করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় টাকার অব্যাহত দরপতনে ওলটপালট হয়ে যাওয়া অর্থনীতিতে একটি সুখবর দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সুখবরটি হচ্ছে দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠে ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হয়েছে।
এই প্রবৃদ্ধি সাড়ে তিন বছরের মধ্যে (৪৩ মাস) সবচেয়ে বেশি।
গত ৩০ জুন নতুন মুদ্রানীতি (২০২২-২৩) ঘোষণার সময় সাবেক গভর্নর ফজলে কবির বলেছিলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হবে ১৩ দশমিক ১ শতাংশ।
কিন্তু বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো নিয়ে হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, জুন মাসে গত বছরের জুনের চেয়ে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়েছে।
তবে এতে আমেরিকার মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের অবদান রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। তারা বলেছেন, দেশের বাজারে ডলারের দাম বাড়ার কারণে গ্রাহককে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে। আর এটি বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, টানা আট মাস ধরে বাড়তে বাড়তে ২০২২ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকটি ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক ০৭ শতাংশে উঠেছিল।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ফেব্রুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি কমে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে আসে। মার্চে তা দশমিক ৫৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশে ওঠে। এপ্রিল মাসে তা ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশে ওঠে। মে মাসে তা আরও বেড়ে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ওঠে।
সবশেষ জুন মাসে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছে।
এর অর্থ হলো ২০২১ সালের জুন মাসের চেয়ে এই বছরের জুন মাসে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি ঋণ পেয়েছেন।
এরপরও মুদ্রানীতিতে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছিল, তার থেকে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ পয়েন্ট কম নিয়েই শেষ হয়েছে অর্থবছর।
২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ।
গ ত বছরের জুন শেষে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। এরপর থেকেই কমতে থাকে এই সূচক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুন শেষে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দিাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৫১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুন শেষে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৯৭ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা।
এ হিসাবেই ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
অর্থনীতির বিশ্লেষক গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরেই বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ছিল। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার যে প্রণোদণা ঘোষণা করেছিল, তাতে এর অবদান ছিল। এছাড়া করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় দেশে বিনিয়োগের একটি অনুকুল পরিবেশও দেখা দিয়েছিল। পদ্মা সেতু, মেট্টোরেল, বঙ্গবন্ধু কর্ণফূলী টানেলসহ কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে উদ্যোক্তারা নতুন পরিকল্পনা সাজিয়ে বিনিয়োগে নেমেছেন। ব্যাংকগুলো তাতেও বিনিয়োগ করছে।’
‘সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতের ঋণের একটি গতি এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে আমদানিকারকদের এলসি খুলতে বেশি টাকা লেগেছে। তাতেও ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে।’
‘তবে আর নয়। এখন যে করেই হোক টাকাকে শক্তিশালী করতে হবে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দ্রুত এটা করতে হবে। এখন আর নয়-ছয় নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। রাশিয়া যেমন ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে তাদের রুবলকে শক্তিশালী করেছে আমাদেরও তাই করতে হবে। মতো
আহসান মনসুর বলেন, ‘ডলারের এই অস্বাভাবিক উল্লম্ফন আমাদের অর্থনীতিকে প্রতি মুহূর্তে তছনছ করে দিচ্ছে। বড় ধরনের সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে আমাদের। আমদানি কমাতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। ডলার ছুটছে তো ছুটছেই। এখন আমাদের সামনে একটাই পথ খোলা আছে, সুদের হার কমানো। আর সেটা এখনই করতে হবে।’
মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় আমদানি বাড়তে থাকায় আগস্ট থেকে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে; দুর্বল হতে থাকে টাকা। এখনও সেটা অব্যাহত আছে। তার আগে এক বছরেরও বেশি সময় ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত এক বছরে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে (ব্যাংক রেট) টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর ব্যাংক ও কার্ব মার্কেটে বেড়েছে ৩০ শতাংশের মতো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে এখন বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই দেশে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ফেব্রুয়ারিতে কিছুটা হোঁচট খেয়েছিল। মার্চে থেকে ফের বাড়তে শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনি যন্ত্রপাতি বা ক্যাপিটাল মেশিনারি, শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামালসহ শিল্প খাতের অন্য সব সরঞ্জাম আমদানি বেড়েছিল। সে কারণেই বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছিল। নানা পদক্ষেপের কারণে এখন অবশ্য আমদানি ব্যয় কমে আসছে। আশা করছি ডলঅরের বাজারও স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
নতুন অর্থবছরেও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই অর্থনীতিবিদ।
গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার আগের মাস নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ; অক্টোবরে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
দীর্ঘদিন ধরে দেশে বিনিয়োগে মন্দা চলছিল। এর অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের চিত্রও ছিল হতাশাজনক। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে তা আরও কমতে থাকে।
প্রতি মাসেই কমতে কমতে গত বছরের মে মাসে তা ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে আসে, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।
অতীত ঘেঁটে দেখা যায়, বাংলাদেশের বর্ধিষ্ণু অর্থনীতিতে ব্যাংকের ঋণ বাড়তেই থাকে। ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪ শতাংশের বেশি। বছরওয়ারি হিসেবে এর পর তা সব সময়ই ১০ শতাংশের বেশি ছিল। এমনকি এক পর্যায়ে তা ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তা দুই অঙ্কের নিচে (ডাবল ডিজিট), ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমে আসে। এরপর দুই বছর বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি এক অঙ্কের নিচে (সিঙ্গেল ডিজিট) অবস্থান করে।
গত বছরের নভেম্বরে তা দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট) ঘরে, ১০ দশমিক ১১ শতাংশে উঠে।
মহামারির ছোবলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। এরপর সরকারের প্রণোদনা ঋণে ভর করে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এই প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ হয়। আগস্টে তা আরও বেড়ে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশে এবং সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশে ওঠে।
কিন্তু অক্টোবরে এই প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। নভেম্বরে তা আরও কমে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ হয়। ডিসেম্বরে সামান্য বেড়ে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়।
২০২১ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৫১ ও ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এপ্রিলে নেমে আসে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে। মে মাসে তা আরও কমে নেমে যায় ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে।
তবে করোনার প্রকোপ কমতে থাকায় গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ঋণ প্রবৃদ্ধি খানিকটা বেড়ে ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশে উঠে কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়। তারপর থেকে ঋণপ্রবাহ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
আরও পড়ুন:ঈদের আগে মার্চ মাসে রেকর্ড রেমিট্যান্সের পর এবার রিজার্ভ নিয়ে সুখবর দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মাস শেষ হওয়ার আগেই দেশের রিজার্ভ ছাড়িয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দেশের রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ২৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুযায়ী, বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ২০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার।
নিট রিজার্ভ গণনা করা হয় আইএমএফের বিপিএম-৬ পরিমাপ অনুসারে। গ্রস রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বাদ দিলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ পাওয়া যায়।
মার্চের ৯ তারিখ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল বাবদ ১৭৫ কোটি ডলার পরিশোধ করায় গ্রস রিজার্ভ নেমে আসে ২৫ বিলিয়নের নিচে এবং বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২০ বিলিয়নের থেকেও কমে যায়।
আকুর বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬-এর মান অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ হয়েছিল ১৯ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার, যা এ কয়েক দিনে আবার ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠে এসেছে।
এর আগে মার্চের প্রথম ২৬ দিনে আসে ২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স, যা দেশের ইতিহাসে যেকোনো মাসের তুলনায় সর্বোচ্চ।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার জন্য আগামী ১৭ এপ্রিল দিন ঠিক করেছেন ঢাকার একটি আদালত।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ঠিক ছিল মঙ্গলবার। তবে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান নতুন এ দিন ঠিক করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জালিয়াতি করে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করা হয়। পরে ওই টাকা ফিলিপাইনে পাঠানো হয়।
দেশের অভ্যন্তরের কোনো একটি চক্রের সহায়তায় হ্যাকার গ্রুপ রিজার্ভের অর্থ পাচার করে বলে ধারণা করেন সংশ্লিষ্টরা।
ওই ঘটনায় একই বছরের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপপরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মতিঝিল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইন-২০০৬- এর ৫৪ ধারা ও ৩৭৯ ধারায় একটি মামলা করেন।
মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে।
আরও পড়ুন:রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থের ৮০ শতাংশ ফেরত আনা হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বাকি অর্থ আদায়ে মামলা চলছে। মামলায় জিতে বাকি অর্থও ফেরানো সম্ভব।
রাজধানীর একটি হোটেল শনিবার ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ায় দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স প্রবাহ স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠানই ২০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। সেসব অর্থ উদ্ধারে কাজ চলছে। বিদেশিরাও সহযোগিতা করছেন।
গভর্নর বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন তথা এফবিআইসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। বিদেশি আইনজীবীও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আনতে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ায় বছরে সরকারের ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। গত ৫ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩০০ কোটি ডলার। রপ্তানি বেড়েছে ২৫০ কোটি ডলার।
তিনি বলেন, প্রশিক্ষিত কর্মী বিদেশে পাঠাতে পারলে রেমিট্যান্স বছরে ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হবে।
সৌদি আরবকে টপকে রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষে উঠে এসেছে দুবাই।
একে আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে গভর্নর জানান, সৌদি আরব থেকে অর্থ প্রথমে দুবাইয়ে আসছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে আসছে। দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান এই সুযোগে মুদ্রা বিনিময় হার ম্যানুপুলেট (হস্তক্ষেপ) করার চেষ্টা করছে।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ২ হাজার ৪৯০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। এ ছাড়া বিপিএম-৬ গণনার মান অনুযায়ী রিজার্ভ এখন দুই হাজার কোটি ডলার হয়েছে।
গত ৮ জানুয়ারি বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৫৭ কোটি ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১৬৭ কোটি ডলার।
এ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘চার মাস চলার মতো রিজার্ভ আছে। তাই ভয়ের কিছু নেই।’
আরও পড়ুন:নতুন বছরে প্রথম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে পদ্মা ব্যাংক পিএলসির, যা ব্যাংকটির ১২১তম সভা।
ব্যাংকের হেড অফিসে গত ৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় সভাটি।
মো. শওকত আলী খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পদ্মা ব্যাংকের পর্ষদ সভায় অন্য পরিচালকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবর রহমান, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন, তামিম মারজান হুদা, শাহনুল হাসান খান, ডা. ফারহানা মোনেম, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান, ব্যারিস্টার-এট-ল’ এবং এইচএম আরিফুল ইসলাম এফসিএ।
সভা পরিচালনা করেন পদ্মা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মো. তালহা (চলতি দায়িত্বে)।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা ডিসেম্বর মাসে রেকর্ড পরিমাণ ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। এটা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় ৩২ শতাংশ বেশি।
প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দেশে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে প্রবৃদ্ধি ২৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কারণ এই সময়কালে মোট ১৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। গত বছর এটা ছিল ১০ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, সরকার অনাবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) বৈধ চ্যানেলে দেশে অর্থ প্রেরণে উৎসাহিত করায় দেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ১২ সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। বিএফআইইউর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
একইসঙ্গে তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ইতোমধ্যে পাঠিয়েছে সংস্থাটি।
হিসাব তলব করা সাংবাদিকরা হলেন- সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ্র বাদল, ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন, বাংলাদেশ পোস্টের বিশেষ প্রতিনিধি নুরুল ইসলাম হাসিব, নাগরিক টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক দ্বীপ আজাদ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসের সাবেক প্রধান বার্তা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, উপ-প্রধান বার্তা সম্পাদক মো. ওমর ফারুক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের সাবেক মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি হোসনে আরা মমতা ইসলাম সোমা, দৈনিক জনকণ্ঠের ডেপুটি এডিটর ওবাইদুল কবীর মোল্লা, দৈনিক জাগরণ সম্পাদক আবেদ খান, ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত এবং গ্লোবাল টিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।
বিএফআইইউর নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, হিসাব তলব করা ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী ইত্যাদি চিঠি দেয়ার তারিখ থেকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউ-তে পাঠানোর জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশে সুশাসনের ভিত্তি মজবুত হওয়ায় অর্থ পাচার উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। অর্থ এখন আর বিদেশে ডাইভার্ট হচ্ছে না; বরং তা দেশের মধ্যেই অবস্থান করছে।
শনিবার টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ইসলামী ব্যাংকের ৪০০তম শাখা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, ‘যারা অর্থ নিয়ে দেশ ছেড়েছে, তাদের অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি। ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হবো, হয়তো একটু সময় লাগবে। তবে আমরা হাল ছাড়ব না।’
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘একসময় আমাদের রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছিল। ব্যালেন্স অফ ক্রেডিটের কারণে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটেছিল। আমরা সেই সংকট থেকে বেরিয়ে এসেছি। এখন রিজার্ভ আর কমছে না।
‘গত ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এক ডলারও বিক্রি করেনি। ব্যালেন্স অফ পেমেন্টের ঘাটতিও দূর হয়েছে। বর্তমানে এটি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। গত পাঁচ মাসে অতিরিক্ত তিন মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে।’
দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ‘বিদেশে কর্মরত ভাই-বোনদের পাঠানো টাকা এখন খুব দ্রুত এবং নিরাপদে পরিবারের হাতে পৌঁছাচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইতিহাস বলে, ইসলামী ব্যাংক দেশের এক নম্বর রেমিট্যান্স সংগ্রাহক প্রতিষ্ঠান।’
ব্যাংকিং খাতে আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে খাদ্যপণ্যের উচ্চ মূল্যই মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণ। তবে আমরা আশা করছি, আগামী চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে খাদ্যপণ্যের দাম কমে একটি স্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। মনে রাখতে হবে, ব্যাংক কোনো ব্যক্তি বা পারিবারিক প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি আমানতকারী প্রতিষ্ঠান, যা জনগণকে সেবা দেয়।’
ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড অফ ডাইরেক্টরসের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা।
বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল, এফসিএস চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম, রিস্ক কমিটির চেয়ারম্যান ড. এম মাসুদ রহমান এবং ইনডিপেন্ডেন্ট ডাইরেক্টর মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব।
অনুষ্ঠানে শরীয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য