমদানি-রপ্তানিকারক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের।
এর আগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ সংকটের অজুহাতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। এরপর গত মার্চ মাসে অনির্দিষ্টকালের জন্য দ্বিতীয় দফায় নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত সরকার।
ভারতের ওই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের সংকট দেখা দেয়ায় দফায় দফায় দাম বাড়তে থাকে। এরপর প্রায় ৫ মাস পর গত ৪ মে ন্যূনতম ৫৫০ ডলার রপ্তানি মূল্য এবং ৪০ শতাংশ হারে শুল্ক নির্ধারণ করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ভারত সরকার।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম শহিদ জানান, নতুন নিয়ম সার্ভারে সংযুক্ত হওয়ায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক কমে আসবে বলে তারা আশা করছেন। ফলে পেঁয়াজের দাম বাজারে অনেকাংশে কমে আসবে।
স্থলবন্দর উদ্ভিদ বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী জানান, হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহ বাড়িয়েছেন। মঙ্গলবার নতুন করে আরও চার ব্যবসায়ী এলসি খুলেছেন। এসব পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করলে পণ্যটির বাজারদর নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:দাম কমানোর অংশ হিসেবে আলু, পেঁয়াজ ও কীটনাশকে শুল্ক কমানোর কথা জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিগত জুলাই ও আগস্ট, ২০২৪ মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং এর প্রেক্ষিতে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে দেশে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটেছে যা এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। উপরন্তু দেশের পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কীটনাশক, আলু ও পেঁয়াজের মতো গুরুত্বপূর্ণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমানোর ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করেছে।
‘এ প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সার্বিক বিশ্লেষণপূর্বক কর ছাড়ের মাধ্যমে উল্লিখিত পণ্যগুলোর আমদানি সহজ করে সরবরাহ বৃদ্ধি করার উদ্যোগ গ্রহণ করত কীটনাশকের ওপর প্রযোজ্য ২৫% আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে আমদানি শুল্ক ৫% নির্ধারণ করে ও সমুদয় রেগুলেটরি শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। অধিকন্তু আলুর আমদানিতে বিদ্যমান ২৫% আমদানি শুল্ক ১০% কমিয়ে ১৫% নির্ধারণ করা হয়েছে এবং প্রযোজ্য ৩% রেগুলেটরি ডিউটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘পেঁয়াজের ওপর প্রযোজ্য ৫% রেগুলেটরি ডিউটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আলু এবং পেঁয়াজ অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদনের মাধ্যমে যেহেতু দেশের মোট চাহিদার সিংহভাগ মেটানো হয় এবং আমদানি শুল্ক কম থাকলে দেশীয় উৎপাদনের ওপর প্রযোজ্য প্রতিরক্ষণ হ্রাস পায়, ফলে কৃষককে আলু ও পেঁয়াজ উৎপাদনে উৎসাহিত করতে উল্লিখিত শুল্ক ছাড় সাময়িক সময়ের জন্য তথা আগামী ৩০ নভেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত বলবৎ করা হয়েছে।’
ডিজেল, পেট্রল ও অকটেনের মতো জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
খুলনার খালিশপুরে রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনকালে শনিবার বেলা ১১টার দিকে প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
জ্বালানি তেলের দাম কমানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডিজেলের দাম ১০৬.৭৫ টাকা থেকে ১.২৫ টাকা কমিয়ে ১০৫.৫০ টাকা, অকটেনের দাম ১৩১ টাকা থেকে ৬ টাকা কমিয়ে ১২৫ টাকা এবং পেট্রলের দাম ১২৭ টাকা থেকে ৬ টাকা কমিয়ে ১২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আজ রাত ১২টা থেকে কার্যকর হবে।’
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। এই সকল অনিয়ম ও দুনীতির মাধ্যমে দেশের অর্থ লোপাট হয়েছে, যা খুঁজে বের করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে একজন বিচারপতিকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বজনপ্রীতি ও কিছু মানুষকে সুবিধা দিতে অপ্রয়োজনে বেসরকারি খাতে অনেক অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং ওইসব প্রকল্পের ভর্তুকির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয়েছে।’
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানি ছাড়া বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর নির্বাহী ক্ষমতা বাতিল করে সরকার মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বলে জানিয়েছে ইউএনবি।
বার্তা সংস্থাটির খবরে বলা হয়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জারি করা গেজেটে বলা হয়, এ সংশোধনীর মাধ্যমে বিইআরসি আইন-২০০৩ এর ৩৪ (ক) ধারা বিলুপ্ত হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী ক্ষমতার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারকে দিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ৩৪ (ক) ধারা প্রবর্তন করেছিল।
গণশুনানি ছাড়া সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াবে না বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন এ সংশোধনী আনা হয়।
ইউএনবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সর্বশেষ এ সংশোধনীর পর সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ বা গ্যাসের দাম বাড়াতে চাইলে তাকে বিইআরসিতে প্রস্তাব দিতে হবে। সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বিইআরসি গণশুনানি করে ৯০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।
কিছুতেই যেন আটকানো যাচ্ছে না স্বর্ণের দাম। দফায় দফায় দাম বৃদ্ধিতে নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে স্বর্ণের বাজারে।
মাত্র দুদিনের ব্যবধানে আবারও দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোঘণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এবার প্রতি ভরিতে সর্বোচ্চ এক হাজার ৯২৬ টাকা বাড়িয়ে স্বর্ণের নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
দাম বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম হবে এক লাখ ২৭ হাজার ৯৪২ টাকা। দেশের ইতিহাসে এত দাম কখনই হয়নি স্বর্ণের।
বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববার এ তথ্য জানানো হয়। সংগঠনটি জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের দাম বেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার থেকে নতুন এই দাম কার্যকর হবে।
নতুন দাম অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) এক লাখ ২৭ হাজার ৮৪২ টাকা, ২১ ক্যারেটের ভরি ১ লাখ ২২ হাজার ১২২ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৪ হাজার ৬৮৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম পড়বে ৮৬ হাজার ৫৪৭ টাকা।
স্বর্ণের দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে রূপার দাম।
আরও পড়ুন:আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দ্রব্যমূল্য জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সব দফতরকে আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে এসব দফতরের কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
রোববার রাজধানীর কাওরানবাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এই আল্টিমেটাম দেয়া হয়। বাজার তদারকিসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে কাজ করার লক্ষ্যে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নয়টি সুপারিশ করেন। সেগুলো হলো- বিপ্লবী ছাত্র-জনতা টিম করে প্রতিটি শহর, জেলা, উপজেলা, পাড়া, মহল্লায় বাজার মনিটরিং করবে; তবে তারা কাউকে জরিমানা করতে পারবে না, আইন নিজের হাতে তোলা যাবে না; প্রতিটি জেলা-উপজেলায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মতবিনিময় সভার আয়োজন করা; প্রতিটি বিক্রেতার নিত্যপণ্য ক্রয়ের রসিদ রাখা; প্রতিটি দোকানে মূল্য তালিকা টানানো; কেউ বাজার, রাস্তা, দোকান দখল করে ব্যবসা করলে তাকে উৎখাত করা; রাস্তায় চাঁদাবাজি প্রতিরোধ করা; ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের জনবল বৃদ্ধি ও দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমরা চাপমুক্ত হতে চাই তোমাদের (শিক্ষার্থী) মাধ্যমে। তোমাদের হাতটা এত শক্তিশালী হয়েছে, আমার মনে হয় তোমরা যেখানে হাত দেবে সেখানেই সোনা ফলবে। আমরা আসলেই ব্যর্থ হয়েছি। আমরা এখন তোমাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখি।’
উপ-পরিচালক আতিয়া সুলতানার সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণা) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মিজানুর রহমান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অনেকে।
ইরি-বোরো মৌসুমের শেষ সময় হওয়ায় নওগাঁয় বেড়েছে ধানের দাম। এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।
জেলায় গত এক মাসের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে।
নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজার সূত্রে জানা যায়, প্রকারভেদে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে দুই থেকে চার টাকা বেড়ে কাটারিভোগ ৬৮ থেকে ৭০ টাকা, জিরাশাইল ৬৪ থেকে ৬৬ টাকা এবং ব্রি-২৮ ও ২৯ চাল ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালকল মালিকরা বেশি দামে ধান কেনায় চাল উৎপাদনে খরচ বেশি পড়ছে। তাদের বেশি দামে চাল কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। গত এক মাসের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের চালের দাম ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে।
তাদের ভাষ্য, বেশি দামে চাল কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন খাদ্যবান্ধন কর্মসূচি চালু থাকায় ক্রেতারা খোলা বাজার থেকে খুবই কম চাল কেনায় বাজার প্রায় ক্রেতা শূন্য।
সুলতানপুর মহল্লার বাসিন্দা রিকশাচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘বাড়িতে পাঁচজন সদস্য। প্রতিদিন আড়াই কেজি চাল লাগে। এক মাস আগে এক বস্তা ব্রিআর-২৮ চাল দুই হাজার ৬৫০ টাকায় কিনেছিলাম। পাঁচ দিন আগে কিনতে হয়েছে দুই হাজার ৭৫০ টাকায়।
‘এ ছাড়া তো নিত্যপণ্যের অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও বেশি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আমাদের আয়-রোজগার আগের তুলনায় কমেছে। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজার সমিতির সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, ‘এই সময়ে চালের দাম কিছুটা বাড়তি থাকে। প্রকারভেদে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। বাজার প্রায় ক্রেতাশূন্য হওয়ায় ব্যবসায় মন্দা চলছে। চালের দাম বাড়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের কষ্ট বেড়েছে।’
নওগাঁ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘হাটে-বাজারে ধান ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৫২০ টাকা মণ। গত এক মাসে প্রকারভেদে সব ধরনের ধানের দাম মণে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। চালকল মালিকরা বেশি দামে ধান কিনে চাল উৎপাদন করতে খরচ বেশি পড়ছে।
‘পাইকারিতে ৫০ কেজি ওজনের বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে চাল বিক্রি হচ্ছে কাটারিভোগ ৬৫ থেকে ৬৭ টাকা, জিরাশাইল ৬২ থেকে ৬৪ টাকা এবং ব্রি-২৮ চাল ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা, তবে বাজার স্বাভাবিক হতে আউশ-আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের পর বাজারে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য