করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার পর অর্থনীতির চাকা সচল হওয়ার পর বেসরকারি ঋণপ্রবাহেও ফিরেছে গতি। সেই সঙ্গে বেড়েছে আমদানি-রপ্তানি, বেড়েছে রেমিট্যান্স-প্রবাহ, ডলার বাণিজ্য থেকেও বেশ ভালো আয় আসার কথা।
তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো তাদের অর্ধবার্ষিকে আয়ের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে ব্যাংকগুলোর ফুলে-ফেঁপে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না।
গত বছর করোনার বিধিনিষেধের মধ্যেও ব্যাংকগুলো প্রায় প্রতি প্রান্তিকেই আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি ভালো আয় করলেও এবার তাদের প্রবৃদ্ধি কমেছে।
তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ ব্যাংকের আয় আগের বছরের তুলনায় বাড়লেও প্রবৃদ্ধির হার অনেকটাই কম। আবার দুটি ব্যাংক এই প্রান্তিকে লোকসান দিয়েছে, যেগুলো আগের বছর বেশ খানিকটা মুনাফায় ছিল।
সব মিলিয়ে ৩৩টি ব্যাংকের মধ্যে ১৮টির আয় বেড়েছে। ২টির আয় রয়েছে আগের বছরের সমান। আর আয় কমেছে ১৩টি ব্যাংকের।
শতাংশের হিসাবে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত আয় কমেছে আইএফআইসি, স্ট্যান্ডার্ড, ওয়ান, ইউনিয়ন, এনআরবিসি ও রূপালী ব্যাংকের।
বছরের পর বছর ধরে লোকসানে থাকা আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক তার বৃত্ত ভেঙে বের হয়ে এসেছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামিক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, এবি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংক আকর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি করেছে। তবে বাকিগুলোর প্রবৃদ্ধি খুব একটা বেশি নয়।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মাসরুর আরেফিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংকের মুনাফার হার সামান্য কমার কারণ হিসেবে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা যায়। ১. ভবিষ্যতে কী হতে যাচ্ছে এই অনিশ্চয়তার কথা মাথায় রেখে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ধরে রাখার প্রবণতা রয়েছে। ২. ডিপোজিট কস্ট বেড়ে গেছে, সেটাও আয় কমার একটা কারণ। ৩. আর ব্যাংকগুলোর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন- ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো হয়তো আয় করতে পারেনি ভালো। যার কারণে ব্যাংকের সমন্বিত আয় কমেছে। তারপরও খুব বেশি কমেছে বলে মনে হয় না। প্রায় ২০টির মতো ব্যাংক ভালো আয়ে রয়েছে সম্ভবত।’
আমানতের সুদ ও ঋণের সুদহারের মধ্যে পার্থক্য বা মার্জিন কমা ব্যাংকের আয় কমার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন। তিনি ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও।
তিনি বলেন, ‘ইন্ডাস্ট্রিতে আমাদের যে নেট ইন্টারেস্ট মার্জিন সেটা অনেক কমে গেছে। ব্যাংকিং খাতের বড় আয় যেখান থেকে, ব্যাংক ইন্টারেস্ট মার্জিন, সেটা অনেক কমে গেছে বেশির ভাগ ব্যাংকের। এটাই প্রধান কারণ। আরেকটা কারণ হতে পারে, তা হলো অনেক ব্যাংকের ব্যাক ডেট প্রভিশন বেড়েছে।‘
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ মনে করেন, প্রবৃদ্ধি ভালো না হলেও ব্যাংক খাতের যে আয়, সেটি অন্য খাতের তুলনায় ভালো।
তিনি বলেন, ‘এই প্রান্তিকে খুব বেশি ভালো হয়তো করেনি। তবে গত কয়েক বছর ধরে দেখে আসছি ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফা করে। লভ্যাংশও দেয় ভালো । কিন্তু এগুলোর দাম কম।’
তিনি বলেন, ‘হাতে গোনা কয়েকটা ব্যাংক ছাড়া বেশির ভাগ ব্যাংকই প্রতি বছর ভালো মুনাফা করছে। অনেক টাকা আয় করে বলেই কর্মীদের ভালো বেতন দেয়। তারপরও যদি ব্যাংক ওই তুলনায় অল্প মুনাফাও করে এবং বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয় সেটাও অন্য অনেক শেয়ারের চেয়ে ভালো।’
অর্ধবার্ষিকে শেয়ার প্রতি সবচেয়ে বেশি ৩ টাকা ৫৮ পয়সা আয় করেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ টাকা ৪ পয়সা আয় করেছে যমুনা ব্যাংক।
তৃতীয় স্থানে থাকা শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ২ টাকা ৩৯ পয়সা, চতুর্থ স্থানে থাকা পূবালী ব্যাংক ২ টাকা ৩৬ পয়সা, পঞ্চম স্থানে থাকা উত্তরা ব্যাংক ২ টাকা ২৮ পয়সা, ষষ্ঠ স্থানে থাকা ট্রাস্ট ব্যাংক ২ টাকা ২২ পয়সা এবং সপ্তম স্থানে থাকা ইস্টার্ন ব্যাংক শেয়ারপ্রতি ২ টাকা ২১ পয়সা আয় করেছে।
এ ছাড়া শেয়ারপ্রতি দেড় টাকার বেশি আয় করেছে প্রাইম, ইসলামী, প্রিমিয়ার ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।
ব্র্যাক ও ঢাকা ব্যাংকের আয় শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৩০ পয়সা থেকে দেড় টাকার ভেতরে।
শেয়ারপ্রতি ১ টাকার বেশি আয় করেছে ঢাকা এক্সিম এবং আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকও। অর্ধবার্ষিকে বাকি সব ব্যাংকের আয় শেয়ারপ্রতি ১ টাকার কম।
অন্যদিকে একমাত্র ব্যাংক হিসেবে লোকসানে আছে এনবিএল। আর দ্বিতীয় প্রান্তিকে এই ব্যাংকটির পাশাপাশি লোকসান করেছে এনআরবিসি।
সবচেয়ে ভালো করেছে যারা
এই তালিকায় তুলনামূলক হিসাবে নিঃসন্দেহে সবার চেয়ে এগিয়ে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। ওরিয়েন্টাল ব্যাংক থাকাকালে ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো অর্ধবার্ষিক হিসাব ইতিবাচক দেখা গেছে।
এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ১৭ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ২ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে প্রতি শেয়ারের বিপরীতে লোকসান ছিল ৩২ পয়সা।
এই হিসাবে অর্ধবার্ষিকীতে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় বেড়েছে ৩৪ পয়সা।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক
এই ব্যাংকটির আয়ও দুই প্রান্তিকেই বেড়েছে।
এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৩৪ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ২০ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ৮৭ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৪৯ পয়সা।
অর্থাৎ অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকটির আয়ের প্রবৃদ্ধি ৭৭ শতাংশ।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক
কয়েক বছর চাপে থাকলেও চলতি বছর ব্যাংকটি চাপ থেকে বেরিয়ে আসার আভাস দিচ্ছে।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারের বিপরীতে আয় দাঁড়িয়েছে ৭৯ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ২৯ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৫০ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৯৬ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকটির আয়ের প্রবৃদ্ধি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক
এই ব্যাংকটি আয়ে চমক দেখিয়েছে।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারের বিপরীতে আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৪৫ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৫ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৩৯ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৬৪ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকটির আয়ের প্রবৃদ্ধি ৪৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
উত্তরা ব্যাংক
এই ব্যাংকটিও দারুণ সময় কাটাচ্ছে।
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারের বিপরীতে আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৫৭ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৯২ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ২৮ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৫৭ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকটির আয়ের প্রবৃদ্ধি ৪৫ দশমিক ২২ শতাংশ।
এবি ব্যাংক
দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২৪ পয়সা যা গত বছর একই সময় ছিল ১৬ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৪২ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল ৩১ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকটির আয়ের প্রবৃদ্ধি ৩৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
পূবালী ব্যাংক
আয়ের প্রবৃদ্ধিতে দুই বছর ধরেই চমক দেখাচ্ছে এই ব্যাংকটি।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারের বিপরীতে আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ১৭ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৮২ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৩৬ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৮০ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকটির আয়ের প্রবৃদ্ধি ৩১ দশমিক ১১ শতাংশ।
এক্সিম ব্যাংক
এই ব্যাংকটির আয় দুই প্রান্তিকেই বেড়েছে।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৮৯ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ৮২ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ১৪ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৮৭ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকটির আয়ের প্রবৃদ্ধি ৩১ দশমিক ০৩ শতাংশ।
যমুনা ব্যাংক
এই ব্যাংকটির আয়ও দুই প্রান্তিকেই বেড়েছে।
এর মধ্যে এপ্রিলে থেকে জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৩২ পয়সা আয় হয়েছে, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৪ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ৪ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ২ টাকা ৬৪ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকটির আয়ের প্রবৃদ্ধি ২৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
ঢাকা ব্যাংক
এই ব্যাংকটির আয় দুই প্রান্তিকেই আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। এর মধ্যে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে আয় হয়েছে ৫৭ পয়সা করে, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৪৮ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৩০ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ১৩ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকটির আয়ের প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ০৪ শতাংশ।
ব্যাংক এশিয়া
এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে এই ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৯৪ পয়সা, যা গত বছর একই সময় ছিল ৭০ পয়সা।
দ্বিতীয় প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় ২ টাকা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৭৫ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকটির আয়ের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ২১ শতাংশ।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক
এই ব্যাংকটি কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে আয় বাড়িয়ে চলছে।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারের বিপরীতে আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৩৬ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৩২ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ২২ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৯৬ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকটির আয়ের প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংক
এই ব্যাংকটির আয়ও দুই প্রান্তিকেই বেড়েছে।
এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৯৭ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ১ টাকা ৯৫ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ৫৮ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩ টাকা ২৫ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকটির আয়ের প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ।
প্রিমিয়ার ব্যাংক
ব্যাংকটি তার আয় বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে, যদিও চলতি বছর প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কম।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারের বিপরীতে আয় দাঁড়িয়েছে ৯৫ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৯৩ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৫৪ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৪৪ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকটির আয়ের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক
দ্বিতীয় প্রান্তিকে আয় সামান্য কমলেও ছয় মাসের সমন্বিত আয় বেড়েছে ব্যাংকটির।
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১০ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১৬ পয়সা।
তবে দুই প্রান্তিক মিলিয়ে অর্থাৎ বছরের প্রথম ছয় মাসের আয় আগের বছরের তুলনায় ১ পয়সা বেড়েছে। ছয় মাসের সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ৩২ পয়সা, গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩১ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকটির আয়ের প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ২২ শতাংশ।
ইসলামী ব্যাংক
দ্বিতীয় প্রান্তিকে কিছুটা কমলেও প্রথম প্রান্তিকে কিছুটা বাড়ার সুবাদে অর্ধবার্ষিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি আয় করেছে ব্যাংকটি।
এর মধ্যে জুনে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারের বিপরীতে আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৫৮ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৬১ পয়সা।
এই প্রান্তিকে প্রতি শেয়ারে ৩ পয়সা কমলেও দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ১০ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ২ টাকা ৮ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকটির আয়ের প্রবৃদ্ধি ০ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
ট্রাস্ট ব্যাংক
দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভাটা পড়লেও দুই প্রান্তিক মিলিয়ে আয় কিছুটা বাড়াতে পেরেছে এই ব্যাংকটি।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারের বিপরীতে আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৩ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ২৮ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ২২ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ২ টাকা ২০ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে এই ব্যাংকটির আয়ের প্রবৃদ্ধিও ইসলামীর মতো ০ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক
দ্বিতীয় প্রান্তিকে এই ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৬৮ পয়সা, যা গত বছর একই সময় ছিল ৯০ পয়সা।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে কমলেও প্রথম প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধির কারণে ছয় মাসে আয় কিছুটা বেড়েছে। এই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ১৭ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল ১ টাকা ১৬ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকটির আয়ের প্রবৃদ্ধি ০ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
সবচেয়ে খারাপ করেছে যারা
এই তালিকায় সবার ওপরে প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক এনবিএল।
এক দশক আগেও দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাংকটির একটির এখন করুণ দশা। প্রথম প্রান্তিকে হতাশার পর দ্বিতীয় প্রান্তিকে হতাশা আরও বাড়িয়েছে ব্যাংকটি।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩৬ পয়সা। গত বছর একই সময়ে এই আয় ছিল ১৬ পয়সা।
প্রথম প্রান্তিকে লোকসান ছিল এর অর্ধেক, শেয়ারপ্রতি ১৮ পয়সা।
অর্থাৎ দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৫৪ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে এই আয় ছিল ২৮ পয়সা।
অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় শেয়ারপ্রতি ৮২ পয়সা আয় কমেছে ব্যাংকটির।
আইএফআইসি ব্যাংক
এই ব্যাংকের দুই প্রান্তিকেই আয় কমেছে।
এর মধ্যে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৩৪ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৪৫ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে অর্ধবার্ষিকে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ৫২ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৮৭ পয়সা।
অর্থাৎ অর্ধবার্ষিকে এই ব্যাংকটির আয় কমেছে ৪০ দশমিক ২২ শতাংশ।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক
গত কয়েক বছর ধরে চাপে থাকা এই ব্যাংকটির আয়ে এবারও ভাটা পড়েছে।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারের বিপরীতে আয় দাঁড়িয়েছে ২ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৬ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ১৫ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ২৩ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে এই ব্যাংকটির আয় কমেছে ৩৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
ওয়ান ব্যাংক
গত বছর আয় কমার ধারাবাহিকতা চলতি বছরও দেখা যাচ্ছে এই ব্যাংকটির ক্ষেত্রে।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারের বিপরীতে আয় দাঁড়িয়েছে ৫৩ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৬৭ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ৯৮ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৪৬ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে এই ব্যাংকটির আয় কমেছে ৩২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
ইউনিয়ন ব্যাংক
এই ব্যাংকটির আয় দুই প্রান্তিকেই কমেছে।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারের বিপরীতে আয় দাঁড়িয়েছে ৪৪ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৬২ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ৮৭ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ১২ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে এই ব্যাংকটির আয় কমেছে ২৯ দশমিক ০৩ শতাংশ।
এনআরবিসি
দ্বিতীয় প্রান্তিকে লোকসান দেয়া দ্বিতীয় ব্যাংক এটি। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে শেয়ারপ্রতি সাড়ে ৬ পয়সা লোকসান হয়েছে।
ফলে প্রথম প্রান্তিক শেষে আয় যতটা ছিল, ছয় মাস শেষের হিসাব থেকে কমে গেছে সেখান থেকে।
জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ৭৬ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে এই আয় ছিল শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৩ পয়সা।
অর্থাৎ অর্ধবার্ষিকে এই ব্যাংকটির আয় কমেছে ২৬ দশমিক ২১ শতাংশ।
রূপালী ব্যাংক
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি হতাশ করেই চলেছে। এই ব্যাংকটির আয় চলতি বছর শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি কমেছে।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারের বিপরীতে আয় দাঁড়িয়েছে ৭ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ২২ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ২৯ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩৯ পয়সা।
অর্থাৎ অর্ধবার্ষিকে এই ব্যাংকটির আয় কমেছে ২৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
ব্র্যাক ব্যাংক
এই ব্যাংকটির আয় দুই প্রান্তিকেই কমেছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৭০ পয়সা, যা গত বছর একই সময় ছিল ৯০ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে সমন্বিত আয় হয়েছে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৪৭ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৭২ পয়সা।
অর্থাৎ অর্ধবার্ষিকে এই ব্যাংকটির আয় কমেছে ১৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
প্রাইম ব্যাংক
দারুণ দ্বিতীয় প্রান্তিক কাটিয়েও প্রথম প্রান্তিকের কারণে ব্যাংকটির আয় আগের বছরের তুলনায় কমেছে।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় ৭২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে সমন্বিত ইপিএস হয়েছিল ৪২ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৬১ পয়সা। গত বছরও প্রথম দুই প্রান্তিকে ব্যাংকটির সমন্বিত ইপিএস ১ টাকা ৭৯ পয়সা ছিল।
অর্থাৎ অর্ধবার্ষিকে এই ব্যাংকটির আয় কমেছে ১০ দশমিক ০৫ শতাংশ।
এসআইবিএল
এই ব্যাংকটি দ্বিতীয় প্রান্তিকে বেশ ভালো করলেও প্রথম প্রান্তিকে আয়ে ভাটার কারণে অর্ধবার্ষিকে আয় কমেছে।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারের বিপরীতে আয় দাঁড়িয়েছে ৩৫ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ২১ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ৪৯ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৫৩ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে এই ব্যাংকটির আয় কমেছে ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
সিটি ব্যাংক
দ্বিতীয় প্রান্তিকে বাড়লেও প্রথম প্রান্তিকে কমে যাওয়ার কারণে ব্যাংকটির আয় কিছুটা কমেছে।
এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ২১ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ১ টাকা ১৯ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৪ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ২ টাকা ১৬ পয়সা।
অর্থাৎ অর্ধবার্ষিকে এই ব্যাংকটির আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
ইউসিবি
এই ব্যাংকটির আয় দ্বিতীয় প্রান্তিকে বাড়লেও অর্ধবার্ষিকে কিছুটা কমেছে।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারের বিপরীতে আয় দাঁড়িয়েছে ৬৮ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৬০ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ৯৪ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৯৮ পয়সা।
অর্থাৎ অর্ধবার্ষিকে এই ব্যাংকটির আয় কমেছে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।
ইবিএল
প্রথম প্রান্তিকে বাড়লেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে কম হওয়ায় এই ব্যাংকটির আয় কিছুটা কমেছে।
এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ১০ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ১ টাকা ৩১ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ২১ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ২ টাকা ২৮ পয়সা।
অর্থাৎ অর্ধবার্ষিকে এই ব্যাংকটির আয় কমেছে ৩ দশমিক ০৭ শতাংশ।
সমান আয় দুই ব্যাংকের
সাউথইস্ট ব্যাংক
দ্বিতীয় প্রান্তিকে এই ব্যাংকটির আয়েও ভাটা পড়েছে। তবে প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির সুবাদে আয় কমেনি।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারের বিপরীতে আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ২৬ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৩৪ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৫৬ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল সমান।
এনসিসি ব্যাংক
দ্বিতীয় প্রান্তিকে কিছুটা কমলেও দুই প্রান্তিক মিলিয়ে সমান আয় করেছে এই ব্যাংকটি।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারের বিপরীতে আয় দাঁড়িয়েছে ৭৪ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৮২ পয়সা।
দুই প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৩৩ পয়সা, যা আগের বছরও ছিল একই পরিমাণ।
আরও পড়ুন:
ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে পুঁজিবাজার। বুধবারের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারও দেশের পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। সে সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের গতি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার পাশাপাশি সবক’টি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। ডিএসইতে দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে হাফ ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান।
পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মেলে বুধবার। তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৫৮ পয়েন্ট। তবে লেনদেন কমে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমে আসে।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এসে মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কিছুটা ফিরে এসেছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।
এদিন পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকাও বড় হতে থাকে।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৩০৩টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৪টির। আর ৫০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
দাম বাড়ার তালিকায় থাকা ৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই বেড়েছে। দিনের সর্বোচ্চ দামে এ সাত প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ শেয়ার ক্রয়ের আদেশ এলেও বিক্রিয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিস, শাহিনপুকুর সিরামিক, পেপার প্রসেসিং, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং এবং পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স।
দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এ সাত প্রতিষ্ঠান দাপট দেখানোর পাশাপাশি আরও প্রায় এক ডজনের প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার সর্বোচ্চসীমার কাছাকাছি চলে আসে। আর ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ৪ শতাংশের ওপরে বেড়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬৯ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৯৪১ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৫ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৫৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে ৬০০ কোটি টাকার ওপরে চলে এসেছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬১০ কোটি ৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪২২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে বেস্ট হোল্ডিংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশের ২৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গোল্ডেন সন।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ফু-ওয়াং সিরামিক, মালেক স্পিনিং, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিস, রবি, গোল্ডেন হার্ভেস্ট এবং ওরিয়ন ফার্মা।
অপরদিকে সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৭৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৭টির এবং ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বৃহস্পতিবার লেনদেন বেড়ে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের পর এটাই সর্বোচ্চ লেনদেন হলো।
সপ্তাহের শেষ দিনে ডিএসইতে বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে প্রধান মূল্যসূচক। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) মূল্যসূচক বেড়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই প্রধান মূল্যসূচক বাড়লো। একই সঙ্গে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২০২২ সালের ৮ নভেম্বরের পর বা ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকায় লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৪২ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
অবশ্য লেনদেনের শেষদিকে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে যায়। পাশাপাশি দাম বাড়ার তালিকায় থাকা বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার হার কমে আসে। একই সঙ্গে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতাও কমে। এমনকি ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে।
লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ২১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। দাম কমেছে ১৪০টির। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৪টির।
দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩০টির দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে হল্টেড হয়েছে ৭ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।
ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩৭৩ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে ২০২২ সালের ৮ নভেম্বরের পর সূচকটি সর্বোচ্চ অবস্থানে অবস্থান করছে। ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৮৪ পয়েন্ট।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৩৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় শূন্য দশমিক ১৮ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৮৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
প্রধান মূল্যসূচক বাড়ার দিনে ডিএসইতে এক হাজার ৮৫৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় এক হাজার ৭৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১২৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ লেনদেন হলো। ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে ২ হাজার ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর আর দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেনের দেখা মেলেনি।
এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৬৫ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার। ৫৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মালেক স্পিনিং, ফরচুন সুজ, ফু-ওয়াং সিরামিক, ফু-ওয়াং ফুড, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, এডভেন্ট ফার্মা এবং বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম।
অপর সিএসই-তে সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১২০ পয়েন্ট। এখানে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩০৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২০টির এবং ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ২৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:শেয়ারের ওপর থেকে বেঁধে দেয়া সর্বনিম্ন দর বা ‘ফ্লোর প্রাইস’ তুলে নেয়ার সুফল মিলতে শুরু করেছে দেশের পুঁজিবাজারে। ৩৫টি কোম্পানি বাদে বাকি সব শেয়ারের ওপর থেকে ‘ফ্লোর প্রাইস’ তুলে নেয়ার এক কার্যদিবস পরই সোমবার লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘর ছুঁয়েছে।
ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পরবর্তী কার্যদিবসে রোববার পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেনে বড় নিম্নমুখিতা দেখা যায়। অবশ্য বাজার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সক্রিয় ভূমিকায় ওইদিন আরও বড় পতনের হাত থেকে রক্ষা পায় স্টক এক্সচেঞ্জ।
তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসইসি’র পদক্ষেপ যে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, তা প্রমাণ হয়ে গেছে পরবর্তী কার্যদিবসেই। ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাজার। সোমবার সূচক বাড়ার পাশাপাশি দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ছয় মাসেরও বেশি সময় পর লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখা ৩৫ কোম্পানির মধ্যে আরও ২৩ কোম্পানির সর্বনিম্ন দরসীমা সোমবার তুলে নিয়েছে বিএসইসি।
সংস্থাটির এমন সিদ্ধান্ত বাজারকে আগামী কয়েক দিনের জন্য কিছুটা নিম্নমুখী করতে পারে- এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আল-আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় ভূমিকার কারণে গত দুদিন আমাদের ধারণার তুলনায় মার্কেট অনেকটা ভালো আচরণ করেছে। ধারণা ছিল যে, এতগুলো শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস যেহেতু একবারে তোলা হয়েছে, সেহেতু কয়েক দিনের মধ্যেই ৫০০ পয়েন্ট পর্যন্ত সূচক কমতে পারে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সাপোর্ট মার্কেটকে একটা স্ট্যাবল অবস্থানে রাখতে সাহায্য করেছে।’
নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য তাদের আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
তবে নতুন করে ২৩ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার নেতিবাচক একটা দিক আগামী কয়েক দিন বাজারে দেখা যেতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষক মো. আল-আমিন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি সংক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত থাকলে এ ক্ষেত্রে বাজারের জন্য সহায়ক হতে পারে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সোমবার লেনদেন শুরুর ২ মিনিট পর অতিরিক্ত বিক্রির চাপে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৬০ পয়েন্ট কমে যায়। পরে অবশ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে সূচক বাড়তে থাকে। দিন শেষে সূচকটি ১৪ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৫৪ পয়েন্টে অবস্থান নেয়। এর আগের কার্যদিবস রোববার লেনদেন শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ৬ হাজার ২৪০ পয়েন্টে।
ডিএসইএক্স সূচকটিকে পতনের দিকে ঠেলে দিতে সোমবার সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে জিপিএইচ ইস্পাত, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, ফরচুন সুজ, বিবিএসই ক্যাবলস ও সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। তবে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, খান ব্রাদার্স পিপি, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের ইতিবাচক ভূমিকায় সূচক দিন শেষে বেড়েছে।
ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে এদিন লেনদেন শেষে শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৬ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬০ পয়েন্টে। আগের দিন লেনদেন শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ১ হাজার ৩৭৪ পয়েন্টে।
বাছাইকৃত শেয়ারের সমন্বয়ে গঠিত ব্লু-চিপ সূচক ডিএস ৩০ দিনের ব্যবধানে ১০ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৪৮ পয়েন্টে। আগের দিন শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ২ হাজার ১৩৭ পয়েন্টে।
ডিএসইতে সোমবার মোট ১ হাজার ৪২ কোটি ২১ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। এর আগে এক্সচেঞ্জটিতে সবশেষ ১ হাজার কোটি টাকার ঘরে লেনদেন হয়েছিল গত বছরের ১৮ জুলাই। ওইদিন ডিএসইতে লেনদেন হয় ১ হাজার ৪৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ।
সোমবারের লেনদেন আগের কার্যদিবসের (রোববার) চেয়ে ৭৭ শতাংশ বেশি। ডিএসইতে এদিন লেনদেন হওয়া ৩৯২টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ২০৭টির, কমেছে ১৪৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪০টি সিকিউরিটিজের বাজার দর।
এদিকে বাজারকে সক্রিয় রাখতে দেশের শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন ‘সিইও ফোরাম’ থেকে সাপোর্ট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সোমবার পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর এমন সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি।
সিদ্ধান্ত অনুসারে, পুঁজিবাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রত্যেক ডিলার অ্যাকাউন্টে ১ থেকে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। ডিলার অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো শেয়ার বিক্রি করা হবে না। বিনিয়োগকারীদেরকে ইতিবাচকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হবে। যেসব শেয়ারের ক্রেতা থাকবে না, সেখানে বিক্রির আদেশ বসানো হবে না। ট্রেডারদের এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হবে। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের কারণে যাতে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত না হন বা বাজারে বিক্রির চাপ তৈরি না করেন, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতেও বলা হবে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
১২ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বহাল
পুঁজিবাজারে এখন তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৩৯২টি। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ৩৫৭টি শেয়ারদরের সর্বনিম্ন সীমা তুলে নেয় বিএসইসি। আর নতুন করে আজ আরও ২৩ কোম্পানির ওপর থেকে সীমা তুলে নেয়ার পর কেবল ১২ কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকল। নতুন এই ২৩ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার হওয়া সব কোম্পানির শেয়ারদর ওঠানামার সার্কিট ব্রেকার আগের মতোই ১০ শতাংশ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো শেয়ারের দাম ১০ শতাংশের বেশি কমতে বা বাড়তে পারবে না।
যে ১২ কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকছে- আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), বেক্সিমকো লিমিটেড, বিএসআরএম লিমিটেড, গ্রামীণফোন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, রেনাটা লিমিটেড, রবি আজিয়াটা ও শাহজীবাজার পাওয়ার লিমিটেড।
এই ১২ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস কবে তুলে নেয়া হতে পারে এমন প্রশ্নে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনের লেনদেন ও বাজার পরিস্থিতি দেখে কমিশন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। ফ্লোর ধরে রাখা কোম্পানিগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগকারীও রয়েছেন। বাজারের প্রতি তারা যেন নেতিবাচক না হন, তাই পরের ধাপে এসব কোম্পানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:ফ্লোর প্রাইসের বাধামুক্ত হয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর অবশেষে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে এই পদক্ষেপ। তবে নির্দিষ্ট ৩৫টি কোম্পানি ফ্লোর প্রাইজের এই শর্তের মধ্যেই থেকে গেছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের সর্বনিম্ন দরসীমা বেঁধে দেয়ার ফ্লোর প্রাইজ জারি হয়েছিলো প্রায় দেড় বছর আগে। অবশ্য এর আগে ২০২০ সালে আরও একবার ফ্লোর প্রাইস দিয়ে তা ২০২১ সালে তুলে নেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি। তবে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির সুরক্ষা দিতে এতো দীর্ঘ সময় ধরে ফ্লোর প্রাইস এর আগে দেখা যায়নি দেশের পুঁজিবাজারে।
বিএসইসি বৃহস্পতিবার এক আদেশ জারি করে পুঁজিবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয়। ওই আদেশে একইসঙ্গে জানানো হয়, ৩৫টি কোম্পানি এখনও ফ্লোর প্রাইস-এর আওতায় থাকবে। কবে নাগাদ ওইসব কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হবে তা জানায়নি কমিশন।
আদেশে কমিশন জানিয়েছে, ৩৫টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে আগের মতোই স্বাভাবিক লেনদেন হবে। তবে দৈনিক লেনদেনের সার্কিট ব্রেকার অর্থাৎ সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দরসীমা কার্যকর থাকবে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী একদিনে কোনো শেয়ারের দর সর্বোচ্চ দশ শতাংশ বাড়তে পারে, কমার ক্ষেত্রেও সমপরিমাণ দর কমতে পারে।
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পুঁজিবাজার নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন অনেক বিনিয়োগকারী। তবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়ে নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের সেই শঙ্কা অনেকাংশেই কেটেছে। সুদিন ফিরতে শুরু করেছে দেশের দুই পুঁজিবাজারেই।
সদ্য শেষ হওয়া সপ্তাহে আগের সপ্তাহের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই ও চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জ-সিএসইতে বেড়েছে সবগুলো সূচক। পুঁজিবাজার নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠতে শুরু করেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও।
ইতোমধ্যে বুধবার ঘোষণা করা হয়েছে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের মুদ্রানীতি। টানা কয়েকদিন বাড়তে থাকা পুঁজিবাজারে বৃহস্পতিবার অবশ্য কিছুটা দর সংশোধন হয়েছে। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে প্রায় সাড়ে ৯ পয়েন্ট।
বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সম্প্রতি নিউজবাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে জানান, যে কোনো সময় প্রত্যাহার হতে পারে ফ্লোর প্রাইস। যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, বাজার তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারবে বলে মনে করে নিয়ন্ত্রণ কমিশন।
অবশেষে তার সেই কথারই প্রতিফলন ঘটলো ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে।
এদিকে বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। শিমুল আহমেদ নামের এক বিনিয়োগকারীর মন্তব্য, এতে সাময়িকভাবে সূচকের কিছুটা পতন হলেও দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হওয়া যাবে। তিনি বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস আজ হোক কাল হোক প্রত্যাহার করতে হতোই। এখানে বহু বিনিয়োগকারীর মূলধন আটকে আছে। তবে আমার কাছে মনে হয় কমিশন যথাসময়েই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে’।
এছাড়া ৩৫টি কোম্পানির ওপর এখনও বহাল থাকা ফ্লোর প্রাইসও দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি এই বিনিয়োগকারীর।
বিএসইসির আদেশে যে কোম্পানিগুলোর ওপর ফ্লোরপ্রাইস বলবৎ থাকার কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো- আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, বারাকা পাওয়ার, বিএটিবিসি, বেক্সিমকো, বিএসসিসিএল, বিএসআরএম লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিল, কনফিডেন্স সিমেন্ট, ডিবিএইচ, ডোরিন পাওয়ার, এনভয় টেক্সটাইল, গ্রামীণফোন, এইচআর টেক্সটাইল, আইডিএলসি, ইনডেক্স অ্যাগ্রো, ইসলামী ব্যাংক, কেডিএস লিমিটেড, কেপিসিএল, কট্টালি টেক্সটাইল, মালেক স্পিনিং, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল পলিমার, ওরিয়ন ফার্মা, পদ্মা অয়েল, রেনাটা, রবি, সায়হাম কটন, শাশা ডেনিমস, সোনালী পেপার, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, শাইনপুকুর সিরামিকস, শাহজীবাজার পাওয়ার, সামিট পাওয়ার ও ইউনাইটেড পাওয়ার।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং শ্রীলঙ্কার দেউলিয়া ঘোষণাজনিত পরিস্থিতিতে দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতনের শঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। তার আগে কোভিড-১৯ এর প্রকোপ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চে একবার ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিল।
তবে দ্বিতীয় ধাপের ফ্লোর প্রাইসের কারণে পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচা তলানিতে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকায় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ব্রোকার হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোও সংকটে পড়ে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম একে অপরকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান বুধবার নিজেদের মধ্যে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আর্থিক খাতের দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানদের এই বৈঠকে দেশের পুঁজিবাজার ও অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তারল্য কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে আইনের মধ্যে থেকে আরও সক্রিয় করার জন্য গভর্নরের কাছে অনুরোধ জানান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বৈঠকে মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বিএসইসি চেয়ারম্যান নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। এক পর্যায়ে অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি আলোচনায় উঠে আসে। এ সময় পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে ব্যাংকগুলো কীভাবে আরও বেশি অবদান রাখতে পারে সে বিষয়ে গভর্নরের সহযোগিতা চান বিএসইসি চেয়ারম্যান।
বৈঠকে গভর্নরও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজ করার বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান রেজাউল করিম।
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ বছর জুড়েই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। নতুন বছরে পুঁজিবাজারকে আরও বেগবান করতেও নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন:হরতাল আর অবরোধের মধ্যে আরও একটি সপ্তাহ পার করলো দেশের দুই পুঁজিবাজার। এ নিয়ে চার সপ্তাহ ধরে প্রায় একই বৃত্তে ঘুরছে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই। বিনিয়োগকারীরা অবশ্য ধরেই নিয়েছেন এমন অবরোধ আর হরতালের মধ্যে পুঁজিবাজার থেকে খুব বেশি কিছু পাওয়ার নেই তাদের। একইসঙ্গে তারা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এ বাজার সম্ভাবনাময়।
সবশেষ সপ্তাহে ডিএসইর হিসাব বলছে, আরেক ধাপ কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। তবে সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসের লেনদেন ও সূচক বৃদ্ধিতে কিছুটা আশাবাদী অনেক বিনিয়োগকারী। বিশেষ করে শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবারের লেনদেন দেখে তারা বলছেন, এটা পরের সপ্তাহটি ভালো থাকার ইঙ্গিত। অবশ্য এই সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকারও কম।
পাঁচ কর্মদিবসে গেল সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৩৮১ কোটি টাকা। সপ্তাহ কিংবা দিন উভয় ক্ষেত্রেই লেনদেন কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ।
এর আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন ছিলো ২ হাজার ২ কোটি টাকা। আর দৈনিক হিসাবে গড় লেনদেন ছিলো চারশ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। সপ্তাহ শুরুর তিন দিনে অবশ্য আরও হতাশাজনক চিত্র ছিলো।
মঙ্গলবার লেনদেন নেমে আসে তিনশ কোটির নিচে। পাশাপাশি কমতে দেখা যায় সব সূচক। তবে তার পরদিনই সূচকের উত্থান দেখা যায় ডিএসইতে। তার পরদিন সূচকের পাশাপাশি লেনদেনেও গতি দেখা গেছে। বৃহস্পতিবারের লেনদেন ছিলো তার আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৮৬ কোটি টাকা বেশি।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী রোকন উদ্দিন বলেন, ‘সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে লেনদেন ভালো হওয়া মানে পরের সপ্তাহে আরও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা। যদিও ডিসেম্বর মাস ঘিরে খুব বেশি আশা করার কিছু নেই।’
ডিসেম্বর মাসে কেন আশা করছেন না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা তা-ই বলছে। একদিকে বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর, অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর ক্লোজিং থাকে এ মাসে। সব মিলে এ মাসে পুঁজিবাজারের উত্থান হতে পারে তবে সেটি বড় আকারে হবে না বলেই মনে হয়।’
আরেক বিনিয়োগকারী শরিফ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেজে লিখেছেন, ‘শেয়ার বাজার কি শুধু কমবেই, নাকি থামবে এবার?
‘সব কিছুরই তো একটা শেষ আছে। দর পতনের শেষ দেখার অপেক্ষায় রয়েছি। আশা করি নতুন বছরে অনেক হতাশার সাথে শেয়ার বাজারের হতাশাও দূর হবে।’
লেনদেনের পাশাপাশি গেলে সপ্তাহে কমেছে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স। অবশ্য পরিমাণে তা খুব বেশি নয়। ডিএসইএক্স গেল সপ্তাহে কমেছে দশ পয়েন্টের কিছুটা বেশি। সপ্তাহের শুরুতে প্রধান এই সূচকটির অবস্থান ছিলো ৬ হাজার ২৩৩ পয়েন্ট, যা সপ্তাহ শেষে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২২৩ পয়েন্ট। তবে ডিএস-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচক সামান্য পরিমাণে বেড়েছে এ সপ্তাহে। সবমিলে পুরো নভেম্বর মাসে ডিএসইর প্রধান সূচকটি কমেছে প্রায় ৫০ পয়েন্ট।
হতাশা রয়েছে বাজার মূলধন ঘিরেও। গেল সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় সাতশ কোটি টাকা। তবে পুরো নভেম্বর মাসের হিসাবে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৩ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। নভেম্বরের শুরুর দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর বাজার মূলধন ছিলো ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, যা মাসের শেষ কার্যদিবসে নেমেছে ৭ লাখ ৭১ হাজার ৮১৬ কোটিতে।
বাজার মূলধন কমে আসাকে অবশ্য নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকে বিনিয়োগকারী। তানভীর নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘যেভাবে বাাজার মূলধন কমেছে তা দেখলে ভয় হয়। ফ্লোর প্রাইসের কারণে এখন চাইলেও শেয়ার বিক্রি করা সম্ভব নয়। এজন্য আমরা অনেকে বাধ্য হয়ে পুঁজিবাজারের সাথে ইনভলভ রয়েছি। একটাই প্রত্যাশা- শেয়ারের দাম কমবে না। তবে যখন দেখি বাজার মূলধন কমে যাচ্ছে তখন কিছুটা ভয় পাই।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা বলে পুঁজিবাজার এখান থেকে আবারও উপরের দিকে যাবে। যদি প্রশ্ন করেন- কেন? তাহলে বলবো অনেক কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হলো রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এটা ঠিক হয়ে গেলে বড় বড় বিনিয়োগকারীরা আবারও বাজারে সক্রিয় হয়ে উঠবে।’
নেতিবাচক বাজারেও ডিএসইতে গত সপ্তাহে বেড়েছে বেশ কিছু শেয়ারের দর। অনেকে এটাকে বলছেন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি।
সপ্তাহের বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে জিকিউ বলপেনের। ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত শেয়ারটির পুরো সপ্তাহে দর বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ। মূল্যবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলো আফতাব অটোমোবাইলস।
এছাড়া তৃতীয় থেকে পঞ্চম অবস্থানে ছিলো যথাক্রমে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস, লিবরা ইনফিউশন ও সমতা লেদার। তিনটি কোম্পানিই ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত। অর্থাৎ মূল্যবৃদ্ধিতে এক থেকে পাঁচের মধ্যে থাকা চারটি কোম্পানিই ‘বি’ ক্যাটাগরির।
এছাড়া লেনদেনেও আধিপত্য বিস্তার করছে ‘বি’ ক্যাটাগরির শেয়ার। গেল সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষস্থানে দেখা গেছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছিলো সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ইয়াকিন পলিমার লিমিটেড, ফুওয়াং ফুড এবং সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড। এ সপ্তাহে লেনদেনে শীর্ষ অবস্থানে থাকা পাঁচটি কোম্পানির মধ্যেও চারটি ছিলো ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত।
আরও পড়ুন:বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে পাঁচ তারকা হোটেল লে মেরিডিয়ানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। কোম্পানিটিকে পুঁজিবাজার থেকে ৩৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা শুক্রবার কোম্পানির নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলো পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনকালে কোম্পানির চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ তাদের প্রকল্পগুলো নিয়ে বিস্তারিত জানান। এ সময় তিনি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়ার সক্ষমতা তুলে ধরেন।
এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ বলেন, ‘বেস্ট হোল্ডিংসের প্রকল্পগুলো ব্যবসা সফল হওয়ার বিষয়ে আমরা শতভাগ আশাবাদী। সম্প্রতিক বছরগুলোতে ভালো মুনাফা অর্জনের চিত্রই তার প্রমাণ বহন করে। এর বাইরে কোম্পানির রিটেইন্ড আর্নিংস বা অর্জিত মুনাফা রয়েছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি, যা বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দাবিদার।’
তিনি বলেন, ‘বেস্ট হোল্ডিংস এমন একটি কোম্পানি যারা বিশ্বের স্বনামধন্য চারটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ম্যারিয়ট, লে মেরিডিয়ান, হেইলিবেরি ও লাক্সারিয়াস।
‘ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে লজিস্টিক সাপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যবসা পরিচালনা করে বেস্ট হোল্ডিংস। বাংলাদেশের ইতিহাসে একক মালিকানার কোম্পানি হিসেবে এটি এক্ষেত্রে অনন্য উচ্চতায় রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে থাকা প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে মধ্যে আগামী বছরেই শেষ করতে পারলে এর কার্যক্রম থেকে ভালো মুনাফা অর্জন সম্ভব হবে, যা বিনিয়োগকারী ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে অবাদন রাখবে বলে বিশ্বাস করি।’
‘মানসম্পন্ন সম্পদ গঠনে বিনিয়োগ করুন, যা আপনাকে কয়েক দশক ধরে ক্রমবর্ধমান রাজস্ব তৈরি করতে সহায়তা করবে’ এমন দর্শনকে বুকে লালন করে গড়ে ওঠে বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। কোম্পানির চেয়ারম্যান আমিন আহমেদের তিন দশকের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে দেশের একজন খ্যাতিমান সেতু নির্মাণকারী হিসেবে। তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় সফল ব্যবসায়ী জীবনের পেছনে যেসব প্রতিবদ্ধকতাকে অতিক্রম করতে হয়েছে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন আমিন আহমেদ। এতে তিনি কীভাবে তার কোম্পানি অবকাঠামো তৈরি করছে, ব্যবসায় কোন ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন এবং কীভাবে একটি বিলাসবহুল হোটেল-রিসোর্ট সাম্রাজ্যের জন্য তার স্বপ্নকে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল সেসব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
আমিন আহমেদ বলেন, ‘চাহিদা মূল্যায়ন এবং স্থান নির্বাচনে বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পাঁচ তারকা হোটেল লে মেরিডিয়ান প্রতিষ্ঠা একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। কেননা, ঢাকায় আসা বিদেশি অতিথিরা এখানে বিশ্বের বড় বড় হোটেলগুলোর চেয়ে বেশি মূল্যায়ন দিতেও আপত্তি করেন না।’
নির্মাণকাজ স্থগিত রাখা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে দেরি হওয়ার কারণে ‘লে মেরিডিয়ান ঢাকা’র উদ্বোধন সাত বছর পিছিয়ে দিতে হয়েছিল। হোটেল প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০০৫-০৬ সালে শুরু করা হলেও এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয় ২০১৫ সালে।
৯০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প সময়সমতো শেষ করা সম্ভব না হওয়ায় এর ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। ফলে কোম্পানিকে ব্যাংক ঋণের সহায়তা নিতে হয়েছে। লে মেরিডিয়ান হোটেল এবং ভালুকা ও নোয়াখালীতে কোম্পানির কৃষি খামারের জন্য ব্যাংক ঋণ ও কনভার্টিবল বন্ড ইস্যুর পথ সহজ হয়েছিল।
২০১৯ সালে বেস্ট হোল্ডিংস তার ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বন্ডের মাধ্যমে ১২০০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছিল। ইতোমধ্যে এর বড় একটা অংশ নগদ এবং ইক্যুইটিতে রূপান্তরের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে।
আমিন আহমেদ বলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে আমরা যখন লে মেরিডিয়ানের যাত্রা শুরু করলাম তার কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বজুড়ে মহামারি কোভিড-১৯ আঘাত হানে। ফলে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ হিসাব বছরে আমাদের ব্যবসা অনেক কমে যায়। এর মধ্যে ২০২০-২১ হিসাব বছরে আমাদের রাজস্ব আয় নেমে আসে ১১৩ কোটি টাকায়, যা দুই বছর আগের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ।
অবশ্য ২০২২-২৩ হিসাব বছরে আমরা মহামারির আগের বছরের থেকেও ভালো অবস্থানে ফিরতে পেরেছি। আশা করছি, আগামী বছরে আমাদের ব্যবসা আরও বাড়বে। কেননা, লে মেরিডিয়ান ঢাকায় এখন রুম ভাড়া আগের থেকে ৭০-৮০ শতাংশ বেশি।’
প্রসপেক্টাস অনুসারে, বেস্ট হোল্ডিংসের আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ ভবন ও অন্যান্য পূর্তকাজ, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয়, ঋণ পরিশোধ ও আইপিও প্রক্রিয়ার খরচ খাতে ব্যয় করা হবে। কোম্পানিটির নির্মাণাধীন প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হলো- আন্তর্জাতিক মানের একটি ম্যারিয়ট হোটেল, বিলাসবহুল রিসোর্ট, ব্যক্তিগত ভিলা, স্কুল প্রকল্প এবং ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল।
আইপিওর মাধ্যমে তোলা ৩৫০ কোটি টাকার মধ্যে ১৭৬ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যবহার করা হবে ভালুকায় ৪৩ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা রিসোর্টটির ভবন তৈরিতে। ৪৫ কোটি টাকা দিয়ে এই রিসোর্টের জন্য যন্ত্রপাতি কেনা হবে। আর ১১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হবে। এছাড়া আইপিও প্রক্রিয়ার ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
প্রসঙ্গত, কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে শান্তা ইকুইটি লিমিটেড ও আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। তালিকাভুক্তির আগে কোম্পানিটি কোনো ধরনের লভ্যাংশ ঘোষণা, অনুমোদন বা বিতরণ করতে পারবে না বলে শর্ত দিয়েছে বিএসইসি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য