পুঁজিবাজারে আরও বেশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ডিজিটালাইজেশনে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক।
রোববার রাতে খ্যাতনামা গাড়ি বিপণন প্রতিষ্ঠান কার সিলেকশনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আমায়া সিকিউরিটিজ লিমিটেডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর বারিধারায় একটি কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি অর্থনীতির জন্য শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী অবস্থানে আনা দরকার। তারই লক্ষ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সঙ্গে বসেছি। আগামী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সঙ্গে বসব।’
‘এনহান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনমির (ইডিজিই) আওতায় বিএসইসি এবং ডিএসইকে অটোমেশনের মাধ্যমে ডিজিটালাইজ করে আরও কতটা স্বচ্ছতায় নিয়ে আসা যায় তা নিয়ে কাজ করছি। বিনিয়োগকারীদের কল্যাণে আরও কীভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয়ে আমরা বসেছি।’
আমায়া সিকিউরিটিজ গ্রাহকদের প্রত্যাশা পূরণে সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রতিমন্ত্রী পলক।
তিনি বলেন, ‘ব্রোকারেজ হাউসের সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে গ্রাকদের কাছে বিশ্বাস এবং আস্থা তৈরি করা। সে জায়গা থেকে আমায়া সিকিউরিটিজের কর্ণধার আসলাম সেরনিয়াবাতের ব্যক্তিত্ব, ব্যাবসায়িক দক্ষতা গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারবে। এরই মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য আমায়া সিকিউরিটিজ জনপ্রিয় নাম হয়ে উঠবে বলে আমি মনে করি।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্যবসায়ীদের বৃহৎ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আমিন ভূঁইয়া।
শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আসলাম সেরনিয়াবাত।
তিনি বলেন, 'বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং বিশ্বাস অর্জন করে আমায়া সিকিউরিটিজ এগিয়ে যেতে চায়। বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করে সিকিউরিটিজ হাউসের শীর্ষ তালিকায় স্থান করে নেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’
গত ১২ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ট্রেকহোল্ডার আমায়া সিকিউরিটিজ লিমিটেড স্টক ডিলার রেজিস্ট্রেশন সনদ পেয়েছে।
ডিএসইতে কোম্পানিটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর-ডিএসই-২৬৮/২০২২/৫৭৮। কোম্পানিটির ডিলার ট্রেডিং আইডি ডিএলআরএএমএ।
আরও পড়ুন:ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিশা মার্টে ২৬টি মটর বাইকের অর্ডার দেন নুরুল আবছার। জমা দেন ৩১ লাখ টাকার বেশি। কিন্তু সেই বাইক আর পাওয়া হয়নি। এতোদিন আশায় থেকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন এই যুবক।
তিনি বলেন, ‘নিজের এবং পরিবারের অন্যান্যদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানে জমা দেই। কিন্তু বাইক পাওয়া যায়নি। প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় অনেক বার। তবে, তা রক্ষা করা হয়নি। জমার রশিদ আছে, যদি এটা দিয়ে টাকা ফেরত পাওয়া যায়, তাহলে বেঁচে যাব।’
ই-কমার্সে টাকা জমা দিয়ে পণ্য না পাবার এমন উদাহরণ অনেক। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে জমেছে অভিযোগের স্তুপ। প্রতিদিনই টাকা ফেরত চেয়ে অভিযোগ দায়ের হচ্ছে। তবে, ব্যাংক এবং গেটওয়ের মাধ্যমে জমা দেয়া অর্থই কেবল ফেরত পাবার সম্ভাবনা নিশ্চিত করছে এই প্রতিষ্ঠান।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘প্রতারিত হয়ে মানুষ আসছে, অভিযোগ দায়ের করছে। তবে, সরাসরি যারা পণ্যের জন্য অর্থ জমা দিয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে টাকা ফিরিয়ে দেবার উপায় নেই।
কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কত অভিযোগ
২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৪৬টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ ফেরত চেয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ জমা পড়েছে ২৭ হাজার ৭৮৩টি। তার মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়া অভিযোগের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক বা ৪৬ দশমিক ২৮ ভাগ। অনিষ্পন্ন অভিযোগের সংখ্যা ১৪ হাজার ৯২৪টি।
কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে জমা পড়ে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ। মোট অভিযোগের সংখ্যা ১০ হাজার ৭৫৫টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়া অভিযোগের সংখ্যা ৪ হাজার ৪৯৫টি। অনিষ্পন্ন অভিযোগ ৬ হাজার ২৬০টি। নিষ্পত্তির হার ৪১ দশমিক ৭৯ ভাগ।
এর পরেই এসেছে আরেকটি বন্ধ হয়ে যাওয়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের নাম। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৫ হাজার ৮৭১টি। তবে, অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ৩৩টি। অনিষ্পন্ন অভিযোগের সংখ্যা ৫ হাজার ৮৩৮। অভিযোগ নিষ্পত্তির হার শূন্য দশমিক ৫৬ ভাগ।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা দারাজ ডট কমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ১ হাজার ৭০টি, যার ৯০ দশমিক ৩৭ শতাংশই নিষ্পত্তি হয়েছে। অনিষ্পন্ন অভিযোগ ১০৩টি।
এছাড়া ফাল্গুনি ডট কমের বিরুদ্ধে আসা ৬৬৮টি অভিযোগের মধ্যে ৫৯৮টি, প্রিয়শপের বিরুদ্ধে ৬৫৪টি অভিযোগের বিপরীতে ৪৬৮টি নিষ্পত্তি হয়েছে।
ধামাকা শপিংয়ের ৫৫৭ টি অভিযোগের বিপরীতে নিষ্পত্তি মাত্র ৮১টি। কিউকমের বিরুদ্ধে ৩৬৭টি অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। এর মধ্যে নিষ্পত্তি মাত্র সাতটি।
ফুড পান্ডার বিরুদ্ধে ৩৪০টি অভিযোগের বিপরীতে নিষ্পত্তি ২৬১টি।
আলেশামার্টের বিরুদ্ধে ৩১৮টি অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। এর মধ্যে নিষ্পত্তি মাত্র তিনটি।
এ ছাড়া পাঠাওয়ের বিরুদ্ধে ২৭০টি অভিযোগের বিপরীতে নিষ্পত্তি হয়েছে ২৬৬টি, চালডালের বিরুদ্ধে ২০৬টি অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৭৯টি।
অথবা ডট কমের ২০১টি অভিযোগের বিপরীতে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৬২টি।
আজকের ডিল ডট কমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ১৮৪টি, নিষ্পত্তি হয়েছে ১৬৯টি। বিক্রয় ডট কমের বিরুদ্ধে গ্রাহকের অভিযোগ ১৭৬টি, নিষ্পত্তি হয়েছে ১৬০টি।
আদিয়ান মার্টে গ্রাহকের অভিযোগ ১৫৮টি, নিষ্পত্তি মাত্র ৩৯টি।
উবারের বিরুদ্ধে ১৩০টি অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। এর মধ্যে নিষ্পত্তি ১২৬টি। নিরাপদ ডট কমে গ্রাহকের অভিযোগ ১১৯টি, নিষ্পত্তি মাত্র ৭৩টি।
দালাল প্লাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ১০১টি। নিষ্পত্তি মাত্র সাতটি।
ফেইসবুক পেজ
এ সময়ে ফেইসবুক পেজগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকরা ৫ হাজার ২২৭টি অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তর নিষ্পত্তি করেছে ৪ হাজার ৬০৬টি অভিযোগ। শতকরা নিষ্পত্তির হার ৮৮ দশমিক ১২ শতাংশ।
কত ফেরত পেলেন গ্রাহক
হিসেব বলছে, ৫৩টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা অর্থের পরিমাণ ২১ হাজার কোটি টাকা। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকে হিসাবে স্থিতি মাত্র ৩৮৮ কোটি টাকা।
সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা নেয় ইভ্যালি। এ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিরীক্ষায় বোর্ড গঠন করে দিয়েছে হাইকোর্ট। তবে অর্থ ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে সুখবর নেই।
কিউকম এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ১০০ জন গ্রাহককে ফেরত দিয়েছে ১৩৮ কোটি টাকা। আলেশা মার্ট ২ হাজার ২১৮ গ্রাহককে দিয়েছে ৩৯ কোটি টাকা।
দালাল প্লাস দিয়েছে ১২ কোটি টাকা, বুম বুম ৮০ লাখ টাকা, ধামাকা ৪৩৩ জন গ্রাহককে ৩২ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে।
এ ছাড়া আদিয়ান মার্ট ১৪ লাখ টাকা, আনন্দের বাজার ৬ লাখ টাকা, টোলাই ডট কম ১২ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সবশেষ তথ্য বলছে, ব্যাংক ও গেটওয়েতে জমে থাকা অর্থের মধ্যে ২১ হাজার ২০৮ জন গ্রাহক ফেরত পেয়েছেন ১৯৩ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:ব্যাংকক যেতে টিকিট কিনলে দুই রাত বিনা মূল্যে হোটেলে থাকার অফার ঘোষণা করেছে বেসরকারি ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস। প্রতিষ্ঠানটির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, ইউএস বাংলা আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সপ্তাহে পাঁচ দিন ঢাকা-ব্যাংকক-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করতে যাচ্ছে। যাত্রা শুরুর প্রথম দিন থেকে বাংলাদেশি পর্যটকরা দুটি টিকিট কিনলেই দুই রাত ফ্রি হোটেলে থাকার সুযোগ পাবেন।
এই অফার ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। অফারে অন্তর্ভুক্ত হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংককের হোটেল ম্যানহাটন সুকুমভিত, অ্যাম্বাসেডর হোটেল ও গ্র্যান্ড প্রেসিডেন্ট হোটেল। আকর্ষণীয় এ অফারটি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের যেকোনো নিজস্ব সেলস্ কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করা যাবে।
এই প্যাকেজের জন্য জনপ্রতি ন্যূনতম খরচ ধরা হয়েছে ৩৮ হাজার টাকা। অফারটি প্রাপ্তবয়স্ক দুইজন পর্যটকের জন্য প্রযোজ্য হবে। প্যাকেজের সাথে বুফে ব্রেকফাস্ট অন্তর্ভুক্ত। শর্তসাপেক্ষে প্যাকেজে অতিরিক্ত রাত ও শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগও রাখা হয়েছে।
চোরাচালান প্রতিরোধে জব্দ সোনার ২৫ শতাংশ পুরস্কার হিসেবে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সদস্যদের দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস)।
সমিতির পক্ষ থেকে অসাধু জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের প্রতিও দেয়া হয়েছে হুঁশিয়ারি বার্তা।
বাজুসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হলমার্ক ছাড়া কোনো অলংকার বিক্রি করা যাবে না। কোনো জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের হলমার্ককৃত অলংকার নিম্নমানের পাওয়া গেলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অবহিত করা হবে।
শনিবার বাজুস আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান পাচার প্রতিরোধ ও আইন প্রয়োগ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এনামুল হক খান দোলন সমিতির প্রস্তাব ও অবস্থান ব্যক্ত করেন।
সারা দেশে জুয়েলারি শিল্পের বাজারে অস্থিরতা, চলমান সংকট ও সমস্যা, দেশি-বিদেশি চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, অর্থ পাচার ও চোরাচালান বন্ধ এবং কাস্টমস আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জোরালো অভিযানের দাবিতে রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওই সময় সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবের যৌক্তিকতা তুলে ধরে এনামুল হক খান বলেন, ‘বাজুসের প্রাথমিক ধারণা, প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ত, ঘামে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার অপব্যবহার করে প্রতিদিন জল, স্থল ও আকাশপথে কমপক্ষে প্রায় ২০০ কোটি টাকার অবৈধ সোনার অলংকার ও বার চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে, যা ৩৬৫ দিন বা এক বছর শেষে দাঁড়ায় প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা।
দেশের চলমান ডলার সংকটে এই ৭৩ হাজার কোটি টাকার অর্থ পাচার ও চোরাচালান বন্ধে তিনি সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান।
এনামুলের ভাষ্য, দেশে অবৈধভাবে আসা সোনার সিকিভাগও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নজরে আসছে না। ফলে নিরাপদে দেশে আসছে চোরাচালান হওয়া বিপুল পরিমাণ সোনার চালান। আবার একইভাবে পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশ যে সোনা চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, এটা এখন আর কথার কথা নয়। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য।
তিনি মনে করেন, এই পরিস্থিতি উত্তরণে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিয়মিত কড়া নজরদারি জরুরি। পাশাপাশি বাজুসকে সম্পৃক্ত করে আইন প্রয়োগকারী সব দপ্তরের সমন্বয়ে সোনা চোরাচালানবিরোধী সেল গঠন এবং চোরাচালান আইন সংশোধনও সময়ের দাবি।
এনামুল হক খান প্রস্তাব করেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অভিযানে উদ্ধার হওয়া সোনার মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে দিলে প্রতিরোধ কার্যক্রম আরও জোরদার হবে।
ব্যাগেজ রুলের সুবিধার আওতায় সোনা ও সোনার ভার আনতে গিয়ে দেশের ডলারের ওপর কেমন প্রভাব পড়ছে, তার সমীক্ষা করার তাগিদ দেন তিনি। তার মতে, সমীক্ষায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় কমবে।
আরও পড়ুন:লন্ডনভিত্তিক পত্রিকা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত সংবাদে চীনা ঋণ নিয়ে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের অবস্থান যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি উল্লেখ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এমনটা উল্লেখ করে শুক্রবার ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে প্রতিবাদ পাঠানো হয়েছে।
৯ আগস্ট অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের সাক্ষাৎকার নেয় ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সাক্ষাৎকারে মুস্তফা কামাল বলেছেন যে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) ব্যাপারে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী সতর্ক মনোভাব দেখিয়েছেন। তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, চীনের বিআরআই ঋণ নেয়ার আগে অন্তত দুবার ভাবা উচিত।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের দাবি, প্রকাশিত ‘চীন থেকে বেল্ট অ্যান্ড রোড ঋণ নিয়ে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর সতর্কতা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে আ হ ম মুস্তফা কামালের অবস্থান যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি।
প্রকাশিত প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলা হয়, ‘শ্রীলঙ্কা গত মে মাসে ঋণখেলাপি হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নিতে চাইছে। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী স্পষ্টভাবেই বলেছেন, যেকোনো দেশের যেকোনো প্রকল্প অর্থায়ন পেতে পারে যদি যথাযথ সমীক্ষার পর বোঝা যায় যে প্রকল্পটি আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার মতো।
‘সম্ভাবনাময় নয়, এমন কোনো প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ কখনোই কোনো সংস্থা থেকে ঋণ নেয়নি—অর্থমন্ত্রী এ বিষয়েই জোর দিয়ে কথা বলেছেন তার সাক্ষাৎকারে। চীন থেকে ঋণ নেয়ার বিষয়ে কোনো ধরনের সতর্কতা আরোপ করেননি তিনি।’
প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার যেখানে ৪১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার, সেখানে চীন থেকে নেয়া ঋণ ৪০০ কোটি ডলার। এ ছাড়া বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ২০২১ সালের হিসাবে ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার।’
প্রতিবাদপত্রে আরও বলা হয়, ‘ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এক বছর আগের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪ হাজার ৫০০ কোটি থেকে কমে ৪ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে। অথচ ২০১৯ সালের জুনেই রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ২৭০ কোটি ডলার।
‘২০২১ সালের আগস্টে তা ৪৭ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ৮১০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড। রিজার্ভ এখন চার হাজার কোটি ডলার, যা দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আইএমএফ যে ঝুঁকিমুক্ত সীমার কথা বলে থাকে, বাংলাদেশের রিজার্ভ এর মধ্যেই আছে।’
বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে অভিনন্দনও জানানো হয়েছে প্রতিবাদপত্রে।
আরও পড়ুন:
মানিচেঞ্জার ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরতা কমানো ও হুন্ডি প্রতিরোধে এবার সারা দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখায় নগদ বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বর্তমানে বৈদেশিক লেনদেনে নিয়োজিত অথরাইজড ডিলার ব্যাংকগুলোর (এডি) শাখা থেকেই কেবল নগদ ডলার কেনাবেচনার অনুমতি রয়েছে। তবে মানি চেঞ্জার ও খোলাবাজারে ডলারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। চলতি সপ্তাহেই ব্যাংকগুলোতে এ ধরনের সেবা চালুর অনুমোদন দেয়া শুরু হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচার শাখার সংখ্যা খুব কম। যেগুলো আছে সেগুলোর বেশির ভাগই রাজধানী ঢাকা ও কয়েকটি বিভাগীয় শহরে। ফলে নগদ ডলার কেনাবেচার জন্য মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয়।
এ ধরনের সেবা কোন এলাকার কোন শাখায় চালু করা হবে, সেই সম্ভাব্য তালিকা চেয়ে আগামী রোববার দেশের সব ব্যাংকের কাছে চিঠি দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রাথমিকভাবে শাখাগুলোতে একটি ডেস্কের মাধ্যমেই এ সেবা চালুর অনুমোদন দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, খোলাবাজার থেকে যে কেউ ডলার কিনতে পারেন। ব্যাংক থেকে কিনতে পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্ট করতে হয়। যে কারণে অনেকে এখন খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে শেয়ারবাজারের মতো বিনিয়োগ করছেন, যা অবৈধ। এতে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
সবশেষ বুধবার খোলাবাজারে এক ডলার কিনতে ১২০ টাকা গুনতে হয়েছে৷ অথচ আন্তব্যাংকে ডলার রেট ৯৫ টাকা।
আন্তব্যাংকের সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের দামের পার্থক্য প্রায় ২৫ টাকা। আর ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজার রেট অনেক বেশি হওয়ায় হুন্ডিতে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।
এমন প্রেক্ষাপটে ডলার বাজারের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল এ পর্যন্ত এক শ’র বেশি মানি চেঞ্জার পরিদর্শন করেছে।
এর মধ্যে ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে ডলার কেনাবেচায় বিভিন্ন অনিয়মের কারণে শোকজ করা হয়। আর পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে। লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করায় ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া ডলারের দাম বৃদ্ধির পেছনে কারসাজির প্রমাণ পাওয়ায় ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর এবার দেশের অভ্যন্তরীণ পরিবহনে ব্যবহৃত লাইটার জাহাজের ভাড়া ১৫ থেকে ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) সভায় ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) অভ্যন্তরীণ পরিবহনে ব্যবহৃত লাইটার (ছোট আকারের) জাহাজগুলো পরিচালনা করে থাকে। এর আগে গেল নভেম্বরে লাইটার জাহাজের ভাড়া ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর লাইটার জাহাজের ভাড়া সমন্বয় না করে উপায় ছিল না। তাই সভায় ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্ত গত শনিবার থেকে কার্যকর ধরে নেয়া হচ্ছে।’
তিনি জানান, নভেম্বরের পর লাইটার জাহাজের যা ভাড়া ছিল, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, বরিশাল ও চাঁদপুরের জন্য তার ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর বাইরের অন্যান্য গন্তেব্যের জন্য ১৫ শতাংশ হারে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে বহির্নোঙ্গর থেকে বন্দরের ভেতরের ভাড়া আগের মতই থাকছে।
সাধারণত বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির পর বড় জাহাজ বা মাদার ভেসেল থেকে বহির্নোঙ্গরে তা লাইটার জাহাজে লোড করা হয়। পরে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে এই লাইটার জাহাজেই পণ্য পৌঁছে দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:দেশ থেকে টাকা পাচারের তথ্য সংগ্রহে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়ে থাকে। দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে (বিএফআইইউ) সুইস ব্যাংকেও একাধিক বার চিঠি দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম এ কথা বলেছেন।
সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশের নাগরিকদের জমা করা অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত সুইস ব্যাংক বা কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য চায়নি- বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ডের এমন মন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
মুখপাত্র বলেন, ‘সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের বিপরীতে আমার কিছু বলার অবকাশ নেই। আমি আমার মন্তব্য বলতে পারি। বিএফআইইউ একাধিকবার বিভিন্ন দেশের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য চেয়েছে। একাধিকবার তাদেরকে চিঠিও দেয়া হয়েছে। সেসব তথ্য রিপোর্ট আকারেও প্রকাশ করেছে বিএফআইইউ।’
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের যেখানে যেখানে তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হয়, তারা সব জায়গা থেকেই তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। বিএফআইইউ আন্তর্জাতিকভাবে এগমন্ড গ্রুপের সদস্য হওয়ায় এই গ্রুপের অন্য যে কোনো সদস্য দেশের কাছেই যে কোনো বিষয়ে তারা তথ্য চাইতে পারে।
‘ব্যাংকিং চ্যানেলে যদি আন্ডার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে আমাদের দেশের অর্থ অন্য দেশে চলে যায়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা নজরদারি করতে পারে। কোন ব্যাংকের মাধ্যমে গেছে সেটাও বাংলাদেশ ব্যাংক জানতে পারবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে। কিন্তু সেটা যদি অন্য কোনো মাধ্যমে যায় তাহলে বিএফআইইউ সেই তথ্য সংগ্রহ করবে।’
এর আগে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক বা এসএনবির ২০২২ সালের জুন মাসে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশিরা কত টাকা জমা রেখেছে ওই তথ্য প্রতিবছর সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক দিয়ে থাকে এবং ওই অর্থ অবৈধপথে আয় করা হয়েছে কিনা তা আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
‘গত বছরে বাংলাদেশিরা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা করেছেন।’
নাতালি চুয়ার্ড বলেন, ‘তথ্য পেতে হলে কী করতে হবে সে সম্পর্কে আমরা সরকারকে জানিয়েছি। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো তথ্যের জন্য আমাদের কাছে অনুরোধ করা হয়নি। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দুই পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে এ ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব এবং সেটি তৈরি করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য